জাহিদ কখনো এত রাত জাগে না কিন্তু আজ ইন্টারনেট এ টিপাটিপি করতে করতে কখন যে রাত একটা বেজে গেছে তা জাহিদের খেয়াল ছিল না। তাছাড়া ও রাতে কখনো কম্পিউটার এর সামনে এতক্ষণ ধরে বসে থাকে না।
রাত এগারোটার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়তে হবে, এটা রফিক সাহেবের নির্দেশ, তিনি সবাইকে সাথে নিয়ে প্রতিদিন রাত নয়টা বাজে ভাত খান, ভাত খেয়ে দু’ঘন্টা রেস্ট নিতে হয়, তারপর ঘুমাতে যেতে হয়।
রফিক সাহেবের অবশ্য ইচ্ছে রাত নয়টা বাজেই ঘুমাতে যাওয়া কিন্থু নিয়ম নাকি রাতে ভাত খাওয়ার দুই ঘন্টা পর ঘুমানো। কোন আহাম্মক যে এই নিয়মটা করেছে তা কে জানে। এই নিয়মের পিছনে আসলে অন্য একটা কারণ আছে , এটা রফিক সাহেবের বিশ্বাস। আসলে রাত নয়টা থেকে এগারোটা পর্যন্ত টেলিভিশনে ওই হিন্দী সিরিয়াল গুলো দেখার জন্য তার স্ত্রী ও মেয়ে এই নিয়মটা চালু করেছে। দুপুরবেলা খেয়েই ভাত ঘুম দেয়ার সময় এই নিয়ম কোথায় থাকে তার বউয়ের। কিন্থু রফিক সাহেবের কিছু করার নেই। দুপুর বেলাতো উনি সব সময় বাড়িতে খাওয়া দাওয়া করেন না, বেশির ভাগ সময়ই নিজ অফিস এ খাওয়া দাওয়া করেন। তাই কি আর করা, উনি সব মেনে নিয়েছেন। মেয়ে মানুষের কিছু জিনিস মেনে না নিলে সংসারে বরই অশান্তি। তাই তিনি রাতে খাওয়া ধাওয়ার পর বহু কষ্টে এই দুই ঘন্টা সময় পার করেন। টেলিভিশন দেখা উনি একদম পছন্দ করেন না। উনি কোনো ক্রমে রাত এগারোটা বাজলে উঠে গিয়ে ফ্লাটের মেন দরজার লক চেক করতে যান, তখনই তার স্ত্রী দিলরুবা বেগম টেলিভিশন এর সুইচ অফ করে বেডরুম এর দিকে রওনা হন।
ছেলে-মেয়ে দুটোও তখন নিজ নিজ রুম এর লাইট অফ করে দেয়। অবশ্য মাঝে মাঝে কারো রুম এর লাইট অন থাকলে তিনি দরজা খুলে উকি দেন। যদি দেখেন ওরা কেউ তখন পড়ছে তখন তিনি রাত জেগে পড়তে নিষেদ করেন। ভোর সকালে উঠে পড়তে বলেন। ভোর সকাল হলো পবিত্র সময়। তখন মানুষ যা করবে তাই ঠিক ঠাকভাবে হবে। তাছাড়া রাত হলো মানুষের ঘুমানোর জন্য। আল্লাহ তা’আলা রাত সৃষ্টি করেছেন সারাদিন কাজ করে মানুষ যেন বাড়ি ফিরে ঘুমায়। এতে মানুষের শরীর বিশ্রাম পায়। দেহ রিচার্জ হয়। আসলে ঘুম হলো মানুষের চার্জার। এতে কোনো শক্তি খরচ হয় না। বিদ্যুত খরচ হয় না। আসলে সব কিছুই আল্লার মহিমা, এটা হলো রফিক সাহেবের কথা।
জাহিদ অবশ্য আজ রাত এগারোটা বাজে লাইট অফ করে দিয়েই কম্পিউটার এর সামনে বসেছিল। কিন্তু বসে থাকলে কি হবে, ওর মাথায় ঘুর পাক খাচ্ছিল শুধু দুপুর বেলার সেই "দার কাক" কথাটা।
কম্পিউটার এর ঘড়িতে রাত একটা বেজে গেছে দেখে জাহিদ তারাতারি ওটা অফ করে দিয়ে ডাইনিং রুমে গেল পানি খেতে। লাইট জালিয়ে পানি খাওয়ার পর লাইট অফ করে দিতেই ওর চোখে পড়ল পাশের ফ্লাট এ হঠাৎ যেন আলো জ্বেলে উঠল। পর্দাটা পুরোপুরি লাগানো নেই, তাতে ফাহিমদের ফ্লাটটা দেখা যাচ্ছে। ওদের ডাইনিং রুমে আলো জ্হলছে।
জাহিদ কৌতুহল বসত জানালার সামনে গিয়ে বদ্ধ জানালার পাশে চুপ করে দাড়ালো। ওর কৌতুহল হচ্ছিল এত রাতে ওই ফ্লাটে আলো কে জালালো সেটা দেখার জন্য। জাহিদ অনেকক্ষণ একই রকম ভাবে চুপচাপ অন্ধকারে দাড়িয়ে রইলো। ওর দৃষ্টি তখন উল্টো দিকের জানালাতেই। কতক্ষণ হয়েছে কে জানে, জাহিদের হঠাৎ মনে হলো ও কেন ফালতু ঘুম নষ্ট করে এখানে বোকার মত দাড়িয়ে আছে. মনে হয় কেউ ওর মতই পানি খেতে লাইট অন করেছিল, মনের ভুলে অফ না করেই চলে গেছে।
জাহিদ ফিরে যাওয়ার আগে একবার জানালাটা খুলে বাইরে তাকালো।
জায়গাটা চৌকোনা টাইপের; প্রায় আট ফিট চওড়া একটা বাক্সর মত খালি জায়গা; উপরের দিকে খোলা। এই ফ্লাটটা দশ তলার উপর; উপরে আর মাত্র দুই তলা আছে; তাই উপরের দিকে আকাশ দেখা যাচ্ছে; ঝকঝকে পরিস্কার আকাশ; সে দিক দিয়ে ঠান্ডা বাতাস আসছে। গভীর রাতের এই স্নিক্ধ বাতাসটা জাহিদের কাছে সর্গীয় মনে হলো, হঠাৎ করে ওর আবার দুপরের কথাটা মনে পড়ল. আজ একটা ইম্পরট্যান্ট exam ছিল, বেশি ভালো হয়নি বলে জাহিদের মনটা একটু খারাপ ছিল। বাসার লিফটে উঠার সময়ও জাহিদ সে কথা ভাবছিল বলেই, মনে হয় একটু অন্য মনস্ক হয়ে পরেছিল। লিফট থেকে বের হবার সময় হঠাৎ একটা মেয়ের সাথে ধাক্কা লাগতে লাগতেও লাগেনি। অল্পের জন্য ধাক্কা খাওয়ার হাত থেকে বাঁচলেও জাহিদের বা পাটা রক্ষা পেল না। মেয়েটা ততক্ষণে লিফটে উঠে গেছে। এই বিল্ডিং এ জাহিদরা মাত্র এক সপ্তাহ ধরে এসেছে; এখনো সবাইকে চেনে না; একপাশে লিফট আর সিরি; আর তিনদিকে তিনটা ফ্লাট। কে জানে কোন ফ্লাটের; মেয়েটা থ্রি কোয়াটার এর চেয়েও সামান্য সর্ট একটা প্যান্ট পরেছে, তার উপর একটা ব্রাউন গেঞ্জি। প্যান্ট এর নিচে প্রায় হাঁটুর পর থেকে তার ফর্সা পা দুটো দেখা যাচ্ছে, কিন্থু পা দুটো শুধু ফর্সা হলেই কি হবে, ওই সুন্দর পায়ের নিচে যে চোখা হিলের জুতা আছে, সেটার ব্যথা যে কি রকম তা জাহিদ সাথে সাথে টের পেল।
ওর পায়ের আঙ্গুল গুলো যেন টনটন করছিল ব্যথায়; লিফট বন্ধ হওয়ার আগে ও সরি এর বদলে শুনতে পেল, "এ ভাবে বুড়ো মানুষের মত কেউ চলা ফেরা করে নাকি..! মনে হচ্ছে যেন একটা ছেঁকা খাওয়া দার কাক". ততক্ষণে লিফটটা বন্ধ হয়ে গেছে।
জাহিদ একেবারে হতভম্ব হয়ে গিয়েছিল। কলেজে ওর সব বন্ধুরা ওকে প্রিন্স বলে ডাকে; তার কারণ ও আছে, ও যে শুধু দেখতেই লম্বা তা নয়, চেহেরাও সুন্দর; সবাই তো তাকে তাই বলে শুধু ছেলেদের কলেজে বলে এখনো একা আছে, আসলে যদি কম্বাইন্ড কলেজে হত, তাহলে এতদিনে এক হালি মেয়ে ওর সাথে প্রেম করত।
সেই থেকে সারা দিনই আজ জাহিদের মনটা খিচেরে ছিল।
এ সব কথা ভাবতে ভাবতে হঠাৎ জাহিদের হাসি পেল; নাহ, এখন সত্যিই ঘুমাতে যাওয়া উচিত; ও যেই জানালাটা লাগানের জন্য হাত উঠাতে যাবে, এমন সময় ওপাশের জানালায় কি যেন একটা নড়াচড়া করতে দেখলো, তারপরে জাহিদের চোখে পড়ল একটা বড় প্লেকার্ড, কেউ একজন ওপাসের জানালার আড়াল থেকে প্লেকার্ডটা ধরে রেখেছে, যে ধরে রেখেছে তাকে দেখা যাচ্ছে না।
এবার একটু খেয়াল করতেই জাহিদ দেখতে পেল তাতে গোটা গোটা অক্ষরে সুন্দর করে লেখা "আমি আসলেই সরি". সরিটা অবশ্য ইংরেজিতেই লেখা। জাহিদের বুজতে বাকি রইলো না আড়াল থেকে কে প্লেকার্ডটা হাতে দরে আছে। অবশেষে সরি বলেছে, তাও কষ্ট করে এত রাতে, নাহ, জাহিদের আর রাগ নেই, এবার ও দ্রুত একটা কাগজে "ঠিক আছে" লিখে জানালার সামনে এসে হাতে নিয়ে দাড়ালো। ওপাশের হাতে তখন আরেকটা প্লেকার্ড। তাতে একটা লাল রঙের কিস আকা এবং এর পরেই সেই মেয়েটিকে আবার দেখা গেল, একটা সাদা ভি গলার গেঞ্জি পরে আছে, এখন ওকে সর্গ থেকে নেমে আসা পরীর মত সুন্দর লাগছে, জাহিদের মুখটা হাসিতে ভরে উঠল, ওর মনে হলো এই রাত যেন এখন থেকে এ ভাবেই থেমে থাকে।
১৯ জানুয়ারী - ২০১১
গল্প/কবিতা:
৭ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪