প্রত্যাশার মরীচিকা

প্রত্যাশা (আগষ্ট ২০২০)

Ms Ahmad
  • ৩৪
সূর্য পশ্চিমাকাশে দোদুল্যমান। ঘন্টা দুয়ের মধ্যে অদৃশ্য হয়ে যাবে। খুবই সুন্দর মনোমুগ্ধকর পরিবেশে বসে আছি। পরিবেশটির বিবরণ এরকম; পিছনে মৎস চাষের দীঘি। সামনে জলধর হাওড়। বাতাসের ঝাপটার সাথে দৃষ্টির শেষ সিমানা থেকে ভেসে আসা ঢেউ খেলতে খেলতে কলকল স্বরবে কিনারায় আছড়ে পড়ছে। মাঝে মাঝে বাতাসের সাথে জলের কনা গায়েমুখে লাগছে। বাতাসও অনেক স্নীগ্ধ। শরিরের কাপড়গুলো একদিকে লেপটে ধরে অপরদিকে পতপত করে পতাকার ন্যায় উড়ছে।
হাওড়ের জলে এলোমেল গন্তব্যহীন দৃষ্টি ফেলে তাকিয়ে আছি দীর্ঘক্ষণ ধরে। হঠাৎ মনে হলো, বাতাস যেন একটু বেশিই শিতল। হাওড়ের পানি থেকে দৃষ্টি সরিয়ে দূর আকাশের দিকে নিক্ষেপ করলাম। না! আমি যেখানে বসে আছি সেখানে কোন মেঘমালা নেই বরং সূর্য হাসছে তবে তার রশ্মি ফিকে ফিকে। যদিও উত্তর পশ্চিম কিনারের আকাশ মেঘমালায় মলিন হয়ে আছে। মনে হয় ¯িœগ্ধ বাতাস ওদিক থেকেই আসছে। ওদিকে হয়তো কোথাও বৃষ্টি হয়েছে। এইতো সেদিন আমাদের এখানে প্রচন্ড বৃষ্টি হয়ে গেল অথচ মাইল দেড়েক দূরে বৃষ্টির কোন খবরই নেই। আল্লাহর কুদরত বুঝা বড়ই কঠিন। যাইহোক, বর্তমান পরিবেশ মনের ক্লান্তিকে দূর করে দিয়ে অনির্বচনীয় আনন্দে ভরে দিয়েছে।
এমন একটি পরিবেশে ভাবপ্রবণ মন বসে থাকতে রাজি নয়, তাই সে নিজের স্মৃতির আলমারি খুলে তাকে রাখা সারি সারি ডায়রি থেকে একটি খুলে বসে। আর তখন সে হাজারো সুখ-দুঃখ নিয়ে হাজির হয়; তন্মধ্যে থাকে মৃত পিতার ছবি, অসুস্থ মায়ের মুখখানা, ছোট ভাই-বোনদের অসহায় চাহনি, আর নিজের কিছু সুখকর সময়।
সুখগুলো তেমন আচ্ছন্ন করতে পারেনা। অচ্ছন্ন করে বসে দুঃখগুলো। হতাশার চাদরের সামনে সুখ যেন কিছুই না। মুহুর্তেই মুখায়বে ছড়িয়ে পড়ে অপূর্ণতার কালো ছায়া। নেমে আসে মনের আকাশে তিমির অন্ধকার। আজ সকালে ফোন এলো, ছোট ভাইয়ের পরিক্ষার রেজঃ ফি এখনোও পরিশোধ করা হয়নি। হাতে সময় আর বেশি নেই। মায়ের কোমরের ব্যাথাটাও বেড়েছে, হাটতে কষ্ট হচ্ছে। দ্রুত ডাক্টর দেখানো প্রয়োজন। নিজেরও শার্ট কেনা দরকার। জুতো জোড়া ইতোমধ্যে একাধিকবার মুচির কাছে নেয়া হয়েছে। মাসও শেষ, অপরদিকে গত মাসের টিউশন ফি পর্যন্ত হাতে পাইনি। কবে যে পাবো তারও ঠিক ঠিকানা নেই। দিনগুলো যে কিভাবে কাটছে জানিনা। নৈরাশ্যের সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছি। বেকারত্বের মত অভিশপ্ত, লাঞ্চনাময় জীবনের প্রতি তীব্র ঘৃণায়, ধিক্কারে অন্তর অসহ্য যন্ত্রণায় থৈ থৈ করে।
অসহ্য! কি সুন্দর পরিবেশ। তবুও বসে থাকতে আর ভাল লাগছে না। পরিবেশটা হঠাৎ বিষাদময় হয়ে উঠেছে। নাহ! উঠে পড়ি। শরিরটাও ম্যাশ ম্যাশ করেছে, জ্বড় আসে কি না, কে জানে।
সন্ধা হয়ে গেছে। লাইটের সুইচ চাপলাম। লাইট জ্বলেনি। আমার জীবনের মতো আজ লাইটেরও বুঝি অন্ধকার নেমেছে। আগে লোডশেডিং জঘন্য বিরক্তিকর লাগত। আর এখন কেন জানি লোডশেডিং ভালই লাগে। হয়তো হতাশায় অন্ধকারাচ্ছন্ন অন্তর লাইটের অন্ধকারের সাথে কিছুটা সাদৃশ্য পেয়ে খুশিই হয়। হয়তোবা লোডশেডিং মানে নিরবতা আর সেই নিরবতার মাঝে মনের আরো একটু স্বপ্ন দেখে সফলতার কিংবা প্রস্তুত হতে থাকে বাস্তবতাকে মেনে নিতে।
অন্ধকারে চেয়ে থাকি আর জেগে জেগে স্বপ্ন দেখি। শত পরিকল্পনা এসে ভিড় জমায় একটি নতুন পৃথিবী গড়তে। নুয়ে পড়া, ধ্বসে পড়া সোনালি অতীতকে সামনে রেখে নতুন আশার পাখি যেন কুজনের এক মধুর স্বর্গরাজ্যের ভিত সৃষ্টি করে। পরক্ষণেই চলমান যাতনার তুফানের সামনে নতুন করে আবার নুয়ে পড়ে আর হতাশায় বেদনাতুর হয়ে বিধ্বস্ত হয়। তবুও ডুবন্ত ব্যক্তির ন্যায় খড়কুটে আকড়ে ধরে বাচার জন্য অতীতের দিনগুলো স্মৃতিপটে জাগিয়ে তুলে...
পিতা একটি কোম্পানিতে চাকরি করতো। পাশাপাশি শেয়ারে ব্যবসা করতো। যা আয় রোজগার হতো তা দিয়ে আমাদের পরিবার অনেকটা সচ্ছলভাবে সুখেই চলত। পরিবারের সদস্য ছিলাম পিতামাতসহ তিনভাই দু‘বোন। আমি ছিলাম সন্তানদের মধ্যে সবার বড়। পিতার যথেষ্ট আয়ের সুযোগে সুখের রাজ্যেই বিচরণ করেছি শৈশব-কৈশোর। বুঝতে চেষ্টা করিনি জীবনের প্রত্যাশা কি? উদ্দেশ্য কি? কোথায় তার গন্তব্য? পাড়ার ছেলেদের সাথে আড্ডাবাজিই যেন আমার মূল ও মূখ্য কাজ। আর স্বপ্ন দেখতাম পাড়ার সুন্দরীদের নিয়ে। কৌশল আর ছক আটতাম কিভাবে কাকে পটানো যায়। খাতার পাতাকে পাতা নষ্ট করতাম প্রেমের চিঠি লিখে। এ নিয়ে লোকে বলত পাছার ফুল পড়েনি ছেলের ভাব দেখ।
আমার সুখের রাজ্যে সকল সুখস্বপ্ন আর প্রত্যাশার প্রাসাদ চূর্ণবিচূর্ণ করে দিয়েছিল পিতার হঠাৎ মৃত্যু। সেদিন থেকেই অন্ধকার পর্ব শুরু হলো আমার। জীবনের বাস্তবতা বুঝতে আরম্ভ করতে লাগলাম। ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। তীর ধনুক থেকে বেরিয়ে গেছে।
ভবিষ্যৎ জীবনের প্রদীপ ধীরে ধীরে নিভে যাচ্ছিল। কষ্ট করে প্রথানুসারে কোনরকমে ক্লাস পার করে পড়ালেখার ইতি টানি। সাথে সাথেই সংসারের বোঝা হয়ে বেকারের লিস্টে নাম লিখাই। অপরদিকে সংসারের দায়িত্ব ঘাড়ে চেপে আসে আছে অনেক পূর্বেই। বেকারত্বে গ্লানি আর সংসারের চাপে নিষ্পেষিত হতে থাকি দিনকে দিন।
বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে ও সংসারের হাল ধরতে শহরে ছুটে আসি। এক অফিস থেকে অন্য অফিস দৌড়তে দৌড়তে চার বছর খুয়ে ফেলি। পত্রিকায় চাকরির সংবাদ দেখতে দেখতে চোখে এখন ভ্রম দেখি। অসংখ্য ইন্টারভিউয়ের রেজাল্ট খুজতে খুজতে এখন ক্লান্ত। মাঝে মাঝে চোখ টলমল করায় ঝাপসা দেখি। কখনো কখনো একই রেজাল্ট বার বার দেখি নিজের রোল নম্বরটা পাবার আশায় কিন্তু ব্যর্থ হতাশ হই। একদিন কাঁদতে গিয়েও আত্মসম্মানে আঘাত লাগবে ভয়ে থেমে যাই।
এখন সুখের স্বাদ নিই কল্পনায় আর অলিক স্বপ্নে। এখন আর বুঝতে বাকি নেই, আমার আশা প্রত্যাশাই থেকে যাবে। প্রত্যাশা হয়তো হাতের নাগালের বাহিরে চলে গেছে। শুধু শুধু হাত বাড়াই। মাঝে মাঝে রাজপথে রাত গভীরে উদাস বিভোর অন্তরে গন্তব্যহীন হাটাহাটি করি। পরে ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে ফিরে আসি। ঘুমের মাঝে অন্ধকারে হাতড়ে বেড়াই প্রত্যাশা পূরণের। সকাল হলে আবার বেড়িয়ে পড়ি আর খুজতে থাকি প্রত্যাশা পূরণের অজানা পথ। হয়তো প্রত্যাশার মরীচিকা ফুরিয়ে যাবে আর সুদিনের দেখা পাবো।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
রুহুল আমীন রাজু মুগ্ধ, শুভকামনা।
অসংখ্য ধন্যবাদ।
M Taleb চমৎকার হয়েছে ৷ এগিয়ে যাওয়ার শুভকামনা ৷
ফয়জুল মহী মনোমুগ্ধকর কথামালায় প্রতিশ্রুতিশীল লেখা ।

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

বিষয়ের সাথে গল্পের পূর্ণ সাদৃশ্য রয়েছে বলে আমার মনে হয়। প্রত্যাশাই মানুষকে বাচিয়ে রাখে। প্রত্যাশাই মানুষকে অগ্রে যাবার প্রেরণা যোগায়। প্রত্যাশা মানুষকে দাড়াবার শক্তি যোগায়। মানুষ বার বার হোচট খায় কিন্তু প্র্যত্যাশা তাকে দাড় করিয়ে দেয় সামনে এগুবার।

১৭ মার্চ - ২০১৭ গল্প/কবিতা: ৭ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪