বিশ্বাস ভঙ্গের ভয়

ভয় (জুলাই ২০২০)

Ms Ahmad
  • ১৪০
রাত আট বেজে সম্ভবত পনের বিশ মিনিট হবে। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন না হলে চাঁদের কিরণে চারদিক আলোতে ঝলমল করতো। শারাফত দ্রুত পায়ে হেটে চলছে তার গন্তব্যস্থলে। গন্তব্যস্থল হলো তার লজিং মাস্টরের বাড়ি। আকাশ উত্তর পশ্চিম দিকে খুব ডকাডাকি করছে। মনে হচ্ছে যে কোন মুহুর্তে পাগলা ঘোড়ার মতো ঝড়-তুফানের সাথে বৃষ্টি বর্ষাবে। শারাফত অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টি চারদিকে ফেলে কাউকে না দেখে মনে মনে সস্থি পেল। কারণ শারাফত এখন চোরা দৌড় দিবে। একটু দৌড় দিতেই মনে হলো কেউ হয়তো দেখছে। তাই সে গতি কমিয়ে হাফ দৌড় দিলো। তাতেও সে হাফিয়ে উঠল। তবে এবার সে গন্তব্যস্থলে এসে হাজির হলো, এইতো জালানা দিয়ে বাহিরে আলো বেরিয়ে এসে ভূমিতে পড়ছে। ঘরের ভতর লটকানো ক্যালান্ডারগুলো এদিক সেদিক নাড়াচাড়া করছে। হয়তো ফ্যান চলছে। ফ্যান চলবে না কেন, গরম কি কম?

শারাফত দরজা খুলে ঘরে প্রবেশ করল। কিন্তু একি সবাই কোথায় যাচ্ছে? সকলের শরিরে সাজ সাজ ভাব। সে সোফায় গিয়ে বসল। কিছুক্ষণ পর তাকে জানানো হলো পাঁচ মিনিট বসেন। দুইজন বাদে সবাই বেড়াতে যাবে। শারাফত মাথা নিচু করে ভেবে মনে মনে খুশিই হলো, যাক! আজ সপরিবারে বিজবে। হঠাৎ রাস্তার পাশে দুটি সিএনজির কথা মনে হওয়াতে শারাফত হতাশ হলো।

এক এক করে সকলেই বের হলো। সাথে সাথে কোলাহল মুক্ত হয়ে ঘরটি সম্পূর্ণ নিরব হয়ে গেল। শারাফত কল্পনা করতে লাগল, কতদিন আগে সে বেড়াতে গিয়েছিল। তার মনে পরছে না, ঠিক কতদিন আগে সে বেড়াতে গিয়েছিল। তার মন এখন কোথাও বেড়াতে যেতে চাচ্ছে, যেখানেই হোক! হঠাৎ একটি পরিচিত মেয়ের ডাকে সম্বিত ফিরে পেল।

শারাফত ডিনার করছে। এরই মধ্যে বাহিরে পচন্ড বৃষ্টি শুরু গেছে। আজ খানা একটু অন্য রকম। আইটেম বেশী। হয়তো আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার জন্য কিছু রান্না করা হয়েছে। খানাও মজাদার হয়েছে। ইতিপূর্বের মনের হতাশাটা একটু হলে লাগব হয়েছে।

শারাফত এই লজিং বাড়িতে তিনজন ছাত্রকে পড়ায়। বিনিময়ে খাবারের ব্যবস্থা এই ঘর থেকেই হয়। আর থাকার ব্যবস্থা হোটেলে। হোটেল আর লজিং বাড়ি তেমন দূরে নয় বড়জোড় দশ মিনিটের রাস্তা। প্রায় বছর হলো সে এই ঘরে লজিং আছে। ভালই একটি পরিবারে সে অবস্থান করছে। ব্যবহার কথাবার্তা ভদ্র টাইপের।
শারাফত খানা শুরু করার আগে লাজিং মাষ্টার বলল। তুমি খেতে থাকো আমি ওদেরকে মূল রাস্তা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসি। আমি আসলেই তুমি চলে যাবে। আমি এক্ষুণি চলে আসবো।

খানা শেষের দিকে কিন্তু লজিং মাষ্টারের কোন খবর নেই। মাথা নিচু করে শারাফত খাচ্ছিল। সে আশপাশে একজনের উপস্থিতি টের পাচ্ছিল। মনে মনে ভাবল কে হতে পারে? কে কেই বা গেল। দুইজনের একজন তো তার লজিং মাষ্টার, অপরজন কে? ছাত্রদের মা? না! সে নয়। সে তো আমার সামনেই বের হলো। তাহলে আরেকজন কে? তাহলে কি সে? মনে হতেই মনটা ভয়ে কুকরে উঠল।

খাওয়া শেষ। বাহিরে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে যাকে বলে কলসি ডালা মেঘ। লজিং মাষ্টারের কোন খবর নেই। এদিকে শারাফত জালানা দিয়ে অন্ধকার বাহিরে তাকাবার ব্যর্থ চেষ্টা করছে। জালানায় পর্দা থাকাতে তাও সম্ভব হচ্ছে না। ফ্যানের বাতাসে থেমে থেমে পর্দা একটু সরে গেলেই লাইটের আলো বাহিরে পরছে আলো ভেদ করে বৃষ্টির ফোটাগুলোও দেখা যাচ্ছে। পর্দা যখন জালানা বন্ধ করে দেয় তখন শুধু পর্দার দিকে তাকিয়ে থাকা হচ্ছে।

শারাফতের মনে হলো কোথাও যেন চুড়ির শব্দ হচ্ছে। বিক্ষিপ্ত মন কানকে সতর্ক করলো শব্দটির প্রতি সজাগ হতে। না! নুপুরের আওয়াজও ভেসে আসছে কানে। শারাফত আড় চোখে মাথা না হেলিয়ে যতটুকু সম্ভব দেখলো, কউকে পেল না। মনের ভিতর এক ধরনের অজানা কিসের যেন ভয়ও কাজ করছে। হায় হায়! আমি আর সে একই ঘরে একা? এটি পৃথিবীর মানুষ জানতে পারলে কি ভাববে? তাছাড়া আমি তো কখনো এরকম পরিস্থিতিতে পরিনি। ভয়ে অন্তর ধুক ধুক করছে। হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে।

পিছন থেকে আওয়াজ আসছে, চা খান। শারাফত ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকালো। একি! আজ কি দেখছে! ভুত না পরী? একে তো আরো অনেক বার দেখেছে। কিন্তু আজকের এই অন্যদিকের এই অনেক তফাত। মুখে কোন আওয়াজও আসছে না। থ্যাংকস বলবে না কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। কিন্তু অনিচ্ছা সত্তে¦ও মুখ থেকে বের হলো তুমি কে? উত্তর এলো, আরে আমি শারমিন। আমাকে চিনেন না। না মানে... ও সাজগুজ করেছো তো তাই আজকে অন্য শারমিন দেখাচ্ছে।

চা নেন। ও আমি ভূলে গেছি তুমি চা এনেছো। দাও। এবার শারাফত আরো ভড়কে গেল। মেয়েটি তার পাশের খালি জাগায় বসে গেল। শারাফত নড়েচড়ে বসে বলল, শারমিন! তুমি বরং ভিরতে বসো। আমি তো আছিই। কেউ দেখে ফেললে সমস্যা হয়ে যাবে। লোকে কি বলবে।

শারমিন বলল, আমার ভিতরে বসতে খুব ভয় করছে। আব্বা যে কেন এতো দেরী করছে? ছাতি নিয়েও যায়নি। ছাতি নেয়নি? না। ছাতি নিলে তো এতক্ষণ চলে আসতো। এবার শারাফতের ভয়ে কলিজা কুকরে গলে। সর্বনাস! কি বিপদে পরলাম।

ভয় ভেদ করে শারমিন বলল, আপনি ভয় পাচ্ছেন নাকি স্যার? ভয় লাগতেই পারে এতো বৃষ্টি হলে ভয় পবারই কথা। শারাফতের কোন উত্তর নেই। দুজন বসে আছে চুপচাপ। কোন কথা নেই।

আধ ঘন্টার মতো পার হয়ে গেল, নয়টা বেজে গেছে। শারাফত বলল, শারমিন! আমি তাহলে চলে যাই। তুমি দরজা বন্ধ করে বসে থাকো। তুমার আব্বা এসে দরজা বন্ধ পেলে নিশ্চয় তুমাকে ডাক দিবে তখন দরজা খুলে দিও। মেয়েটি চেচিয়ে উঠল, আরে না স্যার! আমি ভয়ে মরেই যাবো। আব্বা না আসা পর্যন্ত আপনি যাবেন না। প্লিজ স্যাার! মেয়েটি ভয়ে শারাফতের আরো কাছে চলে এলো। এবার শারাফতের নাকে মেয়েটির গায়ের ঘ্রান ভো ভো করতে লাগল। এখন শারাফতের মনে আরেক অজানা উত্তেজনাকর পরিস্থিতির জন্ম নিলো।

শারমিন বলল, স্যার! একটি কথা বলব? বলো। আপনি আজ থেকে যান। খুব ভালো হবে। বাড়িতে আব্বা ছাড়া কেউ নেই। আব্বা ঘুমালে দুনিয়া উল্টে গেলেও জাগতে চায় না। শারাফত দীর্ঘ সময় চুপ থেকে বলল, কেমন ভালো হবে? শারমিন মুচকি হাসি দিয়ে চোখ বন্ধ করে বলল, জানিনা।
শারাফতের আর বুঝার বাকি রইলো না যে কেমন ভালো লাগবে। তবে শারাফত ভাবল, আমার উপর বিশ্বাস করেই একটি যুবতিকে পুরো পরিবার রেখে গেছে। আমি কি করে বিশ্বাস ভঙ্গ করতে পারি।

শারাফত চুপচাপ বসে রইল। রাত সাড়ে নয়টা বাজে। বৃষ্টি থামার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। চোখে ঘুম ভর করছে। এরই মধ্যে লজিং মাষ্টার তাড়াহুড়ো করে কাক ভিজাবস্থায় ঘরে প্রবেশ করল। শারাফত সাথে সাথে একটি ছাতি চাইল। মেয়েটি ছাতি দেয়ার সময় বলল, স্যার, থাকবেন না? শারাফত বলল, শারমিন, আমি বিশ্বাস ভঙ্গকে ভয় করি। আমি তুমাকে অনেক ভালবাসি তবে এভাবে না।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
Ms Ahmad এটি একটি গল্প! জানিনা কি কারণে কবিতাংশে ঠাই পেল।
Abu Umar Saifullah ভালো লিখেছেন ।
ফয়জুল মহী দারুণ লেখা ।  ভালো থাকুন।
ধন্যবাদ ভাই!

১৭ মার্চ - ২০১৭ গল্প/কবিতা: ৭ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪