অাব্দুল্লাহ্'র স্বপ্নভঙ্গ

পার্থিব (জুন ২০১৭)

রওনক নূর
  • ১২
  • ১৬
ছোট্ট আব্দুল্লাহ্ এর বয়স এখন মাত্র তিন বছর। কিন্তু এতটুকু বয়‌সে ওকের অনে ক কিছুু বুঝ‌তে হয়। হয়ত আল্লাহ ওর ম‌নে বুঝ দি‌য়ে দি‌য়ে‌ছেন। প্রথম যে‌দিন বাড়ী ছে‌ড়ে ওর মা নানা বাড়ী‌তে গি‌য়ে‌ছি‌লো খুব আনন্দ পে‌য়ে‌ছি‌লো বাচ্চাটা। বেড়া‌তে যে‌তে খুব ভা‌লোবা‌সে ও। কিন্তু এটা যে কোন স্বাভা‌বিক যাওয়া না সেটা বুঝ‌তে পা‌রে‌নি অবুঝ শিশু। এক‌দিন দু‌দিন ক‌রে একমাস চ‌লে যায়, মা তবুও বাড়ী যে‌তে চায়না। বুবু, ছোট আব্বা , দাদুভাই, সি‌ল‌ভি ফু‌পি এবং বা‌কি সবার জন্য মন কাঁ‌দে। বাড়ী‌তে যাবার কথা বল‌লে মা খুব রে‌গে যায়। দাদুভাই আর বুবু ফোন দি‌লেও মা কথা বল‌তে দি‌তে চায়না। ত‌বে ছোট্ট শিশু‌টি এক‌দিন ফো‌নে কথা ব‌লে তার দাদুভাই আর বুবুর সা‌থে। অব‌শে‌ষে দাদুভাই নানাবাড়ী‌তে যে‌য়ে নি‌য়ে যায় আব্দুল্লাহকে দাদুবাড়ী‌তে। মা ছাড়া ক‌য়েক‌দিন পার করার পর বাচ্চা‌টি মা‌য়ের জন্য কাঁদ‌তে থা‌কে। তার মা‌কে বাড়ী চ‌লে আস‌তে ব‌লে। বুবুর কা‌ছে বায়না ক‌রে মা‌কে এনেক দি‌তে। সারা রাত চিৎকার ক‌রে বুকফাটা আর্তনাদ ক‌রে মা মা ক‌রে। কিন্তু মা‌কে আর পায়না সে। দাদুভাই বাধ্য হ‌য়ে সকা‌লে দি‌য়ে আসেব আব্দুল্লাহ‌কে নানাবাড়ী মা‌য়ের কা‌ছে। মা‌য়ের কো‌লে যে‌য়ে বাচ্চা‌টি চিৎকার ক‌রে কাঁদ‌তে থা‌কে অভিহমা‌নে। মা কেন তার সা‌থে বাড়ী‌তে গে‌লোনা।

নানাবাড়ী মা‌য়ের কা‌ছে থাকার পর আবার শিশু‌টি বাড়ী‌তে যাবার বায়না ক‌রে। এই ছোট্ট অবুঝ শিশু‌টি‌কে মা বু‌ঝি‌য়ে দেয় যে, তোর আব্বু পঁচা, তাই আমি আর বাড়ী‌তে যা‌বোনা। এভা‌বে শিশু‌টি আবার বাড়ী‌তে যায় মা‌কে ছাড়া এবং মা‌য়ের জন্য পরাণ কাঁদে তাই আবার কাঁদ‌তে কাঁদ‌তে ফি‌রে আসে । বেশ ক‌য়েকবার এমনভা‌বে চল‌তে চল‌তে শিশু‌টি এখন বু‌ঝে গে‌ছে যে এটাই তার জীবন এটা‌কেই মে‌নে নি‌তে হ‌বে। কিন্তু অসহায় বাচ্চা‌টির জীবন এমন হওয়ার কথা ছি‌লোনা।

ছে‌লে‌টির নাম অন্তর আর মে‌য়ে‌টি কুসুম। অনেেক ভা‌লো‌বে‌সে, বলাচ‌লে পাগল হ‌য়ে আব্দুল্লাহ্ এর বাবা মা বি‌য়ে ক‌রে। বি‌য়ে‌তে পা‌রিবা‌রিক কোন সম্ম‌তি ছি‌লোনা। য‌দিও কুসুম অন্ত‌রের প‌রিবার‌কে রাজী করা‌নোর অনেবক চেষ্টা ক‌রে। অব‌শে‌ষে কাউকেব রাজী করা‌তে না পে‌রে বাধ্য হ‌য়ে পা‌লি‌য়ে বি‌য়ে ক‌রে। অন্তর তখন কেবল উচ্চমাধ্য‌মিক শেষ ক‌রে‌ছে আর কুসুম উচ্চ মাধ্য‌মিক পরীক্ষা দি‌বে। পা‌রিবা‌রিক মান সম্মা‌নের কথা চিন্তা ক‌রে দুই প‌রিবার তা‌দের কম বয়সী ভুল‌কে মে‌নে নেয়। খুব ভা‌লোই চল‌ছি‌লো অন্তর আর কুসু‌মের নতুন জীবন। ভা‌লোবাসার স্বপ্ন পূরণ হওয়া‌তে দুজনই খুব খু‌শি ছি‌লো। য‌দিও বেকার স্বামী তেমন কিছু দি‌তে পার‌তোনা কুসুম‌কে তবুও শ্বশুর শাশু‌ড়ি তার সব আবদার মিটা‌তো।

হঠাৎ এক‌দিন বাড়ী‌তে খবর আসে অন্ত‌রের মটর সাইকেিল এক্সি ‌ডেন্ট হ‌য়ে‌ছে। এম্বু‌লে‌ন্সে ক‌রে ওকে হাসাপাতা‌লে নি‌য়ে গে‌ছে। খবর‌টি জানার পর কুসু‌মের ম‌নে হ‌য়ে‌ছি‌লো কিছুক্ষ‌নের জন্য ও পৃ‌থিবী‌তে নেই। কাঁদ‌তে কাঁদ‌তে ছু‌টে যায় হাসপাতা‌লে শ্বশুর শাশু‌ড়ির সা‌থে। যে‌য়ে দে‌খে স্বামীর অবস্থা খুবই খারাপ। হয়ত এক‌টি পা কে‌টে ফেল‌তে হ‌বে। এত কষ্ট, এত যন্ত্রনা সব নি‌জের চো‌খে দে‌খে‌ছে কুসুম।

স্বামী অসুস্থ থাকায় বা‌পের বাড়ীর অনে্‌কেই বু‌ঝি‌য়ে‌ছে কুসুম‌কে যেন স্বামী‌কে তালাক দেয়। কিন্তু কা‌রো কোন প্র‌লোভন শো‌নে‌নি সে। দুইটি‌ বছর কুসুম আর ওর শাশু‌ড়ির অক্লান্ত প‌রিশ্রম আর সেবাই সুস্থ হ‌য়ে যায় অন্তর। এমন‌কি এখন মোটামু‌টি হাট‌তে পা‌রে সে। এর ম‌ধ্যে ঘর আলো ক‌রে আসেহ তা‌দের সন্তান, আদ‌রের ধন, আব্দুল্লাহ্।

ঠিকভা‌বে হাট‌তে না পারায় কোন কাজ কর‌তে পা‌রেনা অন্তর। বাবা মা এক‌টি ঔষু‌ধের দোকান ক‌রে দেয় যা দি‌য়ে কিছুই হয়না। বউ‌য়ের সব চা‌হিদা পূর‌ণে সে অপারগ থা‌কে। পা‌শের বাড়ীর এক ভাই‌য়ের বি‌য়ে হয় খুব ধুমধাম ক‌রে। সে ব্যাং‌কে চাকরী ক‌রে। বি‌য়ের পর নানারকম উপহার কি‌নে দেয় বউকেশ। বেড়া‌তে নি‌য়ে যায় বি‌ভিন্ন স্থা‌নে। প্র‌তি‌দিন নতুন নতুন খবর। কিন্তু এসব খবর খুব জ্বালা দেয় কুসু‌মের ম‌নে। তার স্বামী তা‌কে কিছুই দি‌তে পা‌রেনা। খোড়া স্বামী কোথাও বেড়া‌তে নি‌য়ে যে‌তেও পা‌রেনা। কুসু‌মের শ্বশুর শাশু‌ড়ি তার সব অভাব মিটা‌লেও এতো তার মন ভ‌রেনা। সে চায় তার স্বামী অন্য‌দের মত চাকরী করুক। তা‌রও ইচ্ছা ক‌রে স্বামী‌কে নি‌য়ে গর্ব কর‌তে।

আস্তে আস্তে কুসু‌মের ম‌নে স্বামীর প্র‌তি অনি হা সৃ‌ষ্টি হয়, হয়ত এত‌দি‌নে মোহ্ কে‌টে গে‌ছে। স্বামী স্ত্রীর মা‌ঝে দ্বন্দ শুরু হ‌য়ে যায়। কুসুম কোন ভা‌বেই অন্তর‌কে মে‌নে নি‌তে পা‌রেনা। কিছু‌দিন শাশু‌ড়ি বু‌ঝি‌য়ে সু‌জি‌য়ে তা‌কে রা‌খে। কিন্তু হঠাৎ এক‌দিন বাবার বাড়ী যাবার নাম ক‌রে স্বাভা‌বিক ভা‌বেই চ‌লে যায় সে। আর ফি‌রে আসো‌নি। কিছু‌দিন পর তালাক পা‌ঠি‌য়ে দি‌য়ে‌ছে অন্তর‌কে। অন্ত‌রের বাবা মা কুসু‌মের বাড়ী‌তে যে‌য়ে অনোক বু‌ঝি‌য়ে‌ছে। আব্দুল্লাহ্ এর দি‌কে তা‌কি‌য়ে সব মে‌নে নি‌তে অনে ক অনু‌রোধ ক‌রে‌ছে। কিন্তু কুসু‌মের নতুন জীবন চাই। সে আর অন্ত‌রের অনিা‌শ্চিত জীব‌নে থাক‌তে চায়না।

কুসুম এখন আর তার সন্তান আব্দুল্লাহ্ কেও চায়না। ছোট্ট অবুঝ শিশু‌টি এখন দাদুভাই আর বুবুর কা‌ছে থা‌কে। মা‌ঝে মা‌ঝে মা‌য়ের জন্য কাঁ‌দে। হয়ত আল্লাহ ওর ম‌নে বুঝ দি‌য়ে দি‌বেন। ছেপা‌রেশন না‌মের এই ভয়াবহ রোগ‌টি এখন আমা‌দের সমা‌জে স্বাভা‌বিক হ‌য়ে গে‌ছে। এটিক স্বামী স্ত্রীর জীব‌নে যতটানা প্রভাব প‌ড়ে তার থে‌কে অনেুক বে‌শি ক্ষ‌তিগ্রস্থ ক‌রে শিশু সন্তান‌দের‌কে। আর এভাবেই আব্দুল্লাহরা বাবা মা থাকার স্ব‌ত্ত্বেও এতি‌ম হ‌য়ে বড় হয়।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
আওসাফ অগ্নী Dhonnobad bastobota tule dhorar jonno.
মোঃ কবির হোসেন golpotir madhome amader somajer ekti chirachorito sottoke tule dhorechhen. oshadharon.
মোঃ মোখলেছুর রহমান ভাল লেগেছ।অবয়ব আর একটু বড় হলে ভাল হত। শুভকামনা সহ ভোট রইল।
খাজা হারুন হারুন শুভ কামনা। আমার আঙ্গিনায় আমন্ত্রণ।
Dr. Zayed Bin Zakir (Shawon) Golpota valo. Tobe aro karukarjo asa kori. Kichhu kicchu banan bivrat lokkhonio. Shuvo kamona. Vote roilo.
Dr. Zayed Bin Zakir (Shawon) Golpota valo. Tobe aro karukarjo asa kori. Kichhu kicchu banan bivrat lokkhonio. Shuvo kamona. Vote roilo.
Dr. Zayed Bin Zakir (Shawon) Golpota valo. Tobe aro karukarjo asa kori. Kichhu kicchu banan bivrat lokkhonio. Shuvo kamona. Vote roilo.
রুহুল আমীন রাজু কুসুমকে সুখী দেখলে অনেক ভাল লাগবে ... অনেক ভাল লাগলো গল্প । ( আমার পাতায় আমন্ত্রণ রইলো )

১৩ নভেম্বর - ২০১৬ গল্প/কবিতা: ৩৭ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪