দু্ষ্টুমি অ্যাওয়ার্ডস

প্রেম (ফেব্রুয়ারী ২০১৭)

রাউফিন সুপ্ত
  • 0
  • ১০১
আচ্ছা মানুষ দুষ্টুমি করে কেন?এই প্রশ্নটা আমি অনেককেই করেছি কিন্তু কারো কাছে মনের মত উত্তর পাই নি।আমি ছোটবেলা থেকেই অনেক দুষ্টু।আমার ধারনা দুষ্টুমি করা একটা আর্ট, সবাই এটা পারেনা।জীবন তো একটাই, তো কেন একে নষ্ট করব ?আমার আরও ভাল লাগে যখন কেউ আমার সাথে কেউ দুষ্টুমি করে।আমার মনে হয় আসলেই আমার চিকিৎসা প্রয়োজন।আমি এতটাই দুষ্টু ছিলাম যে আমার দাদু আমাকে খবিশ বলে ডাকত।অথচ আমার বাবা ছিলেন শান্ত শিষ্ট একজন মানুষ,বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সে ৪টি দোকানের গর্বিত মালিক।উনার দুর্বলতা ছিল একটাই - আমার মা। মার প্রতিটি কথা তিনি অক্ষরে অক্ষরে পালন করতেন এবং মাকে তিনি অত্যন্ত ভয় পেতেন।যাকগে সেসব কথা,আমার দুষ্টুমির উদাহরণ দেই,আমাকে এক হুজুর পড়াতে আসতেন, সময়ের মধ্যে সুরা মুখস্ত না হলে জালি বেত দিয়ে পীঠে শপাং শপাং দু চার ঘা লাগিয়ে দিতেন।তবে আমিও ছিলাম পাকা ঘুঘু, হুজুরের চেয়ারে চেউয়িং গাম লাগিয়ে রেখেছিলাম একদিন, পড়ানো শেষ করে হুজুর উঠতে যাবে ঠিক তখনই টান লেগে হুজুরের পায়জামার পেছনের দিকটা ছিড়ে গেল।হুজুর কি মনে করে আবার বসে পড়ল,কিছুক্ষণ পর আমাকে বললেন,তুর্য তোমার বাবার পুরনো কোন লুঙ্গী আছে ?আমাদের বাসা ছিল তিনতলায়, বারান্দা থেকে রাস্তা দেখা যেত, আমার অদ্ভুত একটা স্বভাব ছিল যে,বারান্দা থেকে প্রশ্রাব করতাম, সেটাও এমনভাবে যেন রাস্তা দিয়ে হেটে যাওয়া কারও না কারও গায়ে পড়ে আর পড়ার সাথে সাথে মনে মনে "জয় বাংলা" বলে লুকিয়ে পড়তাম।জয় বাংলা কেন বলতাম মনে নেই।গায়ে লাগার পরে আমি শোনার চেষ্টা করতাম কে কি বলে, বেশিরভাগ মানুষই বলত - বৃষ্টি নামল নাকি ?

অদ্ভুত সততার সাথ‌ে দুষ্টুমি করতাম আমি।প্রতিদিনি ক্লাসে বাঁদরামি করতাম।একবার প্রাকটিকাল ক্লাসে স্যার আলুর অভিস্রবণের পরীক্ষা করাচ্ছিলেন।ষাটোর্ধ হরিমোহন স্যার দুই সারির মাঝখানে দিয়ে হাটছিলেন আর তদারকি করছিলেন।ওখানে প্রচুর আলু ছিল।আমি মোটাতাজা একটা আলু নিয়ে ওটা ছিলাচ্ছিলাম।এমন সময় কি মনে করে ওই সারির নুরে আলমকে একটা আলু দিয়ে ঢিল দিলাম।নুরে আলম ছিল একটু হাবলা টাইপের।ওকে মারার পরে ও বুঝতে পারেনি কে ওকে মেরেছে,ও ভেবেছিল আমার পাশের একরাম ওকে মেরেছে, তাই সে একরামকে আলু দিয়ে ঢিল মারল।একরাম আবার ওই সারির রকিবকে মারল,এভাবে করতে করতে একটা সময় দুই সারির মধ্যে আলু ছোড়াছুঁড়ি শুরু হয়ে গেল।হঠাৎ করে একটা আলু গিয়ে স্যারের মাথায় লাগল।স্যার প্রচন্ড রেগে গেলেন।ওদিন সবাইকে জিরো দিয়ে দিয়েছিলেন উনি।কিন্তু পড়ালেখায় আমি খুব একটা খারাপ ছিলাম না।শুধু ইংলিশে একটু দুর্বল ছিলাম,কিন্তু ম্যাথে ভালই ছিলাম।বেশ ভালই একটা ইন্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটিতে চান্স পাই।কিন্তু ওই পর্যন্তই ভার্সিটিতে উঠে পড়ালেখা একরকম ছেড়েই দিয়েছিলাম।একগাদা ড্রপ কোর্স ছিল।ফিউচার নিয়ে আদৌ চিন্তিত ছিলাম না,কারন আমি ছিলাম বাবা মার একমাত্র সন্তান।



ভার্সিটি লাইফে আমার দুষ্টুমি চরম উৎকর্ষে পৌছায়।একবার ক্যাম্পাসে একটা কনসার্ট হচ্ছিল।বাংলাদেশের খুবই নামকরা একটা ব্যান্ড পারফর্ম করছিল সেখানে,ভালই গান গাচ্ছিল তারা, কিন্তু আমাদের কয়েকজন আগে থেকেই প্ল্যান করে রেখেছিলাম।গানের মধ্যে হঠাৎ করে পকেট থেকে ডিম বের করে ছুড়ে মারলাম,আমার দেখাদেখি আমার বন্ধুরাও ডিম ছুড়ে মারতে শুরু করলো,লিড ভোকালিস্টের মাথায় গিয়ে একটা ডিম ফুটল,সাথে সাথে লিড ভোকালিস্ট কান্নাকাটি শুরু করে দিল।আমার একটা বন্ধু ধরা পড়ে গেল।পুলিশেই দিয়ে দিত ওকে, কিন্তু ডিপার্টমেন্টেরর সিনিয়ররা এসে ব্যাপারটা মিনিমাইজ করে।

মিষ্টি একটা বউ আছে আমার ইশানা। আমাকে প্রচন্ড রকম ভালবাসে ও।উঠতে বসতে ওর সাথে দুষ্টুমি করি।বিয়ের দিন রাতে আমি ওকে বলেছিলাম,আমি তোমাকে কখনো মন থেকে ভালবাসতে পারব না,কারন আমার আগের একটা রিলেশন ছিল,বলেই হাই তুলে ঘুমিয়ে পড়লাম।বেচারি সারারাত ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদল।সকালে ঘুম থেকে উঠে ওকে বললাম,কালকের রাতের কথা ভুলে যাও, ওটা মজা ছিল,তারপর কানে কানে বললাম, 'ভালবাসি'।তাতেও ওর রাগ ভাঙেনি টানা তিনদিন আমার সাথে কথা বলেনি সে,মা ব্যাপারটা আচ করতে পেরে আমাকে বলল,''খোকা তোর কোন ফিজিক্যাল প্রবলেম আছে?থাকলে আমাকে বল''।আমার জ্বালাতনগুলো পরম যত্নে সহ্য করে ও।কখনো অাধা ঘন্টা ধরে বানানো ওর খোপার বাধন খুলে দেই, কখনো ওর গালে অালতো করে চিমটি কেটে দেই,বাথরুমে ঢুকলে লাইট বন্ধ করে দেই,কখনোবা ওর দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে থেকে ওকে বিব্রত করি।ও কখনো আমার উপর রাগ করেনা,শুধু মাঝে মাঝে আমাকে বলে,''আচ্ছা আমাদের বাবুটাও কি তোমার মত এরকম হবে?



আরও একটু যখন বড় হলাম তখন এক অদ্ভুত চিন্তা মাথায় উদয় হল,আমার দুষ্টুমি অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া দরকার।কিভাবে দুষ্টুমি করতে হয় - এই টাইপের কিছু ভিডিও বানিয়ে ইউটিউবে আপলোড করলাম, তার মধ্যে একটা ভিডিও ভাইরাল হয়ে গেল।ওই ভিডিওটা ছিল এরকম,একটা ছেলে রমনা পার্কে গিয়ে অপরিচিত মানুষের কোলে বসে পড়ছে।
ছেলেটা ছিল আমার বন্ধু জাবের।আমি ফোনের ক্যামেরায় ভিডিওটা করেছিলাম।ফেসবুকে দুষ্টুমি অ্যাওয়ার্ডস নামে একটা সিক্রেট গ্রুপ খুললাম।এখানে লোকজন তাদের দুষ্টুমির বিভিন্ন অভিজ্ঞতা শেয়ার করত,ছবি, ভিডিও পোস্ট করত।ফিলিং হাই,ফিলিং কিকড- আ্যাস এই টাইপের জিনিস চলত।আস্তে আস্তে গ্রুপের মেম্বার বাড়তে লাগল।একসময় গ্রুপ মেম্বার এক লাখ ছাড়িয়ে গেল।আমারো ফলোয়ার বাড়তে লাগলো।আস্তে আস্তে পাতি সেলিব্রিটি হয়ে গেলাম।এমনকি আমার একটা ছোটখাটো ফ্যানক্লাব ও তৈরী হয়ে গেল,আমার বন্ধুরাই তৈরী করল।আমার বন্ধুভাগ্য বরাবরই ভাল ছিল।কিন্তু রেস্টুরেন্টে হ্যাংআউট করার পর বিল আমাকেই দিতে হত।বন্ধুরা সবাই আমার সাথে বিভিন্ন ধরনের দুষ্টুমি করার চেষ্টা করত। প্রায় প্রতিদিনি কেউ না কেউ থ্রেট দিত - এসব কাজ ভালো না,বন্ধ করো এসব ইত্যাদি ইত্যাদি।কিন্তু আমার রক্তে মিশে ছিল দুষ্টুমির বীজ।

অবশেষে আমার ফুটফুটে একটা ছেলে হল।আমার শত বাধা সত্ত্বেও আমার বউ ওর নাম রাখল নিঝুম।ওর মনে ভয় আমার ছেলে না আবার আমার মত হয়ে যায়।কিন্তু নিঝুম ওরকম হলনা।খুবই শান্তশিষ্ট একটা ছেলে।ক্লাস ওয়ানে পড়ার সময় একবার টিভিতে দেখল,জীবহত্যা মহাপাপ।তারপর থেকে খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিল,কারন তার মতে সব খাবার কোন না কোন জীবকে মেরে বানানো হয়।আমি সবসময় চাইতাম ও নিজের মত হোক।আর ব্যাস্ততার জন্য ওকে সময়ও দিতে পারতাম না।ও আমার মত হয়েছে কিনা দেখার জন্য একদিন একটা এক্সপেরিমেন্ট করেছিলাম ওকে নিয়ে,ওকে বললাম, বাবা নিঝুম যাও তো নিচতলার অন্তুিদের বাসার কলিংবেলে টিপ দিয়ে দৌড়ে চলে এসো।ও অন্তিদের বাসার কলিংবেল টিপল,কিছুক্ষণ পর অন্তির আম্মু দরজা খুলল,ও বলল- আন্টি আব্বু বলেছে আপনাদের কলিংবেল টিপে দৌড়ে পালিয়ে যেতে।অন্তি কি বাসায় আছে, আন্টি?



জ্বর আসার কারনে ডাক্তার দেখাতে গেলাম।জ্বরটা ঘুরে ফিরে কয়েকদিন পরপর আসত।আমার লেংটাকালের বন্ধু সিফাতের কাছে গেলাম।ও খুব ব্যাস্ত ডাক্তার,১০ বছর ধরে প্র্যাকটিস করছে। আমাকে বেশ সময় নিয়েই দেখল ও।ওকে কিছুটা চিন্তিত মনে হল,কয়েকটা জটিল টেস্ট করাল।পরেরদিন আসতে বলল।

পরেরদিন গেলাম,ও অনেক ঘুরানো পেচানোর পর বলল,টেস্টে জটিল এক ধরনের রোগ পড়েছে-প্যানক্রিয়েটিক ক্যানসার,কিন্তু ও আমাকে চিন্তা করতে মানা করল।প্রথমে ভাবলাম ও বোধয় আমার সাথে মজা করছে,কিন্তু ও সিরিয়াস ছিল।একটা সময় মেনে নিলাম।অনেক রিকোয়েস্টের পর ও বলল যে আমার হাতে আর বড়জোড় তিন মাস সময় আছে।ও আমাকে ভিসা পাসপোর্ট করানোর জন্য বলল,কারন বাংলাদেশে এর ভালো চিকিৎসা নেই,বাইরে কেমোথেরাপি দেয়া হয়,কিন্তু আমার টা নাকি লাস্ট স্টেজে চলে গেছে,এখন আর তেমন কিছুই করার নেই। আমার নিজের জন্য একটুও খারাপ লাগছিল না।নিঝুমকে আর মাত্র তিনমাস কাছে পাব এটা ভেবে কেমন যেন লাগছিল।ইশানাকে জানাব না বলে ঠিক করলাম।ওকে দেখলেই কেন জানি আমার বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠত।আমার মৃত্যুর পর ও যে কষ্টটা পাবে তা চিন্তা করেই গায়ে কাটা দিয়ে উঠত,আমি চাইতাম না ও বিধবা হোক।তাই সিদ্ধান্ত নিলাম ওকে ডিভোর্স দেব।আমার একটা অজুহাত লাগত,তাই ওকে বললাম যে, ইশানা তোমার সাথে আমার যাচ্ছে না,আমি তোমার সাথে আর থাকতে পারব না।ও প্রথমে ভেবেছিল এটা আমার কোন দুস্টুমি,কিন্তু যখন বুঝতে পারল তখন ওর চোখ দুটো ছলছল করে উঠল।একটা কথাই বলছিল বারবার ও, আমাকে মেরে কেটে ফেললেও তোমাকে ছেড়ে যাব না।নিঝুমকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছিল ও।আমার বাবা মা কেউই আর বেচে ছিলেন না, তাই ওকে আটকানোরও কেউ ছিল না।নিঝুমকে নিয়ে বাপের বাড়ি চলে গেল সে।আমার শ্বশুড় এসে আমাকে বোঝানোর অনেক চেষ্টা করল।কিন্ত আমি আমার সিদ্ধান্তে অটল ছিলাম ।১সপ্তাহ পর হঠাৎ সিফাত আমাকে ফোন দিল,গলায় খুশি খুশি ভাব,'

-এই শালা শোন,তোর কিছুই হয়নি,আরেকজনের ব্লাড টেস্টের রেজাল্টের সাথে তোর ব্লাড টেস্টের রেজাল্ট অদল- বদল হয়ে গিয়েছিল।

-তার মানে আমি...

-হ্যা রে, দোস্ত তুই পুরোপুরি সুস্থ।আরে আর বলিস না আমার এ্যসিসটেন্ট ভুল করে....

আমার হাত থেকে ফোনটা পড়ে গেল।কিছুক্ষণ সময় লাগল আমার ধাতস্থ হতে,তাড়াতাড়ি ফোনটা তুলে নিয়ে ইশানাকে ফোন দিলাম,ফোন অফ।শ্বশুড়ের নাম্বারে ফোন দিলাম ফোন ধরল না,ওদের বাসার কেউই আমার ফোন ধরছে না।ওদের বাসায় গেলাম।দাড়োয়ান আমাকে ঢুকতে দিতে চায় না,অনেক কষ্টে বাসায় ঢোকার পর আমার শ্যালিকার কাছে জানতে পারলাম যে,আজকে রাতের ফ্লাইটে করে ইশানা নিঝুমকে নিয়ে কানাডা চলে যাচ্ছে,ওখানে এক ইউনিভার্সিটিতে ওর জব হয়েছে।সাড়ে নয়টায় ফ্লাইট।ঘড়ির দিকে তাকালাম,আটটা পঞ্চান্ন বাজে।বাসা থেকে বের হয়ে একটা সিএনজি ডাকলাম, এত কম সময়ে রামপুরা থেকে এয়ারপোর্ট যাওয়া সম্ভব না,তাও আমাকে পৌছাতেই হবে,ইশানার জন্য,নিঝুমের জন্য।ইশানার কথাগুলো মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিল, আমাকে মেরে কেটে ফেললেও আমি তোমাকে ছেড়ে যাব না.....
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
গোবিন্দ বীন ভাল লাগল,ভোট রেখে গেলাম ।পাতায় আমন্ত্রন রইল।
ভালো লাগেনি ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

২৯ মার্চ - ২০১৬ গল্প/কবিতা: ২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "পদত্যাগ”
কবিতার বিষয় "পদত্যাগ”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ জুন,২০২৫