ভিটা

পার্থিব (জুন ২০১৭)

অনিন্দ্য রহমান মুশফিক

আরে যাও যাও!!
“বাবা,এইডা আমার স্বামীর ভিডা, এই ভিডা ছাইড়া কই যামু!! আমার যে তিন কূলে কেউই নাই!
আমারে এই ভাবে ভিডা ছাড়াকইরো না বাপ !
এই বুইরা বয়সে আমার যাওনের যে আর কোনো যায় গানাই!!”
বলতে বলতে ডুকরে কেঁদেওঠে মজিরনবেওয়া।
বুড়ির কান্না দেখে বিরক্ত হয় জব্বার।
এলাকার উঠতি নেতাসে।
“কি বিপদ! তোমারেনা বলছি যে বেহুদা পেঁচাল পাইরো না!
আমারে এতো সব কইয়্যা কি লাভ!
এই খানে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি সংসদ ক্লাব হইবো ।এলাকার পোলাপাইন মুক্তিযুদ্ধের আলোচনা করবো।
আরে তোমার জামাইওতো যুদ্ধ করছে।
হেই বাইচা থাকলে কি আর এই জায়গাডা খালি কইরা দিতোনা!! ঠিকই দিতো।
অহন না হয় তুমি দিলা!
আর ওইজায়গার কোনো দামই নাই।
কিন্তু তাও তোমার মুখের দিকে তাকায়া পাঁচ হাজার ডানগদ টাকা দিলাম।
অহন যাও তো।অতো প্যাচাল পাইরোনা !” বলতে বলতে বিরক্তি তে খেঁকিয়ে ওঠে জব্বার।
আজ তিন দিন হয়ে গেলো উত্তর গোরানের প্রধান রাস্তাটার পাশের এই খালি যায় গাটায় ওপর নজর পরেছে জব্বারের।
জায়গাটা একটা হোটেল করার জন্য খাসা।
কিন্তু জায়গার প্রকৃত মালিক মজিরনবেওয়া কিছুতেই জায়গাটা ছাড়তে রাজি না হওয়ায় তার স্বপ্নের হোটেলের
স্বপ্নটা ঠিকমতো মেলাতে পারছিলো না সে।

মজিরনের স্বামী মরহুম মুক্তিযোদ্ধার ফিকের একমাত্র পৈ্ত্রিক ভিটা এটি।
তাই এই জায়গার প্রতি নিঃসন্তান মজিরনের অনেকটান।
নিজ সন্তানের মতো ভিটাটাকে এতো বছর আগলে রেখেছে সে।
কিন্তু এলাকার উঠতিনেতা জব্বারের নজর তারভিটার ওপর পড়ায় জব্বারের রোষানলে পড়ে মজিরনবেওয়া।
কয়েক বার চেষ্টা করেও জব্বার তাকে জমিটা বিক্রি করতে রাজি করতে না পারায়
শাসিয়ে যায় এই বলে যে, -সোজা আঙ্গুলে ঘিনা উঠলে জব্বার ঠিকিই জানে কি ভাবে কাজ হাসিল করতে হয়।
সেই রাতেই মজিরন কে ভিটা ছাড়া হতে হয়।
রাতের আধারে জব্বার তার অধীনস্ত সাঙ্গপাঙ্গদের লেলিয়ে দিয়ে বাক্সপেটরা সহ মজিরন কে ভিটে থেকে বের করেদেয়।তার করুণ আর্তনাদেও কারো মন গলেনা।

সেই থেকে মজিরন সারাটা দিন জব্বারের বাড়ির আশ পাশে ঘুর ঘুর করে।
জব্বার তখন সবে মাত্র খেতে বসেছে । বাইরে অপেক্ষমান কিছু মানুষের ভীড়।
সে দিনও মজিরন জব্বারের দাওয়ার পাশে এসে আকুতি জুড়ে দিলো ।
মজিরনের বিলা পশুনে হটাৎ জব্বারের মাথায় আগুন ধরে যায়।ছুটেগিয়ে বৃদ্ধা মজিরনবেওয়ার পেটে সজ়োরে লাথি বসিয়েদেয় সে।
আঘাতটা সহ্য করার মত বয়স মজিরনের না। একটা অস্ফুট শব্দ করেই সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
মৃদু একটা ঝাকুনি দিয়ে নিথর হয়ে যায়।
পরে ব্যপারটা বুঝতে পেরে জব্বার ঘাবড়ে গেলেও সাথে সাথে নিজেকে সামলেনেয়।
তার ডান হাত কানা মঞ্জুরকে ডেকে লাশটা তারাতারি দাফন করে ফেলতে বলে জব্বার।
আর উপস্থিত সবাইকে এই বলে শাসিয়েদেয় যে, কারো মুখ থেকে এই ব্যপারে যদি কখনো কোনো কথাবের হয় তাহলে তারো একই পরিণতি হবে।
ভয়ে কেউ আর মুখ খোলার সাহস পায় না।

সেই রাতেই; হ্যাঁ, সেই রাতেই স্বপ্নটা দেখে জব্বার।
একটা ধব ধবে সাদা শাড়ি পরিহিতা মজিরনবেওয়া।তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে ।চোখ দুটো যেনো ভাটার মতো জলছেতার।
তার দিকে তাকিয়ে মজিরনবেওইয়া যেন অদ্ভুত ভাবে হেসে ওঠে।পরক্ষনেই ঘুম ভেঙ্গে যায় জব্বারের।
বিছানায় উঠে বসে সে।প্রচন্ড পানির পিপাসা পায় তার।
পাশে শুয়েথাকা বউ জমিলাকে ডাকতে গিয়েও ডাকেনা সে।
পানি খাওয়ার জন্য বিছানা ছেড়ে নামতে গিয়েই দুমকরে সজোরে মেঝেতে আছড়ে পরেসে।
উঠতে গিয়ে ওউঠতে পারে না।
পাদুটোতে একদমই বল পাচ্ছেনা।
কি হলো!! অবাক হয় জব্বার।পরক্ষনেই ঘাবরে গিয়ে চেঁচাতে থাকে তার স্বরে।
তার চিৎকারে তার বউয়ের ঘুম ভেঙ্গে যায়।উঠে জব্বারকে মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখে ভয়পেয়ে যায় জমিলা।
“আপনে অই খানে কি করেন!!?” ভয়ার্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করে জমিলা।
“চুপ! বান্দিরঝি,আমারে তোল তাড়াতাড়ি!” চেঁচিয়ে ওঠে জব্বার।
একথা শুনে সচকিত হয় জমিলা।
তাড়াতাড়ি বিছানা ছেড়ে নেমে জব্বারকে টেনে তোলে মেঝে থেকে।তুলে এনে বিছানায় বসায়।
“কি অই সে আপনের?”
“কিছু অয়নাই! যা এক গেলাস পানি আন!!” ধমকের সুরে আদেশ করে জব্বার।
জমিলা পানির গ্লাসটা এগিয়ে দিতেই ছোমেরেনিয়ে ঢক ঢক করে একচুমুকে পুরো গ্লাস শেষ করে জব্বার।
পানি খেয়ে আদেশের সুরে জমিলা কে ঘুমাতে যেতে বলে জব্বার বিছানার একটা খুটি ধরে বসে থাকে।
সারাটা রাত সে এভাবে বসেই পার করে দেয়।
ঠিক পরদিনই!!
হ্যাঁ
ঠিক পরদিন থেকেই ব্যাপারটা ঘটতে থাকে ।জব্বারের পা দুটো ধীরে ধীরে অবশহতে থাকে।ওদিকে
গোরানের বৃদ্ধা মজিরনের ভিটাটিও তার হাত ছাড়া হয়ে যায় রাজনৈ্তিক প্রতিপক্ষ বাতেনের কাছে।
এর পর থেকেই জব্বার প্রায়ই উন্মাদের মত আচরণ করতে থাকে।
দিনরাত খালি একটা কথাই বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলেফেলে জব্বার
“আমার ভিডা, আমি কাউরে দিমুনা!! কাউরেনা!! আমার ভিডা এইডা এই ভিডার মাটি আমার!!”
বলতে বলতে না কে মুখে গাজলাবের হয় জব্বারের।হাত পাছুড়ে চিৎকার করে সারা বাড়ি মাথায় তোলে।তার এ অবস্থা দেখে তার পাশেঘেষার সাহস হয় না বাড়ির কোনো চাকর বাকরের।একে একে সবাই জব্বারের কাজ ছেড়ে চলে যেতে থাকে।
তার পোষা মাস্তানেরাও অবস্থা বুঝে জব্বারের প্রতি পক্ষ বাতেনের দলে নাম লেখায়।
অবস্থা দৃষ্টে জব্বারের অবস্থা এমন হয় যে কেউ আর তার ধারে কাছে যেতে সাহস পায় না।
জমিলা এতো দিন আশায় ছিলো হয়তো একদিন জব্বারের অবস্থার উন্নতি হবে।কিন্তু অবস্থাবেগতিক দেখে জমিলার বাপের বাড়ির লোকজন এসে জমিলা কে নিয়ে যায়।
যাওয়ার সময় আর দশজন কে শুনিয়ে বলে যায় যে, জব্বারের অবস্থার উন্নতির জন্য তারা জব্বারের চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে শীঘ্রই।
কিন্তু তারা আর কেউই ফেরত আসেনা। জব্বার তার খালি বাড়িতে একা পড়ে থাকে।
মাঝে মাঝে প্রতিবেশীদের কেউ কেউ দয়া পর বশত হয়ে কয়েক বেলার খাবার জব্বারের সামনে দিয়ে যায়।
কিন্তু জব্বারতা খায়না ।বরঞ্জজ চিৎকার করে ছুড়ে ফেলে দেয়।
মাঝে মাঝে এক আধটূ নিয়ে মুখে পুরে ঠিকই তবে তাও খায়না।
খায়না বললে ভুলই হবে । খেতে পারে না।
আজকাল তার পেটে কিছুই সয়না ।বমি হয়ে উগরে আসে।
আর; প্রতিরাতে ব্যাথাটা শুরু হয়।কেউ যেন প্রচন্ড আক্রোশে তার পেট চেপে ধরে রাখে।
অসহ্য যন্ত্রনায় কাতরাতে কাতরাতে জব্বার এক সময় নেতিয়ে পড়ে।
তবুও তার মুখে একই কথা ; “আমার ভিডা ! আমার ভিডা !”

রাতটা ছিল পূর্ণিমার রাত ।চার দিক ফকফকা পরিষ্কার।
এরই মাঝে গোরানের লোক জন দেখতেপায় গোরানের প্রধান রাস্তাটা ধরে কে যেন ছুটে যাচ্ছে উদভ্রান্তের মত আর চিৎকার করছে আমার ভিডা আমার ভিডা বলে।চিৎকার শুনেই সকলে বুঝে যায় এ হল পাগলা জব্বার।
এলাকায় ইতি মধ্যেতার এনামটা খুব জন প্রিয় হয়েগেছে।
পাগলের কান্ড কীর্তিদেখার ইচ্ছে নেই বিধায় কেউই আর সে দিকে মনোযোগদেয় না।
যে যার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
পর দিন ভোরে একটা সংবাদে সমগ্র গোরানে সাড়া পরে যায়।
জব্বার মাটির মূর্তি হয়ে গেছে!!!!
হ্যা, ঘটনাসত্য। এলাকার সবচাইতে প্রবীণ বৃদ্ধ আমজুর আলী সকাল বেলা তার গরুর জন্য ঘাস আনতে গোরানের প্রধান সড়কটা ধরে মাঠের দিকে যাচ্ছিলো। পথি মধ্যে মজিরনবেওয়ার ভিটার পাশে এসে থমকে দাড়ায় সে।ভিটার মাঝখানের মাটিতে কে যেন পড়ে আছে।ভালো করে দেখার জন্য আরো একটু আগায় আমজুর আলী।
এগিয়েই দৃশ্যটা দেখতে পায়- জব্বার! মাটিতে শুয়ে আছে।
আহারে! বেচারা,আম জুরের মুখে মায়া ফুটে ওঠে।
কাছে গিয়ে জব্বারের কাধে হাত রাখতেই ঝুর ঝুর করে একদলা মাটি ঝরে পড়ে জব্বারের কাঁধের অংশটা কে গায়েব করে দিয়েই।
বৃ্দ্ধ আমজুর এদৃশ্য দেখে ভয়ানক ঘাবড়ে যায়।বুকে হাত চেপে বসে পরতে পরতে টাল সামলেনেয়।
পরক্ষনেই বাড়ির উদ্দেশ্যে ছুট লাগায়।
পথি মধ্যে যাকেই পায় তার কাছে খবরটা পৌছে দিতে কার্পন্য করে নাসে।
দলে দলে লোকজন জব্বারের মাটি হওয়া দেহটা কে দেখতে মজিরনের ভিটায় জড়ো হতে থাকে।
মাটিতে পড়ে আছে জব্বার; মতান্তরে তার মাটি হওয়া মৃত দেহ।
অবশষে জব্বারের ইচ্ছেটারই পূরণ হয়েছে!
ভিটের মাটি আঁকড়ে পড়ে আছে সে।।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোঃ কবির হোসেন apnar golpoti amar kachhe motamuti valo legechhe.
আহা রুবন গল্প ভাল লেগেছে। তবে আমার কাছে মনে হল যাকে নিয়ে গল্প শুরু মজিরন বেওয়া তার চেয়ে জব্বারই প্রাধান্য পেয়েছে, তাই শুরুটা জব্বারকে দিয়ে শুরু করলেই হয়ত ভাল হত। শুভেচ্ছা জানবেন।
মোঃ মোখলেছুর রহমান লেখাটা পড়েছি। চর্চা রাখবেন আশা করি।ভোট রইল।
Dr. Zayed Bin Zakir (Shawon) Kahini valo silo. Lekhoni kothao druto egiyese. Lekhar sabolilota aro besi chai. Shuv kamona. Vote korlam. Amar lekhay apnar amontron roilo.
রুহুল আমীন রাজু এক কথায় দারুণ গল্প ...। শুভ কামনা । ( আমার পাতায় আমন্ত্রণ রইলো )
মোঃ নুরেআলম সিদ্দিকী চমৎকার গল্প, গরীবের নিপীড়িত অত্যাচার ফুটে উঠেছে। খুব ভালো লাগলো। ভোট তো অবশ্যই, অনেক অনেক শুভকামনা ও আমার পাতায় আসবেন কিন্তু......

২৯ এপ্রিল - ২০১৭ গল্প/কবিতা: ২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪