পরিবারের সবার কাছে সবদর আলী একজন কৃপণ মানুষ হিসেবে পরিচিত। আশে পাশে ও সব লোক তাকে কৃপণ হিসেবে জানে। সুতরাং সবদর আলী একজনকৃপণ লোক একথা সবাই জানে।
তার পরিবারের সবাই এ নিয়ে খুব কষ্টে আছে।সবদর আলীর ছোট ছেলে বিয়ে করেছে কিছুদিন হয়। এবার তার ছেলে আর ছেলের বউ ইচ্ছা পোষণ করল তারা কোথাও হানিমুনে যাবে। আর এ নিয়ে তার ছেলের বউ মলি তার স্বামী রাকিবের সাথে আলোচনা করে সংশয় প্রকাশ করতে লাগল।
তোমার বাবা যে কৃপণ তাতে মনে হয় না যে সে আমাদের ঘুরে বেড়াবার জন্য এত টাকা দিবে,তোমার কি মনে হয় ? মলি তার স্বামীর কাছে জানতে চাইল।
আমার কি মনে হবে জানোই তো যে আমার বাবা অহেতুক টাকা অপচয় পছন্দ করে না ।তাই সে কথা বলে লাভ নেই।তবুও আমি বাবার কাছে চেয়ে দেখব যদি বাবার মনটা একটু নরম হয়।মলির কথার জবাবে তার স্বামী রাকিব বলল।
অহেতুক অপচয় বলে কি লাভ তার চেয়ে বল তোমার বাবা হাড়কিপটে। পাড়ার সব লোক তা জানে। আর সে কারণে সে সমাজে কিপটে হিসেবে পরিচিত।সুতরাং আমাদের ঘুরে বেড়াবার স্বপ্ন সফল হবে না। মলি রাকিবের সাথে অভিমান করে বলে উঠল।
ঐ ভাবে বলো না। বাবা কে যতটা কৃপণ ভাবছ ততটা সে নয়।এলাকার নানান বখাটে এসে নানা অযুহাতে বাবার কাছে চাঁদা চাইত বাবা সেটা দিত না দেখেই তারা বাবাকে কৃপণ হিসেবে এলাকায় পরিচিতি করে দিয়েছে। আর এ কারণে বাবাও তার হাতকে কিছুটা সংকুচিত করে ফেলেছে। আমি জানি বাবা এতটা খারাপ নয়। রাকিব বাবার পক্ষ নিয়ে কথা বলল।
রাকিবের কথা শুনে তার স্ত্রী মলি বলল,বাবার পক্ষে এত সাফাই গাইও না। কতটা কৃপণ সে তা দেখা যাবে তুমি টাকা চাইলে তারপরে। ভাবি তো বলল তোমাদের হানিমুনে যাওয়া কোনোদিনও সম্ভব হবে না।
আচ্ছা সে দেখা যাবে, রাতে বাবা বাসায় আসুক। আমি তোমাকে নিয়ে ই বাবার সাথে কথা বলব।রাকিব তার বউকে আশ্বাস দিয়ে বলল।
সবদর আলী তার অফিস থেকে কিছুটা পথ গাড়িতে এসে বাকি পথ পায়ে হেঁটে বাসায় আসে। আর এ নিয়ে সবাই তার পেছনে নানান কথা বলে থাকে।কিন্তু তাতে তার কিছুই যায় আসে না। কারণ সে তার সুবিধে মতো চলাচল করে তাতে কারো তো কোনো ক্ষতি হয় না। সুতরাং সবদর আলী তার নিজের পথে একাকি আপনমনে চলাচল করে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষেপে আছে তার বড় ছেলের বউ।কারণ তার বাবা আবার এলাকার চেয়ারম্যান।তাই চেয়ারম্যানের মেয়ে হিসেবে তার শ্বশুড় হেঁটে আসলে তার ইজ্জত থাকে না। পুত্র বধুর এ কষ্টের কথা সবদর আলী জানে কিন্তু তাতে ও তার কিছু করার নেই। সে প্রতিদিনের মতো আজও পায়ে হেঁটে ঘেমে বাড়িতে এসে হাজির হয়ে নিজের বউকে ডেকে বলল,কই ময়নার মা কই গেলা আমার জন্য তাড়াতাড়ি ঠান্ডা পানি নিয়ে এসো।
সবদর আলীর একমাত্র মেয়ে ময়না।সে তার বউকে সবসময় ময়নার মা বলেই ডেকে থাকে। সবদর আলীর কথা শুনে তার বউ পানি নিয়ে এসে স্বামীর হাতে দিয়ে বলল,এতো জোড়ে ডাকাডাকি করো কেন,এই নাও পানি খাও।
বউয়ের কথা শুনে সে বলল,ডাকাডাকি কি আর সাধে করি হেঁটে আসতে কষ্ট হয়ে যায় তুমি জানো না ।দাও আর এক গ্লাস পানি দাও।
আর এক গ্লাস পানি দিয়ে সবদর আলীর বউ বলল,তা হেঁটে আসা লাগবে কেন সবাই এত কিপটে বলে তা কি নিজের কানে যায় না। আল্লাহ তো তোমাকে গাড়ি কেনার টাকাও দিয়েছেন। তা একটা গাড়ি কিনে নিলেও তো পারো।
হায় হায় কি বলে, আমাকে পথের ফকির করার জন্য মা ,ছেলে আর ছেলের বউরা উঠে পরে লেগেছে দেখছি।এ রকম কু কথা আর কখনো মুখে ও এনোনা। আমি সারাজীবন কষ্ট করে ব্যবসাটাকে দাড় করিয়েছি তোমরা তা সর্বনাশ করার চেষ্টা করে যাচ্ছ।সবদর আলী বউকে নিষেধ করে বলে উঠল।
তার কথা শুনে বউ বলল,হয়েছে হয়েছে আর বলতে হবে না।তুমি যে কিপটে গাড়ি কেনার কথা শুনলে তুমি তো হার্টফেল করবাই।কিন্তু তোমার তো অনেক টাকা আছে একটা গাড়ি কিনে নিলে কি হয়। এই বুড়ো বয়েসে একটু গাড়িতে করে ছেলে মেয়ে র শ্বশুড় বাড়িতে না হয় যেতাম।
বউয়ের কথা শুনে সে বলল,হয়েছে আমাকে আর পথে বসাবার বুদ্ধি বের করতে হবে না।এবার খাবার দেবার জন্য তৈরি হও। গাড়ির স্বপ্ন দেখা বন্ধ করে আমাকে রক্ষা করো।
সবদর আলীর সাথে কথা বলে লাভ নেই তার বউ সেটা বুঝতে পারল তাই সে আর কথা বাড়াল না। লোকটা সবসময় নিজের সিদ্ধান্তে অটল থেকেছে। সুতরাং তার দ্বারা গাড়ি কেনা কঠিন কাজ। তার বউ সেটা জানে,আর লোকটা প্রয়োজনের অতিরিক্ত কোনো খরচ করতে চায় না কখনোই।
খাওয়া শেষ করে বিছানায় বসতেই ছোট ছেলে রাকিব তার বউ মলিকে নিয়ে এসে বাবার পাশে বসল।আর সবদর আলী বুঝে গেল তার ছেলে কোনো দাবি নিয়ে এসেছে। আর এই ছেলের দাবি যদি সে পূরণ করে তবে তারঠিক একদিন পরেই বড় ছেলের বউ ও কোনো দাবি নিয়ে এসে হাজির হবে তার কাছে আর এই খবর যদি তার মেয়ের কাছে কোনো মতে চলে যায় তাহলে তার উপস্থিতি ঘটবে সহসাই।সুতরাং সবদর আলী সাবধানতা অবলম্বন করে অবস্থান নিল মনে মনে।
রাকিব তার বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলল,বাবা আমার একটা কথা ছিল।
বল।তবে একটু সংক্ষেপ করে বল বাবা আমি কিছুটা ক্লান্ত।সবদর আলী ছেলেকে সংক্ষেপে বলার জন্য বলল।
আচ্ছা বাবা আমি সংক্ষেপেই বলছি। মানে হচ্ছে কি এখনকার দিনে সবাই তো বিয়ের পরে একটু ঘুরে বেড়ায়।আমরা ও চাচ্ছিলাম একটু কোথাও ঘুরে আসতে। রাকিব বলল।
ছেলের কথার উত্তরে সে বলল,তা ঘুরতে চাচ্ছ যাও ঘুরে আস । কেউ কি তোমাদের নিষেধ করছে। নতুন বিয়ে হয়েছে একটু ঘুরে আসা তো দরকার। তা তোমার ফুফু বাড়ি যেতে পারো অথবা অন্য কোথাও কি তোমরা যেতে চাচ্ছ।
জ্বি বাবা । আমরা ফুফু বাড়ি বেড়াতে যাব না।আমরা দেশের বাইরে কোথাও যেতে চাচ্ছি। মলি সহসাই বলে উঠল।
ছেলের বউয়ের কথা শুনে সে বলল, তা যেতে চাচ্ছ যাবে আমি তো নিষেধ করিনি।তোমার স্বামীর সাথে তুমি যেকোনো যায়গায় যেতে পারো তাতে কোনো বাঁধা নেই।তা কবে কোথায় যেতে চাচ্ছ ?
বাবা আমরা কোথায় যাব সেটা ঠিক করিনি।কারণ আমার কাছে তো কোনো টাকা নেই।তুমি দিলেই তো আমরা যেতে পারব।সুতারং টাকাটা হাতে পেলে তার উপরে নির্ভর করে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারবো যে কোন দেশে যাওয়া যায়। রাকিব বলে উঠল।
ও এই কথা তাহলে ঘোরার জন্য তোমাদের টাকা দরকার। সবদর আলী বলে উঠল।
জ্বি বাবা। রাকিব বলল।
কিছুক্ষণ চুপ থেকে সে তার ছেলেকে বলল,কিন্তু বাবা রাকিব ,আমার হাতে তো এখন তোমাদের দেবার মতো কোনো টাকা নেই। আমি ব্যবসা চালিয়ে কোনোমতে দিন কাটিয়ে দিচ্ছি ।ঘুরতে যাওয়ার মতো অতিরিক্ত টাকা আমার হাতে নেই যা তোমাদের দিতে পারি।
তাহলে আপনি টাকাটাদিবেন না বাবা।মলি বলে উঠল।
জ্বি না বউ মা। তোমরা চাইলে দেশের ভিতরে কোথাও যেতে পারো সেক্ষেত্রে আমি কিছুটা সাহায্য করতে পারি।সবদর আলী বউয়ের কথার জবাবে বলল।
এবার বাবার কথার জবাবে রাকিব বলল,বাবা আপনার তো জমানো অনেক টাকা রয়েছে তার থেকে কিছু টাকা আমাদের দিলে আমরা কিন্তু দেশের বাইরে হানিমুনে যেতে পারতাম।
না বাবা রাকিব সে অবস্থা আমার এখনো হয়নি।আমি এতটা বে হিসেবে খরচ করতে পারি না। যদি এমন পরিস্থিতি কখনো হয় আমি তোমাদের ডেকে টাকা দেব। যাও এখন গিয়ে ঘুমাও।তোমার কালকে তো আবার সকালে অফিসে যেতে হবে।সবদর আলী ছেলেকে টাকা না দেওয়ার কথা বলে দিল।
ছেলের বউ খুব রাগ করল তার কথা শুনে ।রাগান্বিত হয়ে সে বলে উঠল,বুঝেছি বাবা এই কারণে পাড়া শুদ্ধ সবাই আপনাকে কৃপণ বলে ডাকে।
রাকিব আর কোনো কথা বলল না।সে জানে তার বাবা একবার যখন না বলেছে সে আর কিছুতে হ্যাঁ বলবে না।সুতরাং নিশ্চুপে সে মলি কে আর কথা না বলতে বলে তাকে নিয়ে নিজেদের রুমে চলে গেল।
মলি রাগে ফুলতে ফুলতে চলে গেল ।যারপরনাই রাগ হয়েছে তার শ্বশুড়ের ওপরে।সে রুমে গিয়ে রাকিবকে বলল,কালকেই আমাকে বাবা র বাসায় দিয়ে আসবে এমন কিপটে লোকের বাসায় আর থাকবো না।
আচ্ছা সে দেখা যাবে এখন মাথা ঠান্ডা করে ঘুমাও।রাকিব বউকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল।
মলি বিছানায় শুয়ে বলল,তাহলে আমাদের ঘুরতে যাওয়া হবে না।
দেখি কি করা যায়। দেশের বাইরে না যেতে পারি তোমাকে নিয়ে কক্সবাজার ঘুরে আসব।সেক্ষেত্রে কোনো বন্ধুর কাছ থেকে না হয় কিছু টাকা নিয়ে নেব। তুমি চিন্তা করো না।আমরা কোথাও ঘুরতে যাব।রাকিব বউয়ে আশ্বাস দিয়ে বলল।
এদিকে রাকিবের মা নিজের স্বামী র ওপরে খুব রাগ করল।সে তার ছেলেকে এভাবে খালি হাতে ফিরিয়ে দিয়েছে তাই। বিছানায় গিয়ে নিজের মনের কথা স্বামীর কাছে খুলে বলল সে।
বউয়ের কথা শুনে সবদর আলী বলল,শোনো পরিবানু তোমার ঘটে তো মোটেও বুদ্ধি নাই তাই বুঝতে পারছ না।যদি এখন রাকিবকে দেশের বাইরে ঘুরতে পাঠাই তবে তোমার বড় ছেলের বউ রুবিও সাকিব কে সাথে নিয়ে এসে আমার কাছে টাকা চাইবে ঘুরতে যাওয়ার জন্য।তাদেরকে তো তুমি চিনতে পারনি। সুতরাং সবাই খুশি থাকুক । আর আমার টাকার অপচয় ও রোধ হোক। রাগ না করে এখন ঘুমিয়ে থাকো।
স্বামীর কথা শুনে পরিবানু আর কোনো কথা বলল না।সে নিশ্চুপ ঘুমিয়ে থাকার চেষ্টা করতে লাগল।
সবদর আলী বউ ছেলে মেয়ের মনের অবস্থা কিছুটা বুঝতে পারে।তার সবার প্রতি সমান দৃষ্টি রাখতে হয়।
সবদর আলীকে সবাই কৃপণ হিসেবে জানে।কিন্তু মূলতঃ সে কৃপণ ব্যক্তি নয়।কিছুটা হিসেবি মানুষ।সে যেকোনো বিপদে আপদে নীরবে সব মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসে। কিন্তু বিষয়টা সে গোপন রাখতে ভালোবাসে।আর এ কারণেই সব মানুষ তাকে কৃপণ সবদর আলী বলে ডাকে। আর তার এত সম্পদ থাকতেও সে ছেলেদেরকে চাকুরি করার জন্য বলেছে।কেননা সে তো এখনো ব্যবসা করতে সক্ষম ।যখন সে আর পারবে না তখন ছেলেদেরকে সবকিছু বুঝিয়ে দেবে।
পরদিন বিকেল বেলা সবদর আলী তার ছোট ছেলে কে মোবাইলে কল করে তার অফিসে ডেকে পাঠালো।
বাসায় যাওয়ার পথে রাকিব বাবার সাথে দেখা করার জন্য তার অফিসে এলো।রাকিব বাবার ওপরে কিছুটা রেগে আছে। বাবার অফিসে এসে সে বাবাকে বলল,বাবা ডেকেছকেন ?
রাকিবকে সবদর আলী বলল, বাবা রাকিব বসো আমার সাথে বাড়ি যাবা।তোমার সাথে আমার কথা আছে।
রাকিব ব্যস্ততা দেখিয়ে বলল,না বাবা আমি বসতে পারবোনা।কি বলবা বলো।
সবদর আলী বুঝল ছেলেটা রেগে আছে তার প্রতি। তাই সে আর কথা বাড়াল না । ড্রয়ার থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকার একটা বান্ডিল বের করে ছেলের হাতে দিয়ে বলল, শোন বাবা দেশের মাঝে কোথাও এ টাকা দিয়ে বউকে নিয়ে ঘুরে আয়। আর কাউকে বলিস না যে আমি তোকে এ টাকা দিয়েছি।এমনকি তোর মাকেও বলবি না। তাহলে কিন্তু সবাই জেনে যাবে আর তখন সবাইকে ই আমার টাকা দিতে হবে। আর আমার মনে হয় তোরা কক্সবাজার ঘুরে আসতে পারিস।
রাকিব বাবার ভালোবাসা দেখে গলে গেল।সে বাবাকে বলল,বাবা তোমার বউমা বিদেশ যেতে চেয়েছিল।কিন্তু আমি তোমার কথায় বুঝতে পারলাম আমাদের বিদেশ ঘুরতে পাঠালে সবাই তখন দাবি করবে বিদেশ যাবার জন্য। ঠিক আছে বাবা আমরা কক্সবাজার ই ঘুরে আসব। আর কাউকে বলব না তোমার কাছ থেকে টাকা নেওয়ার কথা। আমি বুঝতে পেরেছি।
সবদর আলী ছেলের কথায় খুশি হল।সে ছেলেকে বলল,চলো রাকিব তাহলে আমরা একসাথে বাড়িতে যাই।
ঠিক আছে চলো বাবা।তোমাকে যারা কৃপণ বলে তারা আসলে জানে না যে তোমার ভিতরটা কতো সুন্দর।রাকিব বাবার সুন্দর মানুষটাকে খুঁজে পেয়ে বলল।
কেউ যেন বুঝতে না পারে তার জন্য একমাস পরে রাকিব তার বউ মলি কে নিয়ে কক্সবাজার ঘুরতে গেল। আর সবার কাছে সে বলে দিল যে তার এক বন্ধুর কাছ থেকে সে টাকা ধার নিয়েছে।তাই কৃপণ সবদর আলী বাড়ির আর সবার কাছে কৃপণ ই রয়ে গেল।
পনের দিন কক্সবাজার কাটিয়ে আসল রাকিব। অনেক কষ্টে সে ছুটি জোগাড় করেছিল।তারা ফিরে আসতেই হঠাৎ তার শ্বাশুড়ি অসুস্থ হয়ে পড়ল। রাকিব মলিকে তার মায়ের কাছে রেখে আসলো। সবদর আলী তার বউ পরিবানুকে নিয়ে তার বেয়াইনকে দেখে আসল একদিন।
মলি তার মার জন্য কান্নাকাটি করতে লাগল।তাদের আর্থিক অবস্থা তেমন একটা ভালো না।সু চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন।সে জানে তার শ্বশুড় কৃপণ তাই তার কাছে কিছু বলে লাভ নেই।সবদর আলী সবকিছু বুঝতে পারল।সে একদিন তার বেয়াইকে অফিসে ডেকে আনল।
সরাসরি সে তার বেয়াইকে জিগ্যেস করলো,বেয়াই সাহেব বেয়াইনের চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার দরকার তাই না ?
জবাবে তার বেয়াই বলল,জ্বি বেয়াই ডাক্তার বলেছে ক্লিনিকে ভর্তি করতে। বেশ কিছুদিন ক্লিনিকে রেখে চিকিৎসা করতে হবে।
তা বসে আছেন কেন ? সবদর আলী জানতে চাইল।
টাকার ব্যবস্থা করতে পারিনি তাই।গ্রামের জমি বিক্রির চেষ্টা করে যাচ্ছি। বিক্রি করতে পারলেই আপনার বেয়াইনকে ক্লিনিকে ভর্তি করাব। বেয়াই সাহেব বলল।
সবদর আলী বেয়াইয়ের কথা শুনে মনে মনে রাগ করল। কিছুটা রাগ দেখিয়ে সে বলল,এটা কোনো কথা বললেন বেয়াই। কেন জমি বিক্রি করবেন আমরা তো রয়েছি। আপনি কালকেই বেয়াইনকে ভর্তি করিয়ে দিন।
টাকার ব্যবস্থা কিভাবে হবে বলুন তো ? সবদর আলীর বেয়াই জানতে চাইল।
এবার সবদর আলী ড্রয়ার খুলে একটা প্যাকেট বের করে তার বেয়াইয়ের হাতে দিয়ে বলল, বেয়াই সাহেব এর মাঝে দুই লক্ষ টাকা আমি রেখেছি বেয়াইনের চিকিৎসার জন্য।যতদিন সে সুস্থ না হয় আরো যত টাকা লাগে আমি দেব।আপনি চিকিৎসা চালিয়ে যান। আমাকে আল্লাহ্ পাক অনেক দিয়েছেন।সে টাকা যদি ভালো কাজে না লাগে তাহলে আমি সে টাকা দিয়ে কি করবো।আপনি কালকেই বেয়াইন কে ক্লিনিকে ভর্তি করুন।আর হ্যাঁ কোথা থেকে আপনি টাকা পেয়েছেন এ কথা কাউকে বলার দরকার নাই আপাততঃ।
বেয়াইয়ের এমন ব্যবহারে যারপরনাই খুশি হলো মলির বাবা।এতদিন তারা শুধু সবাই মিলে বেয়াই সাহেবের সম্পর্কে ভুলই বুঝে এসেছে।বেয়াইকে অনেক ধন্যবাদ দিয়ে মলির বাবা খুশি মনে বাসায় চলে আসলো।
কেউ জানতে পারলো না কৃপণ সবদর আলীর এই উপকারের কথা। আর একমাসের চিকিৎসায় তার বেয়াইন সুস্থ হয়ে উঠল।সবদর আলী মনে মনে বেজায় খুশি হলো যে তার কষ্টের আয় করা টাকায় কোনো ভালো কাজ হয়েছে। মানুষ তাকে কৃপণ বলুক কিন্তু সে তো জানে সব ভালো কাজে তার জড়িত থাকার কথা।
এদিকে মা সুস্থ হতে মলি আবার রাকিবের সাথে তাদের বাসায় চলে এলো।সে তো এসে খুব রাগ দেখিয়ে রাকিবকে বলল,তোমাদের বাসায় আমার আর কিছুতেই আসতে ইচ্ছা করে না।আমার মার এত বড় অসুস্থতা গেল তোমার বাবা মা কয়েকবার দেখতে গেল শুধু আর আমার বাবা জমি বিক্রি করে মায়ের চিকিৎসা করাল তোমার বাবার এত টাকা পয়সা থাকতে। এ বাড়িতে আমার কিছুতেই আর ভালো লাগবে না।শুধু তোমার কারণেই আসলাম। সত্যিই তোমার বাবা একটা হাড়কিপটে।
বউয়ের কথা শুনে রাকিব বলল,দেখ এভাবে বলো না। বাবা এতটা খারাপ না।
জানি তো কতটা ভালো তোমার বাবা। আজ আসতেই তো ভাবি আমাকে বলল যে তোমার বাবা নাকি আজকাল অপর লোকদের যারা কিছু আমাদের হয় না তারা সাহায্য চাইলে না বলে না। ভাবি আরো বলল নিজের কৃপণ নাম ঘোচাতে সে এই দান করা শুরু করেছে। মলি বেশ রাগ করে কথা গুলো বলল।
বউয়ের রাগ দেখে রাকিব আর কিছু বলল না।সে নিশ্চুপ হয়ে রইল।
দুই মাস পার হয়ে গেল। সবদর আলী কে তার ছেলের কোনো বউ ই আর ভালো চোখে দেখে না।সে কথা বলার জন্য তার বড় ছেলে সাকিব তার বোন ময়না কে খবর দিয়ে ডেকে আনল।
ময়নার আগমন দেখেই সে সেটা বুঝে গেল যে ময়না বাবার কোনো ভুল ধরার জন্য ই এসেছে। ময়না এসে ই বাবাকে বলল বাবা রাতে একটু তাড়াতাড়ি এসোতোমার সাথে আমাদের কথা আছে।
মেয়েকে খুব ভালোবাসে বাবা। সে তাই তার মেয়েকে বলল,জামাইকে নিয়ে আসিস নাই কেন। কতদিন আসে না সে। আর তুই বললে আজকে অফিসেই যাব না। ম্যানেজার কে বলে দিচ্ছি সে সব কিছু দেখে নেবে।
না বাবা তার দরকার নাই।তুমি অফিসে যাও । ভাইয়ারা তো সবাই রাতে আসবে। তুমি শুধু একটু আগে চলে এসো। ময়না তার বাবাকে আবারো আগে আসার জন্য বলল।
ঠিক আছে বলে সে বাসা থেকে বের হয়ে গেল।ছেলে মেয়ের মনের অবস্থা সে কিছুটা বুঝতে পারে।হয়তো সবাই মিলে কোনো কিছু একটা বুদ্ধি করেছে যা রাতে বলবে।সে যাই হোক রাতে তো সবাই কে একসাথে পাওয়া যাবে।এতেই সে মনে মনে খুব খুশি।
রাতে খাবার পরে সবাই একসাথে বসল।
সবাইকে একসাথে দেখে পরিবানু খুশি হয়ে বলল,আমার আজকে রাতে খুব ভালো লাগছে।তোমাদের একসাথে দেখে। কতদিন পরে তোমরা আবার সবাই একসাথে বসলে আমার ঠিক মনে নাই।আজ জামাই থাকলে আরো ভালো হতো।
মায়ের কথা শুনে ময়না বলল,মা সে তো আসতেই চায় না বাবার কারণে সবাই বাবাকে হাড়কিপটে বলে তাতে ওর লজ্জা লাগে । একটু থেমে সে আবার বলল,আর মা বড় ভাই যে কারণে আমাকে ডেকে এনেছে তা হলো তোমাদের সাথে আর কেউ থাকতে চাচ্ছে না।বড় ভাবি, ছোট ভাবি তাদের সাথে আমি কথা বলেছি তারা বাবার কৃপণতার কারনে এ বাড়িতে আর কেউ থাকতে চায় না।তারা যে যা ভাগে পাবে তাই নিয়ে গিয়ে নিজেদের মতো করে থাকতে চায়।
মেয়ের কথা শুনে সবদর আলী মনে মনে একটু কষ্ট পেল।সে সরাসরি তার ছেলে বউদের কাছে জিগ্যেস করল, কি বউমা কথা কি সত্যি তোমরা কি আমাদের সাথে থাকতে চাও না।
জ্বি বাবা সত্যি। দুই বউ একসাথে বলে উঠল।
এবার সে ছেলেদের কাছে জানতে চেয়ে বলল,রাকিব ,সাকিব তোমরা কি বলো !
রাকিব বলল,বাবা মলি বুঝতে চাচ্ছে না। ও ভাড়া বাসায় থাকতে চাচ্ছে।
সাকিব বলল,বাবা ওদের সুখটাও তো আমাদের দেখতে হবে।
তাহলে তোমাদের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত।তোমরা আমাদের সাথে আর থাকবে না। সবদর আলী আবার জানতে চাইল।
সবাই আবার একসাথে বলল,জ্বি বাবা।
ছেলেদের কথা শুনে এবার সে বলল, ঠিক আছে তোমরা যেতে পারো যে যার মতো ।তবে তোমরা আমার আয় করা সম্পত্তির কোনো কিছু পাবা কিনা তা এর মধ্যে আমি জানাতে পারবো না ।তোমাদের আরো অপেক্ষা করতে হবে।আমি এখনই তোমাদের কিছু দিতে পারবো না। তোমরা আলাদা থাকতে চাও বেশ আমি বাধা দেব না।
কিন্তু বাবা আমাদের আলাদা থাকতে হলে এখন নগদে কিছু টাকা দরকার ।তা তুমি না দিলে কিভাবে হবে। সাকিব বলে উঠল।
আমি কৃপণ মানুষ। সবাই জানে। সুতরাং কেউ কোনো টাকা পাবে না। এই ময়নার মা চলো ঘুমাতে চলো এতটুকু বলে সবদর আলী সবার কাছ থেকে উঠে তাদের রুমে চলে গেল।
রাকিব সাকিবের বউ হতাশ হলো । এত বুদ্ধি করে তারা কিছু টাকা শ্বশুড়ের কাছ থেকে নিতে চেয়েছিল। কিন্তু তা আর সম্ভব হলো না। উল্টো আলাদা থাকতে হলে তাদেরকে কষ্টে থাকতে হবে।কারণ তখন তো তাদের স্বামীর আয়ের টাকায় সবকিছু করতে হবে।তারা চিন্তায় পড়ে গেল। অবশেষে তারা আবার নিজেদের মাঝে আলোচনা করে আপাততঃ এ বাড়ি না ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিল।যাই হোক বাবা তো তাদের আর এ বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বলেনি।আর তাদের স্বামীরা ও তো নিজেদের বাড়ি ছেড়ে যেতে চায়নি।
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে নামায পড়ে সবদর আলী এক ঘন্টা পায়ে হেঁটে বাসায় ফিরলো।সে বাসায় আসতেই তার বড় ছেলে সাকিব তার কাছে আসল। তাকে দেখে সবদর আলী নিজে থেকেই জিগ্যেস করলো, কি বাবা সাকিব কিছু বলবে ?
জবাবে সাকিব বলল,বাবা রুবির আব্বু কাল ভোর রাতে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। তাকে শহরে নিয়ে এসেছে। ডাক্তার সবকিছু দেখে বলছে বিদেশ নিয়ে অপারেশন করাতে হবে। রুবি আমাকে বলল ওদের তো তেমন বেশি টাকা পয়সা নেই।এখন কি করবে ?
তা আমি কি করবো। আমি তো কৃপণ তোমরা সবাই বলো। সবদর আলী ছেলের ওপর অভিমানের সুরে বলে উঠল।
এমন সময় সাকিবের বউ রুবি চলে আসল।সে বলল,বাবা তাহলে কি আপনার বেয়াইয়ের অপারেশন হবে না।
কেন হবে না, আমি কি সেটা বলেছি।যত টাকা লাগে আমি দেব। এই সাকিব যাও বেয়াইকে ডাক্তার যে দেশে নিয়ে যেতে বলে তাকে সেখানে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করো। যত টাকা লাগে দশ লক্ষ হোক বিশ লক্ষ হোক আমি ব্যবস্থা করবো।তোমরা কোনো চিন্তা করোনা।সবদর আলী এবার সবার কাছে নিজের আসল পরিচয় প্রকাশ করে দিয়ে কথাগুলো বলল।
রুবি তার চোখের পানি ধরে রাখতে পারল না। সে তার শ্বশুড়কে সবসময় কৃপণ বলে অবজ্ঞা করত।আজ সে তার ভুল বুঝতে পারল।মানুষটা আসলে কৃপণ রুপে বৃহৎ মনের একজন দানশীল মানুষ।
রাতে সবাই সবদর আলীর রুমে হাজির হলো।দুই ছেলের বউ তার কাছে ক্ষমা চাইল তাদের ভুল ব্যবহারের জন্য।
ছোট ছেলে রাকিবের বউ মলি বলল,বাবা আমি জানতে পেরেছি সব কথা। আম্মার চিকিৎসার টাকা আপনি দিয়েছেন,আমাদের বেড়াতে যাওয়ার টাকাও আপনি দিয়েছেন।আর আমরা কি ভুল আচরণ ই না করেছি আপনার সাথে।আমরা লজ্জিত,আমাদের মাফ করে দিবেন।
আর বড় ছেলের বউ রুবি বলল,জ্বি বাবা আমরা ভুল করেছি আমাদের মাফ করে দিবেন। আমার মনে হয় আপনার মতো হিসেবি মানুষের প্রয়োজন রয়েছে প্রতিটি সংসারে।
বউদের কথা শুনে সবদর আলী হেসে বলল, কারো ক্ষমা চাইতে হবে না।আমি পরিবারের সবাইকে ভালোবাসি।আরআমি এমন কৃপণ পরিচয়েই থাকতে চাই। সবার সঠিক প্রয়োজনে আমাকে কাছে পাবে। আর অপচয় হলে বা কোনো বে ঠিক প্রয়োজনে আমি সেই কৃপণ সবদর আলী।
সবদর আলীর কথা শুনে সবাই হেসে উঠল।
----------------------------------------------------
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
একজন কৃপণ ব্যক্তির কাহিনী বিবৃত হয়েছে। সামঞ্জস্যপূর্ণ গল্প।
২২ জানুয়ারী - ২০১৭
গল্প/কবিতা:
১১৬ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪