সন্ধ্যাবেলার গল্প

প্রেম (ফেব্রুয়ারী ২০১৭)

দিপণ জুবায়ের
  • ১২
ওরা দুজন মুখোমুখি বসে আছে । বহুদিন পর আজ দেখা হলো দুজনের । ঠিক এই দিনটার জন্য ওরা অপেক্ষা করে ছিল এতদিন । ওরা পার্কের যে কোণটাতে বসে আছে সেখানটা খুব নির্জন । ওদের দুজনেরই এই নির্জনতাটার খুব দরকার ছিল । ওদের মুখে কোন কথা নেই । মনের ভেতর অনেক কথা জমে থাকলে কি এরকম হয় ? হবে হয়তবা । একটা নিরেট জড়তা ওদেরকে ঘিরে ধরেছে । থাক জড়তা , তবু তো পাশাপাশি বসে আছে ওরা । এটাই কি অনেক বড় নয় ? হ্যা , ওদের জন্য এটা অনেক বড় ব্যাপার , অন্তত এতদিন পর । ওদের সামনে একটা আধমরা দীঘি । এই দীঘিতে হয়ত একসময় বুকভরা জল ছিল । যেমনটা ছিল ওদের বুকের মধ্যে । বাহ , এই দীঘিটার সাথে তো অদ্ভুত মিল আছে আমাদের ! কথাটা ভেবে বেশ অবাক হয় ছেলেটি । ও একবার তিথীর দিকে তাকায় । অবশেষে তিথী নিরবতা ভাঙে
তুমি কিছু বলবে না রাব্বি ?
তুমি বল, আমি শুনি । আমার কেন যেন কোন কথা আসছে না মুখে ।
রাব্বি তিথীর দিকে একটানা চেয়ে থাকে । তিথী কি আগের মতই আছে ? বোঝা যাচ্ছে না । তবে একটু মোটা হয়েছে । মুখেও একটু লাবণ্য এসেছে বোধহয় । তাহলে তিথী কি খুব সুখে আছে ? মানুষ সুখে থাকলেইতো মুখে এরকম লাবণ্য আসে । রাব্বির কি একটু একটু হিংসে হচ্ছে ? হিংসে হতেই পারে । তাকে ছাড়া তিথী কেন সুখে থাকবে ? তিথী সামনের দীঘিটার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,
আমি জানতাম , একদিন ঠিক দেখা হবে আমাদের ।
সত্যি ? তুমি এতদিন বিশ্বাস করেছিলে -একদিন আমি আসবই ? এখনও আমাকে এতটা বিশ্বাস কর ?
আমি তোমাকে কখনও অবিশ্বাস করিনি ।
রাব্বি মুখ নিচু করে বলল ,
জান , আমি অনেক ভেবে দেখেছি , আমি কোনভাবেই তোমার যোগ্য নই ।
এটা তোমার ভাবনার ভুল । যদি সত্যি তাই হত , তবে তোমাকে এতটা ভালবাসতে পারতাম না ।
আচ্ছা , তুমি কেন আমাকে এতটা ভালবেসেছিলে ? রাব্বি তিথীর মুখের দিকে তাকিয়ে জিগ্যেস করে ।
জানি না , কখনও হিসেব করিনি ।
ঠিক বলেছ । হিসেব করলে আমাকে এতটা ভালবাসতে পারতে না ।
তিথী দিঘীর দিকে চেয়ে থেকেই বলল ,
আমার কষ্টটা কি জান ? আমি শুধু একাই ভালবেসেছিলাম , একজন পাথরের মত মানুষকে ।
রাব্বির বুকের মধ্যে একটা শক্ত মোচড় দিয়ে ওঠে । ও মুখটাকে আরও একটুখানি নিচু করে বলল ,
কতদিন ভেবেছি তোমার সামনে এসে একবার দাঁড়াবো । কিন্তু পারিনি – লজ্জায়।
লজ্জা ? হাসালে , পাথরের আবার লজ্জা ! তিথীর কন্ঠটাকে কি কান্নাজড়ানো মনে হলো ? রাব্বির হঠাৎ খুব লজ্জা করে ।তিথীর সাথে ওরকম একটা বাজে ব্যবহার করা মোটেই উচিত হয়নি । কিন্তু এখন বুঝে আর কি লাভ । রাব্বি বলল ,Ñতুমি খুব বেশী কষ্ট পেয়েছিলে , না ?
তোমার কি মনে হয় ?
বললে তো , আমি পাথর । পাথরের কি কারও কষ্ট বুঝবার ক্ষমতা থাকে ।
বাহ্ , চমৎকার বললে । কবিতার মতো কথা । কথা তুমি বরাবরই ভাল বলতে পার । ঐ কথা শুনেই তো মুগ্ধ হয়েছিলাম ।
তুমি চলে যাওয়ার পর থেকে বারবার মনে হয় কোনদিন সুখী হতে পারবো না ।
তাই নাকি ? ধন্য হলাম ।
- আমরা কি আবার এক হতে পারি না ? রাব্বি সাহস করে কথাটা বলে ফেললো ।
সেটা কি সম্ভব ? গত দু বছরে তুমি কি একবারও আমার খোঁজ নিয়েছো ?
না , নিতে চেয়েছি কিন্তু পারিনি । ভেতর থেকে একটা বাধা সামনে এসে দাঁড়াতো বারবার ।
তিথী এবার রাব্বির দিকে তাকিয়ে বলল ,
আমি স্বপ্ন দেখতে ভুলে গেছি । এখন আর স্বপ্ন দেখতে পারি না ।
কিন্তু আমিও তো তোমাকে একই প্রশ্ন করতে পারি । তুমি আমার কতটুকু খোঁজ নিয়েছে ?
বাদ দাও। তুমি কি এখনও সিগারেট খাও ? সরি , তোমার ব্যক্তিগত ব্যাপারে আমার তো কথা বলবার অধিকার নেই ।
সেই কতদিন আগে রাগ করে একটা কথা বলেছিলাম । তুমি এখনও মনে রেখেছ?
কথাটা মনে রাখবার মত কথাই ছিল । তিথীর মুখটা একটু গম্ভীর হলো । সেই পুরনো রাগটা আবার ফিরে এসেছে বোধহয় ।
রাব্বি বলল,Ñ ইদানিং তোমার কথা খুব ভাবি । প্রায়ই সব সময় । জানি তোমার হাসি পাচ্ছে। তুমি বিশ্বাস কর বা না কর , আমাকে আজ কিছু কথা বলতেই হবে । দিন দিন নিজের কাছে খুব ছোট হয়ে যাচ্ছি । নিজের কাছে ছোট হয়ে থাকার মত কষ্টের ব্যাপার বোধহয় আর নেই । অনুতাপ মানুষকে শেষ করে দেয় । একটু একটু করে পুড়িয়ে ছাই করে দেয় ।
কতবার তোমার কাছে চিঠি লিখেছি , আবার ছিঁড়ে ফেলেছি । ওই যে বললাম না , ভেতর থেকে কে যেন বারবার বাধা দেয় । আমি বোধহয় খুব ভিতু । এ পর্যন্ত বলে ও হাফ ছাড়ে । আজ বড় শ্বাসকষ্ট হচ্ছে ।
তিথী বলল,Ñ আমি কখনও তোমার ওপর রাগ করে থাকতে পারিনি । কেন জানি না ? তোমার ওপর রাগতে গেলেই নিজের চোখ ভিজে যায় ।
রাব্বি একটু সময় নিয়ে বলে ,
এখন মনে হয় , সব হারিয়ে ফেলেছি । থাকবার মতো কিছুই আমার নেই । তোমার কাছে কিছু চাইবো সেই অধিকারটুকুও বোধহয় আমার নেই ।
থাক না । আজ ওসব কথা থাক । কতদিন পর আজ মুখোমুখি বসে আছি আমরা। আমার এখনও মনে হচ্ছে , এটা স্বপ্ন । হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে দেখবো তুমি নেই । তোমাকে একটা অনুরোধ করতে পারি ?
হুম ,বলো ।
তোমার পড়াশুনাটা ঠিকঠাক করো । আমি কখনও তোমার হেরে যাওয়া মুখ দেখতে চাইনা । তোমাকে জিততে হবে ।
জিতে গেলেই কি সব হয়ে যায় ? সবাই কি জিততে পারে ।
আমি তো তোমার কাছে সামান্য কেউ । তবু আমার অনুরোধটা রাখবার চেষ্টা করো । হয়তো তোমার জীবনে অনেক ভাল কেউ আসবে দেখ ।
তুমি কিন্তু প্রথম থেকেই আমার কথা এড়িয়ে যাচ্ছো । আমি জানতে চাচ্ছি , তুমি কি এখনও আমাকে ভালোবাসো ? রাব্বি আবার জিগ্যেস করলো তিথীকে ।
কি মনে হয় তোমার ?
প্লিজ, আমাকে প্রশ্ন করো না । আমার প্রশ্নের উত্তর দাও । আমি একটুও ভালো নেই । তোমাকে ছাড়া খুব একা হয়ে গেছি ।
আমাকে নিয়েও কি কোনদিন একটুও ভালো ছিলে ?
তুমি যখন কাছে ছিলে তখন বুঝিনি । এখন বুঝি, তুমি আমার কতটা জুড়ে ছিলে।
থাক ওসব কথা , এখনও কবিতা লেখ ?
নাহ্ ।
কেন ?
এখন আর লিখতে পারি না । ইচ্ছেও হয় না ।
লেখাটা ছাড়লে কেন ? বেশ তো লিখতে ।
লিখে আর কি হবে বলো ? লিখতাম তো তোমাকে শোনাবার জন্য । এখন তুমি নেই -কবিতাও নেই ।
আমার থেকে ভালো একজন শ্রোতা খুঁজে নাও । তুমি লেখাটা ছেড়ে দিও না । জান, তোমার সেই কবিতাটা এখনও আমার মুখস্ত , ঐ যেটা আমার জম্মদিনে দিয়েছিল ।
রাব্বি তিথীর দিকে পূর্ণদৃষ্টিতে তাকায় , ওর যেন বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে । তারপর কিছুটা অভিমানি কন্ঠে বলে,
কবিতা মুখস্ত রেখেছো কিন্তু কবিকে মনে রাখোনি ।
খুব মন পড়তে শিখেছো তাই না ? শোন বলছি …..

ছেলেটি ঃ জান, ইদানিং প্রায়ই মনে হয়, বেঁচে থাকা অর্থহীন ।কয়েকবার সুইসাইড করার কথা মনে হয়েছে ।ভিতু বলে পারিনি ।
মেয়েটি ঃ ওমা, কেন ? সুইসাইড করা কি খুব বীরত্বের কাজ ?
ছেলেটি ঃ জানি না । আমার কিছু ভাল লাগে না । সব অর্থহীন মনে হয় ।
মেয়েটি ঃ তুমি নিজেকে ভালোবাসোনা । যারা নিজেকে ভালোবাসেনা তারা কি অন্যকে ভালোবাসতে পারে বল ?
ছেলেটি ঃ হয়তো ঠিক বলেছো । আসলেই আমি নিজেকে একটুও ভালোবাসিনা । তুমি শেখাবে ?
মেয়েটি ঃ কাঙালের কাছে ভিক্ষা চাইতে নেই । আমি আর এখন স্বপ্ন দেখতে পারি না ।
ক্ষমা করো । দূর থেকে তোমার ভালো চাইবো সারাজীবন । আমাদের দূরে থাকাই ভালো।
সবাই কাছে আসতে পারে না ।
ছেলেটি ঃ তুমি কিছুতেই আমার অপরাধটা ভুলতে পারবে না ?
মেয়েটি ঃ আমি ভালোবাসতে পারিনা । যদি পারতাম, তবে ভালোবেসে এত আঘাত কেন পেলাম ?
ছেলেটি ঃ অভিমানের কথা বলছ ?
মেয়েটি ঃ নাহ্ । সত্যি কথাটা বললাম । তুমি এখনও আগের মতো রাত জাগো ?
ছেলেটি ঃ হুম । আমার ঘুম আসেনা । মাঝেমাঝে মনে হয়, আমি বোধহয় পাগল হয়ে যাচ্ছি ।
মেয়েটি ঃ ওসব বাদ দাও । তুমি কিন্তু এখনো একবারও হাসোনি । কতদিন তোমার হাসি দেখি না । একটু হাস প্লিজ ।
ছেলেটির মুখে কষ্টজড়ানো একটু হাসি দেখা দিয়েই আবার মিলিয়ে গেল ।
ছেলেটি ঃ খুশী ?
মেয়েটি ঃ নাহ্ , তোমার হাসি দেখে আমার কান্না পাচ্ছে ।
ছেলেটি ঃ সত্যি করে বলো তো , আমরা কি আবার কাছে আসতে পারিনা ?
মেয়েটি ঃ নাহ্ , পারিনা । আমি এখন শুধুই আমি । একলা আমি , অন্য কারো হতে পারবো না ।
ছেলেটি ঃ আমি জানি , একজীবনে মানুষ তার সব ভুল শুধরে নিতে পারেনা । তোমার সাথে
যে অন্যায় আমি করেছি , তার ক্ষমা নেই ।
মেয়েটি ঃ তোমার কি খুব বেশী মন খারাপ ? যদি আমার জন্য মন খারাপ হয়ে থাকে তবে ক্ষমা করো ।
ছেলেটি ঃ ফরমালিটি করছো ?
মেয়েটি ঃ একটুও না । তোমার মন খারাপ কেন ?
ছেলেটি ঃ ও কিছু না । মানুষ হয়ে জন্মেছি মনতো একটু খারাপ হবেই ।
মেয়েটি ঃ চল, উঠি । অনেকক্ষণ সন্ধ্যা নেমেছে । একটু পরেই হিম পড়বে ।
ছেলেটি ঃ হ্যা, চল । আবার কবে দেখা হবে ?
মেয়েটি ঃ জানি না । হয়তো হবে, কিংবা না । চল উঠি ।
ওরা দুজন হাঁটতে শুরু করলো । এত কাছাকাছি তবু যেন আজ ওরা যোজন- যোজন দূরে।
এই দূরত্ব কমাবার শক্তি ওদের নেই ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
গোবিন্দ বীন ভাল লাগল,ভোট রেখে গেলাম ।পাতায় আমন্ত্রন রইল।
ভালো লাগেনি ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭
Ahmed Ehsan Sumon ami likhote parina tobu likhi
ভালো লাগেনি ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭
এম ইমন ইসলাম ভালো গল্প। ভোট দেয়া যায়।
ভালো লাগেনি ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭
আহা রুবন অর্ধেক পড়ে হাল ছেড়ে দিলাম। কোনটা কার উক্তি বার বার পেঁচিয়ে যাচ্ছে।
ভালো লাগেনি ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭
জসীম উদ্দীন মুহম্মদ আরও চাই এমন ----- সুন্দর হয়েছে।।
ভালো লাগেনি ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭
আহমাদ সা-জিদ (উদাসকবি) bhalo.........................best of luck
ভালো লাগেনি ২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

০১ জানুয়ারী - ২০১৭ গল্প/কবিতা: ১ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪