একটি বোমা হামলা পরবর্তী মানসিক জটিলতা

বিশ্বকাপ ক্রিকেট / নববর্ষ (এপ্রিল ২০১১)

বাবুল হোসেইন
  • ১৯
  • 0
  • ৮৬
আমি আর নমিতা। নমিতা আর আমি। দুজনেই ছিলাম রমনার বটমূলে।
আমরা এখন রমনার উত্তাল বটমূল। পরবর্তী প্রজন্মের এক আতঙ্কিত জায়গার নাম।

ওর ছিলো আগুন টিপ; কপালে আগুন বাড়ী। আমার শুকনো বন পোড়ে খাঁ খাঁ বালিয়াড়ি। ও
ছিলো বসন্তজাত; ফাল্গুনী। কেন যে ও নমিতা হলো। ফাগুনে আগুন লাগিয়ে ও কেন নমিতা
হলো, এই প্রশ্নে আমি বহুবার ধাক্কা খেয়েছি। ফাগুনজাত যে সে হবে নমিতা! অগ্নিলা না
হোক, ফাল্গুনী বা অগ্নি বা আগ্নেয়গিরি হলে মন্দ হতো না। থাক না ওর নাম! আমরা বরং
ওকে অগ্নিলা বলেই ডাকি। নমিতা সমান অগ্নিলা।

অগ্নিলার আগুন টিপে খাঁ খাঁ উত্তাপ। পহেলা বৈশাখে আমি আর অগ্নিলা আগুন হই। অনল।
জ্বালিয়ে দেবার বাসনা তীব্র। আমরা উত্তাল রমনা পার্ক। পাঞ্জাবির শুভ্রতায় ঝলসানো
আগুন। পান্তাভাতের বিস্বাদ স্বাদ। অগ্নিলার আগুন টিপ সবাইকে তাক লাগায়। সার্কাসের
বিস্ময় বালিকা অগ্নিলা। আমি সার্কাস দেখানো সেই বালিকার অহংকারী মালিক। ভিতরে
অহম চূড়ান্ত। অগ্নিলা বলে চলো বিস্ফোরিত হই। আমি বলি চলো। তাই আমরা আগুনের
লেলিহান শিখা। লেলিহান শিখার হলুদাভ তেজ।

রমনার বটমূলে হাজার হাজার মানুষ। আমরা ছড়াই উত্তাপ। অনল। আগুনের দাউ দাউ শিখায়
পোড়ে যায় পহেলা বৈশাখের আমেজ। বাঙ্গালীর চিরন্তনতা। বাংলাদেশের লাখো বাঙ্গালীর
প্রাণের মিলন মেলায় আগুন জ্বলে। দিগ্বিদিক পাগলপ্রায় জনতা ছোটে যায়। দৌড়ায়। পালায়।
অগ্নিলা হাসে। আমিও। আমি দৌড়াই। অগ্নিলাও। ওর লালটিপে আগুন। আগুনের শিখা। আমরা
হাসি। হাসিতে আগুনের অমৃত। অমৃত পেয়ে অগ্নিলা শান্ত হয়। আমিও। আগুন মানে অগ্নিলার
সঙ। অনল মানে আগুনের বাড়ীতে একসঙ্গে সহবাস। অগ্নিলা আর আগুন দুজনেই পোড়াবাড়ী।
দুজনেই পোড়ামুখি।

টেলিভিশনে খবর। রমনা পার্কে আগুন। বোমা হামলা। মানুষের হাড়-গোর আর মাংসের দলিত
মথিত অংশবিশেষ। কারো হাত মাথা উড়ে গেছে দেহ থেকে। কারো হাত ছিঁড়ে গেছে শরীর
থেকে। কারো শরীরখানা পুরোটাই গলিত লোহা। কারো ঝলসানো মুখ, মুখাংশ। এ এক
হৃদয় নিংড়ানো দৃশ্য। দৃশ্যচিত্র। স্বজনের কান্নার তীব্রতা। স্বজন হারানোর শোক।
মরে যাওয়ার চাক্ষুষটা। মরতে না পারার বিহ্বলতা। বেঁচে থাকার আকুলতা। বাঁচতে না পারার
গুমরানি। বাঁচাতে না পারার সলজ্জ ব্যর্থতা।

এক মাস পর হসপিটাল থেকে রিলিজড হয় অগ্নিলা। আগুন তাকে নিতে আসে না। অগ্নিলা
নিজেই অনলমুখি। অনল বাড়ীতে আগুনের ঠিকানা। অগ্নিলা খুঁজতে খুঁজতে দিশেহারা। এলোমেলো
হাওয়া। যতবার আগুনমুখি হয়, ততবারই এক বিচ্ছিন্ন বাতাস তাকে দমিয়ে দেয়। অগ্নিলা আর
আগুনমুখি হতে পারে না। পারে না, পারে না। না না...j

আগুন জ্বলে। আগুন জ্বলে জ্বলে ছাই ভস্ম। অগ্নিলাও ছাই হতে পারত। কিন্তু ভাগ্য
অগ্নিলাকে আগুনই রেখেছে। পহেলা বৈশাখ এলে সে আগুন হয়। দাউ দাউ আগুন। আগ্নেয়গিরির
লাভা স্ফুরণ। দাউ দাউ। দাউ দাউ দাউ দাউ দাউ.....

আজ তুমি কি পরবে অগ্নিলা।
বলবো না। আমার কালার তুমি নকল করবে।
বলো না প্লিজ।
না বলবো না।
প্লিজ, প্লিজ।
ওকে। বলছি। আগুন রঙ্গের শাড়িতে বাঙ্গালী বধূর সাজ। কপালে দাউ দাউ আগুন। রক্তজবা।
শুনলে।
তুমি কি পরবে।

আমি শূন্যতা।
মানে।
মানে শূন্যতা। আমি তোমাকে নকল করবো না অগ্নিলা। আমি শূন্যতা হবো। অনল হবো।
অনল পোড়ে পোড়ে শূন্যতা হয়। কিংবা পুড়িয়েও শূন্যতা হয়। আমি তাই শূন্যতা। অগ্নিলার
পাশে শূন্যতার সহবাস।

পহেলা বৈশাখের মঞ্চে ছিলো মমতাজের গান। বুকটা ফাইট্যা যায়। অগ্নিলা কি জানত তার
বুকে ও ফাটল। কে জানে কার বুকে কখন ফাটল ধরে। অগ্নিলাও জানত না বলে মমতাজের
ফাইট্যা যাওয়া বুকের অনল হতে চেয়েছিলো। আগুন মজা করে বলেছিলো; তোমাকে না পেলে
আমিও বুকফাটা প্রেমিক হবো। আর আমিহীন তুমি অনলের ছায়া। কিংবা অনল শূন্যতা। রাজি।
নাহ...কখখনো নয়...

তুমি রাজি না হলেও জগত রাজি ছিলো। অগ্নিলা বুঝিয়েছিলো নিজেকে। আগুন যখন জ্বলে
তখন দুজনেই পাশাপাশি ছিলো। তাহলে অগ্নিলার সাথে আগুন যায়নি কেনো হাসপাতালে।
হয়তো গিয়েছিলো। মৃত বলে কেউ আর খোঁজ করেনি জীবিত অগ্নিলার। মরে গেলে মানুষ এক
ধাক্কায় পর হয়ে যায়। শূন্য হয়ে যায়। হয়তো আগুনই ঠিক ছিলো। ওর শূন্যতাই ঠিক ছিলো।

রমনা পার্কের মূল মঞ্চে একটা বেদী করা হয়েছে। অনলমঞ্চ। ইতিহাস বলে; আগুনের
দাবানলে পোড়ে এখানে প্রাণ হারিয়েছে যারা তাদের স্মরণে এই স্মৃতি মঞ্চ। স্মারকবেদী।
কিন্তু অগ্নিলা বলে; আগুন কেবল তারই ছিলো। তাই এমন হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা কেবল
তার আগুনেরই পাওনা। প্রতি বছর অগ্নিলা তাই রমনাতে আগুন টিপ। প্রতি বছর একা একা
ঘুরে। মমতাজের গানটা আর শুনা হয় না। বুকটা আসলেই ফাইট্যা যায় তার। শূন্য শূন্য লাগে।

কাল রাতে একটা স্বপ্ন দেখেছে অগ্নিলা। আগুন তাকে লাল টিপ পরাচ্ছে। আহা, করো কি।
টিপ পরাই।
টিপ কেন।
কালকে না পহেলা বৈশাখ।
তো।
নববর্ষ। তুমি যাবে না কালকে রমনাতে। আমিতো রমনার মাঝেই ঘুরাঘুরি সারাক্ষণ। আসো।
কাল দেখা হবে। তুমি কিন্তু আগুন সাজ।
আমি শূন্যতা।
আমি শূন্যতা।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এস, এম, ফজলুল হাসান অনেক ভালো লেখেছেন , ধন্যবাদ আপনাকে
খোরশেদুল আলম বাস্তব ঘটনা ঠিক ঐ মুহুর্তে আমি টিভিতে দেখছিলাম - ভাল হয়েছে।
নষ্ট কবিতার একটি অংশ ( Nirob Ouhan Masum) বাস্তব ঘটনা তুলে ধরেছেন আপনি । তবে লেখাটা কোন গদ্য নয় কেবল সংবাদ পত্রের কলম মাএ । ভাল লেগেছে একটি অন্য ধাপের লেখা পড়লাম বলে । আবার ও লিখার আমন্ত্রণ রইলো । ভাল থাকুন ।
বিষণ্ন সুমন হমম তোমার লিখার হাত অসাধারণ. বাট এটা ঠিক গল্প হলনা. গদ্য কবিতা বলা যেতে পারে. তবে সবচেয়ে ভালো লেগেছে তোমার শব্দচয়ন. অসম্ভব স্ফিত তোমার শব্দভান্ডার তা বলাই বাহুল্য. আমি মুগ্ধ ..আপ্লুত ...
রবি মুনতাহি "আগুন জ্বলে। আগুন জ্বলে জ্বলে ছাই ভস্ম। অগ্নিলাও ছাই হতে পারত। কিন্তু ভাগ্য অগ্নিলাকে আগুনই রেখেছে। পহেলা বৈশাখ এলে সে আগুন হয়।" এমন চুম্বক অংশ আপনার গল্পের নানান জায়গায় ছড়িয়ে আছে। ভাষার এমন চমৎকার ব্যবহার পাঠককে গল্পের ভেতর ডুবে যেতে বাধ্য করে। দাদা, ভোটের সর্বোচ্চ ব্যবহারটাই আমাকে করতে হল।
অদৃশ্য বৈচিত্রময় একটা লেখা। চালিয়ে যান।
মোঃ শামছুল আরেফিন Totally different একটা থীম।ভিন্ন একটি স্টাইল ও বটে।খুব ভাল লাগ্ল।অনেক অনেক শুভ কামনা থাকল।
মোঃ মুস্তাগীর রহমান পড়লাম.............আমার"প্রতিবাদ লিপি" পড়ার আমন্ত্রণ রইল...http://www.golpokobita.com/golpokobita/article/541/798 ভাল লাগলে "বর্ষ বরণ" "আমি কবি হতে আসিনি" পড়.

০৭ ফেব্রুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“ডিসেম্বর ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ ডিসেম্বর, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী