রতনের সংসার

পার্থিব (জুন ২০১৭)

সারোয়ার কামাল
  • ১৯
সকা‌লের রো‌দে পিঠ ক‌রে বারান্দায় ব‌সে‌ছে রত‌নের পাঁচ বছ‌রের দু‌টো যমজ শিশু সন্তান । ও‌দের সাম‌নে স্টি‌লের বা‌টি‌তে মু‌ড়ি । ওরা ও‌দের ছোট্ট মু‌ঠি‌তে মু‌ড়ি নি‌য়ে মু‌খে পুর‌ছে । কুড়মুড় শব্দে মু‌ড়ি চিবা‌চ্ছে । শেষ বস‌ন্তের সকা‌লের উদার রাঙা সূর্যের আলো তা‌দের কুচকু‌চে কা‌লো পি‌ঠে চিক‌চিক কর‌ছে । অদূ‌রে কু‌য়ো তলায় ছাই দি‌য়ে দাঁত মাজ‌তে মাজ‌তে বাচ্চা দু‌টোর দি‌কে প্রশান্ত চি‌ত্তে তা‌কি‌য়ে আছে রতন । আহা ! ভারী দু‌টো দু‌ধের বাচ্চা । অবোধ , নিষ্পাপ । রত‌নের মনটা মুহূ‌র্তে ডুক‌রে উঠে বাচ্চা দু‌টোর জন্য । সে দাঁত ঘষায় বির‌তি দি‌য়ে নি‌বিষ্ট ম‌নে বাচ্চা দু‌টো‌কে দে‌খে । গা‌য়ের রঙটা ও‌দের য‌দিও লো‌কে কাল ব‌লে , সে কিন্তু মান‌তে পা‌রে না । লো‌কে যে কা‌লো আর শ্যামলা র‌ঙের পার্থক্যই জা‌নে না । এতেই তার মনস্তাপ । রত‌নের ধারণা বাচ্চা দু‌টো গা‌য়ের রঙ পে‌য়ে‌ছে ও‌দের দাদুর থে‌কে । ম‌হেশখা‌লির বিখ্যাত লা‌ঠিয়াল ছি‌লেন ও‌দের দাদু । যেমনি বাব‌ড়ি চু‌লের বাহার , তেম‌নি ব‌লিষ্ঠ শরীর । লা‌ঠি খেলার সময় যেন তার শরী‌রে দৈব শ‌ক্তি ভর করত । শূ‌ণ্যে ভোঁ-‌ভোঁ শ‌ব্দে লা‌ঠি ঘু‌রি‌য়ে আক্রমণ কর‌ত । আক্রমণ ঠেকা‌তে গি‌য়ে প্রায় হুম‌ড়ি খে‌য়ে পড়ত প্র‌তিদ্বন্দ্বী । টিক‌তে পারত না মো‌টেও । অমন তেজ , অমন পা‌লোয়ান দশ গাঁ‌য়ের মানুষ আর পায় নি । লা‌ঠি খেলার সময় গাঁ‌য়ে প্রায় মেলা বসত । দূর দূরান্ত থে‌কে মানুষ জন আসত তার লা‌ঠির কেরাম‌তি দেখ‌তে । খাসা মানুষ ছি‌লেন একজন । রত‌নের বাপের ব‌রেই রতন‌কে গাঁ‌য়ের মানুষজন সমাদর ক‌রে । বি‌ভিন্ন পালা পার্ব‌ণে আচার অনুষ্ঠা‌নে মা‌ঝে সা‌ঝে নিমন্ত্র‌ণের ডাক আসে । রাস্তাঘা‌টে গাঁ‌য়ের মুর‌ব্বিরা আজও রতনের বা‌পের কী‌র্তিগাথা আওড়ায়---" মানুষ একটা ছিল ব‌সির মিয়া ।" শু‌নে রত‌নের বুক গ‌র্বে তৃ‌প্তি‌তে ফু‌লে ও‌ঠে । সেই মানুষটার না‌তি এরা । এই অবুঝ শিশু দু‌টি । ও‌দের একজন ঘাড় ঘু‌রি‌য়ে রত‌নের দি‌কে তাকায় । ছোট্ট আঙু‌লের তর্জনী রত‌নের দি‌কে দে‌খি‌য়ে সরল হা‌সি হা‌সে । "বাবা " বাবা " ব‌লে ডা‌কে । মু‌খের মত ও‌দের কাজল কালো মায়াবী চোখ জোড়াও যেন হা‌সে । হা‌সি ছ‌ড়িয়ে প‌ড়ে সকা‌লের নির্মল বাতা‌সে , নরম রো‌দে , ঘ‌রের চা‌লে , গা‌ছের ডা‌লে , নি‌র্মেঘ গাঢ় নীল আকা‌শে । আহ্ঃ কি যে শা‌ন্তির পরশ পায় রতন ব‌লে বোঝা‌নো সম্ভব না । আর বাচ্চা দু‌টোর চোখও হ‌য়ে‌ছে অবিকল ও‌দের মা‌য়ের রকম । সেই কাজল কা‌লো দু‌টি চোখ । দীর্ঘ পল্লব । মায়া মায়া চাহ‌নি । তেমনি গভীর উচ্ছল চো‌খের দৃ‌ষ্টি । তে‌ম‌নি হা‌সে চোখ দুটি ।

বাচ্চা দু‌টোর মা‌য়ের কথা ভাব‌তেই রতন উন্মনা হ‌য়ে তাকাল মাথার উপর নিম গাছটার দি‌কে । নি‌মের ডা‌লে ফু‌টেছে সাদা সাদা তারার মত অসংখ্য ফুল । মৃদু বাতা‌সে কাঁপ‌ছে গা‌ছের চিড়ল সবুজ পাতা । রো‌দের সা‌থে কানামা‌ছি খে‌লছে যেন । স্মৃ‌তিগু‌লোও যেন কানমা‌ছি খে‌লছে ওর সা‌থে । ও‌কে ঘি‌রে স্মৃ‌তিরা ছুঁ‌য়ে ছুঁ‌য়ে যা‌চ্ছে । কত শত ফে‌লে আসা মি‌ষ্টি , মোলা‌য়েম, হা‌সি , আনন্দ , গাঢ় বেদনার স্মৃ‌তি । উঠ‌তি বয়সী যুবক তখন সে । ঘ‌রে মন টিক‌তো না । বাবার মত লা‌ঠিয়াল হ‌তে পা‌রে নি তা‌তে কি , ওর মত ভবঘু‌রে স্বভাবও লো‌কে আর দে‌খে নি । আজ এখা‌নে তো কাল অন্য কোথাও । ব‌সির মিয়া কড়া মানুষ । রাশভারী স্বভা‌বের । ছে‌লেকে বু‌ঝি‌য়ে সু‌ঝি‌য়ে আচ্ছামত শাসন ক‌রে দি‌লেন । ছে‌লে এক মাস কি দেড় মাস বড় জোর দু মাস বেশ গৃহী হ‌য়ে থাকল । সাংসা‌রিক কা‌জে ক‌র্মে তখন তার মত এক‌নিষ্ঠ দ্বিতীয়‌টি নেই । বাবাও যেন হাঁফ ছে‌ড়ে বাঁচ‌লেন । ভাব‌লেন এবার ছে‌লে‌কে একটা বি‌য়েশাদি দি‌য়ে সংসা‌রী করা দরকার । পর‌দিন মোরগ ডাকা সকা‌লে ব‌সির মিয়া দেখ‌লেন রত‌নের ঘর খা‌লি । দরজা হাট ক‌রে খোলা । ছে‌লে নিরু‌দ্দেশ । কোথায় কোথায় যেত রতন তার লেখা‌জোখা নেই । সেসব দি‌নের কথা ম‌নে পড়‌লে আজও রোমাঞ্চ জা‌গে রত‌নের নি‌স্তেজ ম‌নে । আজও সে শিহ‌রিত হয় ।সার্কাস পা‌র্টির সা‌থে গাঁ‌য়ে গ‌ঞ্জে ঘুরা , যাত্রার দ‌লে নাম লেখা‌নো , চাঁটগায় ম্যা‌চের ফ্যাক্টরী‌তে কাজ , পঞ্চগ‌ড়ের পাথর ভাঙার মজুর , সমু‌দ্রের মাঝ ধরা জে‌লে । একবার তো বঙ্গ‌পোসাগ‌রে ট্রলা‌রে মাছ ধর‌তে গি‌য়ে ঝ‌ড়ের কব‌লে মর‌তেই ব‌সে‌ছিল । চো‌খের সাম‌নে জে‌লে সঙ্গী‌দের মর‌তে দে‌খেছিল । ভা‌গ্যের জো‌রে ফি‌রে এসেই নিয়ত করল ওসব আর না । বি‌য়ে ক‌রে সংসারী হ‌বে । ‌কিন্তু তত‌দি‌নে ব‌সির মিয়া ইহ‌লো‌কের মায়া সাঙ্গ করে‌ছেন আর রত‌নেরও বয়স চ‌ল্লিশ ছুঁই ছুঁই । সম্বল বল‌তে বা‌পের সুনাম , খ‌ড়ের খান দুই চালা ঘর , একটা গোয়াল ঘর , বি‌ঘে খা‌নেক ফসলী জ‌মি এই তো । কে প্রা‌ণে ধ‌রে তার মে‌য়ে‌কে এই ছন্নছাড়ার হা‌তে তু‌লে দি‌বে । শেষকা‌লে তার পত্নী ভা‌গ্যে জুট‌লো বছ‌র চৌদ্দর এক বা‌লিকা । আফসানা বেগম । চড়পাড়ার মে‌য়ে । ছোট‌বেলায় মা‌কে হারায় । বাবারও না‌কি পাত্তা নেই । লো‌কে তো এমনও কানাঘু‌সো ক‌রে আফসানার মা‌য়ের বি‌য়েই হয় নি । কোন এক লম্প‌টের সা‌থে সম্পর্ক ছিল । আফসা‌নার জ‌ন্মের আগেই সমূহ বিপদ টের পে‌য়ে চম্পট দেয় হারামজাদা । আফসানা‌কে পৃ‌থিবীর মুখ দে‌খি‌য়ে পৃ‌থিবী ত্যাগ কর‌লো ওর মা । সেই থে‌কে সে মামা মামীর মা‌ঝেই মানুষ ।অহ‌র্নি‌শি পাড়া পড়শীর মু‌খে আফসানার জন্ম বৃত্তান্ত নি‌য়ে স‌ন্দিহান কটু কথা শুন‌তে শুন‌তে অতিষ্ঠ মামা মামী অপেক্ষার প্রহর গুন‌ছিল । ক‌বে মেয়ে একটু বড় হ‌বে আর ক‌বে তা‌কে সংসার থে‌কে বিদায় করা যা‌বে । ভদ্র অভদ্র চোর গুন্ডা যা হোক এক প্রকার পাত্রস্থ কর‌তে পার‌লেই হয় । মামা মামীর তাগাদায় তাড়াহু‌ড়োয় বি‌য়েটা হল । রতন বাছ বিচার দূ‌রে থাক ভাবী বধূকে চো‌খের দেখাও দেখ‌লো না নি‌জের ‌স্বভাবসুলভ উদাসীনতার কার‌নে । বি‌য়েটাও হল অন্ধকা‌রে ঢিল ছুঁড়ার মত ।

বি‌য়ের প্রথম রা‌তের স্মৃ‌তি রত‌নের সব‌চে‌য়ে নি‌বিড় প‌রিচর্যায় ম‌নের সুপ্ত কোট‌রে খুব য‌ত্নে আজও অম‌লিন র‌য়ে‌ছে । রাত তো কতই এসে‌ছিল তার জীব‌নে । ঘোর বর্ষার রাত , ভরা পূ‌র্ণিমার রাত , মা‌ঘের কনক‌নে হাওয়ার রাত , আসমান ভরা তারার রাত , গুড়ুগুড়ু মে‌ঘের রাত , আচমকা কো‌কিল ডাকা বস‌ন্তের রাত । কিন্তু সেই রাত‌টি তার জীব‌নের সকল রা‌তের থে‌কে সম্পূর্ণ মৌ‌লিক , স্বতন্ত্র , উদ্বেগ , কৌতূহল এম‌নকি বিষন্নতায় প‌রিপূর্ণ । ফুলশয্যায় গু‌টিসু‌টি ঘোমট‌া টে‌নে আনত মু‌খে ব‌সে আছে নব বধূ । ছোট খা‌টো গড়ন । মূ‌র্তিম‌তি নিশ্চল ব‌সার ভ‌ঙ্গি । রতন এই ঘোমটা টানা জড়সড় বা‌লিকা বধূ‌র পা‌শে ব‌সে উসখুস কর‌তে লাগ‌লো । কি বল‌বে সে একে ? দুজ‌নের বয়‌সের ব্যবধানও রতন‌কে দ্বিধাগ্রস্ত ক‌রে তুল‌লো ।অথচ একটা কিছু হোক সেটা খুব সাধারন , খুব অপ্র‌য়োজনীয় , অকি‌ঞ্চিৎকর তা‌কে বল‌তে ইচ্ছা কর‌ছে আবার বা‌ধো-বা‌ধো ঠেক‌ছে । এত‌দিন সে প‌রিবার প‌রিজনহীন এই এক টুক‌রো বসত ভিটায় নি‌জের নিয়‌মে য‌থেচ্ছভা‌বে থে‌কে‌ছে ।কাউ‌কে নি‌য়ে এমন‌কি নি‌জে‌কে নি‌য়েও ভাবনা চিন্তার বালাই ছিল না । জীবন যাপন সম্প‌র্কে একটা নিস্পৃহ ভাব এসেছিল ম‌নে ।গতকালও এই ঘর , ঘ‌রের মা‌ঝে সদ্য দখলকৃত নববধূর জায়গা‌টি ছিল খা‌লি । আর আজ একজন নতুন কেউ যা‌কে প্রায় চো‌খের দেখাও দে‌খে‌নি , যার ভাল মন্দ পছন্দ অপছন্দ কিছুই জা‌নে না সে, দু‌দিন আগেও যার কথা কল্পনাও ক‌রে‌নি সে তেমন একজন তার ঘ‌রে , তার বিছানায় উপ‌বিষ্ট । ব্যাপারটার ম‌ধ্যে একটা নতুনত্ব আছে , কৌতূহ‌লের উ‌দ্রেক আছে , নতুনত্ব‌কে ছুঁ‌য়ে দেখার সহজাত ইচ্ছা আছে আবার প্রবল জড়তাও আছে । অস্ব‌স্তি নি‌য়ে রতন খাট ছে‌ড়ে উঠে ঘ‌রের মে‌ঝে‌তে শান্ত গম্ভীর ভ‌া‌বে পায়চা‌রি করল । ম‌নে ম‌নে ক‌য়েকবার চর্চা ক‌রে নিল তার অস্ব‌স্তির নি‌চে চাপা পড়া কথাগু‌লো । পরক্ষ‌ণেই ম‌নে হল তার কিছুই বলবার নেই চৌদ্দ বছ‌রের এই বা‌লিকা বধূ‌টি‌কে । সে হে‌টে জানলার ধা‌রে দাড়া‌লো । জানালার গা‌য়ে হাত রে‌খে বাই‌রে তাকালো । বাই‌রে তখন অন্ধকার রা‌ত্রি ।অস্পষ্ট আঁধারে আচ্ছন্ন ফস‌লের মাঠ থে‌কে ব্যা‌ঙের ঘ্যাগর,,,, ঘ্যাগর অবিরাম ডাক ভে‌সে আস‌ছে । দূ‌রে হাউসখালী নদী‌ । আবছা জে‌লে নৌকার আলো দেখ‌তে পেল সে ।নদীর বুক থে‌কে ভে‌সে আসা জে‌লে‌দের ডাকহাক প্র‌তিধ্ব‌নির মত শোনাল । সে‌দি‌ক থে‌কে হু হু বাতাস ঝাপ্টা‌ দিল তার চো‌খে মু‌খে । আর তখ‌নি ম‌নে হল সে একা । বিছানায় মুখ গুঁ‌জে ব‌সে থাকা বা‌লিকা বধূ‌টি‌কে ম‌নে হল যেন রক্ত মাং‌সের নয় , যেন মূ‌র্তি । পাথ‌রে গড়া । নিষ্প্রাণ । যেন তার কোন জীবন্ত অস্তিত্বই নেই । পি‌দি‌মের সী‌মিত আলো‌তে সেই মূ‌র্তিম‌তির ছায়া প‌ড়ে‌ছে মা‌টির দেয়া‌লে । নিষ্কম্পন ছায়া । এত দীর্ঘ আর বিষন্ন লে‌গে‌ছিল রত‌নের সেই রাত অথচ বু‌কের মা‌ঝে অদ্ভূত একটা আন্দোলনও হ‌চ্ছিল । শেষ রা‌তে তন্দ্রার মত এসে‌ছিল । ঝিঁমু‌নি দি‌য়ে টে‌বি‌লে মাথা ঠুক‌তে রত‌নের ঘু‌মের ঘোর ছু‌টে গি‌য়ে‌ছিল । তখনও ঘোমটা টে‌নে কু‌ন্ঠিত হ‌য়ে ব‌সে আছে বধূ‌টি । পি‌দি‌মের শিখাও ক‌মে গি‌য়ে মিট‌মিট জ্বল‌ছে । আবছ‌া আলো‌তে ঘ‌রের মা‌ঝে নির্ঘুম নি‌র্বিকার ভা‌বে ব‌সে থাকা বধূ‌টি‌কে দে‌খে রতন বিস্মিত হল ।স্বার্থপ‌রের মত ঘু‌মি‌য়ে পড়ার জন্যে একটু অনু‌শোচনাও হল তার। সে জি‌জ্ঞেস করলো-" ঘুমাও নি এখনও ? " । মূ‌র্তিম‌তি যেন এবার ন‌ড়েচ‌ড়ে উঠ‌লো । পাথু‌রে শরী‌রে এবার যেন প্রাণ জোগা‌লো । মাথা দুলা‌লো ‌সে আস্তে ক‌রে এপাশ ওপাশ । "সে‌কি ! কেন ? নতুন জায়গায় এসে বু‌ঝি ঘুম পা‌চ্ছে না । মামা মামীর জন্য মন কেমন কর‌ছে? " আফসানা এর কোনটারই জবাব দিল না । অত্যন্ত নীচু মোলা‌য়েম প্রায় শোনাই যায় না এমন সু‌রে বলল-" আমার খি‌দে পে‌য়ে‌ছে" । এই অতি ক্ষীণ অথচ কোমল কাতর নি‌বেদনে , এই এক‌টিমাত্র সরল সাধারন বা‌ক্যে বা‌লিকা নববধূ‌টির জন্য রত‌নের বুক ব্যথায় , করুণায় , ভালবাসায় ভ‌রে গি‌য়ে‌ছিল ।

বি‌য়ের প‌রবর্তী দিনগু‌লো কাট‌তে লাগ‌লো ভোর রা‌তের ক্ষণস্থায়ী মধুর স্ব‌প্নের মত । যেন রেলগা‌ড়ির চাকায় বাঁধা সম‌য়--‌দেখ‌তে দেখ‌তে দূ‌রে মি‌লি‌য়ে গেল । ধূ‌লো ঘ‌ড়ির মত হা‌তের মু‌ঠোয় নি‌তেই আঙু‌লের ফাঁক গ‌লে প‌ড়ে গে‌ল । এই স্বল্প সম‌য়ের প‌রি‌ধির মা‌ঝেই দুজন অসম বয়‌সের অপ‌রি‌জ্ঞাত মান‌ু‌ষের পরস্পর‌কে জানা , কা‌ছে আসা ,পরস্প‌রের ব্যক্তহীন ভালবাসা, ছোট খা‌টো অভিমান , ছোট খা‌টো দুঃখ , সরল সাদাসি‌ধে আনন্দ ,প্র‌তি‌টা দিন‌কে নতুন ক‌রে পাবার শিহরণ , প্রাত্য‌হিক ব্যবহার্য জি‌নিশপ‌ত্রের মা‌ঝে লে‌গে থাকা সুখ স্পর্শ ---যা সময়‌কেও হা‌রি‌য়ে দিল । বি‌য়ের প্রথম দি‌কে রতন সারাক্ষণ তার বা‌লিকা বধূ‌টির জন্য কি উপ‌যোগী , কি পে‌লে সে আনন্দ পা‌বে তার ভাবনা নি‌য়েই ব্য‌তিব্যস্ত থাকত । মা‌টির পুতুল , খেলনা বা‌টি ভাড়া কুড়ো , পাঁচ পয়সার টিপ ,কাঁ‌চের চু‌ড়ি , আলতার কৌটা আরও কত কি । আফসানা তার স্বামীর বু‌দ্ধি খা‌টি‌য়ে আনা উপহার সামগ্রী দে‌খে আড়া‌লে মুখ টি‌পে হাসত । কিছু দিন যে‌তে রতন উপল‌ব্ধি কর‌তে পারল যে আফসানার বয়স চৌদ্দ হ‌লে কি হ‌বে তার আচার আচর‌ণে , কা‌জে ক‌র্মে মো‌টেও বা‌লিকাসুলভ অন‌ভিজ্ঞতা নেই । বরং সাংসা‌রিক দা‌য়িত্ব কর্তব্য সম্প‌র্কে ওয়া‌কিবহাল একজন পূর্ণবয়স্কা প‌তিব্রতা যেন । কতটুকুই বা বয়স । এর ম‌ধ্যেই ঘরকন্নার নিয়ম কানুন সব আয়ত্ত ক‌রে ফে‌লে‌ছে । রতন শুরুর দি‌কে তা‌কে নেহাৎ ছে‌লে মানুষ ভে‌বে সে অনুযায়ী স‌ম্বোধন ক‌রে‌ছে, কথা ব‌লে‌ছে । ছে‌লেমানু‌ষি দুষ্টু‌মি ক‌রে‌ছে । কা‌জে ক‌র্মে ত্রু‌টি বিচ্যু‌তি দেখ‌লে স্নেহ ভ‌রে ভৎর্সনা ক‌রে‌ছে , নবী‌শের মত শি‌খি‌য়ে দেবার চেষ্টা ক‌রে‌ছে । কিন্তু কিছু‌দিন যে‌তেই রত‌নের ভ্রম ঘু‌চে গে‌লো আফসানার সাংসা‌রিক জ্ঞা‌নে । কা‌জে ক‌র্মে কর্তব্য‌নিষ্ঠায় যেন সে তার চৌদ্দ বছর‌টি‌কে ছা‌ড়ি‌য়ে গে‌ছে অনেক দূ‌রে । রতন দেখ‌লো বা‌লিকা বধূর মা‌টির খেলনা পুতুল ভাড়াকু‌ড়োর চাই‌তে দুপু‌রে খাবার পর মাদুর পে‌তে সেলাই নি‌য়ে বস‌তে উৎসাহ বেশী । বি‌কেল‌বেলা ধলচাতা‌লের ডাঙায় ওর বয়সী মে‌য়ে‌দের চিঁ বু‌ড়ি খেলার চাই‌তে , উঠো‌নের পেছ‌নে জ‌মি‌তে লাউ কুম‌ড়ো ম‌রি‌চ প‌রিচর্যায় ওর আকর্ষণ বেশী । আহা‌রের সময় পাখা বাতাস করা , আহা‌রের পর রত‌নের জন্য পান সা‌জি‌য়ে আনা , রা‌তে ঘুমাবার সময় ওর পা‌য়ে তেল মা‌লিশ করা , হাত পাখায় র‌ঙিন সু‌তোয় র‌তনের নাম লিখা , ফুল পা‌খি লতা পাতার সূ‌চি কর্ম , সিগা‌রে‌টের প্যা‌কেট লু‌কি‌য়ে রে‌খে দি‌নে তিনটার বেশী সিগা‌রেট রত‌নের হা‌তে না দেয়া এমন বি‌বিধ কর্মপটুতা দে‌খে রতন খু‌শি হবার বদ‌লে কিছুটা যেন ক্ষুন্ন হ‌য়ে‌ছিল । অপরপ‌ক্ষে মাতৃ পিতৃহীন আশৈশব মাম‌া মামীর সংসা‌রে অব‌হেলা অনাদ‌রে অল্প বয়‌সেই কৈ‌শো‌রের চপলতা উচ্ছ্বলতা হা‌রি‌য়ে ফেলা এই হতভাগী‌টির জন্য করুণায় , সহানুভূ‌তি‌তে রত‌নের অন্তর প‌রিপূর্ণ হ‌য়ে‌ছিল ।

দেখ‌তে দেখ‌তে ঋতুর পালাবদল ঘট‌লো । আষাঢ় শ্রাবণ গ‌ড়াল , কা‌র্তি‌কে মাঠ ভরা আম‌নে ছে‌য়ে গেল , মা‌ঘের উত্তরীয় হাওয়ায় কাঁপন জাগা‌লো , ফাল্গু‌নে ঝরা ব‌ন নতুন সজীব পাতায় সাজ‌লো , কোকি‌লের কুহু বে‌জে উঠ‌লো নির্জন দুপু‌রে , চৈ‌ত্রের খাঁ খাঁ রো‌দে মাঠ ঘাট ফে‌টে চৌ‌চির হল ।তু‌লির আচ‌ড়ে আঁকা যেন এক একটা দিন ।আকা‌শের গা‌য়ে র‌ঙের খেলা । প্র‌তি‌নিয়ত র‌ঙ ঘুল‌ছে মিশ‌ছে মু‌ছে যা‌চ্ছে আবার নতুন র‌ঙের আবির্ভাব ঘট‌ছে । প্রকৃ‌তি ও নিস‌র্গের মা‌ঝেও বৈ‌চি‌ত্রের ছোঁয়া লাগ‌ছে প্র‌তি‌নিয়ত । এই রঙ , রূপ বৈ‌চিত্র মানব মানবীর ‌চো‌খে আচমকা ধরা প‌ড়ে যায় । কা‌জে ক‌র্মে এক‌ঘেয়ামী ক্লা‌ন্তি‌তে একটু অবস‌রের জন্য , সামান্য আরাম‌ বো‌ধের আশায় হয়ত কাজ থে‌কে মুখ তু‌লে আকা‌শের দি‌কে তাকায় আর তখ‌নি সে অবাক হ‌য়ে ভা‌বে "আজ আকাশটা এত নীল কেন ! " অথবা " কি মেঘ জ‌মে‌ছে ! এই বু‌ঝি বৃ‌ষ্টি আরম্ভ হ‌বে ।"এভা‌বেই ছোট ছোট সূক্ষ্ণ তু‌লির আচ‌ড়ে অতি মৃদু গ‌তি‌তে কোন কিছু বু‌ঝে ফেলার আগেই আবার ঋতু চক্রে ফি‌রে এলো বৈশাখ । রতন গ‌ঞ্জের হাট থে‌কে স‌বে ফি‌রে‌ছে । ঘা‌মে চিট‌চি‌টে জামাটা স‌বে খু‌লে বারান্দার দ‌ড়ি‌তে মে‌লে দি‌য়ে‌ছে । আফসানা লাজুক লাজুক মুখ ক‌রে খুব ইতস্তত ভা‌বে রত‌নের কা‌নে ফিস‌ফি‌সি‌য়ে কি যেন বল‌লো । শু‌নে মুহূ‌র্তে রত‌নের ঘর্ম ক্লান্ত মুখখানা খু‌শি‌তে উজ্জ্বল হ‌য়ে উঠ‌লো । আফসানা‌কে নি‌বিড় বাহু যুগ‌লে আবদ্ধ কর‌লো সে । কলতলার নিম গাছটায় কি যেন একটা হল‌দে পা‌খি ডে‌কে উঠ‌লো মি‌ষ্টি সু‌রে । আফসানা বাহু বন্ধ‌নে আবদ্ধ থে‌কেই পা‌খিটা দে‌খে জি‌জ্ঞেস করল-" কি নাম গো পা‌খিটার ? ভারী সুন্দর দেখ‌তে । "

কনক‌নে শী‌তের রাত । ঘন কুয়াশায় স‌ম্মো‌হি‌তের মত আচ্ছন্ন হ‌য়ে আছে চারপাশ । আকা‌শে মে‌ঘের ফাঁকে ঘোলা‌টে চাঁদ । শাপগ্র‌স্তের মত ফি‌কে আলোয় তা‌কি‌য়ে আছে মর্ত্য‌লো‌কে । ঘ‌রে অসহনীয় প্রসব বেদনা কাতর আফসানা বেগম । ওর যন্ত্রণা কাতর চিৎকার কুয়াশার ঘন আস্তরণ ভেদ ক‌রে হা‌রিয়ে যা‌চ্ছে দূ‌রে বাশঝা‌ড়ের মা‌ঝে । সেখান থে‌কে প্র‌তিধ্বনী হ‌য়ে আবার ফি‌রে আস‌ছে ।গা‌য়ে চাদর জ‌ড়ি‌য়ে উঠো‌নে দ্রুত প‌দে পায়চা‌রি কর‌ছে রতন । হাড়কাপা‌নো শী‌তেও সে ঘামে প্রায় নে‌য়ে ফে‌লে‌ছে । বু‌কের মা‌ঝে অদ্ভূত এক তোলপাড় । আশঙ্কা আর সম্ভাবনার মি‌লিত ঢেউ বু‌কের মা‌ঝে ফু‌লে ফে‌পে উঠ‌ছে । বি‌য়ের প্রথম রা‌তের মতই সেই রাত‌টি‌কে বড় বেশী দীর্ঘ বিষন্ন ম‌নে হ‌য়েছে রত‌নের । যেন ম‌নে হ‌য়ে‌ছে বন্ধ দরজার ওপাশ থে‌কে আফসানার আর্ত‌চিৎকার আর থাম‌বে না , এই বিষাদগ্রস্ত দীর্ঘ শী‌তের রাত‌টির আর অবসান হ‌বে না । সম‌য়ের কাটা যেন থম‌কে গে‌ছে নিয়‌তির হা‌তে । চাপা অবসাদ , দু‌শ্চিন্তা আর ক্লা‌ন্তি‌তে প্রায় অচৈত‌ন্যের মত উঠো‌নের পি‌দিম কখন ম্লান হ‌য়ে গে‌ছে , কখন দরজার ওপা‌শে আফসানার চিৎকা‌রে থে‌মে গি‌য়ে সদ্যজাত শিশুর কান্নায় অনুর‌নিত হ‌য়ে‌ছে আকাশ বাতাস , কখন বন্ধ দরজা খু‌লে গি‌য়ে দাই বু‌ড়ি বে‌রি‌য়ে এসে‌ছে উঠো‌নে , কখন চাঁদ হে‌লে প‌ড়ে‌ছে প‌শ্চিমাকা‌শে গাছগাছা‌লির মাথায় রতন টেরই পেল না । সে যেন একটা ঘো‌রের মা‌ঝে , স্ব‌প্নের মা‌ঝে ডু‌বে ছিল । দীর্ঘ ক্লান্ত বিষন্ন স্বপ্ন । ক্লা‌ন্তিকর ,ভীষণ ক্লা‌ন্তিকর স্ব‌প্নের প‌রিসমা‌প্তি ঘট‌লো বি‌য়ের রা‌তের সেই মূ‌র্তিম‌তি বা‌লিকা বধূটির দি‌কে চে‌য়ে । সেই মুখ , সেই চোখ , দীর্ঘ পল্লব ঘেরা ।কাজল কা‌লো মায়াকাড়া ।‌স্থির দু‌টো চোখ । নির্জীব , নিষ্প্রাণ শরীর । বি‌য়ের প্রথম রা‌ত্রির মতই জড়সড় । যেন পাথ‌রে গড়া কোন মূ‌র্তি । হয়ত এখ‌নি মূ‌র্তির মা‌ঝে প্রানের সঞ্চার হ‌বে । হয়ত সেই রা‌ত্রির মতই অতি ক্ষীণ কোমল নীচু স্ব‌রে বলে উঠ‌বে-" আমার খি‌দে পে‌য়ে‌ছে " । রতন স্থির দৃ‌ষ্টি‌তে তা‌কি‌য়ে থাক‌লো আফসানার পাংশু‌টে বিবর্ণ মু‌খের দি‌কে । সেখা‌নে মৃত্যু যন্ত্রণার স্পষ্ট ছাঁপ তখনও বর্তমান । আফসানার বু‌কের পা‌শে দু‌টি ক্রন্দনরত মানব‌শিশু । জানালার ফাঁক গ‌লে ম্লান চা‌দের প্রথম আলো প‌ড়ে‌ছে ও‌দের বিস্মিত চো‌খে মু‌খে । রতন ঘর ছে‌ড়ে বে‌রি‌য়ে এলো । উঠো‌নে কু‌য়ো পা‌ড়ের নিম গাছটার তলায় গি‌য়ে দাড়া‌লো । রা‌ত্রি তখন প্রায় শেষ। চাঁদ দূ‌রের বাশব‌নের মাথায় ঢ‌লে প‌ড়ে‌ছে । দূর মস‌জিদ থে‌কে ভে‌সে আসছে আযা‌নের ধ্ব‌নি । একটা দু‌টো পা‌খি জে‌গেছে । তা‌দের কি‌চির মি‌চির কা‌নে আস‌ছে । মৃদু বাতা‌সে ঘ‌রের পেছ‌নে আমের পাতা ঝ‌ড়ি‌য়ে দি‌চ্ছে রাতভর জ‌মে থাকা শি‌শির । শি‌শির নয় , যেন বু‌কের রক্ত ক্ষরণ । টুপ্ ,,,,,, টুপ্,,,,,,টুপ্,,,,,,,,টুপ্

‌চোখ বুজ‌লে রতন আজও সে রা‌তের শি‌শির পত‌নের মৃদু মন্থর শব্দ শুন‌তে পায় । এত টাটকা আর স‌তেজ লা‌গে শব্দটা যেন এই মাত্র ঝ‌রে গি‌য়ে তার অন্ত‌রে সেই শ‌ব্দের রেশ বর্তমান ।সূক্ষ্ণ অনুভূ‌তির আঙু‌লগু‌লো যেন সেই পতন মুহূর্ত‌টি‌কে ছুঁ‌য়ে ছুঁ‌য়ে যা‌চ্ছে ।কী বাস্তব ! কী জীবন্ত ! কী প্রাণবন্ত ! অথচ কা‌ছে থে‌কেও যে স্প‌র্শের বাই‌রে । ধর‌তে গি‌য়েও যে হা‌তের ফাঁক গ‌লে বের‌ি‌য়ে যায় । অনুভূ‌তির মা‌ঝেও যে অনুভ‌বের বাই‌রে । এই অতৃ‌প্তি , এই না পাওয়ার বেদনাটুকুই হয়ত জিই‌য়ে রা‌খে তা‌কে । পাওয়ার চাই‌তে পাবার তীব্র আকাঙ্খাই তা‌কে বাঁ‌চি‌য়ে রা‌খে যুগ যুগ ধ‌রে । এই অপূর্ণতা , এই অসম্পূর্ণতা আছে ব‌লেই হয়ত পথ চল‌তে ভাল লা‌গে , আকাশের দি‌কে তা‌কি‌য়ে থাক‌তে ভাল লা‌গে , ঘা‌সের ঘ্রাণ , মা‌টির গন্ধ , বৃ‌ষ্টির ‌কোরাস ভাল লা‌গে । এই অপূর্ণাঙ্গ বোধ বেঁ‌চে থাকার জন্য একটা কারণ , একটা উদ্দেশ্য , একটা নি‌মিত্ত খুঁ‌জে পাওয়া । স্মৃ‌তির ধূসর মি‌ছিল থে‌কে বে‌রি‌য়ে আস‌তে রত‌নের ঝাপসা চোখ জোড়া ক্রমশ স্পষ্ট হ‌তে লাগ‌লো । সে কল তলায় সেভা‌বেই ব‌সে আছে ।নিম গাছটায় ঠেস দি‌য়ে বসা । হা‌তে মাজ‌নের ছাই । ‌চৈ‌ত্রের রোদটা আরেকটু চ‌ড়ে ব‌সে‌ছে উঠো‌নে । খড়ের চালায় ঝুল‌ছে সবুজ পাতার আড়া‌লে ক‌চি সবুজ লাউ । বারান্দায় বাচ্চা দু‌টো কি নি‌য়ে যেন হৈ চৈ কর‌ছে । ও‌দের মু‌ড়ির বা‌টি উপুড় হ‌য়ে প‌ড়ে‌ছে । দু তিনটা মুরগী ঠু‌কে ঠু‌কে খে‌য়ে যা‌চ্ছে বারান্দায় প‌ড়ে থাকা মু‌ড়ি । সে‌দি‌কে বাচ্চাদু‌টোর ভ্রু‌ক্ষেপ নেই । তারা তা‌দের নি‌জের জগৎ নি‌য়েই ব্যস্ত । হঠাৎ খুব চেনা মি‌ষ্টি সু‌রে , যেন অতী‌তের তীর হ‌তে আনা সুর---খুব প‌রি‌চিত সু‌রে ভে‌সে এলো পা‌খির গান । এমন অপ্রত্যা‌শিত চেনা সু‌রে ধক্ ক‌রে উঠ‌লো রত‌নের বুক । স্রোত ব‌য়ে গেল বু‌কের উপর দি‌য়ে । আবার সেই মি‌ষ্টি সুর ভে‌সে এলো । সেই চির চেনা । বারান্দায় বাচ্চা দু‌টোর হৈ চৈ বন্ধ হল । ওরা তাকালো নিম গাছটার ডা‌লে । দেখ‌লো একটা হল‌দে পা‌খি ব‌সে‌ছে সেখা‌নে । সেটাই মি‌ষ্টি সু‌রে ডাক‌ছে । বাচ্চা দু‌টো খু‌শি‌তে লাফা‌তে লাফা‌তে উঠো‌নে নে‌মে এলো । রতনকে উদ্দেশ্য ক‌রে বলল- " বাবা দে‌খো কি সুন্দর হল‌দে পা‌খিটা ! " রতন চম‌কে গি‌য়ে মাথার উপর নিম গাছটায় তাকা‌লো । হ্যাঁ , সেই পা‌খিটা । অনেক অনেক বছর আগে আরও একবার এসে‌ছিল তা‌দের উঠো‌নে । ব‌সে‌ছিল নি‌মের সেই ডালে । বৈশা‌খের এমনি এক দি‌নে মি‌ষ্টি সু‌রে ডে‌কে‌ছিল । আলিঙ্গনরত আফসানা বাচ্চা দু‌টোর মতই সে‌দিন এই হল‌দে পা‌খিটা দে‌খে অভিভূত হ‌য়ে‌ছিল । আনন্দ পে‌য়ে‌ছিল । কি অদ্ভূত প্রত্যাবর্তন । কি আশ্চর্য নিয়‌মে পুনরাবৃ‌ত্তি হ‌চ্ছে সব কিছুর । শুধু সেই মানুষটার পুনরাগমন ‌নেই---স‌ত্যি কি নেই ? না , আছে । টুক‌রো স্মৃ‌তির মা‌ঝে , অনুভূ‌তির মা‌ঝে , উষ্ণতার মা‌ঝে সেই মানুষ‌টিরও পুনরাবৃ‌ত্তি ঘট‌ছে । চিরকা‌লের অদৃশ্য চ‌ক্রে পুনরাবৃ‌ত্তি ঘট‌ছে । বাচ্চা দু‌টোর একজন প্রশ্ন কর‌লো ---" বাবা কি পা‌খি এটা ? " আফসানার সেই প্র‌শ্নের পুনরাবৃ‌ত্তি । শুধু প্রশ্নকর্তা বদ‌লে‌ছে । না , রতন পা‌খিটার নাম জা‌নে না । আফসানা‌কে সে‌দিন পা‌খিটার নাম বল‌তে পা‌রে নি । আজও পারল না । তা‌তে কি । বাচ্চাদু‌টোর এই আনন্দ টুকু , আফসানার সে‌দি‌নের সেই আনন্দ টুকু সেটাই কি য‌থেষ্ট নয় । মুহূ‌র্তের এই আনন্দ টুকুই নিখুঁত , খাঁ‌টি , নি‌র্ভেজাল ।বাচ্চা দু‌টো খু‌শি‌তে হাত তা‌লি দি‌তেই হল‌দে পা‌খিটা ডানা মে‌লে উড়ে পালা‌লো রো‌দে । সেই সা‌থে ছ‌ড়ি‌য়ে দি‌য়ে গেল চিরন্তন অনা‌বিল অম্লান আন‌ন্দের পরশ । আনন্দ ছ‌ড়ি‌য়ে পড়লো গা‌ছের ডা‌লে , ঘ‌রের চা‌লে , উঠো‌নের ভরপুর রো‌দে , বাচ্চা দু‌টোর ম‌নে । পা‌র্থিব জীব‌নে বেঁ‌চে থাকার জন্য বোধ হয় এটুকুই সম্বল ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
আহা রুবন অনেক ক্ষণ পর একটি ভাল গল্প পড়লাম। বর্ণনা একটুখানি বেশি মনে হল। শুভেচ্ছা রইল।
অনেক ধন্যবাদ আহা রুবন ভাই ।
রুহুল আমীন রাজু চমৎকার একটি গল্প ... অনেক ভাল লাগলো । ভুল গুলো শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করুন । অনেক শুভ কামনা ...। ( আমার পাতায় আমন্ত্রণ রইলো )
অ‌নেক ধন্যবাদ রুহুল আমীন রাজু
Dr. Zayed Bin Zakir (Shawon) Bornona khubi valo. Kintu chhoto golper kono chomok ba twist nei. Tobuo valo legese porte. Shuvo kamona.
ধন্যবাদ ড.জা‌য়েদ বিন জা‌কির শাওন ভাই
মোঃ নুরেআলম সিদ্দিকী অসাধারণ লেখা, কিন্তু শেষের দিকে এসে সমস্যা হয়েছে.... যা হোক, শুভকামনা ও ভোট রইলো আপনার জন্য
শে‌ষের দি‌কে কি ক‌রে সমস্যাটা হল বুঝলাম না । লেখাটা ব্ল‌গে পড়ার পর মনটাই খারাপ হ‌য়ে গে‌ছে । ভুলটা তারাই ক‌রে‌ছে ব্ল‌গে গল্পটা দেয়ার সময় । কষ্ট ক‌রে প‌ড়ে‌ছেন তাই ধন্যবাদ জানা‌চ্ছি ।
আপনি তাদেরকে এর জন্য মেসেজ দিন, তারা ঠিক করে দিতে পারবে.....
Fahmida Bari Bipu আপনার লেখনী অসাধারণ। গল্পটা লিখেছেন অনেক যত্ন করে, খুঁটিনাটি বস্তুগুলোর প্রায় নিঁখুত বিবরণ ফুটিয়ে তুলে। কিন্তু একটা কথা । লেখাটা আরাম করে পড়তে পারিনি। একই প্যারার মধ্যে গাদাগাদি করে অনেক বাক্যের সহাবস্থান মনে হলো। ছোট ছোট প্যারায় লিখলে গল্পটি সুখপাঠ্য, সাবলীল ও উঁচু দরের লেখা হতো সন্দেহ নেই। শেষের দিকে কিছুটা ভুল হয়েছে দেখলাম। গল্পটা আবার নতুন করে শুরু হয়েছে। আপনি গকতে মেইল করে ওদের কাছে সমস্যাটা জানান। শুভকামনা ও ভোট আপনার জন্য।
আপু গল্পটা দেখার পর মনটাই খারাপ হ‌য়ে গে‌ছে । গল্পটা ঠিকভা‌বে পা‌ঠি‌য়ে‌ছি । প‌রে দেখলাম পু‌রো লেখাটা আবার কিভা‌বে যেন রি‌পিট হ‌য়ে‌ছে । বেশ ক‌য়েক জায়গায় বানান ভুল দেখলাম , যদিও আমি লেখার সময় ঠিকভা‌বেই লি‌খে‌ছিলাম । কষ্ট ক‌রে লি‌খে য‌দি এই অবস্থা দে‌খে একটু আহত হ‌য়ে‌ছি । আপনার পরাম‌র্শে মেইল ক‌রে ব্যাপারটা জানালাম । দে‌খি ঠিক ক‌রে দেয় কিনা । ধন্যবাদ ।

১৪ অক্টোবর - ২০১৬ গল্প/কবিতা: ৭ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪