বাজান তুমি দেশে যহন আইবা মেলা টেকা নিয়া আইবা। তুমি ,আমি আর তোমার বাপেরে নিয়া সুখে সংসার চালামু । আমি আর তোমার বাপে মিল্লা তোমার জন্য লাল টুকটুকে এক্কান বউ আনমু। ফোনে কথা বলছে শখিনা বানু ছেলের সাথে। বাবা শমসের। ও ঘর থেকে গলা হাকিয়ে বলছে। কি গো বাবলুর মা। কথা আর শেষ অইবো না। ছেলে টেকা পাঠাইবো পরে আমাগো সুখ অইবো।একদিন দেখবা সব ছাইড়া আমি পরপারে চইলা গেছি। তহন তুমি আর তোমার পোলায় মিল্লা সুখের হাঁড়ি কিন্না ভাত রাইন্ধা খাইও। বাবলুর মা কথা খানা শোনা মাত্রই ফোন কেটে স্বামীর মুখ চেপে ধরে। তারপর বলে আবার কও ছানি কথা খানা। এমন ভাবে কইতে পারলা। আমায় থুইয়া কেমনে থাকবা তুমি। এই বলে হু হু করে কেঁদে উঠেন তিনি। ছেলে বাবলু বিদেশ থাকে। বাড়ি জমিন বিক্রি করে বাপজান তারে বিদেশ পাঠাইছে। মালেশিয়ার কোয়ালালামপুরে। ছেলে বিদেশ গিয়ে যা টাকা পাঠায় ঐ টাকা দিয়া শমসের দু বিঘা জমি কিনেন। আর তার মা লাল মিয়া নামের এক বিত্তশালির কাছ থেকে হাজার দশেক টাকা আনে সুদে। ঐ টাকা দিয়া দুইখানা গরু কিনে। সেই দুইটা গরু আর জমিন নিয়া মোটামুটি ভালই চলছিল তাদের সংসার। কিন্ত দিনে দিনে লাল মিয়ার টাকার সুদ বাড়তেই থাকে। বাড়তে বাড়তে এক পর্যায়ে সুদে আসলে সমান হয়ে যায়। মানে বিশ হাজার টাকা।শমসের এত টাকা কোথা থেকে দিবে। খুব চিন্তায় পড়ে সে। ছেলের মাকে ডেকে শমসের একদিন বললো ওগো বাবলুর মা একখান কথা শুইনা যাও দেহি। মুখে চিন্তার ছাপ। বাবলুর মা ডাক শুনে দৌড়ে ছুটে তার কাছে। মুখের দিকে চেয়ে বলে কি গো, তোমার কি হইছে।মুখখানা এমন দেখাচ্ছে কেনো।শমসের বলবে কিনা বলবে সে নিয়ে দ্বিধা গ্রস্তে আছে। এক পর্যায়ে বলে ফেলেন তিনি ।দেখো বাবলুর মা, লাল মিয়ার টেকা তো দিন দিন বেড়েই চলছে। তোমার পোলারে কইয়া দেইখো কিছু টেকা দিতে পারবো নি।দিলে একটু স্বস্তিতে দিন কাটাইতে পারুম। নইলে যা ও কয়ডা দিন বাঁচনের কথা আছিল তাও.... বলে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে থেমে গেল সে। শখিনা বানু চিন্তা করে এই তো মাস খানেক হয় ছেলে পনেরো হাজার টাকা পাঠাইছে। তাছাড়া বিদেশে ছেলে ভালো কোন কাজ পায় নি। তাই বেশি টাকা পাঠাতেও পারে না। চিন্তা করে সে, এখন আবার কেমনে চাইবো ..। এই বছর ধান ও তুলতে পারে নি তারা। অকাল বন্যায় তাদের সব জমিন পানিতে তলিয়ে গেছে। এ দিকে লাল মিয়া একটানা মানুষ পাঠায় টাকার জন্য তাগদা দিতে থাকে। নিরুপায় শমসের কি করবে বুঝতে পারছে না। তাই তাদের যত্নে লালিত দুটো গরুই বাজারে নিয়া যায় বিক্রি করার জন্য। দাম কষাকষির পর চৌদ্দ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয় আদরের মানিক জোড়া। অবশেষে বাড়ি ফেরার জন্য রওয়ানা দেয় শমসের। বাড়ি আসে। শখিনা বানু আর শমসের যুক্তি করে। লাল মিয়াকে দশ হাজার টাকা দিবে বাকি চার হাজার টাকা নিজের হাতেই রাখবে। যাই হোক সকাল হলো লাল মিয়ার বাড়িতে শখিনা আর শমসের গেলেন পুরো দশহাজার ঝকঝকা নতুন নোট নিয়ে। গুনে গুনে লাল মিয়ার হাতে দিল টাকা গুলো কিন্তু লাল মিয়া টাকাগুলো হাতে নিয়া কেমন জানি ওলট পালট করে দেখতে লাগলো। তারপর চকচকা দশ হাজার টাকা আবার ফিরিয়ে দিলেন শমসের এর হাতে শমসের তো অবাক হলো, ব্যাপার খানা কি! এই গত কালকেও লাল মিয়া টেকার জন্য ঘরে থাকতে দিল না আইজকা আবার কি হইলো। শখিনা বানু একবার স্বামীর দিকে চায় আরেকবার লাল মিয়ার দিকে। লাল মিয়া শমসের কে বললো শুনো শমসের তোমাগোরে ঠকানোর মানুষের অভাব নাই। একটু চোখ রাখবা তো চারদিকে। দুই দুইটা তাজা গরু বেইচ্ছা আইলা বাজারে। আমারে কইলে তো আমি নিজেই রাইখা দিতাম। শেষ পর্যন্ত নকল টেকা নিয়া বাড়ি ফিরলা ।যাও যাও অহন টেকা লাগবো না। কয়দিন পরেই দিও ।এই বলে হন হন করে ঘরের ভিতর চলে গেল লাল মিয়া ।সারা দিন সারা রাত কান্না করে শমসের আর তার বউ। এ দিকে ছেলের সাথেও কথা বলতে পারে না তারা। যার বিপদ আসে তার চারদিক ঘিরেই বিপদ আসে। দিন যায় দিন আসে। শমসের ও নতুন কাজ খোঁজে। একদিন শমসের কাজ না পেয়ে মিস্ত্রি দের সাথে যোগালো হিসাবে কাজে নেমে পড়ে। কাজ করতে থাকে । যা দেয় তাই দিয়ে চাল আর ডাল কিনে কোন মতে দু বেলার খাবার হয়ে যায়। কিন্তু সুদের টাকা দিন দিন বাড়তেই থাকে আর শমসের এর চিন্তাও । লাল মিয়াকে অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে রাখে ছেলে টাকা পাঠাবে পাঠাবে বলে। একদিন শমসের কাজে বের হয়। কাজ করতে করতে শমসের মাথা ঘুরে মাটিতে পরে যায়। সবাই ধরাধরি করে শমসের কে বাড়িতে নিয়া আসে। ততক্ষণে শমসের চলে যায় না ফেরার দেশে। শখিনা বানু পাষানে মাথা ভাঙ্গে ঘরের মেঝেতে। বিলাপ করে কেঁদে বলে ঋনের টেকা আমার স্বামীরে খাইছে । আইজকা ঋন না থাকলে আমার স্বামী আমারে ছাইড়া যাইতে পারতো না। ও গো বাবলুর বাপ তুমি ফিরা আহো । একদিন দেখবা তোমার পোলায় সব টেকা সুদ কইরা দিছে।আমাগো জীবনে আবার সুখ ফিরা আইবো। ও বাবলুর বাপ....
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোঃ মোখলেছুর রহমান
বর্তমান সময়ের সাথে উপকণের মুল্যের সামঞ্জস্য রাখা প্রয়োজন,গরু দুটির মূল্য কম হয়েছ,তবে লেখা বেশ হয়েছে।
ভাইয়া আমাদের অঞ্চলে বৈশাখের প্রথম দিকেই প্রচুর অকাল বন্যা দেখা দিয়েছে বিধায় গরুর দাম খুবই নিম্ন সীমার দিকে ছিল। যাই হোক আপনার কথার যুক্তি আছে। আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করবো বর্তমান কে প্রাধান্য দিতে। অশেষ ধন্যবাদ।
মোঃ নুরেআলম সিদ্দিকী
হাতে গল্প লেখার দক্ষতা বেশ অমায়িক। ঐ যে রুবন দা বলছেন→ মসলা আছে, শুধু মিস্ত্রিগিরিটা ভালো ভাবে শিখলে হয়ে যাবে। অসাধারণ গল্পের ভাব বিন্যাস। তবে, জাহাঙ্গীর ভাইয়ার কথা গুলো মেনে নিতে পারলেই পরিপক্ব হয়ে যাবেন। অনেক শুভকামনা ও ভোট রইলো।
ধন্যবাদ নুরেআলম ভাই। রুমন দা আর জাহাঙ্গির ভাইয়ার কথা গুলো খুবই গুরুত্ব পূর্ণ। তার সাথে আপনার কথাগুলোও। সম্পূর্ন বিষয় বিবেচনা করেই পরবর্তী লেখাগুলো দিকে নজর রাখবো
কাজী জাহাঙ্গীর
বেশ ভালই লিখেছেন। গল্পের আঙ্গিক দিকে একটু তাকালে বুঝতে পারবেন এত বড় প্যারা হলে পাঠকের পড়তে কি অসুবিধা হয় । কথোপকথন গুলে আলাদা লাইনে দিলে পড়তে যেমন সুবিধা হয় আঙ্গিক অবয়বটাও ভাল হয়। অনেক শুভকামনা, ভোট আর আমার পাতায় আমন্ত্রণ।
ধন্যবাদ সুন্দর মতামত দেয়ার জন্য। খুব চেষ্টা করেছিলাম প্যারা দিয়ে লেখার কিন্তু আমার মেমোতে শব্দ পূর্ন হয়ে গিয়েছিল। স্পেস দিলে পুরোটা লেখা যেতো না। পরবর্তীতে চেষ্টা করবো আপনার মহামূল্যবান মতামতের গুরুত্ব রাখতে।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।