উকিল না ব্যবসায়ীতো হয়েছে

পার্থিব (জুন ২০১৭)

মোঃ জহিরুল ইসলাম
গ্রামের মান্যগণ্য ব্যাক্তি আবু মিয়া। গ্রামের সবাই তাকে মান্য করে ডাকে আবু ভাই। গ্রামের যত বিচার-আচার সবই করে আবু মিয়া। লোকটা আসলে সৎ কিন্তু একটু রাগিও বটে। তবে যে সময় ঠান্ডার প্রয়োজন সে সময় ঠান্ডাও। আবু মিয়ার বড় একটা দোতলা ঘর। সামনে কেমন জানি একটা দেওয়াল, যা অনেক নকশা করা দেখতে খুবই ভাল লাগে। ঘরের চারপাশে অনেক ফলের গাছও আছে, তবে সামনে দিয়ে একটা বড় উঠান। সেখানে লোক বসার ব্যবস্থা আছে। প্রতিদিন বিকেল বেলা এখানে গ্রামের কোন না কোন বিচার বসে। গ্রামের কোন সমস্যা বা সালিশ থাকলে গ্রামের ছোট থেকে শুরু করে মুরব্বি পর্যন্ত সবাই আসে আবু মিয়ার কাছে। একদিন বিকেল বেলা গ্রামের সব মানুষ আবু মিয়ার বাড়িতে, মনে হয় বাড়িটা দমদম করছে। মানুষের উত্তেজনা দেখে কিছু না জানলেও মনে হয় নিশ্চয় আজ বড় কোন ঘটনা ঘটেছে। আবু মিয়ার সামনে একটা খাটে করে একটা মেয়ের দুই টুকরা হয়ে পড়ে থাকা একটা লাশ। একটি সাদা কাপড় দিয়ে খাটটি ঢেকে দেওয়া হয়েছে। একটু সামনে এগিয়ে দেখি দুই টুকরা হয়ে পরে থাকা মেয়েটি হল সুমা। সুমা ভারি দুষ্টমেয়ে। তার বাবা একজন বড় ব্যবসায়ী। অনেক বড় বড় বিভিন্ন দোকান আছে তাদের। দশ বারোজন তাদের দোকানে কর্মচারী খাটে প্রতিদিন। বাবার একমাত্র আদরের মেয়ে সুমা। বাবা সুমাকে খুব ভালোবাসে। সুমাকে গ্রামের বড় স্কুলে ভর্তি করান। লেখাপড়ায় খুবভালো সুমা। ক্লাসে পরীক্ষায় প্রথম হয়। সকল শিক্ষক তাকে খুব ভালোবাসে। যারা ক্লাসে একটু ভালো থাকে শিক্ষকরা তাদের একটু পছন্দ করেন এটাই স্বাভাবিক। সুমা এবার পরীক্ষায় ভালো পাশ করে পাশের গ্রামের কলেজে ভর্তি হয়। কলেজে ভর্তি হওয়ার পর সুমা যেন কেমন হয়ে গেছে। সে আগের মতো ভালো পড়ালেখায় মন দেয়না। ঠিকভাবে ক্লাস করেনা, বাড়িতেও কেমন যেন কি যেন সারাদিন ভাবে। তার কলেজের পশ্চিম পাশে একটি ছোটঘর। সে ঘরটি সুমার সহপাঠি শরিফদের বাড়ি। শরিফরা হলো গ্রামের মধ্যবর্তী পরিবারের। তার বাবা একজন সাধারণ সরকারী ছোট চাকুরীজীবী। তাদের সংসার ছিল সুখের । শরিফ খুব ভালো ছাত্র। সে মনে হয় গ্রামের মান রাখবে। বড় হয়ে সে বড় উকিল হবে এটাই তার বাবার স্বপ্ন। সে গ্রামের মানুষের দুঃখে কষ্টে পাশে দাড়াবে। তার চেহারা সুন্দর, সে অনেক লম্বা দেখতে সাহেবের মতো। সেও কেমন জানি আজকাল উদাস উদাস ভাব । মনে হয় কি যেন সারাদিন ভাবে। পড়ালেখার প্রতি তার কেমন যেন মন নেই । সুমার বান্ধবী ছিল কাজল। সুমা যখন কলেজে ভর্তি হয় কোন একটা ঘটনার ফলে সুমা ও শরিফের মধ্যে বন্ধুত্বের ভাব হয়। এক পর্যায় তাদের মধ্যে অনেক গভীর সম্পর্ক তৈরী হয়। কিন্তু সমস্যা তো ওখানে শরিফরা তেমন বড় পরিবার না । মোটামুটি জীবন যাপন করে । তার বাবা ছ্টো চাকুরী করে তাতে আর কি হয়। বাবার স্বপ্নটা বুঝি আর পূরণ হলো না শরিফের। সে পরীক্ষায় ফেল করে। কিন্তু শিক্ষকেরা মানতে পারছেনা শরীফের ফেল কেন হল। একদিন শরীফ ও সুমা দুজনে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে ঘুরতে গেল পাশের গ্রামে। সুমার বাবা ব্যবসার উদ্দেশ্যে ঐ গ্রামের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ সে দেখল তার মেয়ে সুমা একটা ছেলের হাত ধরে হাটছে। এবার বুঝি সারা জীবনের সব ইজ্জত শেষ। সে কোন কথা না বলে সুমাকে নিয়ে ওখান থেকে চলে গেল বাড়িতে। সুমাকে সবকিছু বুজালো , দেখ মা আমার ইজ্জত এভাবে নষ্ট করে দিছ না। কে মানে, কে শোনে কার কথা । তারা আবার দুজনে ঘুরতে যায়। একদিন দুজনে সিনেমা দেখতে যায়। গ্রামের লোকজন আস্তে আস্তে ঘটনা জানতে পারে। সবাই বলাবলি করে তাদের কথা তারা যেন সমাজের কলঙ্ক। বড় অন্যায় করছে তারা এতে তাদের বড় শাস্তি হওয়া উচিৎ। তারা সুমা ও শরিফের বাবাকে এর বিচার করতে বলে। সে সুমাকে নিয়ে বাড়ি চলে আসে। ভাবে মেয়েকে কি করা যায়। সে ঠিক করল মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দিবে। তার কোন বাধা নেই টাকা পয়সা আছে , গ্রামের নামি -দামি লোক তার মেয়ের জন্য আবাশ্য ভালো পাত্র পাওয়া কোন কঠিন কাজ না। তবে যে পাত্রই আসে গ্রামের লোকজনের কারণে বিবাহ দিতে পারেনা। গ্রামে কোন সমস্যা হলে সুমাকে গ্রামের অভিশাপ মনে করে। সবাই বলে সুমার জন্যই এ গ্রামে এত সমস্যা। সুমার বাবা অনেক কষ্ট করে একটা পাত্র জোগার করে। তবে সুমা তাতে রাজি নয় সে শরিফকেই বিয়ে করতে চায়। কিন্তু শরিফরা তেমন বড় পরিবারের ছেলে নয় বাবা তাই রাজি হচ্ছে না। ওদিকে আবার শরিফের বাবা সুমাকে নিতে রাজি নয় কারণ সুমা গ্রামের কলঙ্ক সে তার ছেলেকে খারাপ করছে। তার জন্য তার ছেলে বড় উকিল হতে পারে নাই। শরিফ সুমাকেই বিয়ে করবে সে সেই প্রতিজ্ঞাই করল সুমাও তাই। সুমার আগামি শুক্রবার বিয়ে ঠিক হল অনেক যৌতুক দিতে হবে। তার বাবাও তাই মেনে নিল কারণ তার একটি মাত্র মেয়ে টাকার তো কোন অভাব নেই। সে মেয়ের জন্য সোন-দানা টাকা পয়সা বাজার আজার সব করে । বিয়ের মাত্র দুদিন বাকি। শরিফ ও সুমা কোনভাবে যোগাযোগ করতে পারেনা। সুমা তার ঘরের কাজের মেয়ে সাহিদাকে দিয়ে একটা চিঠি লেখেন শরিফের কাছে বলেন ‘ কাল আমার বিয়ে আজ রাতে আমরা দুজনে কোথাও পালিয়ে যাব। ’ শরিফও তাতে রাজি। শরিফ চিঠি পেয়ে চিঠিমত কাজ করল সে সবকিছু গুছিয়ে তাদের বাড়ির পাশে একটা বড় বটগাছ ছিল। সেখানে মানুষ এসে একটু শান্তি পায় । গাছের ছায়ায় বসে। তবে রাতে কেন ঐ গাছের কাছে যায় না কি জানি একটা দোষ আছে গাছের। শরিফ ওখানে গিয়ে সুমার জন্য অপেক্ষা করে। কিন্তু সুমা আর আসেনা। সুমার বাবা টাকা পয়সা সবকিছু সিন্দুকে আটকিয়ে রাখছে। মেয়ের বিয়েতে খরচ করতে হবে। বর্তমানে চোর ডাকাতের বড় ভয়। যখন তখন ডাকাতি হতে পারে বাড়ি যদি ডাকাতের জানতে পারে। সে সিন্দুকের চাবি নিজের সাথে সাথে রাখে।সে যেখানে যায় সাথে সাথে চাবি নিয়ে যায়। সুমা তার জামা কাপড় গুছিয়ে বাবার দিকে খেয়াল রাখে বাবা সিন্দুকের চাবি কোথায় রাখে। কারণ বের হলেতো খালি হাতে বের হওয়া যায়না । গভীর রাতে বাবা যখন ঘুমিয়ে পরল সে বাবার কাছ থেকে আস্তে আস্তে চাবিটা নিল। সতর্কতার সাথে সিন্দুকের কাছে গিয়ে সিন্দুক খুলল। বাবা জানি কেমনে টের পেল কাল মেয়ের বিয়ে গভীর ঘুম কি আর হয়! ঘোর অন্ধকার কিছু দেখা যায়না। সে টের পেল কে জানি তার সিন্দুক থেকে সব কিছু নিয়ে যাচ্ছে। কাল বুঝি মেয়ের বিয়ে হবেনা। সে আস্তে আস্তে বিছানা থেকে ওঠে একটা দা নেয় । সে ভেবেছিল বাড়িতে বুঝি চোর পরেছে তার মেয়ের বিয়ে আর বুঝি হবেনা। তাই সে ডাকাত ভেবে সিন্দুকের কাছে এসে দা দিয়ে জোরে চোরের উপর আঘাত করল। মনে হয় চোরের শরীর দুই টুকরা হয়ে গেছে। রক্তে সব ঘর লাল হয়ে গেল। যখন বাতি জ¦ালাল তখন দেখল দুই টুকরা হয়ে তার মেয়ে মাটিতে পরে আছে। সারারাত শরিফতো অপেক্ষায় কাটাচ্ছে মনে হয় সুমা তাকে ধোঁকা দিয়েছে সে আর আসবেনা। সকালে গ্রামের এই খবর ছড়িয়ে পড়ল। হৈচৈ পরে গেল গ্রামের মধ্যে সবাই ভাবছিল মেয়েকে মনে হয় সুমার বাবা খুন করে ফেলেছে। সুমার বাবা নির্বোধ হয়ে গেল। এখন লাশের কি হবে? সুমার বাবাতো নির্বোধ কিছুই বলতে পারেনা। সমাজের চাপে সুমাদের পরিবার আজ ধ্বংস। বাবা নাকি কিছুদিন পার হার্ট এ্যাটাকে মারা যায়। শরিফ তার সংসার জীবন শুরু করার চেষ্ঠা চালাচ্ছে, সে উকিল হতে না পারলেও ব্যবসায়ী হতে পেরেছে। সে তার জীবন প্রতিষ্ঠা করতে ব্যবসা শুরু করে। জীবন তার ভালো কাটাতে হবে। যা ঘটেছে তা স্বাভাবিক নিয়ম এটাই তাদের শরিফ কেন এই কষ্টের ভাগ নিবে এটাই সবাই বলাবলি করছে। কিছুদিন পর শোনা গেল শরিফ পাত্রী খোঁজে বিয়ে করার জন্য।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোঃ নুরেআলম সিদ্দিকী গল্প বেশ চমৎকার হয়েছে। তবে শুরুতে ও শেষে আরও কিছু ভাবনা তৈরি করবেন আশা করি। কারন, ফুট করে শুরু করলেন, ফুট করে কাহিনী শেষ আর ফুট করে উপসংহার দেয়া বাঞ্চনীয় নয়। শুভকামনা রইলো
মোঃ মোখলেছুর রহমান গল্পতো অনেক গুলো কবিতার যৌগিক রূপ,আরও কবিতা সংযোজন প্রয়োজন। আশা করি চর্চা রাখবেন।
রুহুল আমীন রাজু বেশ ভাল লাগল গল্প... শুভ কামনা । ( আমার পাতায় আমন্ত্রন রইল )

১৯ মে - ২০১৭ গল্প/কবিতা: ১২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪