অসীম পিপাসা

ভৌতিক (সেপ্টেম্বর ২০১৭)

নীলাঞ্জনা দত্ত লোপা
বাড়ির উঠোনের শেষ প্রান্তের লাউগাছের বড় লাউটা হাঁটার সময় মাথায় বাঁধতই নরেন বাবু প্রাণটা পুরো জুড়িয়ে গেল।কত যত্ন,কত কষ্ট মিশে আছে এই লাউ গাছের সাথে।আজ সেই কষ্টের ফল দুচোখ ভরে দেখছে সে।শুধু লাউগাছই কেন এ বাড়ির প্রতিটি মাটি, প্রতিটি ধুলিক্ণার সাথে তার নিবিড় সম্পর্ক।সকাল ৯:০০টা থেকে বিকেল ৪.০০টে অবধি স্কুল করেও এত টুকু আলসেমি না করে সব টুকু শ্রম দিয়েছেন এ বাড়ির প্রতি।নিজের সন্তানের মতই এ বাড়িটি তার। গ্রামের প্রাইমারী স্কুলের সহকারী শিক্ষক তিনি। এক ছেলে, স্ত্রী আর তার বৃদ্ধা মা এনিয়েই তার সুখের সংসার।আভিজাত্য, জৌলুশ নেই তবে যা আছে তা আভিজাত্য, জৌলুশ এ সবের চেয়ে অনেক বেশী। বেশ সাদা, সিধে মানুষ নরেন বাবু। বাড়িটি সাজিয়েছেন নিজের মত করে মাটি, প্রকৃতির সাথে একাত্ম হয়ে।চারদিকে হরেকরম ফুল,ফল,সবজির গাছ, গাছালিতে ভরা।কিন্তু হঠাৎ করেই এক দুপুর বেলা বুকের মধ্যে চিনচিনে ব্যাথা শুরু হল নরেন বাবুর। যে মানুষের এত পরিশ্রমে একফোঁটা জ্বর পর্যন্ত হয়নি তার হঠাৎ বুকে ব্যাথা তার স্ত্রী শুভদ্রার কাছে মোটেই ভাল ঠেকল কিন্তু নরেন বাবু সব হেসেই উড়িয়ে দিলেন। এভাবেই মাস কেটে যায় সে সব বুকে ব্যাথা আর নেই।কিন্তু মাস দুয়েক পর হঠাৎ সকাল বেলা ফুলগাছে জল দিচ্ছিলেন যখন নরেন বাবু হঠাৎ চোখে অন্ধকার দেখছিলেন আর তার পরেই জ্ঞান হারিয়ে ফেললেন। অনেকক্ষণ পার হয়ে যায় তার স্কুলের সময় হয়ে যায় তার স্ত্রী শুভদ্রা ডেকে, ডেকেও সারা না পেয়ে গিয়ে দেখে চিনি গোলাপ গাছের ধারে জলের ঝাঝড়ি হাতে পরে আছেন নরেন বাবু।জোরে চিৎকার দিলেন তিনি চিৎকার শুনে নরেন বাবুর ১৭ বছর বয়সী ছেলে সুশান্ত দৌড়ে এল। প্রায় ১৫ মিনিট পরে জ্ঞান ফিরলে আর দেরি না করে সে দিনই তাকে খুলনায় নিয়ে যাওয়া হল।ডাক্তার সব দেখে শুনে বিভিন্ন পরীক্ষা করে রিপোর্ট দিলেন তিনি বেশ কিছু দিন ধরেই হৃদরোগী। ভাঙা, ভাঙা সে যা বলল তার মর্মার্থ হল এই যে তার সময় প্রায় শেষ তাই তার জীবনের এ শেষ দিন গুলো সে তার স্ত্রী, ছেলে, মা তার প্রিয় বাড়ি সব কিছু ছেড়ে পাড়ি জমায় জীবন, মৃত্যু সব কিছুর উর্ধ্বে চলে গেলেন নরেন বাবু। নরেন বাবুর স্ত্রী পাগল প্রায় তার ছেলেও বাবাকে হারিয়ে সমস্ত কিছু তার উল্টে পাল্টে গিয়েছে তার মা বেঁচে থেকে ও মৃত।নরেন বাবুর চলে যাওয়ার পরে ৩ মাস কেটে গিয়েছে এখন ভাদ্র মাস বেশ কিছু দিন ধরে প্রচণ্ড রোদের তেজ নরেন বাবু চলে যাওয়ার পর গাছ, বাড়ি ঘরের যত্ন আর কেউ সেভাবে নিতে পারে না। আজ অমাবস্যা সকাল থেকে ঝুম বৃষ্টি ঝড়ের মত আজ শুভদ্রা দেবীর মন খুব খারাপ আজকের এই দিনেকত্ত উৎসাহ নিয়ে কত্তকিছু আনত আর আজ কোন মন নেই কিছুর। তবুও রাতে আজ সামান্য কিছু বানালেন। হঠাৎ রাত তখন ৮/৯টাহবে গ্রামে এত ঝড়ে চার দিক পুরো শুন শান হঠাৎ শুভদ্রাদেবীর মনে হল তাকে কেউ ডাকছে মনের ভুল ভেবে নিজের কাজে ব্যাস্ত হলেন তিনি হঠাৎ আবারো ডাকটি কানে এল "শুভ্রা" শুভ্রা" তোমার বানানো রুটি আর ডিম আমায় দাওনা বড্ড ক্ষিদে তোমাদের ছেড়ে এ বাড়ি ছেড়ে আমি ভালনেই আমি পারছিনা থাকতে"শুভদ্রা দেবীর বুক কেঁপে উঠল বিদ্যুৎ চমকানো ঝিলিক চোখের মধ্যে এ সে যেন কাল্পনিক কিছু ধরাপড়ল তার চোখে মারা যাওয়ার দিনের জামাটি পরে নরেন বাবু তার সামনে, সে জোরে চিৎকার দিতেই সব মিলিয়ে গেল। তার এক মাত্র ছেলেকে নিয়ে বড্ড ভয় পেয়ে পরের দিন সকালেই তার ঘর, সংসার সমস্ত ফেলে তার বাপের চলে গেলন।যেতে,যেতে রাত প্রায়।এত যুগ ধরে যার সাথে সংসার যে সব সময় তার ভয় ভাঙাত আজ তার ভয়েই সবটা ছাড়তে হল!! যা হোক, রাতে এসে ক্লান্তিতে সব ভাবতে, ভাবতে ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে গেল হঠাৎ সুশান্ত জোড়ে চিৎকার দিতে চাইল কিন্তু পারছেনা কে যেন তার গলা জোর করে চেপে ধরল আর একটু পরে বলল" আয় আমার সাথে আয় বলছি আমি তোকে ছাড়া থাকব না।কেউ মনে হল খাট ধরে উঁচু করে ফেলল শুভদ্রাদেবী জোরে চিৎকার দিয়ে বললেন" তুই মরে ছিস বলে কি আমরাও বাঁচতে পারবনা?" বলেই জ্ঞান হারালেন পরের দিন সকালে উঠলে আগের রাতের কথা মনে পড়ে কেমন করে উঠল তার দুর্বল শরীর তবু একটু হাঁটতে খারাপ লাগছে না তার।একটা নিমের ডাল নিয়ে এগোতেই জোড়ে এক ঝটকা বাতাস এল সব কেমন কালো, কালো হয়ে গেল ঘন মেঘে "শুভ্রা, শুভ্রা" ডাক শুনেই আৎকে উঠলেন "তোমায় ছাড়া থাকতে খুব কষ্ট চলনা আমার সাথে রথেকরে তুমি আর আমি আর কিছু দিন পরে শান্ত!! চলনা চলনা!! শুভদ্রা দেবী কোন প্রতি উত্তর শুধু তার চোখে চোখ রেখে মনে হল নিরব সম্মতি দিল হাত ধরে তার স্বামীর চির অসীমের পথে যাত্রা মনে হল কোন চিরশান্তির পরশ বুলানো পথে তার স্বামীর হাত ধরে তার নিথর দেহ থেকে আত্মাবের হয়ে নরেন বাবুর আত্মায় মিলে যেন অভিন্ন আত্মা!!!

আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
বিশ্বরঞ্জন দত্তগুপ্ত ভালো লাগল । শুভকামনা । আমার লেখার পাতায় আমন্ত্রণ ।
ভালো লাগেনি ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
ইমরানুল হক বেলাল দারুণ অনুভূতির প্রকাশ।
ভালো লাগেনি ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
কাজী জাহাঙ্গীর প্যারা করে লিখলে পাঠকদের জন্য সুবিধে হয়। ভালই লিখেছেন, গল্প কবিতায় আপনাকে স্বাগতম। আশাকরি পদচারণা বাড়াবেন আর ভালো ভালো লেখায় গ/ক কে মাতিয়ে রাখবেন। অনেক শুভকামনা রইল।
ভালো লাগেনি ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
মোঃ নুরেআলম সিদ্দিকী তাহলে এ ভাবেও সম্ভব? বেশ চমৎকার লাগলো। শুভকামনা ও ভোট রইল, ভালো থাকুন.....
ভালো লাগেনি ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

২২ এপ্রিল - ২০১৭ গল্প/কবিতা: ১ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪