দুপুর ১টা বাজে। আমি সিম্পনি কাস্টমার কেয়ারে মোবাইলের সফটওয়ার আপডেট করার জন্য মোবাইল ফোন তাদের কাছে জমা দিয়ে চেয়ারে বসে অপেক্ষা করছিলাম। অপেক্ষার সময় বরাবরই যন্ত্রণার হয়ে থাকে। ভাগ্যিস ২ দিন আগে দেওয়া টেবটা এর মধ্যে হাতে পেয়ে গেছি। তখন কি আর করার সেই যন্ত্রণাময় সময় পার করার জন্য টেব অন করে ক্যান্ডি ক্রাশ সাগা খেলা শুরু করলাম। রিসেট করা টেব তাই লেভেল ১ থেকে শুরু করতে হলো। এভাবে কয়েক মিনিটের মধ্যে লেভেল নয়ে চলে আসলাম। নয় লেভেল শুরু করতে যাবো এমন সময় গার্ড হাতল ধরে গেট টানতেই চোখে পড়ল অ্যাপ্রণ পড়া দুটি মেয়ে ভিতরে প্রবেশ করল। তারা দুজনে আমার খানিকটা সামনে আমার দিকে মুখে করে বসল। গার্ড তাদের হাতে একটা টোকেন ধরিয়ে দিল বলল অপেক্ষা করেন আমি ডেকে দিবো।তাদের মধ্যে এক মেয়েকে সাদা অ্যাপ্রণ আর সাদা পায়জামায় ঠিক একটা রূপকথার সাদা পরীর মতো লাগল। আমি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম। বার বার মনে হচ্ছিল কি দরকার ছিল সৃষ্টিকর্তার এতো সুন্দর করে তাকে বানানোর। আমি বেশ কয়েকবার তার আপাদমস্তক খেয়াল করলাম শরীরের কোথাও ঈশ্বর কোন খুদ রাখে নি। কি অসম্ভব রকম সুন্দর!! তাকে দেখতে দেখতে আমি 10 লেভেল খেলছিলাম। সেই লেভেলে ক্যান্ডি ক্রাশ করতে পারি নি ঠিকই কিন্তু আমার মন যে ক্রাশ খেয়েছে তা আর বুঝতে বাকি রইল না। আমি টেব লক করে কেবলই সেই পরীকে দেখতে লাগলাম। এক দৃষ্টিতে শুধু তার দিকেই চেয়ে আছি আর মনের ভিতর তাকে নিয়ে নানান ভাবনা ভাবছি। যেমন: সে হয়তো আশেপাশেই কোন প্রতিষ্ঠানে নার্সিং কোর্স করছে, যদি তার মতো একটা জিএফ থাকতো, মেয়েটার বাসা কোথায় হতে পারে ব্লা ব্লা ব্লা। এসব ভাবনার মধ্যে সে একবার আমার দিকে দেখল। যেই তার চোখে চোখ পড়ল কি যে এক অনুভূতি অনুভব করলাম তা নিজেও জানি না। তারপর খেয়াল করলাম মেয়েটাও বার বার আমার দিকে তাকাচ্ছিল আর চোখে চোখ পড়ছিল। সে হয়তো তাকাচ্ছিল এই কারণেই যে আমি কি তার দিকে তাকিয়ে আছি কি না। এবার সে তার বান্ধবীকে আমার সম্পর্কে যে কিছু একটা বলছে আমি কিছুটা উপলব্ধি করলাম। ভেবাচেকা খেয়ে একটু চোখ দুটি এক্সিকিউটিভদের দিকে সরিয়ে নিয়ে এমন একটা ভাব করলাম যে আমি খুব বিরক্ত কখন যে কাজটা হবে। তারপর আবার চোখ নিয়ে গেলাম সেই নাম না জানা পরীর দিকে। এবার খানিকটা সাহস যোগার করে একমনে তার দিকে তাকিয়ে আছি। কি আশ্চর্য! সেই মেয়েটাও আমার দিকে তাকিয়ে আছে। এভাবে অনেকক্ষণ চোখাচোখির পর গার্ড স্বপন ঘোষ বলে ডাক দিলো। আমি আরেক পলক মেয়েটাকে দেখে মোবাইল আনতে গেলাম। নিয়ে এসে আবার ঠিক আগের জায়গায় বসলাম। কিন্তু এখনি চলে গেলেতো হবে না। তাহলেতো আর মেয়েটার সম্পর্কে কিছু জানা যাবে না তাই বুদ্ধি করে মোবাইলের আরেকটা ছোট্ট সমস্যা বের করে মেয়েটিকে প্রাণভরে দেখার জন্য পুনরায় মোবাইল জমা দিতে গিয়ে এক্সিকিউটিভ বলল ৩০ মিনিট বসতে হবে। আমি বললাম আচ্ছা কাজটা করেন কোন সমস্যা নেই। মনে মনে ভাবলাম ৩০ মিনিট কেন যদি ঐ মেয়েটি থাকে তাহলে আমি সারাজীবন এখানে বসে থাকতে আমার কোন কষ্ট হবে না। এবার গার্ড ফারজানা আক্তার বলে ডাক দিতে সেই মেয়েটি উঠে গেল। এবার আমার বোধ হলো যে আমি এতক্ষণ কি স্বপ্ন দেখছিলাম। প্রায় এক ঘন্টা থেকে বসে থেকেও আমার একবারো বুঝতে ইচ্ছে করে নি আমি যাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছি সে আসলে কি হিন্দু নাকি মুসলমান। গার্ডের মুখে ফারজানা আক্তার শুনেই সব স্বপ্ন যেন নিমিষেই কাঁচের মতো ভেঙ্গে গেল। ভেবেছিলাম তার পাশের সিট খালি হলেই সেখানে গিয়ে বসে দু-চারটা গল্প করবো, পরিচিত হবো, পারলে ফোন নাম্বার টা নিব। না কিচ্ছু হলো না। ২০ মিনিট হতে না হতেই গার্ডকে ডেকে বললাম ভাই কত দূর। বলল হ্যা আসুন আপনার হয়ে গেছে। এবার মোবাইল নিয়ে সিম, মেমোরি লাগিয়ে অন করে সোজা গেট দিয়ে বের হয়ে একরাশ হতাশা নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নেমে অটো রিক্সা ডেকে সোজা কলেজ গেটের দিকে রওনা দিলাম। অটোতে বসে বসে ভাবছি কি দরকার ছিল মানুষের মধ্যে জাতি,বর্ণ, গোত্র, ধর্ম সৃষ্টি করার, আমরা মানুষ শুধু মানব ধর্মই যথেষ্ট ছিল নাকি?? এসব ভাবনার মধ্যে কখন যে অটো কলেজ গেটে চলে আসছে সে খেয়াল করিনি। অটোওয়ালা বলল মামা গেটে নামবেন না? আমি নেমে ভাড়ার টাকাটা দিয়ে হোস্টেলের দিকে হাটা শুরু করলাম।।।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
০৬ ডিসেম্বর - ২০১৬
গল্প/কবিতা:
৮ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।