প্রাক্তন

অবহেলা (এপ্রিল ২০১৭)

সায়েল মুহাম্মদ
আমি আর আগের মতো অবাক হই না।অবাক হতে পারি না।হয়তো অবাক হওয়ার ক্ষমতা টা নষ্ট হয়ে গিয়েছে।মানুষ কারনে অকারনে অবাক হয়।মানুষ হওয়ার সুবাধে আমার অবাক হওয়ার প্রয়োজন ছিলো।
কারন ইন্টার্ভিউ দিতে গিয়ে আমার প্রাক্তন প্রেমিকার সাথে অনেকদিন পর দেখা হয়ে গিয়েছে।
সে কিন্তু আমার মতো ইন্টার্ভিউ দিতে আসে নি।সে স্বয়ং একজন ইন্টার্ভিউয়ার।
এই কারনে আমার অবাক হওয়ার দরকার ছিলো।কিন্তু আমি এখন কোনকিছুতে অবাক হওয়ার আগে জিনিসটা ব্যাখ্যা করি।
ব্যাখ্যা করতে ব্যার্থ হলে ও অবাক হই না।সবকিছুরই একটা ব্যাখ্যা আছে।এখন না পারি পরে হয়তো এর ব্যাখ্যা অবশ্যই পেয়ে যাবো।
.
নীরা আমার প্রাক্তন প্রেমিকার নাম।এখন তো প্রাক্তন কেউ বলে না।ইংরেজি শব্দ ব্যাবহার করে এক্স গালফ্রেন্ড।যাকে আজ ইন্টার্ভিউ রুমে দেখলাম।
কিন্তু সে আমার মতো না। সে অনেক অবাক হয়েছে।তার অবাক হওয়া দৃষ্টি আমি দেখেছি।তার অবাক হওয়ার অনেক কারন আছে।এর প্রধান কারন হতে পারে আমি এখন ও চাকরির জন্য ঘুরছি যা হওয়ার কথা না।
আমি ক্যারিয়ারের ভালোর জন্য, একটা ভালো ভবিষ্যৎ এর জন্য তার সাথে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করেছি।বর্তমানে যাকে বলে ব্রেক-আপ। সবচেয়ে বহুল ব্যাবহ্রত শব্দ।কারনে অকারনে এই শব্দের প্রয়োগ হয়।
সবাই যখন বিভিন্ন সাধারন প্রশ্ন করছে চাকরির বিষয়ে আমার সম্পর্কে। তখন নীরা করলো অদ্ভুদ এক প্রশ্ন। যা এখানে মানায় না।
সে বললো,'মি.সিয়াম সাহেব আপনি কি কোন রিলেশনে আছেন বর্তমানে?'
আমি অবাক হলাম।মনে হলো পৃথিবীর সবচেয়ে অবাক করা প্রশ্ন এটি যা আমার অবাক হওয়ার গুন ফিরিয়ে এনেছে।অবাক হওয়ার ভঙ্গি না করে উত্তর দিলাম,'না'
.
নীরার সাথে সম্পর্কের সময় এর চেয়ে আরো বেশি অবাক করা কথা বলতো।তার সাথে আমার সম্পর্কের শুরু ইউনিভার্সিটির সময় থেকে।আমি তখন ৩য় বর্ষ আর সে নতুন।তাকে প্রথম দেখি আমার বন্ধুর সাথে।আমার বন্ধুর খালাতো বোন হয় নীরা।
আমরা বন্ধুরা মিলে আড্ডা দিচ্ছিলাম তখন।আমি গিটার আর অন্য সবাই গান গাইছিলো।গিটার বাজানোর শখ আমার স্কুল জীবন থেকে ছিলো।কিছু শখ সময়ের সাথে সাথে মিটে যায়।আমারো তাই হলো।কতদিন হলো গিটারের তারগুলোতে হাত বুলায় না!!!
নীরা কে আমাদের সবার সাথে পরিচয় করালো আমার বন্ধুটি।আমাদের ভার্সিটিতে সে নতুন ভর্তি হয়েছে।
প্রথমদিন তেমন রুপবতী মনে হয়নি নীরাকে আমার কাছে।যদিও আমি তেমন ভাবে দেখি নি।মেয়েদের দিকে তেমন তাকাতাম ও না।চোখে চোখ পড়লেই ভয় লাগতো।বুক ধরফর করতো।যার কারনে সব বন্ধুরা যখন ইন আ রিলেশনশিপ আমি তখন সিংগেল।
নীরার সাথে যখন পরেরবার দেখা হলো।মনে হলো পৃথিবীর সবচেয়ে রুপবতী মেয়ে নীরা।চোখে কাজল দেওয়ার কারনে হয়তো চেহারা টা আরো সুন্দর দেখাচ্ছিল।তখন মনে হলো এই কারনেই হয়তো আমি সিংগেল ছিলাম।কোন প্রেম মনে হয় নীরার কারনেই করা হয় নি।
আমার প্রেম জীবনের অবিষেক হয়তো নীরার মাধ্যমেই হবে।

তাকে নিয়ে গেলাম ক্যাম্পাস টা ঘুরে দেখাবার জন্য।তার চোখের দিকে তাকিয়ে ক্যাম্পাস সম্পর্কে বর্ণনা দিতে লাগলা।যা আগে কোন মেয়ের সাথে করা হয় নি।চোখ কে মনে হতো মৃত্যু কূপ ।তার পরিবার, তার নিজের সম্পর্কে কিছু জেনে নিলাম।আমার নিজের সম্বন্ধে ও কিছু পজিটিভ কথা বললাম কারন আমার এখন মেইন টার্গেট নীরার সাথে প্রেম করবো তা না হলে জীবনের ষোল আনায় বৃথা হয়ে যাবে মনে হয়েছিলো।আমার ফোন নাম্বার টা সে নিজে থেকে নিয়ে আমার মোবাইলে কল দিলো যাতে আমি ও নাম্বার টা পাই।

এর পরে কিভাবে যেন আমাদের সম্পর্ক টা হয়ে গেলো।যতো কঠিন ভেবেছিলাম তত কঠিন লাগে নি।আমার বন্ধুকে জিজ্ঞেস করেছিলাম নীরা সিংগেল কিনা?কিন্তু সে এমন ভঙ্গি করে আমার দিকে তাকিয়েছিলো যেন সব বুঝে গেছে আর কিছু বলতে হবে না।
পরেরদিন ঘটলো অবাক করা ঘটনা।
সে আমাকে সবার আলাদা নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো, 'আপনি নাকি আমাকে পছন্দ করেন' আমার দিকে তাকিয়ে উত্তরের জন্য অপেক্ষা করলো।

'কে বললো এ কথা?' কারন আমি এ কথাটির জন্য অপ্রস্তুত ছিলাম।

'তার মানে পছন্দ করেন না'

'মানে!'আমতা আমতা করতে লাগলাম।

'পছন্দ না করলে আমাকে অন্য একটি নাম্বার দিয়ে কল দিয়ে কথা বলেন না কেন? আমার ফেসবুকে রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে আবার ক্যান্সেল করে দেন কেন? নিলয় ভাইয়ার কাছ থেকে আমার খোজ নেন কেন।আমি সিংগেল আছি কিনা জিজ্ঞেস করলেন কেনো?'

এতো প্রশ্নের জবাব না দিয়ে তাই আসল কথাটা বলে ফেললাম।
মনে হচ্ছিল দেরি করা ঠিক হবে না।'আমি তোমাকে পছন্দ করি।আমি তোমাকে ভালোবাসি। '
পকেট থেকে একটা আংটি তার আঙুলে পড়িয়ে দিলাম।
সেই থেকে অনেক দিন আমাদের সম্পর্ক চললো।ফোন কোম্পানিকে বড়লোক করার পদ্ধতি টা আমাদের গ্রহন করা শুরু হয়েছিল।রাতের পর রাত শুধু ফোনালাপ।
.

নীরার সাথে আমার যেদিন শেষ কথা ও দেখা হয়েছিলো। সেদিন তার আংগুলে আমার দেওয়া আংটি টি দেখতে পাই নি।
সেদিন আমি তাকে ফোন করে বলেছিলাম তাকে একটা জরুরী কথা বলবো।সেও বলেছিলো তার একটা জরুরী কথা আছে।
আমার মনে হয়েছিলো তার জরুরী কথা টা এমন হবে যার কারনে আমি তার মায়া ছাড়তে পারবো না।মায়া ছাড়াতে এসেছি,এখন মায়ায় আবার পরে গেলে হবে না।তাই আমি কথাটা আগে বলতে চাইছিলাম।কিন্তু নীরা আমাকে বাধা দিয়ে সে আগে বলতে চেয়েছিলো।
তখন বুঝি নি কেনো সে তার জরুরী কথা টা আগে বলতে চেয়েছিলো?পরে বুঝেছিলাম, কারন সেও আজকে মায়ার বাধন ছিঁড়তে এসেছিলো ছড়াতে নয়?

নীরা কিছু বলতে যাবে সে মুহূর্তে আমি বলে দিলাম'আমি তোমার সাথে আর থাকতে চায় না।আমি আমার ক্যারিয়ারের দিকে মন দিতে চায়।'

নীরা চুপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে ছিলো।

'আমি তোমার সাথে সম্পর্ক চালাতে গিয়ে নিজের লাইফটাকে ভালো করে চালাতে পারছি না।'আবার বললাম

নীরা আমার দেওয়া আংটিটা দিয়ে বললো'আমি ও তাই চাইছিলাম।এজন্যই এসেছি।আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে'
.
সেদিনের পর আজ তাকে ইন্টার্ভিউ রুমে দেখলাম।আমার তিন বছরের জুনিয়র হয়েও আমার আগে চাকরি করছে এ নিয়ে আমি অবাক হয় নি।কারন এর একটি ব্যাখে দাড় করিয়েছি।
নীরার সাথে সম্পর্ক শেষ হওয়ার পর তার খালাতো ভাই মানে আমার বন্ধু নিলয়ের কাছ থেকে শুনতে পাই যে নীরার বিয়ে হয়েছে বিরাট ধনী এক লোকের সাথে। মাথায় চুল নেই।টাক হওয়ার কারনে সবসময় চুল শেভ করে রাখে।

ইন্টার্ভিউ রুমেও আজকে এরকম একটা লোককে দেখতে পেয়েছি।হতে পারে এটাই নীরার স্বামী।আর নীরা এখানে নিজের স্বামীর কোম্পানিতে বড় কোন পদে চাকরী করে।

.
আরেকটা নতুন বায়োডাটা অন্য কোম্পানিতে পাঠাবো বলে ভাবছিলাম। পত্রিকায় একটা চাকরির বিজ্ঞপ্তি দেখতে পেয়েছি।কারন আমি নিশ্চিত ছিলাম নীরার কোম্পানিতে আমার চাকরি হয়ে যাবে। তার ভুল বা আমার ভুল যার ভুলের কারনেই আমাদের সম্পর্ক ভাঙুক না কেন।নীরা তার স্বভাব মতো দয়ালু হবে।আমার যোগ্যতা থাকুক আর না থাকুক এই চাকরিটা আমার হওয়ার পিছনে তার বিশাল অবদান থাকবে।
আমার ধারনা ভুল প্রমানিত হয় নি।নীরার কোম্পানি থেকে আমাকে জয়েন করার জন্য বলা হয়েছে সকালে আমার নামে দুটি চিঠি এসেছে।
জয়েন করার আগে কোম্পানির এমডির সাথে দেখা করার জন্য আলাদা আরেকটি চিঠি দেওয়া হয়েছে।আমি নিশ্চিত এইটা নীরার কাজ।
নীরার কাজ সফল হক আমি তা চাইছি না এই মুহূর্তে। তাই চিঠি আর এপয়েনমেন্ট লেটার টা ছিড়ে ফেলে দিলাম আর চাকরির সংবাদ ফিচারে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি খুজতে লাগলাম।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
SWADESH KUMAR GAYEN ভালোই লিখেছেন। আরও লিখুন। আমার ব্লগ পড়ার আমন্ত্রন রইলো।www.golpoporuya.in
কাজী জাহাঙ্গীর বিষয়টা বেশ আকর্ষনিয় ছিল, বর্ণনাও বেশ ভাল। তবে কয়েকটা জায়গায় য়/ই প্রত্যয় ব্যবহারে সমস্যা আছে। যেমন-'আমি তোমার সাথে আর থাকতে চায় না।আমি আমার ক্যারিয়ারের দিকে মন দিতে চায়।' দু’টো তে আপনি লিখলেন ‘চায়’ কিন্তু সেটা হবে ‘চাই’। ‘ আমি চাই না’ ’সে চায় না’ আশা করি বুঝতে পেরেছেন। গল্প কবিতায় আপনাকে স্বাগতম। আবেগ ধারালো আছে, আশা করি পদচারনা বাড়াবেন। অনেক শুভকামনা আর আমার পাতায় আমন্ত্রণ।
মোঃ নুরেআলম সিদ্দিকী বাহ! খুব দারুন এক গল্প, ভাবনার দিকে তাকালে অনেক খানি চিন্তা বের হয়ে আসবে। যা হোক ভালো হয়েছে। আর বানানের দিকে আর একটু যত্নবান হতে হবে। ভোট দিলাম। শুভকামনা ও আমার পাতায় আমন্ত্রণ রইলো।
মোঃমোকারম হোসেন খুব সুন্দর হলো ভোট রেখে গেলাম আমার পাতায় আমন্ত্রণ রইলো
Dr. Zayed Bin Zakir (Shawon) Valo laglo. Shuruta valoi natokio silo. Amar lekhay amonteon.

০১ মার্চ - ২০১৭ গল্প/কবিতা: ১ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪