“অবহেলা”

অবহেলা (এপ্রিল ২০১৭)

নয়ন আহমেদ
হে গো শুনছো। সেই তখন থেকে ঘুমে ঝুলছো। আরে ওঠো না একটা সুখবর আছে।
কি সুখবর আচ্ছা বলো দেখি?
:- আরে বাবা আমাদের বৌমা সুপ্রিয়া মা হতে চলছে তো।
:- হ্যাঁ বলোকি সত্যি এতো আনন্দের সংবাদ।
:- আমি কিন্তু বৌমাকে বলে দিয়েছি আমি কিন্তু একটা নাতি চাই। তুমি দেখেনিও ওই ছেলে আমাদের বংশের বাতি জ্বালাবে।
:- আহা কি কথা বলছো তুমি বলোতো প্রথম বাচ্ছা নাতি কিংবা নাতনি যেই হোক তাতে কি।
:- তুমি এসব কথা ছাড়োতো আমার কিন্তু নাতি চাই বেস। আর নাতি হলে গোটা গ্রামে আমি মিষ্টি বেলাবো।
:- আরে তুমি এই অবস্থায় ভরা বালতি নিয়ে এসেছো। কেনো মাকে বলতে পারলে না। তুমি বিস্রাম করো এসো বসো কতোবার তোমাকে বলি এই অবস্থায় কোনো ভারি কাজ করবে না। আর তুমি কিনা ধেদ।
:- আহা আধ বালতি পানি তুললে কিছুই হবে না। তোমার না সবটাতে কেমন বাড়াবাড়ি।
:- এই যানো বাবা-মা না অনেক খুশি হয়েছে। আর যানেন ম্যাডাম আমি বাবা হবার খুশিতে আর চেপে রাখতে পারছি না আনন্দ।
:- কিন্তু আমার না খুব ভয় করছে যানো।
:- কিসের ভয়? আমরাতো সবাই আছি তোমার সাথে।
:- আসলে সেটা না মা বলেছে তার নাকি নাতি চাই। যদি ছেলে না হয় তাহলে মা খুশি হবে না।
:- ও এই কথা মাতো ঠিকি বলেছে। তুমি একদম চিন্তা করো না। তুমি দেখো ঠিক আমাদের ছেলেই হবে। আর যানো আমি কিন্তু ছেলের নাম ঠিক করেই ফেলেছি তার নাম।
:- আচ্ছা কি নাম গো বলোনা?
:- সুপ্রিয় কেমন নামটা বলোতো ভালোনা নামটা।
:- খুবই ভালো কিন্তু যদি মেয়ে হয় তাহলে।
:- আচ্ছা সেই তখন থেকে একি কথা বলে যাচ্ছো। বলছি না আমাদের ছেলেই হবে।
:- হ্যাঁলো অর্ণব তুই তারাতারি চলে আয়। বৌমাকে ক্লিনিকে নিতে হবে। তুই জলদি আয় দেরি করিস না। আমরা ওকে টেক্সিতে নিয়ে যাচ্ছি।
:- হ্যাঁ যাচ্ছি মা এই আধ ঘন্টার মধ্যে যাচ্ছি চিন্তা করো না।
:- আচ্ছা হে গো শুনছো তুমি ঘরেই থেকো। আর অর্ণব আসবে। আর সুখবরটা আমি ফোন করে তোমাকে জানাবো বুঝলে। আচ্ছা আমরা তাহলে আসি।
:- হে হে তোমরা এবার এসো ভালোয় ভালোয় যেও কিন্তু।
:- মা মা আমি এসে গেছি মা সুপ্রিয়া কোথায়?
:- ওইতো ওই রুমে সিস্টারেরা ওকে নিয়ে গেছে। উফ হে ঈশ্বর যেনো ভালোয় ভালোয় হয়। আমি যেন নাতির মুখ দেখতে পারি।
:- মা ও মা তুমি কোনো চিন্তা করো না। তুমি বরং একটা কাজ করো তুমি ঐ চেয়ারে বসো। আমি লেবার রুমে দাড়িঁয়ে আছি। তুমি কোনো চিন্তা করো না দেখবে তোমার নাতিই হবে।
:- অর্ণব তুই কিছু খেয়েছিস বাবা।
:- হে হে মা আমি দুপুরে অফিসে কেন্টিনে খেয়ে এসেছি।
:- এই এই অর্ণব সিস্টার বেরুছে সুপ্রিয়ার কথা জিজ্ঞেস কর। এতোক্ষণ নিশ্চই হয়ে গেছে।
:- সিস্টার সিস্টার সুপ্রিয়া মানে আমার স্ত্রীর কি হলো একটু বলবেন।
:- আপনার স্ত্রীর সুন্দর ফুট ফুটে একটা কন্যা সন্তান জন্ম দিয়েছেন। আমাদের কিন্তু মিষ্টি খাওয়াতে হবে।
:- এ্যা সিস্টার কি বল্লেন মেয়ে হয়েছে। হে ঈশ্বর! মা জানো তোমার নাতি নয় মা নাতি নয় তোমার নাতনি হয়েছে।
:- শুনেছিরে অর্ণব শুনেছি আমি সব শুনেছি। সবি এ আমার পড়া কপাল। অলক্ষী বউ একটা। শেষে কিনা! শেষে কিনা একটা মেয়ের জন্ম দিলো। ছি ছি ছিই কি ভেবছিলাম আর কি হলো হায় হায় হায়রে অলক্ষী মেয়ে কোথাকার।
:- বৌমা ও বৌমা ঘরে বসে মেয়েকে নিয়ে খুব আদিক্ষেতা হচ্ছে। বলি কাজ কর্ম কি নেই। সব কি তোমার বাপের বাড়ীর লোকেরা এসে করে দিবে হা।
:- যাই মা মেয়েটা কাতঁছে একটু দুধ খাওয়াছি আরেকটু পরেই যাচ্ছি।
:- উম ওরে আমার লক্ষী বউরে একটা যেমন মা তেমন অলক্ষী একটা মেয়ে জন্ম দিয়েছে আর মূখে মূখে কথা। যাও কাজ গুলো সেরে ফেলো।
:- মা মেয়ে হলে ওতো সে আমার সন্তান ও কেতো ফেলে দিতে পারি না। আমিতো মা। সন্তান ক্ষিদের জ্বালায় কাঁদলে আমি কি দেখে থাকতে পারি।
:- আরে ও লক্ষী এতো ভাষণ দিতে হবে না। আসলে তোর বাপের জাতটায় খারাপ।
:- মা আপনি আমাকে যত খুশি গালি দেন কিন্তু আমার বাবা মা কে কিছু বলবেন না। তারাতো কোন অন্যায় করেনি।
:- ইস করেনি তোর বাপেতো তোকে গছিয়ে দিয়ছে এরকম একটা অলক্ষী মেয়েকে। তাইতো আবার তোর মেয়ে হয়েছে। মাঝে মাঝে মনে হয় গলা টিপে মেরে দেই ঐ তোর মেয়েটাকে।
:- মা আপনি একথা বলতে পারলেন ওতো আপনাদেরি সন্তান।
:- মুখে মুখে তর্ক এই তোর একদিন কি আমার একদিন।
:- মা আপনি আমাকে মারলেন। আচ্ছা আমি কি ইচ্ছে কৃত্ব ভাবে মেয়ে জন্ম দিয়েছি। ঈশ্বর পাঠিয়েছেন দেখবেন এই মেয়ে একদিন আপনার মুখ উজ্জল করবে।
:- এ উজ্জল করবেনা চাই। আজ আসুক অর্ণব আসুক তোর বিষ দাঁত যদি আমি না ভাঙ্গতে পারি আমার নামো দুর্গা নয়।
:- আহা আচ্ছা অর্ণবের মা সকাল সকাল তুমি কি শুরূ করলে বলোতো। যাও যাও বৌমা তুমি মেয়েকে খাইয়ে দাও।
:- চুপ চুপ একদম চুপ থাকবে তুমি।
:- সুপ্রিয়া ও সুপ্রিয়া তোমার মেয়ে চেচাচ্ছে। অফিস থেকে এসেও আমি কি একটু ও বসতে পারবো না।
:- আচ্ছা এই নাও তোমার চা। আমি এখুনি ওকে সান্ত করছি। তুমি রাখ করোনা চা খাও।
:- অর্ণব! অর্ণব! বাবা তোর সাথে আমার একটু কথা আছে। তোমার এই গুণোধোরি বউকে নিয়ে।
:- আমি কি করলাম মা। আপনিতো আমাকে মারলেন। মা বাপ বলে গালি দিলেন।
:- দেখলি অর্ণব কেমন মুখে মুখে কথা বলছে। একটু ভয় নেই তার। দেনা কয়েক ঘাঁ বসিয়ে দেনা।
:- তোমার সাহসতো কোম না। আমার সামনে তুমি আমার সাথে তর্ক করছো।
:- রোজ করে বাবা রোজ করে আর আজি তুই জানলি।
:- অসভ্য একটা অলক্ষী মেয়েছেলে। আজ তোকে আমি মেরে ফেলবো। দেখ দেখ বেরু এখান থেকে। ছেলে জন্ম দিতে পারেনা। দুর হয়ে যা তোর অলক্ষী মেয়েকে নিয়ে।
:- ওগো আমাকে আর মেরোনা এই শিশুকে নিয়ে কথায় যাবো আমি। তুমিতো ওর বাবা আমাকে আর মেরোনা ঘরের এক কণায় থাকবো ছেড়ে দাও।
:- মা মা দেখুন না তিনদিন ধরে অপনার নাতনির জ্বর কমছেই না। ও কমেন যেন ঝিমিয়ে পড়েছে।
:- তা আমি কি করবো হে। ওই মাথাঁয় একটু জল পট্রি দেয় ওমনি সেড়ে যাবে।
:- মা ওকে একটু ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে হয় না। আমার মনে হয় বড় কিছু হয়ছে।
:- ন্যাকামি ছাড়োতো ডাক্তারের ফিস ঔষদের দাম তা কি তোমার বাবা দেবে। যাও যাও এককাপ চা করে নিয়ে এসো।
:- আরে অর্ণবের মা ওকে একটু নিয়েই যাও না। তুমিও একজন মা তাহলে ওদের সাথে এমন অবহেলা করো কেনো।
:- সুপ্রিয়া ও তোমার মেয়ে সড়াদিন ধরে কান্নায় ভাষাচ্ছে। একটু থামাবে নাকি আমি ওর মুখে বালিশ চাপা দিয়ে একেবারে শেষ করেদেবো।
:- ওগো চলোনা একটু ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই।
:- আমার কি পয়সা এতোই খাড়া। আর যদি একবার ডাক্তারের কথা বলবেতো মেরে তোর মুখ ভেঙ্গে দিবো যতসব ন্যাকামো।
:- ওগো তোমার একটু দয়া মায়া নেই এই শিশুটার জন্য।
:- না না আমার একটু দয়া মায়া নেই। তুই তোর মেয়েকে নিয়ে মরে যা। আর তাহলে আমরা একটু শান্তি পাই অলক্ষী কথাকার।
:- শোনা আমার তোকে এ বাড়ীতে কেউ চায়না এমন কি তোর বাবাও না। আর এতো অত্যাচার অবহেলার মধ্যে আমাদের বেছে থেকে কি লাভ বল চূপকর মা। তোকে আর কষ্টো দেবো না। শোনা আমার তুই আর আমি একেবারে চলে যাবো ঐ ওপারে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
কাজী জাহাঙ্গীর মনে হল শুরু থেকে বাংলা সিনেমার চিত্রনাট্য পড়ছি, সেই যে শুরু হল আর শেষ হওয়ার নাম নেই, আর শেষ হল ত হল ওপারে গিয়ে হা হা হা...।লেখকের বর্ণনা,অনুভুতির প্রকাশ এসবইত গল্পের অংশ। আশা করি এবিষয়ে আর একটু সতর্ক হবেন। অনেক শুভকামনা আর আমার পাাতয় আমন্ত্রণ।

০৪ আগষ্ট - ২০১৬ গল্প/কবিতা: ৩৭ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪