অসহায়

শ্রমিক (মে ২০১৬)

মুহা. লুকমান রাকীব
  • ৪৫
পৌষের সকাল!
কয়দিন বাদে মাঘমাসের পদার্পণ। কোয়াশা ভরা এই সকালটা যেনো শীতের অন্ত নেই। মাঘমাস না আসতেই যেনো বাঘ পালানোর শীত সকালটাকে গিরে রেখেছে।
করম আলি রিক্সা চালক।
এই শীতে সচরাচর কোন রিক্সা চালকই পথে যাত্রির সন্ধানে আসে না। করম আলিকে আসতে হলো। এই কয়দিন যেনো তাকে আসতে হবে। নয়তো তার সন্তানটাকে বাঁচানো যাবে না।
করম আলি বিয়ে করেছে প্রায় প্রয়ত্রিশ বছর। সে রিক্সা চালক রফিক মিয়ার একমাত্র মেয়ে রুপনয়না‘কে বিয়ে করেছে। তারা এক অপরকে ভালবেসে বিয়ে করেছে। রুপনয়নার আপনজন কেউ আর পৃথিবীতে বেঁচে নেই। করম আলিরও কেউ নেই। তাদের বিয়ের তেত্রিশ বছর পর তাদের একটা ছেলে সন্তান হয়। ছেলেটির নাম রাখে নয়ন। তার বয়স এখন পঁচিশ মাস। সে এখন টুক-টাক কথা বলতে শিখেছে। ছেলেকে পেয়ে করম আলি ও তার স্ত্রী রুপনয়না যেনো বৃদ্ধ বয়সে সুখের স্নান করছে। করম আলি রিক্সা চালিয়ে রোজ রাতে নয়টার পর ঘরে ফিরতো। ছেলে জন্মাবার পর থেকে করম আলি রোজ মাগরিবের আযান দিতে না দিতেই ঘরে ফিরে। তাকে নিয়ে খেলা করে। ছেলে অফুটন্ত সামান্য মিষ্টি মিষ্টি কথাগুলো অসামন্য হয়ে তাকে সুখ দেয়। এই সুখটা যেনো বেশিদিন ভয়ে নিয়ে যেতে পারলনা।

কিন্তু এই কয়দিন নাগাৎ তাকে একটু দেরি করেই ফিরতে হয়। তার কারণ একটাই, তাকে এখন প্রতিদিন অন্তত আটশত টাকা রোজগার করে ঘরে ফিরতে হবে। কেননা, তার ছেলে নয়নের নিমুনিয়া টাইফয়েড। প্রতিদিন সকালে একটা, বিকালে একটা ইঞ্জেকশন দিতে হয়। দুইটা ইঞ্জেকশনের দাম ছয়শত টাকা আর যে ডাক্টার সাহেব তাকে সেটা পোশ করে তাকে পঁঞ্চাশ টাকা করে মোট একশত টাকা দিতে হয়। এভাবে সাতদিনে চৌদ্দটা ইঞ্জেকশন দিতে হবে।

করম আলি ফযরের নামাজ পড়ে আজ রিক্সা নিয়ে বের হয়েছে। তাকে আজ আটশত টাকা রোজগার করে ঘরে ফিরতে হবে। ডাক্টার সাহেব বলেছেন যতো দ্রুত সম্ভব ইঞ্জেকশন গুলো দেয়ার দরকার নয়তো নয়নকে বাঁচানো যাবে না। আজ আর ইঞ্জেকশন দেয়া সম্ভব নয়। হাতে এতদম টাকা পয়সা নেই। করম আলি নিজেরও শরীরটা অনেকদিন ধরে ভাল না। সে অনেকদিন ধরে কাশি রোগে বোকছে। গতো কয়দিন আগে সরকারি স্বাস্থ ক্লিনিকে গিয়ে তার কফ পরিক্ষা করে এসেছে। সেখানে থেকে বলেছে তার যক্ষা হয়েছে। ছয়মাসের জন্য নিয়মিত ঔষুধ সেবন করতে হবে তার পাশা-পাশি তাকে বিশ্রাম করতে হবে। কিন্তু সম্পূর্ণ বিশ্রাম করা করম আলির পক্ষে সম্ভব নয় বলে সে একদিন পর পর রিক্সা নিয়ে বের হতো। তাও আবার আধা বেলার জন্য।
শীত আসলে করম আলির কাশিটা এমনিতে আবার একটু বেড়ে যায়। পাশা-পাশি বয়সের চাপ তার উপর আবার যক্ষার উপদ্রপ। করম আলি রাস্তার পাশে রিক্সাটা স্থির করে তার উপর বসে গন গন কাশছিলো। কোয়াশার ঘনঘটার কারণে দূর থেকে কিছু দেখা যাচ্ছিল না। হঠাৎ করম আলির কানে ভদ্রসভাবের একটা শব্দ এলো,Ñ“এই খালি যাবে?”
করম আলি নিজের কাশিটাকে একটু দমন করার চেষ্টা করল। তারপর বলল,Ñ“হ সাহেব যামু! উঠেন। কোথায় যাইবেন?
-চলো! রেল ষ্টেশনে যাব।
ভদ্রলোকের সাথে একটা অল্পবয়সের যুবতী মেয়ে ছিলো। দুজন রিক্সায় উঠল। করম আলি কয়েকটা কাশি দিয়ে রিক্সার পেডেল চাপতে লাগলো।
-‘তুমি তো বললে না তোমার ভাড়া কতো? ভদ্রলোকটি বললো।
‘সাহেব! দিয়েন।
‘না! কতো বলো?
‘সাহেব, সকাল বেলা তো। এখন কোন রিক্সা পাইবেন না। তিরিশ টেকা দিয়েন।
‘কি বলো! দশটাকার ভাড়া ত্রিশ টাকা? ঠিক আছে চলো।

করম আলি রিক্সাটা নিয়ে ষ্টেশন গেইটের বামপাশে রাখলো। রিক্সা থেকে দুজন নেমে করম আলির হাতে নতুন একটা দশ টাকার নোট ধরিয়ে খুব দ্রুত চলে গেলো ষ্টেশনের ভিতরের দিকে। করম আলি একবার দশ টাকার দিকে আরেকবার লোক দুটুর দিকে তাকালো। কিছু বলার মতো কোন ভাষাই যেনো তার মুখে ছিলো না।

একাধারে করম আলি তিনদিন রিক্সা চালাতে সক্ষম হয়। আর সেই তিনদিনই তার ছেলে নয়নকে ইনঞ্জেকশন দেয়। পরদিন টাকার অভাবে আবার দুইদিন ইনঞ্জেকশন দিতে পারেনি। কয়দিন পর আবার যখন ইনঞ্জেকশন দিতে গেলো ডাক্টার সাহেব জানালেন ‘এগুলো এন্টিবায়োটিক ইনঞ্জেকশন। একাধারে সবগুলো দিতে হবে। একটা মিসিং হলো তো আবার প্রথম থেকে সব কয়টি দিতে হবে নয়তো রোগ সারানো সম্ভব নয়।
নয়নের মা রুপনয়না খুব টেনশনে পরে গেলো। বাচ্চাটির অবস্থা খুব একটা ভাল না। ইনঞ্জেকশনগুলো দেয়ার পর কিছুটা ভাল হয়েছিলো। এখন আবার আগের চাইতেও খারাপ অবস্থা। তাকে দ্রুত সরকারি হাসপাতালে খুব কষ্ট করে ভর্তি করানো হলো। খুব কান্নাকাটি করে ডাক্টার ডেকে এনে নয়নকে দেখানো হলো। ডাক্টার বললেন, নয়নের অবস্থা বেশি একটা ভাল না।
অন্যদিকে করম আলিরও অবস্থা বেশি একটা ভাল না। সে নিয়মিতো ঔষুধ সেবন করতে পারছে না।
সরকারি হসপিট্যালের চিকিৎসা অবহেলা আর অনাদরে তিনদিন থাকার পর নয়ন হসপিট্যালের একটা রুমে মারা যায়। এমন অবস্থায় করম আলি ছেলেকে ধরে কাদঁতে কাদঁতে বেডে পরে সেও মারা যায়। প্রাণের স্বামী আর বুকের ধন সন্তানকে হারিয়ে রুপনয়নাও যেনো বাকরুদ্ধ হয়ে অভাক নয়নে তাদের দিকে তাকিয়ে থাকে। সেই তাকিয়ে থাকাটাই তার জন্যে স্বাভাবিক।
“জীবন যখন দুর্বিসহ হয়ে পরে তখন কোনটা সুখ কোনটা দুঃখ ঠিক বুঝে উঠা যায় না।
এমন অসহায় লোকগুলো নিতান্তই যেনো কারও করুনার পাত্রও হতে পারে না। কোন কোন সময় কারও কারও করুনাটাও যেনো জীবন সুখময় করে তোলে-
বাস্তব জীবনে এমন অহরহ গঠছে। আমরা সুশীল সমাজ দেখেও না দেখার চরম বান করছে!!
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
Md.Nazmul Hasan Shanto ৫ বছর পর প্রথম কমেন্ট , গত ৫ বছর অনেক কিছু মিস করেছি । লেখকের শুভ কমনায় ।
কেতকী দুঃখজনক। ভোট রইল গল্পে।
অসংখ্য ধন্যবাদ প্রিয় কবি বন্ধু!!
সেলিনা ইসলাম গল্পের শুরুটা বেশ ভালোই ছিল...। গল্পের মাঝে প্রশংসনীয় ম্যাসেজও ছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে গল্পের কাহিনী ম্লান হয়ে গেছে সঠিক উপাস্থাপনের কারণে। আশাকরি আরও ভালো গল্প আগামীতে লিখতে পারবেন। সেই প্রত্যাশায় শুভকামনা রইল।
চমৎকার মন্তব্যের জন্য বন্ধু আপনাকে ধন্যবাদ। সময়ের অভাবে উপাস্থাপনাটা সত্যিই অবহেলিতো হয়ে ফুটলো!!
শামীম খান ভালো গল্প । শুভ কামনা রইল ।
আহা রুবন গল্পটা ভাল লেগেছে। মনে হচ্ছিল সত্য কোনও ঘটনা শুনছি। কিন্তু শেষ বাক্যটি যুক্ত করে মনে করিয়ে দিলেন এটি সত্য নয়। হৃদয় খানিকটা আর্দ্র হতে নিয়েছিল হতে দিলেন না, এটা করার খুব প্রয়োজন ছিল কী? আর কয়েকটি বানান ভুল আছে। শুভেচ্ছা রইল।
Rubel Ahmed ভোট দিলাম। সুন্দর লিখেছেন।

১৫ এপ্রিল - ২০১৬ গল্প/কবিতা: ৩ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪