জোৎস্না আমার সহপাঠী ছিল।নামটা যেমন জোৎস্না ছিল তেমনি মেয়েটির চেহারাতেও সত্যিই ছিল পূর্ণিমার চাঁদের আলোকদূতী।এক কথায় সে এক অপূর্ব সুন্দরী মেয়ে ছিল।সে আকাশী স্কার্ট ও সাদা স্কুল সার্ট পরে একটি কালো দামী ব্যাগে বই খাতা নিয়ে স্কুলে আসত। যে যখন তাকে দেখত প্রত্যেকেই একবার ফিরে তাকাতে বাধ্য হত বিশেষ করে তার ফুটফুটে পরিস্কার কোমল গালে কালো বড় তিলটির জন্য।জোৎস্নাকে স্কুলের সকল শিক্ষক শিক্ষিকা খুবই ভালবাসত;সে পড়শুনাতেও খুব ভালো ছিল।শুনেছি আমাদের অশোক স্যার জোৎস্নার জন্য দিবানা ছিলেন।তিনি জোৎস্নার বাড়িতেও বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন,কিন্তু সমাজের সংস্কার আর জোৎস্নার বয়স কম থাকায় আশোক স্যারের বাড়ি জোৎস্নার আলোকে আলোকিত হতে পারেনি। আসলে একজন সুন্দরী মেয়ের যে সকল রঙরূপ বা গুণ থাকবার কথা জোৎস্না তাতে টুইটুম্বুর ছিল।আসলে কাউকে ভালোলাগা বা ভালোবাসা জিনিসটা দশম শ্রেণীতে পড়লেও ঠিক ঠাক ভাবে বুঝতেই পারতাম না।আর যদি বুঝতে পারতাম তাহলে হয়তো জোৎস্নার সাথে কমপক্ষে একটা ভালো বন্ধুত্বের সম্পর্ক রক্ষা করতাম।জোৎস্নার বাবার একটি মুদী দোকান ছিল তাদের বাড়ির পাশের বাজারে।বাবার সরকারি চাকরি নাহলেও পরিবার তাদের ভালোই চলত-তা মেয়ের বেশভূষা ও চলাফেরা দেখেই অনুমান করা যেত।জোৎস্না ও আমি, আমার দুজনেই ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত একই বিদ্যালয়ে একই শ্রেণীতে পড়তাম।আবার আমারা পরস্পরকে 'তুই' বলেই সম্বোধন করতাম-আমাদের মধ্যে প্রেম জাতিয় কিছু না থাকলেও আন্তরিকতা কম ছিল না।সে সপ্তাহের অধিকাংশ দিনই বিদ্যালয়ের কাছে অবিনাশের দোকান থেকে ভাজা মটর কিনে আমাদের খাওয়াতো।অন্যদের কথা বলতে পারি না,কিন্তু আমি অত্যান্ত তৃপ্তি সহকারে জোস্নার দেওয়া মটর ভাজা খেতাম।এক একটি মটর কাগজের ঠোঙা থেকে তুলে মুখে ঢিল মারতাম আর মনে মনে জোৎস্নাকে ধন্যবাদ জানাতাম।কিন্তু যতটুকু মনে পড়ে জোৎস্নাকে খাওয়ানোর জন্য কোন দিনই কিছুই বলিনি।হয়তো বা কাউকে ভালো কাজের জন্য অথবা কোন কিছু ভাগ করে খাওয়ানোর জন্য ধন্যবাদ জনাতে হয় এই কথায়ই জানতাম না নতুবা তাকে ধন্যবাদ জানানোর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতাম না। গতকালকের দিন আর আজকের দিন কখনো এক রকম হয় না।আবার গতদিনের আমি এবং আজকের দিনের আমিত্বের মধ্যে পার্থক্য বুঝা না গেলেও ভাবনার পরিবর্তন অনবরত ঘটেই চলছে।মানুষের চাওয়া পাওয়া অনেকটাই বদলাতে থাকে সিঁড়ির মতো।সাল ১৯৯৪ আমরা মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসি।পড়াশোনায় আমি চিরকালই মধ্যম মানের ছিলাম,কখনো খুব ভালো বা খুব খারাপ এই দুই তালিকায় পড়িনি।তবুও মাধ্যমিক পরীক্ষায় তৃতীয় বিভাগে কোন ক্রমে পাশ করি -তাই একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির সুযোগ পাই।কিন্তু খুব খারাপ লাগছিল জোৎস্না পাশ করতে পারেনি।অবশ্য এর জন্য জোৎস্না তেমনটা দায়ী ছিল না-এক শিক্ষক পাত্র মেয়েকে সামাজিক কারণে বিয়ে দিতে না পারায় তার মা বাবার মাথায় মেয়েকে অসময়ে বিয়ে দেবার ভূত চেপে বসে।ক্রমে অজান্তেই জোৎস্নার পড়ায় অবহেলার বাড়তে থাকে;কেউ আর জোৎস্নাকে পড়ার কথা বলে না।একের পর এক পার্টি আসে জোৎস্নাকে দেখে কথা বলে,মিষ্টি খায়,পান চিবায় এবং যাবার সময় মেয়েটির মনে শ'পঞ্চাশ টাকা দিয়ে বড় বড় দাগ কেটে ফিরে যায়।একের পর এক লোক আসে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করার জন্য।এদিকে জোৎস্না মাধ্যমিকের বাংলা পাঠের কাজলা দিদি গল্প পড়তে পড়তে সে আপন মনে বউ সাজার স্বপ্ন দেখে-সে তার নতুন সংসার খোঁজে, অপরিচিত ছেলেকে সব চেয়ে ভাল বন্ধু হিসাবে; না না জীবন সাথী হিসেবে ভাবতে থাকে।আবারো বাস্তব জীবনে ফিরে আসে আর জোরে জোরে পড়তে থাকে।বর্তমান জীবন ও ভবিষ্যৎ জীবনের মধ্যে সেতু বন্ধন করতে করতেই জোৎস্নার পরীক্ষার দিন গুলো কেটে যায়।সে বাসে চড়ে শহরের বিদ্যালয়ে গিয়ে পরীক্ষা দিয়ে সন্ধ্যায় বান্ধবীদের সাথে বাড়ি ফিরে।হয়তো সে পরীক্ষাকে একটা অনাকাঙ্খীত বোঝা ভেবে দূরে সরাতে চেয়ে ছিল। পরীক্ষা শেষের তৃতীয় দিন জোৎস্নার শুভ মঙ্গলাচরন সম্পন্ন হয়।পরের সপ্তাহের মঙ্গলবার তার বিয়ের দিন ঠিক হয়।জোৎস্নার নেমন্ত্রনে আমি আর লক্ষীনারায়ন-আমাদের এক সহপাঠী ঐ বিয়েতে গিয়েছিলাম।বিয়েতে আমি খুব সুন্দর একটি স্পাইরাল ফটো এলবাম উপহার দিয়েছিলাম।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
আহা রুবন
গল্প বিষয়ে কিছু বলব না, বলার স্টাইলটা বেশ ভাল। স্বাগতম!
কাজী জাহাঙ্গীর
শুধু এলবাম বুঝি আর কিছু দিলেন না, হা হা হা...। গল্প কবিতায় আপনাকে স্বাগতম। গল্পে সামান্য মেসেজ ছিল সেটাকে স্পষ্ট না করে উপহার দিয়ে খাওয়া পর্যন্তই থাকলেন। আশা করি সামনে আরো ভালো লেখা নিয়ে আসবেন। অনেক শুভকামনা আর আমার পাতায় আমন্ত্রণ।
মোঃ নুরেআলম সিদ্দিকী
দাদা দেখতেছি গল্পতে খুভ একটা প্রান আছে। ভালো হয়েছে, তবে সামনে আরও ভালো হবে এমনটা আশা করছি। ভোট দিলাম। শুভকামনা ও আমার পাতায় আমন্ত্রন রইলো।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
বিজ্ঞপ্তি
“জানুয়ারী ২০২৫” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ জানুয়ারী, ২০২৫ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।