চাওয়াতে পাওয়ার শেষ নয়

প্রেম (ফেব্রুয়ারী ২০১৭)

স্বপ্নসন্ধানী শিবাশিস্
  • 0
  • ৬৭
ফ্ল্যাশব্যাক...অনেকদূর থেকে একটা আবছা অবয়ব "রুদ্র! রুদ্র!!" বলে ডাকছে..না চিনতে পারার একটা অব্যক্ত যন্ত্রণা....আধো-ঘুমে অনেকগুলো দৃশ্য যেন পরপর চলে গেল রুদ্রের মাথায় ঝিলিক্ দিয়ে...কোন ঘটনাই যেন কোনোটার সাথে যোগ করা যাচ্ছে না...প্রত্যেকটাই যেন অদৃশ্য কোন সুতো দিয়ে বাঁধা...উদভ্রান্তের মতো চিৎকার করে জেগে ওঠে সে,"যাও! চলে যাও!! চলে যাও বলছি!!"...তারপর আবার গোঙাতে গোঙাতে ঝিমিয়ে পড়ে সে....

রুদ্রাশিস ভট্টাচার্য,একজন মনোরোগী..এটাই তার এখন একমাত্র পরিচয়...সারাদিন কি যেন একটা ঘোরের মধ্যে থাকে সে...আর দুলে দুলে কাগজে যেন কি আঁকিবুঁকি কেটে চলে আপনমনে..
...
একমাত্র ছেলের এই অবস্থা দেখে চোখে আঁচল দেন কান্তিময়ী দেবী।প্রথম যখন ধরা পড়ে এ মনোবিকার,দিশেহারা হয়ে গেছিলেন তিনি।স্বামীকে হারিয়েছেন গত বছর!! আর এক বছরের মাথাতে এ কি ঘটনা!! অথচ...
"কেমন দেখলেন ডাক্তারবাবু?আমার রুদ্র সুস্থ হয়ে যাবে তো?ও ছাড়া যে আমার আর কেউ নেই....!!!"বাঁধভাঙা কান্নায় ভেঙে পড়েন কান্তি দেবী।
ডঃ জুবিন মেহ্তার তত্ত্বাবধানে রয়েছে রুদ্র।অবাঙালি হলেও বাংলাটা ভালোই বোঝেন তিনি কর্মসূত্রে পশ্চিমবঙ্গে থাকার সুবাদে।অভয় দেন তিনি কান্তি দেবীকে।
"এটা খুবই সিম্পল কেস ম্যাডাম।ঘাবড়াবেন না।রুদ্রের কেস হিস্ট্রিটা দেখেছি আমি।একটা ঠিকঠাক কাউন্সেলিং দরকার ওর।সব ঠিক হয়ে যাবে।ওর এই ঘটনাটা যেদিন ঘটে,তার আগের ঘটনা ডিটেইলসে বলুন দেখি আরেকবার।"...
রুদ্ধকণ্ঠে বলতে থাকেন কান্তি দেবী....

"রুদ্র! রুদ্র!! মাই পুওর বয়!! ডু ইউ হিয়ার মি, ডিয়ার ?"....
ওহ!! আবার সেই ডাক!!...
চোখটা এতো ভারী লাগছে কেনো?....
সামনে সাদা অ্যাপ্রন পরা কে যেন দাঁড়িয়ে!!...
নাঃ!!তাকাতে খুব কষ্ট হচ্ছে!!...
এ কি!! ওখানে কে দাঁড়িয়ে আছে?...
না!না!!তুমি এখানে কেনো?...
যাও!চলে যাও!!...
আই কান্ট টলারেট ইউ!!....
.....অদম্য এক আক্রোশে চিৎকার করতে থাকে রুদ্র।
সিস্টার!!সিস্টার!! হারি আপ!! পুশ হিম দ্যাট ইঞ্জেকশন্!!....
রুদ্র!!রুদ্র!! প্লীজ,কাম ডাউন!! কাম ডাউন!! মাই চাইল্ড!! ডোন্ট প্যানিক!! দেখো এখানে তুমি আর আমি ছাড়া কেউ নেই।প্লীজ রুদ্র,কো-অপারেট উইদ আস!!....
....আস্তে আস্তে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে সে তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে।


ধীরপদে ডঃ মেহ্তা বেরিয়ে আসেন অবজার্ভিং রুম থেকে,যেখানে মোহাচ্ছন্ন হয়ে শুয়ে আছে রুদ্র।নিজের অফিসে এসে পাইপটা ধরিয়ে রিভলভিং চেয়ারটায় বসে দূরের দিকে তাকান তিনি।

কি বিচিত্র মানুষের এই মন...কত আবেগ ই না জমা হয়ে আছে সেখানে...তন্ত্রীতে তন্ত্রীতে কখনো বসন্তের হিল্লোল আবার কখনো বা বর্ষার বারিধারা একাকী মনে...মন-সামিয়ানার তলায় কখন যে কাকে বৃণিতে ইচ্ছা জাগে তা একমাত্র সে ই জানে..এই আবেগের তাড়নেই মন সুন্দরের পূজারী...

রুদ্র ও বোধকরি তার প্রিয় কারোর কাছে আঘাত পেয়েই আজ এই অবস্থায়।কান্তিদেবীর বক্তব্য ও কেস হিস্ট্রি কিন্তু তেমন কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছে না।সেদিন কান্তিদেবীর কথাতেও তো তেমন কিছু পাওয়া গেলো না!!...


রুদ্রাশিস্ ভট্টাচার্য,প্রেসিডেন্সী কলেজের ফার্স্ট ক্লাস পাওয়া ছেলে...ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটিতে ইংরাজীতে মাস্টার্স করতে আসা,বন্ধুদের প্রিয় একটি ছটফটে যুবক...কত না আনন্দের দিনগুলো...ক্লাসশেষে আড্ডা..কোনদিন নন্দন তো কোনদিন কফি-হাউস কোনদিন বা কলেজের নস্ট্যালজিক সিঁড়িতে বসে গান-মাউথ অর্গ্যানে তোলা সুর-আড্ডা-গল্প-চা-ঝালমুড়ি-বাদামভাজা...দিনগুলো রাজহাঁসের মতো ডানা মেলে উড়ে যাচ্ছিলো...পড়াশোনা-বন্ধুবান্ধব-পরিজন নিয়েই কেটে যাচ্ছিল...

মাঝে মাঝে কান্তিদেবী লক্ষ্য করতেন রুদ্র কেমন যেন আনমনা...এই ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞাসা করলে "ও কিছু নয়" বলে হেসে উড়িয়ে দিতো..বেশি জোরাজুরি করলে যদি রেগে যায় সেই ভয়েও আর তেমন কিছু বলতেন না...
মাঝে স্বামী হঠাৎ গত হলেন...বাবার হঠাৎ এইভাবে চলে যাওয়াটা খুব বেজেছিল রুদ্রের বুকে...আরো অন্তর্মুখী হয়ে পড়ে সে...চোখে আঁধার দেখলেন কান্তিদেবী...শেষে ছেলেকেই আঁকড়ে ধরে বাঁচার স্বপ্ন দেখলেন....ছেলের এইধরনের অন্তর্মুখীতা দেখে মাঝে ছেলেকে একদিন বলেছিলেন,"হ্যাঁ রে!! মাঝে মাঝে বন্ধুদের ও ডেকে গল্প করতে পারিস তো,নাকি?"রুদ্র হেসে উত্তর দিয়েছিলো,"এই মফস্বলে কেউ আসবে না মা!!!"..."কি জানি বাবা,আজকালকার ছেলেদের যে কি মতিগতি!!!ভাবেন তিনি...

সেইদিন ছিল পয়লা মে...মহাজাতি সদনে নচিকেতার প্রোগ্রাম দেখে ফিরবে বলে দুপুরের দিকে বেরিয়েছিলো রুদ্র...বিকেল থেকে বাঁধভাঙা বৃষ্টি..কি জানি ছাতা নিয়ে বেরিয়েছে কিনা?...রাত দশটায় কাঁপতে কাঁপতে বাড়ী ফিরলো রুদ্র..যা ভয় করেছিলাম একেবারে ভিজে ফিরেছে...শিগগির ছাড় জামা-কাপড়, ঠাণ্ডা লেগে যাবে যে...আমি কিছু খাবো না মা, বাইরে খেয়ে এসেছি--বলতে বলতে নিজের ঘরে ঢুকে ঘরের দরজা দিয়ে দেয় সে...ওষুধ খাবি কিছু...না আছে এখানে..কেমন অস্বাভাবিক শোনাচ্ছে গলাটা..ভিজেছে বোধহয় তাই..যাইহোক ঘুমোক এখন...পরদিন সকালে ন'টা বেজে গেছে তাও রুদ্র দরজা খোলে না দেখে কান্তিদেবী দরজায় হাত দিয়ে ঠেলতেই...এ কি!!দরজা তো খোলা!!রুদ্র উঠলো কখন?...এ..এ..এ..কি রুদ্র!!কি হয়েছে তোর?এ রকম করছিস কেনো?...কি হয়েছে বল?..কি বিড়বিড় করছিস?..কি হয়েছে?...কাগজে কি এগুলো?...চোখ তোর লাল কেনো?...বল বাবা বল!!! কি হয়েছে?..তোর গা তো জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে!!!...ছেলেকে ধরে ঝাঁকাতে থাকেন তিনি....

কিছুদূরে থাকেন ডঃ নন্দী।তার বাড়ীতে গিয়ে তার নাম ধরে ডাকতেই বেরিয়ে এল ওনার মেয়ে শ্রীপর্ণা।...আসুন আসুন কাকীমা..কি হয়েছে?এই মা-মরা মেয়েটি ছোটবেলা থেকেই তার কাছ-ঘেঁষা।তাকে দেখেই কেঁদে ফেলেন...কি হবে মা শ্রী?...রুদ্র!!!...আর বলতে পারেন না তিনি কান্নার আবেগে...ডঃ নন্দীকে ঘটনাটা বলতেই তিনি চলে এলেন বাড়ীতে...ভালো করে চেক করে বললেন,"বৌদি!! ইট ক্যুড বি আ কেস অফ মেন্টাল ডিসব্যালেন্স..আমি আপাততঃ জ্বর কমাবার ওষুধ দিয়ে যাচ্ছি...আপনি ইমিডিয়েট ডঃ মেহ্তার সাথে দেখা করুন...আমার দৃঢ় ধারণা উনিই এ ব্যাপারটা ভালো বুঝবেন ও ট্রিট করবেন....উনি একজন বিলেত ফেরত নামজাদা কাউন্সেলার...আপনি বেশি দেরী করবেন না,এই ফোন নম্বরে ফোন করে ইমিডিয়েট ওনার সাথে কনসাল্ট করুন..."

ডঃ !! শিগগির আসুন ! পেশেন্ট কেমন করছে!! --সিস্টারের ডাকে সংবিৎ ফিরলো ডঃ মেহ্তার।কেনো কি হয়েছে?চল তো দেখি!! ও মাই গড!! এতো মাসল্ ক্র্যাম্প হয়েছে..সিস্টার কুইক্!! হট-কোল্ড কম্প্রেস ইন হিস্ রিউম্যাটিক্স.. হারি আপ!!!!....

কিছুক্ষণ বাদে সুস্থ হয়ে ওঠে রুদ্র।

দিন যায়...একটু একটু করে ডঃ মেহ্তার চিকিৎসায় সাড়া দিতে থাকে রুদ্র।কিন্তু আসল সিম্পটমস্ টাই তো এখনো জানা বাকি!!!কি রহস্য লুকিয়ে আছে ঐ পয়লা মে দিনটিতে জানতে তো হবেই তাকে নইলে সম্পূর্ণ সুস্থ রুদ্র কোনদিনই হবে না।

রুদ্র! রুদ্র!! আমার কথা শুনতে পাচ্ছো তুমি?...ব..বলুন শু..শুনছি আধোঘুম জড়ানো গলায় বলে রুদ্র...তুমি মাউথ অর্গ্যান বাজাতে ভালোবাসো?...হ্যাঁ...আর কে ভালোবাসতো?...অ..নে..কেই...যেমন?..পর্..পর্...আহ্!! আমি বলতে পারছি না!!..আশার আলো দেখলেন ডঃ।
তাকে প্রথম কোথায় বাজিয়ে শোনাও?...ই..ডে..ন..!!প্রথম কোথায় দেখেছিলে তাকে?..ই..উ..নি..!!ব..ই..মে..লা..!!নন্..দ..ন!!...
নাঃ!! এখন থাক।বিকেলে তার বিশেষ শেখা বিদ্যাটা কাজে লাগিয়ে চেষ্টা করবেন।তাতেই বোধকরি অনেক কাজ হবে।যতদূর বোঝা যাচ্ছে কেসটা নারীঘটিত।কিন্তু ঘটেছে টা কি রুদ্রের সাথে?প্রতারণা নাকি অন্য কোথাও বিয়ে হয়ে যাওয়া?কিন্তু রুদ্রের মতো ব্রাইট ফিউচার ছেলের ভাগ্যে...সত্যিই কবিরা ঠিকই বলেছেন,"প্রেমের ফাঁদ পাতা ভুবনে"..নাঃ ইন্টারেস্টিং...বিকেলেই চেষ্টা করে দেখতে হচ্ছে.....

Washington Medical School-এ পড়াশোনা করার সময় প্রফেসর Richard Osterlind-এর সাহচর্য ডঃ মেহ্তাকে এই বিদ্যাশিক্ষায় সহায়তা করেছিল।মনস্তত্ত্ববিদ্যা নিয়ে রিসার্চ করার সময় Neuro-Hypnotism-এর কিছু কৌশল তার আয়ত্ত্বে এসেছিল।সেই বিদ্যাই আজ তিনি রুদ্রের উপর প্রয়োগ করে জানবেন তার ঐ দিনের ইতিহাস।সম্মোহন করে মানুষের মনের পুরোনো দুঃখের কথা জেনে চিকিৎসা করাই এই বিদ্যার উদ্দেশ্য...এই কথাই একা একা বসে ভাবছিলেন ডঃ মেহ্তা...
"মে আই কাম ইন ডঃ মেহ্তা?"রুদ্রের ডাকে হুঁশ ফিরলো ডাক্তারের..
"ও!! এসো এসো, রুদ্র!! আমি তোমার কথাই ভাবছিলাম..."
রুদ্র ঘরে ঢুকে দেখলো রেস্টরুমটাকে খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।ঘরের এককোণায় একটি ছোট্ট টুলে একগোছা টাট্কা রজনীগন্ধা ফুলদানিতে সাজানো রয়েছে।ঘরের আরেক কোণায় খুব সুন্দর গন্ধের ধূপকাঠি জ্বলছে।আর সেন্টার টেবিলে মোহময় রাগসঙ্গীতের মূর্চ্ছনা যেন মনকে কেমন আবিষ্ট করে দিচ্ছে...
ডঃ মেহ্তা উঠে গিয়ে রুদ্রকে ধরে একটি ইজিচেয়ারে বসিয়ে দিলেন...
"আজ কেমন লাগছে তোমার,রুদ্র?"
"আই ফিল মাচ বেটার ডঃ!!"
"ভেরী গুড!! আই নো দ্যাট ইউ উইল ওভারকাম দ্যাট হ্যাজার্ড!!"
"আমায় এখানে ডাকলেন কেন ডাক্তারবাবু?"
"এমনি গল্প করার জন্যে..!! কেন গল্প করতে তোমার ভালো লাগে না?"
"আমার জীবনের আবার গল্প..."
"কেন এই হতাশা?শেয়ার করবে আমার সাথে?বলো না শুনি?"
"কি লাভ শুনে?"
"তবুও শুনি না...বলো বলো!!"
"না!! থাক আমি উঠি এখন!!!"
....ঠিক এমনটাই হবে জানতেন ডঃ মেহ্তা....এই পেশেন্টরা একটু অ্যারোগেন্ট স্বভাবের হয়...চট্ করে উঠে গিয়ে রুদ্রের কাঁধে হাত রেখে বললেন,"উঠো না প্লীজ!! ঠিক আছে ঐসব কথা বাদ দাও।অন্য গল্প করি আমরা,কেমন!!"..রুদ্র বসল..."আচ্ছা রুদ্র,তুমি নাকি ভালো হারমোণিকা বাজাও?তোমার মা বলছিলেন!!"মাউথ অর্গ্যানের শুদ্ধরূপ শুনে রুদ্র নড়েচড়ে বসল..."ওই একটু আধটু আর কি!!"...শিখেছো কোথাও?....না না!! শখে বাজাই!!...বাবাকে তোমার মনে পড়ে?...প্লীজ ডঃ মেহ্তা!! লিভ দ্যাট ম্যাটার!! প্লীজ!!..ওকে!ওকে!! তোমার শরীর কি খারাপ লাগছে,মাই বয়?...রুদ্রের কাঁধ ধরে ইজিচেয়ারে আধশোয়া করিয়ে দিলেন ডঃ..একটু ঘুমোবার চেষ্টা করো,রুদ্র!!...ঘুম আসছে না ডঃ মেহ্তা...আচ্ছা এই দোলকটার দিকে তাকাও,মাই বয়!!ঘুম এমনিতেই এসে যাবে...এই বলে ডঃ মেহ্তা রুদ্রের চোখের সামনে দোলাতে লাগলেন দোলকটা..আস্তে আস্তে ফুল আর ধূপের গন্ধে-মোহময় মূর্চ্ছনায় আর ডঃ মেহ্তার "ঘুমিয়ে পড়...ঘুমিয়ে পড়" বারবার বলতে বলতে দোলক দোলানোতে চোখের পাতা ভারী হয়ে ঘুম নেমে এলো রুদ্রের...

"রুদ্র!! রুদ্র!! আমার কথা শুনতে পাচ্ছো?"কোন উত্তর না পেয়ে বিন্দুবিন্দু ঘাম দেখা দেয় ডাক্তারের কপালে...তাহলে কি তিনি অকৃতকার্য!!!....আবার চেষ্টা করলেন তিনি..রুদ্রের শরীরটা সামান্য কেঁপে উঠল...ক্ষীণস্বর শোনা গেলো--- বলুন ডঃ মেহ্তা...হারমোণিকা শুনতে বেশী ভালোবাসতো কে?...মধুপর্ণা...পুরো নাম...মধুপর্ণা মেহ্তা...

!!!!কানে কে যেন গরম সীসে ঢেলে দিলো ডঃ মেহ্তার কানে!!!....আকাশ ফাটিয়ে কাছাকাছি কোথাও যেন বাজ পড়লো!!!...নাঃ অধৈর্য হলে চলবে না...এই সেই স্কাউন্ড্রেল!!!...বাগে পেয়েছি আজ!!...মধু-র জীবনটা তাহলে এ-ই নষ্ট করেছে!!...অঝোরে বৃষ্টি নামলো.....

তোমার সাথে ওর কোথায় দেখা হয়েছিল?..ও ছিলো সাইকোলজির স্টুডেন্ট....প্রেসিডেন্সির ফেস্টে প্রথম দেখা... বান্ধবী শাশ্বতীর সাহায্যে প্রথম কথা হওয়া... চলে যেতে যেতে আবার ফিরে তাকানো... মায়াময় সেই দৃষ্টি... আবার দেখা বইমেলায়...সুখস্মৃতি.... প্রথম তিনটি শব্দের ম্যাজিকাল বাক্য বলা... চোখে চোখ রেখে হারিয়ে যাওয়া...
একসাথে কাটানো মুহূর্তগুলোতে মধুপর্ণা কখনো হাত ছাড়তে চাইতো না... বাচ্চাদের মতো সারাক্ষণ হাত ধরে থাকতো....আমি মাঝে মাঝে আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করতাম,
- " সমস্যাটা কি তোমার ? এভাবে বাচ্চাদের মতো সারাক্ষণ হাত ধরে থেকে কি মজা পাও বলো তো ? "
মধু দু'হাতে মুখ ঢেকে বলত,
- " সেটা যদি বুঝতে ! "
- " তো বুঝিয়ে বল ! "
দু'হাতে আমার মুখটা ধরে নিজের দিকে ফেরাতো মধু...
তাকিয়ে রইতো কিছুক্ষণ... অপলক...
- " তোমাকে হারানোর ভয়টা সারাক্ষণ আমার মধ্যে কাজ করে। তুমি বোঝো না?"
মৃদু হেসে এলো চুলগুলো সরিয়ে বলতাম-এতো ভয় কিসের তোমার ? এই তো আমি আছি। একদম তোমার কাছে !
....কাঁদতে কাঁদতে বলতো,তুমি তো জানো না, দাদা আমাদের সম্পর্কটা মানবে না!! অমত করলে দুজনকেই খুন করাবে বলেছে!!! আমার খুব ভয় করছে রুদ্র, কি হবে?
- " তুমি আমায় ভালোবাসো তো, রুদ্র?
গভীর আবেগে জড়িয়ে ধরতাম তাকে...অভয় দিতাম ওকে..ওঃ!! একবার জানোয়ারটাকে যদি হাতের কাছে পেতাম..
.....অস্থির হয়ে উঠলো রুদ্র...
.....না একটু সময় দিতে হবে রাস্কেলটাকে...
....ধীরে ধীরে জানতে হবে পয়লা মে র কাহিনী...
.....ফিরিয়ে আনলেন তাকে ধীরে ধীরে বাস্তবের জগতে...
....অঘোরে ঘুমোচ্ছে রুদ্র...
ঘুমোক....
পাশের ঘরে গিয়ে বসলেন পাইপ ধরিয়ে...
.আজ মধুর সাথে শেষ কথাগুলো খুব মনে পড়ছে....
.মধু তুই ঐ চালচুলোহীনটার সাথে মিশবি না...বলে দিলাম...কি আছে ওর...আর যদি কোনদিন ওর সাথে তোকে দেখি বা কারোর কাছে শুনি তোদের মেলামেশার কথা তবে কিন্তু "অনার কিল" করতেও আমার বাধবে না....ডঃ মেহ্তার জামাই হবে ঐ ভ্যাগাবন্ড!!! নো ওয়ে!!!
.ঠং...ঠং....ঠং.... একটা তীক্ষ্ণ ধাতব আওয়াজে সংবিৎ ফিরলো ডঃ মেহ্তার...কি হলো...পড়ে গেলো নাকি...একি রুদ্র কোথায় গেলো,এই বৃষ্টিতে?....ফুলদানিটা হাওয়ায় পড়ে গেছিলো...তুলে রাখলেন ডঃ....যাকগে মরুক গে!! এখন অনেক কাজ ওনার..জন্মের শোধ তুলতে হবে ওর ওপর...ভুলে যাবেন তার সাথে রুদ্রের সম্পর্ক....ভুলে যাবেন রুদ্রের মাকে দেয়া কথা....তার বোনের জীবন নষ্টকারীর তার কাছে কোন ক্ষমা নেই.....
চরাচরে প্লাবন এনে দেওয়ার মতো বৃষ্টি ঝরছে আজ...ঠিক সেদিন যেমন ঝরেছিলো...মনের আগুন কই আজও তো নিভলো না তার...বৃষ্টিভেজা শহরের রাস্তায় কান্নাভেজা মনে একাকী হেঁটে চলেছে রুদ্র...মনের আকাশও যে তার আজ উথাল-পাথাল...নেমেছে সেখানেও বৃষ্টি...ঝরছে দু'চোখ বেয়ে...
দুপুরে আজ ডঃ মেহ্তার ল্যাবের টেবিলে যা দেখেছে সে...!!! এতো সহজে ভুলতেও যে পারছে না সে, সেইদিনের কথা...আজকের দৃশ্যের সাথেও...

.সমকালীন কবির কয়েকটি ভালোলাগা পংক্তি আজ বারবার তার স্মৃতিদুয়ারে কড়া নাড়ছে...যা তাদের দুজনেরই প্রিয়...

."আয়ুহীন ধাতু মেখে ছুটে আসে তীর,অশনি ছোঁয়ার আগে ছুঁই তবে,মধু ও মুহূর্ত ভরা তোমার শরীর !!"

..কেন?..কেন?..কেন চলে গেলে মধু...আমাকে এমন নিঃস্ব করে দিয়ে...

"জগতের মায়াডোরের বাঁধনে বেঁধে লাভ কি পেলে সই?/তোমা বিহনে এ শূন্য পরাণে কেমন কইরা রই !!!"..সহজিয়া আউলিয়া গানের স্মরণে তার মনের চিতা নেভাতে চাইলো সে...!!!

কিন্তু "ভ্রূ-পল্লবের আহ্বানে" যার সাথে চিরমিলন সংঘটিত হত "চন্দনের বনে"...সে যে আজ....নাহ্!! আর ভাবতে পারছে না রুদ্র !!

"প্রিয়াকে আমার কেড়েছিস্ তোরা,ভেঙেছিস্ ঘর-বাড়ি;
সে কথা কি আমি জীবনে-মরণে,কখনো ভুলিতে পারি?
আদিম হিংস্র মানবিকতার,যদি আমি কেউ হই;
স্বজন-হারানো শ্মশানে তোদের চিতা আমি তুলবোই !!!"....
বৃষ্টির মধ্যেই কান্নাভেজা মনেই অদম্য প্রতিজ্ঞা করে সে....
পৃ...থ্বী...রা...জ.... মে...হ্তা!! তুমি সাবধান !! ক্ষমা নেই তোমার !!...দাঁতে দাঁত চেপে হিসহিস্ করে বলে ওঠে সে...
বৃষ্টিস্নাত অবস্থায় বাড়ীর সামনে এসে দাঁড়ায় সে।দরজায় নক্ করতেই কে?আমি রুদ্র মা !! রুদ্র!! এতো রাতে!!! "তুমি দাঁড়াও কাকীমা!! আমি দেখছি!!" একটি যুবতীর রিণরিণে কণ্ঠ ভেসে আসে।
"কে?"আমি রুদ্র !!

ম্যাজিক আই দিয়ে দেখে নিশ্চিন্ত হয়ে দরজা খোলে সে।...ওহ্!! শ্রীপর্ণা তুমি!!আমি ভাবলাম কে এলো আবার?....
অবাক তো আমাদের হওয়ার কথা রুদ্রদা!!এই বৃষ্টিতে?কি ব্যাপার?
তুই রিসার্চ ল্যাবে যাওয়ার পর থেকে ওই আমার কাছে থাকে...ছাড়্!! ছাড়্!! জামাকাপড়টা শিগগির ছাড়্ বাবা!!ঠাণ্ডা লেগে যাবে যে..দাঁড়া, শুকনো জামাকাপড় দিই আগে...পরে শুনছি সব!!
না মা !! সময় নেই!! এখুনি আমায় চলে যেতে হবে!! শ্রীপর্ণা তুমি তোমার বাবা আই মিন্ ডঃ অমিতাভ নন্দীকে নিয়ে পোলিস্ স্টেশনে খবর দাও যে মধুপর্ণা মেহ্তার রেপ্ অ্যাকিউসড্-দের ধরতে হলে ডঃ জুবিন মেহ্তার রিসার্চ ল্যাবে পৌঁছে যেতে....

কি বলছিস্ রুদ্র?...কে মধুপর্ণা মেহ্তা?...কেই বা তার রেপ্ অ্যাকিউসড্?...কি যা-তা বকছো রুদ্রদা!!...আহ্!! আমি বাজে কথা বলছি না!!...তোমরা পোলিস্ নিয়ে জলদি এসো!!...

শোন্ বাবা শোন্!! রুদ্র!! রুদ্র!!...রুদ্রদা....রুদ্রদা...কি হবে রে শ্রী?...আমার খুব ভয় করছে যে,মা!! কি আবোল তাবোল বকে গেলো ও!!...ও যে ঠিক হয়ে আসছে ডঃ মেহ্তা তা আমায় গতকাল বলেছিলেন..কিন্তু আবার কি হলো?....


.চলো না কাকীমা!! রুদ্রদা যা বলে গেলো,তাই করে দেখি....দাঁড়াও বাবাকে ডাকি...
কিছুক্ষণ পরে হন্তদন্ত হয়ে ডঃ নন্দী এলেন...কি হয়েছে বৌদি?...শ্রী বলছিলো রুদ্র নাকি এসে কি সব বলে গেছে?...আর পোলিস্ স্টেশনে যেতে বলে গেছে?...হ্যাঁ ঠাকুরপো...কি করবো কিছু বুঝতে পারছি না....আহ্!! তোমরা এখনো চুপ করে বসে আছো...চলো চলো....তাড়া লাগায় শ্রীপর্ণা...
আরে,এসো,এসো রুদ্র!! কোথায় গিয়েছিলে এই কুকুরভেজা বৃষ্টিতে?তুমি অসুস্থ এখন।ভিজলে শরীর খারাপ করবে যে!!
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ,ডঃ মেহ্তা আমার পূর্বজীবন ফিরিয়ে দেবার জন্য।কিন্তু কি লাভ হলো দু'টো জীবন নষ্ট করে দিয়ে বলুন?--দাঁতে দাঁত পিষে বললো রুদ্র।
কি বলছো রুদ্র?...আমি কি করেছি?...মধুপর্ণার দাদা তো আপনি!!....আর আপনিই মধুকে খুন করিয়েছেন...কেন....কেন...বলুন?...কি অপরাধ ছিল আমাদের...
এই দেখো!!আবার উল্টোপাল্টা কথা বলে!!নাহ্ আবার ঘুমের ইঞ্জেকশনটা দিতে হবে দেখছি!!
নাহ্ ডঃ মেহ্তা তার আর দরকার হবে না।ইউ আর এ রেপ্ অ্যাকিউসড্!!....
হোয়াট্ ননসেন্স!! কি পাগলের মতো প্রলাপ বকছো,রুদ্র!!কিভাবে আমি রেপ্ অ্যাকিউসড্ হলাম বল?....
....ঐ টেবিলের দিকে তাকান...বলুন ঐ নিষ্পাপ ফুলের মতো যে মেয়েটা...মধুপর্ণা...আপনার বোন নয়?...আপনি তাকে আপনার দুজন ওয়ার্ডবয় সুধীন আর আপ্পাকে দিয়ে রেপ্ করান নি?...তারপর আমাকেও তারা শেষ করতে চেয়েছিল কিন্তু আমাকে মারার আগে লোকজন এসে পড়ায় জানোয়ার দুটো পালিয়ে যায়।আজও চোখে ভাসে কিভাবে আমাদের দুজনকে এম.জি.রোড মেট্রো স্টেশনের পাশের অন্ধকার গলিতে নিয়ে গিয়ে আমাকে দড়ি দিয়ে হাত-পা বেঁধে মুখে কাপড় গুঁজে রাস্তায় ফেলে রেখে আমার চোখের সামনে...ওহ্!! ভগবান!!...
একনিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে হাঁপায় রুদ্র।

হ্যাঁ হ্যাঁ আমি-ই!!আমি-ই তোকে খুন করতে ওদের লাগিয়েছিলাম।তোর মতো একটা ভ্যাগাবন্ড-রাস্কেলের সাথে সম্পর্ক হওয়ার চেয়ে তোকে মেরে ফেলা অনেক ভালো মধুর কাছে,তাই মনে হয়েছিলো আমার।কিন্তু ওরা যে বলেছিলো মধুকে খুব কষ্ট দিয়ে তুই মেরেছিস।তুই মধুর শরীরকে জোর করে ভোগ করতে চেয়েছিলি না পেয়ে ওকে খুন করেছিস...
না..না...মিথ্যে..মিথ্যে...ঐ জানোয়ার দুটো মধুর ওপর পাশবিক অত্যাচার করে শেষে প্রমাণ লোপাটের জন্য ওর গলার নলিটা কেটে দিয়েছিলো.....
তুই মিথ্যে বলছিস...হুঙ্কার দিয়ে ছুটে রুদ্রের দিকে ছুটে যান ডঃ মেহ্তা।
স্টপ...আই সে...পোলিস্ অফিসার ঢোকেন ঘরে।
না,ডঃ মেহ্তা রুদ্র ঠিকই বলেছে।এরাই দুজন রেপিস্ট অ্যান্ড মার্ডারার...পালাবার সময় ধরা পড়েছে..আর জেরায় ওদের দোষ স্বীকার করেছে ,আরও আপনার নির্দেশেই যে ওরা এ কাজ করেছে তা বলেছে--হ্যান্ডকাফ পরা অবস্থায় দুজন ওয়ার্ডবয়কে দেখিয়ে বলেন অফিসার..তাই ইউ আর আন্ডার অ্যারেস্ট,ডঃ মেহ্তা ফর ভিকটিমাইজিং অ্যান্ড প্রোভোকিং রেপ্ অফ মিস্ মধুপর্ণা মেহ্তা..
ক্রাইম ডাসন্ট পে ডঃ মেহ্তা--ধরা গলায় বলে রুদ্র।
নো!!...নো!!...বলতে বলতে দু'হাতে নিজের মাথার চুল খামচে ধরে মাথা নীচু করে বসে পড়েন ডঃ মেহ্তা।

এসো মা!!...এসো শ্রীপর্ণা!!..আসুন নন্দীকাকু...!!
মা, তুমি আমায় জিজ্ঞাসা করেছিলে না,কে মধুপর্ণা মেহ্তা?...
হ্যাঁ,রুদ্র!! কে সে?...আমি তাকে ভালোবাসতাম মা..বাসতাম কেন,আজও বাসি যে...
.সমস্ত ঘটনা প্রথম থেকে মা'কে বললো রুদ্র...

পয়লা মে তারিখে আমরা দু'জনে অনুষ্ঠান দেখে গল্প করতে করতে এম.জি.রোডের দিকে আসছিলাম।ঠিক সে সময় মেট্রো স্টেশনের পাশে অন্ধকারে আমাদের দু'জনকে দু'জন লোক জোর করে ধরে পাশেই অন্ধকার-গলিতে নিয়ে যায় এবং আমার সামনেই আমার মধুকে....কান্নায় ভেঙে পড়ে রুদ্র।
শ্রীপর্ণা মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে--কি করবে বলো,রুদ্রদা?দোষীরা তো সাজা পাবেই।মধুপর্ণার আত্মা শান্তি পাক...
....চোখ মুছে রুদ্র বললো--ডঃ মেহ্তার ওষুধে কয়েক সপ্তাহ আগে আমার ধীরে ধীরে পূর্বস্মৃতি ফিরে এসেছিলো।আজ বিকেলে আমি ডঃ-এর ল্যাবে যখন আসি তখন উনি ছিলেন না।হঠাৎ করে ল্যাবের অফিস টেবিলে মধুর ঐ ছবিটা দেখে আমার সব মনে পড়ে যায়।বুঝতে পারি ডঃ মেহ্তা-ই,মধুর দাদা পৃথ্বীরাজ মেহ্তা;যিনি জুবিন্ নামও ব্যবহার করেন।আমি মধুর কাছে ওনার পৃথ্বীরাজ নামটাই শুনি।এমন সময় দু'জন লোককে এ ঘরে ঢুকতে দেখে চমকে উঠি...এরাই যে তারা...আমি ভিতরের দরজার আড়ালে লুকিয়ে পড়ি...আর শুনতে পাই ওরা দুজন একে অপরকে বলছে,"ডাক্তারবাবু বোধহয় জানে না,ঐ রুদ্র-ই...হেঃ!..হেঃ!..হেঃ!"চোখ মারে দু'জন দু'জনকে!!!...ভাগ্যিস কাজশেষে বুদ্ধি করে রাজ্যের বাইরে ছিলাম এতদিন,নইলে ঠিক চিনে ফেলতো!!...ধুর!! ওতো পাগল এখন!!...ডাক্তারবাবুকে আগেও যেমন এর নামে সব দোষ দিয়েছি তেমন এখন আবার বললেই...বল হরি...হরি বোল্....হ্যা..হ্যাহ্...হ্যাহ্....হ্যা...করে হাসতে হাসতে চলে যায় তারা...আমিও নিষ্ফল আক্রোশে আড়াল থেকে বেড়িয়ে আসি..বিকেলে ডঃ-এর কাছে পুরোটা অভিনয় করি এবং সম্মোহনের ভান করে ওনার প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করে মধুর নাম উচ্চারণ করা মাত্র ওনার চমকে ওঠা দেখে স্যাংগুইন হই...ইনিই মধুর দাদা।তারপর তোমাদের কাছে যাই আর বাকিটা তো তোমরা জানোই!!!...
হঠাৎ রুদ্র লাফিয়ে উঠে ডঃ মেহ্তাকে এলোপাথাড়ি চড় মারতে মারতে বলে,"আই শ্যাল কিল ইউ বাস্টার্ড!! তুই আমার মধুকে কেড়েছিস!!"...পোলিস অফিসার তাড়াতাড়ি ধরে ফেলেন রুদ্রকে আর বলেন,"আইন নিজের হাতে নিও না রুদ্র!! ওনার শাস্তি তো উনি পেয়েইছেন!!"...
ধীরপায়ে এগিয়ে যায় রুদ্র মধুপর্ণার ছবিটির দিকে...
ভাবে এই তো সেদিনের কথা--হাতে হাত রাখলে সখা,বাঁধলে দুটি হৃদয়/এমন তো হতে পারে বঁধু,চাওয়াতে পাওয়ার শেষ নয়...মধুর মুখে এই কথা শুনে ছদ্মকোপ দেখিয়েছিলো সে...আর আজ...থরথর করে কেঁপে উঠে হাউহাউ করে কেঁদে বলে ওঠে..."ফিরে আয় মধু...ফিরে আয়...তোকে ছাড়া তোর রুদ্র আজও অসহায়...পারলে রক্ষা করার ব্যর্থতায় ক্ষমা করিস আমায়..."
শ্রীপর্ণাকে এগিয়ে দিয়ে কান্তিময়ী দেবী আর ডঃ নন্দী ঘর ছেড়ে বাইরের দিকে এগিয়ে যান।সে এগিয়ে গিয়ে পিঠে হাত রাখে,"রুদ্র দা!! রুদ্র দা!! দেখো মধু তো তোমার ভালোবাসাতেই বেঁচে থাকবে।তুমি এভাবে ভেঙে পড়ো না প্লীস।শক্ত হও একটু।তুমি এভাবে ভেঙে পড়লে কাকীমার কি হবে ভাবো?..ওঠো!!..ওঠো!!..দেখো দুঃখ তো থাকবেই জীবনে...তাকে নিয়েই তো এগোতে হবে আমাদের সবাইকে...জীবনের সব চাওয়াই যে পাওয়াতে শেষ হয় না...
ধীরে ধীরে মাথা তোলে রুদ্র..কিন্তু শ্রীপর্ণা মধুর এভাবে মৃত্যুটা যে মানতে পারছি না!!...তা তো সভ্যসমাজের মানুষ কেউই মানতে পারবে না...কিন্তু পশু আর মানুষ নিয়েই তো সমাজ,তাই না!!...দেখো না!! আবার নতুন করে সব শুরু করা যায় না?তোমার কেরিয়ার তো এখনও মাঝপথে,রুদ্রদা!! চলো না!! আমরা সবাই মিলে একটা নতুন সুন্দর সকাল নিয়ে আসি!!আলো আমরা দেখবোই একদিন,আঁধারের শেষ যেখানে...কি পারবে না তুমি?...দেখো না চেষ্টা করে!!...ঠিক পারবেই....

পরদিন....আনন্দবাজার পত্রিকায়....
বিখ্যাত মনোরোগবিশেষজ্ঞ ডঃ জুবিন্ মেহ্তার শোচনীয় আত্মহত্যা
নিজস্ব সংবাদদাতা :
দক্ষিণ কোলকাতার নিজস্ব রিসার্চ ল্যাবে ডঃ জুবিন্ মেহ্তাকে "অনার কিলিং"-এর অপরাধে অভিযুক্ত করে গ্রেফ্তার করে পুলিশ স্টেশনে নিয়ে যাওয়ার সময় তার দুই ওয়ার্ডবয়ের ঘাড়ে তিনি পটাশিয়াম সায়নাইড ভরা ইঞ্জেকশন ফুটিয়ে দেন এবং তারপরেই নিজের ঘাড়েতেও ফুটিয়ে দেন।ঘটনাটি পুলিশের সামনে ঘটলেও ঘটনার আকস্মিকতায় সকলে এতটাই হতভম্ব হয়ে পড়েন যে তাকে বাধাদানের আগেই তিনি ঘটনাটি ঘটিয়ে ফেলেন।তড়িঘড়ি নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তিনজনকেই মৃত বলে ঘোষণা করেন।
................................................(বিস্তারিত খবর ভিতরে)
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
স্বপ্নসন্ধানী শিবাশিস্ ধন্যবাদ গোবিন্দ বীন দাদা । সাথে থেকে চিরকাল এইভাবেই উৎসাহ দিয়ে যাবেন এই আশায় রইলাম ।
ভালো লাগেনি ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭
গোবিন্দ বীন ভাল লাগল,ভোট রেখে গেলাম ।পাতায় আমন্ত্রন রইল।
ভালো লাগেনি ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

২৫ জানুয়ারী - ২০১৭ গল্প/কবিতা: ১ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪