লোভ

অলিক (অক্টোবর ২০১৮)

শরীফ মুহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান
  • ১৬
না ভাবি আপনার কথা শুনে খুব ই কষ্ট পেলাম। নিলা বলে উঠল।
নিলার কথা শুনে বিব্রত হয়ে রিনা বলল,কেন ভাবি এত কষ্ট পেয়েছ কেন তুমি ?
এবার জবাবে নিলা বলল,কেন কষ্ট পাবনা তুমিই বল ভাবি, তুমি ছেলে মেয়ের চাহিদা মতো সবকিছু দিতে পার না এর চেয়ে দুখেঃর আর কি হতে পারে। আর এই যুগে তোমার স্বামীর মতো কোনো লোক আর কি আছে বলো এত সুযোগ থাকতেও সে অভাবে জীবন ধারণ করে চলেছে।
নিলার কথা শুনে কিছুটা কষ্ট পেল রিনা । তবুও সে কষ্টকে লুকিয়ে রেখে বলল, তুমি ঠিকই বলেছ ভাবি তবে আমি তো তাকে অনেক তিরস্কার করেছি বলেছি যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে আর সবার মতো স্রোতে গা ভাসিয়ে দিয়ে যেখান থেকে যা পারে তা যেন আয় করে নেয়।তাহলে ই তো আমাদের জীবনটাও তোমাদের মতো বদলে যেত কিন্তু কে কার কথা শোনে তার একই কথা সে সততা কে কখনো বিসর্জন দেবে না।
কিন্তু তাতে কি হয়েছে ভাবি।তোমরা অসহায়ের মতো দরিদ্র জীবন যাপন করো আর আমরা,হাই লেভেলে জীবন যাপন করছি।সুতারং ওসব বলে কি হবে,তোমার সাহেব কে বোঝাও আর সুন্দর ভাবে জীবন যাপন করো।নিলা বলে উঠল।
নিলার কথা শুনে রিনা বলল, না ভাবি তুমি আবার যতটা বলছ ততটা না।ও যা সৎ ভাবে আয় করে তাতে আমাদের চলে যায় সমানভাবে শুধু আমাদের সব ধরণের শখগুলো পূরণ হয় না।আমরা মোটামুটি ভালো আছি।
ঐ মোটামুটিই থাকবে ভাবি। জীবনে আর সুখের মুখ দেখবে না।দেশে তোমাদের মতো বোকা পরিবার আর নেই।আচ্ছা আজ চলি,তোমার ভাই আবার চলে আসবে । এতটুকু বলে নিলা উঠে পরল।
রিনা তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,ভাবি চা করা হয়ে গেছে। চা টা খেয়ে যাও।আর আমাদের জন্য একটু দোয়া করো যেন তোমার ভাই বুঝতে পারে।
সে তো করবই। তবে ভাবি চা টা দাও খেয়েই যাই।আর শোনো আগেই তো বলেছি আমরা গত মাসে ফ্ল্যাওট কিনেছি সামনে মাসে সেখানে উঠব।আর সব ঠিকঠাক মতো চললে দুই মাস পরে গাড়িটাও কিনে ফেলব।এখানে আর ভাড়া থাকব না,তখন তোমাদের সাথে একটু কম দেখা হবে।যাই হোক এতদিন একসাথে পাশাপাশি ভাড়া থেকেছি তখন না হয় মাঝে মাঝে গাড়ি করে এসে তোমার সাথে দেখা করে যাব।চা খেতে খেতে রিনা কে উদ্দেশ্য করে তার ভাবি নিলা বলল।
চা খাওয়া শেষ করে নিলা রিনার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল । আর রিনার মনেতে একরাশ অভিমান আর ক্ষোভ জমা রেখে গেল তার স্বামীর উপরে।সে মনে মনে তার স্বামীর ওপরে চরম অভিমান নিয়ে বসে রইল।সবাই পারে কিন্তু তার স্বামী ই পারে না বেশি বেশি আয় করতে। কই কোথায়ও তো কারো কোনো ক্ষতি হচ্ছে না। শুধু ওনার যত ঢং,ওনি পারবে না বেশি করে আয় করতে।সরকারি চাকুরি করে সব পথ খোলা তবুও বোকার হাড্ডি লোকটাকে দিয়ে যদি কিছু হতো।নানাবিধ চিন্তা করতে করতে রিনা স্বামীর ওপরে বিরক্ত হয়ে মনে মনে বলল,আজ আসুক ব্যা টা তাকে কঠিন শিক্ষা দেব।
সন্ধ্যেটর পর রিনার স্বামী রাজিন বাসায় এলো।সে বাসায় আসতেই আর বেশিক্ষণ অপেক্ষা করল না রিনা।সে এককাপ চা হাতে নিয়ে এসে রাজিনের হাতে দিয়ে তার মনের মাঝে সারাদিনের জমে থাকা কথাগুলো বলা শুরু করল।
রিনা বলল,তোমার জন্যক আমার আর ইজ্জত থাকল না।
বউয়ের কথা শুনে রাজিন বলল, কেন কি হয়েছে নিলা ভাবি এসেছিল নাকি আবার?
তার আসা না আসায় কি আসে যায়।তোমার অবস্থা সবাই জানে,তুমি যে একটা্ বাজে লোক,কোনো কাজ পারো না তা কে না জানে। এত সুযোগ থাকতে তুমি বোকার মতো জীবন কাটিয়ে যাচ্ছ।রিনা তার স্বামী কে তিরস্কার করে কথা বলল।
ঠিক আছে বোকা ই না হয় হলাম। তাতে কার কি আসে যায়,বিশেষ করে তোমার প্রতিবেশি নিলা ভাবির এত বেশি কি এসে যায়।আমি যদি খুশি থাকতে পারি অল্পতেই তাতে অন্যের অসুবিধা কোথায়? রাজিন তার বউকে উদ্দেশ্য করে বলল।
না আমরা তোমার মতো খুশি না।আমাদের কোনো চাহিদাই তো তুমি ঠিকভাবে পূরণ করতে পারো না। আমাদের জীবন ধারণের জন্য আরো বেশি দরকার।রিনা বলল।
শোনো আমার সামর্থ্যেরর মধ্যেয যতটুকু পারি তাতেই তোমার সন্তুষ্ট থাকতে হবে আর আমি তো অন্যারয়ভাবে কিছু করতে পারি না। রাজিন বলল।
সবাই যখন পারে তুমিও পারবা। এত চিন্তা করে নিজের জীবন আমি নষ্ট করতে চাই না।তোমার সাথে সংসার করে আমি জীবনেও একটু শান্তি পেলাম না। রিনা বলল।
শান্তি মনে থাকে সম্পদে না। আর তোমার জীবন তো শান্তিতে পরিপূর্ণ। আমি তোমাকে কত ভালোবাসি।কিন্তু সমস্যাব কোথায় আমি জানি ঐ নিলা ভাবি ই নানান কু কথা বলে তোমার মনকে বিষিয়ে তোলে।তার সঙ্গ ত্যা গ করো।তাহলেই সুখি হতে পারবে। রাজিন তার স্ত্রীকে পরামর্শ দিয়ে বলল।
স্বামীর কথা শুনে আরো রেগে গেল রিনা।সে বলল,ফালতু কথা বলবা না ।নিলা ভাবির কোনো দোষ নেই,সে ঠিক কথাই বলে ।আসলে তুমিই অকর্মার ঢেকি।নিজের দোষ ঢাকতেই তুমি অন্যের ওপরে দোষ চাপিয়ে দিচ্ছ।
এবার রাজিন বলল, এখানে দোষ গুনের কি আছে।আর আমি তো অন্যন সবার মতো নিজের আদর্শকে বিসর্জন দিতে পারি না।
হয়েছে হয়েছে , থাকো তোমার ঐ আদর্শ নিয়ে।কষ্ট তো সব আমার ওপর দিয়ে গেল তুমি বুঝবে কেমনে।তোমার এই সংসারে সারাদিন খেটে মরে আমার জীবনটাই শেষ হয়ে গেল।আমি আর এত কষ্টে জীবন কাটাতে পারব না এই বলে রাখলাম।এবার রাগের পুরোপুরি বহিঃপ্রকাশ করে রিনা রাজিনের সামনে থেকে চলে গেল আর রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল।
রাজিন বুঝতে পারল আজ বোধহয় নিলা ভাবি রিনাকে একটু বেশি করেই খোঁচা দিয়ে গেছে আর তার কারণেই রিনা তার সাথে এমন ব্য্বহার করেছে। রাজিন আর বেশি কথা বলার উৎসাহ করল না তাই সে আর রিনাকে ডাকল না। কিছুটা কান্না করে রিনা আবার ঠিক হয়ে যাবে।তখন দরজা খুলে আবার সাংসারিক কাজ শুরু করে দেবে।রাজিন নিশ্চুপে একাকি টি ভি টা ছেড়ে রিমোট দিয়ে একটার পর একটা চ্যা নেল ঘুরাতে লাগল।
দুই ঘন্টা পার হয়ে গেল। রিনা আর রুম থেকে বের হলো না।এদিকে রাজিনের পেট তো ক্ষুধার জন্য উথাল পাতাল শুরু করে দিয়েছে।সে আর সহ্যএ করতে পারছে না। এবার রিনাকে ডাকা দরকার।রাজিন কি করবে ভাবতে লাগল।
একটু চিন্তা করে সে তার মেয়ের কাছে গেল।মেয়েকে শিখিয়ে দিল তার মাকে ডাকার জন্য ।আর ছেলেকে নিয়ে সে খাবার টেবিলে গিয়ে বসল।
তার মেয়ে গিয়ে দরজায় টোকা মেরে মাকে ডাকতে লাগল, ও মা দরজা খুলে এসো।আমাদের খেতে দাও ক্ষুধা লাগছে।
রিনা মেয়ের কথা শুনে ঘুম থেকে জেগে উঠল।সে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছিল।মেয়ের ডাক শুনে তার ঘুম ভেঙ্গে গেল।দরজা খুলে সে বাইরে এসে বলল, কি হয়েছে তোদের ডাকাডাকি করছিস কেন তোরা ?
মা আমাদের ক্ষুধা লেগেছে তাড়াতাড়ি খেতে দাও। রিনার ছেলে বলে উঠল।
ঠিক আছে তোমরা সবাই খেতে বস। আমি একটু গরম করে খাবার নিয়ে আসছি। রিনা তার ছেলে কে উদ্দেশ্যেে করে বলল।
ঘুমানোর কারণে অনেকটা ফ্রেশ হয়ে গেছে রিনার মন।তাই সে আবার আগের মতো নিজের কাজে মন দিল।
খাওয়া শেষ করে রিনা ছেলে মেয়েকে ঘুম পাড়ানোর কাজে লেগে গেল।রোজগার রুটিনের কাজ এগুলো রিনার । সে মাঝে মাঝে তার স্বামীর ওপরে বেশ রাগ করে আবার নিজে নিজে ঠিক হয়ে যায়। কারণ তার স্বামী রাজিন কখনো বেশি রাগ করে না তাই রিনার ঝগড়াটাও বেশি করে জমে না। সুতরাং শেষ পর্যন্ত তাকেই আপস রফা করে নিতে হয়।
সকাল বেলা রাজিন রেডি হয়ে রিনাকে উদ্দেশ্য করে বলল,কই তোমার রাগ পরেছে,নাস্তা তৈরি হয় নি এখনো আমার তো দেরি হয়ে যাচ্ছে।
রিনা রান্না ঘর থেকে নাস্তা হাতে নিয়ে আসতে আসতে মুখে হাসি নিয়ে বলল, হয়েছে হয়েছে।কিন্তু ভাবছিলাম তোমার জন্য আর নাস্তা রেডি করবো না কারণ তুমি আমার কোনো কথাই শোনো না।
তাহলে করলে কেন?রাজিন তার বউয়ের কাছে জানতে চাইল।
সে তুমি বুঝবে না। এখন তাড়াতাড়ি খেয়ে অফিসে যাও।রিনা তার স্বামীকে তাগাদা দিয়ে বলল।
রাজিন আর কথা বাড়াল না।সে খাওয়া শেষ করে অফিসের উদ্দেশ্যো রওনা হয়ে গেল।
রাজিন অফিসে চলে যেতে রিনা এবার তার ছেলে মেয়েকে নিয়ে ব্যদস্ত হয়ে উঠল।রিনা নিজের মনে মনে এবার ভাবতে লাগল , না নিলা ভাবির কথায় সে তার স্বামীর সাথে একটু বেশিই খারাপ ব্য্বহার করে ফেলেছে। এতটা খারাপ আচরণ করা তার কিছুতেই ঠিক হয়নি। সে মনে মনে খুব ব্যেথিত হলো।
সহসা রিনার ভাবনার মাঝে ছেদ টানল মোবাইল ফোনের রিংটোন।
রাজিন তাকে কল করেছে। রিনা রিসিভ করে বলল, কি হযেছে বলো! এত তাড়াতাড়ি কল করলে যে?
রাজিন বলল,না ঐ যে বললে আমি বুঝবো না তাই বলার জন্য যে আমি বুঝেছি।
রিনা এবার জানতে চাইল,কি বুঝেছ?
রাজিন বলল,তুমি আমাকে খুব ভালোবাস তাই।
যাও মিথ্যাম কথা বলতে হবে না।আমি কাউকে ভালোবাসি না। রিনা লজ্জা পেয়ে বলে উঠল।
আচ্ছা ঠিক আছে রাখি। রাজিন এতটুকু বলে রেখে দিল।
রিনার মনটা খুশিতে ভরে গেল।কারণ অভাব অনটনে থাকলেও তাদের জীবনে এই ভালোবাসাটুকুই চলার পথের পাথেয় হয়ে আছে।আর যাই হোক কিছু না থাকলেও তাদের জীবনে ভালোবাসার কোনো ঘাটতি নেই।সুতরাং স্বামীর কাছ থেকে সেই ভালোবাসার পরশটুকু পেয়ে রিনার জীবনের না পাওয়া দুঃখগুলো সবসময় ঘুচে যায়।এখনও তেমনি রাজিনের কাছ থেকে মোবাইলে কল পেয়ে তার মনটা খুশিতে ভরপুর হয়ে গেল।
সপ্তাহ পার হয়ে গেল। সহসা আবার নিলা ভাবি এসে রিনার কাছে হাজির হলো। সে এসে বসেই রিনাকে উদ্দেশ্য করে বলল,ভাবি আমি খুব ব্যনস্ত।
রিনা জানতে চাইল,কেন ভাবি কি হয়েছে?
জবাবে নিলা বলল,না ভাবি আর সব দিনের মতো আজ আর গল্প করতে পারব না। জানেনই তো পরশু এক তারিখ। খুবই ভালো হয়েছে সেই দিন আবার শুক্রবার পরেছে।বেশি লোকজনকে দাওয়াত দিতে পারবো।
কিসের দাওয়াত দেবেন ভাবি? রিনা জানতে চাইল।
কিছুটা উত্তেজিত হয়ে নিলা বলল,আরে ভাবি আপনার তো কিছুই মনে থাকে না দেখছি।আগেই তো বলেছিলাম আমরা এক তারিখ আমাদের নতুন ফ্ল্যাটে উঠব।আর সে জন্য ই কাছের সব লোকদেরকে দাওয়াত করে যাচ্ছি।আপনারাও সবাই মিলে যাবেন। আর কিছু নতুন ফার্নিচারও কিনেছি ভাবি দেখে আসবেন। আপনার ঠিক পছন্দ হবে।
আর এই নিন আপনাদের বাসার সবার দাওয়াতের কার্ড। সুন্দর হয়েছে না কার্ডটা ভাবি। কেউ এসব অনুষ্ঠানে কার্ড করে না যতদূর জানি । আমরাই প্রথম ফ্ল্যাছটে উঠব বলে কার্ড করে মানুষকে দাওয়াত করছি। বুঝলেন ভাবি। একসাথে আমরা এই বাসায় বহুদিন থেকেছি। তাই আপনার প্রতি আমার ভালোবাসা অনেক বেশি আর সেই জন্য ভাইকে নিয়ে আপনি অবশ্যেই আসবেন ভাবি। এটা কিন্তু আমার অনুরোধ। একসাথে অনেক কথা বলে তবেই চুপ করল নিলা।
নিলার কথা শুনে এবার রিনা বলল,স্যরি ভাবি। মনে না থাকার জন্য আমি লজ্জিত । আমরা অবশ্যরই যাওয়ার চেষ্টা করব। আপনি বসুন আমি আপনার জন্য চা করে নিয়ে আসি।
রিনার কথা শুনে নিলা বলল, না ভাবি উঠলাম আজ আর চা খেতে পারবো না। আপনারা আসবেন আর সে দিন না হয় আমরা সবা্ই মিলে একসাথে স্পেশাল চা খাব। এতটুকু বলে নিলা উঠে চলে গেল।
রিনা শুধু বলল,জ্বি আচ্ছা ভাবি।
নিলার আগমনে আবার রিনার মনটা অস্থির হয়ে উঠল। নিলা কে দেখলে নিজেকে খুব অসহায মনে হয় রিনাকে নিজের কাছে। কেননা একই রকম সরকারি চাকুরি করে তার স্বামী রাজিনও,কিন্তু কোথায় কার অবস্থান। তার মনে কিছুতেই সে বুঝ দিতে পারে । মেয়ে মানুষের মন বৈধ অবৈধ কিছুই কি বুঝতে চায়। তারা চায় অন্যের চেয়ে সে কতটুকু অর্থ সম্পদে বড় তার হিসেব কষতে। সেখানে বৈধ অবৈধ তাদের কাছে কোনো ধর্তব্যে বিষয় নয়।
সে যাই হোক রিনা আবার রাতে তার স্বামীর ওপরে এক চোট ঝাড়া শুরু করল।
রাজিন বুঝে নিল আবার নিলা ভাবি তার সংসারে এসে হানা দিয়ে গেছে।তাই সে আগের মতোই রাগ না করে আস্তে করে বলল,তা নিলা ভাবি কখন এসেছিল আবার আমার অযোগ্যরতার প্রমাণ দিতে।
হয়েছে হয়েছে নিজে কতটা যে যোগ্যে তা আমরা সবাই জানি।রিনা রাজিনের কথা শুনে আরো বেশি রেগে গিয়ে বলল।
কি জানো আমি একটু শুনে দেখি।রাজিন আস্তে করে আবার বলল।
আমার মাথা কিন্তু এমনিতেই গরম আছে আরো বেশি গরম করে দিও না তুমি। রিনা এবার রাজিনকে বেশ কঠোরভাবে বলল।
রাজিন বুঝল পরিস্থিতি বেশি একটা ভালো না। মন বোধহয় বেশিই খারাপ হয়ে আছে রিনার তাই সে চুপ করে রইল।আর বেশি কোনো কথা বলার ইচ্ছা তার হলো না।
কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর রিনা বলল,কি চুপ করে আছেন যে সাহেব।নিজের ক্ষমতা জাহির করবেন না।
রিনার কথার জবাবে রাজিন বিষয় পাল্টে বলল,আমার এখন ক্ষুধা পেয়েছে।ভালো হয় যদি তুমি খেতে দাও।সেই কখন অফিস থেকে এসেছি। কিছুই তো খেতে দিলে না।
রাজিনের কথা শুনে রিনার মনটা গলে গেল।সে সব ভুলে গেল। বলল,খেতে আসো আমি খাবার টেবিলে খাবার দিচ্ছি । আর পারোই তো একটা কাজ, অফিস খাওয়া আর ঘুম।
রাজিন আর কিছু বলল না। সে খাবার টেবিলে গিয়ে খেতে বসে গেল। বাচ্চারাও তার পথ ধরল।
রাতের খাবার সবসময় তারা একসাথে খেয়ে থাকে।সুতরাং রিনাও তাদের সাথে বসে গেল।খেতে খেতে রিনা আবার রাজিনকে উদ্দেশ্যএ করে বলল, নিলা ভাবি এসেছিল বুঝেছ।
হুম তাতো জানি ।রাজিন জবাবে বলল।
সে আমাদের কে দাওয়াত দিয়ে গেছে। পরশু আমরা সবাই তাদের নতুন ফ্ল্যাজটে যাব।কিছু তো আমাদেরকে নিয়ে যেতে হবে।কি বলো।রিনা তার স্বামীর কাছে জানতে চাইল।
রিনার কথার ধরনেই রাজিন বুঝে গেল তার পকেট থেকে কিছু টাকা শেষ হতে যাচ্ছে মানে রিনা দাওয়াত মিস করতে রাজি নয়।আর সেরকমটা হলে রিনা নিজে থেকেই বলত এখন যাওয়ার দরকার নাই।সুতরাং রাজিনও পজেটিভ ভাবে বলল,আচ্ছা ঠিক আছে তুমি কি গিফট দিতে চাচ্ছ ?
আমার মনে হয় ভাবিকে একটা শাড়ি কিনে দিলেই সে বেশি খুশি হবে। রিনা বলল।
ঠিক আছে তুমি যেমনটা চাও।আমার কোনো আপত্তি নাই।রাজিন বউকে বলল এই কথা আর মনে মনে বলল,আমার কথা তো তুমি শুনবে না সুতরাং আমি সংসারে অশান্তি চাই না তাই তোমার কথাই আমি মেনে নিচ্ছি ।
আর মনে মনে রাজিন বেজায় খুশি হলো।কারণ নিলা ভাবি তাদের কাছ থেকে দূরে গিয়ে ফ্ল্যানট কিনেছে সুতরাং রিনাকে নানান ধরণের কথা শোনাবার মতো লোক আর কাছাকাছি কেউ নেই।অতএব রাজিনের সংসার থেকে অশান্তি কিছুটা হলেও দূর হতে যাচ্ছে। সুতরাং একটা গিফট দিতে রাজিনের কোনো আপত্তি নেই। প্রয়োজন হলে সে দুটো গিফট দিতেও রাজি আছে।
খাওয়া শেষ করতে করতে আর সেটাই সে রিনাকে বলল এভাবে,ভাবছি তোমাকে ও একটা থ্রি পিস কিম্বা শাড়ি কিনে দেব।অনেকদিন হয় তোমাকেও কিছু দেওয়া হয়নি।
রাজিনের কথা শুনে রিনা বলল,হয়েছে হয়েছে নিজের হাতে নাকি এখন বেশি টাকা নেই। আমাকে পরে দিলেও চলবে। কাল নিলা ভাবির জন্যে একটা শাড়ি কিনে নিয়ে এসো।
আচ্ছা ঠিক আছে। রিনার কথার জবাবে রাজিন এতটুকু বলে উঠে চলে গেল।
রাজিন নিজের মনের ভাবনা অনুযায়ি পরের দিন একটা শাড়ি আর রিনার জন্যগ একটা থ্রি পিস কিনে নিল।সে রিনা কে খুব ভালোবাসে আর তাই জানে রিনাকে অল্পতেই কিভাবে খুশি রাখা যায়। তার আয় হিসেব করা তবু সে অল্প তেই সংসারের সবাইকে খুশি রাখার চেষ্টা করে।
নিজের জন্যর থ্রিপিস দেখে রিনা মনে মনে খুশি হলো।রাজিনের ভালোবাসায় সে মুগ্ধ।তবুও সে তার রাগ দেখিয়ে বলল,তোমার হাতে নাকি এখন খুব বেশি একটা টাকা নাই তবু ও আমার জন্য। কিনতে গেলে কেন।শুধু ভাবির জন্যহ কিনলেই তো হতো।
রাজিন কথা ঘুরিয়ে দিয়ে বলল,কালকে আমরা কখন রওনা হবো বলো ,সে ভাবে প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে তো।
আমরা সকালে নাস্তা করেই বের হবো। রিনা বলে উঠল।
আচ্ছা ঠিক আছে।তাহলে আমরা সবাই কালকের জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুতি নিয়ে রাখি। রাজিন এতটুকু বলে বাথরুমে প্রবেশ করল।
সকালবেলা নাস্তা করেই রিনা পরিবারের সবাইকে নিয়ে নিলা ভাবির ফ্ল্যাইট বাসার উদ্দেশ্যেত রওনা হয়ে গেল।দু ‘ ঘন্টার মধ্যেরই তারা নিলা ভাবির বাসায় পৌঁছে গেল। নিলা রিনা কে স্ব পরিবারে দেখে যারপরনাই খুশি হলো। বাসা ভর্তি ফার্নিচার দেখে রিনার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল।এত এত সুন্দর জিনিস নিলা জোগাড় করেছে যা দেখলে যে কোনো নারীর চোখ কপালে উঠে যাবে। রিনার ক্ষেত্রেও তাই হলো। সে তার স্বামী রাজিনকে পুরো বাসা ঘুরিয়ে একটা একটা করে সব কিছু দেখাল।
সারাদিন রিনাদের অনেক ভালো কাটল।দুপুরে খাওয়ার পর তারা আবার বাসায় ফিরে আসল। বেড়াতে সবার ভালো লাগে রিনার আর তার ছেলে মেয়েরও খুব ভালো লেগেছে।রাজিনেরও ভালো লেগেছে তবে তার মনটা খুব ছটফট করে কারণ কোনো ধনবান লোকের বাসায় গেলে নিজেকে তার খুব অসহায় মনে হয়।কিন্তু তার তো কিছু করার নেই সে তো নিজের শক্তির বাইরে গিয়ে কিছু করতে পারবে না।
বাসায় ফিরে সবাই বিশ্রাম করে নিল।
সন্ধ্যেইর পরে রিনা এবার রাজিনের সাথে কথা বলার জন্যর এক কাপ চা নিয়ে এসে তার সামনে দাঁড়াল। রাজিন বুঝে গেল আজ তাকে অনেক কথা শুনতে হবে।কারণ রিনা আজ নিলা ভাবির বাসায় ঘুরে এসেছে।
রাজিন তাই রিনাকে শান্ত রাখার জন্য বলল, ও চা নিয়ে এসেছ,তুমি না মনের কথা বুঝতে পারো আমার না এখন এক কাপ চা খেতে খুব ইচ্ছে করছিল।অনেক ধন্যনবাদ।
হয়েছে হয়েছে। আর ধন্য বাদ দিতে হবে না।এই নাও চা টা খাও। আমার মনটা আজ খুবই খারাপ।রিনা তার মন খারাপের কথা রাজিনকে বলল।
রাজিন কিছুটা বুঝতে পেরেছে।তারপরও রিনার কাছে জানতে চাইল,কেন কি হয়েছে ?
দেখলে তো নিলা ভাবিরা কি সুন্দর ফ্ল্যাছট কিনেছে আর বাসা ভর্তি কত কত সুন্দর সুন্দর জিনিসপত্র কিনে সাজিয়ে রেখেছে আর আমরা কি করতে পেরেছি, তুমি ই বলো। রিনা তার মনের দুঃখের কথা খুলে বলল তার স্বামীর কাছে।
রাজিন এবার রিনাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল, দেখ মনের সুখই আসল সুখ। আমাদের মাঝে সুখের কোনো কমতি নেই শুধু শুধু মন খারাপ করো না।আর আসবাব পত্রের মাঝে কোনো সুখ নেই। আমাদের সাধ্যেের বাইরে আমরা তো কিছু করতে পারবো না তাই না।
রাজিনের কথার জবাবে রিনা বলল,সে যাই হোক আমি অত কিছু বুঝতে চাই না। সবাই পারে শুধু তুমিই পারো না।আমি আর তোমার কথা শুনতে চাই না।আমার ও ঐ রকম বাসা চাই । আর সুন্দর সুন্দর জিনিসপত্র আমার ঘরে দেখতে চাই।
এবার রাজিন রিনাকে বলল,দেখ এত লোভ করো না।আর বেশি লোভ করা ভালো না। নিজেকে সামলাও।বেশি লোভ করলে তার ফলাফল ভালো হয় না।
আচ্ছা থাকো তুমি তোমার সততা নিয়ে দেখি তার ফল কি হয়। রিনা রাজিনের ওপর রাগ করে তার সামনে থেকে চলে গেল।
রাজিন নিশ্চুপ হয়ে রইল।
এরপর থেকে রিনা শুধু মনমরা হয়ে পরে রইল। রাজিন তাকে সবসময় বোঝানোর চেষ্টা করতে লাগল।কিন্তু তাতে তার মন কিছুতেই গলল না।কি আর করা এভাবেই রাজিন আর রিনার সংসার জীবন চলতে লাগল।
এইভাবে দুই মাস পেরিয়ে গেল।একদিন রাজিন অফিস থেকে হাতে একটা খবরের কাগজ নিয়ে এসে রিনাকে ডাকাডাকি করতে লাগল।
রিনা তার সামনে এসে জিগ্যেমস করল,কি হয়েছে এত জোড়সে ডাকাডাকি করছ কেন ?
জবাবে রাজিন বলল,সাধে কি আর ডাকাডাকি করছি। এই দেখ আজকের খবরের কাগজে তোমার নিলা ভাবিদের খবর ছাপা হয়েছে।এই বলে রাজিন রিনার কাছে খবরের কাগজ টা দিল।
কই দেখি কি খবর ? রিনা রাজিনের হাত থেকে খবরের কাগজ টা হাতে নিয়ে পড়তে লাগল।
রাজিন তাকে খবরটি দেখিয়ে দিল। তাতে লেখা ঘুষ নিতে গিয়ে সরকারি কর্মকর্তা গ্রেফতার। অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছে সরকারি কর্মকর্তা মিজানুর রহমান।
শিরোনাম দেখে পুরো বিবরণ এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলল রিনা । সবকিছু পড়ে নিলা ভাবির জন্য তার খুব কষ্ট হলো। বেচারি স্বামীর সাথে নিজেও জেলে গেল। লোভ করে তারা এত সম্পত্তি গড়ে তুলল কিন্তু কিছুই ধরে রাখতে পারল না। অবৈধ সম্পত্তি হিসেবে সবকিছু সরকার নিয়ে নিল। হায় নিলা ভাবি সবকিছু হারাল শেষে । খুবই দুঃখ লাগল রিনার মনে। কিন্তু যা সত্য তাতো সে উপেক্ষা করতে পারবে না।
রিনা হতাশ হয়ে বসে রইল। রাজিন ফ্রেশ হয়ে তার কাছে এসে বলল, কি এক কাপ চা হবে না।
অবশ্যুই হবে ।তুমি একটু সময় অপেক্ষা করো আমি চা নিয়ে আসছি।এই বলে রিনা রান্না ঘরে চলে গেল। তার মনটা এখন অনেকটা ভারাক্রান্ত আবার একদিক থেকে অনেক হালকা।
চা খেতে খেতে রিনার কাছে রাজিন জানতে চাইল, কি বলবে এখন ,দেখলে তো লোভ করার ফল ভালো হয় না।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রিনা বলল, হুম বুঝলাম । তুমিই ঠিক আছো।আসলে আমরা সম্পদের মোহে অন্ধ হয়ে যাই তাই বুঝতে পারিনা,অলীক স্বপ্নের পিছনে ছুটে চলি।যা এক মায়া মোহ,এক বিশাল ভুল । আমি আর কোনো দিন লোভ করবো না।তোমার ভালোবাসাই আমার জন্য। সবকিছু ।
রিনার কথা শুনে রাজিন মুচকি হাসি দিল।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

অলিক স্বপ্নের মায়া মোহে মানুষ নিজেকে হারিয়ে ফেলে তারই একটি গল্প বিবৃত হয়েছে এখানে। যা বিষয়ের সাথে সামঞ্জস‌্যপূর্ণ।

২২ জানুয়ারী - ২০১৭ গল্প/কবিতা: ১১৬ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪