কালো ডাইরী

শিশু (সেপ্টেম্বর ২০১৯)

নাজমুল হুসাইন
  • ১০৪২

ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি হচ্ছিল বিকেল থেকেই।বিকেল গড়িয়ে এখন সন্ধ্যে।কোথা থেকে যেন দমকা হাওয়া এসে ঝাপটে পড়লো বৃষ্টি ফোটার গায়ে।ফুসকে উঠলো বজ্র নাদ।নিজেকে উপুড় করে দিয়ে,মেঘ যেন তার সমস্ত জল ঢেলে দিল ধরণীর বুকে।হয়তবা আজ সারা রাত শুষ্ক মরুভুমি সম,এই প্রাণ রাজ্যে উন্মাদ নৃত্যে মেতে উঠবে,অন্ধকারে নিমজ্জিত বৃষ্টির জল।সব কিছু ভিজে যাবে,সব কিছু ডুবে যাবে,সব কিছু শেষ হয়ে যাবে,তার প্রতিটি ফোঁটার আঘাতে আঘাতে।জল কখনো ক্ষমা করে না,ক্ষমা করতে সে জানে না।বাহিরে উঠোনের এক কোনে,পাথর মূর্তির ন্যায় ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছে অর্ধ বয়সী অসহায় মানুষটি।এ মুহুর্তে মাথার উপরের ছাদটি সরে গেছে তার।চোখে মুখে প্রার্থনায়,কাকুতি মিনতির ছাপ ঠিকরে বেয়ে পড়ছে যেন।চোখ জোড়া অশ্রু হারিয়ে রুক্ষ মরুভুমি হলেও,বৃষ্টির ফোঁটারা পণ করেছে আজ,ভিজিয়ে ভিজিয়ে তার অন্তরের দুঃখ যাতনা শীতল করেই তবে খান্ত হবে তারা।অন্ধকার যত বেশি রাতের গহিনে মিশে যেতে থাকে,বৃষ্টির ফোঁটারা ততো বেশি উন্মাদিনী অট্টহাস্যে তার ধ্বংশ বৃত্তি চরিতার্থ করে চলে।এ ভাবেই দুঃস্বপ্নের মঞ্চায়ন হয়,ব্যথাতুর হৃদয়ে মানুষটি কেবল একলা হয়ে,নিতান্ত একলা হয়েই,উপভোগ করতে থাকে,জীবন পথের উলটে যাওয়া নতুন অসুখটিকে।আজ আর ঘরের দরজাটি খুলে গেল না,স্বয়ং তার প্রিয়তমটি দরজার ওপারে গা ঝাড়া দিয়ে উঠেছে যেন।ধুলো বালি আর পু্রোনো জঞ্জাল থেকে যেন মুক্তি মিলেছে তার।সুতরাং বাহিরে অদূরে বৃষ্টির জলে,ভ্রুক্ষেপ করার কি প্রয়োজন আছে?তবুও অর্ধমৃত মানুষটি দাড়িয়েই রইলো।একে একে নিভে গেল জেগে থাকা ঘরের বাতীগুলো।একটা সময় প্রচন্ড শ্বাস কষ্টে হাঁফিয়ে উঠলো সে।কিন্তু শ্বাসবায়ু আজ আর তাকে কষ্ট দিতে পারবে না,তার চেয়েও ঢের কষ্ট আর যন্ত্রনা,দুমড়ে মুচড়ে নিঃশেষ করে দিচ্ছে প্রতিক্ষনে।সেই কষ্ট যাতনার কাছে,এই নিঃশাসের হাসফাস যেন,অতি নগন্য বলেই মনে হচ্ছে তার কাছে।এ ভাবেই বৃষ্টির জলে দাঁড়িয়ে থেকে,কতটা সময় কেটে গেল,হিসেব রইলো না।এক জোড়া চোখ এক দৃষ্টে চেয়ে রইলো প্রিয়তমের দরজায়।এই বুঝি এগিয়ে এসে তাকে বুকে জড়িয়ে ধরবে,ফিরিয়ে নিয়ে যাবে পরম মমতায়।রাত আরো নিঝুম হল,বৃষ্টিরা আরো নিঠুর হল,কিন্তু ঘুম লুটেরাদের চেয়ে অধিক নিঠুর হতে পারলো না।কতটা রাত যে রোগ ক্লিষ্ট অসহায় মানুষটি সেখানে দাঁড়িয়ে রইলো,কেউ তা জানে না।কে যেন এসে কানের কাছে কিছু একটা বলতে চাইলো,ডুকরে কেঁদে উঠে হাওয়ার ঝনঝনানির ন্যায়।শোনা গেল চলে যাও,চলে যাও,আমাকে সংগে নিয়ে দূর বহুদূর।ওগো আর একটি মিনতি আমার না হয় রাখো।দোহায় লাগে তোমার,চলে যাও।মনে হল সহসা কে যেন তার পায়ে লুটিয়ে পড়ে,ডুকরে কেঁদে কেঁদে উঠে বুক ভাসাতে লাগলো।বুকফাটা করুণ আর্তনাদ নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলো না।কান্না বিজড়িত কন্ঠের,করুণ মিনতির সুর চিনতে ভুল হল না তার।অত্যন্ত ব্যাকুল হয়ে,পায়ের কাছ থেকে কুড়িয়ে নিয়ে,বুকে চেপে ধরে,দুচোখের জল মুছে দিয়ে বলল,এই হতভাগাকে একলা করে দিয়ে,ত্রিশটা বছর কোথায় ছিলে গো?আমার এ হতভাগ্য মুখ আজ তোমায় কেমন করে দেখাই?পরম শান্তিতে বুকে আশ্রয় নিয়ে,সেই চিরচেনা কন্ঠ বলে উঠলো,ওসব কিচ্ছুটি জানিনে।আমায় সংগে নিয়ে তুমি আজ যাবে কিনা বলো,বলো যাবে তো?কি হল বলো যাবে তো?ঠিক আছে,ঠিক আছে,চলে যাব,বহুদূর চলে যাব,যেদিকে দুচোখ যায়,এ বাহুডোরে বেঁধে তোমায় নিয়ে চলে যাব।আর একটি বারের মত,শুধুমাত্র একটি বারের মত,আবার ভুলে যেতে চাই আমার জংপড়া শীর্ণ অতীত,আমার স্নেহের বাঁধন।রাবেয়া লক্ষিটি আমার,আমি ফিরে যেতে চাই,কেবলই তোমার পরম আলিঙ্গনে।খুজে দেখেছি,অনেক খুজেছি,ত্রিশটা বছর পার করেছি খুজে বেড়িয়ে,বিশ্বাস করো শান্তি কোথাও খুজে পেলাম না।আজ এ অশান্ত ঘন বরষা,তুমি ছাড়া আর কেউ শান্ত করতে পারবে না।তোমার জন্যই বুঝি বৃষ্টিরা আমাকে এক চুল সরতে দেয়নি এখান থেকে,তুমি আসবে বলেই হয়তবা প্রিয়তমের দরজা চিরতরে বন্ধ হয়ে গেছে।ওগো পূণ্যবতী স্ত্রী আমার,তোমার বাহুডোরে জড়িয়ে,আমায় নিয়ে চলো গো,দূর থেকে বহুদূর,সুদূর অচিনপুর,শুধুমাত্র তোমার চির শান্তির রাজ্যে।যেখানে গেলে কাউকে হারাতে হয় না,কিচ্ছুটি হারাতে হয় না,যেখানে কেউ দুঃখ দেয় না,কেউ দুঃখ পায় না,কেবলই পরম আনন্দে সুখ লাভে মোহিত হওয়া যায়।একটি বার,শুধু মাত্র আর একটি বার,বুক ভরে পরম তৃপ্তি মাখা শান্তিতে শ্বাস ফেলতে চাই আমি,শ্বাস ফেলতে চাই।

দিন পাঁচেক পরের কথা,সবে চাকরীটা খুইয়ে,অত্যন্ত আনমনা আর সংকোটাপন্ন মনোভাব নিয়ে,বাড়িতে ফিরে এলো শিতাব যাবী।যদিও চাকরীটা হারাবার পশ্চাতে,অতিশয় সরলতা,অন্ধ বিশ্বাস,স্ত্রীর অতি লোভ,আর উচচাভিলাসী মনোভাবই দায়ী ছিল বেশি।সরকারী ব্যাংকের বড় চাকুরে ছিল সে,তবে কিছুক্ষন পূর্ব থেকেই সে আর ব্যাংক কর্মকর্তাটি নন।অল্প ক্ষনের মধ্যেই বড় ধরনের আরো একটি ধাক্কা সামলাতে হল তাকে।বাড়ি ফিরেই দেখতে পেল,বাপের বাড়ি যাবার যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে স্ত্রী।না বেড়াতে নয়,চিরকালের জন্য থেকে যাবার জন্য।কোন এক অদৃশ্য সংবাদদাতা পূর্বেই স্বামীর অধোপতনের সামগ্রিক তথ্য জানিয়ে দিয়েছে অত্যন্ত সংগোপনে।শত চেষ্টা করেও ব্যর্থ হল সে,কোন ক্রমেই ঠেকিয়ে রাখা গেল না স্ত্রীকে।ডিভোর্স লেটারটা যেন বহুকাল পূর্ব থেকেই প্রস্তুত রেখেছিল মেয়েটি।যেন সময় এলেই তা ছুড়ে মারতে পারে স্বামীর মুখের পানে।আজ বুঝি সে সময় ষোল কলা পূর্ণ করেছে।সব কিছু ভুলে যাবার সময় এসে গেছে।কিছুই বুঝে উঠতে পারলো না শিতাব যাবী।হতভম্বের ন্যায় স্ত্রীর মুখের পানে চেয়ে রইলো কিছুক্ষণ।অতঃপর বিষ্ময় ভরা আবেগ নিয়ে বলে উঠলো,তুমি এমনটি করতে পারো না,এমনটি করতে পারো না।আমার এখন দুঃসময়,এ সময় অন্তত পাশে চাইছি তোমাকে।স্ত্রীর হাতটা ধরতে চাইলো শিতাব,এক ঝাটকায় স্বামীর কাছ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিলো সে।শিতাব যাবীর স্ত্রীর নাম ফারহা।বড় লোকের একমাত্র আদরের দুলালী।মেয়ের কথাই যেন বাবা মায়ের কথা,সুতরাং ওকে আটকে রাখার সাধ্য আজ আর কারো নেই।ডিভোর্স লেটারটি শিতাবের মুখের পানে ছুড়ে মেরে,হনহন করে বেরিয়ে গেল সে।ঘর থেকে বের হবার পূর্বে তার শেষ বাক্যটি ছিল,দুদিন বাদে বাড়ির কাজের লোক এসে,আমার জিনিস পত্র সব নিয়ে যাবে,ব্যাংকের অর্থ আত্নসাতের ন্যায়,মাল সামানা সব যেন গায়েব করে দিয়ো না আবার।প্রিয়তমা স্ত্রীর শেষোক্ত বাক্যটি শত শহস্র কাটার মত,এফোড় ওফোড় করে দিতে লাগলো তাকে।ইচ্ছে হল দৌড়ে গিয়ে,ওর গলার টুটি চেপে ধরে,মুহুর্তেই সমস্ত হিসেব চুকিয়ে দেই চিরতরে।কিন্তু আমি যে সেটা করতে পারছি না!দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া শরীর নিয়ে মাটিতে বসে পড়লো শিতাব।অন্ধের মত যাকে বিশ্বাস করেছিলাম,শুধুমাত্র চাকরীটা হারাবার জন্যই কিনা,লাথি মেরে চলে গেল সে?অথচ তার জন্যই তো পাপের পথ বেঁছে নিয়ে ছিলাম,চাকরী পর্যন্ত খুইয়েছি শেষমেশ।হতবাগ বিষ্ময়ে বিড় বিড় করে বুলি আওড়াতে লাগলো শিতাব।পাঁচ পাঁচটি বছরের সংসার জীবনের প্রতিটি মুহুর্ত মনে পড়তে লাগলো।কোন একটা ভাবনা,কেন জানি প্রায়ই তাকে ভাবাতো।সব কিছু থাকা সত্বেও,কিসের যেন অভাব অনুভব করতো সে।প্রায়ই মনে হত কিসের যেন কমতি রয়েছে সংসারে।সমস্ত সুখ হাতের মুঠোয় থাকার পরেও,সে কখনোই বুঝতে পারতো না,শুন্যতা আসলে কোথায়,কেনইবা তার এমন মনে হয়?আজ প্রথমবার শুন্যতার কারনটি আঁচ করতে পেরেছে বলে মনে হল তার।অবশ্য এ মুহুর্তে বাচ্চা কাচচা না নেয়ার ব্যপারে ঘোর বিরোধী ছিলাম স্বয়ং নিজে।বরংচ খুব বেশি তাড়াহুড়ো করছিল ও।একদমই সময় দিতে চাইছিল না।আমিও কেন জানি আরো একটু গুছিয়ে নিতে চাইছিলাম।অবশেষে ওর জীদের কারনে সিদ্ধান্তটি পাল্টাবো বলে স্থীর করেছিলাম।কিন্তু হঠাৎ করেই সব কিছু এলোমেলো হয়ে গেল।কেন এমন হল?বিশ্বাসে কি তাহলে ঘাটতি ছিল?না,দুজনের মাঝে বিশ্বাস ছিল ঢের,ভালোবাসারও কমতি ছিল না বিন্দু মাত্র।অন্তত ওকে দেখে অবিশ্বাসী অথবা অসুখী বলে মনে হয় নি কখনো।যা একটু আধটু আপত্তি ওর ছিল,তা কেবল বাবাকে নিয়ে।ও চাইতো না,বাবা আমাদের সাথে এখানে থাকুক।প্রায়ই বলতো,অনেক হয়েছে এবার তাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে এসো।তার কারনে আমি নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়ব হয়তবা।যতবার এই অনুযোগটি ও আমায় করেছে,আমি স্পষ্ট বলেছি সাবধান!তিনি আমার পিতা।বাঁচতে হলে এ বাড়িতেই বাঁচবে,মরতে হলে এ বাড়িতেই মরবে।তুমি এ ব্যপারে নাক গলাতে এসো না।পরক্ষনেই কোন না কোন বুঝ দিয়ে শান্ত করতাম ওকে।যাকে নিয়ে এত অনুযোগ,এত অভিযোগ ওর ছিল,নিজ হাতেই তো তাকে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছে কদিন আগেই।অপদার্থের মত কেবল দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে জঘন্য অন্যায়কে প্রশ্রয় দিয়েছিলাম সেদিন।না জানি কত বড় পাপ আমি করেছি।এত বড় পাপের পরেও এ কয়দিনে একটিবারের জন্যও আক্ষেপ বা অনুসুচনা হয়নি আমার!এত বড় অকৃতজ্ঞ সন্তান আমি!কেন করেছি ওসব?কেন করেছি?ওর একটু সুখের জন্য কিইনা করেছি আমি!দেয়ালে মাথা ঠুকতে ঠুকতে অনুশোচনার আগুনে দগ্ধ হতে থাকলো শিতাব।স্বার্থপরের মত সুখি হতে চেয়েছি বলেই কি,চূড়ান্ত সুখের অভাব অনুভব করতাম আমি?আপন মনে বিড়বিড়িয়ে প্রলাপ বকা চলতেই থাকলো।চর্তুদিক থেকে শত সহস্র ভাবনা এসে তাড়া করে চলল ওকে।স্বার্থপর,স্বার্থপরতার জন্যই শুন্যতা বিরাজ করতো মনের মধ্যে।হা হা হা।উন্মাদের মত অট্ট হাসিতে ফেটে পড়লো সে।এ হাসি বিজয়ের নয়,এ হাসি প্রশান্তির নয়,এ হাসি আক্ষেপের।দেয়াল বেয়ে ফের উঠে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো শিতাব।নাহ!স্বার্থপরতার জন্য কোন কিছুর অভাব বোধ করিনি কখনো,কোন দিন করব না।তবে ঠিক কি কারনে যে,মনের মধ্যে একরাশ শুন্যতা বিরাজ করে চলেছে এতকাল,সেটি সে কোনদিন বুঝতে পারেনি,আজো বুঝতে পারে না।এতদিন ব্যপারটি সঙ্গত কারনেই স্বাভাবিক মনে হয়েছিল তার কাছে।কিন্তু স্ত্রী চলে যাবার পর এই প্রথমবার বিষয়টি তার ভাবনাতে এলো সবার আগে।তীব্র একটা সন্দেহের আগুন,দগ্ধ করতে চাইলো তাকে।কি মনে হল হঠাৎ দৌড়ে গিয়ে বেড রুমের দরজা খুলল সে।দরজাটা খুলতেই পরিচিত একটা পারফিউমের গন্ধ নাকে এলো তার।এই ব্রান্ডের পারফিউম এ বাড়িতে কেউ ব্যবহার করে না।কে যেন এই সুগন্ধি প্রায়ই মাখে,এ মুহুর্তে কিছুতেই মনে করতে পারছে না সে।কোথায় যেন প্রায়ই সে এই গন্ধটিই তার নাকে বহুবার পেয়েছে।কোথায়?কোথায়?নিজেকে প্রশ্ন করলো শিতাব।কিন্তু কোন উত্তর সে খুজে পেল না।এ বাড়িতে শিতাব,তার স্ত্রী আর বাবা ছাড়া অন্য কেউ থাকেনা।তা হলে কি বাড়ির কর্তাদের অবর্তমানে?কিছু একটা ভাবতে গিয়ে থমকে গেল সে।না না কিসব ভাবছি আমি?এটা হতেই পারে না।ফারহা আমাকে ভালোবেসেই বিয়ে করেছিল।আর যাই হোক,অতটা খারাপ হয়তবা হবে না ও।ও সব কান্ড কারখানা যা করেছে,রাগের মাথায় করেছে,রাগ পড়ে গেলে নিশ্চয় ফিরে আসবে এ বাড়িতে।নিজেকে স্বান্তনা দেবার বৃথা চেষ্টা করলো সে।
ঘর থেকে বেরিয়ে পাইচারী করতে করতে বারান্দায় এসে দাড়ালো সে।উঠোনের এক কোনে,শুকনো কাঁদায় আটকে থাকা কোন একটা বস্তুর দিকে দৃষ্টি নিক্ষিপ্ত হল তার।ধীর পায়ে বাহিরে বেরিয়ে এলো সে।অতপর কাঁদা মাটি থেকে টেনে তুলল বস্তুটি।একটি স্বচ্ছ কাঁচের তৈরি ছবির ফ্রেম!ফ্রেমের উপর থেকে শুকনো কাঁদা সরাতেই,স্বচ্ছ গ্লাসের আঁড়ালে লুকিয়ে থাকা,হাসি খুশি মাখা অতি সুন্দরী এক নারী মূর্তি জলজল করে উঠলো।যদিও বৃষ্টির জল লেগে কিঞ্চিৎ নষ্ট হয়ে গেছে মুখ খানা।কাঁদাজলে ভিজে পূর্বের সে জৌলুস হয়তবা নেই,তবুও দেখে মনে হচ্ছে,কেমন যেন এক মায়াবী টান রয়েছে ছবির মুখ খানাতে।কোন এক অষ্টাদশি নারী বিয়ের সাজে!লাল শাড়ি গায়ে,অর্ধ ঘোমটায় দাঁড়িয়ে রয়েছে।নিচে কলমের কালি দিয়ে কিছু একটা যেন লেখা আছে।খুব সম্ভবত কারো নাম লেখা রয়েছে।প্রথম অক্ষর র আ কারে রা,শেষের অক্ষর য়া আ কারে য়া।মাঝের লেখা গুলি,বৃষ্টির জল ঢুকে এমন ভাবে অদৃশ্য হয়ে গেছে যে কি অক্ষর সেখানে লেখা ছিল তা বোঝার উপায় নেই একদম।সুতরাং মাঝের ওই শুন্য জায়গাতে অক্ষর বসিয়ে মেলাতে চেষ্টা করলো শিতাব।বেশ কয়েকবার অর্থ মেলাবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হল সে।অতঃপর শেষবার যে অক্ষরটি ওই ফাঁকা জায়গাতে সে বসালো,সেটি একটি শব্দই তৈরি করলো বটে।সংগে সংগে গায়ের লোমগুলো যেন খাড়া হয়ে উঠলো ওর।জন্মের পর মাকে সে কোনদিন দেখে নি,এমনকি তার কোন ফটোও দেখা হয়নি তার।বাবার মুখে বহুবার মায়ের নাম শুনেছে সে,আর শুনেছে তার সৌন্দর্যের কথা।কেন জানি মায়ের ছবিটি কোনদিন দেখতে দেননি বাবা।কিন্তু আজ এ ছবিটি এলো কোথা থেকে?ধড়াস করে উঠলো ওর হৃদয়টি,কেন যেন হু হু করে কেঁদে উঠতে চাইছে বুকটি।মা?আমার মা!দূর থেকে ছুটে আসা মৃদ্যু বাতাসে হাত থেকে ছিটকে পড়লো ছবি খানা।ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেল কাঁচের ফ্রেম।ছবিটি উড়ে গেল দূরে কোথাও,উত্তুরে হাওয়া কেন জানি চরম ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলো আচমকা।দৌড়ে গিয়ে ছবিটি ধরবার চেষ্টা করলো শিতাব।বাতাস যখন বয়ে চলে,পিছন ফিরে আর চেয়ে দ্যাখে না তখন,থমকে দাঁড়ায় না কোন খানে।বাতাস তাকে থমকে দিল,মনের জানালাতে বাড়ি লাগলো যেন,এ মুহুর্তে পিতার কথা মনে হল তার।যদিও তাকে মনে করবার কোন ইচ্ছে ছিল না এখন।তবুও মনে পড়লো তার কথা।মনে পড়ে গেল,পিতার অসুখ হয়েছিল।ফুসফুসের ব্যামো।ডাক্তার মশাই বলেছে ফুসফুসে নাকি কি সব স্পট পড়েছে।খুব বেশি কাশি হত বাবার।কাশতে কাশতে সবার ঘুম হারাম করে দিত প্রতি রাতে।ডাক্তার তো অনেক দেখানো হল,কিন্তু তার সে কাশি আর কোন দিনই সারলো না।দিনকে দিন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিলাম যেন,কতবার বলেছি ওসব ছাই পাশ খেয়ো না বাবা,কে শোনে কার কথা!সিগারেট ছাড়া সে যেন চলতেই পারে না।সেদিন রাতে কিযে এক নারকীয় পিঁচাশ ঢুকেছিল আমার মাঝে!কাশির শব্দ সহ্য করতে না পেরে,স্ত্রীর কথামত,কি হিংস্র জানোয়ারের মতই না তাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছিলাম।সেদিনের পর একটি বারের জন্যও তার খোজ পর্যন্ত নিলাম না।কে জানে কোথায় আছে,কি করছে?কেমন আছে?তীব্র অপরাধ বোধ যেন চর্তুদিক থেকে ঘিরে ধরলো ওকে,কিছুই যেন ভাবনাতে আসছে না ওর।

দুপুর গড়িয়ে সবে বিকেল নেমে এলো।তখনো পাইচারী করে বেড়াচ্ছি্ল শিতাব,কখনো ঘরে,কখনো বারান্দায়,কখনো বা উঠোনে।হঠাৎ কড়া নড়ে উঠলো বাহির দরজায়।ওপাশ থেকে একটু উচু স্বরে কে যেন বলে উঠলো আজিজ ভাই কি বাড়িতে আছেন?কোন প্রতি উত্তর না করেই,ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে দরজাটা খুলল সে,কোর্ট টাই পরা একজন মধ্যবয়সী সামনে এসে দাড়ালো।সালাম ঠুকেই বলল,সরি,সরি,বড্ড দেরী হয়ে গেছে,মাফ করবেন প্লিজ।আসলে বিশেষ কাজের জন্য আমাকে একটু শহরের বাহিরে যেতে হয়েছিল,তাই একটু দেরী হয়ে গেল।আপনি নিশ্চয় শিতাব যাবী?
আজ্ঞে হ্যা।
তা কই ডাকুন না আপনার বাবাকে?চটজলদী করুন মশাই?সব কিছু বুঝিয়ে দিয়ে,আমায় আবার এক্ষুনি বেরুতে হবে যে।বড্ড তাড়া আছে বাবু,কই ডকুন তাকে?
কাকে ডাকতে বলছেন?হতবাগ বিষ্ময়ে প্রশ্ন করলো শিতাব।
কাকে আবার?আপনার বাবাকে।নিশ্চয় খেপে আছেন তিনি,তা সে আমি তাকে বুঝিয়ে বলব খন,ঠিক আছে মশাই?এখন দয়া করে ডাকুন তাকে।বাড়ির ভেতর প্রবেশ করতে করতে বললেন আগুন্তকটি।মুহুর্তেই কেমন যেন ফিকে বর্ণ ধারণ করলো শিতাবের মুখটি।তীব্র অপরাধ বোধ ফের চাড়া দিয়ে উঠলো বুকের মাঝ বরাবর।
কিন্তু বাবা যে বাড়িতে নেই।আমতা আমতা করে বলল শিতাব।
ও অচ্ছা বাহিরে গেছেন বুঝি?তা তিনি ফিরবেন কখন?
সে জানি না মশাই।
বলে যান নি বুঝি কখন ফিরবেন?না,মানে…উ…উ…উনি আসলে ফিরবেন কিনা জানি না।
কি বলছেন এসব,জানি না মানে কি?কিছুই তো বুঝতে পারছিনা মশাই?
আ…আ…আসলে সেদিন রাতে,ওই ঝড় বাদলের রাতে,বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন তিনি,না…না…তাকে বের করে দেয়া হয়েছিল।শিতাব যাবীর মুখে অপরাধ আর তীব্র অনুশোচনার ছাপ পরিলক্ষিত হল।
ও মাই গড!নিষ্পাপ মানুষটির সাথে,সত্যিই কি আপনি এমন ব্যবহার করেছেন?
শিতাব ধীরে ধীরে ঘাড়টি নুইয়ে নিলেন মাটির পানে।
আচ্ছা ঠিক ঠিক বলুন তো,সত্যিই কি সেদিন রাতের পর,তিনি আর ফিরে আসেন নি?
আজ্ঞে না আর ফিরে আসেন নি।ঘাড় নিচু করে উত্তর দিল শিতাব।
আপনি কি অন্তত একটি বারের জন্যও তার খোজ করেন নি?
এবার নিশ্চুপ রইলো শিতাব,শুধু ঘাড় উচিয়ে একবার আগুন্তকের দিকে তাকালো সে।
আচ্ছা মন্টুকি সেদিন রাতে আপনাকে খবর দেয়নি?
মন্টু কে?কিসের খবর?
মন্টু আমার পিএস।ওকে সেদিন আপনার বাবার খবর দেবার জন্য এ বাড়িতে পাঠিয়েছিলাম।
কই নাতো!সেদিন রাতে কেউ আসেনি এ বাড়িতে।আপনি কি আমার পিতার খবর জানেন?কোথায় তিনি?
আগুন্তক কিছু না বলে,পকেট থেকে সেল ফোনটা বের করে বাটন টিপতে আরম্ভ করলো।হয়তবা কাউকে কল করছেন।হ্যা রিং বাজতে লাগলো।অপর পাশ থেকে রিসিভার উঠাতেই গর্জে উঠলেন তিনি।
তুই কি সেদিন আজিজ ভাইয়ের বাড়িতে খবর দিয়েছিলি?
আজিজ ভাই?কোন আজিজ ভাই?ওইযে অসুস্থ লোকটি?জি স্যার,জি স্যার দিয়েছিলাম তো।ঘর থেকে ওনার ছেলে বউ বেরিয়ে এসেছিল,কর্তাকে ডাকতে বললে তিনি জানালেন তিনি ঘুমিয়ে আছেন,যা বলার আমাকেই বলুন।অগত্যা বৃদ্ধের ছেলে বউকেই খবরটা দিয়েছিলাম।তিনি বললেন,আচ্ছা ঠিক আছে,আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।আপনি এখন যান।স্যার হঠাৎ এ প্রশ্ন?কোন গন্ডগোল নয়তো স্যার?
তুই এখন কোথায় আছিসরে হতভাগা?
স্যার অফিস রুমে।দিব্বি দিয়ে বলছি স্যার,অফিস রুমেই আছি।বিশ্বাস না হলে ফনি কাকুকে জিজ্ঞেস করে দেখুন স্যার।
ভদ্রলোক সতিশয় ক্ষিপ্ত হলেন যেন।হয়েছে,হয়েছে,আর ন্যাকামু করতে হবে না।ঢ্যামনা কোথাকার,কোন কাজই ঠিক মত করতে পারে না,গুলিয়ে ছাড়বেই।এখন বল দিকিনি,আজিজ ভাইকে সেদিন কোথায় রেখে এসেছিলি?
স…স…সদরে স্যার।
তোকে যে এখনই একবার সেখানে যেতে হয়?আজিজ ভাইয়ের কি হাল,এখনই আমাকে জলদি করে জানা দিকিনি?
জি স্যার,জি স্যার।
বেশি হুজুর হুজুর না করে,যে কাজ দিয়েছি সেটা কর।মনে রাখিস এবার যদি ত্রুটি হয়,চাবকে তোর চামড়া তুলে দেবরে হারামজাদা।দাঁতে দাঁত খিচিয়ে ব্যাঙ্গ করলো লোকটি।ফোনটি কেটে দিয়েই আগুন্তক ফের বলে উঠলো ও মাই গড!আজিজ ভাই বড্ড ভুল হয়ে গেছে,বড্ড ভুল হয়ে গেছে।অনুশোচনা করতে করতে সাহেবটি বসে পড়লেন মাটিতে।শিতাব ঝুকে পড়ে তাকে ধরতে গেল।
একটু জল হবে কি মশাই?
হ্যা হ্যা নিশ্চয় হবে,আপনি আসুন না ভেতরে আসুন,এখনই দিচ্ছি।কিন্তু কি হয়েছে?বাবার সাথে কি আপনার সাক্ষাত হয়েছে?তিনি এখন কোথায় আছেন?কোন সমস্যা হয় নি তো?
বলছি,বলছি,অস্থীর হবেন না।যেখানেই থাকুন না কেন,তিনি ভালো আছেন।কিন্তু তার আগে বলুন তো,সেদিন রাতে কি এমন ঘটেছিল যে,সন্তানের ঘর থেকে পিতাকে ওই মেঘ বৃষ্টির মধ্যেই বেরিয়ে যেতে হল?ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলল সাহেবটি।কোন সদুত্তর খুজে পেল না শিতাব,প্রশংগত কথাটি অন্য দিকে ঘুরাবার চেষ্টা করলো তাই।
আপনার পরিচয়ই তো জানা হলনা জনাব?বাবার সাথে আপনার……?
হ্যা তাইতো!আমি তো আপনাকে নিজের পরিচয়ই দিলাম না এখন পর্যন্ত।যতিন্দ্র মোহন সিং,সিনিয়র ম্যাজিস্ট্রেট,জর্জ কোর্ট।পকেট থেকে একটা ভিজিটিং কার্ড বের করে শিতাব যাবীর হাতে গুজে দিলেন তিনি।
মামলা মোকাদ্দমা?এ ব্যাপারে তো কখনো শুনিনি মশাই?বাবার নামে কি কেউ থানায় রিপোর্ট টিপোট করেনি তো?জলের গ্লাসটি এগিয়ে দিতে দিতে বলল শিতাব।
আজ্ঞে মশাই ব্যপারটা ওসব কিছু নয়।আপনি খামখা উত্তেজিত হবেন না।আসলে আমি এসেছি একটি ফিক্সড ডিপোজিটের ব্যপারে ফয়সালা করে দিতে।যেটির দায়িত্ব তিনি আমার উপর দিয়েছিলেন।
ফিক্সড ডিপোজিট?বাবা করেছেন?
জি মশাই,তিনি আসলে ত্রিশ বছর পূর্বে এটি শুরু করেছিলেন,গত মাসেই ওটির মেয়াদ শেষ হয়েছে।ছেলেকে সারপ্রাইজ দেবার জন্যই তিনি প্রকাশ করেননি কখনো।তিনি আসলে চাইছিলেন তার অবর্তমানে টাকাগুলো যাতে করে তার ছেলেই তুলতে পারে সেই ব্যবস্থা করতে।মুদ্দা কথা টাকাগুলো তিনি তার পুত্রকে দিয়েই তুলতে চেয়েছিলেন।এ ব্যপারে গত মাসেই তিনি আমার সাথে কথা বলেছেন,আমিও সব কিছু রেডি করে ফেলেছিলাম বটে,কিন্তু ব্যাংকের একটি কাগজের জন্য অপেক্ষা করতে হল বেশ কয়েকদিন।ওটি আসতে যেন একটু বেশিই দেরী হয়ে গেল মশাই।তা অবশ্য কিছু দেরী হবে বৈ কি?অতগুলো টাকা!একটু বাছ বিচার ছাড়া কি,ব্যাংক ওসব কাগজ পাতি খালাশ করে?তবে আমি এখন নিশ্চিন্ত,আপনিও নিশ্চিন্ত হতে পারেন গো।সমস্যার সমাধান হয়েছে।কাগজ পত্র সব প্রস্তুত আছে,শুধু মাত্র আপনার কয়েকটি সই পেলেই হয় আর কি।
আপনি মশকরা করছেন কি?সত্যিই কি আমার জন্য সঞ্চয়ী হিসেব খুলেছিলেন বাবা?একটু কাঁপা কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করলো শিতাব।
খুলেছিলেন মানে?টাকা আপনি পেয়ে গেছেন মশাই!তাও আবার অল্প স্বল্প নয় বাপু ত্রিশ লক্ষ টাকা!
ত্রিশ লক্ষ টাকা?দিন এনে দিন খেয়ে যার কাল কেটেছে,সে কিনা ত্রিশ লক্ষ টাকা ব্যাংকে জমিয়েছে!এটাও কি বিশ্বাস করতে হবে উকিল বাবু?
আজিজ ভাইয়ের মাথার ঘাম পায়ে ফেলা টাকা ওগুলো,অবিশ্বাস করবেন কেন?এখন নিন,চটজলদি এই কাগজ গুলোতে সই করে দিনতো মশাই?আমায় আবার যেতে হবে।

দস্তখতের যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করে সবে বেরিয়ে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো যতিন্দ্র মোহন সিং।চেয়ার থেকে সবে উঠতে যাবে,ঠিক এমন সময় হুড়মুড়িয়ে তিন চার জন বহিরাগত ঢুকে পড়লো ড্রয়িংরুমে।ঘরে ঢুকতেই শুরু হল,অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ।কিছু বুঝে ওঠার আগেই একজন তেড়েফুড়ে এলো শিতাবের দিকে।এলোপাথারী কিল ঘুসি মারতে শুরু করলো ওকে।অবশ্য যতিন্দ্র বাবুর হস্তক্ষেপে আগুন্তকের দল বলা চলে শেষমেশ শান্তই হল।কোন প্রকার প্রতিবাদ করলো না শিতাব।নিরবে কেবল মার খেয়েই গেল।বেশ খটকা লাগলো উকিল বাবুর মনে।বড্ড ইচ্ছে হল তার,গন্ডগোলটি আসলে কি নিয়ে,সেটা একটু খতিয়ে দেখলে কেমন হয়?তাই স্থীর দাঁড়িয়ে থেকে বহিরাগতদের ধ্বংশ লীলা দেখতে লাগলেন তিনি।অকষ্যৎ কয়েকটি কিল ঘুসি শিতাবের নাকে মুখে এমন ভাবে আঘাত হানলো যে,ঠোট দুটো থেতলে পিষে গেল।ফুলে বিভৎস রুপ ধারণ করলো সুন্দর মুখ খানা।গলগল করে রক্ত বেরুতে লাগলো ঠোটের কিনারা বেয়ে।ঘটনাটি এত চটজলদী ঘটলো যে,কোন কিছু বুঝে উঠার ফুসরত টুকু পর্যন্ত পাওয়া গেল না।লম্বা,ফিনফিনে আকৃতির,ক্লিন শেভ করা অভিজাত একটি লোক,চুরুট টানতে টানতে পাশের সোফায় এসে বসে পড়লো।অনেকটা লম্বাটে যুতের কালো রঙের একটি হ্যাট,মাথায় পরেছে লোকটি।যতক্ষন ধরে তান্ডব লীলা চলতে লাগলো,অত্যন্ত শান্ত চিত্তে চুরুটে সুখটান দিয়ে চলল আগুন্তকটি।মারপিট পর্বের সমাপ্তি হতেই,অত্যন্ত ক্ষিপ্ত আর রূঢ় প্রকৃতির দৃষ্টি নিক্ষেপে,চ্যালা চামুন্ডাদের কিসের যেন আদেশ করলো লোকটি।মনিবের হুকুম পাওয়া মাত্রই,ঘর খালি করতে শুরু করলো শির্ষরা।ঘরের জিনিস পত্র একে একে সব বের করে নিয়ে গেল।কোন কিছুই আর বাদ রইলো না।এক পর্যায়ে অবস্থা এমন দাঁড়ালো যে,ঘরটি পরিপূর্ণ রুপে শুন্য হয়ে গেল।যন্ত্রনা কাতর তনুতে হাত বুলাতে বুলাতে, কেবলই করুন আর্তনাদে কুকিয়ে গেল শিতাব।প্রতিবাদ করবার মত শক্তি বা সামর্থ্য কোনটিই ছিল না তার।লুটপাট শেষে,ধীর স্থীর চিত্তে,অতি ভদ্রলোকের মত বেরিয়ে গেল বহিরাগতরা।একমাত্র চেয়ারে বসে থাকা কর্তা ব্যক্তিটি ভিন্ন আচরণই করলো বটে।প্রস্থানের পূর্বে চুরুটে লম্বা এক সুখটান দিয়ে বলল,কি হে উকিল বাবু,ছোকরাটি আবার মামলা মোকাদ্দমাতেও জড়িয়েছে নাকি?তা বাপু,লাভ কিন্তু বিশেষ কিছু একটা নেই,অনেকদিন ধরেই ভাবছিলাম,জামাই আদরটা বেশ আয়েশ করেই করে দেব।খাপে খাপ মিলছিলনা মাইরি।হঠাৎ করেই হাতের রস মেটাবার ব্যবস্থা করে দিল মেয়েটি,নইলে কি আর অমন যত্ন আত্নির সুজোগ মিলতো কি মশাই?আপনাকে চিনতে পেরেছি বলেই,আজকের মত ওকে ছেড়ে দিয়ে গেলাম।ফের যদি কখনো ব্যাপারি বাড়ির আশেপাশে ঘুরতে দেখেছি না,ভুড়ি ভচকে যাবে মশাই,ভুড়ি ভচকে যাবে।বুঝতেই তো পারছেন,এখন থেকে কি পরামর্শ ওকে দিবেন।এর পর বিদ্রুপাত্নক হাসি হেসে,মাথায় চাপানো হ্যাটটি সোজা করে বলল,ফাইল নাম্বার ত্রিপল সেভেন,মনে রাখবেন কিন্তু যতিন্দ্র বাবু।
ফাইল নাম্বার ত্রিপল সেভেন?কি মনে রাখার কথা বলছেন লোকটি?উকিল বাবু পড়িমরি করে দরজার দিকে ছুটলেন ফের লোকটির সাক্ষাত পাবার জন্য।কিন্তু ততোক্ষনে কালো মার্সিডিজ গাড়িটি,যেন উড়তে উড়তে চৌরাস্তা পার হয়ে গেল।আগত্যা শিতাবের কাছে ফিরে এলেন তিনি।ব্যথায় এখনো কোকাচ্ছে সে।ডাক্তার ডাকতে চাইলে,কেন জানি বাধা দিয়ে বলল প্লিজ!প্লিজ!ডাক্তার ডাকবার দরকার নেই।
সেকি আপনার গালচি বেয়ে রক্ত বেরুচ্ছে যে?
না তেমন কিছু নয়,সামান্য কেটেছে আরকি।সেরে যাবে নিশ্চয়।
আজ্ঞে ঠিক আছে,ঠিক আছে,এ…এ…এই এখানে বসুন স্থীর হয়ে।শিতাবকে ধরে পুরোনো একটি অর্ধ ভাঙা চেয়ারের উপর বসিয়ে দিলেন যতিন্দ্র মোহন সিং।এতক্ষন ধরে মনে মনে রহস্যের জাল উন্মোচন করবার চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন তিনি।অতঃপর কোন প্রকার কুল কিনারা খুজে না পেয়ে,শিতাবকেই প্রশ্ন করলেন,কি হে মশাই ব্যপার খানা কি?ওরা আপনায় এভাবে প্রহার করলে কেন?শিতাব ঠোটের ফেটে যাওয়া অংশ চেপে ধরে কিছু বলতে গিয়ে ব্যর্থ হলেন যেন।ফাইল নাম্বার ত্রিপল সেভেন কথাটির মানে বুঝলাম নাতো?আপনি কিছু বুঝেছেন কি?
শিতাব পুনরায় ঘাড় নাড়ালো।অর্থাৎ সে কিছু বোঝেনি।অতঃপর ফের চেষ্টা করে,অধো অধো মুখে বলতে শুরু করলো সে,ও…ও…ওই যে মাথায় হ্যাটপরা লোকটি,তিনি আসলে আমার স্ত্রীর ছোট চাচা।আজ সকালেই স্ত্রী ডিভোর্স দিয়ে বাপের বাড়ি চলে গেছে।কেন গেছে ঠিক জানি না,তবে ধারনা করি চাকরি চলে যাবার কারনেই হয়তবা ক্ষুব্ধ হয়ে এ কাজ করেছে।
ডিভোর্সই যখন দিয়ে গেল,তাহলে আপনাকে মারলে কেন?
আমিও ঠিক বুঝতে পারছিনা উকিলবাবু।তবে এতটুকু জানি,আমাদের বিয়েটা কেন জানি উনি মেনে নিতে পারেননি কোনদিন।এমনকি আমার শ্বশুরের সাথে দীর্ঘদিন যাবৎ তিনি কথা পর্যন্ত বলেন নি একারনে।কি কারনে তিনি এমনটি করেছেন সেটি বড়ই রহস্যের বিষয়।
যথার্থই বলেছেন,বেশ রহস্যময়ই মনে হচ্ছে যেন।
ওর এই ছোট চাচাটি আস্ত এক ডাকাত।আসলাম ব্যপারির নাম শুনে এলাকার বাচচা শিশুরা পর্যন্ত ভয় পায়।এমন কোন অপকর্ম নেই যে,সে করেনি কখনো।যখন যাকে খুশি মেরে বসে যেখানে সেখানে।প্রতিবাদ করতে গেলে জানে মেরে ফেলতেও দ্বিধাবোধ করে না।শিতাবের কথা শুনতে শুনতে যতিন্দ্র মোহন সিং চোখ জোড়া বন্ধ করে রইলেন কিছুক্ষণ।মনে মনে হয়তবা কিছু একটা খুজছিলেন তিনি।অতঃপর চোখ মেলেই নিচের ঠোটে মৃদ্যু কামড় বসিয়ে দিয়ে বলল আই সি!দ্যাটস সেভেন মার্ডার কেইস?মিস্টার রুডলফ!রুডলফ?
তিনি আবার কে?ফুলে মোটা হয়ে যাওয়া ঠোট দুটো নেড়ে অধোমুখে জিজ্ঞেস করলো শিতাব।
কে আবার?আপনার ওই হ্যাট পরা রহস্যময়ী চাচা শ্বশুর মশাই।তা ওসব বাদ দিন,ফাইলটা যখন হাতে আছে,একদিন না একদিন বাগে ওটাকে পাবই।এখন বলুন দেখি,ওরা আপনার জিনিস পত্র সব নিয়ে গেল কেন?
ঠোটের ব্যথায় কুকিয়ে উঠে,ফের বলতে আরম্ভ করলো শিতাব।জিনিস পত্র যা ছিল,বিয়ের পর কিছু ওর বাপের বাড়ি থেকে এনেছিল আমার স্ত্রী।যদিও ওসব কিচ্ছুটি নিতে চাই নি আমি।কিচ্ছুটি না।কেমন যেন ছেদিয়ে বিষিয়ে উঠলো সে।ব্যথায় উহ উহ করে কুকড়ে উঠে,মুহুর্তেই বসে পড়লো ভাঙা চেয়ারের উপর।থেতলে যাওয়া মুখের উপর হাত রেখেই ফের বলতে লাগলো,আ…আ…আপনি স্বচক্ষেই তো দেখলেন,ঘরে অবশিষ্ট কিচ্ছুটি নেই আর।এমনকি আমার কেনা আসবাপ পত্রও নিয়ে গেছে।উকিল বাবু মনে প্রাণে যেন কিছু আঁচ করতে চাইলেন।অতপর তার দীর্ঘ নিঃশ্বাস থেকে বেরিয়ে এলো,সর্বনাশের কড়াল গ্রাসে ছারখার হয়ে গেল বুঝি সংসারটি!

উঠোনের ও ধার থেকে কিছু দূর্বাঘাস সংগ্রহ করে আপন মুখে চিবলো যতিন্দ্র মোহন সিং।এরপর দুহাতের শক্ত ঠাসাতে একটু রস বের করে লাগিয়ে দিল শিতাবের মুখের কাটা অংশে।বললাম ডাক্তার ডাকি,শুনলেন না,ঢের ব্যথা হবে অংগে,বিছানা ছেড়ে উঠতে কষ্ট হবে আপনার।শেষ বাক্যটি বলতে গিয়ে কেমন যেন থমকে গেলেন তিনি।চষমা আটা ফ্রেমের সাহায্যে চর্তুদিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে,মনে মনে বললেন বিছানা পাবে কোথায়?একটু আগেই তো সবকিছু লুটপাট হয়ে গেছে।শিতাব কোকাতে কোকাতে বলল,উকিল মশাই এবার যে একটু বেরুতে হয়?বাবার খোজে যেতে হবে।
তা জনাব এত দিনে বুঝি বাবার কথা স্মরণ হল আপনার?একটু দেরী হলেও যে,আপনার বোধদয় ঘটেছে,সেটি জানতে পেরে খুশি হলাম বাবু।সবই ভগবানের কৃপা!
আমায় আর লজ্জা দিবেন না মশাই।ভুল যা হবার হয়েছে,বাবা এবার বাড়িতে ফিরে এলেই কেবল তার প্রায়শ্চিত্ত হয়।কসম করে বলি জীবনে আর কখনো কষ্ট দিব না তাকে।কুলাঙ্গার পুত্র হয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়াই শ্রেয়।ঢের বুঝেছি এবার,মাথার উপর থেকে ছাদটি সরে গেলে,কি ভয়ংকর গজব নেমে আসতে পারে জীবনের উপর।মেঝেতে একটি ছেড়া বেদে পাটিতে শুয়ে ছিল শিতাব,ব্যস্ত ত্রস্ত হয়ে,শায়ন থেকে উঠবার জন্য চেষ্টা করলো সে।
আরে না না উঠবেন না,উঠবেন না,কিছুক্ষন চুপচাপ শুয়ে থাকুন।আপনার গায়ে এখন বড্ড জ্বর বইছে।মন্টু এতক্ষনে নিশ্চয় বেরিয়ে পড়েছে,অবশ্যই আজিজ ভাইয়ের খবর জানতে পারবেন আপনি।তখন না হয় নিজে গিয়ে তার অভিমান ভাঙিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসবেন কেমন?
সময় যতই গড়াতে লাগলো,জ্বরের সাথে সাথে গায়ের ব্যথা বাড়তে লাগলো দ্বিগুন গতিতে।সেই সাথে শুরু হল ভীষন কাঁপুনি।সুতরাং উঠে বসবার মত জোর টুকু সে আর পেল না।এমন সময় যতিন্দ্র বাবুর সেল ফোনটা বেজে উঠলো।বিশেষ জরুরী কাজে এক্ষনি তকে একটু বাহিরে যেতে হবে।ঝটপট নিজের ব্যাগখানা গুছিয়ে বেরিয়ে পড়লেন তিনি।যাবার পূর্বে শিতাবকে সান্তনা দিয়ে বললেন,বাপ ছেলার সম্পর্ক কখনো শেষ হয়ে যায় না মশাই,শেষ হয়ে যায় না।ডা অপরেশ ব্যানার্জিকে খবর দিয়েছি,কিছুক্ষনের মধ্যেই চলে আসবেন তিনি।দুঃশ্চিন্তা করবেন না প্লিজ,আমি আবার এসে আপনাকে দেখে যাব।আর হ্যা আজিজ ভাইয়ের খোজ না পাওয়া পর্যন্ত মন্টুকে আমি ছাড়ছিনে।তবে এ মুহুর্তে আপনার সুস্থ হয়ে ওঠা বিশেষ জরুরী।

এডভোকেট যতিন্দ্র মোহনের প্রস্থানের পর,এই প্রথমবার শুন্য ঘরটিতে চোখ বুলাতে লাগলো শিতাব।ময়লা ঝুলে হঠাৎ করেই ঘরটা ভরে গেছে যেন।আসলে ময়লা গুলো পূর্ব থেকেই ছিল,এতদিন আসবাব পত্রের আঁড়ালে লুকিয়ে থাকবার দরুন দেখা যায়নি হয়তবা।জিনিস পত্র সরাবার ফলেই ওগুলো প্রকাশ্যে চলে এসেছে এখন।ভাঙা বুক সেলফটা কাত হয়ে পড়ে আছে একদিকে।বাবার কেনা কত শত পছন্দের বই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে মেঝেতে।তিনি যে ঢের জ্ঞান পিপাসু মানুষ ছিলেন,এই ছোট্ট সংগ্রহশাই তার প্রমান।দুপা ছড়িয়ে,দেয়াল ঘেসে ঠিক যে জায়গাটিতে হেলান দিয়ে বসেছিল শিতাব,সেখান থেকে আনুমানিক দুহাত দূরে,একটি কুচকুচে কালো ডাইরীর দিকে দৃষ্টি পড়লো তার।ওটার পেট চিরে কিছু একটা বেরিয়ে পড়েছে যেন।খুব সম্ভবত একটি হলুদ খাম!এইতো কিছুক্ষন আগেও তার গায়ে ঢের বল শক্তি ছিল,ক্রমেই তা নিঃশেষ হতে হতে,প্রায় ফুরিয়ে এসেছে যেন।হাত পায়ের কাঁপুনির সাথে সাথে গায়ের তাপ মাত্রা পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে।নড়াচড়া করতে মোটেও ইচ্ছে করছে না তার।তবুও হ্যাচড়াতে হ্যাচড়াতে কোন রকমে ওই কালো ডাইরীটির সামনে গেল শিতাব।ওটা হাতে তুলে নিতেই হলুদ খামটি খসে পড়লো মাটিতে।ফের মাটি থেকে কুড়িয়ে নিয়ে,চোখের সামনে মেলে ধরলো হলুদ খামটি।প্রেরকের ঠিকানায় লেখা রয়েছে,গ্রাম-মিয়াবাড়ি,পোস্ট-বারীপুর,থানা-মহেশপুর,জেলা-ঝিনাইদহ।প্রাপকের ঠিকানায় লেখা-আব্দুল আজিজ মিয়া।অর্থাৎ বাবার নাম!গনেশ চক্রবর্তী নামের কোন এক সনাতনী লিখেছেন চিঠিখানা।তারিখ লেখা ১০ই আষাঢ়,১৪০৬ বঙ্গাব্দ।তারিখ যা লেখা আছে হিসেব করলে দাড়ায়,আজ থেকে ২০ বছর পূর্বের চিঠি এটি।সহসাই মনের মধ্যে কৌতুহল চাড়া দিয়ে উঠলো শিতাবের।কি লেখা আছে চিঠিতে?ভাজ খুলে চিঠিটি মেলে ধরলো সে।দুয়েক জায়গাতে কয়েকটি অক্ষর একেবারেই মুছে গেছে।খুব সম্ভবত তরল কিছু পড়েছিল হয়তবা।তবুও লাইন গুলো পড়তে বিন্দু মাত্র কষ্ট হল না তার।যদিও বিস্তারিত কিছু লেখা নেই চিঠিতে,যা কয়েকটা কথা লেখা আছে,তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও হৃদয় বিদারক।শুধু এত টুকু কথা মাত্র,কর্তা বাবু আজ সন্ধ্যে বেলাতেই ইহলোক ত্যাগ করেছেন।শেষ নিঃশেষ ত্যাগের সময়,তার সম্মুখেই দাঁড়িয়ে ছিলাম।তার অব্যক্ত স্বর যেন ঢের বুঝতে পারছিলাম আমি।মৃত্যুর পূর্বে আপনাকে দেখবার বড্ড ইচ্ছে ছিল তার।হায়রে অদৃষ্ট…এখানেই পত্রটি শেষ হয়ে গেছে।
বাবাকে লেখা চিঠি,সেই সুদূর মহেশপুর থেকে।তাও আবার ২০ বছর পূর্বে?কেমন যেন গন্ধ মাখা অতীত,হুড়মুড়িয়ে সামনে এসে দাড়ালো হঠাৎ।জিব লাগিয়ে চিঠির মুছে যাওয়া অংশের রহস্য বের করলো শিতাব।যে দুচারটি অক্ষর মুছে গিয়েছিল,তা কেবল চোখের জল লেগে।
সুদূর মহেশ পুরে কোন এক বাড়ির কর্তা ব্যক্তিটি মারা গেলেন,আর সে খবর বাবাকে জানালেন সে বাড়ির চাকর গনেশ?কিন্তু কেন?তবে কি বাবার সাথে বৃদ্ধটির কোন সম্পর্ক রয়েছে?ফের নিজেকে প্রশ্ন করলো সে।তা কি করে হয়?যতদূর জানি বাবা মা দুজনেই অনাথ আশ্রমে মানুষ হয়েছেন।সেখান থেকেই দুজনার পরিচয় এবং প্রণয়।বিয়ের পর এ বাড়িতেই এসে উঠেছিলেন বাবা-মা।আমার জন্মের সময় মায়ের মৃত্যু হলে,দ্বিতীয় বার বিয়ে করেন নি বাবা।মুদ্দা কথা হল,একমাত্র আমি ছাড়া এই পৃথিবীতে উভয়ের আপন বলে কেউ ছিল না,এবং নেই।আপন মনে নিজের করা প্রশ্ন গুলোর উত্তর দিতে চেষ্টা করলো শিতাব।সহসা ডাইরি খানা একবার নেড়েচেড়ে দেখবার ইচ্ছে হল তার।
অতঃপর ডাইরীটি হাতে তুলে নিয়ে মেলে ধরতেই,আর একটি হলুদ খাম বেরিয়ে এলো ওটির পেট থেকে।দশ বছর পূর্বে একই ঠিকানা থেকে একই ব্যক্তি লিখেছেন।লেখার ধরণ অবিকল পূর্বের চিঠির ন্যায় একই রকম।অর্থাৎ এবারও মৃত্যুর সংবাদ!তবে যার মৃত্যুর সংবাদ তিনি এবার দিয়েছেন,তিনি হলেন ও বাড়ির গিন্নি মা।পুর্বের চিঠির ন্যায় এই চিঠি খানিরও কয়েকটি অক্ষর মুছে গেছে চোখের জলে ভিজে।কার চোখের জল হতে পারে?যিনি লিখেছেন,না যিনি পড়েছেন।যদিও এ মুহুর্তে ঠিক ঠিক বলা সম্ভব নয়।তবুও ওটি সহজেই অনুমেয় বলে মনে হল তার কাছে।বাবার চোখের জলকি?তাই যদি না হবে,দুই দুটো চিঠি,বাবার কাছে এলো কেন?আপনার মনে ফের বলে উঠলো শিতাব।হঠাৎ শেষের অতিরিক্ত একটি লাইনের দিকে চোখ পড়লো তার।ছোট্ট করে ব্রাকেটের মধ্যে লেখা রয়েছে,আর কোন বাধা রইলো না…
কিসের বাধার কথা লিখেছেন তিনি?সব কিছু কেমন যেন ধাঁধার মত লাগতে শুরু করলো তার নিকট।

তাপ মাত্রা এত বেড়ে গেছে যেন পুড়ে যেতে লাগলো সমগ্র শরীর।তীব্র ব্যথায় গা হাত পা ম্যাজ ম্যাজ করে উঠলো।দুচোখ বন্ধ হয়ে আসতে চাইলো যেন।তবুও দেয়ালের সাথে শক্ত করে পিঠ চেপে ধরে,ডাইরির পাতা উল্টাতে শুরু করলো শিতাব।প্রথম পাতা।নাম,শিরোনাম,তারিখ কিছুই লেখা নেই।শুধু মাত্র সময় লেখা রয়েছে সন্ধ্যে ছটা।
সদ্য কেনা ফনিক্স সাইকেলের পরে বসে,বড় রাস্তার মোড়ে পুরোনো বটতলায় আড্ডা পিটছিলাম গণেশের সাথে।পাশের ছোট্ট জলা হতে জপাৎ করে কিছু পড়ার শব্দ ভেসে এলো উভয়ের কানে।সেই সাথে শুনতে পেলাম একটি অস্ফুট আর্তনাদ!কয়েক গজ দূরে,বিপরীত দিক থেকে আসা ট্রাকের ধাক্কায়,নীল রঙের একটি প্রাইভেট কার,দুমড়ে মুচড়ে মুহুর্তেই ছিটকে পড়লো পাশের ধান ক্ষেতে।বিকট শব্দ করে দাউদাউ করে জ্বলে উঠলো কারটি।এদিকে ডোবার ভেতর থেকে অস্ফুট আর্তনাদ,বারবার এসে আঘাত হানতে লাগলো কর্ণ জুগলে।
এখানেই প্রথম পৃষ্ঠার সমাপ্তি ঘটেছে।এরপর কেন জানি পরপর দুটি পাতা ফাঁকা রেখেছেন বাবা।কিচ্ছুটি লেখেন নি ও দুটি পাতায়।চতুর্থ পাতায় গিয়ে ফের লিখতে শুরু করেছেন আবার।অত্যন্ত ব্যকুলতার সাথে,মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে পড়তে লাগলো শিতাব।
দৌড়ে গিয়ে দুজনে মিলে,জল থেকে টেনে তুললাম অষ্টাদশী এক কুমারী মেয়েকে।নিঃশ্বাসের শব্দ পেয়েই গণেশ বলে উঠলো আছে,আছে,বাইচে আছে ছোট কর্তা।
অদূরে নীল গাড়িটার আগুন নিভতে শুরু করেছে সবে।কেবল একরাশ ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়েছে সন্ধ্যের আকাশ জুড়ে।ছুটে গেলাম রাস্তা হতে ছিটকে পড়া গাড়িটার কাছে।আগুনে দগ্ধ হয়ে গেছে চার চারটি লাশ!স্টিয়ারিং এর সাথেই লেপ্টে রয়েছে গাড়ির ড্রাইভার।পিষে যাওয়া মুখ নিয়ে পাশের সিটেই বসে আছে একজন সুঠামদেহী পুরুষ।মুখটি এমন ভাবে পিষে গেছে যে চেনার কোন উপায় পর্যন্ত নেই আর।সমস্ত অংগটি পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে একটি কিশোর ছেলের।ডান হাতটি কেন জানি পিঠের নিচে লুকিয়ে রেখেছে কিশোরটি।সঙ্গে সঙ্গে পিঠ উল্টিয়ে দেখতে পেলাম,টুকটুকে লাল রাখী বাধা তার হাতে।সম্পূর্ণ অক্ষত রয়েছে ওই অংশটি।ডান হাতটি লুকিয়ে রাখবার রহস্যটি বুঝতে পারলাম এবার।চতুর্থ লাশটি একজন মহিলার।দিব্বি দেখা যাচ্ছে,শিথির টুকটুকে লাল সিঁদুর রক্তের রঙের সংগে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে।তারও যে কপাল থেকে মাথা অব্দি রক্ষা পেয়েছে আগুন হতে!তার পাশেই একটি ভ্যানিটি ব্যাগ,পুড়ে চুপসে গেছে যেন।চামড়া পোড়া গন্ধ বেরুচ্ছে ওটি থেকে।তবুও কিছু পাবার আশায় হাতে তুলে নিলাম চুপসে যাওয়া চামড়ার ভ্যানিটি ব্যাগ।একটি পার্সপোর্টও পেলাম বটে,কিন্তু পুড়ে যেন দফারফা হয়ে গেছে ওটির।শুধু এতটুকু লেখা বোঝা গেল কোন মতে।শৈলেন রয়,নর্থ ক্যালকাটা।সম্ভবত মহিলার সামীর পাসপোর্ট ছিল ওটি।তন্ন তন্ন করে খোজার পরেও,বাকিদের না পাওয়া গেল পাসপোর্ট,না কোন প্রকার ঠিকুজী।বিচার বিবেচনায় কেবল এত টুকু বুঝলাম,নর্থ ক্যালক্যাটার,বনেদী হিন্দু পরিবার ছিল এটি।জাদব পুর বর্ডার ক্রস করে এদেশে ঢুকেছিল তারা।যেহেতু দূর্ভাগ্য তাদের সংগি হয়েছিল,তাই একমাত্র অষ্টাদশি কণ্যা ছাড়া,সকলেই পরপারে পাড়ি জমিয়েছে দূর্ঘটনার কবলে পতিত হয়ে।পুনরায় ছুটে গেলাম মেয়েটির কাছে।অবস্থা সংকটাপন্ন দেখে গণেশের সহায়তায় নিয়ে গেলাম সদর হাসপাতালে।ইমারজেনসি রুমের ডাক্তার দেখেই বললেন,এখানে কিচ্ছুটি হবে না,দ্রুত ঢাকায় নিয়ে যান।মেয়েটির অবস্থা সংকটাপন্ন,মাথায় বড় ধরনের আঘাত লেগেছে।শল্য চিকিৎসার প্রয়োজন রয়েছে।খুব দ্রুত সেটি সম্ভব না হলে হয়তবা বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হবে না তাকে।ডাক্তার সাহেবের কথা শুনে ঘোর তর বিপদে পতিত হলাম যেন।
গণেশ বলল ছোট কর্তা কি করবেন গো এখন?কি বলব কিছু বুঝে উঠতে পারলাম না,ফট করে মুখ ফসকে বেরিয়ে এলো,কোথাকার এক উটকো ঝামেলা এসে পড়েছে মাথার উপর,চল ভাগি এখান থেকে।গণেশ একবার আমার দিকে তাকালো,খুব সম্ভবত আমার কথায় চরম বিষ্মিত হয়েই এমনটি করলো সে।কারন সেই ছোট্ট বেলা থেকেই দুজন এক সাথে আছি,স্বার্থপরতা নামক ঘৃণিত চর্চাটি যে আমার ধাতে নেই,সেটি খুব ভালো করেই জানে ও।মেয়েটির নিঃষ্পাপ মুখের পানে চাইলাম একবার।কি মায়া মাখা মুখখানা তার!ইচ্ছে হল ওই মায়া মাখা মুখটি ছুঁয়ে দেখি একবার,এই জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে,যেমন ছঁয়ে দেখত তার আপনজনেরা।
এখনো অস্ফুট আর্তনাদ কানের কাছে ভীষণ ভাবে ভীড় করে চলেছে।জ্ঞানশুন্য অবস্থায় যন্ত্রনাকাতর মেয়েটি কুকিয়ে চলেছে অবিরত।হাতটি বাড়িয়ে দিয়েও সরিয়ে নিলাম কি যেন ভেবে।নিজেকে সরিয়ে নিতে চাইলাম দূরে,সহসা অনুভব করলাম কে যেন আমার বাম হাতটি চেপে ধরেছে।ও হাতের পানে চেয়ে দেখি তীব্র যন্ত্রনার মধ্যেই অঘোরে মেয়েটি আমারই হাত চেপে ধরেছে শক্ত করে।যেন বলতে চাইছে আমি বাঁচতে চাই,আমি বাঁচতে চাই,আমাকে আপনি ছেড়ে যাবেন না।কিছু সময়ের জন্য নিজেকে হারিয়ে ফেললাম ওর অন্তরাত্নার ভেতর।হঠাৎ এক মৃদ্যু ধাক্কায় সংগা ফিরে এলে,পিছন ফিরে চেয়ে দেখি ইমার্জেনসী রুমের ডাক্তার এখনো স্বয়ং দাঁড়িয়ে রয়েছেন।
কি হে মশাই এতসব কি ভাবছেন?বড্ড দেরি হয়ে যাবে গো,যা করবার জলদী করুন,পেসেন্টের ব্রেইন থেকে হ্যামারেজ হচ্ছে।ডাক্তার সাহেবের সতর্কবার্তাটি শুনবার পর,নিজেকে আর স্বার্থপরটি হতে দেওয়া চলছে না।সদ্য কেনা ফনিক্স সাইকেলটি নাম মাত্র মূল্যে বিক্রি করে এলো গণেশ।টাকা গুলো হাতে নিয়েই ওকে বললাম যা বাড়ি ফিরে যা।
সেকি আর হয় ছোট কর্তা?বাড়িতে আমি ফিরছিনে,আপনার সাথেই ঢাকা যাচ্ছি।একবার বাড়িতে গেলে যে আর ফিরে আসা হবে না আমার!
বয়সে ন বছরের বড় হলেও গণেশ আমার বন্ধু ছিল।কোন দিন ওকে বাড়ির চাকর বলে মনে হয়নি আমার।সব সময় আমাকে আপনি বলে সম্বোধন করাতে,প্রায়ই খেপতাম ওর উপর।কতবার যে বলেছি তুই করে বল,ওরে তুই করে বল।শত অভিমানের পরেও ওকে থামানো গেল না অদ্যাবধি।যতদিন বেঁচে থাকবে,আমার সংগে আদবের সাথেই কথা কইবে,এটাই নাকি ওর পণ,ওর বন্ধুত্বের সম্মান।যাকে না দেখলে একটি মুহুর্ত কাটে না আমার,সেকি আমায় একলা ফেলে বাড়িতে ফিরতে চাইবে?কিন্তু ফিরতে যে ওকে হবেই,নইলে লঙ্কা কান্ড বেধে যাবে যে মিয়া বাড়িতে।অগত্যা অনিচ্ছা সত্বেও বাড়ি ফিরে যেতে হল গণেশকে।

ঢাকায় নেবার পর মেয়েটি সুস্থ হয়েছিল বটে,কিন্তু স্মৃতি শক্তি হারিয়ে,সারা জীবনের তরে অতীত ভুলে যেতে হয়েছিল তাকে।ফলে ভীষণ এক বিপদে পতিত হলাম আমি।মেডিকেলে ভর্তির সময়,রেজিস্টার পেশেন্টের নাম জিজ্ঞেস করলে,হুট করে মনের মধ্যে যে নামই এলো তাই বলে ফেললাম।কেন জানি কোন হিন্দু নাম ওই মুহুর্তে মুখে আসছিল না আমার।রেজিস্টার খাতায় আমার নামটিও লিখে রেখেছিলেন অবিভাবক হিসেবে।দীর্ঘ চার মাস ধরে চলল ওর চিকিৎসা,কিন্তু স্মৃতি শক্তি আর ফিরে এলো না।ওই সময়টিতে একটি মুহুর্তের জন্যও ওকে একলা রেখে বের হতে পারিনি আমি।যদিও বহুবার চেষ্টা করেছি বাড়িতে ফিরে যাবার জন্য।অথচ ওর মায়াভরা মুখের পানে চেয়ে সেটি আর করতে পারিনি কখনো।যতবার ভেবেছি ফেলে চলে যাব,ততোবারই মনের মধ্যে অজানা এক শংকা এসে বাসা বাঁধতো।শুনেছি ঢাকা শহরে অসৎ মানুষ রয়েছে ঢের,সুজোগ পেলেই ছিড়ে খেয়ে ফেলবে ওকে,অতঃপর ছুড়ে মারবে ডাস্টবিনে।
দীর্ঘ চার মাস পর ছুটি হলে ছাড়পত্রে দেখলাম আমাকে ওর স্বামী বলে উল্লেখ করা হয়েছে!শত সংকোচ বোধ সত্বেও কোন কিছু আগপিছ না ভেবেই ওকে সঙ্গে করে ফিরে এলাম বাড়িতে।দুটি অবিবাহিত জুগলের এক সংগে বসবাস,কোন মুসলিম পরিবার অন্তত মেনে নিতে পারে না।ফলে ভয়ংকর লাঞ্ছনা সামনে এসে দাড়ালো যেন।মাকে বুঝিয়ে বলবার চেষ্টা করলাম অনেক।ভেবেছিলাম তিনি হয়তবা আমার কথা বিশ্বাস করবেন।কিন্তু না,মা আমার একটি কথাও বিশ্বাস করলেন না।বাড়ির সকলেই ভাবলো,মেয়েটিকে হয়তবা ভাগিয়ে নিয়ে এসেছি আমি।গণেশ দুচারবার মুখ খুলতে চাইলেও,মা তাকে কোন প্রকার পাত্তা দিলেন না।সাফ সাফ জানিয়ে দিলেন ও বাড়িতে আমার আর কোন জায়গা নেই।বুক যেন ভেঙে খান খান হয়ে গেল,শুধুমাত্র এ কথা ভেবে যে,আমার মা জননী আমায় বুঝলেন না!তবে যে সব অকাট্য যুক্তি,তিনি আমার সামনে সেদিন তুলে ধরেছেন,তার কোনটিই অস্বিকার করবার মত সাহস আমার ছিল না।দীর্ঘ চার মাস মেয়েটির সেবা শুশ্রুষার প্রয়োজনে,নিজ হাতে গোসল করানো,কাপড় পরানো থেকে শুরু করে সব কিছুই করতে হয়েছিল আমাকে।আমাদের মুসলিম সমাজ এই ব্যপারটিকে কিঞ্চিৎ ভীন্ন দৃষ্টিতেই দেখে থাকে বৈকি।মুসলমানের মেয়ে হলে,হয়তবা লোকের মুখ বন্ধ করা যেত বিবাহ করে।কিন্তু সে যে হিন্দুর মেয়ে!মিয়া বাড়ির মান সম্মান ধূলায় মিশিয়ে দেবার দরুন ও বাড়ির চৌকাঠ মাড়ানো চিরকালের জন্য নিষিদ্ধ হয়ে গেল সেদিনের পর।
এই কয়েক মাসে একটু একটু করে মনের মনি কোঠায় জায়গা দিতে শুরু করেছি ওকে।আর তাই ওকে হাত ছাড়া করা আমার পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠলো না আর।মায়ের হাতে পায়ে ধরেও যখন কাজের কাজ কিচ্ছুটি হল না,অগত্যা ওকে সংগে করেই ত্যাজ্যপুত্র হয়ে গ্রাম ছাড়তে বাধ্য হলাম চিরকালের জন্য।সেদিনের সব হারানো মেয়েটির যেমন কেউ ছিল না,আমিও তেমনি সব হারিয়ে একলা হয়ে গেলাম।আর তাই সে যেন হয়ে উঠেছিল আমার একমাত্র আরাধনার বস্তু।
একের পর এক পৃষ্ঠা উলটে গেল শিতাব।সামনে যতই এগিয়ে যেতে লাগলো ততই যেন কেঁপে কেঁপে উঠতে লাগলো অন্তরাত্না।এ মুহুর্তে সে যেন ডুবে গেলো অতিতে মোড়ানো নিজ জন্মসুত্রে প্রাপ্ত ঠিকনায়।এর পর যা লেখা রয়েছে…
বাড়ির সাথে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন হলেও গণেশের সাথে সম্পর্ক রয়েছে অদ্যাবধি।এদিকে নিজের দেয়া নামেই ডেকে চলেছি ওকে,রাবেয়া।ও নামের সাথেই যেন মিশে গেছে ও।যাইহোক বাড়ি থেকে বেরুবার পর রাবেয়াকে নিয়ে সোজা হাঁটতে শুরু করি দত্ত নগর স্টেশনের পথে।প্লাটফর্মে পৌছুতেই ট্রেন পেয়ে গেলাম।চটজলদি গিয়ে উঠলাম বগিতে।গন্তব্য কোথায় হতে পারে একদমই জানা ছিল না।চলতে শুরু করলো ট্রেণ।এগিয়ে চলল বিদ্যুৎ গতিতে।আকষ্মিক ভাবে ভয়ংকর অভিজ্ঞতার সামনে পতিত হয়ে ভয়ে যেন চুপসে গেলো রাবেয়ার ফিনফিনে মুখ।আমার এ দূর্গতি ঘেরা ভাগ্য আগুন যেন ওর হৃদয় চন্দনকেও পুড়িয়ে পুড়িয়ে গন্ধ ঝরিয়ে চলেছে অবিরত।মাঝে মধ্যে যা দুচার কথা জিজ্ঞেস করি,ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকে আমার পানে।ওর ওই চাহনিতে চাওয়া পাওয়ার কি হিসেব ছিল তা আমি ঢের বুঝেছিলাম সেদিন।অথচ শিহরণ জাগানিয়া রহস্যময় রোমাঞ্চকর সত্যের সংগে কুলিয়ে উঠতে পারছিলাম না কিছুতেই।যদিও নিজের অজান্তেই সমস্ত সত্তা বিকিয়ে দিয়েছিলাম ওর ভালোবাসার প্রগাঢ় আকর্ষনের বলি পাঠা হয়ে।তবুও দুঃশ্চিন্তা আর দূর্ভাবনারা পিছু ছাড়ছিল না কোনক্রমেই।অশরীরি আত্নার ন্যায় বারবার হৃদয় কুটিরে এসে জানান দিয়ে যেতে লাগলো,রাবেয়ার কাছে আমি নিতান্তই একজন পরপুরুষ।
চার চারটি মাস এক সংগে থেকেছি,সেবা যত্ন করেছি,কতটা কাছ থেকে দেখেছি আমি ওকে।নিজ হাতে খাইয়ে দিয়েছি,কাপড় পরিয়ে দিয়েছি,এমনকি নিজ হাতে ধরে বাথরুমে এগিয়ে দিয়ে এসেছি।তখনতো কিচ্ছুটি মনে হয়নি আমার!তাহলে এখন কেন হচ্ছে?নিজের কাছে প্রশ্ন করে কোন উত্তর খুজে না পেয়ে বড্ড বেশিই বিব্রত বোধ করলাম যেন।শত সহস্র ভাবনার মোড়কে একসময় নিদ্রা এসে ভীড় করলো দুচোখ জুড়ে।নেশার ঘোর কেটে যখন ঘুম ভেঙে গেল,ট্রেণ তখন নাটোর স্টেশনে এসে দাড়িয়েছে সবে।আমার বা কাঁধে হেলান দিয়ে তখনো নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে ছিল রাবেয়া।ওকে জাগিয়ে দিয়ে নেমে পড়লাম স্টেশনেই।নাটরের বনলতা সেনের কথা মনে পড়লো হঠাৎ।সেই সাথে মনে পড়লো জীবনান্দের কথা।এই এখানেই একমাত্র বনলতার কাছে তিনি যেন সুখ খুজে পেয়েছিলেন।মনে হল যেন আমিও ছুটে এসেছি বনলতার টানে।না তাকে খুজতে নয়,বনলতা স্বয়ং আমার সংগে রয়েছে।
স্টেশনে নামতেই চো চো করে উঠলো দুজোড়া পেট।বড্ড যে খিদে পেয়েছে!অথচ কানাকড়ি অর্থটি কাছে নেই আমার।দুঃশ্চিন্তায় প্লাটফর্মের বেঞ্চিতে বসে পড়লাম দুজন।খুধার তাড়নায় চোখে শর্ষে ফুল দেখার উপায়ন্তর।এমন সময় আবিষ্কার করলাম,ভিড় ঠেলে একটি পরিচিত মুখ এদিকেই যেন এগিয়ে আসছে।গনেশ কি?আরে হ্যা গণেশই তো!এদিকেই আসছে।
কাছে এসে দাড়াতেই শুষ্ক ঠোটের ফাঁক গলে বেরিয়ে এলো,গণেশ তুই এখানে?
আজ্ঞে হ্যা ছোট কর্তা,না এসে আর থাকতে পারলাম কই?
একি করেছিস তুই?না না একদমই ঠিক করিস নি।আমার পংগু বাবাকে কে দেখবেরে হারামজাদা?মায়ের বহুমুত্রের ঔষধ যে তোকেই খাওয়াতে হয় সেকি ভুলে গেছিস?
আজ্ঞে না ছোট কর্তা।মাথা নিচু করেই উত্তর দিল গণেশ।
তবে যা,বাড়ি ফিরে যা।
গণেশের চোখ জোড়া ছল ছল করে উঠলো মনিবের নির্দয় হুকুমে।যদিও সে জানে তাকে আর মিয়া বাড়িতে ফিরিয়ে নেবার সাধ্য কারো নেই,তবুও কি মনে করে যেন বলেই ফেলল,ছোট কর্তা আপনি যাবেন না?আপনাকে নিতে এসেছি যে?আমি না হয় মায়ের পায়ে ধরে পড়ে থাকব,যতক্ষন না সে তার পণ ভংগ করে।আপনি ফিরে চলুন কর্তা,ফিরে চলুন।
ওরে গণেশ সেটি আর হবার নয়রে,সেটি আর হবার নয়,নিজের অজান্তেই যে কষ্ট তাকে দিয়েছি সেটি যে আর মুছবার নয়!
কেউ না জানুক,কেউ না মানুক,কেউ না বিশ্বাস করুক আপনাকে।আমিতো জানি,আমিই তো জানি।কি অন্যায় আপনি করেছেন যে কারনে এত বড় শাস্তি আপনায় পেতে হল!আর যাইহোক এ অবিচার আমি সইতে পারি না।
তোকে যে সইতে হবে গণেশ,সইতে হবে।ভুলে যাস নে তুই ও বাড়ির চাকর।
আজ্ঞে জানি ছোট কর্তা জানি।আর তাই মনিবের দুখে এই হতভাগা চকরটিরও যে পরাণ কাঁদে!ছোট কর্তা একবার ভেবে দেখুন?অমন বেগানা কুমারিকে নিয়ে এভাবে ঘুরে বেড়ালে লজ্জায় আপনার মাথা কাটা পড়বে যে!
মাথা যাদের কাটা পড়বার কথা আগেই পড়েছে।আমার মাথা বলে কিছু ছিল না,আজো নেইরে গণেশ।তুই ফিরে যা,যা,যাহ…
মনিবের কথায়,মাথা নিচু করে কিছুক্ষন নিশ্চুপ রইলো গণেশ।অতঃপর বলে উঠলো,তা যেতে পারি ছোট কর্তা তবে একটা শর্ত আছে যে?
শর্ত?তোর আবার শর্ত?
আজ্ঞে হ্যা,কিন্তু আগে বলুন মানবেন কিনা?
আচ্ছা ঠিক আছে,তা বল দিকিনি কি তোর শর্ত?
একটু এগিয়ে এসে কানের কাছে মুখ নিয়ে গণেশ ফিসফিস করে বলল,ছোট কর্তা বলছিলাম কি,বলছিলাম যে দিদি মনিকে……দিদি মনিকে না হয়?
কি দিদি মনি দিদি মনি করছিস?যা বলবি সোজা সাপ্টা বলতে পারিস না?
আজ্ঞে হ্যা ছোট কর্তা,বলছিলাম কি দিদি মনিকে না হয় আপনি বিয়ে করে ফেলুন।
বিয়ে?
হ্যা বিয়ে।
তা কি করে হয়রে বোকা,তুই কি ভুলে গেছিস ও……?
ও কথা বলবেন কর্তা ও কথা বলবেন না।ওর ভালো মন্দ সব কিছু এখন আপনার সাথেই মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে।যে নাম ওর দিয়েছেন বড্ড খাশা আছে।এখন থেকে ও নামেই ওর নতুন করে পথচলা শুরু হোক না।মুখের কথা কেঁড়ে নিয়ে বলল গণেশ।
সেকি আর হয়রে পাগল?জাত বলে কথা।যদি কখনো ফের সুস্থ হয়ে ওঠে?আমি দায়ী হয়ে যাব যে ওর কাছে,আমি দায়ি হয়ে যাব।পারব না গণেশ আমি পারব না।অমন নিষ্পাপ মেয়ের সাথে প্রতারণা করতে বড্ড বিবেকে বাধে আমার।মনের যে সেদিন কি হয়েছিল কে জানে!হাসপাতালে ওর নাম জিজ্ঞেস করলে একটা হিন্দু নাম মুখে এলো না,বলে দিলাম ওর নাম রাবেয়া।হিন্দু থেকে সোজা সাপ্টা মুসলমান বানিয়ে দিলাম ওকে!
গণেশ একবার আমার চোখের দিকে তাকিয়ে কিছু নিরিক্ষণ করলো যেন।অতঃপর মুচকি হেসে বলল ভালো বেসে ফেলেছেন ওকে,তাই না ছোট কর্তা?মুহুর্তেই আমার উঁচু মাথা লজ্জায় যেন নিচু হয়ে গেল।কারন গণেশ যে সেদিন আমার প্রকৃত রোগ ঠিকই ধরতে পেরেছিল।
কিচ্ছুটি দুঃশ্চিন্তা করবেন না কর্তা,কিচ্ছুটি হবে না।তা ছাড়া ডাক্তার বাবু তো বলেই দিয়েছেন দিদি মনির স্মৃতিশক্তি হয়তবা ফিরে আসবে না আর কোন দিন।তা ছাড়া বিয়ে হলে পরে ঝুট ঝামেলাও থাকবে না গো।
ওর কথায় অবশ্য অকাট্য যুক্তি রয়েছে।পরোখ করে দেখবার জন্য একবার তাকালাম রাবেয়ার দিকে।যদিও আমাদের দুজনের আলাপন একটু দূরে থাকার দরুন শুনতে পায়নি ও।ওর চোখে মুখে যে নির্ভারতার ছাপ সেদিন দেখেছিলাম,তাতেই বুঝেছিলাম ওর হৃদয়ে যেন লেখা রয়েছে আমিই ওর পৃথিবী,আমিই ওর সব কিছু।হাফ ছেড়ে যেন বাঁচলাম ওর হাসি মাখা মুখের দ্যুতি দেখে।কিন্তু সমস্যা বাধলো অন্য জায়গাতে।আমার কাছে যে একটি আধলী পয়সা পর্যন্ত নেই!পয়সার অভাবে গত রাত থেকেই অভুক্ত রয়েছি দুজন।ট্রেনের টিটি কেন জানি টিকিট চেক করতেই আসেন নি গত রাতে,এলে বোধ হয়,পথেই নামিয়ে দিত ঘাড় ধরে।
ও নিয়ে আপনায় ভাবতে হবে না কর্তা।আমি সব ব্যবস্থা করেই তবে এসেছি।না ও বাড়ি থেকে কানাকড়ি টি আনিনি গো।যা এনেছি আমার সঞ্চায়ের টাকা থেকেই।তৎক্ষনাৎ চোখ রাঙিয়ে ওকে বললাম,তুই ভালো করেই জানিস কারো দক্ষিণা আমি গ্রহণ করি না।
দান কেন বলছেন কর্তা?এটা আমি আপনায় বন্ধুত্বের উপহার স্বরুপ দিলাম মাত্র।আমায় ফিরিয়ে দিবেন না দয়া করে।
অগত্যা পিড়াপিড়ীর একপর্যায়ে গণেশের কথা মেনে নিতে বাধ্য হলাম।অতঃপর ম্যাজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে বিয়ে করলাম রাবেয়াকে।বিয়ের পর উত্তর বরগাছার এ বাড়িতেই এসে উঠলাম দুজন।গণেশ ফিরে গেল মিয়া বাড়িতে।যাবার পূর্বে আমার কাছ থেকে অবশ্য ওয়াদা নিয়েছিল ও।আমি যেন কোন দিন ওর সাথে যোগাযোগটা অন্তত বন্ধ না করি।কোথায় আছি কেমন আছি কেউ কোন দিন জানবে না,এই কথা যদি ও আমায় দিতে পারে,তবেই ওর কথা মেনে চলব বলে বলেছিলাম সেদিন।নির্দিধায় মেনে নিয়েছিল ও।আজ অব্দি সে শর্ত ঠিক ঠিক পালন করে চলেছি উভয়ে।
দুটি ভীন্ন মেরুর দুটি ভীন্ন সত্বা জীবনের সব কিছু হারিয়ে সংসারী হল এবার।যদিও কাজ কম্ম করার অভিজ্ঞতা ছিল না বললেই চলে।থাকবে কি করে?সোনার চামচ মুখে দিয়ে যে ছেলেটা মানুষ হল,হঠাৎ করেই কি সে আর কাস্তে কোঁদাল ধরতে জানে?তবুও পরম আত্ন বিশ্বাস আর ভালোবাসার নিগূঢ় টান,যুদ্ধের ময়দান উত্তপ্ত করেছিল ঠিকই।
যখন যে কাজ পেয়েছি নির্দিধায় করেছি।কুলি মুটে গিরি থেকে শুরু করে কোন কর্মই যেন বাদ যায়নি একজীবনে।সারা দিনের হাড় ভাঙা খাটুনি খেটে বাড়ি ফিরে যখন রাবেয়ার হাসি মাখা মুখ খানা দেখতাম,আমার শত যাতনা যেন শেষ হয়ে যেত মুহুর্তেই।হৃদয়টি হয়ে উঠতো যেন হিমালয়ের বরফ ঠান্ডা।যদিও ও হাসির আড়ালে যে শ্রান্তি লুকিয়ে থাকতো তা বুঝতে পারতাম ঢের।কাজ কম্ম করার অভিজ্ঞতা ওর ও যে বিশেষ ছিলনা।ধনীর দুলালীরা বাড়িতে ঝি চাকর পালে।ওর বেলাতে কেবল কপালই পুড়েছিল।ওই কপাল পোড়া হতভাগিনী চুলোর আগুনে হাত পোড়াতেও ছাড়তনা কখনো সখনো।প্রথম প্রথম ওর রান্না খেতে ভীষণ কষ্ট হত আমার।অথচ কিচ্ছুটি বুঝতে দিতাম না ওকে।এমন গোগ্রাসে গিলে যেতাম মনে হত যেন পরম তৃপ্তি পেয়েছি খানা খেয়ে।অতি অল্পদিনের মধ্যেই এই আনাড়ি রাধুনির হাত এতটাই পেকেছিল যে,তার রান্নার হাত কেবল আমার মায়ের হাতের সমকক্ষ হয়ে গিয়েছিল।

ভালোই চলছিল দুজনার সংসার।এমন সময় রাবেয়ার গর্ভে এলো আমার প্রিয়তম সন্তান।দশমাস পর ছেলেটির জন্ম হল বটে কিন্তু প্রিয়তমা স্ত্রীকে হারালাম চিরতরে।মৃত্যুর ঠিক পূর্বক্ষনে হঠাৎ আমার পানে চেয়ে বলল আপনি কে?আমি এখানে কেন?আমি বললাম রাবেয়া কি বলছো এসব?ও বলল রাবেয়া?রাবেয়া আবার কে?
ওর কথায় কেমন যেন হতভম্ব হয়ে পড়লাম আমি।জিজ্ঞেস করলাম তুমি কি আমায় সত্যিই চিনতে পারছো না?রাবেয়া কেবলি ঘাড় নাড়ালো।সে আমায় চিনতে পারছে না।এক মুহুর্ত স্থীর থেকে বলল আমার নাম নলিনী।নলিনী রয়।রাবেয়া তো নই আমি!
নলিনী রয়!নামটি শুনার সাথে সাথে যেন আকাশ ভেঙে পড়লো মাথার উপর।ডাক্তার সাহেবের হিসেব যে ঢের ভুল ছিল,বুঝতে আর বাকি রইলো না বিন্দু মাত্র।নিজেকে কি রুপে উপস্থাপন করব ওর ভেতর থেকে জেগে ওঠা প্রকৃত সত্ত্বার সামনে,সে ভাবনায় যেন নিমগ্ন হয়ে পড়লাম।ও আবার প্রশ্ন করলো,আমার বাবা, মা,দাদা ভাই ওরা সব কোথায়?আমি ফের ভড়কে গেলাম যেন।দ্রুত স্থীর করলাম,বিপত্তি যতই সামনে আসুক আসল ঘটনা তুলে ধরব ওর কাছে।
সেদিন নলিনীকে একে একে খুলে বললাম অতীতের নিষ্ঠুর সব অভিজ্ঞতার কথাগুলি।কাজের কাজ কিচ্ছুটি হল বলে মনে হল না।ওর ওই অমন খামখেয়ালী মুখের পানে চেয়ে মনে হল যেন নলিনী আমায় এক বিন্দু বিশ্বাস করেনি।আগত্যা বাধ্য হয়েই আঙুলের ইশারা দিলাম শিশু পুত্রের দিকে।যদিও ছেলেটি ওর কোলেই ছিল,তবুওঙ্কেন জানি একটি বারের জন্যও সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করেনি ও।আমার ইশারা পেতেই কোলের শিশুর দিকে তাকালো এই প্রথমবার।কেমন যেন শিউরে উঠে বলল,এ…এ…এই শিশুটি আমার কোলে কেন?আমি বললাম তোমার ছেলে,যাকে একটু আগেই প্রসব করেছো।
আচমকা আমার হাত ধরে ফেলল নলিনী।প্রচন্ড শ্বাস কষ্ট হচ্ছিল তার।জীবন প্রদীপ নিভতে চলেছে যেন।অবাক বিষ্ময়ে আমার পানে চেয়ে বলল আমার বিয়ে হয়েছিল বুঝি?কে…কে…ও…ওর বাবা?প্রতিউত্তরে শুধুই চোখের জল গড়িয়ে পড়লো ওর হাতের ওপর।সহসা শুষ্ক ঠোটে হাসির ঝলক দেখা দিল এবার।কচি শিশুটিকে পরম মমতায় বুকে আগলে নিয়ে বলে উঠলো,কোলের সন্তান কি আর মিথ্যে বলতে পারে?আপনি সত্য বলেছেন।পরম নিশ্চিন্তের নিঃশ্বাসটি ছাড়লাম যেন ওর অমন হঠাৎ পরিবর্তনে।অতঃপর ছেলেটিকে আমার হাতে তুলে দিয়ে শুধু এত টুকু কথা উচচারিত হয়েছিল ওর মুখ থেকে,আপনার হাতেই রেখে গে্লাম এই শিশুটি।ওর নাম রাখলাম শিতাব যাবী অর্থাৎ দুরন্ত হরিণ।মুসলমান নাম,মাসিক কল্যানীতে পেয়েছিলাম নামটি।সেদিন ভীষণ পছন্দ হয়েছিল আমার।তখন কে জানতো,ওই নামটিই হয়তবা কাজে লেগে যাবে একদিন!মৃদ্যু হেসে বলল নলিনী।এর পর কঠিন এক সমীকরণের মধ্যে আমায় ফেলে দিয়ে বলল,কেবল আমার পরিচয়টি গোপন রাখবেন ওর কাছে।কথা দিন আমায়,আমার শেষ মিনতিটি আপনি রক্ষা করবেন?কেন এমন নিঠুর প্রস্তাবনা!সেটি জানবার আগেই প্রাণ বায়ু বেরিয়ে গেল প্রিয়তমা স্ত্রীর।আমার কানে যেন ভেষে এলো অধো মুখে অত্যন্ত যন্ত্রনা কাতর সুরে কেউ পড়ছে লা ইলাহা ইল্লালাহ……
ওর ডান হাত তখনো শক্ত করে ধরে ছিল আমার ডান হাতের মুঠি।শিশুপুত্র কেঁদেই চলছিল আমার বাম পাজরে ঠাই নিয়ে।যত দিন ওকে নিয়ে ঘর করেছি,ধর্মের আরাধণার ব্যপারে কিচ্ছুটি বলিনি কখনো।যদিও নিজে ধর্ম মেনে চলবার চেষ্টা করেছি শতভাগ।ওর হিন্দুয়ানী সত্বার কথা জানা ছিল বিধায় প্রায়ই দেবদেবীর মূর্তি এনে সাজিয়ে রাখতাম ঘরে।ভাবতাম দিন ধর্মের কথা হয়তবা মুছে যায়নি ওর হৃদয় থেকে।আমার সে ধারণা বোধ হয় ভুলই ছিল।কেন জানি রাধা কৃষ্ণের মূর্তি ছাড়া বাকিগুলো ছুড়ে মারতো বাড়ির পেছনের ডোবায়।
গভীর রাতে উঠে কখনো সখনো জায়নামাজে দাঁড়ালে চুপিসারে ধীর পায়ে এসে দাঁড়াতো আমার পাশে।প্রচন্ড রেগে গিয়ে বলতাম ওটি তোমার কাজ নয়,কেবল বলতে পারতাম না তুমি মুসলিম নও।অভিমান করে সারাটি রাত্রিতে আর কথা কইতো না আমার সাথে।কিন্তু আমি নিজের অবস্থান থেকে বিচ্যুত হতাম না চুল মাত্র।কেননা সে অধিকার আমার নেই।কেবল আমিই জানি যদি ওর স্মৃতি শক্তি ঠিক থাকতো ও কেবল দেব দেবীর আরাধনা করতো,জায়নামাজে দাঁড়াতো না কখনো।মৃত্যুর ঠিক পূর্বক্ষনে এমন এক বাক্য ওর মুখ থেকে সেদিন বেরিয়ে এ্সেছিল যে,শশানে নিতে সাহস করিনি ওকে।নিজ হাতে গোসল করিয়ে অতি যতন করে কবর দিয়েছিলাম গোরস্থানে।
প্রিয়তমা স্ত্রীর মৃত্যুর পর চরম বিপদে পতিত হলাম শিশু পুত্রকে নিয়ে।ক্রন্দন চলতেই লাগলো অবিরত।সেটিই তো হবার কথা ছিল।নাড়ি ছেড়া ধন,জন্মদাত্রী মা ছাড়া কাউকে চিনে না যে!তার উপর জন্মের পর মায়ের বুকের দুধ পর্যন্ত ভাগ্যে জোটেনি পুত্রের।কেনা দুধ ওকে গেলানো গেলনা কোনক্রমেই।নিতান্ত নিরুপায় হয়ে বের হলাম ধাত্রির সন্ধানে।মা হারা এতিম পুত্রের প্রতি একবিন্দু দরদ হলনা কারো হৃদয়ে।যেখানে নিজ সন্তান সামলাতেই হিমশিম খেতে হয়,সেখানে পরের ছেলেকে মানুষ করবে কে আর?ওর বেঁচে থাকার আশা যেন ছেড়েই দিলাম।একেতে অবিরাম ক্রন্দন তার উপর অভুক্ত জন্মের পর থেকেই।এমন শিশু বেঁচে থাকবে এই আশা করি কি করে?
তবুও শেষ প্রচেষ্টা হিসেবে গেলাম শিশু আশ্রমে।যক্ষের ধন সেখানে রেখে ফিরে এলাম বাড়িতে।সারাদিনের ক্লান্তি আর শ্রান্তিকে সংগে নিয়ে নিজেকে এলিয়ে দিলাম বিছানায়।কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি জানিনা।হঠাৎ দুচোখের পাতায় ভেসে এলো,ফিনফিনে জোসনা আলোয় পথ ধরে কে যেন এগিয়ে আসছে আমার দিকে।কাছে আসতেই লক্ষ করি রাবেয়া!কোলে তার প্রাণপ্রিয় পুত্র আমার।অত্যন্ত বিষন্ন মনে আমার পানে এক দৃষ্টে চেয়ে বলে উঠলো বড্ড ভরসা করেছিলাম আপনার উপর,বড্ড ভরসা করেছিলাম।আচমকা ঘুম ভেঙে লাফিয়ে উঠলাম বিছানা ছেড়ে।ঘামে যেন নেয়ে উঠেছে সারা গা।দুকর্ণে এখনো বেজেই চলেছে বড্ড ভরসা করেছিলাম আপনার উপর,বড্ড ভরসা করেছিলাম।
পরদিন ভোর হতে না হতেই ছুটে গেলাম আশ্রমে।ছেলে আমার তখনো কাঁদছে,কেঁদেই চলেছে!দৌড়ে গিয়ে কোলে তুলে নিলাম ওকে।অতিশয় আশ্চর্যের ব্যপার!মুহুর্তেই কান্না থেমে গেল ওর।দুধের ফিটারটি আয়ার হাত থেকে নিয়ে,মুখে ধরতেই শান্ত ছেলের মত পা দুখানি দোলাতে দোলাতে খেতে শুরু করলো ও।ক্ষনেকের জন্য মনে হল যেন ছেলের চারিপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে ওর মা।ছেলেকে হয়তবা কিছু একটা বলেছে সে।নইলে আমায় দেখে অমন করে কান্না থামিয়ে দিল কেন?বুঝতে পারিনা ওসব কিছু,তবে ছেলে যে শান্ত হয়েছে তাতেই আমি ঢের খুশি।ওকে আর আশ্রমে রাখতে ইচ্ছে হলনা আমার।তাই প্রিয়তমকে নিয়ে ফিরে এলাম বাড়িতে।এর পর দুয়েক জন পরামর্শ দিয়েছিল পুনরায় বিয়ে করতে।ছেলের মুখের পানে চেয়ে দ্বিতীয় বিয়েতে আর সাই দিলনা মন।অগত্যা ওকে বুকে নিয়েই শুরু হল আবার নতুন করে পথ চলা।
এ পর্যন্ত পড়বার পর নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলো না শিতাব।দুচোখ বেয়ে অঝোর ধারায় জল গড়াতে আরম্ভ হল তার।হঠাৎ মনে হল কে যেন ডাকছে তাকে,দরজার ওপার থেকে,তীব্র বৃষ্টি স্নাত রাতে।অতি সকরুন সে সুর।নিতান্ত অসহায়ের মত কাকুতি মিনতি করছে যেন।এখনো যেন পথ চেয়ে রয়েছে সে। আমার বাবা!বাবা!আমায় ক্ষমা করো বাবা।বুক ফাটা আর্তনাদ বুক চাপড়ে দিলো শিতাবের।কাঁদতে কাঁদতে সংগা শুন্য হয়ে পড়লো যেন।ডাক্তার অপরেশ ব্যানার্জি এসে,অবস্থা বেগতিক দেখে দ্রুত ইনজেকশন দিয়ে গেলেন।কালো ডাইরীটি বুকে করেই ঝিমোতে ঝিমোতে গভীর তন্দ্রায় পতিত হল শিতাব।
সন্ধ্যের পর যখন ঘুম থেকে জেগে উঠলো সে,কালো ডাইরীটি তখনো তার বুকের উপর ভর করে ছিল বাকি ইতিহাস বলবার অপেক্ষায়।যদিও শরীরটি এখনো সাই দিচ্ছে না ঠিক আগের মত।তবুও ওটি হাতে তুলে নিয়ে আবার পড়তে শুরু করলো শিতাব।বাবা লিখে চলেছেন…বছর দশেক পরের কথা।সেদিন বৃষ্টি হচ্ছিল।আমার জীবনের দুখের দিন গুলোতে কেন জানি বৃষ্টি হয় প্রচুর।আমি পরোয়া করলাম না।বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে গিয়ে হাজির হলাম ডাক্তার সাহেবের চেম্বারে।অনেক অনুনয় করার পরেও নিশ্চুপ রইলেন তিনি।আমি কিন্তু নাছোড় বান্দা।পা ধরে পড়েই রইলাম ডাক্তার সাহেবের।বাধ্য হয়ে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিলেন তার সহকারী।তবুও একবিন্দু নড়লাম না চেম্বারের দরজা থেকে।আমার একমাত্র ছেলেটির চরম বিপর্যয় আজ।এই দশ বছর বয়সেই রোগ নামক নির্মমতা ভর করেছে ওর ওপর।ডাক্তার বলেছে ব্রেইন টিউমার!অনেক টাকার প্রয়োজন অপারেশন করতে।অথচ এত টাকা আমার হাতে যে নেই!আল্লাহকে ডাকতে লাগলাম আমি।
অবশেষে ডাক্তার সাহেবের অন্য একজন পেশেন্টের নিকট থেকে পেয়ে গেলাম সেই কাংখিত সুজোগটি।বেচারার ছোট্ট মেয়েটির দুটো কডনিই নষ্ট হয়ে গেছে।একটা কিডনি অন্তত তার চাই-ই চাই,তা সে যত টাকাই লাগুক না কেন।এদিকে আমার প্রাণপ্রিয় পুত্রের অবস্থা ক্রমেই সংকটাপন্ন হতে লাগলো।ওর মুখের পানে চেয়ে নিজের কথা ভুলে গেলাম অত্যন্ত সন্তুষ্ট চিত্তে।কিন্তু ডাক্তার সাহেব যে কিছুতেই রাজী হচ্ছিলেন না।অবশেষে আমার জীদের কাছে,পরাজিত তাকে হতেই হল।
১০
ডাইরীটি পড়তে পড়তে একদম শেষ প্রান্তে চলে এলো শিতাব।শেষের পাতায় আসতেই কিঞ্চিৎ বিষ্মিত হল একটি শিরোনাম দেখে।ফারহা!আমার স্ত্রী?উৎসুকের ন্যায় পড়েই চলল শিতাব।খুব সম্ভবত তার বিয়ের ব্যপারে লিখেছেন এ পাতায়।দেখাই যাক না কি লেখা আছে এতে,বলেই পড়তে লাগলো সে।মেয়েটিকে প্রথম দেখেই বড্ড ভালো লেগেছিল আমার।ছেলের পছন্দ আছে বলতে হয়।কিন্তু ফারহার বাবা ওদের সম্পর্ক মেনে নিতে চাইছিলনা কোনক্রমে।ছেলেটির মুখের পানে চেয়ে আর একবার অস্থীর হতে হল আমায়। আর তাই পরিশেষে আমাকেই হাল ধরতে হল।নিজে গিয়ে ফারহার বাবাকে অনুরোধ করলাম আমি।অনেক কাঠখড়ি পোড়াবার পরেই সেদিন রাজী করাতে পেরেছিলাম ওর বাবাকে।
বিয়ের কিছু দিনের মাথায় জানতে পারলাম ফারহা আসলে যার কাছে লালিত পালিত হয়েছেন,তিনি তার আসল বাবা নন।তার আসল বাবা হলেন আসলাম ব্যপারী,যে কিনা ওর ছোট কাকা নামে পরিচিত।যে রহস্যের জাল আমার সামনে সেদিন ছিড়েছিল সেটি না হয় আর নাইবা বললাম।এমনকি ছেলেকে বলি বলি করেও এ ব্যপারে বলতে পারলাম না আর।ফলে মনে মনে ঠিক করলাম,বিষয়টি নিতান্ত গোপন ছিল গোপন থাকাই শ্রেয়।কিন্তু এর চেয়েও ভয়ংকর এক গোপন বিষয় যে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিল আমায়!না পারছিলাম সইতে না পারছিলাম ছেলেকে কইতে।অথচ দিন দিন ছেলেটি যে ঠকেই চলেছিল!একসময় অবস্থা এমন পর্যায়ে গিয়ে দাড়িয়েছিল যে,ওকে বললেও হয়তবা বিশ্বাস করানো যেত না বিন্দমাত্র।তবুও কয়েক বার বলেছিলাম ছেলেকে,অফিসের কলিগ বাড়িতে না আসাই ভালো বাবা।আমার কথায় গুরুত্ব না দিয়ে নিজের পায়ে নিজেই যেন কুড়োল মেরে চলল বাছা আমার!
অফিস কলিগের কথা আসতেই মনে পড়ে গেল সেই পারফিউমের কথা।যেটি শোবার ঘরে পেয়েছিল সকাল বেলাতে।এবার তার স্পষ্ট মনে এলো ওই বেখাপ্পা টাইপের পারফিউম কে ব্যবহার করে।মনের মধ্যে বিরাজ করা শুন্যতার প্রকৃত কারন যেন শিতাব খুজে পেল এবার।তারই বন্ধু আনোয়ার!এত বড় ধোকাবাজি?এত বড় সাহস?বেশ্যা একটা!কাকে বিশ্বাস করেছিলাম আমি?কেমন যেন ছেদিয়ে উঠলো সে।এ মুহুর্তে যে কথা গুলো সে জানতে পেরেছে সে জন্য হয়তবা নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে না কখনো।পিতার অবাধ্য হবার ফল এসব!এর প্রায়শ্চিত্ত আমায় করতেই হবে।এর প্রায়শ্চিত্ত আমায় করতেই হবে।
ডাইরীর অবশিষ্ট পাতা গুলি এখনো খালি।হয়তবা আরো অনেক অজানা ঘটনার সাক্ষি হতে চায় শুন্য পাতাগুলি।অথচ তার আগেই পাপের সাগরে আষ্ঠেপৃষ্ঠে ডুবে মরেছি আমি!গলিত পচা লাশের যেমন অনুভুতি থাকে না তেমনি অনুভুতি শুন্য ছিলাম যেন।নিজে অন্ধ ছিলাম অথচ চক্ষুষ্মানকে অন্ধ ভেবেছি।বাবার কথা মনে পড়ে গেল শিতাবের।ফুসফুসের অসুখ ছিল তার।বড্ড কাশি হত তার। ঢের বেড়ে গেছে ইদানিং,হালকা পাতলা রক্তও বের হয় কাশির সাথে।ভালো ডাক্তার দেখাতে হবে।এখন থেকে দুচোখের আড়াল হতে দেয়া যাবে না তাকে আর।
ধীরে ধীরে বিছানা ছেড়ে উঠে দাড়ালো শিতাব।মসজিদ থেকে মোয়াজ্জিনের আজান ভেষে আসছে কানে। কয়েক দিনের বিরতি দিয়ে আবার বৃষ্টি শুরু হয়েছে সন্ধ্যে বেলাতে।ক্রমেই তার গতি বেড়ে যেতে লাগলো ঢের।শরীর এখন পূর্বের চেয়ে কিছুটা ভালো মনে হচ্ছে যেন।আর দেরী করা ঠিক হবে না।এখনই বেরিয়ে পড়া উচিৎ।
ডাক্তারের নিষেধাজ্ঞা সত্বেও গায়ের পোষাক পরিবর্তন করে বেরিয়ে পড়লো শিতাব।সবে দরজার ওপারে পা মাড়ালো সে।আচমকা উত্তর দিক থেকে ভীষণ ক্ষিপ্ত হয়ে তেড়ে ফুড়ে এলো অচেনা এক দমকা হাওয়া।দিগন্ত জোড়া বীজলি বাতি উল্লাসে মেতে উঠলো বিধ্বংসী রুপ নিয়ে।মুসলধারায় জল ঢেলে দিতে লাগলো মেঘময় আকাশ।জলের বুক মাড়িয়ে সামনে এগিয়ে যেতে চাইলো শিতাব।বাবাকে খুজে বের করতেই হবে আজ।আর এক মুহুর্ত সময় নষ্ট করতে চায় না সে আর।কিন্তু জল তাকে ক্ষমা করলো না।জলের ফোঁটারা ক্ষমা করতে জানে না।এক ঝটকায় ভিজিয়ে দিয়ে উন্মাদ নৃত্যে্র তালে তালে মিলিয়ে গেল দূর দিগন্তে।
রাত যেন কালো হতে হতে কাল রাত্রি হয়ে এলো।এমন সময় একটি শব্দ ভেসে এলো কর্ণ জুগলে।লাইন ফোনটা বাজছে!দৌড়ে গিয়ে রিসিভার উঠাতেই দুরু দুরু কেঁপে উঠলো শিতাবের বুক।হয়তবা এই ফোন কলটির অপেক্ষাই করছিল সে।ওপার থেকে কেউ একজন বলে উঠলো শিতাব বাবু বলছিলেন কি?আজ্ঞে হ্যা উকিল বাবু,বলুন বলু্ন,বাবার খোজ পেয়েছেন নিশ্চয়?
জি মশাই আজিজ ভাইয়ের খোজ পেয়েছি।সূদুর মহেশ পুর থেকে দুজন এসেছেন উনাকে সংগে করে নিয়ে যেতে।একজনের নাম বলছেন গণেশ চক্রবর্তী।অপরজন আপনার স্বজাতী বৃদ্ধা মহিলা।নাম বলছেন আয়েসা বেগম।তিনি নাকি আজিজ ভাইয়ের বড় বোন।আপনি কি একটু আসতে পারবেন মশাই?হ্যা হ্যা নিশ্চয়। আমি এক্ষুনি আসছি,আমি এক্ষুনি আসছি।কিন্তু তার আগে উকিল বাবু এটা বলুন যে,বাবা এখন সুস্থ আছেন তো?
জি মশাই বেশ আছেন,শান্তিতে আছেন,একদম খাশা আছেন মাইরি,গত পাঁচিদিন যাবৎ বেওয়ারিশ লাশ হয়ে শুয়ে আছেন মর্গে!
(সমাপ্তি)



আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
রঙ পেন্সিল বেশ খানিকটা সময় নিয়ে গল্পটি পড়লাম। গল্পটা বড় হলেও শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মসৃন ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে....অনেক শুভকামনা।
ভালো লাগেনি ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯
অত্যন্ত ধৈর্য সহকারে গল্পটি পড়ার জন্য আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ কবি।
ভালো লাগেনি ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯
মোঃ নুরেআলম সিদ্দিকী দীর্ঘ একটি গল্প; গল্পটিতে বিভিন্ন ধরণের চরিত্র ও বর্ণনা ফুটে উঠেছে। কখনো হতাশা, কখনো অভিমান আর কখনো মুঠোভরে হাসি.....আসলে এরই নাম জীবন। তবে দাদা এটাকে উপন্যাস বানিয়ে ফেলেন। যা হোক, অনেক শুভ কামনা ও বরাবরের মতোই ভোট রইল।।
ভালো লাগেনি ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯
আসলে আলম ভাই উপন্যাস লিখতে হলে কম করে হলেও ৭০-৮০ হাজার শব্দ দরকার যা আমার ঝুলিতে ছিলনা হয়তবা।আর তাই গল্প বানিয়েই ক্ষান্ত হলাম হা হা হা...।তবে একটি উপন্যাস অবশ্য লিখছি,ভিন্ন ধারার উপন্যাস,প্রায় শেষের দিকে চলে এসেছি।দোয়া করবেন।ধন্যবাদ।
ভালো লাগেনি ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯
শিল্পী জলী চমৎকার লেগেছে গল্পটি, ভাষাশৈলী, কাহিনী সবই। গল্পকবিতায় জীবনের প্রথম ভোটটি দিচ্ছি আপনাকে। শুভকামনা রইলো।
ভালো লাগেনি ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯
গল্পটি আপনি মনোযোগ সহকারে দীর্ঘ সময় ব্যয় করে পড়েছেন সে জন্য ধন্যবাদ জানাই।
ভালো লাগেনি ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯
কাজী প্রিয়াংকা সিলমী কাহিনী ভাল মনে হচ্ছে। মূল গল্পটিতে চমক আছে।তবে আরেকটু এডিট করে গল্পটা আরেকটু সংক্ষিপ্ত করলে মনে হয় পড়তে আরামদায়ক হত।
ভালো লাগেনি ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯
আসলে গল্পের নাটকীয় কিছু পটের কারনেই ইচ্ছে করে এডিট করলাম না,তা ছাড়া রবিন্দ্রনাথ,শরৎ বাবু উত্তর যুগে একটু বড় আকারের ছোট গল্প প্রায় চোখে পড়ে কম।তাই নিজ থেকেই এ প্রয়াশ গ্রহণ করলাম।তবে এতটুকু বলতে পারি সম্পূর্ণ গল্পটি পড়লে নিরাশ বা হতাশ হবেন্ন না,আশা করি।ধন্যবাদ।
ভালো লাগেনি ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯
জ্বী। সম্পূর্ণ গল্পটি পড়েই মন্তব্য করেছি। গল্পটিতে চমক আছে। অভিনন্দন।
ভালো লাগেনি ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

অতীত জীবনের জীবন্ত ইতিহাস উঠে এসেছে কালো ডাইরীতে।

২৯ সেপ্টেম্বর - ২০১৬ গল্প/কবিতা: ৩৭ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“এপ্রিল ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ এপ্রিল, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী