চারু

উষ্ণতা (জানুয়ারী ২০১৯)

নাজমুল হুসাইন
  • ৩৮
সপ্তম ব্যাজ ২০১৬। স্কুল পেরিয়ে কলেজের গন্ডিতে পদার্পন।অনিল,অংকুশ,জয়াকে ছেড়ে চলে আসতে হল।না এসেই বা উপায় কি?হঠাৎ করেই বাবার বদলী হয়েছে এবার।অচেনা জায়গা,অচেনা মুখ।এ আর নতুন কি?বাবার চাকরির কল্যানে বহু স্কুলে পড়ার সুজোগ পেয়েছি।প্রতি বছরই পুরাতনকে ছেটে ছুটে নতুনকে নিয়েই খুশি থাকতে হয়।কিন্তু এবারের বিদায়টা কেমন যেন,মনে দাগ কেটে যায়।পুরোনো বন্ধুদের জন্য মাঝে মধ্যেই শুন্যতা অনুভব করি।মন চায় ওদের সাথে আবার স্কুল পালিয়ে কৈশর মনটা রাঙিয়ে সুখ খুজে বেড়াই।কিন্তু সময়ের যুদ্ধে অতীতকে হারিয়ে ভবিষ্যতের বুকে স্বপ্ন বুনতে হয় প্রতিবছর।এ বছরও তাই হল।সুতরাং মেনে নেয়া ছাড়া উপায় কি?
এবার শিফট হয়েছি মোবারক গঞ্জ।মফসসল এলাকা,ঝিনাইদহের কালিগঞ্জ উপজেলার আরেক নামই হল মোবারক গঞ্জ।ভর্তি হলাম মাহতাব উদ্দিন ডিগ্রি কলেজে।এলাকার সব চেয়ে বড় কলেজ এটি,পড়ালেখার মান ও ঈর্শনীয়।আসন সংখ্যা নির্ধারিত বিধায়,ভর্তি পরিক্ষা দিয়ে চাঞ্চ পেতে হয় এই কলেজে।খুব সহজেই ভর্তি পরিক্ষার প্যাড়া কাটিয়ে উঠলাম।শুরু হল নিয়মিত ক্লাস যাত্রা।রঞ্জু নামের একটা ছেলের সাথে খাতির হয়েছে অলরেডি।দুই এক দিনের মধ্যেই ও খুব ভালো বন্ধু হয়ে গেল।স্কুল জীবন থেকেই ভালো ছাত্রের তকমাটা গায়ের সাথে লেপ্টে আছে।এস এস সি তে গোল্ডেন জিপিএ ফাইভ তার প্রমাণ।কলেজ্ জীবনে এসেও সুনামটা অক্ষুন্ন রইলো।সহপাঠি আর ক্লাস টিচার আমার জাত চিনতে সক্ষম হয়েছে।অতি অল্প সময়েই সকলের প্রিয়পাত্রে পরিনত হলাম।নতুন সব বন্ধু তৈরির প্রক্রিয়ায় পুরোনদের জন্য আর মন খারাপ হয় না।কলেজ জীবনে প্রবেশ করার পর থেকেই জীবনের গতি অতি দ্রুত মোড় নিতে শুরু করেছে।চির চঞ্চল একটা ছেলে হঠাৎ করেই কেমন যেন গুটিয়ে সুটিয়ে যেতে লাগলো।লজ্জাবতী ফুলের মত লজ্জার বাহার এসে তাকে মুড়িয়ে দিতে শুরু করেছে।তনুর অস্বাভাবিক লোমকূপ গুলো বড্ড দুঃশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে তাকে।বাবার লেজারের সাহায্যে প্রথম পরিচ্ছন্নতা অভিজান বেশ রক্তাক্ত আচড়ে পরিসমাপ্ত হল।পাশের বাসার ফালগুনি আপার বাকা চোখে ভেঙচি কাটা দেখলে ধড়াস করে ওঠে বুকের মধ্যে।যত বার দেখা হয় ততোবার হার্টবিট বেড়ে যায় দ্বিগুন।ইদানিং নিতম্ব ঘুরিয়ে সাম্মুখ দিয়ে যাতায়াত ঢের বেড়ে গেছে তার।দিনমানের অদ্ভুত সব দৃশ্য স্বপ্নে এসে ভীষণ ভাবে শাষন করতে শুরু করেছে।ধাক্কা দিয়ে গভীর সমুদ্রে ফেলে ছান করিয়ে তবেই ছাড়ে। ঘুমের মধ্যে নাইট ড্রেস ভেজার রীতি চালু হয়েছে বেশ ঘটা করে।ইদানিং শিতের ঠান্ডা পানি প্রায় প্রতিরাতেই গোসল করাতে শুরু করেছে।সর্দি গর্মী লেগে দফা সারা হবার উপক্রম।গভীর রাতে উঠে চুপি চুপি স্নান করতে গেলে বাবা প্রায়ই টের পায়।সকালে নাস্তার টেবিলে বসে মিটিমিটি হাসে।লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছা করে,মাঝে মধ্যে পরামর্শ দিয়ে বলে কোলবালিশটা বাদ দিয়ে ঘুমোবার অভ্যাস কর,সব ঠিক হয়ে যাবে। বিব্রতকর অবস্থায় এক প্রকার চিল্লা চিল্লি করে বাবাকে থামাতে হয়।
আমাকে মানুষ করতে গিয়ে জীবনে অনেক সেক্রিফাইজ করতে হয়েছে তাকে।জন্ম নিয়ে মাকে দেখার সৌভাগ্য আমার হয় নি,কিন্তু বাবাও তার অভাব বুঝতে দেয় নি কোনদিন।দ্বিতীয়বার বিয়ে না করেই জীবনটা কাটিয়ে দিল।আমার লাইফের সব চেয়ে কাছের বন্ধু কিন্তু আমার বাবা।তার কাছে নির্দিধায় সব কিছু শেয়ার করা যায়।
স্কুল জীবনে অন্তর্বাস কি জিনিস বুঝতাম না।এ বাসার কাজের বুয়া বুবলি সেদিন আমার সেলফ গুছিয়ে দিচ্ছিল।হঠাত করেই তার সুউচ্চ বুকের উপর নজর পড়লো।অর্ধ খোলা ব্লাউজের ফাঁক গলে যেন পূর্ণিমার চাঁদ উঠেছে।জীবনে প্রথমবার কোন নারীর অর্ধ নগ্ন বুক দেখলাম।আঙ্গিক সোন্দর্যের রুপ বৈচিত্র আমাকে ভড়কে দিল।মুহুর্তেই তেড়ে ফুড়ে উঠল দ্বিতীয় পুরুষ।কেমন যেন অস্থির আর কম্প দিয়ে উঠেছে শরির।আমার দিকে তাকিয়ে ঠোট কামড়ে ধরে বলল অমন করে কি দ্যাখেন গো বাবু?দুধ যে ঠান্ডা হয়।এর পর কোমরটা বাকিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল সে।টেবিলের উপর রাখা গ্লাসের দুধ সত্যিই ঠান্ডা হয়ে গেছে।সে দিনের পর থেকে বিনা কারনে সময়ে অসময়ে আমার দ্বিতীয় পুরুষটা ঘুম থেকে ঘন ঘন জেগে উঠতে লাগলো।চুরি করে তার সৌন্দর্য দেখার নেশা আমাকে এক প্রকার পেয়ে বসেছে।রঞ্জুকে ডেকে প্রতিকারের উপায় জানতে চাইলাম।আমার কথা শুনে হাসতে হাসতে উলটে পড়লো।ওর হলদে দাঁতের হাসি দেখলে ঘেন্না ধরে যায়।অবশেষে হাসি থামিয়ে আমাকে অন্তর্বাস তথ্য প্রদান করলো।
–অন্তর্বাস কি?
আবার হাসি।মাত্রাটা আগের চেয়ে ঢের বেড়ে গেছে।
-অন্তর্বাস চিনিস না?জাঙ্গিয়া চিনিস তো?
-হা।
-ঐটারই ভদ্র নাম অন্তর্বাস।
স্থীর করেছি সমস্ত লজ্জা ভেঙে বাবাকে পোষাকটার কথা জানাতে হবে।
বাসায় ফিরে আলমারি খুলে অবাক হলাম।এক ডজন অন্তর্বাস!গন্ধ শুকে মনে হল এই মাত্র কিনে আনা হয়েছে।মনে মনে বাবাকে ধন্যবাদ দিলাম।সেদিনের পর থেকে দ্বিতীয় পুরুষটা বেশ নিরাপদেই আছে।কাজের বুয়া বুবলী প্রথম প্রথম বেশ ইতঃসত বোধ করলেও,ইদানিং খ্যায়াল করেছি সেও আড়ালে আবডালে আমার অপেক্ষায় থাকে।
প্রায় তিন মাস হল কলেজ জীবন অতিবাহিত হয়েছে।বায়োলজির চারু ম্যাডাম ট্রেনিং শেষে ফিরে এসেছেন। যদিও তাকে আমি এখনো দেখি নাই।কিন্তু এত বার তার নাম শুনেছি যে তাকে চেনা পরিচিতই মনে হয়।শুনেছি কলেজের সব চেয়ে কড়া আর খ্যাপাটে টিচার উনি।টিফিন পিরিয়ডের পর তিন নাম্বার ক্লাসটা চারূ ম্যাডামের।দুই নাম্বার ঘন্টাটা বাজার সাথে সাথেই পেটটা মোচড় দিয়ে উঠলো।দৌড় দিলাম সোজা বাথ রুমে।মিনিট পাঁচেক পরেই ক্লাস রুমে ঢুকলাম।পেছন থেকে ককর্শ গলায় খেকিয়ে উঠলো ম্যাডাম।
-এই ছেলে,ইউ,ইয়েস ইউ,কাম হেয়ার।
-ইয়েস ম্যাম।
-হু আর ইউ?
-জিয়ান।
হাত পায়ে কম্পন শুরু হয়েছে।এত ভয়ংকর কন্ঠ স্বরের ম্যাডাম,জীবনে প্রথমবার দেখলাম।কপাল ভালো যে আগেই বাথরুমটা সেরে এসেছি,নইলে ক্লাসরুমটাই ভিজে যেত।
-সো হয়ার আর ইউ?
-টয়লেট।
-লেটার অন,ইট ওয়াজ ফরবিডেন টু গো আউটসাইড মাই ক্লাস।
-ওকে ম্যাম।
- ননসেন্স,গো টু ইউর সিট।
কড়া ধমকে মনটা সম্পূর্ন বিষিয়ে উঠলো।পাক্কা দুই বছর এমন একটা রুক্ষ মহিলার ক্লাস করতে হবে ভেবেই শিউড়ে উঠলাম।বায়লজি ক্লাস করার ফুসরত ফুরিয়ে গেল নি্মেষেই।পুরো ক্লাস জুড়ে মনমরা হয়ে বসে রইলাম।ঘন্টা বাজতেই বকর বকর থামলো।হাঁফ ছেড়ে যেন বাঁচলাম।ক্লাস শেষে সহপাঠীরা আমাকে নিয়ে মজা করলো খানিক ক্ষন।শেষ ক্লাসটাতেও মন বসাতে পারলাম না সেদিন।
বিকালে রঞ্জু্র সাথে সাইকেল নিয়ে বের হলাম।শিকদার কলোনির গেট পার হয়ে ছয় নাম্বার বাড়ির সামনে যেতেই দোতলার বারান্দা থেকে কন্ঠ ভেষে এলো।উপরে তাকাতেই দেখি চারু ম্যাডাম!রঞ্জু সাইকেল থেকে নেমেই দিল ভোদৌড়।সোজা দাঁড়িয়ে পড়লাম আমি।আগে জানা থাকলে এই গলিতে ভুলেও পা মাড়াতাম না। এসে তো পড়েছি,এই মুহুর্তে কি করা উচিৎ?তড়িৎ সিদ্ধান্ত নেওয়া চাই,কাজের কাজ কিছুই হল না,তার আগেই ডাক এলো জিয়ান উপরে এসো।প্রথম সাক্ষাতেই মনে হয়েছিল ভয়ংকর রাগী মহিলার সম্মুক্ষে যত কম পড়া যায় ততটাই মঙ্গল।
-জিয়ান তোকে বলে দিচ্ছি শোন,ভুলেও যেন দ্বিতীয়বার তার সামনে পড়বি না।খ্যাপাটের হাতে পড়েছিস।
মনকে তাড়া দিয়ে বলেছিলাম ভয় দেখাস না।ওসব বদরাগী মহিলার ক্লাস না করলেই তো হয়,কি করবে আমায়?
-করবি করবি ক্লাসও করবি নাকানি চুবানিও খাবি।
-খাই খাব তাতে তোর কি?
-আমার আবার কি?সতর্ক করে দিলাম তোকে,সবধানের মাইর নাই।
- আমাকে নিয়ে না ভাবলেও চলবে,ফালতু কোথাকার।
-যখন ঠেলায় পড়বি তখন আমায় ডাকিস,তোকে কচু দেখাব।
ভাইরে সকাল গড়াতে না গড়াতেই তো বিপদে পড়ে গেলাম।এখন কি করি?
-কি আর করবি?নিজেরটা নিজেই সামলা,আমি আমার চরকায় তেল মারি।
-সরি সরি এবারের মত হেল্প কর,নেক্সটে তোর সব কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করব।
-সময় শেষ আপাতত দোতলায় যা।
-কি হল তোমাকে বললাম উপরে এসো?
-জি ম্যাডাম আসছি।
সাইকেল রেখে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে উঠতে মনকে ইচ্ছা মত গালি দিলাম।জীবনে আর কখনো তোর হেল্প চাইব না,ব্যাটা সার্থপর।
গেইট খুলে দরজায় দাঁড়িয়ে আছেন চারু ম্যাডাম।আমাকে দেখেই মিষ্টি করে হাসি দিলেন।এই প্রথমবার তার চোখে চোখ পড়লো।লজ্জা পেয়ে চোখটা নিচে নামিয়ে ফেললাম।সকালে যার ক্লাস করেছি দজ্জাল মহিলা একটা,আর এখন যাকে দেখছি মায়াবতী রাজকন্যা।অভদ্র আচরণ কাকে বলে সে যেন জানেই না।ফের তাকালাম তার দিকে,মিষ্টি হাসির এঁটে এখনো লেগে আছেক মুখে।কিন্তু কেন যেন মনে মনে আরো বেশি ভয় অনুভব করলাম।
-কি হল দাঁড়িয়ে আছো কেন?এসো ভিতরে এসো।
ভয়ে ভয়ে ম্যাডামের সাথে ভিতরে প্রবেশ করলাম।পাশের রুম থেকে পাঁচ বছরের একটা ছেলে দৌড়ে এলো।হাতের ক্রিকেট বলটা আমার দিকে ছুড়ে মেরে বলে উঠলো ক্যাচ ইট।বাম হাতে ক্যাচটা লুফে নিয়ে,তার দিকে তাকিয়ে হাসির ভান ধরলাম।ম্যাডামের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো ফ্রেন্ডস?
-ইয়েস।
-ওকে নো প্রবলেম।দৌড়ে এসে আমার হাত ধরে বলল লেটস গো।
-কোথায়?
-কোথায় আবার আমার রুমে।
বেশ বিরক্ত আর বিব্রত বোধ করতে লাগলাম।ম্যাডাম বোধ হয় লক্ষ করেছেন।
-যাও না,ও খুশি হবে।
আগত্যা বাধ্য হয়ে বিচ্ছুটার সাথে যেতে হল।মায়ের মতই পন্ডিত টাইপের কথা বার্তা আর কি।নাম জিজ্ঞেস করলে বলে কেন আম্মি তোমাকে বলে নি?ঘাড় নেড়ে জানালাম না।
-ওকে,আম্মিকে বকে দেব।তূর্য।
-কে?
-কে আবার আমি।
-ও নাইচ নেম।
কয়েক মিনিটের মধ্যেই বিচ্ছুটার সাথে সত্যিকারের ফ্রেন্ডশিপ হয়ে গেল।এরই মধ্যে ম্যাডাম স্যূপ রান্না করে এনেছেন।এই খাবারটা আমার অপছন্দের তালিকায় এক নাম্বার।কিন্তু সেটা গলধকরণ করতে হল। বিপদে পড়লে গরলও ঢোক ঢোক করে গিলতে হয়,তাতে মরণ দ্রুত এসে মামলা খতম করে দেয়।যাই হোক সেদিন তার সাথে নানা বিধ বিষয়ে কথা হল।বেশির ভাগ প্রশ্ন সেই করলো,আমি কেবল হ্যা না করে উত্তর দিয়ে গেলাম।দ্বিতল বাড়িতে থাকেন কেবল ম্যাডাম আর তূর্য।জানতে পারলাম তূর্যের বাবা ওর জন্মের পূর্বেই রোড এক্সিডেন্টে মারা গেছেন।
ত্রিশ ছুই ছুই একটা মহিলা।দেখলে মনে হয় সবে ষোল।আমি তো ভেবেছিলাম,তার বিয়েই হয় নি।অথচ দিব্বি পাঁচ বছরের একটা ছেলে আছে তার।সত্যি কথা বলতে এত সুন্দরী নারী ফার্স্ট দেখলাম।প্রথমবার দেখলে যে কারো মাথা ঘুরে যেতে পারে।কিন্তু সমস্যা হল,সে যতটা না সুন্দর তার চেয়ে ঢের বদরাগী।যদিও বাড়িতে এসে রাগের ছিটে ফোটাও লক্ষ্য করলাম না।
মনের সাথে কথা বলার অভ্যাস বহুদিনের,একলা থাকলে,বিপদে পড়লে,সুখের দিনে,দুঃখের দিনে সেই আমাকে সংগ দেয়।সে আমার দুই নাম্বার প্রিয় বন্ধু।প্রথম জন আমার বাবা।খুব সম্ভবত তিন নাম্বার প্রিয় বন্ধুটা পেতে যাচ্ছি।দ্বিতীয় বন্ধুটার খবর কেউ জানতো না।চারু ম্যাডাম প্রথম দিনেই টের পেয়েছে,আমি একা একা কার সাথে যেন কথা বলি।প্রশ্নটা তুলতেই তূর্য বলে উঠলো,তুমিও কি আম্মির মত ছবির সাথে কথা বলো?কথাটা শুনতেই কেমন যেন বিষাদে ভরে উঠলো মনটা,ম্যাডামের মুখটাও কালো হয়ে গেছে।সুতরাং তড়িঘড়ি করে বিদায়ের জন্য প্রস্তুত হলাম।বিদায় পর্ব সেরে সিঁড়ি দিয়ে নামছি,হঠাৎ মন ফাজিলটা বলে উঠলো,আজকের মত তোকে বাঁচিয়ে দিলাম।আমি অবাক হয়ে বললাম ও এসব তাহলে তোমার কারসাজি?
পরদিন ক্লাসে আবার তার সেই রুদ্র মূর্তি,খ্যাপাটে ভাব,ভয়ংকর ব্যবহার দেখে হতবাগ হলাম।গতকাল যার বাসায় গিয়ে সারা বিকেল পার করলাম গল্প করে।আজ তার ভাব দেখে মনে হচ্ছে চেনেই না!কলা ও টিস্যুর মধ্যে পার্থক্য মুখস্ত বলতে গিয়ে একটু তো তো করাতে আমাকে ক্লাস থেকে বেরই করে দিল!এতটাই রাগ হল যে মনে মনে তার গুষ্ঠি উদ্ধার করতে লাগলাম।কেমন আক্কেল জ্ঞান,যে এত বড় একটা ছেলেকে সামান্য পড়ার জন্য ক্লাস থেকে বের করে দেয়?হঠাৎ করেই মন ফাজিলটা খিল খিল করে হাসতে শুরু করলো।
-কিরে ভ্যাবলা কান্ত হাসছিস কেন?
-কাল বলে ছিলাম না,মজা পরে টের পাবি।
-তুই শালা একটা বেইমান।এমন করে অপমান করালি?
-কাজের মেয়ে বুবলি আর ফাল্গুনির শরির দেখার শাস্তি এটা।
-ভাই কান ধরছি জীবনে আর কু নজর দেব না।এবারের মত বাঁচা।
-ঠিক বলছিস তো?
-হান্ড্রেড পারসেন্ট।
পাক্কা ৪০ মিনিট ক্লাসের বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকতে হল।চারু ম্যাডাম ক্লাস থেকে বেরিয়ে যাবার সময় খবিশ বলে গালি দি্যে গেল।খবিস একটা গালি এটা জানা আছে,কিন্তু মানে টা জানি না।রাতের বেলা বাবার কাছে খবিশ শব্দের মানে জানতে চাইলাম,তিনি হাসতে হাসতে বললেন কিরে কোন মেয়ের পাল্লায় পড়েছিস?
-মানে?
-বলছি কোন মেয়ের পাল্লায় পড়েছিস?
-মানে জানতে চাইছি মানে বলো।ফাউল কোসচেন করো না।
বাবা রেগে গিয়ে বললেন যা যা যার মুখে শুনেছিস তাকে গিয়ে জিজ্ঞেস কর।
-তুমি বলবা না?
-না।
-তুমি বলবা না?
-না।
-ঠিক আছে,সুজোগের অপেক্ষায় থাকলাম।আমিও ছেড়ে কথা বলব না।
সোফার বালিশটা বাবার দিকে ছুড়ে,মেরে হন হন করতে করতে ঘরে ঢুকে গেলাম।বাবা খিল খিল করে হাসতে লাগলো।বাবাকে এই প্রথম এমন প্রাণ খুলে হাসতে দেখলাম।দুঃখ হল আমাকে কেউ খবিশ বলে গালি দিল,আর সে কিনা ইনজয় করছে!রাতে অবশ্য মন ফাজিলটা এসে বলে গেল,ওরে গাঁধা এই গালিটা তোর মাও মাঝে মধ্যে তোর বাবাকে দিত।খবিশ শব্দের মানেটা সেও জানে না।শুধু জানে ওটা মেয়ে লোকের বুলি।
প্রতিনিয়ত অপদস্ত হতে লাগলাম চারূ ম্যাডামের ক্লাসে।অথচ তূর্যের সাথে মধুর সম্পর্ক বহুদূর গিয়ে পৌছেছে।ওকে না দেখলে কেমন যেন শুন্যতা অনুভব করি।বিচ্ছুটাও আমার বেশ ভক্ত হয়েছে।কিছুদিন যেতে না যেতেই আমাকে সুপারম্যান বলে ডাকতে শুরু করেছে।আমি নাকি তার ক্রিস্টোফার রিভ,ঘুমের মধ্যে স্বপ্নে আমার সাথে উড়ে বেড়ায়।ওকে চুপি চুপি জিজ্ঞেস করেছি তোমার সাথে আর কে উড়ে বেড়ায়?সোজা সাপটা জবাব আম্মি।
-আর কে?
-তুমি,আমি আর আম্মি।
-তোমার বাবা?
-না সে থাকে না,তুমি থাকো।
-যদি আমি না থাকি?
-ভেরি ব্যাড।
-কেন?
-সুপারম্যান কাউকে ছেড়ে যায় না।
তূর্য ইদানিং আমাকে ছাড়া কিছুই বোঝে না।আমার সংগ পেলেই যেন ও খুশি।তৃতীয় নাম্বার বন্ধুর জায়গাটা ওর জন্যই ফিক্সড হল।অবশ্য ওর মা চারুকেও ভালো লাগতে শুরু করেছে,যদিও ম্যাডাম চারুকে চরম ভাবে ঘৃণা করি।তাকে দেখার পর থেকে বুবলি আর ফাল্গুনি আপার কথা নির্দিধায় ভুলে গেছি।এখন যার উষ্ণ ছোঁয়ার খপ্পরে পড়ে নিদ্রাপাত হয়,সে আর অন্য কেউ নয় চারু।তার সংগ যেন সব সময় ইশারায় ডাকে,তার উষ্ণতার ছোঁয়ায় সাঁতার কাটতে ইচ্ছা করে,ডুবতে ইচ্ছা করে প্রেম সাগরে।সুতরাং চাঞ্চ পেলে অন্তরঙ্গ বন্ধুর চার নাম্বার সিটটা তার জন্যই খালি করে দেব।
মন ফাজিলটা ইদানিং খুব বেশি ডিসর্টাব শুরু করেছে।সাত-পাঁচ নিয়ে হাজির হয় সবসময়।ওসব বুঝি আমি জানি না?বলে কিনা তোর ম্যাডাম,ওরে বেকুব,তোর ম্যাডাম।যদি একবার জানতে পারে,বারোটা বেজে যাবে। আমি কিন্তু কিছুই করতে পারব না,রং রোড থেকে ফিরে আয়,সময় আছে।মজা লুটার জন্য কাজের বুয়া বুবলি আর পাশের বাড়ির ফাল্গুনি আপাই ঠিক ছিল।
প্যাড়াটাকে কি দিয়ে যে বোঝাই!দেখা দেখির দিন শেষ।ফালতু চিন্তা বাদ দিয়ে আপাতত প্রেমে পড়েছি।বকর বকর না করে পারলে তাকে জানিয়ে দে,আমি তাকে ভালোবেসে ফেলেছি।কথায় কথায় যেন ম্যাডামগিরী না ফলায়।আর আমার সামনে পারলে কম আসবি।যত কম আসবি ততই তোর জন্য মঙ্গল,নইলে কেলিয়ে দেব কিন্তু।
-গেছে,গেছে সব গেছে, মাথা পুরাটাই শেষ!শালা ভীমরতি্তে ধরেছে না?দাড়া দেখাচ্ছি মজা।
-যা যা,পারলে ছিড়ে নিস,হিংসুক কোথায়কার।হিংসায় কলজে জ্বলে যাচ্ছে?
-তোকে এমন শিক্ষা দেব বাপের নাম ভুলে যাবি।এর পর আমার পায়ে এসে পড়বি।তখন দেখব তার ছেড়া তোর মরদ কোথায় যায়।
মন ফাজিলের কথায় কান দেয়ার সময় খুব বেশি নেই।ওকে পাত্তা দেয়া মানেই,লেজে গোবরে সব একাকার হয়ে যাবে।তার চেয়ে ঢের,এখন থেকে সব সময় ওর থেকে দূরে দূরে থাকতে হবে।ও আমার বন্ধু হলে কি হবে ইদানিং খুব হিংসামু শুরু করেছে।
লম্বা,পাতলা,হ্যাংলা,ছিপছিপে তনুতে এত ঝাল থাকতে পারে জানা ছিল না,তার লম্বা চুলের সুগন্ধি আর চায়ে চুমুক দেয়া ঠোট শিং মাছের কাটার মত আমাকে ঘাই মারে ক্ষনে ক্ষনে।অথচ কলেজে গেলে একই নারীর সর্পীনি রুপে আহত হই যাচ্ছেতাই ভাবে।পরাণ টানের এ খেলায় ডাক পেয়েই মাঠ ছাড়তে হয় মুহুর্তেই।আবেগ আর ভালোবাসা তার বাপ মাকেও ছাড়ে না তখন।ইচ্ছা মত ঝাড়তে থাকি নিশ্চুপে।দু একদিন হলে মানা যায়,তাই বলে নিত্য দিনের ঘটনা?বাড়িতে জল কলেজে অনল।প্রথম সেমিষ্টার পরিক্ষায় যন্ত্রণার অনলে নতুন করে ঘি ঢেলে দিয়েছে অদ্ভুত প্রাণীটা।বায়োলজি পরিক্ষায় একমাত্র স্টুডেন্ট হিসাবে ফেল করেছি।ফেল করবারই তো কথা ছিল?খাতা ভরে প্রেম পত্র লিখলে কপালে কিইবা জুটতে পারে?শুধুকি ফেল?তার সাথে অন্য উপহারও আছে।হুমকি ধামকি,গালি গালাজ,সব ফ্রিতে পেয়ে গেলাম।অপমানের ষোলকলা পূরণ হয়ে গেল।বাড়িতে যেতেও নিষেধ করে দিয়েছে এবার।রাগে আর ক্ষোভে ইতমধ্যে তার ক্লাস পরিত্যাগ করেছি।এতদিন শত অপমান সত্বেও এক অজানা টানে বার বার তার বাড়িতে ছুটে যেতাম।কেন যেন মনে হত আমাকে দেখার জন্য সেও অপেক্ষা করে।চুপি চুপি স্পেশাল সিটটা তার জন্য খালি করেছি।শুন্যস্থান পূরণ করার সাহস নাও হয়ে উঠতে পারে,তাই ভাবলাম পরিক্ষার খাতাকেই এবার প্রেম পত্র বানাব।
আসলে সব ব্যাটা মন ফাজি্লের কর্মকান্ড।সকালে এসে ঘুম থেকে টেনে তুলে,কলেজে যাবার জন্য পীড়াপিড়ি শুরু করেছে বেয়াদপটা।ইচ্ছামত ধোলাই দিলাম বাদরটাকে।খাটের উপর বসে পা নাচিয়ে নাচিয়ে হাসতে লাগলো শত্রুটা।কিযে বিশ্রী হাসি!পেত্নীও ওর চেয়ে ভালো হাসতে জানে।এত লোক থাকতে কেন যে ওকে বন্ধু বানিয়েছি!
-এবার খুশি হয়েছিস?
-বলেছিলাম না,ফিরে আয়,আসলি না,আমার কথা শুনলি না।এবার হল তো?
-তাতে কি হয়েছে,তুইতো হ্যাপি হয়েছিস।
-আমি তো সব সময় হ্যাপি।
-বুঝেছি যত নষ্টের গোড়া তুই,তোর কারনেই সব গুলিয়ে যাচ্ছে।
-আমাকে দোষারোপ করছিস কেন?ম্যাডাম পটাতে পারিস নি তাই?
-ম্যাডাম পটাতে পারি নি মানে?শালা ভাগ এখান থেকে ভাগ।
ইচ্ছামত গালি গালাজ করে জোরপূর্বক তাকে বিদায় করলাম।একদমই তাকে দেখতে ইচ্ছা করছে না। কিন্তু ব্যপারটা কি?সে আজ মহা খুশি।আমার কথায় কিছু মনেই করেনি।
কিশোর ছেলেটা হঠাৎ করে এমন যুবক হয়ে উঠবে কে জানে?কোন পাগলের পাল্লায় যে পড়েছিলাম!কেন যে প্রতিদিন ক্লাসে অপমান করা সত্বেও চারুর বাড়ির সামনে গিয়ে দাড়াতাম।সেই বা কেন বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকতো?আমি গেলেই তো বলতো,তুমি এসেছো?উপরে এসো।কত সব চমচম,রসগোল্লার স্বাদ মিশিয়ে আমার সাথে কথা বলতো।গল্প শোনাতো,জীবনের গল্প,হাসি তামাশা করতো,প্রতিদিন নতুন বউয়ের মত করে সাজতো।কি দরকার ছিল এসবের?সকালে মুখের উত্তাপ আর বিকেলে তনুর?যথেষ্ঠ হয়েছে,প্রয়োজনে কলেজ ছেড়ে দেব,এ মুখ আর তাকে দেখাব না।সত্য যখন বলেছি,কাছা মেরে দাঁড়িয়ে থাকব,যা হবার হবে।ম্যাডাম হয়েছে তাতে কি হয়েছে?তাকে কি ভালো লাগতে পারে না?ওসব দ্বিমুখী নিতীর ধার ধারি না।
বেশ কিছু দিন হয় ক্লাসে যাই না।খুব সম্ভবত আর কোনদিন যাব না।সারাদিন শুয়ে বসেই সময় কাটিয়ে দেই।কাজের বুয়া বুবলি সেদিন আমাকে ভড়কে দেবার চেষ্টা করেছে।শারিরিক উষ্ণতায় আমাকে ভরিয়ে দিতে চেয়েছিল।কাজের ফাঁকে আমার মানসীক যন্ত্রণা হয়তবা আঁচ করেছে।কড়া ভাষায় তাকে বলে দিয়েছি ফের এমন করলে কাজই বন্ধ করে দেব।মুখ কালো করে সেই যে গেল আর কাজে আসে নি।অশুভ ক্ষন যখন আসে তখন চারি দিক থেকে ঘণ্টা বাজিয়ে আসে।তাই রান্নার কাজটা আমাকেই নিতে হল।এদিকে বিকালে এসে বাবা জানালো,আগামি সপ্তায় তার ট্রান্সফার।চাটি পাটি সব গুছাতে হবে।হঠাৎ করেই সব কিছু কেমন যেন এলোমেলো হয়ে গেল।আমকে কি সত্যিই চলে যেতে হবে?
সন্ধ্যা থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে।শীতকালে বৃষ্টি,জীবনে প্রথম দেখলাম।সারা রাত ধরে তার তান্ডব লীলা চলতে লাগলো,পরদিন সকাল,সকাল গড়িয়ে বিকাল,আবার সন্ধ্যা নেমে এলো,বৃষ্টি থামে না।দ্রুত রাতের খাবার খেয়ে নিলাম।এর পর মোবাইল ফোনটা সাইলেন্ট করে কম্বলের নিচে প্রবেশ করলাম।স্যাত স্যাতে ঠান্ডায় আমার আবার ঘুম আসে ভালো।ছোট বেলায় যে রাতে প্রসাব করে বিছানা ভিজিয়ে দিতাম,সে রাতে নাকি এত ভারী ঘুম হত,যে ডেকে উঠানো যেত না।বাচ্চা শিশুর মত থাকতে পারলেই বোধ হয়,দুঃশ্চিন্তা সব দূর হয়ে যায়।কষ্টের মাঝে খানিক শান্তি দেবার জন্যই কি অসময়ে বৃষ্টির আগমন?
গভীর রাতে ঘুমের মধ্যে,মনে হল কে যেন আমার কান ধরে টানছে।ব্যথায় ককিয়ে উঠে বললাম কেরে?
-জিয়ান উঠ,উঠ হারামজাদা।
চোখ মুছতে মুছতে তাকিয়ে দেখি ব্যাটা মন ফাজিল।এত রাতে এসে ঘুমের ডিসর্টাব শুরু করেছে।বোধ হয় কোথাও শোবার জায়গা পায় নি,ঠিক কাজ হয়েছে,আমিও ওকে কম্বল দিব না।শীতে ঠণ ঠণ করে কাঁপতে থাকুক।ওর শিক্ষা হওয়া দরকার।
-কিরে এত রাতে ডিসর্টাব করতে এলি কেন?কেউ বুঝি শোবার জায়গা দেয় নি?
- লেকসার পরে দে,আগে বল তোর মোবাইল কোথায়?
-কেন?আমার মোবাইল কোথায় সেটা তোকে বলব কেন?
-আগে ওটা চেক কর বেকুব।
-কেন,চেক করব কেন?
-চেক করতে বলছি,চেক কর।
মন ফাজিলটা চরম নাছোড় বান্দা।দুনিয়াতে আমার দেখা সব চেয়ে ঘাউড়া আর চামার একটা।ওর কথা না শুনা পর্যন্ত ঘ্যানর ঘ্যানর থামবে না। অগত্যা বাধ্য হয়ে,বালিশের নিচ থেকে মোবাইল ফোনটা বের করলাম।আটানব্বইটা মিসড কল!
-কিরে কি দেখলি?
-মিসড কল,চিনি না।কে এতবার ফোন করেছে?
-কে করতে পারে?
-জানি না।
-জানিস না?
-না জানি না।
-বেকুব কোথাকার।আবার বলছি মনে করে দ্যখ।
-অত জিলাপির প্যাচ না মেরে,বলে দিলেই তো হয়।
-অত ঠ্যাকা পড়ে নাই,একেতে হীম শিতল ঠান্ডা,সাথে গাঙ ভাষানো ঢল।তার মধ্যে আবার নাক ডাকা নিশি।তোর ভাগ্য ভালো যে,ঘুম থেকে ডেকে তুলেছি।কাজ উদ্ধার হলেই তো গালি ছাড়া কথা বলবি না।
-বলনা ভাই।এমন করিস কেন?তুইতো জানিস মেজাজ খারাপ থাকলে আমি কি করি।রাগ করিস না ,বলনা প্লিজ।
-বলতে টলতে পারব না,নিজের টা নিজেই দেখে নে।
-কি ভাবে দেখব,কি দেখব?
-জানালা দিয়ে তাকিয়ে দ্যখ।
-চারু ম্যাডাম!
রাতে যখন ঘুমিয়েছি ঝির ঝির করে বৃষ্টি হচ্ছিল।সেটা এখন ঢের বেড়েছে,সাথে বজ্রবিদ্যুৎ।জানালার পার্শে আবছা আলোয় চোখে পড়লো,কালো ছাতা মাথায় দিয়ে একটা নারী ঠায় দাঁড়িয়ে।বিছানা থেকে লাফ দিয়ে সোজা দৌড় দিলাম।বৃষ্টির এক ঝাপটায় ভিজে একাকার হয়ে গেছি,তাতে কিছু এসে যায় না।আমার জন্য যে দাঁড়িয়ে আছে,সে যদি মৃত্যুপুরীতেও দাড়িয়ে থাকতো,আমি ছুটে যেতাম।এক দৌড়ে তার সামনে গিয়ে দাড়ালাম।লাল টকটক করছে চোখ দুটো,মনে হচ্ছে যেন সে কাঁদছে।সর্ব শরীর থর থর করে কাঁপছে।বাতাসের এক ঝাপটায় হাতের ছাতাটা দূরে গিয়ে পড়লো।পরনের কাপড় ভিজে শরিরের সাথে লেপ্টে গেল মুহুর্তেই।নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছি না,চারু এখন আমার সামনে।সে আমার এত কাছে দাঁড়িয়ে,যে তার নিঃশ্বাসের শব্দ স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি।আমাকে ঝাপটে ধরে সে কিনা হুঁ হুঁ করে কাঁদছে!
-ম্যাম আপনি ঠিক আছেন তো?
-প্লিজ আর আপনি বলো না।
-কিন্তু…
-কিছুই শুনতে চাই না।আমি আর পারছি না।
-তা হলে এত অপমান?
-জানি না,কেন ওসব করতাম।তবে বিশ্বাস করো প্রথম দিন থেকেই তুমি বাজিমাৎ করেছো।আমার শিক্ষিকা রুপ,প্রেমিকা রুপের কাছে পরাজিত হয়েছে।তূর্যটাও তুমি ছাড়া কিছু বোঝে না।ওর গায়ে ভীষণ জ্বর,সে তার সুপারম্যানকে দেখতে চায়।সন্ধ্যা থেকেই কান্না জুড়েছে থামাতে পারছি না।সুপারম্যান,সুপারম্যান বলে ছটফট করছে।
- আর তূর্যের মা?
চারু কোন উত্তর করলো না।তার নরম ঠোটের অত্যাচারে কৈশরের শুষ্ক পর্দা উঠেয়ে যৌবনের রোমাঞ্চকর স্বাদ দিয়ে আমাকে খেপিয়ে তুলল।বরফ হয়ে যাওয়া একজোড়া শরীর নিমেষেই তাঁতিয়ে উঠেছে।প্রথমবার অনুভব করলাম চারু আর ম্যাডাম নেই,প্রেয়সী আমার।কারন আমি ওর নরম তনুর উষ্ণতা শুকছি।
হঠাৎ করেই মন ফাজিলটা বলে উঠলো,কাজের কাজ তো হয়েই গেল,পারলে কাল থেকেই আবার আমার গুষ্টি উদ্ধার করিস।লাজ সরমের মাথা খেয়ে বসে আছিস।পাশে কেউ আছে কিনা দেখার দরকার নেই।বলি বেহায়া ছোকরা,দয়া করে,আমি গেলে বৃষ্টিতে ইচ্ছা মত ভিজিস।মন ফাজিলটাকে ধন্যবাদ দেয়া যায় না,সে আমার অদৃশ্য কান্ডারি।ওর সাথে দর কষাকষি করেই জীবন পার করে দেব।তাই চোখ রাঙিয়ে বললাম তুই ভিজছিস কেন?বেহায়া তো তুইও কম না,ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছিস?মন ফাজিলটা এবার সত্যি সত্যিই লজ্জা পেয়েছে!


আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
রঙ পেন্সিল এ ধরনের গল্প আগেও পড়েছি কিন্তু আপনার উপস্থাপননা খুব ভালো হয়েছে। অনেক শুভকামনা।
ভালো লাগেনি ২০ জানুয়ারী, ২০১৯
মোঃ মোখলেছুর রহমান বেশ দিলেন নাজমুল ভাই,ভাবনায় নতুনত্ব,সাবলিল বর্ননা ভাল লাগল।
মোঃ মোখলেছুর রহমান বেশ দিলেন নাজমুল ভাই,ভাবনায় নতুনত্ব ও সাবলিল বর্ভাল লাগল।

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

অসম প্রেমের গল্পে,যৌবন ছুঁই ছুঁই ছেলেটার আবেগ এবং উষ্ণতা সমান তালে সাজিয়ে দিলাম।উষ্ণতার উপলব্ধি পাঠকের জন্য উন্মুক্ত করেছি।আশা করি গল্পটি পড়লে বিষয় সামঞ্জস্যতা পরিলক্ষিত হবে।

২৯ সেপ্টেম্বর - ২০১৬ গল্প/কবিতা: ৩৭ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪