বিলাপ

শ্রমিক (মে ২০১৬)

অবাক হাওয়া prosenjit
  • ১৬৭
বসন্তের পড়ন্ত বিকেল৷সূর্যটা পশ্চিম কোনে হেলে পড়েছে৷চার-পাঁচজন সবে কৈশোরে পা দেয়া ছেলের দল খেলতেছে নদীর কাছে৷তাদের দলনেতা দুরন্ত বালক রানা৷তার দুরন্ত এই স্বভাব ই তাকে দলনেতার মর্যাদা এনে দিয়েছে৷অনেক ছনমনে,প্রানবন্ত ছেলেটার মাঝে আজ বড়ই আনমনে ভাব ফুঁঁটে ওঠছে৷ খেলাতে আজ সে মনঃসংযোগ করতে পারছে না ৷কিছুএকটা নিয়ে সে বড়ই চিন্তিত৷সমবয়সী বন্ধু রাসেল এর কথায় চিন্তায় ছেদ পড়ল৷কিরে দুস্ত আজকা তরে নিরব লাগতেছে কেন??না রে দুস্ত কাল থেইকা থ আর খেলতে পারমু না তাই একটু মনটা খারাপ লাগতেছে৷তরা ভাল কইরা খেলিস৷রানা এই কথাটা বলে আবারও আনমনে হয়ে গেল৷চায়ের দোকানে কাল থেকে তাকে কাজ করতে হবে৷তার পরিবারে মা আর ছোটবোন আছে৷তার বাবা ছোটবোনটার জম্মের কিছুদিন পর যে বিদেশ গিয়েছিল আর কোন খৌঁজখবর নেই নি তাদের৷এক দূর সম্পর্কে চাচা মারফত তারা জানতে পেরেছে তিনি আরেকটা বিয়ে করে নতুন সংসার পেতেছেন৷সেই থেকে তাদের কষ্টের দিন শুরু হয়েছে৷তার মা এর বাসা ওর বাসা কাজ করে তাদের বড় করার চেষ্টা করতেছে৷কিন্তু দিন-দিন খরচ বেড়ে চলায় তিনি সামাল দিতে পারছেন না৷তাই এ বছর লেখাপড়া বাদ দিয়ে তার মামা তাকে কাজ করার জন্য বলেন৷কাজ ও তিনি টিক করে দিয়েছেন৷চায়ের দোকানে কর্মচারীর কাজ৷তিনবেলা খাওয়াবে আর মাসান্তে ১০০০ টাকা বেতন দিবে৷তার মা এর ইচ্ছা না থাকলেও তার ইচ্ছা আছে৷তার মার ইচ্ছে তাকে লেখাপড়া শিখাবে৷রানার ও খুব ইচ্ছে ছিল পড়াশোনার শিখার৷কিন্তু যে ঘরে তিন বেলা ভাত যোগার হয় না সব দিন হয় সে ঘরের ছেলের পড়ালেখা বিলাসিতা ছাড়া কিছু না সে ভাবল৷তবে সে যত কষ্টই হোক তার ছোট আদরের বোনটাকে শিক্ষিত করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷বন্ধুদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ি পথে পা বাড়াল৷বাড়ি ফিরে শুনল তার মা কে বলতে ভাইজান রানারে কাজ না দিলে হয় না কত আর বয়স?না বইন তুমি আর না কই র না এই বয়েসের অনেকে পোলাপাইন ত কাজ করতেছে৷রানা কাজ করলে তুমার কষ্টও একটু কম হইব৷রানা ও ত মত দিছে৷রানার মা চুপ হয়ে যায় বুকের মানিক নিজের কাছে থাকবে না এটা ভেবে তার কষ্টে বুক ভারী হয়৷অপরদিকে রানার মাঝে বিপুল উৎসাহ পরিলক্ষিত হচ্ছে৷স্কুলে সে শহরের অনেক গল্প শুনেছে৷সেখানে ছবি দেখা যায়,বড় গাড়িতে করে বেড়ানো যায়,সুন্দর-সুন্দর ভবন দেখা যায় আরও অনেক কিছু৷এগুলো তার উৎসাহের উপাদান হয়ে উঠল৷তাই তার মা বারে-বারে যাবে কি না জানতে চাইলে ও তার জবাব একটাই হয় সে যাবে৷তার মা একটা দীর্যশ্বাস দেয়৷ছেলেকে বাহিরে পাঠাতে তার মন চাইছে না৷তার স্বামী বাইরে গিয়ে আর আসেনি তাই তার ভেতর প্রচন্ড ভয় ছিল৷কিন্তু ছেলের আগ্রহের মাঝে তিনি হার মানলেন৷রানা তার খেলার সকল প্রিয় বস্তু সমূহ যেমণ ঘুড়ি,নাটাই,চক্রি,বল ইত্যাদি ছোটবোন ফারজানাকে দিয়ে দিল৷ফারজানা সেগুলো পেয়ে খুশি৷কিন্তু ভাই এর দূরে চলে যাওয়াও তাকে সমান কষ্ট দিতেছে৷র্ানার ও আদরের ছোট বোন,প্রিয় মা,খেলার বন্ধুদের ছেড়ে যেতে অনেক কষ্ট হচ্ছে৷তবেও তাকে যেতে হবে৷পরদিন সকালে সূর্য যখন পূর্ব দিগন্তে সে মা,বোন,প্রিয় গ্রাম,খেলার বন্ধু,স্কুল সব ছেড়ে মামার সাথে রওনা দিল৷তারা একটা ইন্জিনের নৌকার উপর ওঠল৷নৌকাটা যত দূরে যেতে লাগল তার প্রিয় গ্রাাম,খেলার মাঠ সব অস্পষ্ট হতে লাগল৷রানার চোখে পানি চলে আসল৷রানা নদীর দুপাশের গ্রামগুলো দেখতে লাগল৷একসময় তারা নৌকা তীরে ভীড়ল৷তারা নৌকা থেকে নেমে একটা বাসে উঠল৷রানা প্রথম বাসে উঠছে৷তাই সে সিটে বসে আগ্রহ নিয়ে সব দেখতে লাগল৷বাসটা পূর্ণ গতিতে চলতে লাগল৷হঠাৎ রানার শরীর টা অস্হির-অস্হির লাগতে লাগল৷সে বুঝতে পারল তার বমিরভাব করতেছে৷সে বমিটাকে কোনরকম বাধা দেয়ার চেষ্টা করল৷কিন্তু বিধিবাম পারল না৷সে তার মামাকে এই অবস্হার কথা জানাল৷মামা তাকে জানলা দিয়ে মাথাটা একটু বের করে বমি করতে বলল৷রানা তার মামার কথা মত জানলা দিয়ে বমি করে ভিতরের সব বের করে দিল৷বমি করার পর রানা সুস্হ হল৷কিন্তু খুব কাল্ত হয়ে পড়ল৷বাসের সিটে মাথা দিয়ে চোখ মুঝে কখন ঘুমিয়ে পড়ল বুঝতেও পারল না৷মামার ডাকে ঘুম ভাঙ্গল৷আয় রে রানা আমরা পৌছে গেছি৷মামা রানাকে নিয়ে একটা রিক্সায় উঠল৷রানা অবাক চোখে শহর দেখতে লাগল৷অবশেষে তারা গন্তব্যে পৌছল তখন বিকেল হয়ে গেছে৷মামা রানাকে নিয়ে চায়ের দোকানের মালিকের কাছ দিয়ে রানার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল৷দোকানটা বেশী বড় না ৷ দোকানের মালিক মাঝ বয়সি৷তিনি রানাকে দোকানের বসালেন৷টিকটাক করে দোকানের তার কাজ বুঝিয়ে দিলেন৷আজ বসে বসে দেখার জন্য বললেন এবং কাল সকাল থেকে কাজে লাগতে বললেন৷রানা বসে-বসে সব দেখতে লাগল৷ক্ষিদে লেগেছে এটা তার মালিককে জানানোর পর তিনি ধমক দিয়ে বললেন এখনও এক টাকার কাজ করসি নি খাওয়ার চিন্তা চুপ করে বসে থাক৷রাত যখন গভীর হল মালিক দোকান লাগিয়ে রানাকে নিয়ে বাড়ি গেলেন৷মালিকের দুইছেলে রানার প্রায় সমবয়সী৷মালিকের বৌ তাদের র্ানার সাথে মিশতে বারণ করল রানার সামনেই খারাপ হয়ে যাবে এই অজুহাতে৷মালিকের পরিবারের সবার খাওয়া পর রানাকে খাবার দিল৷খাবারের পরিমাণ অল্প ছিল রানার পেঠ ভরল না৷রানা ভাত কোনরকম খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ল৷খুব ভোরে রানার ঘুম ভাঙ্গল মালিকের ডাকে৷মালিক রানার হাতে একটা বড় বালতি দিয়ে বলল পাশের কল থেকে পাঁচ বালতি দোকানে নিয়ে রাখতে৷রানা বালতি নিয়ে কল চাপতে লাগল৷পানি ভর্তি বালতির ওজন অনেক বেশী হওয়ায় অনেক সময় লাগল৷তার জন্য মালিকের ধমক খেতে হল৷দোকান খোলার পর চায়ের কেটলি,চা কাপ,ঝগ,মগ প্রচুর বাসন রানাকে সাবান দিয়ে ধৌত করার জন্য দিল৷রানার অনেক পরিশ্রম হতে লাগল৷সারাদিন কাজের মধ্য দিয়েই চলতে লাগল৷চা পরিবেশন,কাপ ধোওয়া,পানি আনা ঘোরেফিরে এ কাজ করতে লাগল৷কাজ অনুযায়ী খাবার পেল না৷এভাবেই শহুরে জীবণ চলতে লাগল৷মালিকের বব্যহার দিন-দিন ভয়ানক খারাপ হতে লাগল৷চড়,কিল ,মার চলতে লাগল রানার উপর৷সকালে পানি আনতে দেরী হলে মালিক মারে আবার পানি যদি রাস্তায় পড়ে তাও মারে,চা দিতে দেরী হলে মারে,কাপ ধৌত করতে দেরী হলে মারে৷যত বার ভাত খায় দিনে তার থেকে চারগুন বেশী বার মার খায়৷রানার দম বন্ধ হয়ে আসে৷মারের ব্যথায় রাতে ঘুমুতে পারে না৷তবু সকাল থেকে রাত কঠিন পরিশ্রম করতে হয়৷রানা মায়ের কথা,বোনের কথা,গ্রামের কথা মনে করে একা-একা কান্না করে৷দিনদিন সে শাররীক ও মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে৷হঠাৎ একদিন ভুলবসত রানার হাত থেকে চায়ের কাপ ভেঙ্গ যায় ৷এটা দেখে মালিকের মাথায় বিনা মেঘে বজ্রপাত হয়৷মালিক বাঁশ দিয়ে রানাকে নির্দয় এর মত পেঠাতে থাকে৷রানা রক্তাত হয়ে পড়ে৷আশেপাশের লোকজন এগিয়ে আসে৷মালিক অবস্হা বেগতিক দেখে কেটে পড়ে৷রানাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়৷রানার গ্রামে খবর যায়৷রানার মা পাগলের ছুটে আসে হাসপাতালে৷রানার মার কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে৷ডাক্তার জানায় সে পূর্ব থেকেই আহত ছিল৷তারউপর আজকের আঘাত প্রচন্ডভাবে ক্ষতি হয়েছে মাথার৷তাই বাঁচানো সম্ভব না৷রানার মা ছেলের সাথে শেষ দেখা করে,রানা মাকে দেখে টোঠের মাঝে হাসি ফোঁটে৷আমার বইনডারে পড়ালেখা শিক্ষাই ও মা কারও ঘরে কাজে দিও না মা বলে রানা মায়ের কূলে লুটিয়ে পড়ে৷রানার মায়ের চীৎকার এ পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে৷সাংবাদিকরা আসে ছবি তুলে৷খবর ছাপায়৷জনতা বিচারের দাবিতে মিছিল করে৷সময়ের হাওয়ায় সব মিলিয়ে যায়৷শুধু মিলায় না রানার মায়ের বিলাপ বছরের পর বছর চলতে থাকে "আমার বাপ ধন কই গেলে রেইইইইইইইই......................................................"
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
নাস‌রিন নাহার চৌধুরী আমাদের অধীনস্তদের দাস হিসেবে বিবেচনার মানসিকতা দূর হোক। মানুষগুলো মানবিক হোক। গল্পে ভোট রইল। ফেরদৌস আলম এবং আহা রুবন এর সাথে লাইন স্পেসিং এর ব্যাপারে একমত। পড়তে একটু কষ্ট হচ্ছিল।
ফেরদৌস আলম অনেক অনেক ভালো গল্প, তবে দাঁড়ির পরে স্পেস আর প্যারা না করায় বেশ ঝামেলায় পড়তে হয়েছে। শুভ কামনা ।
আহা রুবন মর্মস্পর্শি গল্প! লেখা ভাল লেগেছে। ।(দাড়ি) এর পর স্পেস না দেয়াতে দুটো বাক্য লেগে গেছে। পড়তে কষ্ট হয়েছে। ভোট থাকছে।
রেজওয়ানা আলী তনিমা বেশ লাগলো। শ্রমিকের জীবন এমনিতেই কঠিন, শিশুশ্রমিক হলেতো কথাই নেই।
মোহাঃ ফখরুল আলম ভাল লেগেছে। বিবেচনাবোধ থেকে ভোট দিলাম।

১৫ এপ্রিল - ২০১৬ গল্প/কবিতা: ১৮ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“এপ্রিল ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ এপ্রিল, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী