এক.
ইচ্ছেগুলো এখনো চপলা অতীত আর স্বপ্নগুলো বিভৎসমুখ! সেই অভিমান নিয়ে আজো সুখ নামের অসুখে ভেসে চলছি। হাসি ঘুমোট পড়ে গেছে, জানা নেই দিনের হিসেবটা। মুখোশে ঢাকা একটা হাসি কেবলি একটা অভিনয়, কেবলি একটা রূপকথার চন্দ্রবিন্দু ছাড়া আর কিছু নয়। সেই দিনটাতে চলে যাওয়া নীলার অপেক্ষায় প্রতিটা সময় আমাকে গুণতে হয়! হয় তো স্মৃতির পাতা, নয় তো ডায়েরির বেহিসাবি খালী পাতা বরাবর ভরাট হয়ে যাওয়ার মতো। নির্ঘুম চোখগুলো অসুখের মতো। নীলা চলে যাওয়ার সময় শুধু বলেছিলে___
'সব অপবাদের সূত্র ধরে আমিও তোমাকে জ্বালাতে পারতাম, কিন্তু কেউ কাউকে জ্বালিয়ে সুখী হতে পারে না। তবে সুখটা বিধাতার কাছে। তবুও তোমাকে জ্বালাইনি! একটা মিথ্যে অপবাদ শুধু একটা অপরাধ নয়, অন্ধকার জগতের নীরব একটা শব্দ, মনে হয় সেটি জীবনের শেষ একটা পরিণতি। তোমার দেওয়া জাগিয়ে তোলা শব্দে অবধি শেষ যদি থেকে যায় কিংবা তোমার বুকে ঠাঁই নিই একদিকে তোমার সাংসারিক জীবনটা তোমার জন্য হয়ে যাবে কঠিন বেমানান, অন্যদিকে ঠাঁই নেওয়ার ফলে তোমার মা বাবা তোমাকর নিয়ে দেখা স্বপ্নটা মুহূর্তে তছনছ হয়ে যাবে! তারচেয়ে এ রাতে তোমার ভালো থাকার এক একটা শব্দ রেখে গেছি৷ ভালো থেকো!"
প্রতিবেশির কাছে নীলা চলে যাওয়ার এক উদ্ভুদ্ধ শব্দ ছড়িয়ে পড়তে লাগলো। সময় দীর্ঘ না পেরুতেই কানে সেই শব্দটি প্রতিবেশির মাধ্যমে চলে আসলো। অপেক্ষার উপেক্ষা না করে বাড়ি ফিরলাম। চোখের সামনে কেমন যেন একটা মহাশূন্য পড়ে আছে! আনাচে কানাচে নীলার কোনো শব্দ খুঁজে পাইনি! পরক্ষনে চোখের সামনে লিখে যাওয়া ডায়েরির মেসেজটা খুঁজে পেলাম। চোখের কোণে ফোঁটা ফোঁটা জল চলে আসলো। যে একটা সংসার বুনেছে, প্রেম বুনেছে, জমাট বাঁধা ভালোবাসার শহরে ভালোবাসার মুষ্টিমেয় ঘ্রাণ ছড়িয়ে দিয়েছে! যাকে কখনো নীরবতার সাথে সংগোপন করতে দেখিনি, দুচোখের কোণে জল দেখিনি, কখনো বিন্দুমাত্র অভিমান জমাতেও দেখিনি___আর তাকেই এতোটা ভালোবেসেছি। সে তুমি চলে গেলে নীলা!
দুই.
প্রতিটা নারীর প্রেম, ভালোবাসা বোঝা খুব সহজ। হোক সেটা বাস্তব কিংবা ছলনা অথবা অভিনয়। তবে প্রতিটা নারীর নীরবতা, অভিমান বোঝা অনেকটা কঠিন। স্বল্পবয়সী মেয়ে নীলার বিয়ে হয়েছে এই তো গুটিকয়েক মাস। হাসি লেগেই থাকতো। আমার প্রিয় রাণী। যদিও আমি কোনো রাজা নয়, তবে প্রতিটা পুরুষ তার স্ত্রীকে ভালোবেসে যে রাণী বলে না আমি তা বিশ্বাস করি না। কি না ছিল তার 'মুঠোমুঠো হাসি, মায়াবী মুখে মায়াবী চোখ, ঠোঁট যেন রাঙা গোলাপ।' প্রতিটা নারীকে আল্লাহ অসাধারণ রূপ দিয়ে সৃষ্টি করেছেন৷ যে বলে তার স্ত্রী সুন্দর নয়, আমি বিশ্বাস করি না। আইরনে উপরে সাদা প্লাস্টিক রঙ থাকলেও ভিতরে তার গুণ অবয়ব আগুন ছাড়া গলানো যায় না! ঠিক নারীও____তার মন, তার গুণ তার হাসি অনেক দামী। যে নারী মা হতে জানে, সে নারী তাঁর সন্তানের কাছে যতোটা দামী বরাবর সে ততোটা দামী। আমার কাছেও নীলা অনেক দামী। তবে আমার পরিবারের কাছে সে যেন একটা বিভৎস মুখ, একটা কঠিন পাথরে গড়া। নারী থাপ্পড় খেতে পারে সহজে তবে চৌকস শব্দগুলো তাকে আগুনে জ্বালাতে সহযোগিতা করে৷ যাকে শিখিয়ে দিতে পারবে না, যাকে ভুলগুলো শুধরিয়ে দিতে পারবে না তাকে ভালোবাসার অধিকার কারো নেই। ঠিক তেমনি তাকে একটা সন্তানের স্ত্রী করেও বাড়ি আনার অধিকার নেই। পনের পেরুতে না পেরুতেই যে মেয়েটিকে আমার সংসারে আমার স্ত্রী করে বাবা-মা নিয়ে এসেছেন, আবার ষোল হতে না হতেই সে মেয়েটি বাড়ির গন্ডি পেরিয়ে দূর-বহুদূর। খোঁজ নেই। নিস্তব্ধ হয়ে গেছে তার এক একটি কণ্ঠস্বর। বোনের কুরটনা, মায়ের মিথ্যা অপবাদের সাথে আঁজলা ভরা সাংসারিকে জীবনে নীলার স্বপ্ন আর স্বপ্নতে জেগে উঠতে পারলো না। কখনো দুটো অভিমানিত বাক্য সে আমাকে উপহার দেয়নি। যে নারীর মুখে হাসি সে নারীর অন্তরে খুব কষ্টের স্রোতধারা থাকে তা আমরা কেউ অবিশ্বাস করি না। তবে সে হাসির কারণে তার কষ্টের কথাগুলো তুলে আনা অনেকটা কষ্ট হয়ে দাঁড়ায়! হয় তো গুণী নারীরা সংসারে ঝামেলা না বাঁধার কারণে অন্তরে জমাট বাঁধা তুষের অনল নিয়ে মুখে কুণ্ঠিত প্রকাশ করে না। আমার নীলাও তাই। বরাবর তাই হয়। মায়ের নামে কোনো সন্তান মিথ্যা রটনা করতে পারে না। কারণ মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত। আমারো তাই৷ প্রতিবেশিরা তাই বলেছিল৷ তবুও আমি দীর্ঘ এই দীঘল পথ নীলার অপেক্ষায় থাকতে লাগলাম।
তিন.
নীলার দৃষ্টিবিভ্রম থেকে চমৎকার একটা দায়বদ্ধতা বেড়িয়ে এসেছে। যদি সে আমার পরিবারের কাছে থাকতো তাহলে পরিবারের কাছে সে হয়ে যেত একটা বিষের কূপ! যেখানে নীলার জন্য আমার জীবনটা টালমাটাল হয়ে যেত। অন্যদিকে নীলার কষ্ট এবং সহ্য করতে না পেরে যখন দূরে কোথাও নীলাকে নিয়ে চলে যেতাম, হয় তো সেখান থেকে আমার পিতামাতাকে দেখা আমার জন্য খুব কষ্টসাধ্য হয়ে যেত। রাগে-বিরাগে, অভিমানে, স্ত্রী ও আমার প্রতি কঠিন যন্ত্রণার কথা ভুলতে না পেরে আমিও হয় তো বাড়িতে আর ফিরতাম না। সেই দিকটার চিন্তা করে নীলা নিজেই সরে গেল। তার জীবনে অন্ধকার বয়ে আসুক, তবুও যাতে মা বাবা কষ্ট না পায়। কারণ দুদিনের ভালোবাসার জন্য চিরদিনের মা-বাবাকে যাতে হারাতে না হয়। তার অপ্রকাশিত বাক্যের মাঝে আমার এ দিকটা চিরচেনা।
কোথাও বাকী রাখিনি আমি নীলাকে খুঁজিনি। মা-বাবা, ভাই-বোন, প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন যাকেই জিজ্ঞেস করেছিলাম না কেন, নিশ্চুপ ছাড়া কোন উত্তর ছিল না। যে পুরুষ নারীকে একবার উজাড় করে ভালোবেসেছে আমি বিশ্বাস করি সে পুরুষ দ্বিতীয় কোনো স্বপ্ন দেখতে পারে না। যে নারী তার সমস্ত ভালোবাসা যে পুরুষের বুকে বেঁধে দেয় সে পুরুষ কোনদিন সে নারীর শাড়ির আঁচল ছেড়ে দিতে পারে না। শ্রাবণের মাতাল সমুদ্রে উতলা জল, আর সে জলেই জাল ছিটিয়েছি শুধু একটিবার ফেরুক নীলা, একটিবার জালে ধরা পড়ুক নীলা। এবার পরিবার নয়, বুকের গতরেই চোখের সানিতে রেখে দিবো তাকে। সমস্ত ভালোবাসা ছেড়ে এভাবে সে হারিয়ে যেতে না পারে। কিন্তু কোথাও খুঁজে পাইনি তাকে! মাঝেমাঝে তার কথা মনে পড়লে নীরব ভাষায় আমার দু'চোখ ভিজিয়ে যেত। কিছুই বলতে পারতাম না। সে যেখানে থাকুক না কেন মহান রাব্বুল আলামিন যাতে তাকে খুশি রাখেন আমি মুখে শুধু সেই দোয়াটি প্রতিনিয়ত ফুটিয়ে রেখেছিলাম। কারণ আমি এখনো তার স্বামী। সে আমার তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী নয়। তার বাবা মার পরেই যেহেতু স্বামীর স্থান নিশ্চিত, স্বামীর প্রত্যাশিত দোয়া রবের কাছে কবুল হওয়ার মতোই। যেখানেই থাকুক না কেন, আমার নীলা খুব ভালো থাকুক।
চার.
অপেক্ষার প্রহর গুণতে গুণতে অনেকটি বছর কেটে গেছে আমার। দাড়ি, চুল, মোচ সাদা হতে শুরু করেছে। তবুও ফের নীলা আর ফিরেনি। একবার আমাকে দেখতে আসেনি। অনেকটা সংসার থেকে মেয়ের পরিবার এসেছিল বিয়ের জন্য। অনেক কোটিপতি, টাকা-পয়সা, জমি-জমা কোনকিছুর অভাব ছিল না। কিন্তু রাজি হইনি। হতে পারিনি। যাকে উজাড় করে ভালোবেসেছিলাম, যার জন্য একটা স্বপ্ন লিখে রেখেছিলাম তাকে ছাড়া অন্য নারী কেমন করে জীবনে সুখ নিয়ে আসবে! ভাবতেই অবাক দু'চোখ নিভিয়ে যায়। অন্য নারীর মুখের দিকে তাকিয়ে কিভাবে যত্ন গড়া নীলাকে ভুলে থাকতে পারব! সম্ভব নয় আমার। আর পারবেও কেমন করে?
জীবনের একটা মুন্সিয়ানা থাকে। একটা ভাব থাকে। কাউকে হারানোর ভীষণ নীরবতার ভিতরে সেই আটপৌর মুন্সিয়ানাকে কাজে লাগানো যায়। বরাবর নীলার জন্য ভালোবাসার মুন্সিয়ানার চাপ এখনো বরাবর।
এখনো তার জন্য ভালোবাসা কমেনি! তাই তাকে শেষবারের মতো খুঁজতে বের হয়েছি। হয় তাকে নিয়ে ফিরবো, না হয় নিজের লাশের কফিন বাড়িতে ফিরে আসবে। কিন্তু জ্যান্ত থাকতে বাড়িতে আর আসবো না। একদিন বাড়ি থেকে তিনশত কিলোমিটার দূরে চলে গিয়েছিলাম। নেহাৎ একটা এলাকা হেটে চলেছি। হয় তো মিলিয়ে দিতে পারেন প্রভু। ব্যাকরণে বলে না অক্ষর, শব্দ অতঃপর সুস্পষ্ট একটা বাক্য। সেই বাক্যের জন্যই অক্ষরের মতো তাকে তন্নতন্ন করে খুঁজে চলেছি৷ খেয়ে না খেয়ে কয়েকটা দিন পেরিয়ে গেল ইতিমধ্যে। খুব ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। এই অচেনা জায়গায় কে নেয় কার খোঁজ। কে দেখে কাকে। এতো ধনসম্পদ রেখে আজ মাঠে নেমে গেছি। প্রত্যাশা একটাই তাকে খুঁজে পাবো। জিজ্ঞেস করেও এই নামে কাউকে খুঁজে পাইনি। নৈঃশব্দের শব্দগুলো আমাকে আরো গভীর বেদনায় আটকে ফেলেছে। জানি সব নীরবতার পরেই একটা কোলাহল আসে। সে কোলাহলময় বাতাসে কিছু হাসি ফুটে উঠে, কিছু বিষণ্নতা ঝাপসা পড়ে যায়, কিছু ফুল তখনি ফুটে উঠে। হয় তো আর কিছুটা দূর!
পাঁচ.
নীলাকে এ পথে খুঁজতে খুঁজতে আমি অনেকটা ক্লান্ত হয়ে পড়েছি৷ চেহারাটা দিনদিন কেমন যেন শুকিয়ে যাচ্ছে। ভাবছি আমি নীলাকে আর পাবো না। আবার ভাবছি নীলার জন্যই তো আজকের এই মুহূর্তের এই পথ। সেদিন সারাদিন খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত শরীরটা নিয়ে একটা বাজারের পাশে স্কুলের সেন্টারের নিচে গাছের পাশেই সে রাতটা শেষ করে দিয়েছিলাম। এখনো আশা একই আকাশের নিচে নীলা আমার অপেক্ষায় আছে___এমন প্রত্যাশায় পরেরদিন সকালে বের হই। কিছুদূর যেতেই বড় অক্ষরে সাইনবোর্ডে লেখা-
যুব প্রশিক্ষণ কে ন্দ্র
শিক্ষার কোনো বয়স নেই, সবারি শিক্ষা চাই
লেখাটা দেখে একটু বিস্মিত হলাম। ভাবলাম নিজে মাস্টার্স পাস করেও জনগণের পাশে দাঁড়াতে পারলাম না, তাঁদের জন্য কিছু করতে পারলাম না। সারাজীবন চাকরি আর একটা নারীর জন্য শেষ করে দিয়েছি। যদি না তাকে পাই হয় তো পূর্ণতা পাবো। এমন কিছু ভাবতে ভাবতে সেন্টারের পাশে বসি। কেমন যেন পাগল হয়ে গিয়েছিলাম। না পারছি নিজকে বোঝাতে, না পারছে কেউ বোঝাতে আর না পারছি নিজে বুঝতে। অবাক চোখ!
হঠাৎ দেখি লাল শাড়ি পড়া, চোখে সানগ্লাস চমৎকার একটা বোরকা পড়া একটা নারী সেখান দিয়ে সেন্টারে উঠেছিল। আমি তাকিয়ে থাকতে আমার দিকেও ভালো করে তাকিয়ে থেকেছিল। এখানে আমার অপেক্ষার কোনো সমাপ্তি হয় না। সে উপরে উঠে আমার অজান্তে অনেক্ষণ ঘুরে ঘুরে দেখেছিল। প্রতিটা নারীর একটা লজ্জা থাকে, দূর থেকে দেখে একটা পুরুষকে যতোটা আকর্ষণ করতে পারে সরাসরি সামনে এসে তার আদৌর আদৌ করতে পারে কি না আমার মনে হয় না। নারীকে আমি ভালোবাসার প্রথম নাম দিই এ কারণেই। এতোটা বিচক্ষণতা নিয়ে আমায় দেখে দারোয়ানকে দিয়ে ডাকালো। একটু আঁতকে উঠলাম। ছোটবেলা থেকেই ভয়কে জয় করার একটা অভ্যাস ছিল। এই টাইপের অভ্যাসটার কারণেই আমার প্রতিটা ইচ্ছা জয়ের কুটিরে। সেই ভয়টাকে জয় করার জন্য দারোয়ানের সাথে উঠে গেলাম। একটা আলিসান রুমে মেডাম আমাকে ডেকে নিয়ে গেলেন। দারোয়ানকে চলে যেতে বললে দারোয়ান চলে গেল। একটা আলিসান রুমে এখন আমি আর নীলা।
-)কেন ডেকেছেন মেডাম?
-) ডেকেছি মানে, আপনি অনেক বড় অপরাধ করেছেন।
-) এগুলো কি বলেন মেডাম, আমি তো সবে এখানে এসে বসেছি!
-) এখানে আসাটাই আপনার অপরাধ।
-) নাম কি আপনার?
-) রাহুল
-) কেন এসেছেন এখানে?
বিস্তারিত ঘটনা বলতে চাইনি, তারপরেও আবেগিত প্রশ্নে খুব অভিমানিত কণ্ঠে বলতে হল। বিভিন্ন আলোচনার এক পর্যায়ে নীলা তার পরিচয় দিল এবং পূর্বের মতো কারো অপরাধ নেই বলে সে সত্যিটা গোপন রেখেছিল। আমি হতবাক হলাম। সে শপথ করেছিল দ্বিতীয় বিয়ে আর করবে না। তাই এখানে সে প্রশিক্ষণ নিয়েছিল এবং এখানেই চাকরি নিয়েছিল। এই একা পথে একাই বীনা বাজিয়ে একাই চলতে লেগেছিল সে।
ছয়.
পূর্ণতার একটা শব্দ আছে। সেখানে জয়ের মুকুট পড়িয়ে গ্রহণ করতে না পারলে কেমন যেন হতবাক হয়ে পড়ে। আমি আজো বুঝতে পারতাম না, যদি নীলা আমার চোখের সামনে না থাকতো। ভালোবাসি নীলাকে। নীলাকে অনেকটা অনুরোধ করার পর নীলা ছুটি নিয়েছিল। সাথে করে নিয়ে যাবো আজ। প্রমাণ হবে সমস্ত দোষত্রুটি। কয়েক ঘন্টা পর বাড়িতে গেলেই পাড়াপ্রতিবেশি সবাই হতবাক হয়ে গেল। কিন্তু মা বরাবরের মতোই নীলাকে ঘরে না উঠার জন্য একটা হুংকার ঝেড়ে দিলেন। নিজেকে আবারো একটা ধাক্কা খেতে হয়েছিল। আমি বিস্মিত, আমি অবাক। নীলা একদিকে ছিল আমার স্ত্রী আর অন্যদিকে ছিল স্বপ্নপুরী রাজরানী। আমার মতে মায়ের ভালোবাসা মায়ের কাছে সীমাবদ্ধ। আর স্ত্রীর ভালোবাসা স্ত্রীর কাছে সীমাবদ্ধ। মায়ের মতো কখনো স্ত্রী হবে না, আর স্ত্রীর মতো কখনো কোনো প্রতিবেশি হবে না। যার যার ভালোবাসা তার তার কাছে। তবে মায়ের এমন আচরণে আমি খুব ক্ষুদ্ধ ছিলাম। জীবনে সবারই ভুল আছে। ভুল থাকতেই পারে। তবে যে ভুল না করেও যদি ভুলের মাসুল গুণতে হয় তাকে তার জন্য বেঁচে থাকা আর না থাকা একই কথা। রঙ তামাশাটা কোনো জীবন নয়। কল্পনাকে একটা ধার্মিক আইনের ভিতরে বাস্তবে রূপান্তরিত করার নামই জীবন।
তারপরেও নীলা বলেছিল___আম্মু আমি কোন দোষ করিনি। ছোটবেলা মা মারা গেছেন। বিয়ের পরপরই বাবা মারা গেছেন। সংসার কি বুঝতে পারিনি, বুঝে উঠা সম্ভবও ছিল না। এ সমুদ্রঝড়ের ভিতরে আপনারা নিয়ে এসেছেন। যতোটুকু পেরেছি সংসারের কাজ করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু এভাবে মিথ্যা অপবাদ দিতে পারেন না মা। চাইলে খতম করে দিতে পারেন, সহজে মেনে নিব তবে তালাক নামক দুশ্চরিত্রা নারী বলে ঘৃণা করিয়েন না। মা আমি দ্বিচারিতা কোন নারী নয়। আপনার ছেলে শহরে চাকরি করে বলে আমি আরেকটা সম্পর্ক করতে পারি না, পারবো না। প্রতিটা মেয়ে বিয়ের পূর্বে উন্মুক্ত চলতে পারে, কিন্তু বিয়ের পরে সে একটা দেয়ালে আটকে পড়ে যায়। শ্বশুর- শ্বাশুড়ির খেদমত করার জন্য পাগল হয়ে পড়ে। শুধু একবার আপনাদের সুযোগ করে দেন মা।
কিন্তু তা আর হয়ে উঠেনি৷ অপরাধ না করেও যে অপরাধী সে নিশ্চিত ক্ষমারও শতভাগ প্রাপ্য। কিন্তু তা আর সম্ভব নয়। অর্থাৎ মা চায়নি অন্য একটা নারী তার সংসারে থাকুক! কারণ সে অবলা নারী, যার মা-বাবা, ভাই-বোন কেউ নেই। প্রতিবেশী থাকাও না থাকার মতো। হয় তো জ্যান্ত কবর দিলেও নীলা মাথা পেতে মেনে নিতো, কিন্তু মায়ের এমন আচরণ সবকিছু এলোমেলো করে দিয়েছে! আবারো মুহূর্তের মাঝে ডুবিয়ে দিয়েছে সমস্ত স্বপ্ন!
ফের নীলা সমস্ত দুঃখ ও দু'চোখে মহাসাগর পরিমাণ জল নিয়ে সে রাতেই নিজের আপন গতিতে চলে গেছে। ফের ফিরে আসেনব আর কোনদিন!
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
একটি কালো রাত মানে অন্ধকার। অমাবস্যা। অসুখের আরেকটা নাম। প্রতিটা নারী তার স্বামীর সংসারে এসে সুখ চায়, ভালোবাসা চায়। স্বামীর সংসারে হাসি-মুখে বেঁচে থাকতে চায়। কিন্তু সেখানে এসে যদি বারবার বাঁধাগ্রস্থ হয়, বারবার মিথ্যা অপবাদে অপদস্ত হয় তখন বেঁচে থাকা আর না থাকা দুটোই সমান। প্রতিটা নারী আঘাত খেতে রাজি, কিন্তু অপবাদ সইতে রাজি না। অথচ সে সমাজেই একটা নারী আরেকটা নারীর প্রতি অপবাদ ছুঁড়ে দিচ্ছে। যার কারণে গল্পের নীলা ছোট্ট একটা মেসেজ ডায়েরিতে লিখে গিয়ে চলে যায়। গল্পের নায়ক রাহুল তার চুল পাকা বয়সে খোঁজে পেয়ে নিয়ে আসলেও সংসারে শ্বাশুড়ি নিষেধের কারণে আর থাকা হয়নি তাকে। সুতরাং এ দিকটা বিবেচনা করলে পুরোটা গল্প নীলার জন্য একটা আঁধারচিত্র। যা সমসাময়িক সংসারের জন্য দারুণ একটি থিম এবং বর্তমান সমাজের অনেকটা প্রয়োজন। যেখানে প্রতিটা শ্বাশুড়িকে শতভাগ মা হতে হবে। নীলার এমন আঁধারচিত্রকে একটি কালো রাত্রি বলে আখ্যায়িত করলে আমার বিশ্বাস গল্পটি সমসাময়িক সমাজ সহ বিষয়ের সাথে শতভাগ সামঞ্জস্যতা আছে।
২২ ডিসেম্বর - ২০১৬
গল্প/কবিতা:
৬৯ টি
সমন্বিত স্কোর
৪.৮৭
বিচারক স্কোরঃ ১.৮৭ / ৭.০
পাঠক স্কোরঃ ৩ / ৩.০
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
বিজ্ঞপ্তি
“জানুয়ারী ২০২৫” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ জানুয়ারী, ২০২৫ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।
প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী