খুবই সাধারন একজন মানুষ বিপ্লব।একজন সাধারন মানুষ যা যা করে তার সবই করে সে।
ক্রিকেট খেলায় তার প্রিয় দল পাকিস্তান। তার প্রিয় খেলোয়ার আগে ছিল ইনজামাম উল হক,এখন শহীদ আফ্রিদি।পাকিস্তানের খেলার দিন অবশ্যই তাকে কোন না কোন চায়ের স্টলে পাওয়া যায়।খেলা দেখার সময় প্রায়ই ও পাশের জনকে বলে,
"ব্রাদার আফ্রিদি নেমে একটা ধাক্কা দিলেই তো খেলা শেষ।"
বিপ্লব এমনিতে খুব ভাল।খুব বেশি চাওয়া নেই ওর।কম্পিউটারের একটা দোকানে চাকরি করে ও।
তৃনা নামের একটা মেয়েকে ভালবাসে ও।তৃনা আর সে একই কলেজে পড়ত।প্রথম দেখাতেই মেয়েটির প্রেমে পড়ে যায় সে।ওকে প্রথম দেখে মনে হয়েছিল, একটা মেয়ে কি করে এত সুন্দর হতে পারে'।তৃনার চোখের চাহনিতে কেমন যেন বিষন্ন একটা ভাব ছিল সেদিন।
কিভাবে ওর সাথে কথা বলা যায়,সে চিন্তাই করছিল শুধু সে।প্রথম প্রথম তৃনা বিপ্লবকে চিনতই না।কিন্তু একদিন কেমিস্ট্রি টিচার আকরাম স্যারের ক্লাসে ছোট্ট একটা ঘটনা ঘটে।আকরাম স্যার কখনো তার কোন স্টুডেন্টের গায়ে হাত তুলতেন না।কিন্তু তবুও উনাকে সবাই যমের মত ভয় পেত।কারন তিনি অভিনব সব কায়দায় স্টুডেন্টদের লজ্জা দিতেন।ঐদিন ক্লাসে এক বেঞ্চ থেকে মৃদু হাসির শব্দ শুনতে পান তিনি।তৎক্ষণাৎ তিনি ঐ বেঞ্চের চারজন মেয়েকে দাড় করিয়ে খুবই নরম গলায় জিঞেস করেন,
আম্মাজানেরা কালকে তৃতীয় চ্যাপ্টারটা পড়া ছিল,পড়েছিলেন?
মেয়েগুলো কিছু বলবার আগেই তিনি জিঞেস করলেন,
আচ্ছা আপনাদের মধ্যে কি কেউ বলতে পারবেন ক্রোমিয়ামের একজাক্ট পারমানবিক ভর কত?
মেয়েদের মধ্যে একজন এমন একটা ভাব করল যেন,উত্তরটা সে জানে এখনি তার মনে আসবে।আর বাকি তিনজন হাবার মত তাকিয়ে রইল স্যারের দিকে।স্যার কিছুক্ষন অপেক্ষা করে বললেন,আম্মাজানেরা আপনাদেরকে যে একটু এদিকে আসতে হয়।
চারজনকে সবার সামনে এনে প্রথমে গোল করে দাড় করালেন তারপর তাদেরকে বললেন দুহাতে পাশের দুজনের কানে ধরতে।তারপর এই অবস্থায় তাদের দশবার ঘুরালেন।এটা দেখে সারা ক্লাসে সে কি হাসি।এ ঘটনার পরে বাসায় গিয়ে একটা মেয়ের ভীষন জ্বর হয়।আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে আকরাম স্যার একথা শোনার পর নিজে গিয়ে ঐ মেয়েকে দেখে আসে।যাবার সময় তিনি এক বয়াম হরলিক্স ও কমলা কিনে নিয়ে যান।
আরেকদিন বিপ্লবকে স্যার পড়া জিঞেস করেছিল,প্রতিদিনের মত সেদিনও সে উত্তর দিতে পারেনি।বিপ্লব পড়া বলতে না পারায় তৃনাকে বললেন গিয়ে তার কান টেনে দিয়ে আসতে।কারন তৃনাও সেদিন পড়া পারেনি।তাই প্রচন্ড অনিচ্ছা সত্ত্বেও তৃনাকে কাজটা করতে হয়েছিল।সারা ক্লাসের সামনে সেদিন ভীষন লজ্জা পেয়েছিল বিপ্লব।এরপর থেকে সে ক্লাসে যাওয়া প্রায় বন্ধ করে দেয়।কিন্তু ঐদিন ক্লাস শেষে তৃনা এসে বিপ্লবকে সরি বলেছিল।তারপর থেকেই তাদের পরিচয়।তৃনা ওর সাথে খুব ভালভাবেই কথা বলত।ধীরে ধীরে ওদের মধ্যকার সম্পর্কটা আরও গাঢ় হয়।তৃনা বিপ্লবের প্রতি কেমন যেন একধরনের করুণা বোধ করত।প্রতিদিনি তারা কথা বলত। ইন্টার পরীক্ষার পর তৃনা ওদের কলেজেই অনার্সে ভর্তি হয়। আর বিপ্লব কয়েকমাস কম্পিউটার শিখে দোকানে চাকরি নিয়ে নেয়।যদিও তার আরো পড়াশোনা করার ইচ্ছা ছিল তবুও তার নিজের অবস্থার জন্য তা সম্ভব ছিলনা।বিপ্লবের বাবা মা কেউই বেচে নেই।বিপ্লবের বাবা ঢাকায় ছোটখাট একটা ব্যবসা করত।একবার ঈদের সময় তিনি বিপ্লব ও তার মাকে নিয়ে গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালিতে যান।প্রায় ২ সপ্তাহ থাকার পর যেদিন তাদের ঢাকা ফেরার কথা ছিল সেদিন সকালে হঠাৎ করে বিপ্লব বেকে বসল।সে কোন অবস্থাতেই ঢাকা যাবেনা।দাদুবাড়ির কাজের ছেলে আতিকের সাথে ততদিনে তার বিরাট ভাব হয়ে গেছে,তার উপর দাদাদাদীর আদর। কেউ তাকে ধরতে গেলেই সে হাত পা ছোড়াছুড়ি করে কাঁদতে থাকে।পরে ঠিক করা হল বিপ্লব আরও কয়েকটাদিন থাকবে পরে ওকে ঢাকায় দিয়ে আসা হবে।বিপ্লবের বাবা মা সেদিনই ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হন।কিন্তু ঐদিন লঞ্চ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে তারা দুজনই মারা যান।তারপর থেকে ও বড়চাচার সংসারেই বড় হয়েছে।সারাটা শৈশব আর কৈশোর তাকে নানারকম বঞ্চনা আর কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে।চাচীর দুচোখের বিষ ছিল সে।তিনি একদমই সহ্য করতে পারতেন না বিপ্লবকে।কোনমতে টেনেটুনে ইন্টার পাশ করার পরই তাকে একটা কম্পিউটারের দোকানে কাজে লাগিয়ে দেয়া হয়।প্রতিদিন সকাল ৯টার মধ্যে দোকান খুলতে হয় তাকে।তারপর তাকেই দোকান ঝাড়ু-টারু দিয়ে নিজের কাজ নিয়ে বসতে হয়।ফোন সার্ভিসিং করাই মুলত ওর কাজ।তার মালিক আসে ১১ নয়তো ১২টার দিকে।তার মালিকের নাম বদিউজ্জামানম।সবাই তাকে ডাকে বিলাত বদি।কারন তার জীবনের একটাই লক্ষ্য আর সেটা হল যেকোনভাবে হোক বিদেশে যাওয়া।বিদেশ যাওয়ার জন্য তার প্রচেষ্টা রবার্ট ব্রুসের প্রচেষ্টাকেও হার মানাবে।তার জীবনের সবচেয়ে আফসোস হল ফ্লাইট মিস।একবার তার কাতার যাওয়ার সব কিছু ঠিক হয়ে গেল।কিন্তু যাবার আগের রাতে বদির দাদি স্বপ্ন দেখল যে বদি এক উটের পিঠে করে যাচ্ছে , হঠাৎ করে সেই উট ঝটকা মেরে বদিকে পিঠ থেকে ফেলে দিল,তারপর খপ করে ওকে গিলে ফেলে মাটিতে বসে পড়ে অদ্ভুতভাবে আওয়াজ করতে লাগল।এ স্বপ্ন দেখার পরতো বদির দাদি কোনভাবেই বদিকে যেতে দেবে না।বদির দাদি অজ্ঞাত এক রোগে শয্যাশায়ী হলেও সেদিন তিনি বদির হাত এত জোড়ে চেপে ধরেছিলেন যে বদির হাতে দাগ পড়ে গিয়েছিল।বদির আর শেষমেশ যাওয়া হল না।বদির দাদি আজ আর বেচে নেই।বদির গ্রামের বাড়ির পাশেই উনার কবর।
দোকানে আসার পর তার প্রথম কাজ হল বিপ্লবকে বকাবকি করা।বেচারা বিপ্লবকে বেশীরভাগ সময় অকারনে বদির গালিগালাজ সহ্য করতে হয়।কিন্তু বেলা বাড়ার সাথে সাথে যতই কাস্টমার আসতে থাকে ততই বদির মন ভাল হতে থাকে।বিকেলের দিকে তার মন সবচেয়ে ভালো থাকে।কিন্তু শত মন ভাল থাকলেও সে বিপ্লবের কাজের প্রশংসা করে না।
বিপ্লব এমনিতে তার কাজ মনযোগ দিয়ে করতে চেষ্টা করে।তবে মাঝে মাঝে বদি দোকানে না থাকলে সে কম্পিউটারে বাংলা ছবি দেখে।তার প্রিয় নায়ক রিয়াজ এবং তার প্রিয় ছবি 'প্রেমের তাজমহল ', এই ছবিটি সে সতেরবার দেখেছে।
অনার্স থার্ড ইয়ারে পড়ার সময় তৃনার বিয়ে হয়ে যায়।বিয়ের আগে তৃনা অনেকবার বিপ্লবকে বলেছিল, তৃনার বাবার সাথে কথা বলতে,বিপ্লব কথা বলেওছিল।কিন্তু বিপ্লব ছিল তখন বেকার।তখন তার কাছে একটা ইন্টারপাশের সার্টিফিকেট ছাড়া আর কিছুই ছিল না।তৃনার বাবাকে মানানোর জন্য সে অনেক চেস্টা করেছিল।কিন্তু ওর বাবা বেকার ছেলেকে কোন অবস্থাতেই মেয়ে দিবেন না।
এরই মধ্যে বদি বিপ্লবকে একদিন আগারগাও পাঠায়।কিছু হার্ডওয়ার কেনার জন্য।আগারগাও নামার পর বিপ্লব দেখল যে তার মানিব্যাগে ৫০০ টাকার কয়েকটা নোট আছে, যা দিয়ে হার্ডওয়ার কিনতে হবে, কিন্তু ওর কাছে খুচরা কোন টাকা নেই।মার্কেটে যাবার ভাড়ার জন্য সে ৫০০ টাকার একটা নোট ভাঙাবে বলে ঠিক করল।কিন্তু আশেপাশের কোন দোকানে সে টাকা ভাংতি করাতে পারল না।এমন সময় সে দেখতে পেল একটা মাইক্রোতে করে ক্যানসার সমিতির টিকিট বিক্রি হচ্ছে।টাকা ভাঙাবার জন্য ও একটা টিকিট কিনে ফেলল।
কয়েকদিন পরের কথা, বিপ্লব দোকানে কাজ করছিল।বদি পেপার পড়ছিল। পেপারের উল্টোদিকে চোখ পড়তেই তার চোখে পড়ল, 'ক্যান্সার সমিতির লটারির ফল প্রকাশ' লেখাটা ।সেদিনের কাটা টিকিটটার কথা মনে পড়ে গেল ওর।পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে টিকিটটা খুজতে লাগল ও।কিন্তু অনেকক্ষণ খোজার পরও টিকিটটা পেল না।হতাশ হয়ে যখনই মানিব্যাগটা আবার পকেটে রাখতে যাবে ঠিক তখনই মানিব্যাগে কিছু খুচরো নোটের মধ্যে টিকিটটার এক কোনা বেরিয়ে থাকতে দেখল ও,টিকিটটা বের করল ও।বদির কাছ থেকে পেপারটা চেয়ে নিয়ে নাম্বার মেলাতে লাগল ও।৬ষ্ঠ পুরস্কার - একটি মোবাইল ফোন।বিপ্লবের অনেকদিনের শখ দামি ফোন ব্যবহার করা।কিন্তু টিকিটের নাম্বারের সাথে মিলল না।৫ম পুরস্কার একুশ ইন্চি কালার টেলিভিশন।ধুর কালার টেলিভিশন বাড়িতে আছে, নাম্বার মেলালো না বিপ্লব।৪র্থ পুরস্কার ১০০ সিসি মোটরসাইকেল, অনেক আশা নিয়ে নাম্বরটা মেলালো ও,কিন্তু নিরাশ হতে হল ওকে।
ওদিকে বদি পেপার ফেরত দেয়ার জন্য তাগদা দিচ্ছে।বিপ্লব বুঝতে পারল আর মিলিয়ে লাভ নেই।পেপারটা ফেরত দিয়ে দিল ও।কিছুক্ষণ পর বদি বাইরে গেল।মেলাবে না মেলাবে না করেও আবার পেপারটা হাতে নিয়ে মেলাতে লাগল ও।৩য় পুরস্কার নগদ ৩ লক্ষ টাকা,এটাও মিললো না।২য় পুরষ্কার নগদ ১০ লক্ষ টাকা,একই অবস্থা।১ম পুরস্কার নগদ ৫০ লক্ষ টাকা।নাম্বার মেলাতে শুরু করল বিপ্লব, জ -৫৬৯৮৩৪৯ ওর টিকিটটাও তো জ সিরিজের।বাম দিক থেকে একটা একটা করে ডিজিট মেলাতে লাগল ও।১ম চারটা নাম্বার মিলে গেল।পরের ডিজিটটাও মিলে গেল ৩,বিপ্লবের হার্টবিট বেড়ে গেল।পরের দুটো ডিজিট ৪, ৯ ওর টিকিটেরও তাই।ওর ব্যাপারটা ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না।এবার ডানদিক থেকে ডিজিটগুলো মেলাতে লাগল ও।
আবারও সবগুলো ডিজিট ঠিকঠাক মিলে গেল,ওর মাথাটা ঝিমঝিম করে উঠল।বিপ্লব অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল।
কিছুক্ষণের মধ্যে সারা এলাকার মানুষ জেনে গেল যে বিপ্লব লটারি জিতেছে। চোখ খোলার পর নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করল বিপ্লব।ওর দিকে চেয়ে আছে অনেকগুলো উৎসাহী চোখ।সবাই ওর জন্য অনেক উদ্বিগ্ন।সবার মুখে লটারি সংক্রান্ত প্রশ্ন।চারদিকের মানুষগুলোর মেকি আবেগ বুঝতে বেগ পেতে হয়না ওকে।
কয়েকদিনের মধ্যেই লটারির পুরষ্কারের টাকা পেয়ে যায় ও।টাকাগুলো নিয়ে কি করবে সে তা নিয়ে তেমন চিন্তা নেই ওর।
বিয়ের পরও তৃনা প্রচন্ড ভালবাসে বিপ্লবকে।তৃনা ওকে কথা দিয়ে রেখেছিল, যেদিনই বিপ্লব ওকে ডাকবে সেদিনই চলে আসবে ও।তৃনার হাসবেন্ড নিলয়, ভালই ইনকাম ওর,কিন্তু ওকে অনেক মারে।একটাই বদভ্যাস ওর মদ খাওয়া।মদ খেয়ে রাতে বাড়ি ফিরেই তৃনাকে একচোট মারধোর করে নেয় সে।
কিন্তু সকালে ঘুম থেকে উঠার পর একদম ভালোমানুষ হয়ে যায় সে।তৃনা বুঝে উঠতে পারেনা,একটা মানুষ একই সাথে এত ভাল আবার এত খারাপ হয় কিভাবে?
মন খারাপ থাকলে ওর মনে পড়ে বিপ্লবের কথা,কতটাইনা ভালবাসত বিপ্লব ওকে।কখনও যদি তৃনার মন খারাপ থাকত তাহলে ওর মন ভাল করার জন্য কি না করত ছেলেটা, এমন এমন সব জোকস বলতো না হেসে থাকতে পারতো না ও,তাও যদি ওর মন ভাল না হতো তাহলে গান গাইতে শুরু করতো ও,
আছছালামালাইকুম বিয়াইন সাব.....
এই একটা গানই পারতো সে।ওর গলায় এ গান শুনলে তৃনা আর না হেসে থাকতে পারতো না।
হঠাৎ তার কাধে কে যেন হাত রাখলো।চমকে মাথা ঘোরাতেই দেখতে পেল নিলয়,
-কালকে রাতের জন্য সরি।আসলে আমার ওই জিনিস খাওয়ার একদমই....
-থাক আর বলতে হবে না।টেবিলে নাশতা দেয়া আছে।
ঠিক তখনই তৃনাকে আলতো করে জড়িয়ে ধরলো নিলয়।
আমি আর কখনো ওসব ছাইপাশ খাবোনা, তৃনু বিশ্বাস করো।অনেক ভালবাসি তোমাকে।প্লীজ তৃনু।
এই কথাগুলো কেমন যেন কাটা ঘায়ে লবন ছিটানোর মত মনে হলো ওর। এক ঝটকায় নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল সে।
বিপ্লবের দিনগুলো খুব আনন্দেই কাটছে।সেদিন লটারির টাকাগুলো পাওয়ার পর না চাইতেও তার জীবন অনেক বদলে গেছে।বদি এখন প্রতিদিন সকালে বিপ্লবের জন্য এটা সেটা নিয়ে আসে।সেদিন তো বদি নিজের বউকে নিয়ে উপস্থিত,
''নাও নাও তোমার দেবরকে ভালো ভালো জিনিস রান্না করে খাওয়াও।বিপ্লব তোর যা লাগবে তোর ভাবিকে বলবি,লজ্জা করবি না।এই অদ্রির মা বিপ্লবের কাছ থেকে যদি কোন একটা কমপ্লেন শুনি, তোমারে আমি নগদে দশজনের মোকাবেলায় তিন তালাক দেব''।
শেষে বিপ্লব অনেক বলে কয়ে বদিকে বুঝিয়ে তার বউকে বাড়ি পাঠায়।
কিন্তু বদির পিচ্চি ছেলে অদ্রি, বিপ্লব চাচ্চু বলতে অঞান।ফোরে পড়ে সে।তার জীবনের লক্ষ্য সে বড় হয়ে বিপ্লব ভাইয়ের মত হবে।
সেদিন বিপ্লব ওকে নিয়ে বসুন্ধরায় চলে গেল,ওরা স্টার সিনেপ্লেক্সে মুভি দেখল ,বার্গার খেল,অদ্রির জন্য নতুন জামা কিনল।অদ্রি খুব খুশী।সেখানে গিয়ে স্মার্টফোনের শোরুমে ঢুকে এক সুন্দরী সেলসগার্লের কথায় মুগ্ধ হয়ে,২৪ হাজার টাকায় নোকিয়া লুমিয়া কিনে ফেলল।অদ্রিকে ব্যাটম্যান কসটিউম,ক্রিকেট ব্যাট,রিমোট কন্ট্রোলড হেলিকপ্টার কিনে দিল সে।বাড়ি ফিরে অদ্রি বন্ধুদের দেখালো বিপ্লব চাচ্চুর কিনে দেয়া জিনিসগুলো।সবাই ওকে ঈর্ষা করতে লাগল।
পরেরদিন একটা ব্রান্ড নিউ নিশান ব্লুবার্ড সিলফি মডেলের গাড়ি কিনে ফেলল সে।বুদ্ধিটা ছিল ওর বন্ধু রাকিবের।রাকিব বিপ্লবের কষ্টের দিনগুলোতে ওকে অনেক সাপোর্ট দিয়েছিল।বিপ্লবের গাড়িটা ওই চালাচ্ছে মহানন্দে।
প্রতি বুধবার তৃনাকে ফোন দেয় বিপ্লব,কারন বুধবারে নিলয় বাসায় থাকেনা।তৃনা এই দিনটার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে।আজকেও বিপ্লব ফোন করেছে।
-কেমন অাছ,টুনটুনি ?
-লজ্জা করেনা অন্যের বউকে এভাবে ডাকতে?
-টুনটুনি তুমি বলেছিলে না,যেদিন আমি নিজের পায়ে দাড়াতে পারব, সেদিন তুমি আমার কাছে ফিরে আসবে?
-হুম, তুমি যেদিন ডাকবে,সেদিনই আমি চলে আসব।বিপু জানো ও প্রতিদিন রাতে মদ খেয়ে বাড়ি ফিরে আমাকে মারধর করে।আমি আর পারছি না,বিপু। প্লীজ তুমি আমাকে এ জাহান্নাম থেকে মুক্ত কর।
-টুনটুনি আমি একটা চাকরি পেয়েছি।
সত্যি?
-হুম সত্যি।বেতন খুব বেশী না হলেও তোমার আমার খুব আরামেই কেটে যাবে।তুমি কি আসবে?
তৃনার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে,
তৃনা,তৃনা শুনতে পাচ্ছ?
বিপ্লবের ডাকে ও ধাতস্থ হয়।
-কবে কোথায় আসতে হবে বল?
-তুমি কালকে বিকেল ৫টায় কমলাপুর রেলস্টেশনে থাকতে পারবে?
-একশবার পারব।বিপু তুমি সত্যিই আমাকে নিয়ে যাবে তো?
-তৃনা আমাদেরকে এখন আর কেউ আলাদা করতে পারবে না।
আরো অনেক কথা ওদের মধ্যে নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে।একবুক আশা নিয়ে ঘুমোতে যায় তৃনা।
বিপ্লবের ইচ্ছা ওকে নিয়ে দূরে কোথাও চলে গিয়ে একটা নতুন জীবন শুরু করার।চিটাগাংকেই বেছে নিয়েছে সে।বিপ্লব ওকে লটারি জেতার কথাটা বলেনি।সে তৃনাকে সারপ্রাইজ দিতে চায়।
সকালে ঘুম থেকে উঠেই গোছগাছ করে নিল তৃনা। কিন্তু নিলয়ের খুব জ্বর ।জ্বরের ঘোরে শুধু তৃনা,তৃনা বলে ডাকতে লাগল সে।রাগ লাগতে শুরু করল মানুষটার উপর, কি দরকার ওর এসব খাওয়ার?অসুস্থ মানুষটাকে ফেলে যেতে মন চাচ্ছে না ওর।নিলয়ের কপালে হাত রাখল তৃনা,জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে,বিড়বিড় করে শুধু তৃনা, তৃনা বলে যাচ্ছে,মাঝে মাঝে বলছে, আমি আর মদ খাবো তৃনা, আর খাব না।হঠাৎ লোকটার জন্য তীব্র মায়া অনুভব করল তৃনা।হাজার হোক মানুষটা আমার স্বামী। তার মনে হতে লাগল এই মানুষটাকে অামি ভাল বানাবই,যতই অবহেলা করুক সে আমায়।
নিলয়ের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল সে,
আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাব না, নিলয়।
বিপ্লব অনেকক্ষন ধরে অপেক্ষা করছে তৃনার জন্য।তৃনাকে কল করল সে।ফোন ধরল না ও।
একটু পর তৃনা ফোন করল ওকে।
-হ্যালো বিপ্লব।
-হুম,কোথায় তুমি?কতক্ষন লাগবে আসতে?
-আমাকে ভুলে যাও বিপ্লব।
-এসব কি বলছো তুমি?
-আমি নিলয়কে ছেড়ে আসতে পারব না।
-কিন্তু কালকেও তুমি বললে...
-আমি তোমাকে এখনও ভালবাসি,কিন্তু আমি নিলয়ের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারব না।প্লীজ বিপ্লব আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও।
বিপ্লব অনেক বোঝানোর চেস্টা করে ওকে।কিন্তু তৃনা আসবে না। বিপ্লবের গলা দিয়ে শব্দ বেরুতে চায়না।
হ্যালো,বিপ্লব শুনতে পাচ্ছ?হ্যালো,হ্যালো....
একসময় ফোন কেটে যায়,দুচোখ বেয়ে পানি পড়ছে ওর।সে জানে তৃনা একবার যখন বলেছে তখন আর কখনই আসবে না সে।একা একা হাটতে থাকে সে,
কাধে একটা ব্যাগ তাতে অনেকগুলো টাকা.......