১
ছেলেটার যেদিন জম্ম হল সেদিন ছিল মঙ্গলবার৷ তাই সবাই বলাবলি করছিল যে গরিবের ঘরে পূর্নিমার চাঁদ হয়ে আলো করতেই তার জম্ম৷ মায়ের কোলে ছেলেটা হাসি—কান্নায় যাদবপুর গ্রামের এক নিম্ম মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠছিল৷ বাবা—মা তাকে নিয়ে নতুন স্বপ্ন বুনতে লাগল৷ তিনটি মেয়ের পর একমাত্র ছেলের জন্ম গরিব ওই দম্পতির ক্ষুদ্র ঘরে তাই ছেলটাকে নিয়ে আনন্দের শেষ ছিল না তাদের মনে৷ অনেক বড় অনুষ্ঠান করে ছেলের মুখে ভাত ও নামকরন অনুষ্টান আয়োজন করল ছেলেটির বাবা৷৷অনুষ্টান আয়োজনে তাহার কোন কমতি ছিল না৷ সাধ্য মত সব কিছু করেছিলেন অনুষ্টানে৷ ছেলেটির গরিবের ঘরে আশার বীজের মত অঙ্কুরদম হয়েছিল৷ তাই হয়ত মা—বাবা নাম দিল অঙ্কুর৷ মায়ের কোলে ,বাবার আদরে,বোনদের আদরে বেড়ে ওঠছিল অঙ্কুর৷ মা—বাবা আর বোনদের হাত ধরে ধরে হাটা শিখল যেদিন টিক সেইদিন থেকে তাকে আর ধরে রাখা যেত না৷ চারদিকে দৌড়াদোড়ি করে নিজের দূরন্ত অস্তিতের সাথে পরিচিত করাত সকলকে অঙ্কুর৷ অঙ্কুরের মুখে যখন মা ডাক ফুটল তখন তার মায়ের আনন্দের সীমা ছিল না৷ এই ভাবেই পরিবারের সবাইকে হাসি—খুশিতে মাথিয়ে রেখে বড় হয়ে উঠছিল অঙ্কুর৷ দেখতে দেখতে তার স্কুলে ভর্তি হওয়ার বয়স এসে গেল৷ অঙ্কুরের বাবা পরেশ বাবু একজন প্রাইমারি শিক্ষক যাদবপুরের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের৷ তিনি তার সন্তানকে নিজের স্কুলে ক্লাস ১ ভর্তি করালেন৷ অঙ্কুরের স্কুলে ভর্তির করে উজ্জল ভবিষৎ এর স্বপ্ন দেখতে লাগলেন পুত্র কে নিয়ে ৷ তা যে অমুলক নয় তার প্রমান পেলেন ছেলের মেধার সাথে পরিচিত হয়ে৷ সত্যিই অঙ্কুরের পড়ায় মনোযোগ ও স্মৃতি ছিল প্রখর৷ যা তার পিতাকে আরও আশান্বিত করছিল৷ তবে একই সাথে আরেকটি বিষয় ও চিন্তার কারন হয়ে উঠল৷ অঙ্কুরের দুরন্তপনা স্কুলে ভর্তি হয়ে লাগাম ছাড়া হয়ে উঠেছিল৷ যা থেকে কোনভাবেই নিবৃত্ত করতে পারছিলেন না নিজ সন্তানকে পরেশবাবু৷ নিজের আদরের সন্তান ও বয়স কম হওয়ায় শাসন ও করতে পারছিলেন না ৷গ্রামের কোলে জন্ম হওয়ায় অঙ্কুরের সবুজ—শ্যামল প্রকৃতির সাথে ছিল নিবির সম্পর্ক ৷এইভাবেই ক্লাস ১ থেকে পরবর্তী ক্লাসে সাফ্যলের সহিত উর্ত্তীন হচ্ছিল অঙ্কুর৷ তাই তার পিতা তার সকল দুরন্তপনায় বাধা হয়ে দাড়াঁচ্ছিল না৷পড়ার পাশাপাশি খেলার মধ্যে ও অঙ্কুর ছিল অন্তপ্রাণ ৷ গুল্লাছুট,বৌছি,কানামাছি,লুকোছুরি,দাঁড়া—ঘুটি ,ছোঁয়াছোয়ি সহ গ্রাম বাংলার প্রায় সকল খেলায় ই ছিল তার খেলার বিষয় ৷ এর মধ্যে গুল্লাছুট,লুকোছুরি ও ছোঁয়াছোয়ি ছিল তার প্রিয় খেলা ৷ গুল্লাছুট খেলায় সে সব সময় হত গুল্লা ৷ দৌড়ে তাকে স্পর্শ করার সামর্থ তার বন্ধুদের মধ্যে ছিল না ৷ যার ফলে তার দলই জিতত সর্বদা ৷ ছোঁয়াছোয়ি খেলাটা পুকুরের পানির মধ্যে ডুব সাঁতারের মাধ্যেমে খেলত৷ মা ও বড় বোনদের বকা উপেক্ষা করে ঘন্টার পর ঘন্টা পানিতে এই খেলা করত বন্ধুদের সাথে৷ যখন পানি হতে উঠত তখন তাদের চোখ গুলো টকটকে লাল হয়ে যেত৷ অঙ্কুর ও তার বন্ধুরা তখন দুহাত দুচোখে দিয়ে একটি ছড়া ও বলত৷ তাদের বিশ্বাস এতে চোখ আবার সাদা হয়ে যাবে ৷ তবে অঙ্কুরের এর এই পানিতে নামাকে নিয়ে মা—বাবা দুজনের ছিল ভয় ও আতঙ্ক ৷ কিন্তু দুরন্ত সন্তান অঙ্কুরকে শত বাধা সত্বেও আটকিয়ে রাখা যেত না ৷ তবে অঙ্কুরের দুরন্তপনা করলে ও পড়াশুনোয় ছিল খুবই ভালো ৷স্কুলে সর্বদা প্রথম হত অঙ্কুর ৷ স্কুলে তার আনন্দময় দিনগুলো ভাল কাটছিল৷ স্কুলের পাশে যে বিশাল তেতুল গাছ টা ছিল ৷ ওটার পাতা ছুবুতে অঙ্কুররা বড়ই আনন্দ পেত ৷ এর জন্য শিক্ষকদের কাছে প্রচুর বকা শুনত ৷ শিক্ষকরা বলতেন পাতা ছুবোয় গরু—ছাগলরা ৷ তুমরা কি গরু—ছাগল ৷ কিন্তু কে শুনে কার কথা শিক্ষক ক্লাস থেকে বাহির হলেই পুনরায় একই কাজ করত ৷ এইভাবেই ক্লাসে ফাইবে টেলেন্টফুলে বৃত্তি পেয়ে পাশের গ্রামের হাইস্কুলে ক্লাস সিক্স এ ভর্তি হল অঙ্কুর ৷
২
নতুন স্কুলে ৬ ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হয়েও ভাল রেজাল্ট করতে লাগলো প্রতিটি পরীক্ষাতে অঙ্কুর৷ তবে তার দুরন্তপনার জন্য শিক্ষকদের হাতে প্রচুর মার খেত ৷
অঙ্কুর বড় স্কুলে ওঠে তার দুরন্তপনাও যেন বাড়িয়ে দিয়েছিল৷ ক্লাসের বন্ধুদের সাথে দুষ্টমি,বাসায় ফেরার পথে দুষ্টমি,পাড়ার বন্ধুদের নিয়ে দুষ্টুমি ছিল রেগুলার
বিষয়৷স্কুলে উঠার পর তার পুরোনো খেলাগুলোকে অবসর দিয়ে ক্রিকেট,ফুটবলকে আপন করে নিল৷ খেলার পাশাপাশি পড়াও চলতে লাগল ৷ এইভাবে ক্লাসে এইটে বৃত্তি পেয়ে ক্লাস নাইনে উঠল৷ তখন অঙ্কুরের পিতা পরেশবাবু ছেলেকে আশা নিয়ে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি করলেন ৷ অপরদিকে অঙ্কুরের তখন বয়ঃসন্ধি কাল অতিবাহিত হচ্ছিল পুরোমাত্রায় ৷ ক্লাস এইটে ই শরীরের পরিবর্তন জানান দিচ্ছিল কিন্তু তখন এত গুরত্ব পায়নি তার কাছে ৷ কিন্তু এখন সে বুঝতে পারছে তার শরীর পরিবর্তন হচ্ছে৷ তার গলার স্বর,নাকের নিচের চুলগজানোসহ বয়ঃসন্ধির বিভিন্ন পরিবর্তনগুলো তাকে প্রতিনিয়ত অস্তস্তিতে ফেলেছিল প্রতিনিয়ত ৷ অপরদিকে তার দুরন্তপনাও যেন একনিমেষেই কোথায় হারিয়ে গেল ৷ সে চুপচাপ হয়ে গেল ৷ পরিবর্তিত এই সময়ের সাথে সে তাল মেলাতে পারছিল না ৷ এই সময়ে পরিবারের সমর্থন ছিল প্রয়োজন কিন্তু গ্রাম বাংলায় কিংবা শহর বাংলায় ও খুব কম পরিবার ই আছে যারা ছেলেদের বয়ঃসন্ধিতে সামান্য সহায়ক হয় ৷ মেয়েদের ক্ষেত্রে অব্যশ কিছু ভিন্নতা আছে অন্তত এই ক্ষেত্রে ৷ কারন একটি মেয়ের সব থেকে বড় বন্ধু তার মা ও বড়—ছোট বোনেরা হয়ে থাকে এই সমাজে ৷ছেলেদের ক্ষেত্রে সেন্হ—মমতা পেলেও বন্ধুর মত পরিবারের সদস্যদের সাথে মেশা এখনও সমাজে প্রচলন হয়নি ৷ যার ফলে অঙ্কুর এই পরিবর্তিত সময়ের সাথে লড়াই করতে না পেরে নিজেকে চুপচাপ ও ঘরকোনো করে তুলছিল ৷ তবে পড়ায় তাহার মনোযোগ ছিল ৷ আগের চেয়ে বেশী সময় ঘরে থাকছিল ফলে পড়ায় সময় বাড়িয়েছিল ৷ তাই হয়ত পরিবারের সদস্য চোখে ব্যতিক্রম লাগেনি ৷ তারা ভেবেছেন ছেলে বড় ক্লসে উঠেছে পড়া বেশী তাই খেলাধূলো বাদ দিয়ে পড়ায় মনোযোগী হয়েছে ৷ উল্টো অঙ্কুরের পরিবারের সদস্যরা খুশি ই হয়েছে এত দিনে ছেলের বোঝ হল বলে ৷ কিন্তু কে জানত অঙ্কুরের এই চাপা স্বভাবটাই সারা জীবন তার সঙ্গী হবে ৷
৩
ক্লাস নাইন থেকে টেনে ভালো রেজাল্টে উত্তীর্ণ হলো অঙ্কুর ৷ কিন্তু হঠাৎ করে একটা ঝড় এলও তাদের পরিবারে ৷ তার পিতা পরেশ বাবু স্কুল থেকে ফেরার পথে হঠাৎ বুকে ব্যাথা অনুভব করলেন ৷তাকে নিয়ে ভয়াবহ অবস্হা ৷ তাকে ধরাধরি করে বাসায় নিয়ে যাওয়া হল ৷ গ্রামের ডাক্তার সুর্দশন বাবু দেখার পর শহরের একজন ডাক্তারের কাছে যাবার পরার্মশ দিলেন ৷ কিন্তু পরেশবাবু কিছুটা সুস্হ হবার ডাক্তার দেখানোটাকে গুরুত্ব দিচ্ছিলেন না ৷ এমনিতেই নুন আনতে পানতা ফুরায় ৷ তার মাঝে ছেলেকে ডাক্তার বানানোর জন্য টাকা জমাচ্ছিলেন ৷ তাই চাইছিলেন না জমানো টাকা খরচ করতে ৷কিন্তু বিধিবাম কিছুদিনের মধ্যেই আবারও তিব্র বুকে ব্যাথা অনুভব করলেন ৷ এবার ডাক্তার সুদর্শনবাবু সাবধান করে পুনরায় শহরের ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পরার্মশ দিলেন ৷ তবু পরেশবাবু কিছুতেই যেতে চাইচ্ছিলেন না ৷ শেষপর্যন্ত অঙ্কুরের মা আর বোনদের পিড়াপিড়িতে শহরের ডাক্তারের কাছে গেলেন ৷ ডাক্তার পরেশ বাবু কে ইসিজি ও ইকো টেস্ট দিলেন ৷ যা ব্যয়বহুল ছিল ৷ অঙ্কুরের মা স্বামীকে খরচের কথা গোপন করে টেস্ট দুটো করালেন ৷ ডাক্তার সাহেব রিপোর্ট দেখে যা বললেন তাতে পরেশ বাবু ও ওনার স্ত্রীর মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল ৷ ডাক্তারসাহেব জানালেন যে অঙ্কুরের পিতার হার্টে বল্ক হয়েছে ৷ দ্রুত অপারেশন করাতে হবে না হলে যে কোন সময় বিপদ হতে পারে ৷ডাক্তার সাহেব দুদিন সময় দিলেন এর ভিতর টাকা—পয়সা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে বললেন ৷ পরেশ বাবু অপারেশন করাতে রাজি হচ্ছিলেন না বাড়ি গিয়ে ৷ কারন অপারেশনের জন্য যে টাকা প্রয়োজন তার জন্য তার সারাজীবনের সন্চয় আর অবশিষ্ট থাকবে না ৷ কিন্তু পরেশবাবুর স্ত্রী ও মেয়েরা অপারেশন করানোর জন্য বুঝাতে লাগলেন ৷ তারা বুঝাছিলেন এটাই অঙ্কুর যেদিন ভাল ডাক্তার হবে সেদিন টাকা আবার হবে ৷ শেষপর্যন্ত পরেশবাবু নিজের সাথে সংগ্রাম করে অপারেশনের জন্য হাসপাতালে ভর্তি হলেন ৷ স্কুল থেকে মেডিকেলে ছুটি ও আনলেন ৷ এবছরই আবার পরেশ বাবু র পেনশনে যাবার কথা ৷ তার চাকুরী জীবনের সবচেয়ে বড় সুনাম ছিল এটাই তিনি একদিনের জন্য ও ছুটি নেননি ৷ অসুবিধা যত বড়ই হোক তিনি যথারীতি টিক টাইমে স্কুলে উপস্হিত থাকতেন ৷ কিন্তু আজ তার অসুস্হতা চাকুরী জীবনের শেষ সময়ে সেই সুনাম টা কেড়ে নিল ৷চিকিৎসরা বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করে অপারেশনের একটি তারিখ দিলেন ৷ বাইপাস অপারেশন হবে ৷ আরেকটি রাস্থা অবশ্য ছিল এটি হল রিং বশানো ৷ কিন্তু কিছুদিন পরে পরে রিং পাল্টাতে হবে যাতে টাকা ও সময় দুটোই খরচ হবে বলে পরেশবাবু বাইপাস অপারেশনের ই স্হির থাকলেন ৷ অপারেশনের তারিখ যত এগোতে থাকল পরেশবাবুর মনে ভয় চাপতে লাগল ৷ তিনি এটাই চিন্তা করতে লাগলেন সর্বদা তার কিছু হলে তার পরিবারের কি হবে ৷ তিনটি মেয়ে বিয়ের বাকি ৷ ছেলেটাও সবেমাত্র ক্লাস টেনে ৷ এসব দুশ্চিন্তা তাকে ভাবিয়ে তুলছিল ৷ তবে অঙ্কুরের মা স্বামীকে সর্বদা সাহস দিচ্ছিলেন ৷ অঙ্কুরের তখন স্কুলে ও পড়ায় মন বসত না ৷ অঙ্কুরের বোনদের ও একই অবস্হা ৷ সবাই মনমরা হয়ে বাবার কথা চিন্তা করত আর ভগবানের কাছে প্রার্থনা করত যেন তাদের বাবাকে সুস্হ করে দেন ৷ সন্তানদের আকূল আবেদন হয়ত ভগবানের কর্ণে পৌছেছিল ৷তাই নির্দিষ্ট তারিখ অনুযায়ী সফলভাবে পরেশবাবুর অপারেশন সম্পন্ন হল ৷অপারেশনের পর কিছুদিন পরীক্ষার করে হাসপাতাল রিলিজ করল পরেশ বাবুকে ৷ পরেশ বাবু বাড়িতে আসলেন ৷ গ্রামের লোকেরা,স্কুলে সহশিক্ষকরা এবং আত্তীয় স্বজনরা পরেশ বাবু কে বাড়িতে দেখতে আসল ৷ অঙ্কুরদের পরিবারের মধ্যে ও একটি শান্তির হাওয়া বইতে লাগল ৷৷
৪
পরেশ বাবু দুই মাস বিশ্রামে পুরোপুরি সুস্হ হয়ে ডাক্তারকে দিয়ে চেকআপ করিয়ে পুনরায় কর্মস্হলে যোগ দিলেন ৷অঙ্কুর পুনরায় পূর্ণ মনোযোগসহ পড়ায় মনোযোগ দিল ৷ টেস্ট পরিক্ষায় ভাল রেজাল্ট করে ফাইনালের প্রিপারেশন নিতে লাগল ৷ অপরদিকে পরেশবাবুর ও অবসরের সময় চলে আসল ৷ যেদিন তার কর্মস্হলে শেষ কার্যদিবস ছিল ৷ সেদিন তার সম্মানে ছোট একটি আয়োজন করেছিল ৷অনেক শিক্ষার্থীই প্রিয় শিক্ষকের বিদায়ে চোখে পানি ধরে রাখতে পারেনি ৷ অবশেষে অনেকবছর পর পরেশবাবু অবসর পেলেন ৷ তিনি অঙ্কুরের পড়াশুনায় আরও খেয়াল নিতে লাগলেন ৷ অঙ্কুরে পরীক্ষার সময় চলে আসল ৷ সব পরীক্ষা ই ভাল হল তার ৷ পরীক্ষার বন্ধে মামারবাড়ি বেড়াতে গেল অঙ্কুর বড় বোন ও মাকে নিয়ে ৷ সেখানে কিছুদিন ভালই কাটছিল ৷ হঠাৎ বাবা তাদের নিতে আসল ৷ কি যেন বিশেষ প্রয়োজন ৷ বাড়ি গিয়ে সব খুলে বলল ৷ পরেশ বাবুর বড় মেয়ে শ্রাবণীকে দেখতে আসছে পাত্রপক্ষ ৷ তাই এত জরুরি তলব ৷ পরদিন পাত্রপক্ষ এসেছিল এবং কন্যাকে দেখল ৷ শ্রাবণীকে পাত্রপক্ষের পছন্দ হল ৷ পাত্র কেও পরেশবাবুর পছন্দ হল ৷ তাই দুই পক্ষের সম্মতিতে তে বিয়ের আলোচনা শুরু হল ৷ সব কিছু টিকটাক চলছিল ৷ কিন্তু সম্যাসাটা হল তখনই যখন পাত্র পক্ষ মোটা অঙ্কের যৌতুক দাবি করল ৷ তারা বিভিন্ন আসবাবপত্রের সহ মোটা অঙ্কের যৌতুক দাবি করল ৷পরেশবাবু কিছুটা চিন্তা করলেন পাত্রটা ভাল এবং হাতে পেনশনের টাকাও আছে তাই তিনি আর অমত করলেন না ৷ শিগ্রই বিয়ের তারিখ টিক হল ৷অঙ্কুরের বড় বোন শ্রাবণির বিয়ে হয়ে গেল ৷ শ্রাবণির বিদায়ের দিন অঙ্কুর চুপচাপ খুব কেঁদেছিল !!
৫
জীবন তার স্বাভাবিক গতিতে চলতে লাগলো ৷
এরই মধ্যে অঙ্কুরের এস এস সি পরীক্ষার রেজাল্ট দিল ৷ অঙ্কুর প্রত্যাশা মত ভালো রেজাল্ট করল ৷ পরেশবাবু অঙ্কুরকে শহরের কলেজে ভর্তি করলেন ৷ কলেজের হোস্টেলেই তার থাকার ব্যবস্হা করা হল ৷ কলেজের নতুন পরিবেশে অঙ্কুরের নতুন বন্ধু হল অনেক ৷ অঙ্কুরের পড়াশুনো ভালভাবে চলতে লাগল ৷ এইভাবে দেখতে দেখতে এইচ এস সি পরীক্ষা ও দিয়ে দিল অঙ্কুর ৷ পরীক্ষা পরবর্তী সময় তার বন্ধুরা যখন মেডিকেল কোচিং করতেছিল তখন অঙ্কুর কোচিং করতে পারছিল না ৷ কারন তাদের অর্থনৈতিক অবস্হা এখন একেবারে ভেঙ্গে গিয়েছিল ৷ অঙ্কুরের বাবা পরেশ বাবু নিজের অপারেশন ও মেয়ের বিয়েতে নিজের উর্পাজিত অর্থের সমস্ত খরচ করে দিয়েছেন ৷ অঙ্কুরের এখন অনেক কিছু বোঝার বয়স হয়েছে ৷ সে জানে যদি কোচিং করে মেডিকেলে চান্স ও পায় তবুও তার মেডিকেলে পড়ার খরচ চালানো যাবে না ৷ তাছাড়া তার দুটি বোন এখন ও বিয়ের বাকি ৷ তাই সে বাবাকে বিভিন্ন বিষয় বুঝিয়ে অনার্সে পড়তে চাইল উক্ত কলেজেই ৷ পরেশবাবু ছেলেকে মানা করতে পারছেন না ৷ শুধু নিরবে চোখের জল ফেললেন ৷ভাগ্যকে দুষতে লাগলেন এই বলে যে গরিবের ভাগ্য বুঝি এটাই এক ঝড়ে সব হিসেব—নিকেশ উল্টে—পাল্টে দেয় ৷অঙ্কুর এইচ এস সি তে ও ভালো রেজাল্ট করে পাশ করল ৷ অনার্সে একাউন্টিং এ ভর্তি হল উক্ত কলেজেই ৷ পাশাপাশি টিউশন করাতে শুরু করল ৷ নিজের পড়াশুনার খরচ নিজেই চালাতে লাগল ৷ ভাল ছাত্র হওয়ায় টিউশনি ও হয়ত প্রচুর পেল ৷ কিন্তু সমস্যা হল আমাদের সমাজের অভিভাবকদের মনমানসিকতা এখনও অনেক ছোট ৷ টিউশন অনেক কষ্ট করে করাত অঙ্কুর ৷ টিউশনের টাকার উপর মেসের ফিস,খাবারের ফিস,হাতখরচ থেকে কিছু বাঁচলে বাড়িতে দেয়া , প্রাইভেট পড়ার ফি সব নির্ভর করত অঙ্কুরের ৷ কিন্তু দেখা যেত মাসের ২০ তারিখ চলে গেলে ও অনেক অভিভাবক বেতন দেয়ার নাম নিত না ৷ আবার দেখা যেত টিউশন করার সময় যত টাকা দিবে বলে কথা দিত বেতন দেয়ার সময় তা থেকে অনেক কম দিত!আবার অনেক অভিভাবক মাসের পর মাস ঘুড়াত বেতন নিয়ে ৷অনেকের কাছে ২ থেকে ৩ মাসের বেতন পাওনা কিন্তু এগুলো পাবার আশা খুবই ক্ষিন ৷ আর এভাবেই টিক সময় বেতন না পাওয়ার জন্য ,বেতন কম এবং বকেয়া বেতন না পাওয়ার জন্য না খেয়ে,মাইলের পর মাইল হেঁটে খরচ বাঁচাতো সে ৷
৬
অন্যদিক দিয়ে সে এইচ এস সি পাশের সার্টিফিকেট নিয়ে সরকারি চাকরী পাবার চেষ্টা করতে লাগল ৷ কিন্তু ভাল স্টুডেন্ট হওয়া সত্বেও লবিং এবং টাকা না দেওয়া অথবা না থাকার কারনে চাকরীর পরীক্ষাটা দেয়া কেও রুটিন মাফিক কাজ বা ক্ষিন আশার পেছনে ঘুড়ার মত তার কাছে ৷ অপরদিকে সে পিতার প্রর্দশিত নীতির কারনে অবৈধ উপায়ে চাকুরী নিতে ইচ্ছুক নয় ৷ আবার বৈধ উপায়ে আজ কালের যুগে চাকুরী পাবার সম্ভাবনা ও ক্ষিন ৷ আর এভাবেই তার অনার্স কোর্স শেষ হল স্বভাবসিদ্ধ ভাল রেজাল্ট করেই ৷ মাস্টার্স কোর্স ও ভাল রেজাল্টের সাথে শেষ করল অঙ্কুর পরবর্তি বছর ৷এবার আরও চাকুরীর প্রয়োজন অঙ্কুরের ৷ রাস্হা—ঘাটে সে বের হতে পারে না ৷ পরিচিত কেও দেখলেই জানতে চায় চাকুরী হয়েছে কি না? যখন অঙ্কুরের উত্তর না হয় তখন তাদের বিকৃত হাসি দেখে অঙ্কুরে চোখে পানি চলে আসে গোপনে ৷ একটি মৃদু হাসি দিয়ে তাদের কাছ থেকে দ্রুত চলে আসে অঙ্কুর ৷ অঙ্কুর টিক বুঝতে পারে সামাজিক মর্যদা এখানে কত ভাল ছাত্র তা নয় কত ভাল চাকুরী করে তা নিয়ে ৷ অথচ এই সমাজেই তার থেকে অনেক অনেক দুর্বল বন্ধুরা বড়—বড় অফিসে চাকুরী করে অবৈধ উপায়ে ৷ বন্ধুদের মুখেই শুনতে পারে তাদের কারও মামা,কারও বা কাকার বদৌলতে চাকুরী পেয়েছে ৷ অঙ্কুরের শুধু সামাজিক প্রয়োজনে চাকুরীর প্রয়োজন তা নয় ৷ তার কাঁধে অনেক দায়িত্ব ৷ তার বড় দুই বোনকে বিয়ে দিতে হবে,পারিবারিক অস্চলতা দূর করতে হবে ৷ পরিবারের সবাই তার দিকেই চেয়ে আছে ৷ অঙ্কুর সব বুঝতে পারে ৷ তাই পাগলের মত চাকুরী খুঁজে ৷ চাকুরীর অনেক পরীক্ষা দেয় ৷ ভাইবাবোর্ড পর্যন্ত যেসব চাকুরীতে যায় সেসবক্ষেত্রে আশা জাগে চাকুরী হয়ে যাবে ৷ সকল সনদপত্র নিয়ে যায় কিন্তু আশা ভঙ্গ হয়ে ফিরে ৷ তবু পাগলের মত চেষ্টা করে ৷ বাসায় চাকুরীর পড়া ভাল করে পরে ৷ যার ফলে কিছু লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ও হয় ৷ কিন্তু এই পর্যন্ত ই ৷ তার আর এগুতেই পারে না ৷ ভাইবা বোর্ডে ই আটকে যায় ৷ এভাবেই ২ বছর ধরে চেষ্টা করে সে হতাশ হয় ৷এই দুই বছরে সে পরিবারের কারও চোখে চোখ মেলাতে পারেনি ৷ বাড়িতে ও যায় না এই কারনে অনেকদিন হল ৷ আর পরিচিত কারও সাথে দেখা হলে ও তাদের বিদ্রুপ অঙ্কুরের এখন আর ঘায়ে মাকে না ৷ সেই দিন তার ভাইবা টা হল ও খুব ভালো কিন্তু আশা ভঙ্গ হল এবারও চাকুরী টা হল না ৷ অঙ্কুর আরও শংকিত হয়ে গেল যখন জানল তার চাকুরীর বয়স আর মাত্র ২ মাস ৷ তার খাওয়া দাওয়া বন্ধ হয়ে গেল চিন্তায় চিন্তায় ৷ সাস্হ্যের ও খুব ক্ষতি হল ৷ অঙ্কুর চাকুরীর পিছনে ঘুড়তে ঘুড়তে দিশাহীন হয়ে গেল ৷ তবুও কোন পথ পেল না ৷ একেবারে বিদ্ধস্হ হয়ে ,হতাশ ও ভেঙ্গে পড়ল ৷ বারে বারে সে তার শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ দেখতে লাগল৷ ক্লাস ফাইব থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত সব সনদপত্র ৷ সব সনদপত্রে অঙ্কুরের অসাধারন যৌগ্যতার প্রমান আছে ৷ কিন্তু এগুলো সব বিফল ৷ এসব চিন্তায় তার চোখে জল এসে যায় ৷ তবু সে সনদ নিয়ে পাগলের মতই ঘুড়তে লাগল ৷
৭
তার মনে কতগুলো প্রশ্ন বড়ই পীড়া দিত ৷কেন চাকুরীতে যোগদানের পূর্বে অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়৷ যেখানে পড়া শেষ করতেই সেশনজটে চাকুরীর বয়স শেষ হবার সময় এসে যায় ৷ কেন পর্যাপ্ত চাকুরী থাকবে না যোগ্যতা থাকা সত্বেও ৷ কেন ও স্কুল জীবন থেকে শুরু করে শিক্ষাজীবন শেষ পর্যন্ত যোগ্যতার প্রমান দেয়া সত্বেও নতুন করে যোগ্যতার প্রমান দিতে হবে ৷ যে যোগ্যতার মাপকাঠি কোন পাশ মার্ক নয় বা নির্দিষ্ট কোন মার্ক নয় ৷ সেখানে হাজার—হাজার চাকুরী প্রার্থীকে পিছনে পেলে চাকুরী পেতে হবে ৷ অঙ্কুরের হিসেবে এটা অন্যায় ৷ কারন হাজার হাজার শিক্ষার্থী যাদের প্রত্যেকের ই যোগ্যতা সমান ৷ তারা উক্ত যোগ্যতা অর্জন করেছে পূর্বেই ৷ স্কুল জীবন থেকে ভার্সিটি জীবন পর্যন্ত হাজার—হাজার ঘন্টা,দিন—রাত্র এক করে পড়েছে ৷জীবনে হাজারো ঘন্টা পরীক্ষা দিয়ে যোগ্যতার প্রমান দিয়েছে ৷ সেখানে এক ঘন্টার পরীক্ষায় তাদের যোগ্যতা নির্ণয় করা তাও আবার একে অপরের সাথে কমপিটিশন করে এটা অন্যায় নয় শুধু পাপও অঙ্কুরের কাছে ৷ অঙ্কুরের মাঝে মাঝে মনে হয় এটি একটি যুদ্ধ—যুদ্ধ খেলা ৷অস্ত্র হাতে চাকরীপ্রত্যাশী সবাইকে যেন একটি যুদ্ধে ক্ষেত্রে এনে ফেলেছে এই সিস্টেম ৷ যেখানে প্রত্যেকে একে অন্যেকে মারছে ৷ এভাবে একজন আরেকজনকে মারতে মারতে সর্বশেষ যে জন জীবিত থাকে সেই বিজয়ী হয় ৷ কিন্তু তার অস্ত্রটা অসংখ্য রক্তে লাল হয়ে থাকে ৷ আর এই অস্ত্রটা হল তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র ৷ তাই অঙ্কুরের মনে হয় যে চাকুরী পায় তার জন্য তা খুশির হলেও কিন্তু এতে হাজারো চাকুরী প্রত্যাশীর অন্তরের কষ্ট অভিশাপ হয়ে মিশে থাকে ৷ এইরকমই অদ্ভুধ চিন্তা—ভাবনা থাকে অস্হির করে তুলেছিল ৷
৮
আর এইদিকে তার চাকুরীর বয়স শেষ হবার আর মাত্র কয়েকটি দিন বাকি ৷ কিন্তু অঙ্কুরের চাকুরীর কোন খবর ছিল না ৷ আরেকটি ভাইবা পরীক্ষা দিতে সে রাজধানীতে যাচ্ছিল ৷ তার হাতে টাকা ছিল না তাই হাতঘড়ি টা বিক্রয় করে দিলে ৷ তবু পরীক্ষা দিতে যাবার ভাড়া যোগাড় হল না ৷ কিন্তু অঙ্কুরকে যেতে হবে পরীক্ষা দিতে ৷ এটাই তার শেষ প্রচেষ্টা ৷ অঙ্কুর বন্ধুদের পরার্মশে বিনে টিকিটে ই ট্রেনে উঠল ৷ কিন্তু যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই যেন রাত হয় ৷ বন্ধুরা হাজারো বার বিনে টিকেটে ট্রেন ভ্রমন করলেও কিছু হয়নি বড়জোড় জরিমানা দিতে হয়েছে ৷ কিন্তু ট্রেনের টিটি যখন তাকে ধরল তখন জড়িমানা না নিয়ে পুলিশের কাছে চালান করে দিল ৷ অঙ্কুরের হাজারো আকুতিতে কর্ণপাত হলনা টিটির ৷ মামলা হবে বলে শাসাল ৷ আরও বলল কমপক্ষে ছয়মাসের জেল হবে ৷ রেলপুলিশ হ্যান্ডকাপ পড়িয়ে দাড়িয়ে রাখল অঙ্কুরকে ৷ ছবি তুলে নিজেদের সফলতা যাহির করার জন্য ক্যামেরা আনার প্রস্তুতি নিল ৷ এমতাঅবস্হায় নিজের সম্মানের চিন্তা করে অঙ্কুর কল্পনা সকলের কল্পনা অতীত একটি কাজ করল অঙ্কুর ৷ শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদগুলো বুকে নিয়ে চলন্ত ট্রেনের দরজা খুলে লাফ দিল ৷ এই লাফেই মাথায় আঘাত পেয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করল অঙ্কুর ৷ নিথর দেহটা রেললাইনের পাশে হ্যান্ডকাপ হাতে!!! মাথায় আঘাত পাওয়ায় রক্ত ঝরছে ! আর চোখ দুটো চেয়ে আছে ,,ভিজা ভিজা,,,,যে চোখ জুড়ে সপ্ন ছিল , আজ যেন তাহার অতৃপ্ত চাওনি,,,,!!
৯
রেল পুলিশ দ্রুত পাশবর্তী থানায় ইনর্ফম করল ৷ থানার পুলিশরা সাংবাদিক আসার ভয়ে দ্রুত হ্যান্ডকাপ খুলে জেলা শহরে নিয়ে গেল ৷ পরদিন তার বাবা খবর পেয়ে পাগলের মত আসলেন ৷ এসে ছেলেকে দেখে তিনি কষ্টে পাথরের মত হয়ে গেলেন ৷ দেখলেন ছেলেটা তার সার্টিফিকেটগুলো দুইহাত দিয়ে বুকে জড়িয়ে পড়ে রয়েছে ৷ কষ্ট তার বুকটা ফেঁটে যাচ্ছে ৷ তিনি ছেলের লাশটা সঙ্গে নিয়ে অঙ্কুরের কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে বাড়ির উদ্দ্যেশ্যে চললেন ৷ আর চিন্তার গভীরে ডুবে গেলেন ৷ ছেলেকে তিনি ডাক্তার বানাতে শহরে পাটিয়েছিলেন আজ লাশটি নিয়ে ফিরত যাচ্ছেন ৷ তার ছেলের মৃত্যু হয়ত গতদিন হয়েছে ৷ কিন্তু তিনি জানেন ভাল করেই তার ছেলের মৃত্যু আর ও আগেই হয়েছে ৷ তিনি বাবা হয়ে সে সময় সব কিছু দেখা ছাড়া কিছু করতে পারনে নি ৷ সেই মৃত্যু এই মৃত্যু থেকে বেশী কষ্টকর ছিল ৷ এইমৃত্যু হয়ত শরীরে দিক থেকে ক্ষতি হয়েছে কিন্তু সেই মৃত্যু মানসিকভাবে ও কষ্ট হয়েছে ৷ সে মৃত্যু ছেলেকে ধুকে—ধুকে মেরেছে ৷
১০
তারা অঙ্কুরের দেহটা নিয়ে বাড়িতে পৌছলেন ৷ অঙ্কুরের মা বারংবারে মূর্ছা যাচ্ছেন ছেলের মৃত্যু শোক কোনভাবেই সইতে পারছিলেন না তিনি ৷হঠাৎ করে পোষ্টঅফিসের পিয়ন একটি চিঠি নিয়ে আসলেন ৷ পরেশবাবু অনিচ্ছা সত্বেও সে টি খুলে পাগলের মত কাঁদতে লাগলেন আর চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলতে লাগলেন অঙ্কুর বাবা আমার ,সোনামানিক তর চাকুরী হয়েছে বড় সরকারী অফিসে ৷ কিন্তু সন্তান যে উনার আর উত্তর দিবে না ৷অঙ্কুরের অন্ত্যক্রিয়া শুরু হল রীতি ও নিয়ম অনুযায়ী৷ পাগলের মত চেঁচেয়ি বলতে লাগলেন অঙ্কুর বাবা আমার পরের জম্মে তুমার আর এই সিস্টেমের সমাজে, এই পাপী সমাজে ,এই দুষী ও অভিষপ্ত সমাজে জম্ম নিও না ৷ এই সমাজ তুমি মত হাজারো সন্তানদের জীবন শুরুর পূর্বের স্তব্ধ করে দেয় ৷ তুমার মত হাজারো অঙ্কুরদের জীবন অঙ্কুরেই ধ্বংস করে দেয় ৷ ইচ্ছা না থাকা সত্বেও অঙ্কুরের শিক্ষাগত যৌগ্যতার সকল স্বীকৃতি ,ক্লাস ফাইব ও এইটের বৃত্তির সনদ ,এসএসসি ,এইচএসসি,অনার্স ও মাস্টার্স এর ভাল রেজাল্টের স্বীকৃতি দাহ করলেন পরেশবাবু ৷ কারন ছেলের এসব স্মৃতি ছেলে হারানোর কারন হিসেবে তা তাকে কষ্ট দিবে ৷ যা তিনি সহ্য করতে পারবে না ৷ তাই অঙ্কুরের মত ব্রিলিয়েন্ট ছাত্রের স্বীকৃতি সনদগুলা অগ্নি দাহ করেই দায় মুক্তি চাইলেন পরেশবাবু ৷ কারন এগুলো কতটা অর্কাযকর তা তার ছেলের জন্য বুঝেছেন যখন তখন আর কিছু করার থাকল না৷ তাই এগুলোর অগ্নিদাহ ছাড়া বিকল্প দেখলেন না ৷ সব নিমিষেই ধ্বংস হয়ে গেল পরেশবাবুর ৷তার সোনার সংসারের মধ্যমনিটার দাহ হয়ে গেল চোখের সামনে ৷ এক নিমিষেই ধ্বংস হয়ে গেল জীবনটা৷ আশা,ভরসা,শুন্য হয়ে গেলো৷ এটা যেন ওনার জীবন্ত অগ্নিদাহ ,,,,,,,
১৫ এপ্রিল - ২০১৬
গল্প/কবিতা:
১৮ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
বিজ্ঞপ্তি
“জানুয়ারী ২০২৫” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ জানুয়ারী, ২০২৫ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।
প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী