১,
আজ সত্যর বিয়ে , সত্য ,পুরো নাম সত্যব্রত মিত্র । সারা দিন অনেক ধকল গেছে ওর উপর দিয়ে । এখন রাত্রী ১১.০০ , আপন বলতে সত্যর কোন বড় বোন বা ভাবি নাই , তাই পাড়ার ভাবিরাই ওকে বাসর ঘর পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে গেছে , বুকের মধ্যে হাতুড়ি পেটানোর মত একটা অনুভূতি নিয়ে ঘরে ঢুকল সত্য । বিছানাই বসে থাকা মেয়েটির কাল পর্যন্ত একটা অন্য পরিচয় ছিল ,
নিলা, নীলাঞ্জনা নিলা , আর আজ থেকে ওর নাম হবে নীলাঞ্জনা মিত্র , এই সব ভাবতে ভাবতে ই সত্য বিছানার উপর এসে বসল ও । কিন্তু পাশে বসতেই একটা অজানা আতঙ্কে মেয়েটিকে সরে যেতে দেখে সত্য কিছুটা ইতস্থত বোধ করল ও । তবে কি নীলার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়েটা করানো হয়েছে , নিজেকে অপরাধী মনে হল ওর ।
ঘর থেকে বারান্দাতে বেরিয়ে একটা সিগারেট ধরাল ও , "শুনুন", নীলার ডাকে যেন কল্পনা থেকে বাস্তবে ফিরে এল সত্য । সিগারেট নিভিয়ে পিছন ফিরে তাকাল সত্য ।"আপনি আর কক্ষনো এই সব আজে বাজে জিনিস খাবেন না , ঘরে আসুন " , নীলার কণ্ঠে যেন অভিমান ঝরে পরল । বাধ্য ছেলের মত মাথা নাড়তে নাড়তে নীলার পিছন পিছন ঘরে ঢুকল ও ।
২.
বাসরের ফুল গুলোও যেন সত্যের মতই মুখ নামিয়ে বসে আছে , প্রায় ৪৫ মিনিট কেটে গেছে , দুজনই চুপ , , অবশেষে ,নীলাই বলে উঠল "আপনাকে আমার কিছু বলার আছে, কিছু মনে করবেন না ,আমি এই বিয়েটা নিজ ইচ্ছাতে করি নি , বিয়েটা অনেকটা আমার উপর বাড়ি থেকে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে , আমি অমিয় কে ভালবাসি " । অমিয় , বাবা মায়ের দেয়া ভাল নামটা ছিল অমরেন্দ্র দাস , নীলা ছোট্ট করে নামটাকে বানিয়ে দিয়েছিল অমিয় , একটা সরকারি দপ্তরের ছাপোষা কেরানি , মাসিক বেতন ৩৫০০.০০ টাকা ।
অমিয় আর নীলার সম্পর্কের কথা নীলার বাসায় জানাজানি হওয়ার পর , অমিয় ওর এক পিসতুত খুরকে দিয়ে নীলার বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠায় , স্বাভাবিক ভাবেই প্রস্তাব টা অগ্রাহ্য হই ।
তাই নীলা আজ সত্যর বাসর ঘরে পৌঁছে গেল আর অমিয় তার বারান্দার ভাঙা চৌকিতে শুয়ে এক প্যাকেট বিড়ির ধোঁয়াই নীলাকে
নিয়ে দেখা টার স্বপ্নগুলোর একটা ইতি খুঁজে ফিরছে ।
পকেটটা গড়ের মাঠ হলে কি হবে অমিয়র স্বপ্ন কিন্তু শুধু গড়ের মাঠেই সীমাবদ্ধ ছিল না , ওর স্বপ্ন পাহাড় চূড়া আর সমুদ্র তীরে ঘুরে বেড়াত , ও প্রায় ভাবত নীলাকে নিয়ে পাহাড় এ ঘুরতে যাবে ,আকাশের একপাশে যখন সূর্যটা টুপ করে ডুব দিয়ে চাঁদ হয়ে অন্য পাশে মাথা তুলবে, চাঁদের আলোনস্নান নীলাকে আরও আকর্ষণীয় লাগবে ,তখন নীলাকে বুকের মধ্যে নিয়ে কেবল একটা কথাই অমিয় বলবে " ভালবাসি তোমাকে , সত্যি অনেক বেশি ভালবাসি তোমাকে "
৩.
অমিয়ের মুখে বলা ভালবাসি কথা টা আজ ও নীলার কানে বেজে উঠে । অমিয়ের অল্প একটু দুষ্টুমি , দু বাহুর আড়ালে নীলার সে হারিয়ে যাওয়া , কোনটাই নীলা কোন দিন ভুলতে পারবে না ।
নীলার সত্য গুলো সত্তের কাছে , হিরোশিমা আর নাগাসাকিতে পড়া পারমানবিক বোমার মতই মনে হল । নিজের কষ্টকে আড়াল করে , বিছানা থেকে একটা বালিশ তুলে , সোফার উপর শুয়ে পরল সত্য মুখে বলল " শুয়ে পর নীলা , অনেক রাত হয়েছে " ।
নীলার ভিতরে একটা অস্থিরতা কাজ করছিল , সুধু মনে হচ্ছিল , একটা নিরপরাধ মানুষকে সে কষ্ট দিচ্ছে , মানুষটা হইত অনেক স্বপ্ন সাজিয়ে ছিল আজকের এই রাতটাকে ঘিরে , তার স্বপ্ন গুলোতো কোন দোষ করে নি , তাহলে কেন শাস্তি পাবে , নীলা মনে মনে প্রতিজ্ঞা করল , আজ থেকে ওর একটাই পরিচয় আর টা হল ও সত্যর স্ত্রী , মন থেকে না পারলে , দরকার পরলে অভিনয় করবে , কিন্তু স্বার্থপরের মত এই মানুষটাকে আর কষ্ট দেবে না ।
সত্যর চিন্তা ভাবনা টা কিন্তু সম্পূর্ণ আলাদা , ওর বিশ্বাস একদিন নীলা ওকে মন থেকে ভালবাসবে আর সে দিনই হবে ওদের ফুলসজ্জা , তার আগে নয় । সত্য জানে যে ফুলসজ্জা মানে কেবল মাত্র বাজার থেকে কিনে আনা ফুল দিয়ে বিছানাই শারীরিক মিলনই নই ফুলসজ্জা হল দুটি মনের মিলন । এমন অনেক দম্পতি আছেন যারা ১০ বছর হয়ে গেছে একসাথে সংসার করছে , এক বিছানাই ঘুমাচ্ছে , অনেকটা অনিচ্ছা সত্তেও স্ত্রী দের শারীরিক মিলনে লিপ্ত হতে হই , অনেকটা নিরব ধর্ষণের মত , যার কোন বিচার সম্ভব না । দিনের পর দিন এই ভাবেই চলছে , অনেকটা কারখানার মেশিনের মত , চলতে চলতে হইত একদিন তাদের চলার পথটা ফুরিয়ে যাই , কিন্তু মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তারা বোঝে না , স্বামী-স্ত্রির সম্পরক টা আসলে কি ? কেন তারা বিয়ে করেছে ? প্রয়োজন টা কি শুধুমাত্র শারীরিক ?
সত্য তার ভাবনাই অটল , নীলার সাথে তার ফুলসজ্জা সে দিনই হবে যে দিন নীলা টাকে মন থেকে আপন করে নেবে , তার আগে না