নয়ন (মন্টু মিয়ার ছেলে) ভাত দে মা, না-য়ে যামু বিকালের জোয়া তে।
শ্রিমতি (নয়নের মা,মন্টু মিয়ার স্ত্রী)-
অহন ছইলা যা চাইল নাই ঘরে বাত রাধিনি।
নয়ন- তাইলে আ্যয় যামুনা উপাস পেটে গাঙ্গে যামুনা ।
শ্রিমতি- ওরে হুত গাঙ্গে না গেলে খাবি কি? দোয়ানে টাকা কুড়ি না দিলে চাইল দিব না, অহন যা গা ।
নয়ন- তাইলে আ্যই কি করমু? আসমু কখন! অতক্ষন উপাস থাকুম কেমনে ? আ্যয় যামু না।
শ্রিমতি- ঘরে চিড়া আছে অল্প খাইয়া যা । গাঙ্গেতুন আসলে পুটির জোল দিয়ে ভাত খাইসনে।
মন্টু মিয়া-(নয়নের বাবা,শ্রমতির স্বামী)- নয়ন তুই আইনা, দেরি হলে তো আর মাছ পামুনা,
নয়ন- আয়তাছি বা-জান,তুমি না নামাও,
আচ্ছা বাজান আমরা এত কষ্ট করি ভাত থাকেনা ঘরে, এডাকি আমারগো আগের গোষ্টির আর্শিবাদ.?
মন্টু মিয়া- নারে বাপ,আমার গো শুদু দু’টা জাল,খোপে স্রোত কম,তাইতো মাছ কম আহে তো উপস থাকুমনা তো কি করমু ।
(জালের কিনারায়)
নয়ন- দেহেন বাজান দেহেন কিসে যেন কিরমির করছে,মনে অয় ইলিশের ঝাঁক ।
মন্টু মিয়া- হরে বাপ,ইলিশ তো! মনে হয় কপাল খুলে গেছে ।
দে তারা তারি নায়ের আগিল দরে টান দে। আ্যই জাল ধরি ,তুই খাঁছি টা নিয়ে আয়।
বেলা অনেক দেরী হইছে, তারা তারি হাটে যাইতে অইবো তার তারি ধর।
নয়ন-বাজন অনেক মাছ ধরেতে,ওত মাছ তো আর কোন দিন দেখিনি।
মনে হয় ভগবন আমারগো দিকে চোখ তুলে চাইছে, ।
মন্টু মিয়া খুশিতে গান দরেছে-
“ ও ভগবান চাইছো তুই চোখ মেলে আমারগো দিকে,
থাকুম সুখে থাকবেনা অভাব আমার গো সংসারে।
নয়ন-বাজান বাজান! দেহেন কারা যেন আইতাছে,
মনে অয় ক্যারিনের লোক আমারগো মাছ সব কিনে নিবে।
না রে বাজান!ওরা তো ডাকাত, ওরা আমার গো মইরা ফেলব আর মাছ নিয়া নিব,
তুই বড় মাছ গুলা জালের তলে লুকা। আর তারা তারি দার কাট জলদি কর জলদি! নইতো সব মাছ নিয়া নিব।
ডাকাত - ওই দাড়া দাড়া, যাইসনা কইলাম,
বড়দা আসছে,(ডাকাট সর্দার)
তারা তারি দাড়া নইতো মাইরা দিমু কইলাম?
মন্টু মিয়া- মাফ করেন দাদা! আরা গরিব,
দুখান জালে যা মাছ বাজে তা দিয়ে কোন রকম খাইয়া-উপবাসে শুদু সংসার চলে।
আচ্ছা দেহুম নে ,অহন দেহি তোরা কিতা মাছ পাইসোছ?
মন্টু মিয়া-দেহেন এ কডা খাইবার মাছ।
ডাকাট সর্দার- ওই জাল উল্টা ,জাল উল্টা কইলাম।
দেখা! নইলে শনি আছে তুদের কপালে ।
মন্টু মিয়া- দেখাতেছি দাদা,
ডাকাট- লুকাইসচ কেন? দে সব!
মন্টু মিয়া-
আজকে একটু বেজেছে মাছ ইশ্বরের কৃপায়,
কয়টা মাছ রেহে যান, বৌ বাচ্ছা বাচার নেই তো উপায়।
ডাকাট-
মার হালারে! আগে দেখাসনি কেন! মার হালারে মার।
“নদীটা আমার,খাজনা দেসনি মাসের পর মাস,
এখন বলছিস বৌ বাচ্ছা! হউক তুর সর্বনাশ।”
ওই লইয়া চল একটাও রাখিসনা ,সব নিয়া চল হালারা মিথ্যুক।
নয়ন-বাজান ওরা তো সব নিয়ে গেল,আমারা তো উপস থাকতে অইব। একটাও রাইখ্যা গেলনা!
ভগবান কি ওরগোরে দেহেনা । আমারগো রক্ত শুইস্সা খাই।
“বাজান!! ওরা কেমনে এমন অয়! যদি ওরা থাকতো উপাস,তবে বুঝত!
ভগবান কেন মারেনা, এত্ত রঙ্গবাজ!”
মন্টু মিয়া- আরা গরিব ভগবন ও আমার গো দিকে দেহেনা। যদি দেখত তাইলে ডাকাটরা মাছ নিতে পারতোনা
“ঐ ভগবান তো উচুতলায়,চোখ পরেনা নিচুতলায়,
যখন যেথায় নিয়ে যাবে দিমুনা তার দোহায়।”
নয়ন- বাজান তুমি আরে বিলাত পাঠাও,এ দেশেতে আর থাহুম না।
ওখানে কামাই করমু আর মাসে মাসে টাহা পাটামু, ক্ষুদায় আর মরুমনা ,আমারগো আর অভাব থাকবোনা।
বিদেশ যেতে লাগে অনেক টাহা,
আর কছে তো নেই আনি ও কাঠা,
কমনে তুরে বিদেশ পাটাম? সবি তো ভাবনা।
নয়ন –
বাজান তুমি টাকা নাও সুদে, হদ্দার চাচার থেকে,
দেখবে তুমি! পাটাচ্ছি টাকা শুধ হবে অল্প দিনে।
মন্টু মিয়া- আচ্ছা তা দেখাযাবে নে! অহন ঘরেতে চল। পেটে ভোগ লাগছে কিছু অনেক।
মন্টু মিয়া-
নয়নের মা নয়নের মা! আমারগো আজি বেশুমার মাছ বাজছে ,কিন্তু ভগবানে দিলনা তা ডাঙ্গায় আনতে,শ্রিমতি-কেন কি অইছে?
মন্টুমিয়া- নদীতে তো ডাকাট পরছে, ডাকাটে আমরগো সব মাছ লইয়া গেছে!!আহাহাহাহা
অহন থেইক্কা আর মাছ ধরুমনা।
শ্রিমতি- মাছ না ধরলে খামু কি? উপাস মরুম নে?
মন্টু মিয়া- একটা ভিত তো অইবো! ভগমান তো আর আমারগো উপস মারবোনা!!
শ্রিমতি-তো অহন কি করবেন?
মন্টু মিয়া-নয়নকে আরা বিদেশ পাটামু,
মাসে মাসে টাকা আইবো,আর অভাব থাকবোনা ।
শ্রিমতি- বিদেশে যাইতো তো মেলা টাকা লাগে এত্ত টাকা আন্নে কই হাইবেন?
এসব কি ভাবেন না।
মন্টু মিয়া- হ,হরদার থেকে টাকা নিব,
(হরদারের কাছে মন্টু মিয়া যাওয়ার পড়)
মন্টু মিয়া-হরদার সাব হরদার সাব! হুলারে তো বিলাত পাটামু
জোগেশ (হদ্দার)- তাই নাহে? টাকা পইসা ব্যবস্থা হইছে?
মন্টু মিয়া- না ,তাইতো আন্নের কাছে আইছি।
জোগেশ-ও………কত টাকা লাগবো?
মন্টু মিয়া- এই নিজে হাজার ত্রিশেক যোগাড় করেছি,আরো হাজার ছয় কুড়ি লাগবো,যদি আন্নে দিতেন তো অনেক উপকার হইত।
জোগেশ- নিও নে,কিন্তু হত্তেকে মাসে আমারে হাজারে পাঁচ হাজার টাকা সুদ দিতে অইবো! আরেক্কান কথা তুমার দলিল আরে দিয়া দিবা,যবে টাকা শুধ হবে তখন আবার লইয়া যাইবা।
মন্টু মিয়া-আচ্ছা দিয়া যামুনে, আন্নে তো আর আমার গো মারবেন না। আন্নেতো আমার গো ভগবানের আর্শিবাদ।
মন্টু মিয়া-
বাপ তুরে আর্শিবাদ করি ভগবানের নামে,
বিদেশ যাইয়া ফোন করিস মনের শানে।
নয়ন-
আচ্ছা বাজান করবোনে আর্শিবাদ করিয়েন। আই অহন যাই ।
(২ ম মাসে ছেলের ফোন)
মন্টু মিয়া-
বাপ কেন আসছ? ভালনি?
হ বাজান ভালা আছি। মা কেন আছে?
মন্টু মিয়া-হ, ভালা আছে
কিরে বাপ অগ্রহায়ণ মাস গেছে ফোন করসনি কেন,
হরদার টাকা খুজে,তারে টাকা দিমু,তুর মা আর বোনে ও বায়না দরছে,
তুর মা নাকি শাড়ি নিবে তুর বইনে জামা নিবে,
তুই তারা তারি টাকা পাটা।
নয়ন-
হি হি হি হি(কান্নার শব্দ) বাজান কেন আরে বিদেশ পাটাইছ ?
“সকাল সন্ধায় কাজ করি, ভাত পাইনা খেতে।
মালিক পরছে বাজে,কয় সে টাকা দিবে আরো কয় দিন পরে
তাও সে টাকা দেয়না, ভাত যে পরেনা পেটে।”
মন্টু মিয়া-
বাপ তুই এসব কি কস?
“তুর মা শুনলে যাবে মরে,
আমি যামু ফাঁসে,
বাছার আর উপায় নেই এ ধরাতে।”
হরদার তো আমারগো ভিটি ছাড়া করবো! কেমনে কি অইবো? কই যামু আমরা?
নয়ন-বাজান আই আর থাকুমনা বিদেশে, আই মরি যায়ুম এখানে থাকলে।
মন্টু মিয়া-
“অহন তুই চলি আয় মায়ের তরে,
মরলে হক্কলে একই মরমু নিজের ঘরে,
আর কইয়া যামু ইশ্বে তুমি স্বার্থ পর,
তুমিও চাহিলে না গরিব বলে।”
আমারগো গরিবরে কেউ চায়না , থুতু মারি গরিবের জন্মরে। আমারগো দুঃখ কেউ বুঝেনা, জন্মের সময় গলা টিপে মারলে ভালা হইত। গরিব হইয়া দুনিয়াতে না থাইক্কা মারাগেলে ই ভালাই অইত। আর এত কষ্ট-দুঃখ সহ্য অয়না।
(অবশেষে মন্ট মিয়ার পরিবারে কি হয়েছে তা কেবল মাত্র মন্টু মিয়া জানে, যা আমার জানার কথাও না)
{টিকা- হরদার- জেলে গ্রামের মালাদার, আরা- আমরা, কিতা-কি, কডা-কইটা, শনি-দুঃখ, রেহে-রেখে, অইব-হইব, থাহুম না-থাকবোনা, ভোগ-ক্ষিদা, হুলারে- ছেলেরে, কেন-কেমন, বইনে-বোন ,বাজান-বাবা ,বাপ-সন্তান কে আদর করে ডাকা , অয়না-হয়না}