পুলক চিন্তায় পরে গেল।এটা কি তবে তার মনের ধারণা মাত্র নাকি আসলেই তাকে কেউ অনুসরণ করে চলেছে।সে কালকে বাসায় এসে বিষয়টি নিয়ে খুব চিন্তায় পরে গেছে।এমনকি সারারাত সে ঠিকভাবে ঘুমাতেও পারেনি।
কালকে বাসায় ফেরার সময়ই সে বিষয়টি উপলব্ধি করতে পেরেছে,কে যেন তাকে অনুসরণ করে চলেছে।বিষয়টি পুলকের মনে ভয়ের সৃষ্টি করেছে।কি হতে পারে কে তাকে কেন অনুসরণ করছে বিষয়টি ভাবতেই সে শিহরে উঠে।
এ বিষয়ে করো সাথে তার আলোচনা করা দরকার না হলে সে নিজে ভাবতে ভাবতে অস্থির হয়ে উঠবে আর তাহলে সে ভয়ে বাসা থেকে বেরই হতে পারবে না।কি করা যায় সে ভাবতে লাগল।তার খুব ঘনিষ্ট বন্ধু কাসেম সে ভাবলো তবে কাসেমের সাথেই বিষয়টা শেয়ার করা যাক।যেই ভাবনা সেই কাজ।
পুলক মোবাইলে কল করে কাসেমকে বাসায় ডেকে পাঠাল।
বিকেল বেলা কাসেম এসে হাজির হলো।সে এসেই পুলক কে বলল,দোস্ত কি হয়েছে এতো জরুরি ডেকে আনলি কেন আমারে।আমার একটা কাজ ছিল তা ফেলেই চলে এসেছি। আর তা ছাড়া তুই আমারে মোবাইলেও তো বিষয়টা বলতে পারতিস।
জবাবে পুলক বলল,আরে ভাই মোবাইলে বলার মতো হলে কি আর আমি তোকে ডাকি।খুবই গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।চল ছাদে চল ওখানে গিয়ে আমি তোকে কথাটা বলব।বাসার কাউকে বিষয়টা না জানিয়ে পারলেই ভালো।
একটু চা নাস্তা না খেলে তো আমি আবার আড্ডা দিতে পারি না তা তো তুই জানিস।কাসেম বলে উঠল।
আরে ভাই সে ব্যবস্থা আগেই করে রেখেছি।তুই আগে তো চল।ছাদে গেলেই সব পাবি।এ কথা বলে পুলক দ্রুত হাত ধরে কাসেমকে ছাদে নিয়ে গেল।
টেবিলে চা নাস্তা পেয়ে কাসেম খুব খুশি হলো।সে বসেই খাওয়া শুরু করে দিল।যেকোনো খাবার আইটেম তার খুব পছন্দ।খেতে খুব ভালোবাসে কাসেম,আর তাই পুলক তার জন্য কয়েক ধরণের খাবার আগে থেকেই রেডি করে রেখেছে। কারণ পুলক তো জানে খাবার পেলে তার বন্ধু তাকে সব ধরণের বুদ্ধি পরামর্শ দিতে রাজি হবে।
খেতে খেতে কাসেম বলল,না দোস্ত দেখছি কাজ ফেলে এসে আমার তেমন লস হয়নি।বল কি বলার জন্য ডেকেছিস আমার মনে হয় খেতে খেতে তোর কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতে পারব।
বিষয়টি খুবই ভয়াবহ।আমি বুঝতে পারছি না তোকে কিভাবে বুঝিয়ে বলব।আর তুই আমার কথা বিশ্বাস করবি কিনা।সংশয় প্রকাশ করে পুলক বলল।
আরে বল,বলে ফেল।তুই কি আবার প্রেমে পরেছিস নাকি রে।বল আমি তাহলে আন্টিকে বলে তোর বিয়ের কাজটা ঘুচিয়ে ফেলি।কাসেম পুলকের সংশয় দেখে বলে উঠল।
না না বোকা তাহলে তো তোকে আমার রুমে বসেই বলতে পারতাম।এ বিষয়টা অন্য রকম।পুলক বলল।
তা বল না কি সেটা।কাসেম পুলককে তাগাদা দিয়ে বলল।
দোস্ত আমার মনে হচ্ছে আমাকে কেউ যেন ফলো করছে।আমি কালকে বিষয়টা বুঝতে পারলাম।আমি এমনিতেই ভীতু মানুষ তুইতো জানিস।কি যে করি এখন বুঝতে পারছি না।তাই তোকে এ কথাটা বলার জন্য এমন করে ডেকে আনলাম।আমি তো ভয়ে কিছুই ভাবতে পারছি না কি করবো এখন।পুলক বলল তার ভয়ের কথা।
কি বলছিস তুই সিরিয়াস তো।কাসেম চমকিত হয়ে বলে উঠল।
আরে ভাই আমি কি তোর সাথে ফান করছি নাকি।আমি ভয়ে এখন অফিসে যাব কেমন করে সেটাই ভাবছি।আমার মনে হয় লোকটা খুবই ভয়ানক হবে।না হলে আমাকে ফলো করবে কেন।এই আমি তো আমার জানামতে কারো কোনো ক্ষতি করিনি।তাহলে সে আমাকে ফলো করছে কেন বলতে পারিস।পুলক বন্ধুর কাছে মনের কথা খুলে বলল।
কি জানি কি হতে পারে।আচ্ছা আমি একটু ভেবে বলছি।কাসেম এতটুকু বলে নিশ্চুপ হয়ে রইল।
কিছুক্ষণ পর আবার কাসেম বলল,না দোস্ত ভেবে তো কোনো কূল কিনারা পাচ্ছি না।তোর মতো ভালো ছেলেকে কে ফলো করতে পারে।যাই হোক এখন তু্ই কি করতে চাচ্ছিস।
কাসেমের কথার জবাবে পুলক বলল,আরে বোকা কিভাবে কি করবো সেই বুদ্ধি দেবার জন্যই তো তোকে আমি ডেকে এনেছি।তুই বল এখন আমি কি করবো।
কাসেম বলল, ও ও তাইতো।ভুল হয়ে গেছে দোস্ত।তুই বিকেলের নাস্তায় এত খাবার রেখেছিস যে খেতে খেতে বুদ্ধি লোপ পেয়েছে বোধহয়।আচ্ছা আমি বলছি শোন যদি কেউ তোকে ফলো করে থাকে তবে তাকেও আমরা ছেড়ে দেব না।তুই ভয় করিস না।বিষয়টা আমার ওপরে ছেড়ে দে,আমি দেখছি কিভাবে কি করা যায়।
খুব তো বললি তোর ওপরে ছেড়ে দেব।আর তুই বাসায় গিয়ে খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে থাক আর ফলোয়ার এসে আমাকে খুন করে চলে যাক।তুই কোনোদিন সিরিয়াস হবি বলে আমার মনে হয় না।আমি ভয়ে ঘুমাতে পারছি না আর তুই কতো সহজে কথাগুলো বলে চুপ করে আছিস।তুই ভেবে বল আমি এখন কি করবো।কি করলে ভয়হীন ভাবে বাসা থেকে বের হতে পারবো।অনুযোগের সুরে পুলক কথাগুলো বলল।
পুলকের কথা শুনে এবার কাসেম বলল,আরে দোস্ত তুই কি ভাবছিস আমি না ভেবেই কথাগুলো বলেছি আমি ভেবেই বলেছি সব।শোন আমি আরো ভেবে ফেলেছি সিরিয়াসলি।
পুলক বলল,কি ভেবেছিস,বল তাড়াতাড়ি।
আমি কিভাবে ঐ ফলোয়ারকে পাকড়াও করবো সেটাই ভেবেছি।কাসেম বলল।
কিভাবে পাকড়াও করবি বল আমাকে।পুলক জানতে চাইল।
এবার কাসেম বলল,শোন প্রাথমিকভাবে আমি যে কাজটা করবো তা হলো কালকে আমিও তোকে ফলো করবো আর দেখব আসলেই তোকে কেউ ফলো করছে কিনা।তারপরের সিদ্ধান্ত পরে জানাবো তোকে আর কিভাবে ওকে পাকড়াও করতে হবে সেটাও ভেবে রেখেছি কিন্তু এখন বলব না।
আচ্ছা ঠিক আছে সেটা না হয় পরেই বলবি কিন্তু আমাকে তুই ফলো করবি কিভাবে।আমার মনে হয় সেই লোকটা ঐ চার রাস্তার মোড় থেকে আমার পিছনে লাগে।আমি খুব ভালো করে লক্ষ্য করেছি লোকটার চুল বড় আর দাঁড়ি আছে মুখভর্তি।পুলক বলল।
পুলকের কথা শুনে কাসেম বলল,আচ্ছা তুই তো বাসার সামনে থেকেই রিক্সা নিয়ে নিস তাই না?
হুম। আমি অফিস পর্যন্তই রিক্সা নিয়ে নেই।আর ঐ লোকটাও রিক্সায় করেই আমাকে ফলো করে।চার রাস্তার মোড় থেকে আমার পিছু নেয় আর আমার অফিসের কাছে গিয়ে পিছনে তাকাতেই দেখি সে নেই।বুঝতে পারছি না কিছু বন্ধু আমার কিন্তু ভয় লাগছে।পুলক বলল।
কাসেম এবার পুলক কে সাহস দিয়ে বলল,ভয়ের কিছু নাই দোস্ত আমরা তো আছি।তাহলে আজ আমি উঠি।শোন কালকে চার রাস্তার মোড়ে আমি ও ঘাপটি মেরে থাকবো তুই আমাকে দেখলেও কোনো কথা বলবি না।আমাকে এখন আর তুই চিনিস না ঠিক আছে।
আচ্ছা ঠিক আছে।কিছু বুঝতে পারলে অথবা লোকটাকে চিহিৃত করতে পারলে আমাকে সঙ্গে সঙ্গে মোবাইলে কল করিস।পুলক বলল।
ঠিক আছে দোস্ত।কোনো চিন্তা করিস না।আমি তোর পিছনে থাকব।তুই কোনো ভয় পাস না।চললাম তাইলে।বন্ধুকে সাহস দিয়ে কাসেম চলে গেল।
পুলকের চিন্তা তবুও কাটল না।সহসা সে এক ঝামেলায় আটকে গেল বোধহয়।সে কিছুতেই স্বস্তি পাচ্ছে না।আসলে চলার পথে তার কখনো কারো সাথে কোনো ঝামেলা হয়নি।তাই রহস্যময় এই ঝামেলায় পরে সে বেশ ভেঙ্গে পরেছে।কিভাবে যে সে বাইরে বের হয়ে তার কাজগুলো করবে তা সে বুঝতে পারছে না।বেশ ভয় পেয়েছে পুলক।আসলে যে কোনো কারোর ই ভয় পাবার কথা তার সাথে এমন ঘটনা ঘটলে।আর পুলকের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।
বুকে সাহস সঞ্চয় করে বাসার কাউকেই বিষয়টা না জানিয়ে সকালের নাস্তা সেরে পুলক অফিসের পানে রওনা হলো।যদিও বারবার সে নিজেকে বোঝাতে চেষ্টা করেছে কিন্তু তার মনের ভয় পুরোপুরি দূর হয়নি।মনের মাঝে ভীতি নিয়েই সে একটা রিক্সা নিয়ে নিল।
চার রাস্তার মোড়ে এসে পুলকের চোখ দুটি কাসেমকে খুঁজতে লাগল। তার চোখ চারিদিকে তাকিয়ে কাসেমকে ঠিক খুঁজে পেল।কাসেমকে দেখে পুলকের মনে একটু সাহসের সঞ্চয় হলো।সে রিক্সায় এগিয়ে চলল।এবার একটু নিশ্চিন্ত মনে পুলক সামনে অগ্রসর হতে লাগল।কারণ তার মন জানে যে তার বন্ধু তার পেছনে রয়েছে।ভয়ে পিছু ফিরে আর একবারও তাকাল না পুলক।অফিসে পৌঁছে সে কাসেমকে মোবাইলে কল করল।কাসেম রিসিভ না করে কেটে দিল।সে আর কল করলো না কারণ হয়ত কাসেম কোনো কাজে আছে তাই সে কেটে দিয়েছে।
কোনোমতে সে কাজে মনোনিবেশ করার চেষ্টা করতে লাগল।আধা ঘন্টা যেতেই তার মোবাইল ফোন বেজে উঠল।কাসেমের কল,দ্রুত রিসিভ করে পুলক কাসেমের কাছে জানতে চাইল,কি খবর দোস্ত বল।
ওপাশ থেকে কাসেম বলল,দোস্ত তোর কথা ঠিকই আছে।একটা লোক তোকে ফলো করছে তবে আমিও তাকে ফলো করেছি।সুতরাং ভয় করিস না,একটা কিছু করে ফেলব।
কাসেমের কথা শুনে ভীত কন্ঠে পুলক বলে উঠল,কি বলছিস দোস্ত আমি তো শেষ।কেন সে আমাকে ফলো করছে বোধহয় আমাকে গুলি করে মেরে ফেলবে নাকি।কি করেছি আমি তার।
আরে বোকা এত ভেঙ্গে পরছিস কেন।বিষয়টি তো আমি দেখছি।কি করা যায় আমি ভাবতেছি।কাসেম বলল।
যা ভাবার তাড়াতাড়ি ভাব।কি করবি কর।আমি কিন্তু আর বাইরে বের হতে পারবো না।আমি ভয়েই শেষ হয়ে যাব কিন্তু।ভাবছি কালকে থেকে এক সপ্তাহ ছুটি নিয়ে নেব।আর বাইরে বের হতে চাইনা।পুলক বলল।
ওপাশ থেকে কাসেম বলল,আরে বোকা এত ভয় পাবার কিছু নেই।আর শোন ছুটি নিতে হবে না।কারণ ছুটি নিলে আমরা ঐ ফলোয়ার কে আর খুঁজে পাব না।কারণ তুই বাইরে বের না হলে সে তো আর তোকে ফলো করতে পারবে না আর আমরাও তার বিরুদ্ধে কিছু করতে পারব না।
তাহলে কি করবো তুই বল।পুলক বন্ধুর কাছে জানতে চাইল।
কাসেম বলল,তোর ছুটি নিতে হবে না।কালকেও অফিসে আসবি।আর আমরা একটা প্লান করেছি লোকটাকে পাকড়াও করার জন্য।ঐ যে কালকে তোকে পরে বলব বলেছিলাম।সেই প্লানটা সাজিয়ে ফেলেছি।
কাসেমের কথা শুনে পুলক বলল,কি প্লান আর আমরা বলতে কাদেরকে বোঝাচ্ছিস।
এবার কাসেম বলল,আমি আবির আর নয়ন কে বিষয়টা বলেছি।শোন আমরা সবাই মিলে লোকটাকে ধরে ফেলার একটা বুদ্ধি করে ফেলেছি।তোকেও বলব তবে সবকিছু আমরা সন্ধ্যের পরে চা খেতে খেতে পাকাপাকি ঠিক করে নেব যে কিভাবে কি করব।
তুই সবকিছু আবার শেষ করে ফেলিস না।কি করবি যে আমি বুঝতে পারছি না।কোথায় বসবি সন্ধ্যের পর।পুলক কাসেমের কাছে জানতে চাইল।
কাসেম বলল,আবিরদের বাসার ছাদে আমরা বসব।সন্ধ্যের পরে চলে আসিস তাড়াতাড়ি।এখন রাখলাম।এতটুকু বলে কাসেম লাইন কেটে দিল।
সবাই আবিরদের ছাদে বসল।কাসেম যথারীতি খাবার খেতে লাগল।যেকোনো আড্ডায় তার চা নাস্তা বিস্কুট অথবা কিছু ফল তার চাই ই চাই।এখানে ও আবীর আগেই বন্ধুদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করে রেখেছিল।সুতরাং কাসেমের আর কোনো অসুবিধা রইল না।খেতে খেতে সে বলল,তাহলে নয়ন দোস্ত আমাদের প্লানটা এবার পুলকের কাছে খুলে বল।
কাসেমের অনুমতি পেয়ে নয়ন বলল,শোন পুলক আমরা ঐ লোকটাকে ধরে এখানে নিয়ে আসব।এখন আবিরদের বাসায় কেউ নেই সবাই গ্রামের বাড়িতে গেছে সুতরাং কেউ টের পাবে না।আমরা ওকে ধরে জানতে চাইব কেন তোর পিছু নিয়েছে সে।
পুলক জানতে চাইল,কিন্তু তাকে ধরে আনবি কেমন করে।যদি পুলিশ বা আর কোনো লোক টের পেয়ে যায় তাহলে তো মুসকিল হয়ে যাবে।
পুলকের কথার জবাবে আবির বলল,শোন কেউ টের পাবে না আমরা সবকিছু ঠিক করে ফেলেছি।
কি ঠিক করে ফেলেছিস?পুলক জানতে চাইল।
আবার আবির বলল,আমি আর নয়ন আমাদের গাড়িটা নিয়ে ঐখানে অবস্থান করবো যেখানে লোকটা তোকে ফলো করে এসে থেমে যায়।আর কাসেম তো তার পিছু পিছু থাকবেই সে থামতেই কাসেম এসে তার চোখ কাপড় দিয়ে ঢেকে দেবে সঙ্গে সঙ্গে আমি আর নয়ন ওকে গাড়িতে তুলে ফেলব।কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমরা কাজ সেরে ফেলব।আমরা সাকসেস হলেই তোকে খবর দেব।তুই অফিস থেকে তখন ছুটি নিয়ে চলে আসবি।তারপরে আমরা ওকে জেরা করবো কেন সে তোর পিছু নিয়েছে।বুঝেছিস এটাই আমাদের প্লান।তোর ভয় যেন দূর হয় তুই যেন নিশ্চিন্তে বাইরে বের হতে পারিস সেজন্য আমরা এই ঝুঁকি নিতে চাচ্ছি।
আবিরের কথা শুনে পুলক বলল,বিষয়টা কিছুটা নাটকীয় হয়ে যাচ্ছে কিন্তু তোদের কাজ যদি সফল না হয় কিছু উল্টাপাল্টা হয়ে যায় তবে তো শেষে তোরাও ঝামেলায় জড়িয়ে যাবি।
কোনো ঝামেলা নাই।এটাই সঠিক বুদ্ধি তুই কোনো সংশয় করিস না আমরা কালকেই অপারেশনটা করে ফেলব।তুই শুধু আমাদের সাপোর্ট দিয়ে যা বুঝেছিস।কাসেম বলে উঠল।
পুলক বলল,আচ্ছা ঠিক আছে কিন্তু এমন না করে আমরা কি বিষয়টা পুলিশকে জানাতে পারি না তারপরে যা করার ওরাই করবে,কি বলিস।
নয়ন বলল,তাতে আরো নানান ঝামেলার সৃষ্টি হতে পারে। জানিসই তো পুলিশ কে দিয়ে কোনো কাজ টাকা ছাড়া সহজে হয় না।
নয়নের কথা শুনে এবার আবির বলল,ঠিক বলেছিস তুই।যাই হোক পুলক আর সংশয় করে লাভ নেই কালকে আমরা কাজটা করছি ইনশ্আল্লাহ্ ।
পুলক বলল,ঠিক আছে তোরা যেমন ভালো মনে করিস।তাহলে আমার এখন সবাই উঠি তাই না।
কাসেম বলল,ওকে আমরা তাহলে সবাই বাসায় চললাম আবির।কালকে ঠিক সময়ে ঐখানে গিয়ে আমাকে মোবাইলে করে নিশ্চিত করে নিস।
ওকে আল্লাহ্ হাফেয।আবির সবাইকে বিদায় দিয়ে বলল।
পরদিন ভয়ে ভয়ে কম্পিত বুকে বাসা থেকে পুলক বের হলো।চার রাস্তার মোড় পার হয়ে পুলক পিছনে তাকিয়ে দেখল দুটো রিক্সা তাকে ফলো করছে।একটা রিক্সায় সেই অচেনা লোকটা আর একটা রিক্সায় তার বন্ধু কাসেম।সে চিন্তায় পরে গেল না জানি কি অঘটন আবার ঘটে যায়।সে মোবাইলে কল করে আবিরদের জানিয়ে দিল যে লোকটা তার পিছু রয়েছে আর কাসেম তাকে ফলো করছে তারা যেন তৈরি হয়ে থাকে।আর হয়ত বিশ মিনিটের মধ্যেই তারা পৌঁছে যাবে সেখানে।
আবির পুলক কে নিশ্চিন্ত করলো যে সে আর নয়ন তৈরি হয়েই আছে।কাসেম আসলেই তারা লোকটাকে পাকড়াও করবে।
পুলক মনে মনে সাহস পেল যাক ওরা তিনজন আর লোকটা একা সুতরাং ওদের সঙ্গে পারবে না সে।
আধা ঘন্টা পরেই পুলক চিন্তিত মনে অফিসে ঢুকে গেল।সে কিছুতেই স্থির হতে পারছে না।ওদিকে কি ঘটেছে তা জানার জন্য তার মন অস্থির হয়ে উঠল।সে একটা কাজ করে নিল বসকে বলে তার ছুটি পাস করিয়ে নিল।এখন শুধু ওদের কলের অপেক্ষা।
এক ঘন্টা পার হয়ে গেল।পুলক নিজে থেকেই অফিস থেকে বেড়িয়ে পরলো।সে একটা রিক্সা নিয়ে নিল আবিরদের বাসার উদ্দেশ্যে।কিছুদূর যেতেই তার মোবাইল বেজে উঠল।আবিরের কল।রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে আবির বলল,দোস্ত তুই অফিসে,চলে আয় তাড়াতাড়ি আমরা সাকসেস হয়েছি লোকটা এখন আমাদের ছাদে বন্ধি।
পুলক বলল,আমি প্রায় তোদের বাসার কাছাকাছি চলে এসেছি আর মনে হয় দশ মিনিট লাগবে।লোকটার মুখ খুলে দিয়েছিস তো।ওনাকে কিছু খেতে দে।আর সাবধান আমি না আসা পর্যন্ত ওনাকে কিছু বলিস না।কাসেমের কিন্তু আবার রক্ত গরম উল্টা পাল্টা যেন আবার কিছু না করে বসে।
না না দেখতে তো লোকটাকে ভদ্র লোক বলে মনে হচ্ছে।তার হাত পা বেঁধে রেখেছি আর সবকিছু খোলা আর কিছু খেতে চাচ্ছে না।তুই আয় তারপরে দেখি কি করা যায়।আবির বলল।
ওকে ওকে । এতটুকু বলে পুলক লাইনটা কেটে দিল।
চার বন্ধু একসঙ্গে ছাদে উঠল।লোকটাকে সামনে দেখে পুলকের মনে একটু সাহস হলো।তার মনের ভীতি যেন কিছুটা দূর হলো।তাদের কে দেখে অচেনা লোকটা বলে উঠল, ভাই আপনারা আমাকে এখানে ধরে এনেছেন কেন,কি চান আপনারা।আমার সাথে আপনাদের কোনো ঝামেলা তো নেই।তাহলে আমাকে এভাবে ধরে আনলেন কেন।প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন।
লোকটার কথার জবাবে কাসেম বলল, আমরা চারজন বন্ধু আপনার সাথে আমাদের কোনো ঝামেলা নেই তবে আপনি আমাদের এই বন্ধু পুলক কে কেন ফলো করছেন।ও তো ভয়েই শেষ হয়ে যাচ্ছে।
লোকটা পুলকের দিকে তাকাল।তারপরে বলল,ও আচ্ছা আপনি আমি ঠিক করতে পারিনি।আর কিছুটা সংশয়ও ছিল যে আপনি ই কিনা।আপনাকে আমি কয়েকদিন যাবত ফলো করছি কথা সত্য তবে তার একটা কারণ আছে।
লোকটার কথা শুনে নয়ন বলে উঠল,আর কেন আপনি ফলো করছেন সে কারণেই আমরা আপনাকে ধরে এনেছি এখানে।বলুন আপনি কি কারণে আমার বন্ধুকে ফলো করছেন।
এবার লোকটা বলল,যদি কিছু মনে না করেন আপনারা আমার বাঁধন খুলে দিন।আসলে আমি কোনো খারাপ লোক নই।আমি একজন শিক্ষক।আমার পরিচয় পত্র পকেটেই আছে। ইচ্ছা করলে দেখে নিতে পারেন আপনারা।
কাসেম বলল,না না বাঁধন খুলে দেয়া যাবে না।আগে বলুন আপনি আমাদের বন্ধুকে ফলো করে এত ভয় পাইয়ে দিচ্ছেন কেন।
পুলক বলল,কাসেম দোস্ত ওনার পরিচয় পত্র না হয় দেখেই নে আর হাতের বাঁধনটা না হয় খুলেই দে।বেচারা কষ্ট পাচ্ছে হয়ত।
ততক্ষণে আবির ওনার পকেট থেকে ওনার পরিচয় পত্র বের করে দেখল যে লোকটার কথা সত্য।পুলক কার্ডটা হাতে নিয়ে দেখল তাতে লেখা রয়েছে গণিত শিক্ষক মোঃহুমায়ূন কবির।একটা প্রাইভেট স্কুলের শিক্ষক তিনি।
লোকটার হাতের বাঁধন খুলে দিয়ে আবির বলল,ঠিক আছে ভাই আপনি এবার আমাদেরকে বলুন কেন আপনি পুলককে ফলো করছেন।
এবার শিক্ষক হুমায়ূন কবির বলল,গত শুক্রবার বাজারে গিয়েছিলাম বাজার করতে বাজার শেষ করে ব্যাগটা একটা দোকানে রেখে একটা গলি পার হয়ে বাজারের শেষে গিয়ে দাঁড়ালাম প্রস্রাব করবো বলে।কিন্তু তা আর হলো না।একটু দূরে দেখি কয়েকজন লোক মিলে একটা লোককে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে খুন করছে।আমি কিছু চিন্তা না করেই হাতের মোবাইলটা দিয়ে সবকিছু ভিডিও করে নিলাম।
তারপরে দ্রুত সেখান থেকে কেটে পরলাম।
একটু থেমে সে আবার বলতে লাগল,কিন্তু আমার সন্দেহ হলো ওরা বোধহয় আমাকে দেখে ফেলেছে।তাই আমি বাজারের ব্যাগটা নিয়ে একটা রেষ্টুরেন্টে ঢুকে সিঙ্গারা আর চা দিতে বললাম।কিছুক্ষণ পরে দেখি খুনিরা সবাই এই রেষ্টুরেন্টেই ঢুকছে।আমি ভাবলাম জীবন এখানেই শেষ।তাই দ্রুত মোবাইল ফোনটা বন্ধ করে পিছনের আসনে বসা আপনাদের বন্ধুর পিঠে ঝুলানো একটা লাল ব্যাগের পকেটে মোবাইলটা রেখে দিলাম।
আমার ভাগ্য ভালো ছিল বলতে হবে।আসলে ওরা আমার কারণে রেষ্টুরেন্টে আসেনি।ওরা এসেছিল হোটেলের মালিকের কাছে।ওরা আমাকে সন্দেহ করেনি।আমি হাফ ছেড়ে বাঁচলাম।কিন্তু ততক্ষণে উনি আপনাদের বন্ধু পুলক সাহেব সেখান থেকে বের হয়ে গেছিল।খুনিরা চলে যেতে আমি বের হয়ে দ্রুত তার পিছু নিলাম আর সে রিক্সা নিল আমিও রিক্সা নিয়ে তার পিছু নিলাম কিন্তু শেষ পর্যন্ত চার রাস্তার মোড়ে এসে তাকে হারিয়ে ফেললাম।
আর রোজ ওখান থেকেই তাকে আমি ফলো করে দেখছিলাম যে সে তার লাল ব্যাগটা নিয়ে বের হয় কিনা তাহলে তাকে সবকিছু খুলে বলব।আর তার ঐ লাল ব্যাগে আমার মোবাইল ফোনটা পেলে সেও সবকিছু বিশ্বাস করতো।আর এ কারণেই আমি পুলক সাহেবকে কয়েকদিন ধরে ফলো করছি।
শিক্ষক সাহেবের কথা শুনে চার বন্ধুই চমকে উঠল।
পুলক বলল,ও আচ্ছা আচ্ছা সেই দিন খবরে দেখেছিলাম একজন সাংবাদিককে কারা যেন খুন করেছে।তাহলে তার প্রমাণ এখন আপনার মোবাইলে রয়েছে।
ঠিক বলেছেন ভাই।যদি দয়া করে ঐ মোবাইলটা এখন আমাকে দিতে পারেন তাহলে গোপনে আমি মিডিয়ার কাছে ঐ খুনের ভিডিও পৌঁছে দেব।আর তাহলে একটা খুনের বিচার হবে হয়ত।ঐ ভিডিও দেখলে পুলিশ নিশ্চয় খুনিদের খুঁজে পাবে।প্লিজ আপনারা আমাকে সাহায্য করুন।হুমায়ূন কবির অনুরোধের সুরে সবাইকে বলল।
ততক্ষণে কাসেম শিক্ষক সাহেবকে সম্পূর্ণ মুক্ত করে দিল।
আবির বলল,এভাবে বলছেন কেন এটা আমাদের সবার দায়িত্ব।আপনি অবশ্যই আপনার মোবাইল ফোনটা ফিরে পাবেন আর খুনিদের ধরিয়ে দিতে পারবেন।তবে সবকিছু আপনাকে অনেক গোপনে করতে হবে কিন্তু।
আবিরের কথা শুনে নয়ন বলল,তাহলে আমরা সবাই এখন পুলকের বাসায় যাই।কি বলিস তোরা।দেখি ঐ লাল ব্যাগে ওনার মোবাইলটা পাওয়া যায় কিনা।
পুলক বলল,ঠিক বলেছিস।চল সবাই আর চলুন হুমায়ূন ভাই আমরা সবাই আপনার সঙ্গে রয়েছি।
পুলকের কথা শুনে শিক্ষক হুমায়ূন খুশি হয়ে বলল,চলুন।আশা করি খুনিরা তাদের উপযুক্ত শাস্তি পাবে।
বাসায় এসে পুলক সবাইকে বসিয়ে তার রেড কালারের ব্যাগটা বের করে তার পকেটে হাত দিয়ে দেখল একটা মোবাইল পরে আছে সেখানে।মোবাইলটা বের করে সে হুমায়ূন কবিরের কাছে নিয়ে গেল।তার হাতে দিয়ে বলল,আপনার কথা ঠিক আছে দেখছি এটাই কি আপনার মোবাইল।
মোবাইলটা হাতে নিয়ে সে বলল,হ্যাঁ হ্যাঁ এটাই আমার মোবাইল।আমি আপনাদেরকে ভিডিওটা বের করে দেখাচ্ছি।
নির্মম খুনের ভিডিওটা দেখে সবাই মর্মাহত হলো।কাসেম ভিডিওটা সবার মোবাইলে সেন্ড করে দিল।তারপরে বলল,আমাদের মোবাইলেও রেখে দিলাম ভিডিওটা।যদি কোনো সমস্যা হয় তবে আপনি আমাদের কাছ থেকে আবার এই ভিডিওটা নিতে পারবেন।
সবকিছুর জন্য আপনাদেরকে অনেক ধন্যবাদ।আমি এখন চললাম।এই ভিডিওটা যতো দ্রুত আমি পৌঁছে দিতে পারব তত দ্রুত খুনিরা ধরা পরবে।আপনারা ভালো থাকবেন।
আবির বলল,ঠিকআছে সাবধানে সবকিছু করবেন।আশা করি এবার আমার বন্ধুর ভয়ও দূর হবে।
কাসেম বলল,যদি কোনো প্রয়োজনে আমাদেরকে আপনার দরকার হয় তাহলে বলবেন আমরা আপনার সাহায্যে এগিয়ে আসব।
ওকে।আমি আসলাম সবাই ভালো থাকবেন।এতটুকু বলে শিক্ষক মোঃ হুমায়ূন কবির পুলকের বাসা থেকে বের হয়ে পরল।
সে চলে যেতে নয়ন বলল,তাহলে পুলক আশা করি এবার তোর আর কোনো ভয় থাকবে না বাইরে যেতে।আমরা তাহলে এবার আসি কি বলিস কাসেম।
কাসেম বলল,যেতে পারি তবে……
আবির বলল,তবে আবার কি?
জবাবটা পুলক ই দিল।সে বলল,তবে হচ্ছে এখন দুপুর হয়ে গেছে প্রায় তাই তোমরা সবাই দুপুরের খাবার খেয়ে আড্ডাবাজি করে তবেই ফিরে যাবে।
পুলকের কথা শুনে কাসেম হাসি দিয়ে বলল,হ্যাঁ হ্যাঁ ও ঠিক বলেছে তবে মানে তাই আমরা ভালো-মন্দ খেয়ে তবেই বাসায় যাব।
কাসেমের কথা শুনে সবাই হেসে উঠল।