“নিষ্ঠুর এ সংসার”

অবহেলা (এপ্রিল ২০১৭)

মোঃ নুরেআলম সিদ্দিকী
  • ১৫
১)
সবে মাত্র আমি দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। গ্রামের দেখাদেখি আর মা বাবার এক ছেলে নষ্ট হয়ে গেলে কেমন হবে এ বিবেচনা করে আমার অজান্তে বাবা আমার জন্য মেয়ে দেখতে লাগলো। আমার এখনও বিয়ে সম্পর্কে পুরোপুরি ধারনা হয়নি। মা রাজি ছিল না। বড় বোনটারে বিয়ে দিছে মাত্র দু’মাসের কাছাকাছি হবে। যেখানে বাবার হাতে সংসার সেখানে না বলে কিছু করতে পারবে না। আমাদের বাড়ি ছিল নুরুল্ল্যা বাজার । উকিলের কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে উকিলকে ফাঁকি দিয়ে বাবা নুরুল্ল্যা বাজার ( মঙ্গল সিকদার বাজারের কাছে ছোট একটি গ্রাম যেটা নুরুল্ল্যা বাজার নামে পরিচিত ) থেকে লালমোহন আমার জন্য মেয়ে দেখতে গেল। আমাদের বাড়ি থেকে লালমোহন মোটামোটি অনেক দুরে। মেয়ের বাবা ছিল একজন কৃষক। কৃষি কাজ করে বিদায় এ গ্রামের লোকেরা কামাল চাষা নামেই চিনে। মেয়ে সবে মাত্র অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। বাবা খোঁজতে খোঁজতে পেয়ে গেল মেয়েকে। বাবা দেখছেন মেয়েটি স্কুলের বই নিয়ে তাদের বাড়ির উঠান দিয়ে হয় তো স্কুলে যাচ্ছে।
.
বাবা: এই মা আমার একটু কথা শুনবা?
মেয়ে: জি বলুন!
বাবা: মা তোমার নাম কি? তোমার বাড়ি কোথায়?
মেয়ে: নাম দিয়া কাজ কি? বাড়ি দিয়া করবেনটা কি?
বাবা: আসলে না,একটু দরকার ছিল।
মেয়ে: আসল-টাসল বাদ দেন, দরকারী কথা বলেন আমার কাজ আছে।
বাবা: আচ্ছা! কামাল চাষার বাড়ি কোথায়?
মেয়ে: কেন, তারে দিয়া কাজ কি?
বাবা: বেশি কিছু না, একটু কাজ আছে।
মেয়ে: ঐ যে উঠানের মাথায় গরুর ঘরের পাশে একটা ঘর দেখছেন না, সেটাই কামাল চাষার ঘর।
.
কামাল চাষাকে পেয়ে বাবা বিয়ের কথা গোপন রেখে কোনো একটা বিষয় নিয়ে আলোচনা করলো। এরপর বিয়ের কথা বলে চালিয়ে যেতে লাগল। আর শেষে মেয়েকে দেখে তো অবাক। প্রথম প্রহরে মেয়েকে তো দেখেই ফেলল। মোটামোটি চেহারা খানা বেশ ভালোই। আজও বয়স বেশি হয় নাই। কিন্তু বয়স আকারে মেয়ে লাম্বা হয়ে গেছে। বাবা বলছে হবে। বাবা চাষিদের পছন্দ করতেন। কারন তারা হালাল টাকা উপার্জন করে সংসার চালায়। আর যেহেতু চাষি মানুষ বিয়ে দিতে পারলে ভেজাল শেষ। বাবা দেখে চলে আসলো। আমি কিন্তু কিছু জানিনা।
.
(২)
একদিন আমি পড়ার টেবিলে বসে বসে বিজ্ঞানী নিউটনের কিছু সুত্রের ব্যাখ্যা গুলো মুখস্ত করছি। এ সময় মেয়ের পক্ষ থেকে উকিল আর মেয়ের মা এসে আমাকে দেখতে থাকল। আর উঁকি-ভুঁকি মেরে চোরের মত এ দিক ঐ দিক তাকাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর আমার কাছে আসলো। আমি পাশে সোফার ওপর বসার জন্য অনুরোধ করছি।
.
মেয়ের মা: বাবা তোমার সাথে কিছু কথা আছে!
আমি: আমি এখন কথা বলতে পারব না। আপনি বসেন, পড়া শেষে মনের মত কথা বলব।
মেয়ের মা: আমি চলে যাব এখন। আমার সময় নাই।
আমি: চলে যান। তাতে কি হয়েছে, অন্য সময় আসবেন আর কি।
.
তারপরও পটপট করছে। ভালো আর লাগে? বই হাতে নিয়ে চলে গেছি রান্না ঘরে। মা, ও মা... মহিলা এটা কে? শুধু পটপট করে। মা বলে- চুপ কর বেয়াদব। আমি মায়ের বকানি খেয়ে বের হয়ে গেছি। এর ভিতর দিয়ে কথা-বাত্রা, দিন- তারিখ সব ঠিক হয়ে গেল। আমি আজও জানি না।
.
আমার বন্ধু রবিন কার কাছ থেকে যেন শুনতে পেল। কিরে বন্ধু তোর নাকি বিয়ে? দুরো- তুই মনে হয় পাগল হয়ে গেছিস! তুই পাগল হয়ে গেছিস যে তোর আব্বা- আম্মু কেউ কি জানে? পাগল, আজও আমার নাক টিপলে দুধ বের হবে, আর তুই বিয়ের কথা বলছোস...। এখনও ছাত্র আমি। বি.এসসি শেষ করব, ইঞ্জিনিয়ার হব, চাকরি নিব এরপর বিয়ের স্বপ্ন দেখব। কিছুক্ষণ ওর সাথে বাড়াবাড়ি করে চলে গেছি।
.
(৩)
অগ্রাহায়ন মাসের ১ তারিখে কথা ছিল কিন্তু তা বাদ দিয়ে ২৫ তারিখে দেয়া হয়েছে। কারন, এ মাসে চাষীদের ধান কাটার সময় এবং নবান্ন উৎসব। তাই বিভিন্ন ব্যস্ততা ফেলে ২৫ তারিখে নির্ধারন করা হয়েছে। মেয়ের পক্ষ থেকে কানের স্বর্ণ, নাকের স্বর্ণ এগুলো ছাড়া অন্য কোনো জিনিসপত্র এবং যৌতুক দিবে না। আমার আম্মুর আশা ছিল যৌতুক নিয়ে তার ছেলেকে বিয়ে করাবে। কারন তার মেয়েকে বিয়ে দিতে যৌতুক দিছে। আর বাড়ির আশে- পাশে সবাই মেয়ের পক্ষের কাছ থেকে যৌতুক নিয়ে তার ছেলেকে বিয়ে করা। আর আমার বাবার কথা হচ্ছে- আমি বিয়ে করছি কোনো যৌতুক নিই নাই, আমার ছেলেকে বিয়ে করাবো কোনো যৌতুক নিব না। এই নিয়ে তাদের মাঝে জগড়া হয়েছে তাও আমার অজানা। মা প্রথমে রাজি থাকলেও বাবার সাথে জগড়া করে আর রাজি হল না। চাচিরা অনেক বোঝানোর পর রাজি হয়েছে।
.
আজ অগ্রাহায়নের ২৫ তারিখ। দিন ঘনিয়ে এখন সন্ধ্যা চলে আসলো। মা আমাকে বলে একটা অনুষ্ঠান আছে তোরে একটু মসজিদে যেতে হবে। কেনো মা? আমার কাজ আছে অনুষ্ঠানে তোমরা যাও, আমি যেতে পারব না। তোরে যা বলছি তা করতে যা, বেশি কথা যে আর বলা লাগে না। কি আর করব, কতক্ষণ ছেঁচামেছি করে চলে গেছি। কারন মায়ের কথা তো আর অমান্য করা যায় না। আমার সাথে আরও অনেকজন। কিছুক্ষণ পর বাবা দেখতেছি অনেক গুলো কিসের যেন প্যাকেট মসজিদে নিয়ে আসলো। এখন মনে একটু মজা হচ্ছে... বাবা মনে হয় মসজিদে মিলাদ পড়াতে আসলেন। যা হোক মোনাজাত শেষে নিজেই সবাইকে বিলিয়ে দিব। কতক্ষণ পর হুজুর চলে আসলেন, তার সাথে মানুষও অনেক। দুলা ভাই এর পাশে গিয়ে বসলাম। হুজুর শুরু করে দিল। হঠাৎ আমাকে কিছু কথা বলতে বলছে আমি অন্য কিছু মনে করে বলে ফেলছি। বিয়ে শেষ, মোনাজাতও শেষ। এখন আমার চিন্তা চলে আসলো। আমি এগুলো কেনো বলেছি? এ নিয়ে সারা রাত ভাবছি, কিন্তু কোনো উত্তর পাই নাই। সকালে দুলা ভাইকে জিঙ্গাস করার পর দুলা ভাই গোপন সব তথ্য ফাঁস করে দিল। আমি চুরি করে এখন বাড়ি পালাইছি। অন্য দিকে মেয়ের বাবা- মা চাপ দিতে লাগলো। অনেক বোঝানোর পর দীর্ঘ ২ মাস পরে বাড়িতে ফিরলাম। কি আর করব, করার কিছু নাই। অন্যদিকে আমার পড়া, আমাকে পড়তে হবে। বিয়ে করছি তাতে কি শিক্ষা জিবন তো আর শেষ করা যাবে না।
.
(৪)
আজ আমরা অনেকজন মেয়েকে নিয়ে আসার জন্য মেয়ের বাড়ি যাচ্ছি। অনেকে টিপাটিপি করছে ছেলের বয়স কম। অনেকে বলছে ছেলের মত মেয়ে ঠিক আছে। দুপুরের খাবার শেষে বিকাল বেলা আমরা মেয়েকে নিয়ে আমাদের বাড়ি ফিরলাম। আমি কোনো কথা বলছি না। প্রথম দিন সবাই আমার সাথে মজা করল। কথা বলার জন্য দাদু অনুরোধ করল। আমি লজ্জার জন্য তার সাথে কথা বলতে চাইছি না। যেহেতু অনুরোধ করলো, তাই কথা বলতে বাধ্য হয়েছি-
.
কাছে গিয়ে, পাশে বসলাম। জিঙ্গাস করলাম, তোমার নাম কি? কথা বলতে লজ্জা পাচ্ছে। মুখের ভিতর থেকে কথা বের হচ্ছে না, তবু বলছে- মোহনা। আমি বলছি লজ্জা পেও না, আজ থেকে আমি তোমার স্বামী। এটা বলতে দেড়ি দু’চোখ থেকে পানি বের হয়ে আসতে দেড়ি হল না।। বোঝতে পারলাম দীর্ঘ দু’মাস পর আসার মাঝে কত জন কত কিছু বলছে হয় তো তাতে কষ্ট পেয়েছে। কারন মানুষের বিবেকের অভাব থাকলেও নিন্দা করার মত লোকের অভাব থাকে না। শাড়ির আঁচল দিয়ে পানি মোছে দিলাম। তার চাওয়া- পাওয়া থেকে শুরু করে প্রায় সব কথা জেনে নিলাম, আর তার সাথে শেয়ার করলাম।
.
(৫)
আসা যাওয়ার মাঝে দিয়ে বেশ কয়েক মাস চলে গেল।
এ দিকে স্কুলে ফাইনাল পরীক্ষাও সে শেষ করলো। মাঝে মাঝে আমি কিছু শখের কথা জিঙ্গাস করি। তোমার কিছু শখ আছে, বলতে পারও আমি চেষ্টা করবো। একটাই বেশি শখ- গল্পের বই পড়া। আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করি। প্রথম বইটা নিয়ে দিলাম- “বিষাঁদ সিন্ধু” মীর মোশারফ করিমের, এরপর নিয়ে দিলাম কাজী নজরুল ইসলামের “বিষের বাঁশি”, জসীম উদ্দীনের “নকশী কাঁথার মাঠ”, জীবনানন্দ দাসের “বনলতা সেন” এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “শেষের কবিতা” সহ আরও কয়েকটি উপন্যাস। আশা আছে সামনে পরীক্ষার ফলাফল বের হলে স্কুলে নবম শ্রেণিতে ভর্তি করে দিব। লজ্জা কিসের? শিক্ষার কাছে লজ্জা নাই! বাচঁতে হলে শিখতে হবে। আর শিখতে চাইলে জানতে হবে। এভাবে আস্তে আস্তে দিন চলতে থাকলো।
.
(৬)
মা আদেশ করলেন- ঘুম থেকে তাকে ফজর আযান দিলে উঠতে হবে। কারন, ফজরের নামায পড়তে হবে। নামায শেষে তাকে বিভিন্ন কাজ করতে হবে। নাস্তা বানানো সহ আরও অনেক কাজ। প্রথমে যদিও তাকে রান্না করতে দেয়া হত না এখন তাকে মা রান্না করতে দেই। তার সাথে ঘরের বিভিন্ন কাজ তো আছেই। বয়স কম, রান্নার- বান্নার দিকে তার বাবার বাড়িতে তেমন মন ছিল না, সব সময় পড়া লেখা আর খেলনা নিয়ে ব্যাস্ত ছিল। অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী, বয়স আর কতটুকু হবে। চৌদ্দ কি পনর।
তরকারী ভালো করে রান্না করতে পারে না। কখনও হলদি বেশি, কখনও মরিচ বেশি, কখনও লবন বেশি আবার কখনও ঝুল বেশি। এ নিয়ে মা সারা বেলা কথা বাড়া-বাড়ি করে, কখনও বকতে থাকে। কখনও গাইল। কখনও আবার বাবা- মা’র নাম ধরি গাইল। অন্য রকম আচরন। আমার তো আর সব সময় ঘরে থাকা হত না। পড়া লেখা নিয়ে প্রায় ব্যাস্ত, খেলা তো আছেই। সামনে আবার পরীক্ষা। সংসার নিয়ে আমার তেমন ভেজাল ছিল না। কারন বাবা চাকরি করে। স্বাধীন ছিলাম।
.
এখন মোহনার সময়টা আগের মত যাচ্ছে না। মুখের হাসি আর মনের আনন্দটা অনেক বেদনা ও অভিমানে ভরা। কারন, আজ কাল মা এর কটুক্তি ব্যবহার তাকে মেনে চলতে হয়। মোহনি, ও মোহনি তুই কালকে তোর বাপ চাষী কামাইল্যার কাছ থেকে সব নিয়ে আইবি। তুই খাস কিসে করে কালকে থেকে এগুলো বন্ধ। লবনের বাটা, ভাত নাড়ানি থেকে শুরু করে কামাইল্যার কাছ থেকে একটা একটা করে সব নিয়ে আইবি। অন্যত্ব খাবার মাটিতে দিব, মাটি থেকে খেয়ে নিবি। মা তার সাথে এ ধরনের আচরন করে। যৌতুক দেওয়ার কোনো কথা ছিল না, সে যৌতুকের জন্য মা আজ তাকে নিরবধি অত্যাচার করে। থাপ্পর দেয়ার কথা বলা আর দিয়ে ফেলা সমান কথা। আসতে- যায়তে, খাইতে- বসতে, কাজ করতে মা তাকে জ্বালাতে থাকে। চাষার মেয়ে তো চাষার মতই হয়েছে। মা সারা দিন মাঠে মাঠে ঘুরার অভ্যাস ছিল আজ মেয়েও তা শিখছে। এগুলো বলে মা গাইল দিত। দিন নাই, রাত নাই সব সময় মা তাকে গাইল দিতে থাকে। আর আপু যখনই আমাদের বাড়িতে আসতো তখনি মায়ের সাথে অনবধি তাকে জ্বালাতো। বাবা ও আমার সামনে তেমন কিছু বলা হত না। আমি না থাকলে বেশি বলা হত। আর মোহনা বোকা প্রাণীর মত বসে থাকতো, কানকে না শুনার মত আর মুখকে বোবা করে রাখতো। সে সাথে নদীর মোহনার মত দু’চোখের পানিও যেত। এত গাইল দেয়ার পরেও তাকে ডাকা হত না- খাবার খাবি কিনা! খাবার খাওয়া হত না, যতœ নেয়া হত না। খুব অবহেলা, ঘৃনা আর অনুতপ্ত সময় নিয়ে তাকে স্বামীর সংসার করতে হয়। যদিও মুখে বলা হত না, কিন্তু হৃদয়টা অবহেলা এবং ঘৃণিত বাস্তবিক ধারনা নিয়ে তাকে শ্বশুর বাড়ি থাকতে হয়। সব সময় কান্না চোখ ফুলে যেত। সবারই তো কিছু না কিছু রাগ থাকে। আজও বয়স কম, রাগ একটু বেশিই। না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ার অভ্যাসটা বেশ ভালোই! একদিন দেখলাম সে শুয়ে আছে। খাবার খেতে ডাকছি। উঠলো না। আবার ডাকছি তাও উঠছে না। বালিশের কাছে গিয়ে দেখি চোখের জ্বলে বালিশ ভিজে গেছে। মাথায় হাত দিয়ে দেখছি জ্বর আছে কিনা? মোটেও নাই। সব কিছু ঠিক আছে। মুখের দিকে চেয়ে দেখি মুখ ও চোখ দুটো ফুলে গেছে। চোখের পানি আমার গায়ের ঘামছা দিয়ে মুছে দিলাম। তারপরেও কাঁদছে। জিঙ্গাস করছি, উত্তর দিচ্ছে না। অন্য রকম হয়ে শুয়ে আছে। কাঁদছে কেনো? ভেবে নিলাম- হয় তো বাবা মা’র কথা মনে পড়ছে। তারপরেও মা কে ডাকছি। আপুও চলে আসছে। কিরে আপু ওর কি হয়েছে? ও কাঁদছে কেনো? চোখ- মুখ সব ফুলে গেছে কেনো? মা উত্তর দিল মনে হয় ঢং করছে। আজ কালকের মেয়েরা কতই না ঢং করতে জানে। বোঝতে আর দেড়ি হল না! কি রে মা ওর সাথে এমন ব্যবহার করে কেনো? নিজের মেয়ের মত দেখছে নাকি, অন্য কিছু!! কিন্তু মোহনা কখনও আমাকে কিছু বলল না।

পাড়া- প্রতিবেশীরা ওর বয়স কম এ নিয়ে সব সময় নিন্দা করতো। আমাদের ঘরের সামনে ছিল আম্বিয়াদের ঘর। ওর সাথে আম্বিয়ার মোটামোটি সম্পর্কটা ভালোই। জিবন চলার পথে বন্ধু দরকার। বন্ধু থাকবেই এটা স্বাভাবিক। বন্ধু ছাড়া জিবন অসম্ভব। আম্বিয়ার সাথে চলা- ফেরা শুনে আমার কাছে ভালো লাগলো। অন্যদিকে, বাড়ির কেউ দেখতে পারে না। এ নিয়ে প্রায় সময় তাকে গাইল, তার সাথে খারাপ আচরন। খুব একটা নিন্দার বিষয়। এত কিছুর পরেও আমি কিছু জানিনা? ও আমাকে ভালো- মন্দ কিছু বলে না।
.
(৭)
কিছু দিন পর ওর বাবাকে খবর দিলাম ওকে কিছুদিন নিয়ে রাখার জন্য। মন ভালো নেই, হয় তো সেখানে গেলে মনটা একটু ভালো হবে। তারপরের দিন আমার শ্বশুর আসলো তার মেয়েকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। মা কে বলা হয়েছে, আব্বু রাজি হয়েছে, কিন্তু মা রাজি হয় নাই। মা বলছে না, ও যেতে পারবে না ধমক দিয়ে কথা। না দেই নাস্তা, না দেই খাবার। বিভিন্ন ধরনের খারাপ আচরন। মেয়ে বড় করতে শিখেছিলে মেয়েকে কিভাবে কাজ- কর্ম করতে হয় তা শিখাও নাই। তার মা মনে হয় এমন ছিল, তাই মেয়ে ও এমন হয়েছে। জাত- গোষ্টির মত চলা ফেরা। এই আরও অনেক কথা। আমি বাড়িতে ছিলাম না। সে দিন আমাদের কলেজে বার্ষিক অনুষ্ঠান ছিল। চেয়ারম্যান আসবেন, মেম্বার সহ আরও গনমান্য ব্যক্তিবর্গ আসবেন। তো আমাকে স্যারে বলা হয়েছে কবিতা আবৃত্তি ও নাটক করার জন্য। বেশ আমি সেখানে সারা দিন কেটে দিলাম। ঘরে আসি দেখি আমার শ্বশুর নাই। মোহনাকে জিঙ্গাস করতে গিয়ে উত্তর দিল বাবা চলে গেছেন।

তুমি যাওনি বলতে উত্তর দিল আম্মু দেই নাই। আমি ভাবলাম মা যাতে যেতে দেই নাই, তাহলে আমি মোহনাকে স্কুলে ভর্তি করে দিব। ওরে বলতে গিয়ে আর পড়বে না, বলে ভিতরে চলে গেল। এরপরের দিন আমি ওকে জোর করে আমাদের বাড়ির পাশে স্কুলে নবম শ্রেণিতে ভর্তি করে দিয়ে আসলাম। মা-বাবা, আপু কেউ জানে না। দুই দিন পর মা শুনতে পেল। বাবা শুনে ফেলেছে। বাবা শুনে হাসল আর মা ও বোন শুনে রাগ।
.
যা হোক, দুই কিংবা তিন দিন এ রাগ নিয়ে চলতে লাগল।
এরপরের দিন থেকে মা, আপু সহ বাড়ির প্রায় মানুষ বিভিন্ন কথা বলতে থাকে। মা কে অনেকে অনেক কথা বলে। বউকে স্কুলে ভর্তি করে দিছে ঘরে কাজ করবে কে, তুমি নাকি? তাহলে তুমি কাজের মানুষ। এমন কথা বলে যে কথা শুনলে নিশ্চয়ই রাগ চলে আসে। মা আর আপু আগের চেয়ে এখন আরও বেশি জ্বালাতে থাকে। স্কুলে গেলে ঘরের কাজ করবে কে এমন অনেক ধরনের কথা রাত-দিন বলতে থাকে। মোহনা আগের মত আমাকে কিছু বলে না।
.
আমি অনেক প্রশ্ন করি, তোমাকে কেউ কিছু বলে? আপু তোমাকে কেমন জানে? বাবা- মা তোমার প্রতি কোনো কারনে রাগ হন? আমাদের এ সংসারটা তোমার কাছে কতটা উপযোগি? সে উত্তর দেই সবাই ভালো, আমাকে সবাই ভালো জানে। আম্মু সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে। তোমার কথা কি বলবো, তুমি তো মোটেও ভালোবাস না... এগুলো নিয়ে খুব মজা করলাম। আজকের মত ওর কাছ থেকে কখনও এমন হাসি দেখি নাই।
.
(৮)
একদিন আম্বিয়াকে দেখলাম তার মায়ের সাথে বসে বসে পাডি (পুকুরের পাশে ছোট ছোট গাছ হয়, এদের চামড়া গুলো কেটে, রোদে শুকিয়ে বিছানা, পাখা ও শিখা সহ বিভিন্ন কিছু বানানো হয়) গাছের চামড়া দিয়ে বিছানা বানাচ্ছে। কিভাবে বানাই সেটা দেখতে গিয়ে বলছি, খালা পান খাওয়াবেন? দুরো হারাম জাদা! পান তো সব শ্বশুর বাড়ি নিস আমাদের জন্য কখনও একটা পান নিয়ে আসলি না, খালার কাছে পান চাইছিস লজ্জা করে না! যা হোক অনেক্ষণ মজা করছি। পান খাইলে জিহ্বা মোটা হয়ে যাবে, পড়া মুখস্ত করতে পারবি না! মজা করতে গিয়ে আম্বিয়া সব কথা আমাকে বলে দিল। আমি তো শুনে বিষন রাগ। কাউকে কিছু বলি নাই। কি আর করব, করারও কিছু নাই। কারন আমি বাবার টাকায় পড়ালেখা করি, আমার ইনকাম নাই। যদিও দেখতাম তাহলে কিছু বলার ছিল। এখন কি আর বলব! চুপ করে থাকলাম, আর আগের চেয়ে এখন মোহনাকে আরও বেশি খেয়ালে রাখি। দিন যায়তে লাগলো, কিন্তু মোহনার প্রতি অত্যাচার বন্ধ হল না।
.
(৯)
তার কিছু দিন পর ওর সামান্য জ্বর হল। আমি এর আগের দিন রবিনের নানা বাড়ি ঢাকায় ওর সাথে জোড়পূর্বক ওর আম্মুর দোহাই বেড়াতে গেছি ১ সপ্তাহের উদ্দেশ্যে। মোহনার শরীরে জ্বর আস্তে আস্তে বাড়তে থাকলো। মোহনা আমার মা বাবা কাউকে বলে নাই যে সে অসুস্থ। কিন্তু আমার মা বাবার উচিৎ ছিল তাকে দেখা। কিন্তু কেউ দেখেনি। বরং কাজ করে না বলে উল্টা- পাল্টা ব্যবহার। শরীর খারাপ থাকলে কে চাই কাজ করতে? ধীরে ধীরে জ্বর এখন টাইফয়েডে চলে গেছে। আস্তে আস্তে রোগ আরও বাড়তে থাকলো। বাবাও বাড়িতে ছিল না। আমি সাত দিন শেষে আট দিন পর বাড়িতে আসলাম দেখি তার এ অবস্থা। বাবাও বাড়িতে আসলো। মেডিকেলে নিয়ে যাব বলে কাউকে দিয়ে গাড়িতে উঠানের উদ্দেশ্যে দরজায় নিয়ে আসল এবং দাড়া করাল। সেখানে দাড়ানো থেকে পড়ে গেছে। হায় রে এ কি আবার? নিশ্বাস বন্ধ হয়ে গেছে। দ্রুত গাড়ি দিয়ে বাড়ি থেকে আট থেকে দশ কিলো দুরে মেডিকেলে নিয়ে গেছি। কিছুক্ষণ পর ডাক্তার রিপোর্ট দেয়- সে এ্যাট্রাক্ট করলো। সে আর পৃথিবীতে নেই। ইহ জিবন ত্যাগ করে চলে গেছে...
সেখান থেকে তাকে নিয়ে আসা হল এবং বাড়ির পাশে তার কবর দেয়া হয়েছে।
.
দীর্ঘ কতটি বছর পেরিয়ে আজও কবরের পাশে গিয়ে তার জন্য কাঁদি। ভুলতে পারি না তার ভালোবাসা। মা, বোন ও পাড়া- প্রতিবেশীর অবহেলা, ঘৃনা, খারাপ আচরনে যে সে পৃথিবী ছাড়বে মোটেও আলোকপাত করিনি। আজও তোমায় ভালোবাসি। তুমি আর একবার এ জিবনে ফিরে আস, কারও অবহেলা পেতে তোমাকে দিব না। মনের গহীন ঘরে ভালোবাসার চাদরে ঘুম পাড়িয়ে রাখব।
.
(এটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক ভাবনা। অনেক বছর আগের গ্রামীণ সমাজকে রুপায়িত করা হয়েছে। কারণ, সে সময় গ্রামীণ সমাজে এ ধরনের ঘটনা বেশি হত)
----- (সমাপ্ত) -----
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
পান্ডুলিপি লেখাটা আবেগময়ী ছিল..দারুণ একটা বিষয় নিয়ে সু-সজ্জিত একটা উপস্থাপনা..
জাহেদুল আলম জাহেদ যদিও আপনি কাল্পনিক চিন্তা ধারায় বলছেন, কিন্তু আমার কাছে এটা পুরোটা বাস্তব কাব্যিক সমারোহ। অনেক অনেক ভালো লাগলো.....
আপনার ভালো লেগেছে শুনে খুব অনুপ্রাণিত হলাম। অনেক অনেক ধন্যবাদ প্রিয়। ভালো থাকবেন চিরদিন।
জাহেদুল আলম জাহেদ বাহ! দারুন গল্পের বাস্তবিক এক জিবন কাহিনী......
ধুতরাফুল . শুভ প্রচেষ্টা লেখা অবব্যহত থাকুক....ধুতরাফুল।
অনেক অনেক ধন্যবাদ প্রিয় আমার। অনেকাংশ শুভকামনা ও বুক ভরা ভালোবাসা রইলো। ভালো থাকুন মৃত্যর আগ পর্যন্ত।
আল মোমিন অনেক সুন্দর লিখেছেন। ভোট রেখে গেলাম।
গল্পটা কষ্ট করে পড়েছেন, এ জন্য কিভাবে মনের গভীর থেকে ধন্যবাদ জানাবো সে ভাষা আমার কাছে এ মুহূর্ত নেই দাদা। তবুও বলছি, অনেক অনেক শুভকামনা আপনার প্রতি। ভালো থাকিন আজিবন....
আবু রায়হান ইফাত অনেক ভালো লাগলো
ধন্যবাদ প্রিয় দরদী, ভালো থাকবেন নিরন্তর।
রীতা রায় মিঠু প্রিয় নুরে আলম, যে বয়সে আমি নিজ থেকে এক লাইন বাক্য লিখতে জানতামনা, সে বয়সে তুমি এত বড় একটি গল্প লিখে ফেলেছো। গল্পে কী ভুল আছে তা তুমি নিজেই বের করতে পারবে। ভুল ধরা আমার দ্বারা সম্ভব নয়, আমি তোমার এই কৃতিত্বে অভিভূত!
লেখার চেষ্টা করছি দিদি। আমি তো আর আপনাদের মত এমন লেখা লিখতে পারব না, তাই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। হয়তো এ চেষ্টা ১দিন সফল হবে। আর এ গল্পে বিশেষ করে ১জন লেখকের নাম ভুল হয়ে গেছে। আমি জানি মীর মোশারফ হোসেন। কোন দাফটে আমি লিখে ফেলছি সেটাই জানিনা। যা হোক সামনে আরও ভালো কিছু করব এই প্রত্তাশায় আপনার আরশিবাদ কামনা করছি... (pc e net e bangla lekha ektu hard, tai ekhane o banan vul ache).
আহা রুবন গল্প সম্পর্কে কাজী জাহাঙ্গীর অনেক কিছুই বলে ফেলেছে। উত্তম পুরুষে গল্প বলার কিছু সুবিধে আছে, যেহুতু সে-ই গল্পের কথক, তাই তার ভাষায় আঞ্চলিক ভাষা না থাকাই ভাল। আঞ্চলিক ভাষায় নিশ্চয়ই গল্প হতে পারে, মনে রাখতে হবে সেটি কেবল পাকা লেখকের জন্য, আমাদের মত নতুনদের জন্য নয়। আপনার সংলাপ বলার স্টইলটি (আমি:....) রবীন্দ্রনাথের আগে প্রচলিত ছিল, বট তলার সাহিত্যে কিছু কিছু দেখা যায় বটে, তবে আজকাল উচ্চ শ্রেণির লেখায় এটি অচল। লক্ষ্য রাখবেন। গল্পের বিষয় ভাল, কিন্তু জমিয়ে ওঠা যাকে বলে তা হয়নি। লিখতে থাকুন সব সীমাবদ্ধতা দূর হয়ে যাবে। শুভ কামনা থাকল।
অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই আপনার গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য এর জন্য। আশা করি সামনে এমন ভুল হবে না... অনেক শুভকামনা রইলো। ভালো থাকবেন।
আহম্মেদ সিমান্ত গল্পাটা পড়লামম, ভালো লেগেছে আমার।
কষ্ট করে পড়ার জন্য বুকভরা ভালোবাসা রইলো। ভালো থাকবেন দরদি। শুভকামনা রইলো।

২২ ডিসেম্বর - ২০১৬ গল্প/কবিতা: ৬৯ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪