মায়া

অবহেলা (এপ্রিল ২০১৭)

আবু রায়হান ইফাত

জ্ঞান ফিরে ফেলাম, চোখ মেলে চারদিক তাকিয়ে দেখলাম, মাথার পাশে বসে নিরবে কাঁদছে ও । বাবা মা ও হাসপাতালের কেবিনে ছিলো তারা কিছু সময়ের জন্য বাহিরে গেছে। এটাই প্রথম সময়, ও আমার পাশে বসে আছে। অনেক সুখী মনে হচ্ছে আজ নিজেকে, ভাবতে পারিনি কখনো অন্তিম শয্যায় এতটা সুখ আমার জন্য অপেক্ষামান ছিলো।

জীবনের শেষ পর্যায়ে চলে এসেছি, বড় একটা রোগ বাসা বেধেছে দেহের মাঝে , যদিও সবাই আমার নিকট তা লুকাতে চাচ্ছে, বাবা মায়ের শুকনো চেহারা আর অশ্রুর ফোটা গুলো বলে দিচ্ছে আমি আর বেশি দিন ধরার মাঝে নেই। তাছাড়া দেহটা তো নিজের নিজেই উপলব্ধি করতে পারছি দেহের বর্তমান অবস্থা। আত্মীয়-স্বজন আর বন্ধুবান্ধব সবাই দেখে যাচ্ছে অন্তিম শয্যা শায়িত দেহটিকে, আর দুচোখে অশ্রু ঝরাচ্ছিল , তাদের অশ্রু গুলো দেখে আমার মনটাও ছোট হয়ে যেতে লাগলো।

দুমাস আগে হঠাৎ করে জ্ঞান হারাই, স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়ার পর জ্ঞান না ফেরায় ঢাকায় নিয়ে আসতে বলেছিলো, ইবনে সিনা তে দুদিন আইসিউ তে রাখার পর জ্ঞান ফিরে নিজেকে আবিষ্কার করলাম হাসপাতালের বেডে , আম্মু মাথার পাশে বসে কাঁদছিলো , নিজের অজান্তেই আমার দুচোখ জুড়ে সেদিন অশ্রু এসেছিলো। বাবাকে দেখে সেদিন তো আমি অবাক! যে বাবা কে কোনো দিন কাঁদতে দেখিনি, আজ সে বাবা কেবিনের এক কোণায় বসে কাঁদছে , খুব ভেঙ্গে পড়েছিলেন উনি, প্রিয় সন্তান হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছে। সেদিন বুঝতে পারলাম বাবারাও কাঁদতে জানে। বাবা মা দুজনকেই জড়িয়ে ধরে বেশ কিছুক্ষণ কেঁদেছিলাম। ডাক্তার এসে উনাদের শান্ত হতে বললেন। আর আমাকে নিয়ে গেলেন ল্যাবে, অনেক গুলো পরীক্ষাও করেছিলো, তিন ঘন্টা পর রিপোর্ট দিবে বলে নার্স দের সাহায্যে কেবিনে রেখে গিয়েছিলো আমায়। আম্মু নিজ হাতে আমাকে খাইয়ে দিতে চাইলো , আমার মন চাচ্ছিলো সব গুলো খেয়ে ফেলি কিন্তু পারছিলাম না।

মনে পড়ল তখন শৈশবের কথা, কতটা যত্ম করে, ত্যাগ সহ্য করে আমাকে মানুষ করছিলেন মা, নিজ হাতে খেতে চাইতাম না কখনো কিন্তু মা নিজের হাতে সবসময় খাইয়ে দিতো। যতটুকো সম্ভব খেয়ে নিলাম।

বেলা তিনটের দিকে ডাক্তার বাবা কে বাহিরে ডেকে নিয়ে গেলো, বাবা কেবিনে ফিরে আসার পর মুখটা কেমন ফ্যাকাসে হয়ে গেলো, বুঝতে পেরেছি তখন , রিপোর্ট খারাফ এসেছে নিশ্চয়ই বড়ধরনের কোনো রোগ, ডাক্তার হাসপাতালে থাকার নির্দেশ দিলো। কয়েকদিনের মধ্যে শরীরের আরও অবনতি দেখতে পেলাম, ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ছিলাম, আর থেরাপি গুলো দেওয়ায় বুঝতে পারলাম মরণব্যাধি ক্যান্সারে দেহ আক্রান্ত। কয়েক দিন আগেও বেশ ভালো ছিলাম।
দিন দিন অবস্থার অবনতি হতে লাগলো, মাথায় থাকা শখের চুল গুলোও উঠে যেতে লাগলো, দিনের মধ্যে কয়েকবার জ্ঞান হারাতাম এবং জ্ঞান ফিরে পেতাম।
বাবা মায়ের চেহারার তাকাতে পারছিলাম না , এ দুমাসে তাদের চেহারা গুলো কেমন যেনো হয়ে গেছে , কিছুদিন আগেও উনাদের চেহারা কতটা হাস্যোজ্জল দেখেছিলাম কিন্তু আজ তাহাদের চেহারায় ভেসে আছে বিষাদের কালো ছায়া।

আজ সকালেও জ্ঞান হারিয়ে ছিলাম, বেশ কিছু সময় পর জ্ঞান ফিরায় দেখতে পেলাম মাথার পাশে বসে মেয়েটি কাঁদছে। অবাক হয়েছিলাম আমি, মেয়েটি এখানে কেনো ..?
দুবছর আগে থেকেই তার সাথে কোনো যোগাযোগ হচ্ছিলো না।

যখন এসএসসিতে ছিলাম তখনই প্রথম মেয়েটিকে দেখিছিলাম, বেশ লেগেছিলো তাকে, একসময় তার প্রেমে পড়ে যাই, ভালোবেসে ফেলি তাকে, তাকে না দেখে দিন পার করা আমার পক্ষে অসম্ভব ছিলো, সে জেনেছিলো আমি যে তাকে ভালোবাসতাম। সে থেকে আমায় দেখলে খুব লজ্জা পেতো সে, একদিন ক্যাম্পাস থেকে ফেরার পথে রাস্তায় ওর সাথে মুখোমুখি হয়েছিলাম, সে রিক্সায় ছিলো তার এক কাজিন সহ, আমায় দেখার পর লজ্জায় সে তার চেহারা কাজিনের পেছনে লুকিয়েছিলো, তখন খুব হাসি পেয়েছিলো আমার। এরপর একদিন তাকে বলেছিলাম ভালোবাসার কথা , যদিও সরাসরি খুলে বলে নি, তারপর ও সে বুঝেছিলো। উত্তরে বলেছিলো আমি এখনো ছোট, আগে বড় হয়ে নি তারপর দেখা যাবে । বলেছিলাম আমি, অপেক্ষা করবে তো আমার জন্য ..? সে হ্যাঁ বলেছিলো।
এরপর একদিন সে দেখা না করায় আমি অভিমান করে পাড়ি জমাই বিদেশের বাড়িতে। খুব মনে পড়তো তখন তাকে, যোগাযোগ করার কতইনা চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু বারবারই ব্যর্থ হয়েছিলাম, আশা হারাই নি তখনো, বিশ্বাস ছিলো সে অপেক্ষা করবে আমার জন্য। সে ঠিকই অপেক্ষা করেছিলো আমার জন্য, কিন্তু স্বার্থপরের মতো আমি চলে যাওয়ার পথে।

আমাকে অপেক্ষা করতে বলে এখন আপনি আমাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছেন,
পূর্নতা পাবেনা কি কখনো আমাদের ভালোবাসা...???
তার কথা গুলো শুনে চৈতন্য ফিরে পেলাম, দেখলাম মেয়েটির দু চোখ জুড়ে অনর্গল অশ্রুপ্লাবিত হচ্ছে , কাঁদো কাঁদো স্বরে বললো,
কেনো এতটা স্বার্থপর আপনি ..?
একা চলে যাবেন যেহেতু আমাকে অপেক্ষায় থাকতে বলেছেন কেনো ..??
দুহাত দিয়ে তার চোখজোড়া মুছে দিলাম । বললাম, দূর পাগলি কে বলছে আমি তোমায় ছেড়ে চলে যাবো, আমি আছিতো , এখনো তোমাকে অনেক ভালোবাসি ।
আমি ও আপনাকে অনেক গুলো ভালোবাসি, আমাকে ছেড়ে যাবেন না তো কখনো বাচ্চা মেয়ের মতো কেঁদে কেঁদে বললো।
আজ বেঁচে থাকতে খুব মন চাইচে, আজই প্রথম ভালোবাসাকে কাছে ফেলাম। আজ মায়া গুলো বারবার বেঁচে থাকার তাগিদ দিচ্ছে। কিন্তু ভাগ্য বলেই কথা, বিধাতা সময় তো আর বেশি রাখে নি , দীর্ঘ হতে দিলো সুখময় সময়টুকো, আজরাইল চলে এসেছিলো সন্নিকটে, চলে যেতে হলো পৃথিবীর মাঝে থাকা মায়ার টান গুলো ছিন্ন করে উপর ওয়ালার ডাকে প্রিয় জনদের শোকের সাগরে বাসিয়ে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
কাজী জাহাঙ্গীর এটা কেমন হল বুঝলাম না, যে মরে গেছে সেই লিখছে। মরে গেল লিখল কি করে হা হা হা...। যাক হয়তো বা আপনি নতুন কিছু করতে চাইছেন। আশা করি নিয়মিত হবেন।অনেক শুভকামনা আর আমার পাতায় আমন্ত্রণ।
হাবিব রহমান ভাল লিখেছেন। অনেক বলা গল্প হলেও আপনি ভিন্ন আঙ্গিকে প্রকাশ করলেন
মোঃ নুরেআলম সিদ্দিকী খুব একটা দারুন গল্পের ভাব চরিত্র তুলে ধরেছেন। ভালো লাগলো। শেষের শব্দের বানানটি ভুল করে ফেলছেন। ভোট দিলাম। শুভকামনা ও আমার পাতায় আমন্ত্রণ রইলো।

০৫ ফেব্রুয়ারী - ২০১৭ গল্প/কবিতা: ৩ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“এপ্রিল ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ এপ্রিল, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী