বিলাপ

কাঠখোট্টা (মে ২০১৮)

অবাক হাওয়া prosenjit
  • ২৯
বসন্তের পড়ন্ত বিকেল ৷ সূর্যটা পশ্চিম কোনে হেলে পড়েছে৷ চার-পাঁচজন সবে কৈশোরে পা দেয়া ছেলের দল খেলতেছে নদীর কাছে ৷ তাদের দলনেতা দুরন্ত বালক রানা ৷ তার দুরন্ত এই স্বভাব ই তাকে দলনেতার মর্যাদা এনে দিয়েছে ৷ অনেক ছনমনে,প্রানবন্ত ছেলেটার মাঝে আজ বড়ই আনমনে ভাব ফুঁটে ওঠছে ৷ খেলাতে আজ সে মনঃসংযোগ করতে পারছে না ৷ কিছুএকটা নিয়ে সে বড়ই চিন্তিত ৷ সমবয়সী বন্ধু রাসেল এর কথায় চিন্তায় ছেদ পড়ল৷ কিরে দুস্ত আজকা তরে নিরব লাগতেছে কেন??  না রে দুস্ত কাল থেইকা থ আর খেলতে পারমু না তাই একটু মনটা খারাপ লাগতেছে ৷ তরা ভাল কইরা খেলিস ৷ রানা এই কথাটা বলে আবারও আনমনে হয়ে গেল ৷ চায়ের দোকানে কাল থেকে তাকে কাজ করতে হবে ৷ তার পরিবারে মা আর ছোটবোন আছে ৷ তার বাবা ছোটবোনটার জম্মের কিছুদিন পর যে বিদেশ গিয়েছিল আর কোন খৌঁজখবর নেই নি তাদের ৷ এক দূর সম্পর্কে চাচা মারফত তারা জানতে পেরেছে তিনি আরেকটা বিয়ে করে নতুন সংসার পেতেছেন ৷ সেই থেকে তাদের কষ্টের দিন শুরু হয়েছে ৷ তার মা এর বাসা ওর বাসা কাজ করে তাদের বড় করার চেষ্টা করতেছে ৷ কিন্তু দিন-দিন খরচ বেড়ে চলায় তিনি সামাল দিতে পারছেন না ৷ তাই এ বছর লেখাপড়া বাদ দিয়ে তার মামা তাকে কাজ করার জন্য বলেন ৷ কাজ ও তিনি টিক করে দিয়েছেন ৷ চায়ের দোকানে কর্মচারীর কাজ ৷ তিনবেলা খাওয়াবে আর মাসান্তে ১০০০ টাকা বেতন দিবে ৷ তার মা এর ইচ্ছা না থাকলেও তার ইচ্ছা আছে ৷ তার মার ইচ্ছে তাকে লেখাপড়া শিখাবে  ৷ রানার ও খুব ইচ্ছে ছিল পড়াশোনার শিখার ৷ কিন্তু যে ঘরে তিন বেলা ভাত যোগার হয় না সব দিন হয় সে ঘরের ছেলের পড়ালেখা বিলাসিতা ছাড়া কিছু না সে ভাবল ৷ তবে সে যত কষ্টই হোক তার ছোট আদরের বোনটাকে শিক্ষিত করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ৷ বন্ধুদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ি পথে পা বাড়াল ৷ বাড়ি ফিরে শুনল তার মা কে বলতে ভাইজান রানারে কাজ না দিলে হয় না কত আর বয়স? না বইন তুমি আর না কই র না এই বয়েসের অনেকে পোলাপাইন ত কাজ করতেছে ৷ রানা কাজ করলে তুমার কষ্টও একটু কম হইব ৷ রানা ও ত মত দিছে ৷ রানার মা চুপ হয়ে যায় বুকের মানিক নিজের কাছে থাকবে না এটা ভেবে তার কষ্টে বুক ভারী হয় ৷ অপরদিকে রানার মাঝে বিপুল উৎসাহ পরিলক্ষিত হচ্ছে ৷ স্কুলে সে শহরের অনেক গল্প শুনেছে ৷ সেখানে ছবি দেখা যায়,বড় গাড়িতে করে বেড়ানো যায়,সুন্দর-সুন্দর ভবন দেখা যায় আরও অনেক কিছু ৷ এগুলো তার উৎসাহের উপাদান হয়ে উঠল ৷ তাই তার মা বারে-বারে যাবে কি না জানতে চাইলে ও তার জবাব একটাই হয় সে যাবে ৷ তার মা একটা দীর্যশ্বাস দেয় ৷ ছেলেকে বাহিরে পাঠাতে তার মন চাইছে না৷তার স্বামী বাইরে গিয়ে আর আসেনি তাই তার ভেতর প্রচন্ড ভয় ছিল ৷ কিন্তু ছেলের আগ্রহের মাঝে তিনি হার মানলেন ৷ রানা তার খেলার সকল প্রিয় বস্তু সমূহ যেমণ ঘুড়ি,নাটাই,চক্রি,বল ইত্যাদি ছোটবোন ফারজানাকে দিয়ে দিল৷ফারজানা সেগুলো পেয়ে খুশি ৷ কিন্তু ভাই এর দূরে চলে যাওয়াও তাকে সমান কষ্ট দিতেছে ৷ রানার ও আদরের ছোট বোন,প্রিয় মা,খেলার বন্ধুদের ছেড়ে যেতে অনেক কষ্ট হচ্ছে ৷ তবেও তাকে যেতে হবে৷পরদিন সকালে সূর্য যখন পূর্ব দিগন্তে সে মা,বোন,প্রিয় গ্রাম,খেলার বন্ধু,স্কুল সব ছেড়ে মামার সাথে রওনা দিল ৷ তারা একটা ইন্জিনের নৌকার উপর ওঠল ৷ নৌকাটা যত দূরে যেতে লাগল তার প্রিয় গ্রাাম,খেলার মাঠ সব অস্পষ্ট হতে লাগল৷রানার চোখে পানি চলে আসল৷রানা নদীর দুপাশের গ্রামগুলো দেখতে লাগল ৷ একসময় তারা নৌকা তীরে ভীড়ল ৷ তারা নৌকা থেকে নেমে একটা বাসে উঠল৷রানা প্রথম বাসে উঠছে ৷ তাই সে সিটে বসে আগ্রহ নিয়ে সব দেখতে লাগল ৷ বাসটা পূর্ণ গতিতে চলতে লাগল ৷ হঠাৎ রানার শরীর টা অস্হির-অস্হির লাগতে লাগল ৷ সে বুঝতে পারল তার বমিরভাব করতেছে৷সে বমিটাকে কোনরকম বাধা দেয়ার চেষ্টা করল ৷ কিন্তু বিধিবাম পারল না ৷ সে তার মামাকে এই অবস্হার কথা জানাল৷মামা তাকে জানলা দিয়ে মাথাটা একটু বের করে বমি করতে বলল ৷ রানা তার মামার কথা মত জানলা দিয়ে বমি করে ভিতরের সব বের করে দিল ৷ বমি করার পর রানা সুস্হ হল৷কিন্তু খুব কাল্ত হয়ে পড়ল ৷ বাসের সিটে মাথা দিয়ে চোখ মুঝে কখন ঘুমিয়ে পড়ল বুঝতেও পারল না ৷ মামার ডাকে ঘুম ভাঙ্গল ৷ আয় রে রানা আমরা পৌছে গেছি৷মামা রানাকে নিয়ে একটা রিক্সায় উঠল ৷ রানা অবাক চোখে শহর দেখতে লাগল ৷ অবশেষে তারা গন্তব্যে পৌছল তখন বিকেল হয়ে গেছে ৷ মামা রানাকে নিয়ে চায়ের দোকানের মালিকের কাছ দিয়ে রানার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল৷দোকানটা বেশী বড় না ৷ দোকানের মালিক মাঝ বয়সি৷তিনি রানাকে দোকানের বসালেন ৷ টিকটাক করে দোকানের তার কাজ বুঝিয়ে দিলেন  ৷ আজ বসে বসে দেখার জন্য বললেন এবং কাল সকাল থেকে কাজে লাগতে বললেন ৷  রানা বসে-বসে সব দেখতে লাগল৷ক্ষিদে লেগেছে এটা তার মালিককে জানানোর পর তিনি ধমক দিয়ে বললেন এখনও এক টাকার কাজ করসি নি খাওয়ার চিন্তা চুপ করে বসে থাক  ৷ রাত যখন গভীর হল মালিক দোকান লাগিয়ে রানাকে নিয়ে বাড়ি গেলেন৷মালিকের দুইছেলে রানার প্রায় সমবয়সী৷মালিকের বৌ তাদের রানার সাথে মিশতে বারণ করল রানার সামনেই খারাপ হয়ে যাবে এই অজুহাতে  ৷ মালিকের পরিবারের সবার খাওয়া পর রানাকে খাবার দিল  ৷ খাবারের পরিমাণ অল্প ছিল রানার পেঠ ভরল না৷রানা ভাত কোনরকম খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ল  ৷ খুব ভোরে রানার ঘুম ভাঙ্গল মালিকের ডাকে  ৷ মালিক রানার হাতে একটা বড় বালতি দিয়ে বলল পাশের কল থেকে পাঁচ বালতি দোকানে নিয়ে রাখতে  ৷ রানা বালতি নিয়ে কল চাপতে লাগল  ৷ পানি ভর্তি বালতির ওজন অনেক বেশী হওয়ায় অনেক সময় লাগল  ৷ তার জন্য মালিকের ধমক খেতে হল  ৷ দোকান খোলার পর চায়ের কেটলি,চা কাপ,ঝগ,মগ প্রচুর বাসন রানাকে সাবান দিয়ে ধৌত করার জন্য দিল  ৷ রানার অনেক পরিশ্রম হতে লাগল৷সারাদিন কাজের মধ্য দিয়েই চলতে লাগল৷চা পরিবেশন,কাপ ধোওয়া,পানি আনা ঘোরেফিরে এ কাজ করতে লাগল৷কাজ অনুযায়ী খাবার পেল না  ৷ এভাবেই শহুরে জীবণ চলতে লাগল  ৷ মালিকের বব্যহার দিন-দিন ভয়ানক খারাপ হতে লাগল  ৷ চড়,কিল ,মার চলতে লাগল রানার উপর  ৷ সকালে পানি আনতে দেরী হলে মালিক মারে আবার পানি যদি রাস্তায় পড়ে তাও মারে,চা দিতে দেরী হলে মারে,কাপ ধৌত করতে দেরী হলে মারে৷যত বার ভাত খায় দিনে তার থেকে চারগুন বেশী বার মার খায়৷রানার দম বন্ধ হয়ে আসে  ৷ মারের ব্যথায় রাতে ঘুমুতে পারে না  ৷ তবু সকাল থেকে রাত কঠিন পরিশ্রম করতে হয়৷রানা মায়ের কথা,বোনের কথা,গ্রামের কথা মনে করে একা-একা কান্না করে  ৷ দিনদিন সে শাররীক ও মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে  ৷ হঠাৎ একদিন ভুলবসত রানার হাত থেকে চায়ের কাপ ভেঙ্গ যায় ৷ এটা দেখে মালিকের মাথায় বিনা মেঘে বজ্রপাত হয়  ৷ মালিক বাঁশ দিয়ে রানাকে নির্দয় এর মত পেঠাতে থাকে৷রানা রক্তাত হয়ে পড়ে  ৷ আশেপাশের লোকজন এগিয়ে আসে৷মালিক অবস্হা বেগতিক দেখে কেটে পড়ে  ৷ রানাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়৷রানার গ্রামে খবর যায়  ৷ রানার মা পাগলের ছুটে আসে হাসপাতালে৷রানার মার কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে৷ডাক্তার জানায় সে পূর্ব থেকেই আহত ছিল  ৷ তারউপর আজকের আঘাত প্রচন্ডভাবে ক্ষতি হয়েছে মাথার৷তাই বাঁচানো সম্ভব না  ৷ রানার মা ছেলের সাথে শেষ দেখা করে,রানা মাকে দেখে টোঠের মাঝে হাসি ফোঁটে  ৷ আমার বইনডারে পড়ালেখা শিক্ষাই ও মা কারও ঘরে কাজে দিও না মা বলে রানা মায়ের কূলে লুটিয়ে পড়ে৷রানার মায়ের চীৎকার এ পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে৷সাংবাদিকরা আসে ছবি তুলে  ৷ খবর ছাপায়ক্ষ ৷ জনতা বিচারের দাবিতে মিছিল করে৷সময়ের হাওয়ায় সব মিলিয়ে যায়  ৷ শুধু মিলায় না রানার মায়ের বিলাপ বছরের পর বছর চলতে থাকে "আমার বাপ ধন কই গেলে রেইইইইইইইই......................................................
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মৌরি হক দোলা ভালোলাগা ও শুভকামনা রইল.......
অবাক হাওয়া prosenjit অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই ৷ এখন ও গ্রাম গন্জে মফস্বলে সঠিক পরিচার্যার অভাবে পড়া বাদ দিয়ে অবুঝ শিশুরা কাজ করে খায় ৷ এই অবুঝদের প্রতি চলে নির্মম কঠোরতা ৷ এদেরকে এর থেকে উদ্ধার করে পড়াশুনোয় ফেরত পাঠাতে সমাজে সচেতনতা সৃষ্টির প্রয়োজন ৷
মামুনুর রশীদ ভূঁইয়া শিশু শ্রমের প্রতি কঠোরতা বন্ধ হোক। ভালো লাগল গল্পটি। পছন্দ ও ভোট রইল।
বিশ্বরঞ্জন দত্তগুপ্ত গল্পের বিষয়বস্তু আর লেখার প্রচেষ্টাকে অনেক ধন্যবাদ জানাই । গল্পটি প্যারা করে লিখলে আর ভাল লাগত । অনেক অনেক শুভকামনা রইল ।
ধন্যবাদ ভাই ৷ আমার ও এখন মনে হচ্ছে প্যারা করে দিলেই ভালো হতো পড়তে আরেকটু সুবিধা হতো ৷ ধন্যবাদ ভবিষৎ যদি কখনও এটা আবার কোথাও প্রকাশের সুযোগ পাই তবে অবশ্যই প্যারা করে দিব ইডিট করে ৷
রবিউল ইসলাম ভাল লিখেছেন প্রিয়। আপনার জন্য শুভ কামনা ও ভোট রইল। আমার গল্প ও কবিতায় আমন্ত্রণ রইল।
#প্রিয় ৷৷৷৷৷অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই ৷ অবশ্যই ৷ আমন্ত্রনের জন্য ধন্যবাদ

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

শিশু শ্রমিকদের প্রতি যে আমাদের সমাজের প্রতিনিয়ত ঘটে চলা নির্দয়,আবেগহীন নির্যাতন সে প্রসঙ্গটিই আমি তুলে ধরার চেষ্টা করেছি ৷ তাই আমি মনে করে গল্পের বিষয়বস্তু এ মাসের বিষয় কাঠখোট্টা বা আবেগশূণ্যতার সাথে সামন্জ্যস পূর্ণ ৷ ধন্যবাদ ৷

১৫ এপ্রিল - ২০১৬ গল্প/কবিতা: ১৮ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪