কোরবান?

এ কেমন প্রেম (আগষ্ট ২০১৬)

shifat hossain
  • 0
  • ৩৬
প্রথম খন্ডঃ
প্রত্যেক বছর ঈদ-উল-আজহার দিন কোরবানি করা আমাদের পরিবারের জন্য অলিখিত সংবিধান। বিষয়টা এমন হয়ে গেছে যে টাকা না থাকলেও কোরবানি করতে হবে। আমি ছোট বেলায় কোরবানির পশুর পিছুপিছু ঘুরঘুর করতাম। আমার কাজ ছিল ছবি তোলা। এখন ছবি তুলি না; কাজ করি।
তবে কোরবানি এতো সহজ বিষয় না, বুঝেশুঝে কোরবানি করতে হয়।
প্রত্যেকবার বাবা বা কাকা পাশে থাকে বলে কোরবানি দেয়ার নিয়মটা জানার দরকার হয়নি এতদিন। কিন্তু বাবা ও কাকা দুজনেই দেশের বাইরে থাকার কারনে দায়িত্ব এবার আমার নিজের কাধে। সুতরাং নিয়মকানুন ভালো করে জানতে হবে।

আমার বন্ধু মসজিদের ইমাম, ওর নামও ইমাম। ইসলামী যে কোন জিজ্ঞাসার জন্য আমি ওর কাছে আগে যাই, এবারও গেলাম।
ওকে জিজ্ঞেস করলাম,” কোরবানি করবো, নিয়ম বলে দে। অর্থসহ সব কিছু বলবি। কোরবানি না হওয়ার কারনও বলবি।”

ইমাম অনেক কথা বলেছে, তারমধ্যে কয়েকটা ওর ভাষাতেই বলছি;
“একেবারে পরিশুদ্ধ নিয়ত করতে হবে, আল্লাহ্র সন্তুষ্টি ব্যতীত অন্য কোন কিছুর জন্য কোরবানি করা যাবে না। আছে প্রতিবেশী ও আত্মীয়ের হক আদায়ের ব্যাপার। এমন নিয়তও করা যাবে না যে ফ্রিজে রেখে সারাবছর মাংস খাবো। ব্যক্তি স্বার্থে তুই কোরবানি দিতে পারবি না, এমনকি লোক দেখানোর জন্যও না। যদি নিজের নাম কামানোর জন্য কোরবানি করিস তাহলে কিন্তু কোরবানি হবে না।”

ইমাম আরো অনেক নিয়ম বলে দিয়েছে, কোরঅান- হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়েছে। আমি কিছুটা হলেও ইমামের কথা বুঝতে পেরেছি। ইমামের কথা অনুযায়ী গরু কিনেছি, নিয়ম মেনেই কোরবানি দেয়ার চেষ্টা করেছি।

দ্বিতীয় খন্ডঃ

সালাম স্যারের ক্যান্সার হয়েছে, লিভার ক্যান্সার। ডাক্তার বলে দিয়েছে বড়জোর তিনমাস টিকবে। সময়মত চিকিৎসা না করার জন্য রোগটা ক্যান্সারে রুপ নিয়েছে। স্যার বিষয়টা আগে থেকেই জানতেন।

জ্ঞান বিতরণকারী কখনো গরিব হয় না, তারপরেও তারা অর্থকষ্টে থাকেন। এটা একটা অলিখিত সংবিধান। তাই আগে থেকে জানা থাকলেও সবার জন্য অগ্রিম সংবাদ সুসংবাদ হয় না- এটা ডাক্তারদের কে বোঝাবে?

সবাই স্যারকে ফলমূল নিয়ে দেখতে যাচ্ছে। আমি সেই দলের একজন পাপী। বেশ কয়েকদিন আগে থেকে জানা থাকা সত্ত্বেও স্যারকে দেখতে যাইনি। আমি তার বাড়িতে গিয়ে দেখলাম অনেক লোক তাকে ভিড় করে দেখছে। বেশিরভাগই তার আত্মীয় স্বজন আর প্রতিবেশি। পাশের টেবিলে ফলের পাহাড়। কেউ কেউ সেই পাহাড় থেকে ফল পেড়ে স্যারকে খাওয়ানোর চেষ্টা করছে।
স্যার সেদিকে অসহায়ের মতো তাকিয়ে আছেন।
আজকের এই অসহায় চাউনি একসময় ছিল জ্ঞানগর্ভ। অন্ধকার দূর করা মোমবাতির আলোর মতো, একটা থেকে আরেকটা জ্বলে ওঠে। তাতে আলো কমে না বরং বাড়ে। কিন্তু আফসোস আমি অন্ধকারেই রয়ে গেছি, যে অন্ধকার আলোয় দূর হয় না!

স্যার দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলছেন একটু পরপর। নিঃশ্বাসের ফাকে একটা কথা শুনলাম। স্যার তার জীবনে এরকম জ্ঞানের কথা ক্লাসে কখনো বলেন নাই, কখনো না।
স্যার আমার দিকে তাকিয়ে বলল,”আজ আমি খেতে পারিনা- তোমরা খাওয়াতে চাইছ অথচ যখন আমি খেতে পারতাম তখন খেতে দাওনি।”

আমার মনে হলো কেউ একজন কামারের দোকানের গনগনে গরম শিক দিয়ে আমার কলিজা ছিদ্র করে দিয়েছে! চোখ দুটো অসহ্য রকম জ্বালা করছে। চিৎকার করে কাঁদতে চাইলাম; পারলাম না, দৌড়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যেতে চাইলাম; তাও পারলাম না। নোংরা আবর্জনার মতো এক জায়গাতেই স্থির হয়ে রইলাম!

আজকে স্যার নেই, সারা জীবন শিক্ষা দিয়েছেন, মৃত্যুর সময়েও আমাকে তিনি শিক্ষা দিয়ে গেছেন -উচিৎ শিক্ষা।
মনে হচ্ছে ফাসির দড়ি চেপে বসেছে গলায়। স্যারকে দেখে বাড়ি ফিরে প্রথমেই ইমামের কাছে গেলাম। অনেক কষ্টে সেদিন ইমামকে আবার জিজ্ঞেস করলাম,”ইমাম, কোরবানি না হওয়ার কারন গুলো আরেকবার বলবি?”

আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
প্রান্ত স্বপ্নিল কঠিন সত্যটা প্রকাশ করেছেন, ভালো লাগলো
আহা রুবন প্রচণ্ডভাবে একটা ঝাঁকুনি খেলাম। সমাজের গলা-পচা সংস্কৃতিকে উন্মোচিত করার জন্য অভিনন্দন। শেষের দিকে চোখ ভিজে উঠেছিল। ভাল করবেন আশা রাখি। শুভ কামনা রইল।
এটা কোন গল্প না, আমার স্যার ঠিক এভাবেই মারা গেছেন

২৫ জুলাই - ২০১৬ গল্প/কবিতা: ১ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪