আজকের নিয়ন আলোতে অবরুদ্ধ নগরী বেশ রোমান্টিক লাগছে। বিয়ের পঁচিশ বছর পরে আমি আর অয়ন পাশাপাশি হাটছি। সারাদিন কেটেছে রমনায়, সেই কিশোরী জীবনে ফিরে গিয়েছিলাম। তখনকার বর্ষবরণে এভাবেই শুদ্ধতা ছড়াত আমাদের। এতদিনে আমিটা আমিই আছি, শুধু সে বদলে গেছে। আজকের রাত্রিটাও প্রকৃতির নিয়মে জ্যোৎস্না ঝরাচ্ছে, আধো জ্যোৎস্নার সাথে নিয়নের স্নিগ্ধতা। পরিপূর্নতার সুখে সোডিয়াম বাতির হলুদ আলো বারে বারে মনে করিয়ে দেয় আমি আজ বেশ সুখী। এখন আর হাতছানি দিয়ে কোন পিছুটান আমাকে ডাকেনা, হয়ত ডাকতে পারেও না।
আমাদের বিয়েটা ছিলো পারিবারিক, বর্তমানের বাউন্ডুলে প্রেম ভালবাসার আলোক ছড়ানো না হলেও ভালোবাসায় টইটম্বুর আমার ছোট্ট ঘর। সকালে বের হয়েছি মেয়ে দুটিকে নিয়ে, আমার মেয়ে, আমার বন্ধু, আমার কাব্য ও ছন্দ। মেয়েদের নাম রেখেছি দুজনের পছন্দ মতে। আমার পছন্দ ঠিকই আছে কিন্তু বদলে গেছে নাম পছন্দ করা আরেকজন, শ্রাবন এর জায়গাটা নিয়েছে অয়ন।
পহেলা বৈশাখের দিনে সাধারনত ঘরেই ইলিশ ভাজা, নানা রকম ভর্তা, আর পানতা ভাত খাই। তবে আজকের দিনটা ভিন্ন, সকালেই বের হয়েছি। সারাদিন ঘুরেছি, খেয়েছি, বেশ মজা করেছি। যদিও শুধু বৈশাখ উদযাপনটাই মূল উদ্দেশ্য তাও নয়।
মেয়ে দুটি বেশ বড় হয়েছে। বড়মেয়ে একটি ছেলেকে ভালোবাসে, ছেলেটিও আজ সাথে আছে। নিজের ভালোবাসাকে হারিয়েছি বলেই হয়ত মেয়েটিকে ওর ভালোবাসার হাতে তুলে দিতে চাই। একটু পরেই ছেলেটির বাবা আসবে আমাদের কাব্যকে দেখতে। ফরমাল দেখা নয় এটা। সবার সাথে মিলে মিশে ঘটা করে মেয়ে দেখা রায়হান খন্দকারের পছন্দ না। তিনি মনে করেন, মেয়েরা কোন পুঠি মাছের বাজার নয় যে তার এপিঠ ওপিঠ উলটে দেখতে হবে। খন্দকার সাহেবের এই ভাবনা একজন নারী ও একটা বিবাহোযোগ্যা কন্যার মা হিসাবে আমাকে গর্বীত করে। তিনি আমাদের মেয়েকে দেখেননি, শুধু কাব্য নাম শুনেই পছন্দ করে ফেলেছিলেন। তিনি বলেন, যে মেয়ের এত সুন্দর নাম হতে পারে সেতো পরিপূর্ন হবেই। তবুও কাব্যের বন্ধু ধ্রুব বাবাকে তার পছন্দের মানুষটাকে দেখাতেই চায়। রায়হান সাহেব নানা পিড়াপীড়িতে এভাবেই রাজী হোন।
রায়হান সাহেবের আরেকটা বিষয় তাকে না দেখেই আমাকে বিমোহিত করেছে, সেটা হল কাব্যের বয়স। ধ্রুবর চেয়ে কাব্য দুবছরের বড়। ব্যাপারটা জানার পরে আমি কোন ভাবেই রাজী হচ্ছিলাম না, এটা কিভাবে সম্ভব? মেয়ের চেয়ে ছেলের বয়স কম! কিন্তু আমার অনীহা আর অনাগ্রহ ধ্রুবকে কতটাই ব্যাথিত করেছিলো তা বুঝতে পারলাম যখন সে আমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো। ভাবলাম, এ যুগেও ভালবাসা এমন হয়? আমি মুহুর্তে আরো অবাক হলাম। আসলে শুধু অবাক নয়, মানুষ ও সমাজ সম্পর্কে আমার ধারণা বদলালো। ধ্রুব যখন জানালো এই বয়স নিয়ে তার বাবার কোন আপত্তি নেই, বরং তিনি চান দুটো মানুষ যেন আজীবন ভালবাসা ভাগ করে বেঁচে থাকতে পারে। ঠিক সেদিন রায়হান খন্দকারকে দেখার ইচ্ছে জেগেছিল, তার প্রতি শ্রদ্ধা সম্মানের যায়গাটা বেড়ে গিয়েছিল। পৃথিবীতে ভালবাসা বোঝার মত এমন মানুষকে একবার দেখাও যেন একটা অর্জন।
কাব্য তার ভালবাসার সাথে পাশাপাশি হাটছে, কত সুন্দর লাগছে ওদের। একটা বারের মতও মনে হয়না আমার মেয়েটা বড়, পছন্দের মানুষটিকে কেয়ারিং এর জন্য আসলে বয়স কোন ইস্যুই না তা বুঝতে পারি ধ্রুব ও কাব্যের পথচলা দেখে। ওদের পাশাপাশি হাটা আমাকে স্মৃতিতে ফেরায়। আকাশের দিকে তাকিয়ে বলতে ইচ্ছে করে, দেখেছ আকাশ, মেঘ! আমার কাব্য ও ধ্রুবর ডান পা এক সাথে চলে অতঃপর বামপাও। ভালোবাসার রঙটা বরাবরই বেশ রঙিন লাগে। আজ আমারও পাশাপাশি হাটতে ইচ্ছে করছে, আসলে দশ কদম সামনে হাটা এমন ভালবাসাময় পদচারনায় কার না এমন ইচ্ছে জাগে? তবে ছোট মেয়ে ছন্দ ওর বাবাকে জড়িয়ে হাটতে ভালোবাসে তাই আমিই ছেড়ে দিলাম অয়নের হাত। আমি ভালোবাসতে খুব ভালোবাসি, তাই মেয়ে দুটিকে নিজের থেকে বেশী ভালোবাসি।
ধ্রুবের বাবা এসেছে। ভারি চেহারা, মোটা কাচের চশমা পরা, বেশ সাহেবি। চেহারা বদলালেও চিনতে পারছি তাকে। মুহুর্তে আমার পৃথিবী টাইম ক্যাপসুলে চড়িয়ে পঁচিশ বছর পেছনে নিয়ে যায়। আমি যেন মহাকাশ থেকে ফেরা কোন সুয়েজ নভোযানে চড়ে পৃথিবীতে ফিরছি অথবা অন্য গ্রহে। নিজেকে সামলে নিলাম। শ্রাবনের সাহেবি নাম যে রায়হান খন্দকার এটা আমার জানা ছিল না, আসলে শ্রাবণ নামটাই আমাকে তার ভেতরের ধারায় ডুবিয়ে রাখত। রায়হান খন্দকার হয়ত আমাকে চিনতে পেরেছে, হয়ত পারেনি। গত পঁচিশটা বছরে আমিও যে কম বদলায়নি! অয়ন রায়হান খন্দকারের সাথে আমার কাব্যের ভালোবাসাকে সত্য রূপ দিতে আলোচনা করছে, আর আমি অতিত শ্রাবণকে মুছে দিয়ে রায়হান খন্দকারে ধাতস্ত হচ্ছি।
বর্ষবরনের দিনটাকে কাটিয়ে শহুরে নিয়ন আলোতে পাশাপাশি হাটছি আমরা, অয়নের কাঁধে মাথাটা রেখে ধীরে ধীরে নিশ্চুপ পদচারনা। আজ আমাদের দুজনের চোখে অন্য রকম ভালবাসার স্বপ্ন, পরিপূর্নতার স্বপ্ন। সেই পরিপূর্নতার নাম আমার কাব্য, শ্রাবনের ধ্রুব। ভালোবাসাময় এই সম্পর্কের রং ভিন্ন।
১৩ নভেম্বর - ২০১৬
গল্প/কবিতা:
৩৭ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪