এলাকার সবাই জানে যে নিরব কেমন প্রকৃতির ছেলে । নিরবের পরিবারে আছে ওর মাবাবা সহ ওর বড় দুই ভাই,বড় এক বোন ও ওর ছোটবোন দোয়েল । নিরব ভাই বোনদের মধ্যে চার নাম্বারে আর ভাইদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট । নিরব সবসময় সবার সাথে রং তামাসা করে । নিরব প্রায়ই ওদের মহল্যার দূরবর্তী এক লোকমান দুলাভাইর দোকানে চাপান খেতে যায় ।
আবুল (পথচারী):-কিরে নিরব কই যাও?
নিরব:-আরে আবুল ভাই আমি কই যাই তা তুমি জাননা?
আবুল:-জানিতো ভাই,কিন্তু তোর সাথে কথা বলতে আমার খুব ভালো লাগে,তাই জিজ্ঞেস করলুম ।
নিরব:-তোমারে কথা কইতে তো আর কেউ মানা করে না, কিন্তু তুমি আবুল মার্কা প্যাচ দিওনা ।
আবুল:- কী কইলি তুই?(এই কথা বলে আবুল নিরবের গায়ে সিগারেটের ধোয়া দিয়ে দিল ।)
নিরব:-রেগে গিয়ে পান চিবিয়ে আবুলের গায়ে পানের পিক দিয়ে দিল ।
আবুল:- কিরে নিরইব্যা তুই আমার গায় পিক দিলি ক্যান?
নিরব:-তুমি আমার গায় ধোয়া দিছ,তাই । As you so so you reap.
[ছাতা হাতে এলাকার এক গুনী বৃদ্ধ লোকের আগমন ।]
গুনী বৃদ্ধ :-কি হইছে তোমাদের? ঝগড়া করো কেন?
আবুল:- চাচা নিরব আমার গায়ে পানের পিক দিছে, এই দেখেন ।
গুনী বৃদ্ধ:- হায় হায় কী অবস্থা এই রকম পিক মানু মানুর গায় দেয় । কিরে নিরব এমতে আবুইল্যার গায় পিক দিলি ক্যান ?
নিরব:- চাচা আবুইল্যা আমার গায়ে সিগারেটের ধোয়া দিছে তাই আমি ওর গায় পিক দিলুম,সেকী মোর কোনো অপরাধ?
গুনী বৃদ্ধ:- না এটি তো অপরাধ হইতে পারে না । [এই কথা বলে গুনী বৃদ্ধ তার ছাতা দিয়ে আবুলরে দুইটা পিঠান দিল,চাচার ছাতা ভেঙ্গে গেল আবুল কষে দৌড় দিল,সামনে গিয়ে আবুল পরল খাদে । সেকি আবুলের অবস্থা । চাচার ছাতা গেল ভেঙ্গে, আর আবুল এই প্রচন্ড শীতের মধ্যে পরলো নোংড়া খাদে ।]
[সবার প্রস্থান]
[দুলাভাই লোকমানের দোকানে নিরবের আগমন]
নিরব:- দুলাভাই চাটা দাওতো ।
দুলাভাই:- এই নাও চা আর এই নাও টা । (একটা লাঠীর মাথায় একটা কাগজে টা লেখা)
নিরব:- চা খাচ্ছে আর টাটি ওর কাছে মাটিতে পুতল । [এটি নিরবীয় আইন]
[হঠাৎ ওদের এলাকার ইন্টারমিডিয়েট পড়ুয়া নূপুর নামে এক মেয়ের আগমন]
নূপুর:- কিরে নিরব ভাই কেমন আছো?
নিরব:- ভালো ছিলাম না,তবে এখন ভালো ।
নূপুর:- ক্যান এখন ভালো ক্যান?
নিরব:- তোমার রসগোল্লার মত চেহারাটা দেখে ভালো না থেকে আর যাই কই?
নূপুর:- তুমি নিরব ভাই বেশি কথা কও তাই তেমারে আমার বেশ ভালো লাগে । কারন আমি নিজেই বেশি কথা কই ।
[দুলাভাই পান খায় আর একটু আড়ে আড়ে চায়]
নিরব:- আমার যে চেহারা,তাতে আমারে ভালো লাগার আর কী আছে?
নূপুর:- তোমার চেহারা না,তোমার কথাবার্তা আমার বেশ ভালো লাগে । [চোঁখে টিপ দিয়ে]
নিরব:- হায় হায় তোমার চোখে কী ময়লা গেছে?
[এই কথা বলে নিরব পাশের ফার্মেসি থেকে একটা চোখের ড্রপ এনে নূপুরের চোখে দিতে গেল]
নূপুর:- নারে নিরব ভাই এখন ঠিক হইছে । (কষ্ট পেয়ে মনে মনে বলে এখন ন্যাকা সাজছে) ।
নিরব:- ওহ তাহলে ড্রপটা বাড়ি নিয়ে যাও ।
নূপুর:- মূখে ভেংচি দিয়ে চলে গেল ।
[তিন জনারই প্রস্থান]
[দুপুর গড়িয়ে এল,নিরব এখন বাড়ি ফিরল]
নিরবের বাবা:- কিরে হারামজাদা সারাদিন কই ছিলি?(হাতে একটি লাঠী নিয়ে) ।
নিরব:- বাবা তোমার হাতে লাঠী ক্যান?
বাবা:- আমার গর্দভটাকে উত্তম মাধ্যম দেব তাই । (এই বলে নিরবকে পিঠান দেওয়া শুরু করল) ।
[নিরবের মা এসে লাঠীটা ধরল] ।
বাবা:- ওই তুমি আমার লাঠী ধরলা ক্যান?
মা:- আমার ছেলেকে মারবা আর আমি চেয়ে চেয়ে দেখবো?
বাবা:- তোমার বখাইট্টা ছেলেকে মারবো না তো কি করুম?
[এই উভয়ের মধ্যে তুমুল ঝগড়া লেগে গেল ।]
[নিরব আর নিরবের ছোট বোন দোয়েল চেয়ে চেয়ে দেখে আর হাসে । নিরব আবার এ ধরনের ঝগড়া ঝাটি দেখতে খুব মজা পায় ।]
নিরব:- দোয়েল আপু এভাবে একদিন তোর স্বামীর সাথে তোর ও ঝগড়া হবে ।
দোয়েল:- ইস্ তোর বউ নূপুরের সাথে ওতো তোর এভাবে ঝগড়া হবে ।
নিরব:- ওর বোনের কান ধরে বলল বেশি বুঝ না ।
দোয়েল:- হুম বেশি বুঝি ফাজিল । চল দাদা আমরা আব্বা আম্মাকে মিলিয়ে দিই ।
নিরব:- ঠীক কইছ ফাজিলা,চল আমরা আব্বা আম্মাকে মিলিয়ে দিই ।
[নিরব ওদের সামনের বারান্দায় দুটি চেয়ার দিয়ে ওর আব্বা আম্মাকে ওনেক কষ্ট করে বসাইছে ।]
নিরব:- দোয়েল দুইটা গ্লাসে চিনির পানি নিয়ে আয় ।
দোয়েল:- নিয়ে আসতেছি দাদা । please wait for while.
[ওর মাবাবা একে অপরের দিকে চায় আর ভেংচি দেয় ।]
দোয়েল:- এই নাও দাদা দুই গ্লাস চিনির পানি ।
নিরব:- মা এই চিনির পানি তোমার স্বামীকে খাইয়ে দাও ।
মা:- আস্তে আস্তে হাসে আর ওর বাবাকে চিনির পানি খাইয়ে দেয় ।
নিরব:- বাবা এই চিনির পানি তোমার প্রিয়তমা বউকে খাইয়ে দাও ।
বাবা:- হাতে চিনির পানি গ্লাস নিয়ে নিরবের কান ধরে বলে বেশি শেয়ানা হয়ে গেছ না? এই বলে ওর আম্মাকে খাইয়ে দেয় ।
[ঝগড়া শেষ হয়ে যায়]
[সবার প্রস্থান]
এলাকায় হাডুডু খেলার আয়োজন করা হয়েছে । এলাকার চেয়ারম্যানসহ গন্যমান্য অনেক ব্যাক্তির আগমন । পিতা এবং পূত্রদের লড়াই ।
[শুরু হল হাডুডু]
নিরবের আব্বা:- নিরবের আব্বা প্রথমেই হেক হেক বলতে বলতে নিরবের কোটে গিয়ে ছুট দিল ।
নিরব:- নিরব ঝাপটি দিয়ে পরে ওর আব্বার মোটা পা ধরে রাখলো । পাশাপাশি নিরবের বন্ধুরা ও এসে ওর আব্বার পা ঝাপটি দিয়ে ধরলো ।
নিরবের আব্বা:- উহ পায় খুব ব্যাথা পেয়েছি হারামজাদা, এই বলে লজ্জা পেয়ে তার কোটে চলে গেল ।
নিরব:- হেক হেক বলতে বলতে ওর আব্বার কোটে ছুট দিতে গেল । (এমন এক মূহুর্তে নিরবের আব্বাসহ তার বন্ধুরা ঝাপটি দিয়ে পড়ে নিরবের পা জড়িয়ে ধরলো)
[অবশেষে পূত্র নিরবদের জয় হল]
রাতে নিরব ঘুমাতে গেল আর মশারা শব্দ করে কামড়ানো শুরু করে দিল ।
নিরব:- ওরে তোরা আমারে কামড়াইলে কামড়া কিন্তু তোদের ভ্যান্নর ভ্যান্নর(শব্দ) হরা লাগে কিসে?
[এই কথা বলে নিরব মশারিটা খুলে পায়ের নিচে দিয়ে ধানের মত মলতেছে] ।
[ নিরবের বোন দোয়েলের আগমন ]
দোয়েল:- দাদা পাগলা তোরে মশারা কামড়াবেনা তো কি করবে? আমিতো তোকে শাষ্তি দেওয়ার জন্য গোয়াল ঘরের কাছের জানালাটা খুলে রেখেছি ।
নিরব:- ওরে হারামজাদি দাড়া আজ তোর একদিন কি আমার দুইদিন । কত ধানে কত গম আমি আজ তোরে বুঝাবো ।
[দোয়েল দোয়েল পাখির মত দৌড়ে চলে গেল]
[উভয়ের প্রস্থান]
[নিরব,নিরবের বড় বোন,বড় ভাই,মেজ ভাই ও ছোট বোনের আগমন]
নিরব:- কিরে বড় ভাইয়া তুই প্রেম ট্রেম করোনা?
বড় ভাই(নয়ন):- তা তোর দরকার কী বান্দর?
নিরব:- আমার দরকার না, ভাবি দরকার । কিরে মেজদা ভন্ড তুই কতগুলার সাথে প্রেম করো?
মেজদা(নিলয়):- কতগুলার সাথে করবো,একটার সাথেই করি ।
নিরব:- ভালো । কিন্তু সাত আটটার সাথে প্রেম করলে কিন্তু তোর বর্তমান প্রেমিকাকে আমি সব জানিয়ে দেব ।
মেজদা:- আরে না আমি ভন্ড না ।
নিরব:- কিরে বড় আপা তুই কোন প্রেম করোনা?
বড়বোন:- আরে নাহ ব্যায়াদব ।
নিরব:-একটা দুলাভাই খুব দরকারতো তাই বললুম ।
বড় বোন:- ইস দুলাভাই দেখার কি সখ ।
নিরব:- সখ থাকবে না তো কি থাকবে দুলাভাই আসলে তোরে পিটুনি দেবে আর আমি মজা পাব ।
বড় বোন:- দেখা যাক হারামজাদা ।
নিরব:-ওর ছোট বোন দোয়েলের কান ধরে আমার পিচ্চি পাগলিটাতো প্রেম বানানই করতে পারেনা ।
দোয়েল:- দাদা হারামজাদা আমি তোমার মত মূর্খ্য না ।
[সবার প্রস্থান ।]
[আবুল আর নূপুরের বান্ধবি তিশার আগমন]
তিশা:- কিরে আবুইল্লা ভাই নতুন জামা গায় দিয়া কই যাও? তোমারেতো একদম শাহরুখ খানের মত লাগতেছে ।
আবুল:- হুম । তোরেতো একেবারে ময়ূরীর মত লাগতেছে ।
তিশা:- কি কইলা তুমি আবুইল্লা? (এই বলে আবুলের গায়ে ঢিল মারলো তিশা )
আবুল:- হায় হায় তুই আমার নতুন জামাটা নষ্ট করে দিলি?
তিশা:- থাক আবুইল্লা ভাই আমি তোমার জামাটা ধুইয়া দেবানি । এহন তুমি কই যাও?(হেসে দিয়ে) ।
আবুল:- কই আর যাবো?জানোনা আমি তোমাদের এলাকার ঘরজামাই ।
তিশা:- ওহ আচ্ছা । তুমি তোমার শশুরের ঘরের কোনখানে থাকো?
আবুল:- ক্যান? আমি পিছনের বারান্দায় থাকি ।
তিশা:- ওহ তুমিতো ঘরজামাই না,তুমিতো বারান্দা জামাই ।
আবুল:- হুম আমি বারান্দা জামাই ।
[উভয়ের প্রস্থান]
[দুপুর হয়ে গেল,নিরবের পরিবারের সবাই ভাত খেতে বসল]
নিরব:- হায় আমার প্লেটের মাছগুলো কই?
দোয়েল:- দাদা আমি চুরি করে নিয়ে গেছি ।
নিরব:- ক্যান নিছো ক্যান চোর?(কান ধরে)
দোয়েল:- দাদা মোদাচ্ছের বিড়ালকে দিছি ।
নিরব:- ভালো করছস চোর । আমি খুঁশি হইলাম । কারন মোদাচ্ছের দুর্বল,ও জোর করে খেতে পারে না । আর ও বলদ তাই ওর নাম মোদাচ্ছের রাখছি ।
দোয়েল:- ঠীকাছে দাদা । কিন্তু মোদাচ্ছেরের কাছ থেকে শয়তান হুনুফা বিড়াল সব মাছ নিয়ে গেছে । আর এই মাছ নিয়া মোটা জাভেদ বিড়াল আর চালাক আশরাফুল বিড়াল মারামারি বাজাইছে ।
নিরব:- ওহ তাই নাকী? বিড়ালতো আমার আরেকটা আছে ।
দোয়েল:- দাদা কই বিড়ালতো আমাদের মোট ৪ টা,আরেকটা পাইলা কই?
নিরব:- ক্যান আরেকটা বিড়াল আমার ছোটবোন দোয়েল ।
[ওর মা বাবা,ভাই বোন হাসতেছে]
দোয়েল:- দাদা আমাদের কুকুর মোট দুইটা । একটা মন্টু কুকুর,আরেকটা কে বলোতো দাদা?
নিরব:- কই আমাদের কুকুরতো একটা । আরেকটা আবার পাইলা কই?
দোয়েল:- ক্যান দাদা আরেকটা নিরব কুকুর(তুমি) ।
নিরব:- যেমন কুকুর,তেমন মুগুর হাহাহা । (দোয়েলের কান ধরে) ।
[ওর মা বাবা,ভাই বোন ওদের কান্ড দেখে হাসতেছে] ।
[সবার প্রস্থান]
এলাকায় এক ভন্ড টাইপের ছেলে(ফয়সাল) আছে,সারাদিন শুধু গানগায় । ছেলেটির নাম ফয়সাল ।
ফয়সাল:- বেঁচে থেকে লাভ কী বল তোকে ছাড়া (হাত উড়াইয়া উড়াইয়া গান গাইতেছে) ।
আবুল:- ঐ পুলা এদিক আয়,সারাটাদিন শুধু এত গান গাস ক্যারে?
ফয়সাল:- ভাই আমার ভালো লাগে তাই ।
[নিরবের আগমন]
নিরব:- কী হইছে এখানে?
আবুল:- ভাই এই পুলাটা সারাদিন শুধু গান গায় ।
নিরব:- ফয়সাল তুমি কী গান গাও?
ফয়সাল:- ভাই- বেঁচে থেকে লাভ কী বল তোকে ছাড়া ।
নিরব:- কী কইলা তুমি,বেঁচে থেকে কোনো লাভ নেই?মইররা যাইয়া লাভ আছে? ঐ আবুইল্লা আমার চাকুটা নিয়া আয় ।
ফয়সাল:- ভাই আমার ভুল হইয়া গেছে,ভুল হইয়া গেছে ।
নিরব:- না যখন বেঁচে থেকে তোমার কোন লাভ নাই,তখন এলাকার বড় ভাই হিসেবে আমার একটি দায়িত্ব আছেতো ।
আবুল:- ভাই এই নাও তোমার চাকু ।
নিরব:- চাকু হাতে নিয়া ফয়সালের পেটের কাছে ধরলো ।
ফয়সাল:- ভাই ক্ষমা কইরা দ্যান (হাত পা ধরে) ।
নিরব:- তোমারে এক শর্তে ক্ষমা করতে পারি,আর তা হল তোমার এখন স্টাইল করে গান গাইতে হবে- বেঁচে থেকে লাভ আছে,মইররা যাইয়া কোনো লাভ নাই ।
ফয়সাল:- আচ্ছা ভাই আচ্ছা বলে গান গাইল ।
নিরব:- ফয়সাল কাছে আসো । পৃথিবীতে বাইচা থাকো মইরা যাইয়া কোনো লাভ নাই । মইররা যাইয়া কোনো কী নাই?
ফয়সাল+আবুল:- কোন লাভ নাই ।
[ফয়সালের প্রস্থান]
আবুল:- ভাই আমহে একখান মাল । দেখবেন এই পুলাডা আর জীবনেও এই গান গাইবে না । দ্যাখেন না বস আমহের কারনে সেই গুনী বৃদ্ধর ছাতির পিঠান খাইয়া আমি ভালো হইয়া গেছি ।
নিরব:- পাম একটু কম দে । তুইও যে একখান মাল হ্যাও মুই জানি । চল বাড়ি যাই ।
[উভয়ের প্রস্থান]
সকাল হল । নিরবের আগমন ওর দুলাভাইর দোকানে ।
নিরব:- দুলাভাই একটা গোল্ডলিপ দাওতো । (চাটা খেয়ে) ।
দুলাভাই:- এই নাও গোল্ডলিপ (অবাক হয়ে) ।
নিরব:- সিগারেটটা মুখে দিয়ে!- একটা ম্যাচ দাও দুলাভাই ।
দুলাভাই:- এই ম্যাচ নাও ।
নিরব:- সিগারেট ধরাতে গিয়ে মনে পড়ল যে ও সিগারেট খায় না । এই বলে নিরব লাফ দিয়ে চিৎকার করে বলল ও সিগারেট খায় না ।
[দুলাভাইসহ উপস্থিত দোকানের সবাই হেসে দিল]
দুলাভাই:- নিরব শুধু বাকি খাও । তোমার অনেক টাকা বাকি হইছে । টাকা দিবা কবে?
নিরব:- দুলাভাই তুমি জাননা যে আমার চাচাতো বোন নাইকা শাবনূর আপা আছে? (চাপাবাজ) ।
দুলাভাই:- জানিতো । কিন্তু শাবনূর আপাতো কখনও তোমাদের বাড়িতে বেড়াইতে আসলো না?
নিরব:- আরে দুলাভাই কীভাবে আসবে? শাবনূর আপাতো ব্যাস্ত লোক ।
দুলাভাই:- বুঝলাম । তা টাকা কবে দিবা?
নিরব:- ওই দুলাভাই আমার বিকাশ একটু বন্ধ আছেতো, বিকাশ খুললেই শাবনূর আপা ঢাকা থেকে আমার জন্য টাকা পাঠাইয়া দিবে ।
দুলাভাই:- আচ্ছা দিও কিন্তু ।
[হঠাৎ নিরবের এলাকার দুটি ভন্ড ছেলের আগমন । রফিক আর হাবিব]
রফিক:- গাজী (নিরব) শোনো হাবিব আমারে বারবার আমার দাদার নাম ইয়াকুব আর নানার নাম ইয়াকুব বলে চ্যাতায় ।
হাবিব:- নিরব মামা শোণো । ওর নানার নাম ও ইয়াকুব আর দাদার নাম ও ইয়াকুব,এটা বলা কী মোর কোনো অপরাধ?
নিরব:- আরে না অপরাধ হবে ক্যান? হাবিব,রফিক আমি নতুন একটা বিষয় আবিষ্কার করছি ।
হাবিব:- কি বিষয় মামা?
রফিক:- কী বিষয় গাজী?
নিরব:- চিন্তা করছি রফিকের নানার নাম ও ইয়াকুব আর দাদার নাম ও ইয়াকুব যখন,রফিকের আব্বার নাম ইলিয়াস! তাই রফিক যেন অন্য এক ইলিয়াসের মেয়েকে বিয়ে করে,তাহলে রফিকের ছেলের দাদার আর নানার নাম ও ইলিয়াস হবে ।
[দোকানের উপস্থিত সবাই তালি দিচ্ছে]
হাবিব:- আরে মাম্মা ঐ কান্দার ইলিয়াসের এক বোক্দা মাইয়া আছে ওইডা রফিকের জন্য আনলেতো হয় ।
নিরব:- ওহ তাই! তাহলে তো জোশ অইবো ।
রফিক:- গাজী তোমাদের আমারে এরকম ইনলবন করা ঠীক না ।
নিরব:- ইনলবন আবার কীতা?
রফিক:- ইন মানে ইন আর লবন অর্থ সল্ট,সমান সমান ইনসাল্ট! মানে অপমান ।
নিরব:- ওরে হারামজাদা তোর মাথায় তো অনেক ঘিলু ।
[সবার প্রস্থান]
নিরবঃ- দুলাভাই চাটা দাও ।
দুলাভাইঃ- এই নাও ।
নিরবঃ- ধন্যবাদ ধুলাভাই ।
দুলাবাইঃ- নিরব ঐ পিছনে তোমাকে নূপুর ডাকতেছে ।
নিরবঃ- আইচ্ছা যাইতেছি ।
[নিরব চলে গেল নূপুরের কাছে । ওরা দুজন ছাড়া আর কেউ নেই ওখানে ]
নিরবঃ- কিরে নূপুর আমায় তুমি ডাকিছো কেনো?
নূপুরঃ- তোমার সাখে আমার কথা বলতে ইচ্চা করতেছে,তাই ডাকলুম ।
নিরবঃ- ওহ নূপুর তুমি তোমার নামকরনের স্বার্থকতা বিচার করতে পারো? যেমন পরিক্ষায় বিভিন্য কবিতা বা গল্পের নামকরনের স্বার্থকতা বিচার করতে হয় ।
নূপুরঃ- আরে নাহ ! স্বার্থকতা আবার বিচার করুম কিভাবে?
নিরবঃ- আচ্ছা আমি বিচার করতেছি । (এই বলে নিরব ওর পকেট থেকে একজোড়া নূপুর বের করে নূপুরের পায়ে পরিয়ে দিল)
নূপুরঃ- ধন্যবাদ তোমাকে । (হেসে হেসে)
নিরবঃ- আচ্ছা দেখো নূপুর তোমার নাম ও নূপুর, আর তোমার পায়ে ও নূপুর,আর এইটা হইল তোমার নামকরনের স্বার্থকতা ।
নূপুরঃ- ওহ নিরব তোমাকে একদম মোশাররফ করিমের মত লাগতেছে । তোমার আচরন ও মোশাররফ করিমের মত ।
নিরবঃ- তাই বুঝি? আর এর জন্যই তোমাকে নাইকা তিশার মত লাগতেছে ।
নূপুরঃ- নিরব তোমাকে না আমার বেশ ভালো লাগে । তোমাকে একটা কথা বলব বলব but পারতেছি না ।
নিরবঃ- আমার ওতো তোমাকে ঢের ভালো লাগে । বলো কি কথা বলবা? সমস্যা নাই ।
নূপুর:- আমি তোমার প্রেমে পরে গেছি নিরব । I LOVE YOU.
নিরবঃ- আমিতো তোমাকে যেদিন দেখেছি,সেদিন থেকেই তোমার প্রেমে পড়ে গেছি । I LOVE U TOO নূপুর ।
[এবার একে অপরকে জড়িয়ে ধরলো,শুরু হল গান]
হে যেদিন থেকে দেখেছি তোমায়,
সেদিন থেকে তুমি কেড়ে নিয়েছো আমায় ।
তোমায় দেখে আমি হয়েছিগো অন্ধ,
নয়তো তুমি মন্দ,তুমি আমার ছন্দ ।
খেতে গেলে তুমি,শুইতে গেলে তুমি,
যেদিকে তাকাই শুধু তুমি আর তুমি ।
তোমার ও প্রেমে বুঝি মরে যাবো আমি,
লেখাপড়া,গাড়ি-বাড়ি চাইনা আমি কিছু,
তোমার জন্য আমি এ জগতে হতে পারি নিঁচু ।
হায় যেদিন থেকে দেখেছি তোমায়,
সেদিন থেকে তুমি কেড়ে নিয়েছো আমায় ।
[গান শেষে একে অপরকে জড়িয়ে ধরলো]
[নূপুরের পিতা এমদাদের আগমন]
এমদাদঃ- কিরে তোরা কি করো?
নিরবঃ- চাচা একটু ঠাট্টা করতেছি ।
নূপুরঃ- হুম আব্বা ।
এমদাদঃ- এভাবে তো আমার জীবনে আমি কেউকে ঠাট্টা করতে দেখি নাই । এটা কী ডিজিটাল ঠাট্টা?
নিরবঃ- চাচা মানে ঐ ছোটকালের বউ পূতুলের কথা মনে পড়ছে তো তাই ।
নূপুরঃ- হুম । আব্বা তুমি এহন যাওদিন ।
এমদাদঃ- যাইতেছি তোরা আরো ঠাট্টা কর ।
[নূপুরের পিতার প্রস্থান]
নিরবঃ- প্রিয়তমা টিয়া পাখী,ময়না পাখী তোমাকে ছাড়া আমার বাঁচা সম্ভব নয় ।
নূপুরঃ- প্রিয়তম তোমাকে ছাড়া ও আমার বাঁচা সম্ভব নয় ।
নিরবঃ- আইচ্ছা ঠীকাছে তোমাকে ছেঢ়ে আমি যাবনা । তুমি ভাত খেয়েছ কি দিয়া?
নূপুরঃ- খেয়েছি আলু ভর্তা আর ডাল দিয়ে । যদিও মাছ ছিলো,কিন্তু আমি খাইনি ।
নিরবঃ- কেনো মাছ খাওনি?
নূপুরঃ- মাছে ফরমূলা দেয়,তাই ।
নিরবঃ- হাহাহা! আরে বোকা ফরমূলা না,ফরমালিন । ফরমূলা মানেতো নমূনা ।
নূপুরঃ- ওহ ছরি বুঝতে পারিনি । নিরব তোমার ফোন নাম্বারটা দাও ।
নিরবঃ- ০১৭……৯৯ এই নাও ।
[উভয়ের প্রস্থান]
[দুলাভাইর দোকানে চায়ের আড্ডা বইছে । নিরব বাড়িতে ।
আবুল রফিক হাবিব সহ আরো অনেকে]
আবুলঃ- আমার ওস্তাদ নিরব গাজীতো কাইলকে ঢাকা চইলা যাইবো । আমার খুব খারাপ লাগতেছে ।
দুলাভাইঃ- ক্যান ঢাকা যাইয়া কী কইরবো?
আবুলঃ- ওস্তাদের ইন্টারমিডিয়েট পরিক্ষা শেষ তো তাই কোচিং কইরতে যাইবো ।
রফিকঃ- আহ তোমার ওস্তাদ একটা রসিক লোক । আমরা মিস করবো ।
হাবিবঃ- হ আমরা সবাই মিস্ করবো ।
[সবার প্রস্থান]
[নিরবের এইচএসসির রেজাল্ট প্রকাশিত হয়,নিরব সকলকে কাঁদিয়ে কোচিং করার জন্য ওর ছোটকালের বন্ধু আক্কাসের কাছে সাভার চলে যায়]
নিরবঃ- কেমন আছো আক্কাস?
আক্কাসঃ- এইতো বন্ধু ভালো আছি ।
[স্মৃতিসৌধে নিরব আর আক্কাসের আগমন]
আক্কাসঃ- নিরব চল নবীনগরের স্মৃতিসৌধে যাই ।
নিরবঃ- চল ।
[পথে আগমন এক জুতা সেলাই করা লোকের]
জুতাসেলাই ওয়ালা- এ এতালাই এতালাই এতালাই(কর্কষ ভাষায়) ।
নিরবঃ- আক্কাস এতালাই এতালাই আবার কেতালাই?(অবাক হয়ে) ।
আক্কাসঃ- এতালাই পরে বুজবানি,আগে ক কেতালাই আবার কী?
নিরবঃ- ওরে হারামজাদা । কেতালাই মানে এতালাই কী?
আক্কাসঃ- এতালাই মানে জুতাসেলাই ।
নিরবঃ- ওহ । এই জুতাসেলাই ভাই একটু দাড়ানতো ।
জুতাসেলাইওয়ালাঃ- কী ভাই?
নিরবঃ- ভাই আপনি এতালাই না বলে জুতাসেলাই বলতে পারেন না?
এতালাই অনেকেই বুঝে না,জুতাসেলাই বললে সবাই বুজবে এবং আপনার কাস্টমার ও বেড়ে যাবে ।
জুতাসেলাইওয়ালাঃ- ভাই আপনার দরকার আছে? (কর্কষ ভাষায়) ।
[এতালাই এতালাই চ্যচানি দিতে দিতে জুতাসেলাইওয়ালার প্রস্থান ]
[ওরা দুই বন্ধু পৌছে গেল স্মৃতিসৌধে]
নিরবঃ- ঐ দেখ আক্কাস ওখানে উন্মুক্ত মন্ঞ,চল ওখানে গিয়ে ঘুরে আসি ।
আক্কাসঃ- চল তাহলে ।
নিরবঃ- হায় হায় এতে দেখতেছি লেখা “প্রবেশ নিষেধ” ।
আক্কাসঃ- ও হ্যা তাইতো ।
[এক পুলিশের আগমন]
নিরবঃ- পুলিশ ভাই ভিতরে আসা যাবে?
পুলিশঃ- না । দেখেন না লেখা আছে “প্রবেশ নিষেধ”?
নিরবঃ- জ্বি দেখিতো কিন্তু মন্ঞের নামতো উন্মুক্ত মন্ঞ । তার মানে খোলা মন্ঞ ।
পুলিশঃ- করার কিছু নাইতো ভাই ।
আক্কাসঃ- আরে চল নিরব ।
নিরবঃ- চল,কিন্তু অনেক কষ্ট পাইলাম যে উন্মুক্ত মন্ঞ উম্মুক্ত না তাই ।
[ওরা দুই বন্ধু স্মৃতিসৌধের সব জায়গা ঘুরে চলে গেল বাসায়]
[রাত ৮ টার সময় নূপুর নিরবকে ফোন দিছে]
নিরবঃ- হ্যালো প্রিয়তমা কেমন আছো?
নূপুরঃ- ভালো আছি জান । তুমি কেমন আছো?
নিরবঃ- তোমায ছাড়া কী আর ভালো থাকা যায়?
নূপুরঃ- ক্যান যাবে না আমায় ছাড়া ভালো থাকা? তোমার ভালোবাসার মধ্যে কী কোনো খাদ নেই?
নিরবঃ- কী বল তুমি? কয়লা ধুইলে যেমন ময়লা যায়না,ঠীক আমাকে ধুইলে ও ভালোবাসা শেষ হয় না ।
নূপুরঃ- ওহ ধন্যবাদ জান । তুমি এখন কী করো?
নিরবঃ- এইতো শুয়ে আছি । তুমি কি করো ।
নূপুরঃ- আমি বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা দেখি । তুমি দেখনা?
নিরবঃ- না আমি ফুটবল খেলা পছন্দ করি না । খেলার ফলাফল কী?
নূপুরঃ- ব্রাজিল ৩ আর বাংলাদেশ ০ গোল । শচীন টেন্ডুলকার ২ গোল দিছে ।
নিরবঃ- হাহাহা । তুমি কোন চ্যানেলে খেলা দেখ?
নূপুরঃ- মনে হয় এটা স্টার জলসা! ।
নিরবঃ- হাহাহা পাগলী বাংলাদেশতো বিশ্বকাপ ফুটবলে চান্ঞই পায় নাই । আর শচীন টেন্ডুলকার হচ্ছে ক্রিকেট খেলোয়াড় ।
নূপুরঃ- ওহ! নিরব তাহলে এখন রাখো,আবার সকালে কথা হবে । bye..(ভিসন লজ্জা পেয়ে) ।
নিরবঃ- আচ্ছা পাগলি বাই গুড নাইট, আল্লাহ হাফেজ ।
[নিরব গেল চুল কাটাতে । ওর বন্ধু আক্কাস ওর সাথে গেল সাভার বাজারে ।]
আক্কাসঃ- তুই চুল কাটা,আমি ওদিক থেকে আসতেছি ।
নিরবঃ- আচ্ছা । ওই ভাই চুল কাটান যাবেনা?
কাটিং ম্যানঃ-হ্যা যাবে । ভাই আপনি কি কাটিং দিবেন?
নিরবঃ- কি কি কাটিং আছে?
কাটিং ম্যানঃ- রাহুল কাটিং,প্রিন্স কাটিং,সালমান কাটিং,গজনি কাটিং,মফিজ কাটিং,বাংঙ্গালী কাটিং,স্কয়ার কাটিং,নেইমার কাটিং (ক্যানভাসারের মত ঘন ঘন বলতে লাগল)।
নিরবঃ- ভাই থামুন । আমি এর একটা ও কাটিং দেব না ।
কাটিং ম্যানঃ- তাহলে আপনি কী কাটিং দিবেন?
নিরবঃ- আমি নিরব গাজী কাটিং দেব ।
কাটিং ম্যানঃ-ভাই নিরব গাজী কাটিং তো জীবনে শুনলাম না ।
নিরবঃ- আপনি জীবনে কী সরাসরি নেইমারকে দেখেছেন?
কাটিং ম্যানঃ- না দেখেনি ।
নিরবঃ- কিন্তু আপনি আজকে যে নিরব গাজী কাটিং দিবেন তাকে আপনি সরাসরি দেখছেন । তাই বেশি কথা না বলে চুল কাটা শুরু করুন ।
কাটিং ম্যানঃ- আমিতো এ কাটিং জানিনা ভাই ।
নিরবঃ- এ কাটিং সম্পর্কে আমি আপনাকে সব বলে দেব,আপনি কাটা শুরু করুন ।
কাটিং ম্যানঃ-আচ্ছা । কিন্তু ভাই আমি নিরব গাজীকে জীবনে দেখছি বলে মনে হয় না ।
নিরবঃ- আমি কী আপনাকে মিথ্যা বলবো?
[চুলকাটা শেষ,নিরব কাটিং ম্যানকে টাকা দিবে এই মুহুর্তে আক্কাসের আগমন]
আক্কাসঃ- কিরে নিরব গাজী তোর চুল কাটা শেষ?
নিরবঃ- হুম ।
কাটিং ম্যানঃ-ভাই আপনি নিরব গাজী?(বড় বড় চোঁখে তাকিয়ে) ।
নিরবঃ-হুম আমি নিরব গাজী । মনে রাখবেন মাইকেল জ্যকসন প্যন্ট নয়,পাখী ড্রেস নয়,নেইমার কাটিং নয়,আপনি আপনার প্যন্ট,আপনার ড্রেস,আপনার কাটিং দিন । হোক তা মন্দ । পরের পোলাউ ভাতের চেয়ে নিজের পান্তা ভাত অনেক ভালো । অন্যকে ফলো না করে,নিজেকে ফলো করুন,হোক তা মন্দ,একদিন ভালো হবে । অন্যের উপর নির্ভর না হয়ে আত্মনির্ভরশীল হইন আর নেইমার কাটিং বন্ধ করুন ।
আক্কাসঃ- আরে চল নিরব । হালিম খাবি?
নিরবঃ- হালিমতো মানুষের নাম,হালিম আবার খাবো কিভাবে?
আক্কাসঃ- আরে ঢাকায় হালিম একটা খাবার ।
নিরবঃ- ওহ চল খাই ।
আক্কাসঃ- রহমত ভাই ২ প্লেট হালিম দেন ।
নিরবঃ- এই দাড়া আক্কাস আমি হালিম খাবোনা ।
আক্কাসঃ- কেনো খাবিনা?
নিরবঃ- আমি হালিম ভাইয়ের হালিম খামু,রহমত ভাইর হালিম খামুনা । নামকরনের স্বার্থকতা লাগবেনা?
আক্কাসঃ- তাহলে তুই আর জীবনে হালিম খাইতে পারবি না । কারন এই ইহকালে হালিম ভাই নামক কোনো ভাইর হালিম পাবি কিনা সন্দেহ আছে ।
নিরবঃ- আচ্ছা আমি খাবো না,তুই খা ।
আক্কাসঃ- না খাবোনা,বাসায় চল ।
[উভয়ের প্রস্থান]
[আবুল ও নূপুরের বান্ধবি তিশার আগমন]
তিশাঃ- আবুইল্লা ভাই কই গেছালা?
আবুলঃ- চুল কাটতে গেছালাম ।
তিশাঃ- তা তুমি নাপতা আবার কবে হলা?
আবুলঃ- নাপতা হইনি,মনে হয় যেন এহন তোর চুল কাইট্টা দিয়া নাপতা হইয়া যাই ।
তিশাঃ- তার মানে কী আবুইল্লা?
আবুলঃ- আমার মাথার চুল নাপতা দিয়া কাটাইছি ,বুঝছো?
তিশাঃ- ওহ সরি আবুল ভাই । তোমার সাথে রাতে ফোনে কথা হবেনে । এহন আমি যাই ।
আবুলঃ- আচ্ছা ফোন দিও । নিরব ওস্তাদ বাড়ি নাই,কিছু ভালো লাগে না ।
[উভয়ের প্রস্থান]
[রাতে আবুল তিশার ফোনে কথোপকথন শুরু]
আবুলঃ- হাই তিশা কেমন আছো?
তিশাঃ- এইতো ভালো আছি । রাতে খেয়েছ?
আবুলঃ- না খাইনি ইচ্ছা করে ।
তিশাঃ- তোমার বউ শোনে নাতো?
আবুলঃ- না আমার বউ কানে শোনে না ।
তিশাঃ- ওহ হ্যা এর জন্যইতো তুমি বারান্দা জামাই । আচ্ছা আগে খেয়ে নাও তারপর কথা ।
আবুলঃ- আচ্ছা বাবা ঠীকাছে খেয়ে নেব ।
তিশাঃ- আচ্ছা মা খেয়ে নাও ।
আবুলঃ- ওই তুমি আমারে মা বললা ক্যান?
তিশাঃ- তুমি আমাকে বাবা বলছ তাই ।
আবুলঃ- লুল ।
[কথোপকথন শেষ]
[সাভারে মোক্তার ভাই নামক এক যুবক দোকানদারের সাথে নিরবের খুব খাতির গড়ে ওঠে । নিরব প্রতিদিন ঐ দোকানে পত্রিকা পড়তে যায় । হঠাৎ নিরব সাংবাদিক পদে ঢাকা জেলা ব্যুরো প্রধানের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখতে পায়]
নিরবঃ- মোক্তার ভাই এইখানে আমি আবেদন করবো নাকী?
মোক্তার ভাইঃ- হ্যা করতে পারো ।
[নিরব আবেদন করলো । কিছুদিন পরে নিরব মতিঝিলে ঐ পত্রিকার অফিসে ভাইভা দিতে গেল]
প্রশ্নকর্তা ১- আপনার বাড়ি কোথায়?
নিরবঃ- বাগেরহাট ।
প্রশ্নকর্তা ২- বাগেরহাটে গুরুত্বপূর্ন কী কী আছে?
নিরবঃ- ষাট গম্বুজ মসজিদ,মংলা সমুদ্রবন্দর,সুন্দরবন সহ আরো অনেক কিছু ।
প্রশ্নকর্তা ৩- আপনাদের এমপির নাম কী?
নিরবঃ- ডাঃ মোজাম্মেল হোসেন ।
প্রশ্নকর্তা ১-আচ্ছা নিরব গাজী আপনি এভাবে স্লো স্লো কথা বলেন কেনো?
নিরবঃ- স্যার এটা আমার ভদ্রতা । আমি পদ অনুযায়ী কথা বলি । মনে করেন স্যার আপনি যদি আমার কর্মচারি হতেন,আর আমি যদি আপনার মত স্যার হতাম তাহলে আমি কীভাবে কথা বলতাম,তা জানেন স্যার?
প্রশ্নকর্তা ১-কীভাবে বলতেন?
নিরবঃ- এই আসাদুজ্জামান সাহেব আপনি ঐ রিপোর্টটি ঠীক মত দিয়েছেন তো? (চিৎকার দিয়ে) । এভাবে বলতাম স্যার ।
প্রশ্নকর্তাগনঃ- ওহহ আচ্ছা । একচুয়াল্লি ইউ আর ব্রিলিয়্যান্ট ।
নিরবঃ- Thank,s all sir.
প্রশ্নকর্তা ১-ok.you are go now.সময় মত আপনার সাথে যোগাযোগ করা হবে গাজী সাহেব ।
[নিরব এসে সাভারের একটা বাসে উঠলো ।]
[এখন এক যাত্রী ও কন্ডাক্টরের মধ্যে ১ টাকা নিয়ে তুমুল ঝগড়া লাগলো ।]
কন্ডাক্টরঃ- শালা আর ১ টাকা দে,না হয় বাস থেকে নেমে যা ।
যাত্রীঃ- এক চড় মারবো তোরে । কিসের এক টাকা?
নিরবঃ- ভাই আপনারা একটু থামেন । আমি দেখতেছি ।
কন্ডাক্টরঃ- কী দেখবেন?
যাত্রীঃ- কী দেখবেন ভাই?
নিরবঃ- ১ টাকার এই লাল কয়েনটা নিন কন্ডাক্টর ভাই । (পকেট থেকে বের করে দিল) ।
কন্ডাক্টরঃ-না ভাই আপনি ১ টাকার কয়েল দিতে যাবেন কেনো?
নিরবঃ- আরে রাখেন ভাই । এটা ভাই কয়েল না,এটাকে কয়েন বলে । নিন রেখে দিন । লাল কয়েনের অনেক মূল্য আছে ।
[ঝগড়া শেষ । সবার প্রস্থান ]
[নিরব নূপুরকে ফোন দিল]
নিরবঃ- কেমন আছো হারামজাদী প্রিয়তমা?
নূপুরঃ- ভালোনা । তুমি কেমন আছো হারামজাদা প্রিয়তম?
নিরবঃ- ক্যান তুমি ভালো নেই আমার জান?
তুমি কাঁদলে আমি কাঁদিনা,
শুধু দুঃখ পাই ।
তুমি হাসলে আমি হাসিনা,
শুধু সুখ পাই ।
তুমি ভালবাসলে আমি ভালবাসি,
কারন তুমি আমার ভালবাসা ।
তুমি সুখি হলে আমি সুখি হই,
কারন তুমি আমার আলোর আশা ।
হয়তোবা একদিন তুমি ভুলে যাবে আমায়,
কিন্তু আমি জীবনেও ভুলবো না তোমায় ।
নূপুরঃ- ওহ দারুন বলতেছো হারামজাদা । এখন ভালো লাগতেছে । কিন্তু এর আগে আমি তোমাকে কতবার ফোন দিলাম,কিন্তু তুমি রিসিভ করনি ।
নিরবঃ- আমার ফোন নিরব (সাইলেন্ট) করা ছিল,তাই টের পাইনি । আমার নামের সাথে আমার ফোনের একটু মিল থাকতে হবে না? যেমন তুমি নূপুর,তোমার পায়ে নূপুর । আর আমি নিরব আমার ফোন ওতো একটু নিরব রাখতে হয় ।
নূপুরঃ- হাহাহা । আমার পাগল ।
নিরবঃ- হ্যা পাগলী আমি পাগল । এখন রাখি,পরে আবার কথা হবে ।
নূপুরঃ- তুমি বাড়ি আসবে কবে?
নিরবঃ- এইতো আর চারদিন পর । অর্থাৎ ঈদের আগের দিন বাড়ি আসবো ।
নূপুরঃ- আচ্ছা তাহলে রাখো জান ।
[কোচিং থেকে নিরবদের ৭ দিন ছুটি দিয়েছে । তাই নিরব স্বিদ্ধান্ত নিল ও ঈদের আগের দিন বাড়ি চলে যাবে ।]
[নিরব বিকালে ওর বোন দোয়েলের জন্য আর নূপুরের জন্য ঝিলিক ড্রেস কিনতে গেল ।]
[দোকানে নিরবের আগমন]
দোকানদারঃ- কি লাগবে ভাই?
নিরবঃ- ভাই যা লাগবে,তার নাম ঠীক মনে করতে পারতেছি না ।
দোকানদারঃ- মনে করার চেষ্টা করেন ভাই ।
নিরবঃ- ভাই টিনের উপর রোদ পরলে কেমন যেনো করে ওঠে,ওইটার নামে ড্রেসটার নাম ।
দোকানদারঃ- টিনের উপর রোদ পরলে তো টিন ঝলমল ও ঝিলিক করে ওঠে ।
নিরবঃ- ওহ এইতো মনে পরছে ঝিলিক ড্রেস নিতে হবে । কিন্তু ভাই আমার একটা নূপুর ড্রেস লাগে । ঝিলিক ড্রেস থাকলে নূপুর ড্রেস থাকবে না কেনো?
দোকানদারঃ- হাহাহা ভাই মাফ করবেন আমার কাছে কোনো নূপুর ড্রেস নেই । ওখানে মেয়েদের পুতুলে ঝিলিক পড়ানো আছে,আপনি ওখান থেকে দেখতে পারেন ।
নিরবঃ- আইচ্ছা ।
[ঐ দোকানে অন্য একটা মেয়ে ঝিলিক দেখতেছে পুতুলের কাছে দাড়িয়ে । নিরব ভাবছিলো ঐ মেয়েটা ও একটা পুতুল । এইটা ভেবে নিরব মেয়েটির মূখমন্ডলে,মাথায় হাত দিল । জামা কাপড় ধরে দেখলো । সাথে সাথে মেয়েটি নিরবকে ঠাস করে এক চড় মারলো ।]
নিরবঃ- পুতুল আবার চড় মারে কিভাবে? (হতভম্ব হয়ে মনে মনে বলতেছে) ।
মেয়েঃ- এই বেয়াদব ছেলে আপনি আমার গায়ে হাত দিলেন কেনো?
নিরবঃ- স্যরি আন্টি আমি ভাবছিলাম আপনি পুতুল ।
মেয়েঃ- আন্টি কিসের? ওই আবাল আমার বয়স সতেরো বছর ।
নিরবঃ- ওহ স্যরি গাই আপু ।
মেয়েঃ- বেয়াদব যেনো কোথাকার ।
[উভয়ের প্রস্থান]
[অবশেষে নিরব ঝিলিক কিনে নিয়ে আসলো ।]
[পরদিন নিরব রওয়ানা দিল বাড়ি ।]
[এদিকে আক্কাস গেছে শার্ট কিনতে]
দোকানদারঃ- ভাই কী লাগবে?
আক্কাসঃ- একটা ফুলহাতা শার্ট লাগবে ভাই ।
দোকানদারঃ- ঐখানে শার্ট টানানো আছে । আপনি দেখুন,পছন্দ করুন ।
আক্কাসঃ- এই শার্টটির দাম কতো ভাই?
দোকানদারঃ-১৫০০ টাকা ভাই ।
আক্কাসঃ- আমি কী দাম বলমু ভাই?
দোকানদারঃ- হ্যা বলুন ।
আক্কাসঃ- দাম শুনে আবার রাগ করবেন নাতো ভাই?
দোকানদারঃ- আরে না আপনারা কাষ্টমারতো লক্ষি । রাগ করবো কেন?
আক্কাসঃ- ৩০০ টাকা হবে?
দোকানদারঃ-না ভাই । এই ব্যবসা ছুইয়া বললাম ৩০০ টাকা বিক্রি করলে আমার লস হবে ভাই ।
আক্কাসঃ- তা আর কী করার? আমি যাই ভাই ?
দোকানদারঃ-আরে ভাই কই যান?আহেন এদিক । আপনি আমাদের কাছের লোকতো তাই দিলাম,কিন্তু আরো ২০ টাকা দিতে হবে ভাই ।
আক্কাসঃ- আজব তো আমি আপনার কাছের লোক হলাম কীভাবে?
আমার বাড়িতো অনেক দূর । আমি আপনার কাছের লোক হলে আপনার দূরের লোক কারা?
দোকানদারঃ- আরে ভাই সবাই ই কাছের লোক ।
আক্কাসঃ- তা সবার কাছ থেকে কম রাখেনতো? কারন সবাইতো আপনার কাছের লোক ।
দোকানদারঃ- আচ্ছা ভাই এই প্যাক করে দিছি আপনি ৩০০ টাকা দিয়েই নিয়ে যান । তবে এই ব্যাবসা ছুয়ে বললাম আমার লোকসান হবে ।
আক্কাসঃ- ভাই এই আপনার শার্ট নিয়ে আপনি রাখুন,কারন আমি চাই না যে আমার কাছের এক লোকের লস হউক ।
[এই কথা বলে আক্কাস সাড়াসাড় হাটা শুরু করল]
দোকানদারঃ- ভাই শুনুন (চিৎকার দিয়ে) ।
আক্কাসঃ- কী বলুন?
দোকানদারঃ- শার্ট নিবেন না কেনো ভাই?
আক্কাসঃ- আপনার লোকসান হবে তাই নেবো না ।
দোকানদারঃ- না তারপর ও নিয়ে যান ভাই ।
আক্কাসঃ- এক শর্তে নিতে পারি, আর তা হল আপনার দোকান ছুয়ে আপনার বলতে হবে যে এই শার্ট ৩০০ টাকায় বিক্রি করলে আপনার কোনো লোকসান হবে না ।
দোকানদারঃ- দোকানের কসম আসলে আমার কোনো লোকসান হবে না । ভাই ভুল হইয়া গেছে ।
আক্কাসঃ- আচ্ছা মিথ্যাবাদি শার্টটি দিন ।
[উভয়ের প্রস্থান]
[অবশেষে নিরব বাড়ি পৌছালো । পরিবারের সবার সাথে আবুলের সাতে দেখা হল কথা হল]
[পরের দিন বিকেলে নিরব চলে গেল ওর এলাকার এক নদীর পাড়ে নূপুরের সাথে দেখা করতে]
নূপুরঃ- জান তুমি কেমন আছো?
নিরবঃ- ভালো । তোমার জন্য একটি ঝিলিক ড্রেস এনেছি । “নূপুর ড্রেস” অনেক খোঁজাখোঁজি করছি কিন্তু পাইনি জান ।
নূপুরঃ- “নূপুর ড্রেস” আবার কই পাবা । ঝিলিকের জন্য তোমাকে ধন্যবাদ ।
নিরবঃ- আমি জীবনে কাপড়ের ইন্ডাষ্ট্রি করলে “নূপুর ড্রেস” তৈরি করুম । তোমার কোলে একটু মাথা রাখি জান?
নূপুরঃ- আচ্ছা মাথা রাখো, সমস্যা নাই ।
নিরবঃ- ধন্যবাদ জান ।
নূপুরঃ- নিরব তোমায় আজ আমি একটা সত্য কথা বলবো ।
নিরবঃ- বলো কী সত্য কথা?
নূপুরঃ- নিরব আসলে আমি তোমায় ভালোবাসিনি । এতদিন আমি তোমার সাথে ঠাট্টা করেছি ।
নিরবঃ- হাহাহা ঠাট্টাবাজের সাথে জীবনে কী কেউ ঠাট্টা করতে পারে? (উঠে দাড়িয়ে) ।
নূপুরঃ- তার মানে?
নিরবঃ- আমিও তোমায় ভালোবাসিনি । আমি ও এতদিন তোমার সাথে ঠাট্টা করেছি ।
[এই বলে একজন এদিক আর একজন ওদিক চলে যাচ্ছে]
নূপুরঃ- বোকা দাড়াও আমি তোমায় মূলত অনেক ভালোবাসি । তাই এখন একটু ঠাট্টা করলাম । (দৌড়ে এসে নিরবকে জড়িয়ে ধরে বলল ।)
নিরবঃ- হাহাহা পাগলি আমি ওতো এখন তোমার সাথে ঠাট্টা করেছি । আসলে আমি তোমায় অনেক ভালোবাসি । (নূপুরকে জড়িয়ে ধরে কান্নারত কন্ঠে) ।
[সূর্য ডুবে গেল,সন্ধা ঘনিয়ে এলো,চারিদিক নিস্তেজ নিরব হয়ে গেল আর থেমে গেল নিরবের ঠাট্টা]