লুঙ্গি কান্ড

অশ্লীল (এপ্রিল ২০২০)

মোঃ মোখলেছুর রহমান
  • 0
  • ৩০

একজন বিদেশী পর্যটক বাংলাদেশে এসে বাংলাদেশের দুটো জিনিষ তাঁকে আশ্চর্যান্বিত করে। জিনিষ দুটো দেখে তিনি শুধু আশ্চর্যান্বিতই হননি বরং তিনি রীতিমত মত প্রকাশ করেছেন যে, এদুটো জিনিষ পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্যের সমকক্ষ। তিনি মোহে পড়ে যান জিনিষ দুটোর। অবশেষে সিদ্ধান্ত নেন তিনি বাংলাদেশেই থেকে যাবেন।


যে দুটো জিনিষের মোহে তিনি বাংলাদেশে থাকার সিদ্ধান্ত নেন তার প্রথমটি হল ‘লুঙ্গি’। চমকে যাবার মতো কথা বটে। তিনি যখন প্রথম ঢাকাতে নামেন এক রিক্সাচালকের পরনে তা দেখে থমকে দাঁড়ান এবং তাকে কাছে ডেকে নেড়েচেড়ে দেখেন এবং দো-ভাষীর মাধ্যমে জানতে পারেন এর নাম ‘লঙ্গি’। তিনি যতই দেখেন ততই অবাক হন। সব থেকে অবাক হন এর পরার কলা-কৌশল দেখে এবং তিনি যারপর নাই বিস্ময় প্রকাশ করেন এই ভেবে যে, দুই দিকেই খোলা , কোনরূপ বোতাম নেই, কাঁধে আটকিয়ে রাখার ফিতেও নেই, খুলেও পড়ে না অথচ কেমন পেটের সাথে দিব্যি আটকে থাকে।


কথায় কথায় ঐ রিক্সাচালকের আথিয়তা গ্রহণ করে ফেলেন পর্যটক মহাশয়। রিক্সাচালক পড়েন মহা বিপদে। নতুন অথিতি ঘরে যাচ্ছে অথচ ঘরে কোন বাজার নেই। নেই নুন মরিচ তেল। বাজার করবে সঙ্গে ব্যাগও নেই, অগত্যা গলির কাঁচা বাজারের মোড়ে রিক্সা দাঁড় করিয়ে কিছু মরিচ পেজ মুলো লুঙ্গিতে করে এনে রিক্সার সীটের নীচে গোপন কুঠরীতে রাখে। লুঙ্গি দিয়ে ব্যাগের কাজও সারা যায় দেখে পকেট থেকে তিনি নোটবুক বের করে লিখে রাখেন যে,“লুঙ্গি দিয়ে ব্যাগের কাজও সারা যায়”। 


রাতে খাওয়া দাওয়ার পর রিক্সাচালকের সাথে অনেক প্রকার আলাপ হয় দো-ভাষীর মাধ্যমে। তিনি জানতে পারেন রিক্সাচালকের বাড়ি চর এলাকায়। রিক্সাচালকের ভাষ্যে এক মোহময় দৃশ্যকল্প ভেসে ওঠে তার মানস-পটে।পাল-তোলা নৌকা, গাঙ-চিলের উড়াউড়ি, কৃষাণ বধুর জল আনা, আরও কতো কী! তিনি তার সংসারের ব্যয়-ভারের দায়িত্ব নিয়ে গ্রামে যাওয়ার অনুরোধ করলে তারা দুদিন পর গ্রামে ফিরে আসে।
  -দুই-
আজ প্রায় এক বছর হতে চলল ঐ পর্যটক মহোদয় গ্রামে থাকছেন। গ্রামের আচার ব্যবহার তাঁকে মুগ্ধ করেছে। ইতোমধ্যে তিনি তাঁর ফ্যামিলিকেও  গ্রামে এনেছেন্ সবাই যেনো গ্রাম্য পরিবেশে মিশে গেছেন। গ্রামে সবাই লুঙ্গি পড়েন,তিনিও লুঙ্গি পড়তে অভ্যস্থ হয়ে পড়েছেন। পাশের বাড়ির সমের শেখের সাথে তাঁর সখ্যতা গড়ে উঠেছে। 


সমের শেখ গ্রামের একজন উদীয়মান তরুণ কৃষক, তিনি প্রতিদিন নদী পার হয়ে ওপাড়ে জমি চাষ করেন। উপজেলা কৃষি অফিসারের সহায়তায় সমের শেখ একটি প্রদর্শনী প্লটের বরাদ্দ নেন । আজ অফিসার মহোদয় এসেছেন ‘প্রদর্শনী  প্লট’ পরিদর্শনের জন্য। নদীতে তখন কোন খেয়া না থাকাতে অফিসারকে নিয়ে পড়লেন মহা বিপদেঅথচ সকালেই তিনি খেয়াতে পাড় হয়েছে। পরে শুনলেন  খেয়া-নৌকাটি পুরাতন হওয়ায় তলার একটি কাঠ খুলে গেছে আর মেরামত করা হয়নি । নদীতে পানি বেশী না হওয়ায় অফিসার মহোদয় প্যান্ট ভিজিয়েই পাড় হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।  সমের শেখের সাথে পর্যটক মহোদয়ও আছেন তবে সমের শেখেরপরনে আছে লুঙ্গি। অফিসারও নদী এলাকার বলে তিনিই আগে নামলেন তাঁর পেছনে পর্যটক মহোদয় এবং সবার পেছনে সমের শেখ। অফিসার মহোদয় প্যান্ট ভিজিয়েই পাড় হচ্ছেন, পর্যটক মহোদয়ও প্যান্ট ভেজাচ্ছেন আর সমের শেখ পেছনে তাই সে পুরনো কৌশল অবলম্বন করে যেটি সে প্রতিদিন এ পাড়ে চাষ করতে এসে যে ভাবে লুঙ্গি শুকনো রাখে। পানি যতই বাড়ে লুঙ্গি ততই উপড়ে তুলে এবংপানি কম হলে আস্তে আস্তে তা নামিয়ে দেয়। ওপাড়ে উঠে সমের শেখের লুঙ্গি শুকনো দেখে অফিসার মুচকি মুচকি হাসেন কিন্তু পর্যটক মহাশয় অবাক!পরে বিষয়টা বুঝতে পেরে হেসেই খুন।


আজ অফিসার,সমের শেখ ও পর্যটক সাহেব ক্ষেতের আইল দিয়ে হেটে যাচ্ছে। পথে যেতে যেতে সমের শেখের এক নম্বরের বেগ হল; আলগোছে লুঙ্গিটা তুলে রাস্তার পাশে বসে পড়েন,কাজ সেরে আবার চলতে থাকেন পর্যটক সাহেবের সাথে। প্রকৃতির এই চাপটা পর্যটক মহোদয় অনেক আগে থেকেই অনুভব করছিলেন কিন্তু পরনে প্যান্ট থাকায় ওয়াটার মাইনাসের উপযুক্ত জায়গা না পেয়ে অনেক কষ্টে চেপেচুপেই যাচ্ছিলেন; ভাবছিলেন বাড়ি ফিরেই সারবেন কাজটা কিন্তু সমের শেখের লুঙ্গির ব্যবহার দেখে তিনি আফসোস শুরু করেন। সমের শেখ তখন ছোট বেলার স্মৃতি রোমন্থন করে শুনান পর্যটক মহোদয়কে। ছোট বেলা পালা গান শুনতে শুনতে শেষ রাতের দিকে  পেন্ডেলে যখন ঘুম আসতো তখন লুঙ্গি মুড়িয়ে খড়ের উপর গুটিসুটি মেরে ঘুমিয়ে পড়তো। কখনো সখনো বাড়িতে ফিরে বাবার বকুনির ভয়ে খড়ের পালার নীচে লুঙ্গি মুড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়তে, তার সাথে মনের সুখে ঘুমাতো কুকুর ছানাগুলোও।


এখনপর্যটক মহোদয় বুঝতে পেরেছেন যে,লুঙ্গি মানুষকে যে কতরকম বিপদ আপদ বা অপমান থেকে বাঁচায় তার হিসেব কষে শেষ করা যাবে না। এই তো সেদিন হাটের মধ্যে ভীষণ বাথরুম চেপে বসে পর্যটক মহাষয়ের। গ্রাম্য হাট কোথাও ল্যাট্রিনের ব্যবস্থা নেই। অগত্যা কাঁচা বাজারের এক কোনে বসে পড়ে। উরু লুঙ্গি দিয়ে ঢেকে তলা দিয়ে কাজ সেরে ফেলে অথচ বাইরে থেকে বোঝার কোন উপায় নেই যে সে আসল কাজ সারছে। লোকে ভাববে যে, সে বসে আছে। টিস্যু দিয়ে কুলুখ নিয়ে তারপর এদিক ওদিক একবার চেয়ে মানুষের ভীড়ে মিশে গিয়েছিল। এক উজবুক গোছের লোক উপর দিকে চেয়ে চেয়ে হাটছিল সহসা কাদা জাতীয় কি যেনো পায়ে ঠেকে তার, তারপর গন্ধ ছড়ালে বুঝতে পারে ওটা কি। অবশেষে চৌদ্দ পুরুষের নামে গালি ঝাড়তে থাকে সে। আল্লাহ বাঁচিয়েছেন, পর্যটক মহাশয় কুটুকুটু হাসি ছাড়ে যেনো নির্লজতার হাসি কিন্তু আবার এও বলে নিজেকে সান্ত¦না দেয় যারা পড়েছে এই বিপদে তারাই জানে উদ্ধার কাকে বলে। অবশ্য কৌশলটা সমের শেখের কাছেই প্রথম শুনেছিরেন তিনি। এখানেই কি শেষ পর্যটক মহোদয়ের কাহিনী! এ রকম ভুরিভুরি অনেক, তার দুটো এ রকম-


পাশের বাড়ির এক বিয়ে অনুষ্ঠানে গেছেন বরযাত্রী হয়ে। পরনে নামীদামী ব্রান্ডের লুঙ্গি, বরপক্ষই কিনে দিয়েছে সেটা; হাজার হলেও লুঙ্গি-প্রেমী বলে কথা। মহা ধুমধামে সবাই কনে বাড়িতে হাজির; যথানিয়মে বিয়ে বাড়ির কাজ শেষ । ইতোমধ্যে এক বানর-ওয়ালা বানরের খেল দেখাতে ডুগডুগিয়ে বাজিয়ে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে। পর্যটক মহোদয়ের আবদার বানর-নাচ দেখবে। বানরের কান্ড-কীর্তি দেখে সবাই হাসছে তো হাসছে; কেউ রুমাল মুখে দিয়ে, কেউ শাড়ীর আঁচল মুখে দিয়ে। পাশের একজন হাবাগোবা শ্রেণীর লোক লুঙ্গির এক প্রান্ত দিয়ে মুখ ঢেকে সেও হাসছে। তা দেখে পর্যটক মহাশয়ও সে তার লুঙ্গির এক মাথা তুলে মুখ ঢেকে হাসতে শুরু করল। তার কান্ড দেখে মুহুর্তে মজমা জনশুন্য। যখন বানর-ওয়ালা বুঝিয়ে দিল যে, তার লুঙ্গির আচল তোলার কারণে নীচের অংশ সদরঘাট হয়েছে । বুঝতে অনেক সময় লাগে পর্যটক মহোদয়ের কিন্তু যখন তিনি বুঝতে পারেন অবস্থাটা তখন তিনি সেখান থেকে এক দৌড়ে উধাও। বাড়িতে এসে ধরাস করে শুয়ে চির-শয্যা গ্রহণ করেন। বৌ দেখে আশ্চর্যান্বিত হন এবং তার ফিরে আসার কারণ জিজ্ঞেস করেন কিন্তু তিনি লা-জওয়াব; এ নির্লজতা তিনি বৌকে কী করে বোঝাবেন ভেবে চোখমুখ লাল হয়ে ওঠে। ঘটনা শুনে বউও হাসতে থাকে নির্লজতার হাসি।


সেই যে পর্যটক মহোদয় বাড়িতে ঢুকেন আর বের হলেন না। অতীব প্রয়োজনেও ঘরে বসে রইলেন। 


একদিন পড়শীদের এক বিচারিক কার্যে পর্যটক সাহেবের সাক্ষ্য প্রদানের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। তখন পর্যটক মহাশয় দুপুরের ¯œান সারছিলেন। দুজন লোক এসেছে তাঁকে ডেকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। বিচারিক সভা তাঁর জন্য অপেক্ষাকরছে বলে লোক দুটো জানায় এবং তাড়াতাড়ি বের হওয়ার জন্য তাড়া দিতে থাকে। অগত্যা পর্যটক সাহেব তাড়াহুড়ো করে কাপড় চেঞ্জ করে দুপুরের খাবার না খেয়েই বেড়িয়ে পড়ে। সভাস্থলে পর্যটক সাহেব যখন হাজির হল, সবাই তাঁকে দেখে হো হো করে হেসে উঠল। পর্যটক মহোদয় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যান, কিছুই বুঝতে পারেন না ব্যাপারটা কী। সভাস্থলের একজন তাঁর পরনের কাপড় নির্দেশ করেন। পর্যটক মহোদয় পরনের দিকে দেখেই মুখ লাল হয়ে উঠে,এ যে তার স্ত্রীর পেডিকোট (সায়া) পরে এসেছেন। গোসল সেরে পরার সময় একটুও টের পাননি যে এটি লুঙ্গি নয়,পেডিকোট। তিনি মুহুর্তে বুঝতে পারেন তাড়াহুড়ো করতে গিয়েই এ বিপত্তি ঘটেছে।


অনেকদিন পর পর্যটক মহাশয় সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি নিজের দেশে চলে যাবেন। যথারীতি ফিরে যাবার সব আয়োজন শেষ। গ্রামের লোকজন তাঁকে অনেক লুঙ্গি উপহার দিল, অনেক সমাদর করল। গ্রামের মাতবর সাহেবের দেয়া সবচেয়ে দামী লুঙ্গিটি আজ তিনি পরেছেন। সেটি পরেই বাসস্টানে রওনা হলেন। সাথে অনেক লোক। অনেকে বিমান বন্দর পর্যন্ত এসেছেন তাঁকে এগিয়ে দেয়ার জন্য।


বিমানে উঠতে গিয়ে  তিনি দেখেন তাঁর পরনের লুঙ্গিটি নেই শুধু টাওজারটি রয়েছে, হয়তো ভীড়ের চাপে কখন খুলে পড়েছে। দু একজনকে জিজ্ঞেস করতেই তারা জানায়  গেইটে ওটি পরেই তাঁকে ঢুকতে দেখেছে সবাই। অবশেষে খোঁজ নিয়ে দেখেন লুঙ্গি ভর্তি তাঁর ব্যাগটিও নেই। বিমানে উঠে তিনি স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেন- “যাক সব লুঙ্গিই লুঙ্গির দেশে রয়ে গেল”।

আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
শ্রী প্রদীপ চন্দ্র মহন্ত দারুন লাগল দাদা।
ধন্যবাদ,ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন।
ফয়জুল মহী উপভোগ্য পড়া।
এজন্য কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি। দেরি করে উত্তর দেয়ার জন্য দুঃখিত

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

'লুঙ্গি' বাঙালী সংস্কৃতির সাথে মিশে আছে এবং বাঙালীরা এর ব্যবহারও রপ্ত করেছে বহু বছর থেকেই। এই লুঙ্গির অম্ল-মধুর কিছু অশ্লীল ঘটনাও জড়িত, যেটা বাঙালীরা মানিয়ে নিয়েছে জীবনের সাথে। সেই মধুর অশ্লীলতাটুকুই 'লুঙ্গি কান্ড' র মাধ্যমে বিষয়ের সাথে সামঞ্জস্যের চেষ্টা করা হয়েছে।

১৯ মার্চ - ২০১৭ গল্প/কবিতা: ৫৮ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪