চিঠি

বাবা (জুন ২০১৭)

ইমনুল ইসলাম
  • ৩৪
প্রিয় বাবা,
কেমন আছ? এই দীর্ঘ জীবনে কখনও তোমাকে চিঠি লেখা হয়নি। কারণ তোমার উপস্থিতি ও ছায়া এতটাই স্বাভাবিক ছিল যে আজ পর্যন্ত অনুপস্থিতিটুকু মেনে নিতে পারিনা। দেখতে দেখতে বছর চলে গেল। ঘুরে ফিরে আরেকটি বছর চলে এল, বাবাবিহীন বছর ।
ভালবাসার কোন বিশেষ দিন নেই। তবু প্রকাশের জন্যে মানুষ নানা উপলক্ষ খুজে নেয়। যে চিঠি লিখব লিখব করেও এতদিন লেখা হয়নি আজ তা লিখতে বসলাম। আক্ষেপ শুধু এটুকুই! এই চিঠির কোন জবাব আসবেনা!
আমার এক বন্ধু বলেছিল,ব্যক্তিগত অনুভূতিগুলো কি শেয়ার না করলে হয়না?
কিন্তু আমার যে বড় ইচ্ছে করে সবার কাছে গল্প করতে,এক অসাধারণ রাজার ভাগ্যবান রাজপুত্র আমি!
বাবা, তোমার ফাঁকিবাজ ছেলেটি এখন আর ফাঁকিবাজি করেনা।তোমার কিছু কথা নাহয় শুনতাম না, তাই বলে এভাবে ফাঁকি দিয়ে চলে গেলে? এখনতো সব কথা শুনি বাবা!!
একবারও তোমার ছেলের পরীক্ষা নিতে চাইলেনা? এতটাই অযোগ্য মনে হল তোমার আমাকে?
কিছুদিন আগে গ্রামে গিয়েছিলাম। তোমার সেই স্কুলে অনেকক্ষণ সময় কাটালাম ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে । তুমি থাকলে তাই করতে না বাবা? প্রতিটি ক্লাসে ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম তোমার পরিশ্রমের ফল। বাবা একটা ব্যাপার কি জান যখন আমার পরিচয় দেয়া হচ্ছিল সবার কাছে তখন নিজেকেতোমার ছেলে হিসেবে পরিচয় পেতেই বেশি ভাল লাগছিল। আজ এতদূর এসেও আমি বুঝতে পারি,বাবা,তোমার বিশালত্বের কাছে আমি খুবই নগন্য। সব পরিচয়ের ঊর্ধ্বে আমার সর্বশ্রেষ্ঠ পরিচয়,আমি তোমার ছেলে !
একসময় " বাবা "গানটা মাঝে মাঝে শুনতাম, হ্যা ভালো লাগতো, কিন্তু আজ সমস্ত রাত এই একই গান শুনি, কারন এর সত্যিকার অনুভুতিটা এখন বুঝি। গানটা আজ আমাকে কাঁদায় বারবার!
অনেককিছুই অপুর্ন রয়ে গেল যে! তুমিতো কথা রেখেছ।তোমার দাইত্ত ঠিকই পালন করে চলে গিয়েছ। আমাকে কেনো কিছু করার সুজোগ দিলেনা?
এমন শূন্যস্থান কেন তৈরি করে গেলে যা ভরাট করার ক্ষমতা কারো নেই! মা ভীষণ একা হয়ে গেছে। মুখে কিছু না বললেও তার প্রতিটি দীর্ঘশ্বাস আমি টের পাই।
তোমাদের কোনদিন কিছুই দিতে পারিনি। মুখ ফুটে বলতেও পারিনি কতটা ভালবাসি। আজ এই আনন্দের জোয়ারে তোমার শূন্যতাটা বড় চোখে পড়ে!
প্রতিটি মুহুর্তে তোমাকে ভীষণ মিস করি বাবা। কারণ আমি জানি তোমার চেয়ে মুগ্ধ শ্রোতা আমার আর কেউ হবেনা। কেউ ঘণ্টায় ঘণ্টায় ফোন দিয়ে খবর নিবেনা।
কেউ তোমার মত নয়,কেউ তোমার মত হবেনা।
পৃথিবীর সবটুকু ভালবাসা তোমার মধ্যেই সঞ্চিত ছিল তাই আজ চারপাশের ভালবাসাহীন পৃথিবীটা বড় রুক্ষ মনে হয়!
আজ তোমার সেই ছোট ছেলেটা অনেক বড় হয়ে গেছে। একা একা চলতে শিখে গেছে। এখন সে ব্যালকনীতে বসে দূরের তারাটি দেখে আর কাঁদেনা। কারণ সে আজ বিশ্বাস করে,তার বাবা সবসময় তার পাশে আছে বলেই সে আজ এত আত্মবিশ্বাসী।
যে স্বপ্নের বীজ তুমি তার মধ্যে বুনে গিয়েছিলে তা নষ্ট হয়ে যায়নি,বরং সেই স্বপ্ন আজ ডালপালা মেলেছে। তুমি পাশে না থাকলে তা বুঝি হতে পারত?
এমন ভাগ্য নিয়ে কয়টা মানুষ পৃথিবীতে এসেছে! অনেককিছুই লেখার ছিল কিন্তু চিঠিটা লিখতে গিয়ে কিভাবে যে এত এলোমেলো হয়ে গেলাম তা বুঝতেও পারলাম না। চিঠির শেষে শুধু এটুকুই বলব,ভাল থেকো বাবা,খুব ভাল।
ইতি,
তোমার ছেলে
"ইমন "
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন

১৭ মে - ২০১৭ গল্প/কবিতা: ০ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪