বৃষ্টি ভেজা মন

বৃষ্টি ভেজা (জুলাই ২০১৯)

শরীফ মুহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান
  • ৯০
সোহানা তার ছেলেকে নিয়ে বেশ বিপদেই পরেছে। একাকি সে কিভাবে তার ছেলেকে নিয়ে এ জীবন সংসারে এগিয়ে যাবে তা সে বুঝতে পারছে না। আসলে জীবনে কখনো একাকি হয়ে গেলে মানুষ তার পথের দিশা হারিয়ে ফেলে।সোহানার এখন তেমন অবস্থাই হয়েছে।সে বুঝি তার পথের দিশা কিছুতেই আর খুঁজে পাচ্ছে না।ছেলের মুখের দিকে তাকালে তার স্বামীর কথা মনে পরে যায়। তার স্বামীকে সে বহুবার বুঝিয়েছে কিন্তু সে সোহানার কথা কিছুতেই বুঝতে চায় নি।আর সোহানার কপাল ভালো না।কতো মানুষই তো রাজনীতি করে কিন্তু কারো কিছু হয় না।শুধু কপাল পুড়লো তার।সাধারণ একটা গন্ডগোল আর তাতেই গুলি লেগে তার স্বামী মারা গেল।সোহানা কিছুতেই তার স্বামীর এমন চলে যাওয়া মেনে নিতে পারেনি কিন্তু মেনে না নিয়ে তার তো কিছু করার নেই।
এক মাস পেরিয়ে গেছে সোহানার স্বামী সাগর মারা গেছে । কিন্তু কেউ তেমন একটা সাহায‌্যের হাত তাদের প্রতি বাড়িয়ে দেয় নি। সোহানা ভাবতে লাগল কিভাবে সে সামনের জীবন অতিবাহিত করবে।তার বাবা কিম্বা শ্বশুড় বাড়ীর অবস্থা তেমন একটা ভালো না তাই তাকে কিছু একটা করতে হবে।কি করবে সে সেটাই ভাবতে লাগল।
ভাবনার অন্তরালে সোহানার মনে পরলো তাকে অনেকেই সান্ত্বনা দিতে এসে পরে যোগাযোগ করার জন‌্য বলে গেছে। সবাই তাকে সাহায‌্য করার কথা বলে গেছে।সুতরাং তাদের কারো একজনার সাহায‌্য তাকে নিতে হবে।সোহানা ভাবলো কার কাছে যাওয়া যায়। মন্ত্রী সাহেব তাকে যেতে বলেছিল সুতরাং তার কাছে গেলেই ভালো হয়।কেননা তার এখন ক্ষমতা রয়েছে তাই সে যে কোনো ধরণের সহযোগিতা করতে পারবে।ভাবনা অনুযায়ি কাজ করলো সোহানা। সে তার শ্বশুড়ের কাছে গিয়ে বিষয়টা খুলে বলল।
সবকিছু শুনে তার শ্বশুড় বলল,কিন্তু মা নেতারা তো অনেক ধরণের কথাই বলে থাকে আসলে কাজে তো তারা তেমন একটা সাহায‌্য সহযোগিতা করে না। বিপদের সময় সবাইকেই আশ্বাস দিয়ে থাকে কিন্তু তেমন সাহায‌্য করতে কাউকেই তো দেখি না।
শ্বশুড়ের কথা শুনে একটু রেগে গেল সোহানা।সে বলল,সে যাই হোক বাবা আমাদের তো রাকিবের কথা ভাবতে হবে। ওর তো একটা ভবিষ‌্যত রয়েছে তাই আমি ভাবছি যদি কোনো টাকা পয়সা কিম্বা আমার নিজের একটা চাকুরি জুটে যায় তাহলে আমার ছেলে রাকিব বেঁচে যায়।
তাহলে তুমি কি করতে চাচ্ছ মা?সোহানার শ্বশুড় তার কাছে জানতে চাইল।
জবাবে সে বলল,বাবা আমি একবার মন্ত্রী সাহেবের কাছে যেতে চাই আপনি যাওয়ার ব‌্যবস্থা করেন।তার কাছে গিয়ে আমি সাগরের কথা তুলে ধরবো দেখি সে আমাদের কোনো সাহায‌্য করে কিনা।
সোহানার শ্বশুড় কিছুটা সংকোচবোধ করতে ছিল। তার পাশে দাঁড়ানো সোহানার শ্বাশুড়ি তখন বলে উঠল,বউমা যখন বলছে যাও কালকে বউমাকে নিয়ে একবার শহরে ঘুরে এসো।আমাদের তো এমনিতেই এখন দুঃখের দিন যদি কোনো গতি হয়।
কোনো কাজ হবে বলে আমার মনে হয় না তারপর ও তোমরা যখন বলছ ঠিক আছে আমরা কালকে মন্ত্রী সাহেবের সঙ্গে দেখা করতে যাব।সোহানার শ্বশুড় তাদের কথা মেনে নিল।
সকাল থেকে অঝোর ধারায় বৃষ্টি হচ্ছে।বৃষ্টিতে কোথাও যাওয়া মুসকিল।কিন্তু কিছু করার নেই।গতকালই গাড়ির টিকিট কেটে রেখেছিল সোহানার শ্বশুড়।তাই তাদেরকে যেতেই হবে আর না হলে টিকিটের টাকাটাই নষ্ট হবে যে।সোহানা যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল রইল।ঝড় বৃষ্টি ও তাদের কাছে বাধা হতে পারে নি।কেননা তারা যে বিপদগ্রস্ত,তাদেরকে ঝড় বৃষ্টি মেনে চললে তো হবে না।
বৃষ্টি উপেক্ষা করে ছাতা নিয়ে সোহানা তার ছেলে আর শ্বশুড়কে নিয়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পরলো।তার শ্বশুড় অবশ‌্য তাকে বলল,বউমা যা বৃষ্টি হচ্ছে তাতে তুমি চাইলে আমরা যাওয়াটা বাদ দিতে পারি।
সোহানা শ্বশুড়ের কথায় রাজি হলো না। সে বলল,বাবা আর বাধা দিয়েন না তো বাড়ি থেকে যেহেতু বের হয়েছি চলেন আমরা মন্ত্রী সাহেবের সঙ্গে দেখা করে ই তবে বাড়ি ফিরব।
ছেলের বউয়ের কথা শুনে আর কোনো কথা বললেন না বারেক খান।সে এখন ছেলের বউয়ের কথা মতো চলছে কারণ মেয়েটা স্বামী হারা হয়েছে কয়দিন হলো মাত্র তার মতের বিরুদ্ধে যাওয়া কিছুতেই ঠিক হবে না।তাই নিশ্চুপ সে তার ছেলে বউয়ের পিছু পিছু হাঁটতে লাগল।
এবার রাকিব তার মাকে জিগ‌্যেস করল,ও মা মাগো আমরা এই বৃষ্টির মাঝে কোথায় যাচ্ছি?
বাবা আমাদের শহরে যেতে হবে।বেশি কথা বলো না আমাদের সাথে চলো কাজ আছে।সোহানা ছেলেকে বেশি কথা না বলার জন‌্য বলল।
একটু চুপ থেকে রাকিব এবার তার দাদার কাছে জানতে চাইল,দাদা আমরা কি কাজে যাচ্ছি?
কাজ আছে দাদা ভাই।চলো তাড়াতাড়ি আর একটু হাঁটলেই আমরা রিক্সা পেয়ে যাব।বারেক খান তার নাতিকে বুঝিয়ে বলল।
দশ মিনিট হাঁটতেই তারা রিক্সা পেয়ে গেল।স্টেশনে আসতে আসতে বৃষ্টি কিছুটা কমে গেল।কিন্তু সোহানার বুকজুড়ে যে বৃষ্টি ঝরছে তা কমবে কিভাবে গাড়িতে উঠতে উঠতে সোহানা সেটাই ভাবলো।স্বামীকে হারিয়ে সারাক্ষণ তার বুকজুড়ে টিপটিপ টুপটাপ বৃষ্টি ঝরছে কারো কাছে নেই তার খোঁজ।
গাড়ি ছুটে চলছে আপন গতিতে।কিছুক্ষণ প্রশ্ন করে ক্লান্ত হয়ে রাকিব ঘুমিয়ে পরলো।সোহানার চোখে ঘুম নেই।স্বামী হারানোর বেদনা তাকে পুড়িয়ে দিচ্ছে সারাক্ষণ।তার চোখে ঘুম আসবে কেমন করে।নানাবিধ চিন্তায় তার সময় কেটে যাচ্ছে।বাইরে প্রকৃতির পানে তাকিয়ে থেকে থেকে অবসাদগ্রস্ত তার দুআঁখি থেকে জল গড়িয়ে পরতে লাগল।মনে মনে অনুভবে তার স্পর্শে জড়িয়ে রয়েছে শুধু সাগরের স্মৃতি।সেই স্মৃতিগুলোই তার বারবার মনে পরছে।সে কিছুতেই ভুলে যেতে পারবে না তার সাগরকে।
শুধু একটা কথাই শোনাতে পারে নি সে তার স্বামীকে। কতবার বলেছে সে যে রাজনীতির এই ঝামেলার পথ ছেড়ে দাও।কিন্তু সাগর শোনে নি তার কথা।আর ভালো হয়নি তার রাজনীতির এই পথ চলা।নিজের দলেই পদ ভাগাভাগি নিয়ে কোন্দলে জীবনটা হারালো সাগর।যদি সে সোহানার কথা শুনতো আজ তাহলে হয়তো সাগর বেঁচে থাকতো।এই দলের জন‌্য সে জীবনটা দিল কিন্তু দল তাকে কি দিল।শুধু সান্ত্বনার বানী তার বাবা মাকে শুনিয়ে যে যার মতো চলে গেল।আর সোহানা হারালো তার প্রানপ্রিয় স্বামীকে।
এদিকে গাড়ি ছুটে চলছিল আপন গতিতে। সহসা গাড়ি ব্রেক করায় রাকিবের ঘুম ভেঙ্গে গেল।তার ঘুম ভাঙ্গতেই সে মা মা করে ডেকে উঠল।
সোহানা তাকে আরো কোলের কাছে টেনে নিয়ে বলল,বাবা এইতো আমি তোমার কি হয়েছে।
রাকিব বলল,না মা কিছুনা,আমরা কি এসে গেছি।
না আমরা বোধহয় এর মধ‌্যে আসি নাই।গাড়ি হয়তো কোথাও থেমেছে।সোহানা তার ছেলেকে বলল।
গাড়ি থামার একটু পরই সুপারভাইজারের কন্ঠ শোনা গেল।সে একটু জোড়ে বলছে, এখানে গাড়ি আধা ঘন্টা থামবে আপনারা নিচে নেমে বাথরুম এবং কারো কিছু খাওয়া লাগলে খেয়ে নিতে পারেন এখানে বিশ্রাম করার আর ফ্রেশ হওয়ার ব‌্যবস্থা রয়েছে।
সোহানা এবার তার শ্বশুড়কে বলল,বাবা তাহলে নিচে চলেন আমরা একটু ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে নেই।
ঠিক আছে চলো বউমা।তবে ছাতা নিয়ে নিও।এখনো বৃষ্টি রয়েছে।রাকিবের গায়ে বৃষ্টি লাগলে কিন্তু ঠান্ডায় জ্বর এসে যেতে পারে। বারেক খান তার বউমাকে সাবধান করে কথাগুলো বলল।
আচ্ছা ঠিক আছে।সোহানা এতটুকু বলে সবাইকে নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে পরলো।
তারা সবাই ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে নিল।বৃষ্টি থাকার কারণে আবার গাড়িতে উঠে বসে রইল সবাই আবার কখন গাড়ি ছাড়বে তার অপেক্ষায় রইল।সোহানার বৃষ্টি ভেজা মন এখন তাই তার আর কোনো কিছুতেই ভালো লাগছে না।শুধু ছেলেটার মুখের দিকে তাকিয়ে তার এই পথচলা।রাকিবের কথা চিন্তা করেই তাকে শক্ত থাকতে হচ্ছে সারাক্ষণ ।আর এই এতটা পথ পাড়ি দিয়ে সাহায‌্যের আশায় চলেছে সে শুধু তার ছেলের কারণে।
গাড়ি আবার আপন গতিতে চলতে লাগল।সোহানা নিজের ভাবনার জগতে ডুবে রইল।নিজের অজান্তেই সে ঘুমিয়ে পরলো।
গাড়ি গন্তব‌্যে পৌঁছাতে সোহানার ঘুম ভাঙ্গল।সবাইকে নিয়ে সে এবার মন্ত্রী সাহেবের অফিসের পানে রওনা হলো।সে জানেনা এ সফরের ফলাফল কি হবে তবুও আশায় ভরসা করে সে ছুটে এসেছে এতদূর।মন্ত্রী সাহেব তাকে আশ্বাস দিয়েছিল।যদি সে কথা রাখে আর কোনো উপকার করে তবেই তাদের এতদূর আসা সফল হবে।
ততক্ষণে বিকেল হয়ে গেছে। আস্তে আস্তে বৃষ্টি পরছে চারিদিকে।মেঘলা আকাশ চারিদিকে কেমন অন্ধকার ছড়িয়ে রয়েছে।প্রকৃতির বুকে যেমন অন্ধকার তেমন সোহানার মন জুড়ে ও অন্ধকারের বসবাস।কোনো আলোর দেখা পাচ্ছে না তার মন আর কিছুতেই।হতাশায় ছুঁয়ে আছে তার মন।নিজের স্বামীকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে গেছে তার সবকিছু।
মন্ত্রী সাহেবের দেখা পাওয়া সহজ কাজ নয়।অফিসে পৌঁছে সোহানা মন্ত্রী সাহেবের দেখা পেল না।সে তার পি .এস এর কাছে তাদের আসার কারণ জানাল।সে মন্ত্রী সাহেবের সাথে ফোনে কথা বলল।মন্ত্রী সাহেব তাদের কে বাসায় পাঠিয়ে দিতে বলল।
পি.এস এর কথা শুনে বারেক খান বলল,আমরা তো মন্ত্রী সাহেবের বাসা চিনি না। এই অফিসের ঠিকানাটা আমাদের কাছে ছিল বাবা তাই অফিস পর্যন্ত আসতে পেরেছি ।এখন আমরা কিভাবে মন্ত্রী সাহেবের বাসায় যাব।
বারেক খানের কথা শুনে পি.এস বলল,দেখুন আপনাদেরকে বাসার ঠিকানাটা আমি দিয়ে দেব এরপরে কিভাবে আপনারা সেখানে যাবেন সেটা তো আমাদের দেখার কথা না।
না সেটা তো ঠিক আছে বাবা কিন্তু আমরা তো আজই আবার ফিরে যাব তাই যদি আপনি আমাদের একটু তাড়াতাড়ি তার বাসায় নিয়ে যেতেন তাহলে খুব উপকার হতো বাবা।বারেক খান আবার পি.এস এর কাছে আকুতি ভরা কন্ঠে কথাগুলো বলল।
পি.এস এর মন গলল না বারেক খানের কথায়।সে সোহানার হাতে মন্ত্রী সাহেবের বাসার ঠিকানাটা দিয়ে বলল,দেখুন আপা আমরা ব‌্যস্ত তাই আপনাদেরকেই ঐ বাসায় নিজেদের মতো যেতে হবে।
সোহানা পি.এস কে বলল,ঠিক আছে ভাই। আমরা এতদূর থেকে যখন আসতে পেরেছি আর এতটুকু পথ নিজেদের মতো করে যেতে পারবো।
সোহানা রাকিব আর তার শ্বশুড়কে নিয়ে মন্ত্রী সাহেবের অফিস থেকে বেড়িয়ে পরলো।তারা এবার একটা সি.এন.জি নিয়ে নিল।মন্ত্রী সাহেবের বাসার ঠিকানাটা তাকে দেখিয়ে তাদেরকে সেইখানে নিয়ে যাওয়ার জন‌্য বলল। সি.এন.জি ড্রাইভার ঠিকানা মতো নিয়ে যাবে বলে বারেক খানকে আশ্বস্ত করে তাদেরকে গাড়িতে উঠাল।
ততক্ষণে সন্ধ‌্যে পেরিয়ে রাত হয়ে গেছে।মন্ত্রী সাহেবের বাসার কাছে এসে সি.এন.জি থেকে নেমে বারেক খান দেখল তার বাসার গেট বন্ধ করে দাঁড়োয়ান সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
সে দাঁড়োযান কে তাদের আসার কারন বলল।
দাঁড়োয়ান তাদেরকে অপেক্ষা করতে বলে ভিতরে চলে গেল।
বারেক খান এবার তার ছেলে বউকে বলল,বউমা আমাদের তো বোধহয় অনেক দেরি হয়ে যাবে কি করবা রাতে কোথায় যাবা।
সোহানা বলল,বাবা আপনি চিন্তা করবেন না।আমরা যদি দেখা করতে পারি তবে রাতেই বাড়িতে চলে যাব।আমি যতদূর জানি রাত বারোটা পর্যন্ত আমাদের এলাকার গাড়ি চলে।আপনি তার সাথে দেখা করার ব‌্যবস্থা করেন।
এদিকে সি.এন.জি ড্রাইভার তাকে ছেড়ে দেবার জন‌্য বলল।কিন্তু সোহানা তাকে ছেড়ে দিতে না করল তার শ্বশুড়কে।সে বলল,বাবা আমরা এই গাড়িতেই আবার স্টেশনে যাব ভাড়া যাই লাগুক তাকে ছেড়ে দিয়েন না।এই রাতে গাড়ি খুঁজে পেতে কষ্ট হবে।
বারেক খান ছেলে বউয়ের কথা মেনে নিল।সে উল্টো সি.এন.জি ড্রাইভারকে বুঝিয়ে বলল।তার কথা মেনে নিল ড্রাইভার।
একটু পর দাঁড়োয়ান এসে তাদেরকে বলল,আপনাদের সাথে এখন স‌্যার দেখা করতে পারবেন না।সে এখন আর একটা কাজে ব‌্যস্ত আছে।কালকে সকালে আপনাদেরকে আসতে বলেছেন।
দেখেন ভাই আমরা অনেক দূর থেকে এসেছি।আপনি একটু মন্ত্রী সাহেবকে বুঝিয়ে বলুন।আমরা একটু কথা বলেই চলে যাব।আসলে আমরা সেই সকালে রওনা হয়েছি আসতে আসতে দেরি হয়ে গেছে। আপনি একটু আপনার স‌্যারকে আবার গিয়ে বলেন।এবার দাঁড়োয়ানকে অনুরোধের সুরে সোহানা বলল।
সোহানার কথা শুনে দাঁড়োয়ান বলল,আসলে আপনারা বুঝতে পারছেন না।স‌্যার একবার যখন বলছে সে আর আজকে দেখা করবে না।সুতরাং এ কথা নিয়ে যদি আমি আবার তার সামনে যাই তবে আমাকে বকা খেতে হবে।
এবার তাকে বারেক খান আবার অনুরোধ করে বলল,বাবা গিয়ে বলেই দেখ না। বলো মহিলা আর বাচচা রয়েছে সাথে যাও বাবা আমাদের প্রতি একটু দয়া করো।
এবার দাঁড়োয়ানের মন গলল।সে আবার ভিতরে চলে গেল।
কিছুক্ষণ পরে সে ফিরে এসে বলল, না আপা কাজ হলো না।মন্ত্রী সাহেব আজকে সময় দিতে পারবে না।আপনাদের কালকে ভোরে আসতে বলেছে।
হতাশ হলো সোহানা।মন্ত্রীদের সাথে দেখা করায় যে এত ঝামেলা তা সে আগে বুঝতে পারেনি।তাহলে সে কিছুতেই মন্ত্রীর কাছে সাহায‌্য চাইতে আসতো না।এতটা ক্লান্তি লাগছিল তার যে সে আর যেন নড়তে পারছিল না।কান্না পাচ্ছিল তার কিন্তু সে কাঁদতে পারছিল না । কারন সঙ্গে তার ছেলে এবং শ্বশুড় রয়েছে। দাঁড়োয়ানের কথা শুনে সে নিশ্চুপ হয়ে বসে রইল সি.এন.জি র ভিতরে।
বউ মা এখন কি করবা? বারেক খান তার ছেলে বউয়ের কাছে জানতে চাইল।
জবাবে সোহানা বলল,বাবা যখন কষ্ট করে এসেছি তখন আমি দেখা না করে যাব না।আপনি রাতে কোথাও থাকার ব‌্যবস্থা করেন।
বারেক খান আর কথা বাড়াল না।সে সি.এন.জি ড্রাইভারকে কোনো ভালো হোটেলে তাদেরকে নিয়ে যাবার জন‌্য বলল।
সারাদিনের জার্নিতে সবাই যারপরনাই ক্লান্ত হয়ে গেল।তারা রাতের খাবার খেয়ে দ্রুত ঘুমিয়ে পরলো।কিন্তু একটু ঘুমিয়ে সোহানার ঘুম ভেঙ্গে গেল।সে রাকিবের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে নানাবিধ ভাবনার মাঝে ডুবে রইল।এভাবে ভোগান্তি সহ‌্য করতে হবে বুঝলে সে আর এ পথে পা বাড়াত না ।তার শ্বশুড় অবশ‌্য তাকে নিষেধ করেছিল কিন্তু সে তখন বুঝতে পারেনি যে এতটা কষ্ট হবে মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে এসে।ছেলেটার কথা চিন্তা করেই সে আর তখন অন‌্য কিছু ভাবেনি। যাই হোক রাত ভোর হলেই তারা দেখা করবে আর আশানুরুপ কিছু পেলে তা নিয়ে আবার তাদের গ্রামে চলে যাবে। এভাবে ভেবে সোহানা দুচোখ বুজে ঘুমানোর চেষ্টা করতে লাগল।
ভোর রাত থেকে অঝোর ধারায় বৃষ্টি হতে লাগল।বৃষ্টির শব্দে সোহানার ঘুম ভেঙ্গে গেল।রাকিব তার পাশে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে রয়েছে।আর পাশের রুমে তার শ্বশুড় ও হয়তো ঘুমে বিভোর হয়ে রয়েছে।কিন্তু ভোর রাত থেকে সোহানা আর ঘুমাতে পারলো না । তার দুচোখে আর ঘুম এলো না।সে এপাশ ওপাশ করে সময় পার করে দিল।
সকাল আটটা বাজতে বারেক খান তার পুত্রবধু সোহানাকে ডাকতে শুরু করলো।সে দরজার ওপাশ থেকে বলল, ওঠো বউমা আমাদেরকে তাড়াতাড়ি মন্ত্রী সাহেবের বাড়িতে যেতে হবে সে যদি আবার বের হয়ে যায় তবে কিন্তু আজকেও তার দেখা পাবা না।
সোহানা ভিতর থেকে বলল,ঠিক আছে বাবা আমরা তৈরি আছি আপনি একটু দাঁড়ান আমরা আসছি।
বৃষ্টি মাথায় করে তারা আবার মন্ত্রীর বাসার পানে রওনা হয়ে গেল।যেভাবে আকাশে মেঘের ঘনঘটা তাতে আজকে আর বৃষ্টি থামবে না বলে সোহানার কাছে মনে হলো।আকাশ কালো হয়ে আছে মেঘে আর তার মন কালো হয়ে আছে হতাশায় বেদনায়।
মন্ত্রী সাহেবের সামনে এসে এবার সোহানার একটু ভয় ভয় লাগছিল। এতবড় মানুষ তার সামনে এসেছে তারা কি জানি কি বলে সে।তখন আবেগের বশে হয়তো তাদেরকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে অনেক কিছু বলেছে কি জানি এখন কি বলে।সোহানা ভাবতে লাগল।
সহসা তাদেরকে উদ্দেশ‌্য করে মন্ত্রী সাহেব বলল, তা বলুন আপনারা কেন এসেছেন,কি বলতে চান?
এবার সোহানা সবকিছু খুলে বলল।সবকিছু শুনে মন্ত্রী সাহেব বলল,ও এই কথা। সারা দেশে সাগরের মতো এ রকম কতো কর্মী মারা যায় আমরা সবার কথা মনে রাখতে পারি না।তা আপনারা যখন এতদূর থেকে এসেছেন আমি পি.এস কে বলে দিচ্ছি আপনাদের পাচ দশ হাজার টাকা দিয়ে দেবে।
মন্ত্রীর কথা শুনে সোহানা মনে মনে বেশ কষ্ট পেল।সে এ রকমটা আশা করেনি তার কাছ থেকে।তাই সে বলে উঠল,না মানে আমরা ভালো কিছু আশা করেছিলাম যদি আমার জন‌্য কোনো কাজের ব‌্যবস্থা করে দিতেন অথবা আমার ছেলেটা বড় হতে পারে সে পর্যন্ত কোনো আর্থিক ব‌্যবস্থা আমাদের করে দিতেন।
সোহানার কথা শুনে মন্ত্রী সাহেব হাসি দিল।হেসে হেসে সে বলল,এরকম কতো জনকে আমাদের দেখতে হয়। আর বড় বড় দান দেবার মতো বাজেট এখন আমার হাতে নেই।আর চাকুরির কথা বলছ,সে জন‌্য তোমাকেও যে অনেক ছাড় দিতে হবে তা কি পারবে।আমার মনে হয় তুমি পারবে না।তোমার ছেলে রয়েছে,আর আমার হাতে তেমন কোনো চাকুরি এখন নেই।এই আমার গাড়ি রেডি তো চলো বের হতে হবে।এইটুকু বলে মন্ত্রী সাহেব বের হয়ে গেল।
সোহানা অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইল।পি.এস তার হাতে দশ হাজার টাকার একটা বান্ডিল দিয়ে বলল,বোন এ নিয়েই চলে যান।আর কিছু চেয়ে নিজেদের সর্বনাশ ডেকে আনবেন না।
সোহানা পি.এস এর কথা শুনে বলল,ভাই আপনি বলে দিন না আমাদের জন‌্য কিছু করতে।আমাদের এই টাকা লাগবে না।এতটুকু বলে সোহানা টাকাটা ফেরত দিয়ে দিল।
সোহানার হাত থেকে টাকাটা ফেরত নিয়ে পি.এস বলল,স‌্যার গাড়িতে বসে আছে হয়তো আমার জন‌্য,আমাকে যেতে হবে।আর চাকুরি পেতে হলে আপনাকে স‌্যারের প্রমোদ ভবনে এক মাস থেকে স‌্যার সহ কিছু ভি.আই.পি কে খেদমত করতে হবে,পারবেন? তাহলে একটা কিছু করে দেবেন মন্ত্রী সাহেব।এতটুকু বলে পি.এস সোহানার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল।
সোহানা পি.এস এর কথা শুনে নিথর হয়ে গেল।সে তার শ্বশুড়ের দিকে তাকিয়ে রাকিবকে কোলে তুলে বলল,বাবা চলেন আমাদেরকে বাড়ি যেতে হবে।
বাইরে অঝোর ধারায় বৃষ্টি হচ্ছে।মন্ত্রী সাহেব গাড়িতে বসে আছেন আর তার পি.এস দৌঁড়ে গাড়িতে উঠল।পাশ দিয়ে সোহানা আর তার শ্বশুড় বৃষ্টিতে ভিজে হেঁটে মন্ত্রী সাহেবের বাড়ির বাইরে চলে এলো।
সোহানা একেবারে নিশ্চুপ হয়ে গেল।ছাতাটা খুলে ছেলের মাথার ওপরে ধরল।তার শ্বশুড় একটা সি.এন.জি ঠিক করে ফেলল।বৃষ্টি ভেজা মন নিয়ে সে আস্তে করে গাড়ির ভেতরে উঠে বসে রইল।গাড়ি স্টার্ট নিয়ে নিয়েছে বাইরে অঝোর ধারায় বৃষ্টি হচ্ছে।আর সোহানার বুকেতে ও নীরবে টিপ টিপ টুপটাপ বৃষ্টি ঝরছে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোঃ মোখলেছুর রহমান শরীফ ভাই, ভাল অাছেন আশা করি। ভীষণ ব্যস্ততায় দেরি করে হলেও পড়তে পেরেছি,বেশ ভাল গল্প। গল্পকবিতায় দিনদিন লেখকও কমে যাচ্ছে পাঠকও কমে যাচ্ছে। জানিনা কেন এমন হচ্ছে।ভাল থাকবেন।

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

বৃষ্টি ভেজা দিনে এক মানবীর বৃষ্টি ভেজা মনের বেদনার্ত আকুতি প্রকাশিত গল্পে।

২২ জানুয়ারী - ২০১৭ গল্প/কবিতা: ১১৬ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪