সাম্য সবে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে বাড়ি থেকে দূরে কলেজে পড়তে এসেছে। এতদিন বাড়ির বাইরে বেরবার প্রয়োজন পড়েনি। বাড়ির কাছেই স্কুলেই পড়াশোনা করেছে। বরাবর ভালো রেজাল্ট করে এসেছে। সবার কাছে প্রশংসা পেয়ে এসেছে। বাপ-মায়ের এক ছেলেকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন। ছেলেকে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে জীবনে প্রতিষ্ঠিত দেখতে চান। সাম্য জয়েন্টে কোয়ালিফাই করে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে চান্স পেয়েছে। এখানে হস্টেলে থেকেই পড়াশোনা করতে হবে তাকে। এই প্রথম বাড়ির বাইরে বাবা-মাকে ছেড়ে থাকতে খুব কষ্ট হচ্ছে। হস্টেলে ঠিক মন বসাতে পারছে না। সাম্য বরাবরই একটু ইন্ট্রোভার্ট। একা থাকতে ভালোবাসে। স্কুললাইফেও খুব একটা বন্ধু ছিল না ওর, বেশিরভাগ সময় পড়াশোনা নিয়েই থাকত। তাই হস্টেলে অন্য ছেলেরা যেখানে হৈহুল্লোড় করে, আনন্দফুর্তি করে সময় কাটাত, সেখানে ওর কেমন যেন একটা আড়ষ্ট ভাব। বন্ধুরা গোবেচারা পেয়ে মাঝেমাঝেই র্যানগিং করত। “এই এক গ্লাস জল নিয়ে আয় তো, শার্টটা লন্ড্রিতে দিয়ে আয় তো”-এরকম হাজারো ফাইফরমাশ লেগেই থাকত। প্রতিবাদ করার মত স্মার্টনেস ছিল না। তাই বন্ধুরা যা বলত তাই করে যেত ইচ্ছে না থাকলেও।
একদিন হস্টেলে ছুটির দিন দুপুরবেলা ক্লাসের নোট আনার জন্য বন্ধু দীপঙ্করের রুমে গেল সাম্য। গিয়ে দেখে দীপঙ্কর ও আরো কয়েকজন বন্ধু মিলে একটা ম্যাগাজিন খুব আগ্রহ নিয়ে দেখছে। সাম্য আসামাত্র বন্ধুরা ওকে ঘিরে ধরল। বলল-“আজ তোকে একটা মজার জিনিস দেখাব”। ম্যাগাজিনটা সামনে আনতেই সাম্য দেখতে পেল এক অর্ধনগ্ন নারীর ছবি। দেখেই চোখ ফিরিয়ে নিল।
“এখুনি কি হয়েছে চাঁদু, সবে তো শুরু”- একজন বলল পাশ থেকে।
“আমি এসব দেখব না”-বলে চলে যাচ্ছিল সাম্য।
দীপঙ্কর এসে চেপে ধরল শক্ত করে, আরেকজন ম্যাগাজিনের পাতার পর পাতা উল্টিয়ে নগ্ন নারীদের ছবি দেখাতে লাগল।
সেদিন খুব খারাপ লেগেছিল সাম্যর। ভালো ছেলে হিসেবে ওর একটা সুনাম আছে। কলেজে ভালো রেজাল্ট করতে হবে, বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে বখে গেলে চলবে না, একথা ওর মাথায় সবসময় ছিল। সবাই যে বখাটে ছিল, তাও নয়। একটু চাপা স্বভাবের বলে ভালো বন্ধু গড়ে উঠছিল না। সকাল থেকে কলেজের ক্লাস আর সন্ধেবেলা হস্টেলে ফিরে পড়াশোনা-এই নিয়েই কাটছিল সাম্যর হস্টেলের দিনগুলি। বন্ধুরা যেভাবে আমোদপ্রমোদ, হৈহুল্লোড় নিয়ে মেতে থাকত, সেখানে সাম্যর দিনগুলি ছিল নেহাতই বোরিং। বন্ধুরা অনেকে এর মধ্যেই মেয়ে বন্ধু জুটিয়ে নিয়েছিল। বিকেলবেলা গার্লস হস্টেলের সামনে ছেলেদের ভিড় লেগে যেত। প্রত্যেকে নিজের গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে আর গল্প করতে করতে বাইরে চলে যেত। তারপর যথারীতি রিল্যাক্স হয়ে সন্ধেবেলা ফিরত হস্টেলে। প্রেম করলে নাকি অনেক ইন্সপিরেশন পাওয়া যায়, বন্ধুদের কাছে সুনেছিল সাম্য। কিন্তু আন্সমার্ট বলে কোন মেয়েকে প্রপোজ করার সাহস ছিল না। মেয়েরাও এত গোবেচারা ছেলেদের পছন্দ করেনা। স্মার্ট, একটু ডাকাবুকো টাইপের ছেলেদেরকেই মেয়েরা বেশি পছন্দ করে।
সাম্যর বিনোদন বলতে ছিল শুধু হস্টেলের কমন রুমে মাঝেমাঝে সন্ধেবেলা টিভি দেখা। প্রত্যেক শনিবার মধ্যরাতে লোকাল কেবলে প্রাপ্তবয়স্কদের সিনেমা দেখানো হত। বন্ধুদের ভিড় উপচে পড়ত। সাম্য জানত, তাই শনিবার রাতে কমনরুমের দিকে যেত না। খেয়াল করত ঠিক ঐ সময় হলেই কমনরুমে বন্ধুদের হুড়োহুড়ি পড়ে যেত। সাম্য পড়াশোনা নিয়ে থাকত নাহলে ঘুমিয়ে পড়ত। একদিন শনিবার রাত্রিবেলা সাম্য ঘুমিয়ে পড়েছিল। হঠাৎ একদল বন্ধু হুড়মুড় করে ওর ঘরে ঢুকে পড়ল। তারপর হৈহৈ করতে করতে ওকে চ্যাংদোলা করে কমন রুমে নিয়ে গেল।
সাম্য বলতে লাগল “আমি যাব না। প্লিজ”।
একজন বন্ধু বলল-“একবার দেখ, দারুণ লাগবে”। অনিচ্ছা সত্ত্বেও সাম্যকে কমন রুমে নিয়ে গিয়ে প্রাপ্তবয়স্কদের নগ্ন সিনেমা দেখাল বন্ধুরা। কিছুক্ষণ দেখার পর ভালোই লাগছিল অনাবরণ নারীশরীর দেখতে। কোমল, পেলব নারীর স্তন, নিতম্ব দেখে এক অচেনা অনুভূতির সন্ধান পেল সাম্য। বন্ধুরা সাম্যর মাথা চিবোতে লাগল-“মাঝেমাঝে দেখবি। ভীষণ রিল্যাক্স লাগবে”।
রাতে ঘুমের মধ্যেও সিনেমার উত্তেজক দৃশ্যগুলো মাথার মধ্যে ঘুরতে লাগল। বীর্যস্খলন হল। এক অদ্ভুত ভালোলাগার আবেশে জড়িয়ে গেল সাম্য।
পরের শনিবার থেকে আর বন্ধুদের ডাকতে হত না। নিজেই গিয়ে হাজির হত যৌন উত্তেজনার আনন্দ নিতে। বন্ধুরাও স্বাগত জানাল-“এইতো ছেলে লাইনে চলে এসেছে”। একটা পাকা ছেলে সাম্যকে উত্তেজনা প্রশমনের জন্য হস্তমৈথুনের পদ্ধতি শিখিয়ে দিয়েছিল। সেই থেকেই শুরু হল কুপথে গমন। বন্ধুবান্ধব তেমন না থাকার জন্য বিনোদনের একটা অন্যতম মাধ্যম হয়ে দাঁড়ালো নগ্ন নারী ও পর্ন ভিডিও। ক্রমে পড়াশোনায় মনোনিবেশ কমতে লাগল। জীবন গড়ার যে লক্ষ্য নিয়ে হস্টেলে পড়তে এসেছিল সাম্য, ক্ষনিক আনন্দের ফাঁদে পড়ে তার থেকে ক্রমাগত বিচ্যুত হতে লাগল। বন্ধুদের মোবাইলে, কম্পিউটারে উত্তেজক ছবি, ভিডিও দেখলেই খুব উৎসুক হত সাম্য। তারপর যথারীতি কপি করে নিজের মোবাইলে ট্রান্সফার। একা একা ঘরে বসে এসব ভিডিও দেখা এবং অত্যধিক বীর্যস্খলনের ফলে দ্রুত শারীরিক ও মানসিক অবনতি হতে লাগল সাম্যর। সেকেন্ড সেমিস্টারে পরীক্ষার ফল খুব খারাপ হল।
ক্রমশ পারিপার্শ্বিক জগত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নিজের একটা আলাদা গণ্ডির মধ্যে নিজেকে বন্দি করে ফেলেছিল সাম্য, যার মূলে ছিল মানসিক বিকৃতি।
তিন-চার মাস পর বাড়ি যাবার পর বাবা-মাও সাম্যর মধ্যে পরিবর্তন লক্ষ্য করলেন। কেমন যেন বিচ্ছিন্ন টাইপের, কারো সঙ্গে কথা বলত না। পরীক্ষার রেজাল্টের কথা জিজ্ঞেস করলেও এড়িয়ে গেল সাম্য। আরও কয়েকমাস একইভাবে জীবনযাপনের পর সাম্য নিজেই বুঝতে পারল, পড়াশোনায় প্রচণ্ড অমনোযোগ আর প্রচণ্ড ভুলে যাওয়ার প্রবণতা। ক্লাসে স্যার পড়ানোর সময় অনেকসময় অন্যদিকে তাকিয়ে থাকত। এজন্য স্যারের কাছে বকাও খেতে হত। থার্ড সেমিস্টারেও খারাপ হল রেজাল্ট। ধীরে ধীরে মানসিক অবসাদের শিকার হতে লাগল সাম্য।
গ্রীষ্মের ছুটিতে বাড়ি আসার পর বাবা-মা বুঝতে পারলেন, ছেলের নিশ্চয়ই কোন মানসিক সমস্যা হয়েছে। সাম্যকে জিজ্ঞেস করলেও ও খুব খিটখিটে মেজাজের সঙ্গে তর্ক করত। বাবা-মা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়লেন। শেষে এক মনোরোগ বিশেষজ্ঞের দ্বারস্থ হলেন তারা। উনি খুব আন্তরিকভাবে ও খেলাচ্ছলে গল্পগুজবের মাধ্যমে সাম্যর সমস্যাটা ধরার চেষ্টা করছিলেন। ও অবসর সময়ে কি কি করতে ভালোবাসে, খেলাধুলা করে কিনা এসব যাবতীয় তথ্য জানতে চাইলেন। ডাক্তারবাবু ধীরেধীরে ওর মনের কাছাকাছি পৌঁছাবার পর বুঝতে পারলেন, সাম্য পর্নগ্রাফির শিকার। ডাক্তারবাবু ওকে কাউন্সেলিং করলেন। অন্ধকার থেকে বেরিয়ে এসে কিভাবে উন্নতমানের বিনোদনের মাধ্যমের শরীর ও মনের বিকাশ ঘটনা যায়, সে সমপর্কে উদ্বুদ্ধ করলেন। সাম্য নিজেও বুঝতে পারল কিভাবে অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছিল ধীরেধীরে। ও গান শুনতে ভালবাসত, গল্প লিখতে ভালবাসত। এসব প্রায় ভুলেই গেছিলো। আধুনিক যুগে হাইস্পীড ইন্টারনেটের দৌলতে সামান্য একটা ক্লিকে চোখের সামনে চলে আসছে যৌনতা ভরা দৃশ্য ও ভিডিও। এর কুফল নিজের জীবনে বাস্তব উপলব্ধি করল সাম্য। ডাক্তারবাবু পরামর্শ দিলেন, বোঝাবার চেষ্টা করলেন কিভাবে পর্নগ্রাফি মানসিক বিকৃতি তৈরি করে স্বাভাবিক যৌনতার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় এবং এর ফলে ভবিষ্যতে বিবাহিত জীবনে কি কি সমস্যা আসতে পারে। সাম্য বুঝতে পারল, ক্ষণিক আনন্দের ফাঁদে পড়ে কতটা শারীরিক ও মানসিক শক্তি নষ্ট করেছে। আর ভুল পথে পা বাড়াবে না, সেজন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হল। ধীরে ধীরে অভ্যাসের মাধ্যমে অশ্লীল ভিডিও দেখার কু-ইচ্ছাটাকে জয় করে পর্নগ্রাফির ফাঁদ থেকে বেরিয়ে এল সাম্য। সুস্থ্য বিনোদনের মাধ্যমে সুস্থ জীবনযাপন করার আনন্দ খুঁজে পেল সে। এখন সে মন দিয়ে পড়াশোনা করে, অবসর সময়ে গান শোনে, গল্প লেখে। মনটা খোলামেলা হওয়ার কারণে কিছু ভালো বন্ধুও জুটিয়ে ফেলেছে সে।
১৯ এপ্রিল - ২০১৭
গল্প/কবিতা:
৯ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪