ভাগ্যবান

ঋণ (জুলাই ২০১৭)

নাজমুল হুসাইন
  • ১৫
কত্ত কইরে কলাম ব্যবসাডা ধরো,কিডা শোনে কার কথা,চাইল,নাই চুলো নাই,নিধিরাম সরদার।সুইদে কামাই ওনার হজম হবি না।সৎ! লাত্থি মারি সতের কপালে আমি।মাইয়েডা আমার ভাত ভাত কইরে শুয়ে পড়েছে,ঘুম থেইকে উইঠলে কি কবানে!
আজকে সকাল থেকেই হালাল পাগলার বউ তার উপর প্রচন্ড খেপে আছে।সে কখন থেকে একা একাই স্বামিকে বকে চলেছে।যদিও স্বামি তার সামনেই আছে,কিন্তু প্রতিবাদ করার সাহস সে যেন হারিয়ে ফেলেছে।এক সময় তার বেশ সুন্দর ব্যবসা ছিল।সমাজে তার বেশ নাম ডাকও ছিল,কিন্তু সুধী মহাজন দের পাতা ফাঁদে পা না দেওয়ায়,ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে তার আজকে এ দশা।ব্যবসা গেছে,সম্পদ গেছে,সমাজ তাকে পাগল বানিয়েছে।ওমর আলী থেকে তার নাম হয়েছে হালাল পাগলা।গিন্নির মুখে তক্তা মার্কা বুলি শুনে শুনে,এখন তার গায়ে আর লাগেনা,মাঝে মাঝে বউ তাকে গন্ডার বলতেও ছাড়েন না।সব চলে যায় যাক,মরন আসে আসুক,বিপদ যতই আমাকে হুমকী দেখাক,আমি মাথা নত করব না,হারাম পয়সা আমার চাই না।ওমর আলীর এক কথা।স্ত্রীও যে তাকে সমর্থন করে না,ব্যপারটা ঠিক এমন টি না।কিন্তু অভাব এমন জিনিস ,চাহিদা কারো মুখের বুলি,সততার ধার ধারে না।অগত্যা বাধ্য হয়েই সে স্বামীকে গালাগাল করে,তবে রাগ কমে গেলে সে স্বামীর কাছে মাফ চেয়ে নেয়।স্বামিকে বোঝানোর চেষ্টা করে,
কিছু একটা করো,আমরা তো শেষ হয়ে যাবানি দিকছি।
গম্ভীর হয়ে ওমর আলী ভাবতে থাকে,ইস পাপের কামায় ছাড়া যদি হালাল কামাই করার মত আমার সুজোগ থাকত!অন্যয় অপকর্ম বীহিন সমাজ যদি আমি গড়তে পারতাম,মজুতদার,মুনাফাখোর দের বিষমাখা ছোবল থেকে যদি বাঁচানো যেত নিরিহ অসহায় গরীব শ্রেনির দিন মজুরদের!কিস্তি আর সুদের টাকায় আজ সয়লাব হয়ে গেল অসহায় পরিবার গুলো।আহা-
ইদানিং হালাল পাগলার সৎ পথে কামায় করার পথ গুলো প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে,সমাজ তাকে চায় না,তার নিষেধকে তারা পাগলের পাগলামী বলে আখ্যায়িত করে থাকে।অসহায় গরিব দুখি শ্রেনীর মানুষ তার মুখের এমন সততার বুলি শুনতে চায় না,তারা চায়,ক্ষুধার্ত পেটে একটু খাবার,উলংগ হয়ে যাওয়া উদাম গায়ে এক টুকরো পোষাক,পরে কি হয় সেটা পরে ভাবা যাবে।জন-মজুরি খেটে সামান্য কিছু আয়ের জন্য,সারাদিন হালাল পাগলাকে মহাজনদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াতে হয়।মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে তছ-নছ করে দেই পাপাচারিদের পাতানো ফাঁদ,ইচ্ছা করে আঙ্গুলি দিয়ে দেখিয়ে দেই,দেখো তোমাদের লুটে পুটে খেয়ে,তোমাদের বিবি কন্যাদের চরিত্রহীন করে দিয়ে,তোমাদের সঞচিত সম্পদ ছেঁকে নিয়ে নিঃশ্ব তোমাদের ফেলে দিয়েছে নর্দমার আস্তাকুড়ে।তোমরা ক্রমাগত মুল্যহীন হয়ে যাচ্ছ।সচেতন হও সুন্দর পুর গ্রামের মানুষ।সচেতন হও।

হ্যা গ্রামটির নাম সুন্দর পুর।সুজলা সফলা,শষ্য শ্যামলা বাংলার অন্য সব গ্রামের মতই সুন্দর সরলমতী একটি গ্রাম।এখানে সাধারনত দুই শ্রেনীর লোকের বাস।এক শ্রেনীর মানুষ সম্পদশালী মহাজন শ্রেনীর,অপর শ্রেনী হলো হত দরিদ্র শ্রেনীর।এই দুই শ্রেনীর মাঝে নতুন এক শ্রেনীর উদয় ঘটেছে,যাদের বলা হয় সুদী মহাজন।দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সরলতা আর অভাবের সুজোগ নিয়ে এই সুদী মহাজন তছ –নছ করে দিচ্ছে গ্রাম টাকে।কিন্তু এত কিছুর পরেও তারা যেন এদের কাছে পিতৃ তূল্য!প্রতিবাদ করা তো দূরে থাক,বরংচ তাদের তাবেদারি করেই যেন তারা ব্যস্ত।কিন্তু না ,এক জন মানুষ আছে,যে তার অস্তিত্ব পাইকারী হারে বিক্রি করে দিতে পারে না,একদিকে অসহায় শ্রেনীকে বাঁচানো অপর পক্ষে সু্দী মহাজনদের চক্রান্ত মুছে দেওয়ার জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছে।আর পরিনামের ভয়াবহতায় আজকে সে ওমর আলী থেকে হালাল পাগলা।সমস্ত প্রকার হারাম জিনিসের পক্ষে তার মুখ চলে বলে, ষড়যন্ত্রকারীরা তাকে হাসিচ্ছলে এ নাম রেখেছে।এখন সে এ নামেই পরিচিত সকল মহলের কাছে।পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে আজ দুই দিন যাবত তার বাড়ির চুলায় আগুন জ্বলে না।সাত বছরের মেয়েটা ক্ষুধার যন্ত্রনায় কান্নাকাটি করে ঘুমিয়ে গেছে ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে,বিবির চোখে হতাশার জল,আলোক শূন্য হয়ে যাচ্ছে যেন ওমর আলীর জীবন।নাহ আর ধৈর্য ধারন করা যায় না,আমি আমার প্রতিপালকের কাছে যাব।তাকে আমার চাই,তাকে আমার চাই,তাকে আমার চাই।
বর্ষা কালের কাঁদা মাটির মেঠোপথ,আনমন হেঁটে চলেছে ওমর আলী।গিন্নীর মুখে আজকে তাকে যে সব কথা শুনতে হয়েছে তাতে বিন্দুমাত্র কষ্ট যন্ত্রনা তার অন্তরে নাই,দুদিন চুলায় আগুন জ্বলে না, তাতে তার খুব বেশি খোভ নাই,কিন্তু অবুজ শিশুটি!ক্ষুধার যন্ত্রনায় তার কাছে হালাল হারাম বাধা হয়ে দাঁড়ায় না,নবীর সাহাবি মোয়াজ (রা) এর কথা মনে পড়ে গেল,নবী তাকে ১০ টা কাজের উপদেশ দিয়েছিলেন,তার মধ্যে তিনটি কাজ ছিল সারা জাহানের উম্মতকে উদ্দেশ্য করে।তোমার উপার্জিত সম্পদ থেকে স্ত্রী সন্তান্দের জন্য ব্যয় করো,তুমি তাদের কে শাসন করো,আর আল্লাহর ভয় দেখাও।
হে নবী এসে দেখে যান,আমার উপার্জনের পথ বন্ধ হয়ে গেছে,স্ত্রী সন্তানকে শাসনের অধিকার আমার হারিয়ে যাচ্ছে,আমি কি তাদের কে আল্লাহর ভয় দেখাই না!চোখের জলে ভেষে যাওয়া নোংরা পোষাক আর কাঁদা মাটি কখন যে একাকার হয়ে কর্দমাক্ত মাটীতে লুটিয়ে পড়েছে,সে ঞান ওমর আলীর নাই।ঞান ফিরে পাবার পর নিজেকে আবিষ্কার করে,সব্দুলের বারান্দায়।এই লোকটা হচ্ছে সুন্দর পুর গ্রামের দ্বিতিয় ব্যক্তি যে কিনা,ঋন প্রদান মালিক সমিতির কাছ থেকে এখনও কোন প্রকার ঋন গ্রহন করে নাই।তার উপরও অত্যাচারির হাত পড়তে শুরু করেছে।নিতান্ত বাধ্য হয়েই নিজের স্ত্রী সন্তানকে,শ্বশুর বাড়ীতে পাঠিয়ে দিয়েছে।নরপশুদের নজর পড়েছিল যে ষোড়শী রুপবতী মেয়েটীর দিকে।
আমি কনে?
আমার ঘরে,ভয় পেয়োনা,ওমর।তুমি জ্বীন পুকুরের ধারে পইড়ে ছিলে,ছেইলে পেইলে তোমারে ঘিরে তামাশা কইরছিলো,আমি নিয়ে আইসেছি।
এতক্ষনে ওমর আলীর সবই মনে পড়েছে,বারান্দা থেকে লাফ দিয়ে উঠোনে নেমে পড়ে সে।মায়েডা আমার না খাইয়ে রয়েছে,আমি গেলাম সব্দুল ভাই।
আরে চিন্তে কইরো না,আমি তোমার বাড়ি গিয়ে তোমার মেয়ের জন্যি খবার দিয়ে এইসেছি,এখন একটু শান্ত হও,তার পরে যাইয়ো।
অগাত্যা আবার বারান্দায় এসে বসে পড়ে ওমর আলী।সব্দুল ভাই এখন আমাগের কি উপায় হবি?
আমরাই জিতবো,তুমি দেইখো,আল্লাহ আমাগের জন্য খাদ্য আর নিরাপত্তা পাঠাবি।
সততা,ন্যয় পরায়নতা,ধৈর্য আর পরহেজগারিতায় এ লোকটাও কম জান না।সুদি মহাজনের সাথে তাদের যে দন্দ তা কেবল মাত্র অবৈধ্য অর্থের ধবংশের জন্য নয়,সেই সাথে অসহায় দরিদ্র সুন্দরপুর গ্রাম বাসির,তিল তিল করে গড়া ভবিষ্যত, রক্ত চোষা জোঁকের হাত থেকে রক্ষা করার প্রচেষ্টা।
সব্দুল বলে চলল,তুমি শুনেছো,আমারে আর তোমারে এক ঘইরে কইরে,ওরা খান্ত হই নি,সুইদে টাকা যদি আমরা না নিই,তবে আমাগের গ্রাম ছাড়া কইরবো।
হু কারো বাপের ঘরে থাকি নে যে গ্রাম ছাড়া কইরবো।মুখ বাকিয়ে খেকিয়ে ওঠে ওমর আলী।
কি কইরবা গ্রামের লোকে তো আমাগের কথা শুনেই না,বইলতে গেলে তো দূর দূর কইরে তাড়িয়ে দেয়।
বুঝবো বেকুফ গুইলো,গোলামি করার সাধ কি,সব হারিয়ে ঠিকই ফেরত আইসবে,কিইবা করার থাইকবে সেই দিন!ওমর আলী অস্থির হয়ে ওঠে বলতে বলতে।
আদিম যুগের আগ্রাসী শক্তির মত,সারা গ্রামে ঘোষনা করে দেওয়া হয়েছে,ঋন প্রদান সংস্থার যাবতীয় কাজে বাঁধা প্রদান করার জন্য ওমর আলি আর সব্দুল ব্যপারির বিরুদ্ধে শালিশ ডাকা হয়েছে।এখন আর এখানে থাকা নিরাপদ নয়,দুই জনই গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।কিন্তু সুধী মহাজন!এদেরকে কে হটাবে?ওমর আলী আর সব্দুল ব্যপারির মত প্রতিবাদকারিরা ক্রমেই সুন্দর পুর থেকে শেষ হয়ে যাচ্ছে।গরিব শ্রেনী কি তবে অর্থনৈতিক ঘাতকদের শিকারের প্রিয় বস্তু হবে সারা জীবন ধরে!
ওমর আলী আর সব্দুল ব্যপারি কয়েকদিন পর আবার সুন্দর পুরে ফেরত এসেছে,মনের মাঝে হতাশার কোন ছাপ নাই,চীরদিনের মতই হাসি খুশি মাখা মুখ।অতি সম্প্রতি উভয়ে মিলে কল্যান ফাউন্ডেশন নামে একটা সমিতি গড়ার ঘোষনা দিয়েছে।গ্রামের লোক জন এসব কিছু বোঝে না,তারা কেবল ঋন পেলেই খুশি।অনেকের মনে অনেক প্রশ্ন,সুধী মহাজনের মনেও নানান প্রশ্ন কিল বিল করছে,সমবায় গঠনের জন্যতো অনেক টাকার প্রয়োজন।নুন আনতে যাদের পান্তা ফুরাতো এরা এত টাকা কোথায় পেল?এরা নিশ্চয় চুরি করেছে।এদের বিচার করতে হবে।কিন্তু কোন কথায় কান দেয়ার কোন সময় নাই,তারা তাদের কাজ শুরু করেছে।প্রথম প্রথম গ্রামের লোক জন ভয়ে,সন্দেহে,অগ্রাহ্য করে তাদের গুরুত্ব দেয় নি,কিন্তু কিছু দিনের মধ্যেই লোক জন তাদের গড়া সমবায়ে জোগ দিতে শুরু করে।ধীরে ধীরে পরিবর্তন হতে শুরু করলো সুন্দর পুরের রুপ,দরিদ্রাহত জনগোষ্ঠী আজ আর অভাবের তাড়নায়,সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়ে ঋনের বোঁঝা মাথায় পেতে নেয় না।এ সবের মুল চাঁবি কাঠী ওমর আলী আর সব্দুল ব্যপারী।গ্রাম থেকে যেদিন বের হয়ে গিয়ে ছিল শূন্য হাতে, পাগলপ্রায়।এক মাস পর যখন ফিরে আসলো,অঢেল টাকার বস্তা হাতে করে।কিছুটা নত জানু,খর্বশক্তির সুধী মহাজন কিন্তু ঠিকই তলে তলে এর সুত্র খোজার জন্য মরিয়া,কোন লাভ হবে না।সমস্ত প্রতিকূলতা আর বিপদ দূর করে ওমর আলী আজ ছঁবির ঠিক উল্ট পিঠে অবস্থান করছে।সাধারন মানুষের মনেও যে প্রশ্ন আসে না তা নয়,কিন্তু তারা এ সব জানার প্রয়োজন মনে করে না।শত বিতর্ক ছাপিয়ে আজ সে সফল।সুন্দর পুর আজ ঋন মুক্ত সুন্দর এক ছবির গ্রাম।এখানে আজ সবাই স্বাবালম্বি,কোন সংসারে অভাবের ছিটে ফোটাও নেই।হালাল পাগলা বলে ওমর আলীকে আর কেউ ডাকেনা,সবার কাছে এখন সে ওমর ভাই।
আজ দু- তিন দিন ধরে ওমর আলী কেন যেন খুব বেশী দুঃশ্চিন্তা গ্রস্থ।সব সময় চুপ চাপ একা বসে থাকে,মনে মনে কি যেন ভাবে,কাউকে কিছু বলে না,তার স্ত্রী এটা খ্যাল করলেও কোন সদুত্তর তার কাছ থেকে পাওয়া যায় নি।বাড়িতে একজন মধ্যবয়সী গৃহ পরিচারক আছে,সবাই তাকে বকুলের বাপ বলে ডাকে।ওমর আলী তাকে ডাকলেন,বকুলের বাপ সুইনে যাও।
ভাইজান আইসতেছি।ঘাড়ে ঝোলানো গামছা দিয়ে গা মুছতে মুছতে বকুলের বাপ সামনে এলো।কি হইছে ভাই কন?
তুমি সব্দুল ব্যপারির বাড়ি গিয়ে একটু খবরদিতে পাইরবে?
কি কন ভাইজান পাইরব না ক্যান,এককুনি যাইচ্ছি।
ওমর আলীর খবর পেয়ে সব্দুল মিয়া যথারীতি বকুলের বাপের সাথেই চলে আসলো।তার চোখেও যেন উতসুকের মত কিছু একটা খুজছে,দেখলে মনে হয় সেও যেন কিছু একটা দুঃশ্চিন্তার মধ্যে আছে।বারান্দার এক কোনে লোহার একটা চেয়ার পেতে ওমর আলী বসে আছে,সব্দুল ব্যপারী শিড়ির উপর গিয়ে বসলো,
বকুলের বাপ সব্দুল ভাইরে একটা চেয়ার দেও।
আরে থাক থাক লাইগবে না,একেনেই ভাল আছি,চেয়ার লাইগবেনা।তা ওমর জরুরি তলব পাঠাইছো ক্যা?
সব্দুল ভাই তোমার সাথে কিছু জরুরি কথা কইতে ডাইকছি।বকুলের বাপকে ইশারা করে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে চেয়ার ছেড়ে,শিড়ির উপর এসে বসলো ওমর আলী।ভাই আইজ তিন দিন হয় আমি একটা স্বপ্ন দেইখতেছি।
কথাটি শুনে সব্দুল যেন নড়ে চড়ে বসলো,বলো কি মিয়া!আমিও তো একই রকম স্বপ্ন দেইখতেছি।
সেই বুঁড়ো লোকটি?ওমর আলী বিষ্ময়ের সাথে জিঞাসা করলো।
হ্যায়,তুমিও কি তাই?
উভয়ে বেশ কিছু সময় নিশ্চুপ বসে রইলো,যেন বাক রুদ্ধ হয়ে গেছে,তারা বিশ্বাসই করতে পারছে না এমন হতে পারে।উভয়ের ধ্যান ভাংলো,বকুলের বাপের শিড়ির উপর নাস্তা রাখার শব্দে।নাস্তা রেখে বকুল এর বাপ চলে গেল খালি ট্রে হাতে করে।
তুমি কি দেইখছো স্বপনে কও দিকি?
বৃদ্ধ লোকটি কচ্ছে,সবাইতো,ঋনের দায় থেকে বাঁইচলো,তুমি ঋনী হয়ে থাইকলে কেন মিয়া,দেনা পরিশধ করে দ্যাও,দেনা পরিশোধ কইরে দ্যাও।
সব্দুলের কপালে চিন্তার ভাজ পড়ে গেছে।বাড়ি থেকে পালিয়ে যাবার সময় জোহরপুরের মাঠের মধ্যে এক বৃদ্ধের সাথে তাদের দেখা হয়ে ছিল,গায়ে ময়লা জড়ানো,লম্বা দাড়ি মুখে,মাথায় মলীন একটা পাগড়ী জড়ানো,কাঁধে একটা ঝোলাও ঝুলানো।
মিয়ারা পালিয়ে যাও কনে?পালিয়ে পার পাবা কি?একটা বাবলা গাছের তলে লোকটা বসে ছিল,পাশ দিয়ে যাবার সময় লোকটা বলে উঠলো।
আপনি কিডা,আমাগের খোজ নিচ্ছেন,কিডা কয়েছে আমরা পালিয়ে যাইচ্ছি?
তাইলে কনে যাইচ্ছ হালাল পাগলা?
ওরে বাপরে সব্দুল ভাই,এ বুড়ো দিকি আমার নামও জানি ফেইলেছে!
তোমার নাম তো,পাগলা না মিয়া,ওমর,তোমার দাদায় রাইখছে।
এই আপনি কিডা সত্যি কইরে কন তো,আমাগের পিছনে গোয়েন্দা গিরি কইরতে আইছেন বুঝি,কত টাকা খাইছেন?ওমর খিপ্ত হয়ে উঠলো,সব্দুল ওমরকে শান্ত করার জন্য পাজা করে ধরলো,থামো মিয়া সত্যি সত্যি পাগল হইলে নাকি?
এক বস্তা টাকা,কি মিয়ারা নিবা?খিল খিল করে হেসে দিলো বৃদ্ধ লোকটি।
মিয়া মুরুব্বি মানুষ মস্করা কইরেন না?সব্দুল বলল।
এক বস্তা টাকা, নিবা নাকি মিয়ারা?আবারও একই কথা বলল লোকটি।তার পর আগের মতই খিল খিল করে হেঁসে দিলো,নকল কয়েকটা বাঁধায় করা দাঁত বেরিয়ে এসেছে এবার।এত জোরেই সে হেঁসেছে।
সব্দুল ভাই,বুঁড়োর ঝুলার মধ্যি কি আছে দেখো দিকি।অধৈর্য হয়ে বলল ওমর আলী।
সব্দুল ব্যপারী হাত বাড়ানোর আগেই কাছে থাকা বস্তাটা টেনে বগলের তলে চেপে ধরলো লোকটি।
না না না,তোমরা পালাতক আসামী,তোমাগের দেওয়া যাবি না।বাড়ি ফিরে যাও তাইলে পাবা,টাকা,এক বস্তা টাকা!মুক্ত করো,সুন্দর পুর,লোকজন,তোমাগের বউ ছেইলে মেইয়ে।উচচ স্বর থেকে লোকটার স্বর হঠাত নিচু হয়ে আসলো,শেষের কথা গুলো অনেকটা বিড়বিড় শব্দের মত শোনা গেলো।
লোকটার হাত থেকে বস্তা কেঁড়ে নিয়ে মুখ খুলতেই সব্দুল হা হয়ে গেল,টাকা,এক বস্তা টাকা!
এই বুঁড়ো মনে হয় টাকা চুরি কইরে আইনেছে সব্দুল ভাই,ওমর খেঁকিয়ে উঠে বলল।
চোর তো তোমরা,পালিয়ে যাবা কনে?ফিরে যাও টাকা নিয়ে।সময় হলি আমার টাকা ফেরত দিয়ো।
ক্যান আপনার টাকা নিবো ক্যান?সব্দুল ভাই চলো এই লোকটা ঘুস দিয়ে আমাগের কিনতে চায়।
এ ছাড়া তোমরা সুন্দরপুরের কাঁন্না থামাতি পারবানা মিয়ারা।বস্তা নিয়ে বাড়ি চইলে যাও।
আপনি কনে পাইছেন এত টাকা,চুরি?
খনি পাইছি টাকার খনি।আবারও হি হি করে হেসে দিলো বৃদ্ধ লোকটি।তয় আমার টকা ফেরত দিয়ে দিয়ো মিয়ারা।সময় হলি আইসে নিয়ে যাবানে।না আইসলে খবর দিবানে আইসে দিয়ে যাইয়ো।
আপনের বাড়ি কনে,কোন গ্যরামে থাকেন আপনি?ওমর আলী প্রশ্ন করলো।
এই রাস্তার শেষ মাথায় গিয়ে,বাম দিকে যে বট তলা আছে,তার পাশে,আমার একটা খুপড়ি ঘর আছে,আমারেও তোমার মত পাগলা কয়ে ডাকে,পরান পাগলা।
সব্দুল ব্যপারি হ্যা বোধক ইশারা দেয় ওমর আলীকে।তার পর তারা বস্তা ভর্তি টাকা নিয়ে আবার গ্রামে ফিরে আসে।শুরু হয় তাদের সুধী মহাজন তাড়াবার মিশন।এখন আর সুধ নাই,সুন্দর পুরে কাঁন্না নাই,হালাল পাগলা নাই,সে আবার ওমর আলী হয়েছে,সব্দুলের বউ ছেলে মেয়ে ফিরে এসেছে,তাঁরা এখন গ্রামের মধ্যমনি।এত দিন বেশ ভালই চলছিলো,সময়ের পরিবর্তনে পরান পাগলার কথা তারা ভুলে গেছে।ভুলে গেছে তার দেয়া ঋনের কথা।বিনা শর্তে দেওয়া ঋন।কি করে এমন টা হতে পারে!তারা এমন একজন পরোপকারি মানুষকে কি করে ভুলে ছিল এত দিন!লজ্জায় মাথা নিচু হয়ে আসলো উভয়ের।
কি করা যায়,সব্দুল ভাই কন দিকি?
ওমর আলীর কথায় হকচকিয়ে উঠলো,সব্দুল ব্যপারী।এত ক্ষন যেন স্বপ্নে ছিলো সে।
আমিও ভাইবতেছি।মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল সব্দুল ব্ব্যপারী।
ভাবা ভাবির সময় নাই,আইজই চলো,পরান পাগলার বাড়িত গিয়ে দেখা কইরে আইসতে হবি।
সব্দু ব্যপারি সম্মতির সুরে ঘাড় নাড়ালো।
সুন্দর পুর থেকে প্রায় ৯৭ মাইলের মত পথ হবে জহুর পুর।পরান পাগলার গ্রাম।বডারের এপার।ভারতের সিমানা ঘেষে এই গ্রাম টি।ওমর আলী আর সব্দুল ব্যপারী এই গ্রাম পার হয়েই ভারতে পালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন।মাঠের মধ্যেই পরান পাগলার সাথে দেখা।তার পর আবার গ্রামে ফিরে আসা।
উভয়ে সে দিনের সে বিরাট মাঠ পাড়ি দিয়ে জহুর পুর এসে বট তলায় দাঁড়ালো।একটূ দূরেই একটা চায়ের দোকান।
চলো ওই চায়ের দোকানে গিইয়ে পরান পাগলার বাড়ি কনে জিঞেস করি।ওমর আলী বলল।
সব্দুল ব্যপারি ঘাড় নাড়ালো।
চায়ের দোকানে গিয়ে চায়ের অর্ডার দিয়ে,ওমর আলী জিঞাসা করলো,ভাই পরান পাগলার বাড়িডা কনে?
পরান পাগলা!তারতো বাড়ি নাই,সেই কবেই তো সে মইরে গেছে,মুসাফির মানুষ,বাড়ী পাইবে কই?
পরান পাগলা,বুঁড়ো লোক ,চুল দাড়ি পাকা,দুই-তিন বছর আগেও তার সাথে দেখা হয়েছে আমাগের!
দোকানদার হেসে উঠে বলল স্বপ্নে দেইখছেন তাইলে মিয়া।অই কলিম্ম্যা,পরান পাগলার কবরডা দেখাই নিয়ে আই তো যা।দুই-তিন বছর আগে মরছে,আমার জন্মের আগে মরছে মিয়া,ঠাট্টাচ্ছলে বলল দোকানদার।ওমর আলী আর সব্দুল ব্যপারির মাথায় যেন বাজ ভেঙে পড়লো।
কলিম নামের ছেলেটার সাথে উভয়ে হাঁটতে শূরু করলো,চা খাওয়ার কথা তারা ভুলে গেছে।পেছন থেকে দোকানদার ডাকলো আরে ভাই চা খাইয়েতো যান?
সত্য সত্যই একটা কবর স্থান,এক পাশে ভাঙ্গা একটা কবর।গর্ত হয়ে গেছে,কবরের কোন চিহ্ন নাই।ওমর আলী আর সব্দুল কিছুই বুঝতে পারে না,কেমন যেন একটা ঘোরের মধ্যে পড়ে গেছে তারা।সকলেই বলল ৫০-৬০ বছর আগে পরান পাগলা নামের এক লোক এই গ্রাম দিয়ে যাওয়ার সময় মারা গেছে।মরার আগে শুধু তার নামটা জানা গিয়ে ছিলো,কোন পরিচয় না পাওয়ায় তারা বট তলার পাশের কবর স্থানে তার দাফন দিয়েছিল।জহুরপুরের লোক জন জানতে চাইলো,এত বছর পর তার খোজ কেন?ওমর আলী আর সব্দুল ব্যপারি কোন জবাব না দিয়েই বাড়ি ফিরে আসে।
সারা রাত ওমর আলীর ঘুম নাই,নানান চিন্তা মাথায় কিল বিল করছে,লোকটা তা হলে কে?হঠাত তার একটু ঘুম ঘুম ভাব আসলো।কিসের যেন আওয়াজে ওমর আলীর ঘুম ভেঙে গেল।সব্দুল ব্যপারী ভোর সকালে বাহিরের গেটে ধাক্কা দিচ্ছে।বকুলের বাপ দৌড়ে গিয়ে গেট খুলে দিলো।সব্দুল জিঞাসা করলো ওমর আলী কনে?
হুজুর ঘুমোচ্ছে।কথা শেষ হতে না হতেই ওমর আলী চোখ মুছতে মুছতে বাহিরে বেরিয়ে আসলো।
সব্দুল ভাই এত্ত সকালে কি খবর?
তোমার সাথে কথা আছে।
কথা পরে কবানে আগে চলো জহুর পুর যাবো।
ক্যান?
কবরটা মেরামত কইরতে হবি।
লোকটা তাইলে কে?
ওমর হাসতে হাসতে বলে,আমাগের ভাগ্য।
মানে?
আমাগের মহৎ কাজের জন্যি লোকটাকে আল্লাহ পাঠাইছিলো।
বুইঝলাম না ?
আইচ্ছা সব্দুল ভাই,সেইদিন আমরা টাকার বস্তা যকন পাইছি লোকটা তখন ছিইলো?
আমরা তো বাবলা গাছের নিচে ঘুমোছিলাম।
তার পর জাইগে দেখি এক বস্তা টাকা!
হ্যায়!
ক্লান্ত হয়ে আমরা ঘুমিয়ে গেলে স্বপনে দেইখেছিলাম পরান পাগলারে।
তাইলে টাকা?
মইরে যাওয়ার আগে এই বাবলা তলায় তার টাকার বস্তা একটা মাটির কলসীর মইধ্যে রাইখে পুইতে রাইখেছিল।আমরা যেইদিন ওইখানে জিড়োচ্ছিলাম তার আগের দিন ঢল নাইমে ওই জাইগার মাটি সইরে গিয়ে বস্তাটা বের হয়ে পড়ে ছিলো।আমাগের যাওয়ার আগে আর কেউ ওই রাস্তা দিয়ে যাই নি তাই কারো চোখেই পড়েনি।কাইল রাতে পরান পাগলা স্বপনে আইসে কয়ে গেছে।আসলে আমরা ছিলাম ভাইগ্যবান।একন থাক এসব কথা চলো পরান পাগলার কবরটা মেরামত কইরে দিয়ে আইসি।কবরটা গর্ত হয়ে গেছে,দলক পইড়লে পানিতে ভইরে যায়।
সব্দুল ব্যপারি যেন কিছুই ঠাওর করতে পারছেনা।তাই বিড় বিড় করে কি যেন বলতে বলতে ঘাড় নাড়ালো।
চলো যাই।

আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
নাজমুল হুসাইন আসলে আপনার কথা ঠিক,আমার বানানে কিছু ত্রুটি আছে,এটা টাইপ করার সময় হয়ে থাকে,এজন্য ক্ষমা চাচ্ছি।সমালোচনার জন্য ধন্যবাদ।
মোঃ নুরেআলম সিদ্দিকী গল্প বেশ চমৎকার। তবে, আহা শব্দটি হাস্য রসিকতার ক্ষেত্রে বোঝানো হয়। এখানে, ওহ বোঝাতে পারতেন। অথবা, আহা এ কি আবার? এমন বলতে পারতেন। এরপরের দিকে, তাহারা পালানোর বুদ্ধি করলো, আর পালিয়ে গেল এটা কি সমান কথা হল? এখানে আরও কিছু লাইন যোগ করা উচিৎ ছিল। তারপর, শব্দের অনেক বানান ভুল। এগুলোর দিকে বেশি বেশি করে খেয়াল রাখতে হবে। আমিও কিন্তু অনেক কিছু জানিনা। কিছু বানানে মনে হয় আপনার সমস্যা আছে→ যেমন, (জ্+ঞ=জ্ঞ, ক্+ষ= ক্ষ)। অনেক ধন্যবাদ ভাইজান এমন একটি গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য। অনেক অনেক শুভকামনা ও ভোট রেখে গেলাম। ভালো থাকুন নিরন্তর।
ফেরদৌস আলম আপনার গল্পের প্রথম প্যারাটা দারুণ লাগলো।
ইমরানুল হক বেলাল মন ছুঁয়ে গেল গল্পটি পড়ে;

২৯ সেপ্টেম্বর - ২০১৬ গল্প/কবিতা: ৩৭ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪