স্বাধীনতার বিপরীত গতিপথ

স্বাধীনতা দিবস (মার্চ ২০১৯)

নাজমুল হুসাইন
  • ৫২
এক হতভাগা বোনের কথা বলি,হৃদয়ে নিমজ্জিত স্বাধীনতা যার ইচ্ছা শক্তির কুটিরে আঘাত করতে করতে নিয়ে গিয়েছিল অভিশপ্ত ব্যালট বক্সের গোপন কক্ষে।স্বাধীনতার স্বাদ তিনি ভোগ করেছিলেন ঠিকই,তবে মধ্যরাত অব্দি তা আর টেকসই হয়নি।স্বামী সন্তানের সম্মুক্ষে উলঙ্গ কুকুরেরা তাকে ছিড়ে ছিড়ে খেয়েছে সারা রাত।সন্তানের আত্নচিৎকারে প্রকম্পিত সমাজের পায়ে যেন শিকল পরা ছিল,কারো দুঃসাহস হয়ে ওঠে নি,অবাধ্যতার ঝনঝনানি বাজিয়ে প্রতিবাদের প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠবে।হাসপাতালের বিছানায় যন্ত্রনা কাতর,আর্তনাদের হতবিহব্বল দৃষ্টি ধ্বনি যেন বলে দিচ্ছিল,এটাকেই বুঝি স্বাধীনতা বলে?
এইতো কিছু দিন হল,পাবলিক বাস তার নিজস্ব গতিতেই চলছিল,বাতাসের ধাক্কায় আত্নসমভ্রমী হয়ে ওঠা জড়যান,গতির ক্ষিপ্রতার প্রতিবাদে যেন বুঝিয়ে দিচ্ছিল,অতি অল্প ক্ষনের মধ্যেই স্বাধীনতার বস্ত্র হরণ করে তাকে কলঙ্কিত করা হবে।হায়!এদেশে চলন্ত বাসে ধর্ষনের নজির স্থাপিত হল।আমার মা,আমার বোন,আমার স্ত্রী এখন পাবলিক বাসে একলা চলতে ভায় পায়।তাদের কন্ঠে ধ্বনিত হয়,স্বাধীনতার এই কলঙ্কিত অধ্যায়ের পৃষ্ঠ দর্শনের জন্যই কি সম্ভ্রম ও জীবনের ঝুকি নিয়ে,আজীবন পথ চলতে হবে?
মৃত্যু দানের নিত্যনতুন আবিষ্কারের কথা কি ভুলে যাওয়া সম্ভব?পায়ুপথে বাষ্প দ্বারা বেলুন মৃত্যু দেখতে হয়েছ।কি অভিনব সভ্যতার এক আত্নদান!নিষ্পাপ অসহায় শিশু যখন,বিনা অপরাধে বাতাসের ফাসিতে উড়তে উড়তে,ঝুলে পড়ে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহনের জন্য,ফুলে ওঠা নিথর দেহ যেন ধিক্কার জানায়,বলে ওঠে,এই বুঝি মুক্তি?এই বুঝি স্বাধীনতা?
মিথ্যা মামলার শুকনো খড়ে পুড়ে যাওয়া জাহলম ভায়ের অন্ধকারাচ্ছন্ন তিনটি বছর,চোখে আঙুল দিয়ে অপরাধীর মিথ্যা শপথ নামা চিহ্নিহিত করেছে।কর্তা হারা পরিবারটি,পুড়ে যাওয়া সেই আগুনের ধোঁয়াশার মত ছুটে বেড়িয়েছে,চৌহদ্ধি থেকে কাঠগড়ার চৌকাঠে।জাহলম অতশত কিছু বুঝতে চায় না,জীবন থেকে কেড়ে নেয়া তিনটি বছর সে ফিরে পেতে চায়?হায়!আমার স্বাধীনতা এখনো নিঃশ্চুপ।
আমি এমন একজোড়া চোখ দেখেছি,যার দুরন্ত দ্যুতি হঠাৎ থমকে গেছে,খেলনা ফেলে জানালার ওপাশ থেকে তাকিয়ে থাকে আকাশের পানে,কারন চোখ জোড়া জানেনা,তার পিতার খবর,জানে না,তিনি বেঁচে আছেন না মরে গেছেন।চোখের নোনাজলে ভিজে ওঠা ওড়নার আবেগ দেখেছি।কান পেতে থাকে দিবা-নিশি।দরজার কড়াঘাতে লাফিয়ে ওঠে আত্না।ছুটে যায় দরজার দিকে,এই বুঝি প্রাণ প্রিয় ফিরে এলো।কিন্তু প্রতিবার তাকে হতাশ হতে হয়,স্বামী আর ফিরে আসে না।হায়!এমন করেই বুঝি গুম হয়ে যায় তরতাজা রক্ত মাংসের মানুষটি।
স্বাধীনতার অপব্যবহারে যখন ধর্ষনের সেঞ্চুরি হয়,খুন্নিবৃত্তি চরিতার্থে ব্যর্থ হয়ে বদরূলের মত লোকেরা ক্যাম্পাস রক্তাক্ত করে,যখন লুটপাট হয়ে যায় এদেশের মানুষের রক্ত ঘামে পানি করা শত কোটি টাকার সম্পদ।বেকারত্বের উপচে পড়া ভিড়ে চাকুরির প্রলোভন,মা্মা,খালু আর অর্থ ছাড়া কল্পনায় সর্গ দেখার ন্যয় মনে হয়,যখন তেইশ বছর অপেক্ষার পর আদালতের রায় পাওয়া যায়,এদেশের মাটিতে তখন লিফলেট,চিরকুট হারকিউলিসের উত্থান ঘটে।হায়!এ কোন স্বাধীনতার স্বরুপ উন্মোচিত হল আমাদের ভাগ্যাকাশে।
বহুল আলোচিত সেই মেয়েটির কথা মনে পড়ছে,নেশার দুরন্ত বেহায়াপণা যাকে খুনি হতে বাধ্য করেছিল,আনন্দ,আহলাদ আর উল্লাশের উন্মত্ততা,পিতা মাতার গলা কেটে তবেই খান্ত হয়েছে।এমন করেই ঘরে ঘরে,এক একটি সাপ তৈরি হচ্ছে দিনকে দিন।নেশার এ ঘৃণ্য জগতে আজ,ছয়লাব হয়ে গেছে উপরতলা থেকে বস্তির খুপড়ি ঘর।আজ পত্রিকার প্রথম পাতায় স্থান পায়,সে আসলে গর্ভবতী নয়,তার পেট ভর্তি ইয়াবা নামক মরণ বিষ।
১৯৯৯সাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসি চত্বর,২০১২ সাল ওই একই স্থান,পরের বছর পহেলা জানুয়ারি চট্টগ্রাম,ভী্নদেশি বিজাতীয় সংস্কৃতির উল্লম্ফন তার প্রকৃত চরিত্র দেখায়।চাপেটাঘাত করে বাঙ্গলী স্বাধীনতার আত্ন সমভ্রমী বদনে।থার্টিফাস্ট নাইটের কথা বলছিলাম-মদ্যাপ যুবকেরা বাঁধনের শ্লীনতা হানি করেছে,স্বামীর সম্মুক্ষে স্ত্রীর শরীরে শকুনের থাবা পড়েছে,বন্দর নগরীর হোটেলে হোটেলে এদেশের অর্ধশতাব্দির সতীত্ব হরণ করেছে।থার্টিফাস্ট নাইটের সংস্কৃতির লালায়ীত স্বপ্ন পুরনের জন্যই কি এ দেশের স্বাধীনতা?
যদি বলতে থাকি,যদি অকপটে স্বীকার করা যায়,যদি প্রকৃত সত্য সম্মুক্ষে আসে,যদি উন্মোচিত হয় এ দেশের অতিত থেকে বর্তমানের স্বরুপ ভাশুর কর্তাটি,হায়!স্বাধীনতা শব্দটি ক্ষীন হয়ে আসছে,বিকৃতির অন্ধকারে ছুটতে শুরু করেছে,সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে শুধুমাত্র একটি দিবস পালনের মধ্যে।আমি এই দিবস চাই না,অবারিত স্বাধীনতা চাই,যার মধ্যে নিহিত নেই বেওয়ারিশ লাশের গন্ধ,চলন্ত বাসের অবাধ্যতা,ধর্ষনের সেঞ্চুরি,ঘুষ,দূর্নিতি,অবিচার,মিথ্যাচার।আমি চাই না পাশ্চাত্যের হারকিউলিস এদেশের ঘাড়ে চেপে বসুক।চাই না নষ্ট স্বাধীনতার চক্করে গুল্লায় যাক আমার পূত-পবিত্র স্বাধীনতা।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
নাজমুল হুসাইন ধন্যবাদ দাদা,উদ্দিপনা মূলক মন্তব্যের জন্য।আপনিও আপনার লেখায় সাহসীকতার পরিচয় দিয়ে থাকেন।
মোঃ নুরেআলম সিদ্দিকী এ যেন এক বিদ্রোহী লেখা। কোন ভয় না করে নির্বাকভাবে চমতকারভাবে সব তথ্য তুলে ধরেছেন। আসলে লেখকদের ভয় পেতে নেই। যদি ভয় হয়, তাহলে লেখক হতে বলছে কে? যাক সেদিকে যাচ্ছি না, তব এয়ামি যেটা বলবো- স্বাধীনতার বুকে যেটি জন্ম নিয়েছে সেটি মানবজাতির কলংক। এই স্বাধীনতার চেয়ে পরাধীনতার হাতে লাথি- চড় খাওয়া খারাপ কি ছিল? সুতরাং আমরাও স্বাধীনতা চাই, যার মধ্যে নিহিত নেই বেওয়ারিশ লাশের গন্ধ,চলন্ত বাসের অবাধ্যতা,ধর্ষনের সেঞ্চুরি,ঘুষ,দূর্নিতি,অবিচার,মিথ্যাচার।আমি চাই না পাশ্চাত্যের হারকিউলিস এদেশের ঘাড়ে চেপে বসুক।চাই না নষ্ট স্বাধীনতার চক্করে গুল্লায় যাক আমার পূত-পবিত্র স্বাধীনতা। চমতকার একটি লেখার জন্য অনেক শুভ কামনা ও ভোট রইল।।
হুমায়ূন কবির অসাধারন! মুখে মুখে স্বাধীনতা! আর বাস্তবতায়
বিশ্বরঞ্জন দত্তগুপ্ত নতুন আঙ্গিকে সুন্দর লেখনী । ভাল থাকবেন ।
শ্রাবনী রাজু সুন্দর কবিতা ।
প্রিয় পাঠক বন্ধু,এটা আসলে কবিতা নয়,প্রবন্ধ ছিল।ধন্যবাদ।
ঝরনা আক্তার দারুন লাগল । ধন্যবাদ।
রণতূর্য ২ সুন্দর লিখা।স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করাই কঠিন। আমার পাতায় আমন্ত্রন রইল।সময় পেলে ঘুরে আসবেন।
বহতা নদী মানুষের স্বাধীনতাহীনতার গল্প আপনি নিপুনভাবে তুলে এনেছেন। বিষাদে আচ্ছন্ন হলাম পড়ে।

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

স্বাধীনতা নিয়ে সবাই সুন্দর সুন্দর গল্প লিখবে।এই স্পেশাল সংখ্যায় আমি একটু ভিন্ন আঙ্গিকে লেখার চেষ্টা করলাম।আশা করি পাঠক যথার্থ ভাবেই লেখাটী গ্রহণ করবেন।ধন্যবাদ।

২৯ সেপ্টেম্বর - ২০১৬ গল্প/কবিতা: ৩৭ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪