যতবার শায়লার কাছে যায় রবিন ততবার তার মন দূর্বল হয়ে যায়। সে নিজেকে কিছুতেই বেঁধে রাখতে পারে না। সে জানে এ প্রেমের ফলাফল ভালো হওয়া খুবই কঠিন তবুও সে নিজেকে থামাতে পারে না,কি এক আকর্ষণে বারবার শায়লা কে দেখতে ইচ্ছে করে তার। বাবা মার চোখকে ফাঁকি দিয়ে অনেক কষ্ট করে এই শায়লার কারণে একটি মোবাইল ফোন কিনেছে সে যাতে শায়লার সাথে একটু কথা বলা যায়।যদিও মোবাইল ফোন কেনার পরই বাবা মায়ের কাছে ধরা পরেছে সে তবুও কিছু করার ছিল না তার।
সব ধরনের বাঁধা নিষেধকে উপেক্ষা করে শায়লার সাথে সম্পর্ক রক্ষা করে যাচ্ছে রবিন। কারণ তার চেয়ে বেশি ভালোবাসে তাকে শায়লা। অতএব জীবনের দামে হলে ও এ ভালোবাসা রক্ষা করা চাই তার।যদিও তাদের অবস্থানগত এতটুকু মিল নেই তবুও অবুঝ মন কিছুতেই বুঝতে চায় না।
এইসব ভাবনা বুকের মাঝে নিয়ে নদীর পাড়ে বসে শায়লাকে নিয়ে নানাবিধ বিষয়ে আলোচনা করে যাচ্ছিল রবিন তার বন্ধু পাভেলের কাছে। তাদের ভালোবাসা আর পাওয়া না পাওয়ার সংশয় প্রকাশ করে পাভেল বলল, না দোস্ত তোরা চরম ঝুঁকির মাঝে রয়েছিস। শায়লার বাবা নিষ্ঠুর লোক তার ওপরে আবার এলাকার চেয়ারম্যান। তোর যে কি অবস্থা হবে আল্লাহই জানেন।
আমি তাহলে কি করবো তুই ই বলে দে দোস্ত। পাভেলের কথার জবাবে রবিন তার কাছে সমাধান জানতে চাইল।
কি আর করবি আমার মনে হয় তোদের দুইজনকেই এই ভালোবাসার রোগ থেকে সরে আসতে হবে। পাভেল শায়লার সাথে ভালোবাসা ছেড়ে দেওয়ার কথা বলল।
তা কি করে সম্ভব? রবিন জানতে চাইল।
অসম্ভব কেন তুই ই বল । কালকে থেকে মোবাইল বন্ধ করে রাখ আর ওর কলেজের সামনে গিয়ে ওর সাথে দেখা করাও বন্ধ করে দে। দেখবি কয়েকদিন পর ই তোদের ভালোবাসা উড়ে যাবে। পাভেল বলল।
এতো সোজা। রবিন হাসি দিয়ে বলল।
নয়তো কি। কতো দেখলাম, একজন আর এক জন ছাড়া নাকি বাঁচবে না এ রকম কতো কথা বলে তারপরে বিয়ে হয়ে যায় আর একজনের সাথে তখন দুই দিনের মাঝে ই সব শেষ। সুতরাং দোস্ত নিজেকে বাঁচাতে চাইলে আগে থেকেই শায়লার সাথে কাটাকাটি করে ফেল। পাভেল বন্ধুকে উপদেশ দিয়ে বলল।
সে তো বুঝলাম পাকা পাকা কথা বলছিস কিন্তু তুই তো জানিস কার কারণে আমাদের ভালোবাসা হয়েছে।আমি কাটাকাটি করতে চাইলেও শায়লা কি তা শুনবে সে তো আমাকে খুন করে ফেলবে এসব কথা বললে তোর কি তা জানা নাই। রবিন বলে উঠল।
এবার একটু চুপ থেকে পাভেল বলল, কিন্তু দোস্ত শায়লার বাবা তো সেটা বুঝতে চাইবে না। তুই একটা অটো রিক্সা চালক আর শায়লার অবস্থান কোথায় ভেবে দেখ।
আচ্ছা আমি অটো রিক্সা চালাই এটা ঠিক আছে।কিন্তু দোস্ত আমি তো আবার ক্লাসেও সবার থেকে ভালো করেছি। বাবা অটো রিক্সা চালায় আর তা চালিয়ে ই আমাদের মানুষ করেছেন সুতরাং আমি তো অটো রিক্মা চালানোকে ঘৃণা করতে পারব না। আমি অবসরে এ কাজ করে যাব। তাতে তোরা আমাকে যা বলিস। যেদিন লেখাপড়া শেষ করে কোনো চাকুরি করব সেদিন না হয় বাবার চারটা অটোই আমরা অপরকে ভাড়ায় চালাতে দেব বুঝেছিস। রবিন বন্ধুকে অনেক কথা বলে ফেলল।
পাভেল বলল,সবই বুঝলাম।আগে তো ফাইনাল পরীক্ষাটা শেষ করে কোনো চাকুরী খুঁজে নে তারপরে এমন কথা বলিস।আর আমি বুঝলে কাজ হবে না দোস্ত এ সব কিছুই বুঝতে হবে তো তোমার প্রেমিকার বাবার।
তা তো ঠিক আছে আমিও শায়লা কে সে কথা বলেছি।কিন্তু ও বলে কেউ রাজি না হলে আমাদের কিছু যায় আসে না। আমরা তাহলে পালিয়ে বিয়ে করবো।ও কিছুই বুঝতে চায় না শুধু আমাকে পেতে চায়।আমি কি করব তুই বল।
পাভেল বলল,কি আর বলব তোর শায়লা তো নাছোড়বান্দা সেটা তো আমি জানি।দেখ শেষ পর্যন্ত কি হয়।তবে আমার মনে হয় তুই ফিরে আসলে ভালো করবি দোস্ত।
সেটা সম্ভব না দোস্ত পাভেল। চল আজ উঠি ।এইটুকু বলে রবিন পাভেলকে নিয়ে নদীর পাড় থেকে উঠে পড়ল।
যেদিন থেকে রবিনের সাথে শায়লার ভালোবাসার সম্পর্ক হয়েছে সেদিন থেকে রবিনের চিন্তা বেড়ে গেছে । অনেক চেষ্টা করে ও সে এ অসম ভালোবাসা ছেড়ে দিতে পারেনি।এক বছর পর্যন্ত তাদের এ ভালোবাসার সম্পর্ক টিকে আছে। যদিও প্রতিবার দেখা করার সময় রবিন শায়লাকে বলেছে যে যদি সে চায় তাহলে আর সামনে এগিয়ে যাবে না রবিন।কিন্তু প্রতিবারই শায়লা তাকে ধমক দিয়ে বলেছে সে একটা ভীতু মানুষ আর সে শায়লাকে ভালোবাসে না বরং শায়লাই তাকে ভালোবাসে। তাই রবিন শায়লার হাতেই তার ভালোবাসার নাটাই ছেড়ে দিয়েছে।
প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাবার আগে রবিন শায়লাকে মোবাইলে কল করবেই। মোবাইল কেনার পর তাদের সরাসরি কথা বলার চেয়ে মোবাইলে ই কথা বলা বেশি হয়। প্রতিদিনের মতো আজও রবিন শায়লা কে কল দিয়ে তার বন্ধু পাভেল কি কি বলেছে তাদের ভালোবাসা সম্পর্কে সেটা খুলে বলল।
সবকিছু শুনে শায়লা বলল,ওই মটকুটা, দাঁড়াও ওকে মজা বোঝাব। ওতো এক বছর পর্যন্ত আমাদের ক্লাসের সোনিয়ার পিছনে ঘুর ঘুর করে যাচ্ছে কিন্তু সোনিয়া ওকে পাত্তা দিচ্ছে না। তাই এসেছে আমাদের ভালোবাসা শেষ করতে। ওকে যদি আমি সামনে পাই তো ঠিক কষে একটা চড় লাগিয়ে দেব। আর যেন কোনো দিন ও আমাদের সম্পর্ক শেষ করতে না আসে।
শায়লার উত্তেজনা থামিয়ে দিয়ে রবিন বলল,আচ্ছা হয়েছে হয়েছে আর রাগ করতে হবে না আর ওকে তোমার চড়ও দিতে হবে না। কারণ ও আমার খুব ভালো বন্ধু আর ও যা বলেছে তাতো ঠিকই বলেছে তাই না।
শায়লা বলল,কি ঠিক বলেছে?
ওই যে তোমার বাবা আমাদের সম্পর্ক কোনোদিনও মেনে নেবে না সেটাতো ঠিকই বলেছে তাই না?রবিন বলল।
রবিনের কথা শুনে শায়লা বলল,কোনো ঠিক বলেনি ওই মটকু ছেলেটা। ও হলো ভিলেন আমাদের ভালোবাসা নষ্ট করতে চায়। বাবা মেনে না নিলেও আমি তো তোমাকে ভালোবাসি তোমাকে মেনে নিয়েছি। তোমাকে কতো ভালোবাসি তুমি জানো না জান।
শায়লার কথা শুনে রবিন বলল,এইভাবে আবেগের কথা বলে আমাকে তুমি বারবার দূর্বল করে দাও আর আমি তোমার প্রেমে মশগুল হয়ে যাই।
এই তো ভালো ছেলে আমার জানটা। সুতরাং তুমি আর কিছু না ভেবে আমাকে সবসময় শুধু ভালোবেসে যাবে বুঝেছ।আর আমার বাবাকে আমি বুঝিয়ে বলব তুমি কোনো চিন্তা করো না। রবিনকে বুঝিয়ে বলল শায়লা।
এবার রবিন বলল,বুঝলাম তোমার কথা কিন্তু আমার সবসময় বুকের মাঝে সংশয় জমে থাকে। আসলে আমি বুঝতে পারছি না কি হবে সামনে।
রবিনের কথা শেষ না হতে শায়লা বলল,এখন রাখি আমার কাছে বাবা আসছে বোধহয়।এতটুকু বলে শায়লা সংযোগ বিচ্ছিন্ন্ করে দিল।
রবিন আর কল করল না।সে নিজের মাঝে নানাবিধ ভাবনার মাঝে ডুবে রইল।পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতিতে সবকিছু তার পক্ষে থাকবে বলে তার মনে হচ্ছে না।কেননা সামাজিকভাবে শায়লার সাথে তাদের মিলবে না।কেন যে সে না বুঝে ভালোবাসায় জড়াল, আজ এই পর্যায় এসে তার কাছে মনে হচ্ছে সে ভুলই করেছে।নিজেকে সংযত করে রাখলেই সে হয়ত ভালো করত।কেন যে শায়লার আহবানে সে সাড়া দিতে গেল।আজ এত চিন্তায় তাকে থাকতে হতো না যদি সে ভালোবাসায় না জড়াত।চিন্তার অন্তরালে রবিন ঘুমিয়ে পড়ল।
সকালবেলা বাসা থেকে রবিন বের হওয়ার সময় তার বাবা তাকে বলল,বাবা রবিন একটা কথা শুনে যাও।
রবিন বলল,কি বলবে বাবা বল। আমার একটু তাড়া রয়েছে।
কেন কি হয়েছে ? রবিনের বাবা জানতে চাইল।
না তেমন কিছু না আজকে আমার একটু কাজ আছে। রবিন বলল।
কি কাজ?রবিনের বাবা জানতে চাইল।
না তুমি কি বলবে সেটা বল বাবা।আমার কাজ অতটা গুরুত্বপূর্ণ না। রবিন বাবাকে তার কথা বলতে বলল।
এর মাঝে রবিনের মা এসে তাদের কথার মাঝে যোগ দিল। সে বলল,বাবা রবিন তোর বাবা বলতে চাচ্ছে তুই আজকাল লেখাপড়ার দিকে নাকি বেশি নজর দিচ্ছিস না।রাতে শুধু মোবাইল নিয়েই নাকি থাকিস। আর কিছুদিন হলো অটোরিক্সা নিয়েও নাকি বের হচ্ছিস না।
মায়ের কথার জবাবে রবিন বলল,না মা তেমন কিছু না।আমি একটু চিন্তার মাঝে আছি আর পরীক্ষার তো বেশ কিছুদিন দেরি আছে তাই লেখাপড়াটা একটু আস্তে আস্তে করে যাচ্ছি।তোমরা চিন্তা করো না পরীক্ষার আগে সবকিছু ঠিক করে ফেলব।
এতো চিন্তা কিসের তোমার?রবিনের বাবা জানতে চাইল।
না সেটা তোমাদের জানতে হবে না।আমার ভাবনা আমাকেই ভাবতে দাও।আচ্ছা আমি বের হলাম। দুপুরে ফিরতে একটু দেরি হবে আমার।রবিন এতটুকু বলে বাসা থেকে বের হয়ে পড়ল। তার বাবা মা আর তাকে বাঁধা দিল না।
বাসা থেকে বের হয়ে রবিন তার বন্ধু পাভেলকে মোবাইলে কল করল।পাভেল আধা ঘন্টার মধ্যে রবিনের সাথে এসে দেখা করল।রবিনকে পাভেল জিগ্যেস করল,কি হলো সকাল বেলাই তলব করলি যে ? কিছু হয়েছে কি?
না একটু শায়লার কলেজে যাব।তুইও সাথে থাকবি। কথাবার্তার মাঝে কেউ যদি এসে যায় সেটাই পাহারা দিবি। রবিন পাভেল কে বলল।
আহারে আমার দোস্ত তোকে নিয়ে আর পারি না।ওনারা ভালোবাসা করবেন আর আমি তার পাহারা দেব।কেন নিজের সাহসকে একটু বাড়াতে পারো না।এভাবে আর কতদিন ।এক বছর তো হয়ে গেল আর কতো দিন এভাবে চালাবি।পাভেল রবিনকে বলল।
রবিন পাভেলকে বলল,তুই যাবি কিনা বল?
আচ্ছা চল। পাভেল আর কথা না বাড়িয়ে রবিনের সাথে হাঁটতে লাগল।
কলেজের কাছাকাছি এসে রবিন মোবাইলে শায়লাকে জানিয়ে দিল যে সে এসেছে তার সঙ্গে দেখা করার জন্য।শায়লা তাকে কলেজের মাঠের এক কোণে যাওয়ার জন্য বলল।রবিন পাভেলকে সাথে নিয়ে সেখানে গেল।একটু পরই শায়লাও সেখানে এল।তারা দুইজনে কথা শুরু করতেই পাভেল রবিনকে বলল,রবিন তোরা কথা বল আমি আশেপাশে আছি। এ কথা বলে পাভেল ওদের কাছ থেকে সরে গেল।
পাভেল চলে যেতেই শায়লা রবিনকে বলল, ওই মটকুটাকে সাথে নিয়ে চলাফেরা করো কেন।ওকে দেখলেই আমার মেজাজাটা গরম হয়ে যায়।
রবিন বলল,দেখ শায়লা ও আমার বন্ধু মানুষ। আর ও আমাদের ভালোবাসার প্রধান পাহারাদার। তাই ওকে সাথে নিয়েই আমি চলাফেরা করি। আর আমাদের কথা বলার সময় ওতো সাথে থাকেনা দেখলে তো।
যা হোক তবুও ওকে আমার পছন্দ হয় না।বাদ দাও ওর কথা। এখন বলো সহসা অনেকদিন পরে আবার কলেজে এলে যে ? কিছু বলবে নাকি? শায়লা জানতে চাইল।
না তোমাকে যে ভালোবাসি তাতো সামনাসামনি বেশি বলা হয় না তাই সে ভালোবাসার কথাটাই আবার বলার জন্য এসেছি।যদি তুমি আবার ভুলে যাও।রবিন বলল।
দেখ মজার কথা বলো না।তুমি তো ভয়ের কারণে একা আমার সাথে দেখা করতেই আসো না আর কি যে ভালোবাসো তা তো আমি জানি। ভীতুর ডিম একটা। আমি না চাইলে তোমার ভালোবাসা আর খুঁজেই পাওয়া যেত না।কি তাই না? শায়লা রবিনের দূর্বল ভালোবাসার কথা উল্লেখ করে কথা বলল।
এবার রবিন কিছুটা লজ্জা পেয়ে বলল, না ঠিক তেমন না। আসলে আমি পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির কথা চিন্তা করেই এই রকম ভীতু হয়ে উঠেছি। তাই বলে তোমাকে আমি কম ভালোবাসি না। বুঝেছ আমার ভালোবাসায় একটুও কমতি নাই।
শায়লা কিছু বলতে যাবে এমন সময় পাভেল সহসা এসে রবিনকে বলল, রবিন তাড়াতাড়ি চল শায়লার চাচা কলেজের মাঝে প্রবেশ করেছে। আমি জানি না কেন সে এলো।আমি একটু আনমনা ছিলাম।তার দিকে খেয়াল করিনি।চল আমরা চলে যাই ,তোদের একসাথে দেখলে শায়লার চাচা একটা গন্ডগোল ঠিকই লাগিয়ে দেবে সে কিন্তু সুবিধের লোক নয়।চল চল রবিন আমরা কেটে পরি।
পাভেলের কথা শুনে শায়লা বলল,আচ্ছা ঠিক আছে তোমরা চলে যাও।পাভেল ঠিকই বলেছে। চাচা আমাদের একসাথে দেখলে কোনো ঝামেলা করতে পারে।
শায়লার কথা শুনে রবিন বলল,ওকে আমরা চললাম পরে আবার কথা হবে।এতটুকু বলে রবিন আর পাভেল দ্রুত কলেজের মাঠ ছেড়ে চলে আসল।
রাতে রবিনের বাবা বাসায় ফিরে তার বউকে জোড়সে ডাক দিয়ে বলল,কই গেলা সুফিয়া তাড়াতাড়ি এদিকে আসো।
রবিনের মা সুফিয়া বেগম দ্রুত এসে তার স্বামীকে বলল,কি হয়েছে এতো জোড়ে চিৎকার করে ডাকছ কেন।
আর কি হবে তোমার ছেলের কথা বলার জন্য আমার কপালের কথা বলার জন্য চিৎকার করছি।সাধারণ জীবনে আমার কোনো অশান্তি ছিল না।কিন্তু আমার জীবনে আর বুঝি শান্তি রইল না।রবিনের বাবা বলল।
কেন কি হয়েছে?সুফিয়া বেগম জানতে চাইল।
তোমার ছেলের কোনো দিকে মন নেই কেন তার কারণ আমি জানতে পেরেছি।সে প্রেমে পড়েছে আর তাতে আমার কোনো দুঃখ ছিল না।যদি ও আর কারো মেয়ের প্রেমে পড়তো।শেষ পর্যন্ত ও যা করেছে তাতে আমরা এখানে আর থাকতে পারবো কিনা জানি না। রবিনের বাবা বলল।
আমাকে সবকিছু খুলে বল। রবিনের মা সবকিছু জানতে চাইল।
এবার রবিনের বাবা বলল,আর খুলে কি বলব। শোনো ঐ পাষাণ চেয়ারম্যানের মেয়ে শায়লার সাথে ও সম্পর্ক করেছে।আজ সকালে শায়লার সাথে ওকে কলেজে দেখেছে শায়লার চাচা।আর তারপরই চেয়ারম্যানকে বিষয়টা জানিয়েছে সে।আর তারপরে এইতো সন্ধ্যের সময় চেয়ারম্যান আমাকে ডেকে নিয়ে শাসিয়েছে খুব।সে বলেছে রবিন যেন আর তার মেয়ের সাথে কোনো ভাবেই দেখা না করে আর যদি তার কথা না শুনি তবে আমাদেরকে এলাকা ছাড়া করবে সে। এখন কি করবে বলো তুমি।
রবিনের মা বলল,তা আমাদের রবিন না হয় যাবে না।তার মেয়েকে তো সে ফিরিয়ে রাখবে।সে কথা তুমি বলতে পারলে না।
বলেছি তো । কিন্তু তাতে আরো রেগে গেল সে।বলল, তার মেয়ে ছোট সে ভালো মন্দ এখনও বোঝে না।তাই সে তার মেয়েকে কিছুই বলবে না।আমাদের রবিনকেই ঐ পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। রবিনের বাবা বলল।
গায়ের জোড়ে ক্ষমতার জোড়ে সে যা ইচ্ছে তাই করবে।রবিনের মা বলে উঠল।
তার কথা শুনে রবিনের বাবা বলল,ওরে আস্তে কথা বল।তাদের ক্ষমতা রয়েছে সবকিছু করার।আমাকে এ পর্যন্তও বলেছে আমরা রবিনকে যদি বাঁচিয়ে রাখতে চাই তাহলে যেন রবিনকে আর তার মেয়ের সঙ্গে কখনো না দেখা যায়।এখন সেইভাবে তুমি রবিনকে নিষেধ করে দাও।আমাদের জন্য সেটাই ভালো হবে। তার সাথে লাগতে গেলে আমরা পেরে উঠব না।
আচ্ছা তুমি যেভাবে বলবে সেভাবেই আমি করবো।রবিনকে আমি কঠোরভাবে নিষেধ করে দেব।রবিনের বাবার কথা মেনে নিল তার মা।
বাবা মায়ের সব কথাই পাশের রুমে বসে রবিন শুনল।সে মনে মনে অনেক কষ্ট পেল।কারণ তার কারণে তার বাবাকে আজ অপমানিত হতে হয়েছে।চুপচাপ সে একাকী বসে বসে ভাবতে লাগল।কিভাবে যে সে শায়লাকে নিষেধ করবে এটাই ভাবতে লাগল রবিন। সহসা তার ভাবনায় ছেদ টানল তার মা এসে।রবিন কি করছিস বাবা বলে সে রুমের ভিতরে ঢুকে পরল।
কিছু না মা একটু চিন্তা করছিলাম।রবিন বলল।
কি চিন্তা করছিস বাবা?রবিনের মা জানতে চাইল।
এবার রবিন বলল,তেমন কিছু না মা। আমি তোমাদের সব কথা শুনেছি আর তাই ভাবছিলাম কিভাবে শায়লার সঙ্গে সম্পর্ক শেষ করা যায়।কারণ আমি চাই না আমার কারণে বাবা কারো কাছে কখনো কোনো ভাবে ছোট হয় বা অপমানিত হয়।
তুই ঠিক বলেছিস বাবা।আমিও তোকে এটাই বলতে এসেছিলাম।রবিনের মা বলল।
তুমি চিন্তা করো না মা আমি চাই না আমার কারনে তোমাদের কোনো ক্ষতি হোক।আমি কালকেই শায়লার সঙ্গে দেখা করে বলে দেব যে এ ভালোবাসা রক্ষা করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।আমি তো আমার বাবার অপমান দেখতে চাই না।রবিন তার মাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল।
ঠিক আছে বাবা রবিন তুই মনে কষ্ট নিস না আমি ওর চেয়েও ভালো মেয়ের সঙ্গে তোর বিয়ে দেব। তুই শায়লাকে সবকিছু বুঝিয়ে বলে দে। আর ওর সঙ্গে কালকের পর থেকে কখনো দেখা করিস না।রবিনের মা রবিনকে বুঝিয়ে বলল।
ঠিক আছে মা তুমি চিন্ত করো না।আমি তোমাদের কথা মতো চলব।যাও এখন আমাদের খেতে দাও খুব ক্ষু্ধা পেয়েছে।রবিন তার মাকে ক্ষুধা লাগার কথা বলল।
রবিনের মা যেতে যেতে বলল,তুই খেতে আয় বাবা। আমি এখনই খাবার দিচ্ছি।
রবিনের মা চলে যেতে রবিন মোবাইলে শায়লাকে কল করে কালকে নদীর পাড়ে দেখা করার জন্য বলল। শায়লা রবিনের কথায় রাজি হয়ে গেল।যেহেতু তাদের ভালোবাসা অটুট তাই শায়লা কোনো কথা না বাড়িয়ে কোনো কিছু না জানতে চেয়ে এক কথায় রাজি হয়ে গেল রবিনের সঙ্গে দেখা করতে। রবিনও আর বেশি কথা বলল না কারণ তার মনটা বেশ খারাপ।
ঘুমাতে গিয়ে রবিনের মনটা আরো খারাপ হয়ে গেল কেননা তাদের এতোদিনের ভালোবাসা সে কালকেই শেষ করে দিতে চাচ্ছে।থেকে থেকে রবিনের কান্না পাচ্ছিল ,কিন্তু সে কাঁদতে পারছিল না।কারণ পাছে কেউ তার কান্নার শব্দ শুনে ফেলে। কষ্ট বুকে নিয়ে নানাবিধ ভাবনা নিয়ে মনের অজান্তেই রবিন ঘুমিয়ে পরল।
পরদিন বিকেলে রবিন নদীর পাড়ে এসে শায়লার জন্য অপেক্ষা করতে লাগল। যথারীতি তার সঙ্গে পাভেল ও অপেক্ষা করতে লাগল।রবিনের বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো না। পনের মিনিটের মধ্যেই শায়লা এসে সেখানে উপস্থিত হলো ।শায়লাকে দেখে রবিন পাভেলকে ইঙ্গিতে একটু দূরে যেতে বলল।শায়লা আসতেই পাভেল ও দূরে সরে গেল।
রবিনের মনটা খুবই খারাপ।তাই সে আর বেশি কথা বাড়াল না সরাসরি শায়লাকে বলল,শোনো শায়লা আমাদের ভালোবাসার শেষ দিন আজকেই। খুব ভালো হয় আজকের পর থেকে তুমি আর কখনো আমার সাথে দেখা করার চেষ্টা করবে না।আমি আর বেশি কিছু বলতে চাই না।ঠিক আছে শায়লা তুমি তোমার মতো ভালো থেক।
কেন কি হয়েছে তুমি এমন করে কথা বলছ কেন?শায়লা রবিনের কাছে জানতে চাইল।
না এর চেয়ে আর ভালো করে আমি কিছু বলতে চাই না।তুমি কালকের ঘটনা কিছু জানো।তোমার বাবা আমার বাবাকে অপমান করেছে ,সুতরাং আমি চাই আমাদের সম্পর্ক আর সামনের দিকে যেন এগিয়ে না যায়।রবিন শায়লার কথার জবাবে বলল।
ও এই কথা। আচ্ছা তুমি কালকের কারণে রাগ করে আছো।আমি জানি তো কালকের সব ঘটনা।ওসব তুমি ভুলে যাও।আমি ঐ কারনে কালকে বাবা মার সাথে রাগ করেছি।মা বলেছে সে সবকিছু ঠিক করে দেবে।সে বাবাকে ম্যানেজ করবে।অতএব রাগ করো না তুমি ।আমি তোমাকে ভালোবাসা কিছুতেই ছাড়তে পারবো না।শায়লা এবার রবিনকে বুঝিয়ে বলল।
শায়লার কথা শুনে রবিন বলল, কোনো কথায় আর কাজ হবে না তোমার। আমি চাই না আমার বাবাকে কেউ অপমান করে। অতএব তুমি এ ব্যাপারে আর কোনো কথা বাড়াইও না।আমি চাই না তোমাকে আর ভালোবাসতে।
এভাবে তুমি বলতে পারো না।আমার ভালোবাসা এতো সহজে শেষ হয়ে যেতে পারে না।আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি রবিন। শায়লা তার ভালোবাসার আকুতি ফের রবিনকে জানাল।
রবিন আর কিছু বলতে পারল না।শায়লার বাবা সহসা সেখানে এসে হাজির হলো।সে এসে শায়লাকে বলল,মা তুমি বাড়ি যাও।আমি রবিনের সঙ্গে একটু কথা বলে আসছি।
শায়লা বাবার সাথে কোনো কথা বলল না।সে চায়নি এখানে বসে বাবার সাথে তার কোনো ঝগড়া হোক। তাই সে রবিনকে বলল,রবিন আমি আসি তুমি বাবার সাথে কথা বলো।
শায়লা চলে যেতে তার বাবা রবিনকে বলল,রবিন আমি তোমার বাবাকে বলে দিয়েছিলাম তুমি যেন আর শায়লার সাথে দেখা না করো।কিন্তু আমি তো দেখছি তোমরা বেশ বেহায়া আমার মেয়েকে ফুসলিয়ে সবাই মিলে আমার সম্পদ গ্রাস করে খেতে চাচ্ছ।
শায়লার বাবার কথা শুনে রবিন চমকিত হয়ে বলল, চাচা আপনি ভুল করছেন আমি আপনার মেয়েকে ই ভালোবেসেছি আর আপনার সম্পদকে নয়।আর এখন দেখা করতে এসেছি আমার কথা শায়লাকে ভুলে যেতে বলার জন্য ।কিন্তু আপনার মেয়ে আমার কথা শুনতে চায় না।এবার আপনি আপনার মেয়েকে বুঝিয়ে বলবেন । আমি চললাম।এই কথা বলে রবিন পাভেলকে সাথে নিয়ে হাঁটা দিল।
তাদের চলে আসা দেখে শায়লার বাবা বলল, যাচ্ছ যাও তবে আমি বলে রাখলাম তোমাদের পরিণতি ভালো হবে না।
শায়লার বাবার কথার তেমন একটা গুরুত্ব দিল না রবিন আর পাভেল।তারা দুইজনে দ্রুত নদীর পাড় ছেড়ে রাস্তার ওপরে উঠে নিজেদের পথে পা বাড়াল।তেমন কোনো সমাধান হলো না শায়লার সাথে রবিনের।আসলে দুইজনের কেউই কাউকে মন থেকে ছাড়তে পারবে না। তাই রবিনের ভালোবাসা ভুলে যাওয়ার এ চেষ্টা শুধু মন ভোলানো একটা খেলার সমান।
বাড়িতে ফিরে রবিন অস্থির হয়ে উঠল।কেননা সে তো মন থেকে শায়লাকে কখনো ছাড়তে চায় না।তাই আজ শায়লাকে সে কথা বলে মনটা তার অদ্ভূত রকমের খারাপ হয়ে রয়েছে।রাতে আর বেশি ঘুমাতে পারল না রবিন।প্রতিদিনের মতো সে আর আজকে শায়লাকে মোবাইলে কল ও করল না।কিন্তু শায়লা থেমে থাকবে কেন, সে রবিনকে বহুবার কল করলো কিন্তু আশাহত রবিন ছিল হতাশায় ভরপুর মন নিয়ে জেরবার এক প্রেমিক তাই সে আর কল রিসিভ করল না।
পরদিন ভোর বেলা রবিন অটোরিক্সা নিয়ে বের হয়ে পড়ল।সে তার মনকে আর কোনো দিকে ব্যস্ত রাখার জন্য এমন সিদ্ধান্ত নিল।অটোরিক্সা নিয়ে বিভিন্ন মানুষকে সে এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় পৌঁছে দেবে আর তার মাঝে সে শায়লাকে ভুলে থাকবে এমনটাই ভেবে নিল রবিন। তাই অটোরিক্সা নিয়ে সে বাসা থেকে বের হয়ে পড়ল।
সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অটো চালিয়ে রবিন খাবার জন্য বাড়ির পানে রওনা হলো।সকাল থেকে শায়লা তাকে মোবাইলে কল করে যাচ্ছে কিন্তু মন কষ্টের কারণে সে আর শায়লার কল রিসিভ করল না । বাড়ির দিকে রওনা হয়ে নদীর ব্রিজের ওপর উঠতেই রবিন দেখল তার গাড়ির পিছনে একটা ট্রাক আসছে। রবিন কিছু বুঝে ওঠার আগেই ট্রাকটি তার অটোকে জোড়সে ধাক্কা দিল। রবিন আর অটো টাকে কন্ট্রোল করতে পারল না।অটোসহ সে নদীর পাড় দিয়ে নদীতে পড়ে গেল।
বিকেলে সর্বত্র খবর ছড়িয়ে পরল অটো এক্সিডেন্টে রবিন মৃত্যুবরণ করেছে।ধীরে ধীরে খবরটা শায়লার কানে গিয়েও পৌঁছল।ততক্ষণে রবিনের মৃতদেহ তার বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে। শায়লা খবরটা শুনে দৌঁড়ে রবিনের বাসায় এসে হাজির হলো।রবিনের মৃতদেহ দেখে শায়লা কান্নায় ভেঙ্গে পরল।শায়লার পিছনে তার বাবাও এসে হাজির হলো।সে মেয়েকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল,চল মা বাড়ি ফিরে চল । আমি আগেই রবিনের বাবাকে নিষেধ করেছিলাম যে তোকে যেন ভুলে যায় রবিন। আর গতকালকেও রবিনকে নিষেধ করেছিলাম,কিন্তু ওর কথা শুনে মনে হয়েছিল যে ও তোকে ভুলতে পারবে না। তাই হতাশায় হয়তো নেশা করে গাড়ি চালাচ্ছিল আর ব্রেক ফেল করে নদীতে পড়ে গিয়েছিল।আহরে বেচারা আর বাঁচতে পারলো না। যাক চল মা যে চলে গেছে তার জন্য কেঁদে আর কি হবে।আমার কথা শুনলে আর ওর জীবনে হয়তো এমন ঘটনা ঘটতো না।
বাবার কথা শুনে বিশেষ করে শেষের কথাটুকু শুনে শায়লা চমকে উঠল।সে বুঝে গেল রবিনের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়নি। তার বাবাই তাহলে রবিনকে খুন করেছে।
কান্না থেমে গেল শায়লার। বাবা তার প্রতি এত নিষ্ঠুর হতে পারল এ কথা ভেবে শায়লা কিছুক্ষণ নিশ্চুপ হয়ে রইল।তারপরে বাবার চোখে তাকিয়ে সে বলল,বাবা তোমাকে আমি কোনো দিন ক্ষমা করবো না।
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
রোমান্টিক বিরহের গল্প। সামঞ্জস্যতা রয়েছে বৈকি।
২২ জানুয়ারী - ২০১৭
গল্প/কবিতা:
১১৬ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
বিজ্ঞপ্তি
“জানুয়ারী ২০২৫” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ জানুয়ারী, ২০২৫ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।
প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী