আঙ্গুল ছোঁয়ার মুদ্রাদোষ

উপলব্ধি (এপ্রিল ২০১৬)

সা'দনূর সালেহীন স্বপ্নীল
  • ৮০
০১।

সাব্বিরের ভুরু দুটো অস্বাভাবিকভাবে কুচকে ছিল, গম্ভীর মুখে জিজ্ঞ্যেস করল, "নীহারিকা বি অনেস্ট ! তুমি এইভাবে রিয়েক্ট করলে কেন?"

নীহা বিরক্তি চেপে রাখল। বি অনেস্ট বলার কি দরকার? এমন না যে সে কখনো মিত্থ্যা বলেছে সাব্বিরের সাথে। তবে আজকে সম্ভবত সাব্বির বেশী রেগে আছে- রেগে থাকলেই সাধরনত নীহার পুরো নাম ধরে ডাকে।

নীহা বলল, " তুমি বেশী স্পীডে গাড়ি চালাচ্ছিলে... ভয় লাগছিল!"

সাব্বির অবাক হয়ে বলল, " সিরিয়াসলি ? এর চেয়েও স্পীডে তোমাকে নিয়ে হাইওয়ে তে গাড়ি চালিয়েছি। তখন তো কিছু হয়নি!"

নীহার আবারো কান্না পাচ্ছে, ঠোট কামড়ে বলল, "আমার কি কান্নার ও স্বাধীনতা নেই? আমি কি কাদতেও পারবো না?"

সাব্বির আরো গম্ভীর হয়ে যায়। বলল, "বিয়ের পরে রাত বিরাতে তোমার ফোনে টেক্সটিং ফেক্সটিং বন্ধ করা ছাড়া আমি আর কি করেছি বলতো ? স্বাধীনতার খোটা দিলে যে?"

নীহার গলার আহত স্বরে বলল, "এইটাও কম কিছু ছিল না... ''

সাব্বির, আমি একটু একা থাকতে চাচ্ছি- থাকতে দাও?"

"আমার কিছু কোশ্চেনের এনসার দাও, আমি আর ঘাটাচ্ছিনা তোমাকে!"

"কি কোশ্চেন?"

সাব্বির বলল, "বিয়ের আগে তোমার কোন রিলেশন ছিল?"

নীহার ভেতর টা কেউ যেন খুচিয়ে খুচিয়ে ক্ষতবিক্ষত করছে। ভেতরের রক্তক্ষরণ টা প্রত্যেকটা ইন্দ্রিয় দিয়ে অনুভব করতে পারছে, তরল একটা যন্ত্রনা মস্তিষ্ক হয়ে পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে। নীহা বলল , "আজ আর কথা না বলি?"

সাব্বির বলল, "তুমি যখন কাদছিলে, তখন তুমি ঘোরের মধ্যে ছিলে... আপনা আপনি ই অনেক কথা বলে ফেলেছো। আমি শুধু সবটা জানতে চাই!"

নীহা অবাক হয়ে বলল, "হ্যা রিলেশন ছিল। কিন্তু সেইটা একটা লম্বা কাহিনী। আমি তোমাকে এখনই বলতে চাই না।"
সাব্বিরের চোখ তখন লাল হয়ে আছে রাগে, "কতটা ইন্টিমেট ছিলে তোমরা?"

নীহা বলল, " তুমি পুরো কাহিনী তো শুনবে?"

সাব্বির বলল, " প্রয়োজন নেই... স্ট্রেটকাট বলো, তোমাদের মাঝে শারীরিক সম্পর্ক হয়েছিল?"

নীহা নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারে না!! কোন লোকের সংসার করে সে? ইচ্ছে করছিল সাব্বিরের গালে থাপ্পড় লাগিয়ে দেয়! কিন্তু সে সেইটা করলো না। একটু হাসার চেষ্টা করলো। তারপর বলল, "হ্যা শারীরিক সম্পর্ক হয়েছিল। একবার না - বেশ কয়েকবার।"

সাব্বির বলল, "আগে বলিস নাই ক্যান *****"

গালিও দিয়ে দিল? নীহা সম্ভবত অবাক হবার ক্ষমতাটুকুও হারিয়ে ফেলল।"মুখ সামলে কথা বল সাব্বির। তুমি যখন কনফেস করেছিলে- তাও একটা না, তিনটা মেয়ের সাথে... সেসব নিয়ে আমি তো রিয়েক্ট করিনি!"

নীহা কথা শেষ করতে পারেনা, তার আগেই প্রচন্ড জোরে একটা চড় নীহার গালে এসে পড়ে যায়। নীহা ভার সামলাতে না পেরে ছিটকে পড়ল। মুখে নোনতা স্বাদ, ঠোট কেটে রক্ত বের হচ্ছে সম্ভবত।

নীহা শীতল চোখে দেখলো শুধু। এইবার চেষ্টা করেও সে কাদতে পারছে না।

০২। তপু লিখল , "ফ্রেঞ্চ ফ্রাই খাবি?"

নওশিন লিখল, "সাগুফতা রোডে না হাটতে যাবি বললি?"

তপু ফোন দিল তখন, নওশিন ধরতেই বলল, "শোন তুই সাগুফতায় চলে আয়। আমি সাইকেল করে আসছি- মিনিট দশেক লাগবে"

নওশীন চিৎকার করে বলে, "মাত্র দশ মিনিট !"

তপু বলল, "উফফ! তোর বাসা থেকে ১ মিনিটের হাটা রাস্তা!"

"সাজগোজ করতে হবেনা একটু!"

"সাজলে তোকে পুরাই ডাইনী বুড়ী লাগে! সাজা লাগবেনা- বের হো! লেইট করবিনা খবরদার!"

কিন্তু নওশিন ঠিক ই লেট করল! ঘড়ি ধরে আধাঘন্টা লাগল তার আসতে। তপু বলল, " কয় ঘন্টা লাগাইছিস খেয়াল আছে?"

বলতে বলতে নওশীনের চোখের দিকে তাকালো সে। অদ্ভুত একটা মায়া এই চোখে। তপুর বলতে ইচ্ছা করলো, তোকে পরীর মত লাগছে রে! চোখ দুটোর দিকে মনে হয় সারা জীবন তাকিয়ে থাকতে পারব!

কিন্তু তপু এইসব কিছু বলল না,এখনো এই কথাগুলা বলার অধিকার জন্মায় নি। নওশিন মিট মিট করে হাসে- আচ্ছা! কিছু কি বুঝতে পারে ?

নওশিন বলল, "ওরে বুদ্ধু! এইভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছিস ক্যান?"

তপু মুখ টা সিরিয়াস করে বলল, "ঠিক কোন লেভেলের পেত্মী মনে হচ্ছে- সেইটা বোঝার চেষ্টা করছি!"

"উফফ হারামি! " বলে নওশিন তপুর চুল টেনে ধরে। তপুর সময়টা যদি থেমে যেত ! এইভাবে যদি আঙ্গুল গুলো সারা জীবন লেগে থাকত ! তপু নওশিনের কাছে চলে আস।এতটা কাছে যেন আঙ্গুল গুলো লেগে থাকে নওশীনের গায়ে। আঙ্গুল গুলো ভয়ংকর কন্টোলের মধ্যে থেকেও একটু একসেস চায়।

নাহ... এখন পর্যন্ত শুধুই বন্ধুত্ব। নওশীন হয়তো কিছু বলেনি, মানা করেনি! কিন্তু যেইদিন মানা করবে, সেইদিন আর ফ্রেন্ডশিপ রাখা সম্ভব নাও হতে পারে!

তপু বলল, "ফ্রেঞ্চ ফ্রাই আরেকটু সামনে। আমাদের হাটতে হবে!"


০৩।
সাব্বির অন্যদিনের চেয়ে আজকে বেশী কথা বলছে।

নীহা শুধু শুনেই যাচ্ছে। মাঝে মাঝে হুম হুম... ওর একদমই ইচ্ছে ছিলো না আজকে বের হবার। সাব্বিরের বন্ধুদের গেট টুগেদার, গিয়ে বসে বসে বোর হতে হবে, বিয়ের পরে সম্ভবত মেয়েরা অতিমাত্রায় স্বামী কেন্দ্রিক হয়ে যায়- সাব্বিরের প্রায় প্রত্যেকটা বন্ধুর বউদের আলোচনার টপিক ঘুরে ফিরে তাদের স্বামী। ও এইটা করেছে, ঐটা করেছে ... অদ্ভুত!

সাব্বিরের গাড়ির গতি বাড়ছিল ই। মিরপুরের আশে পাশের সব রাস্তাই পরিচিত নীহার। এই রাস্তাটা সবসময় ফাকা থাকে বলে গাড়ির স্পীড ও হুর হুর করে বাড়িয়ে চলে সবাই।
নীহা বলল, "সাব্বির স্পিড কমাও!"

সাব্বির বলল, "মাত্র তো ৬৫ তুললাম।"

"স্পীড কমাও!"

"ভীতু ! " বলে সাব্বির আরো স্পীড বাড়িয়ে দিল। নীহা আর পারল না, "গাড়ি থামাও " বলে ফুপিয়ে কেদে উঠলো।

কাদতেই থাকল। ঘটনার আকস্মিকতায় সাব্বির এতটা অবাক হল যে চোখের পলক ফেলতে ভুলে গেল।খানিকবাদে গাড়ি থামিয়ে বলল, are you okay?

নীহা তখনো ফুপিয়ে কাদছে। সাব্বির বিরক্ত হলো। তার কপালে এত লুতুপুতু বউ জুটলো ক্যান?

যদিও তার দায়িত্বজ্ঞান বলে, এখন নীহার হাতটা ধরতে হবে। কিন্তু তার ইচ্ছে করলো না। এম্নিতেই তারা পার্টিতে লেইট- এই মেয়েটা আরো লেট করাচ্ছে!
০৪।

বাসায় আসার পর ও তপুর ভেতরের সেই খুতখুতানিটা গেল না।

ব্যপার টা অবশ্যই অপমানজনক ছিল। কি এমন হত রিকশায় উঠলে? নওশিন কি চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল না যে "তুই শুধু আমার ফ্রেন্ড ই। you have your limits!"

একদিন গেল, কিচ্ছু বলেনি সে। তপুর লাস্ট ম্যাসেজ টা যদিও সিন করে রাখার মতই, তবুও এটলিস্ট সে "হুম" বলে রিপ্লাই দিতে পারতো।

বিচিত্র ধরনের একটা অস্থিওরতা। প্রোপোজ করলেই হয় মেয়েটাকে, তবু প্রোপজ করতে ইচ্ছা করেনা। যদি রিজেক্ট করে? তাহলে আংগুল ছোঁয়ার এই মুদ্রাদোষ ও তো বদলে ফেলতে হবে!

তবু পরদিন বিকেলে তপু নিজ থেকেই ফোন দিল, "তুই গতকাল রিকশায় উঠলি না কেন?"

"উঠবো কেন?"

নওশীন তো এইভাবে কথা বলেনা। তপু বলল, "উঠলে সমস্যা কি? এমন তো না যে তুই কখনো আমার পাশে বসিস নি... তোর গাড়িতে করে কতবার ই আমাকে লিফট দিয়েছিস! তখন তো আমার পাশেই ছিলি!"

"গাড়ি আর রিকশা এক কথা হলো? আমি কখনো কোন ছেলের সাথে রিকশায় উঠিনি... আর প্রথম যার সাথে উঠবো - তাকে অবশ্যই স্পেশাল কেউ হতে হবে?"

ইগোতে লাগল কথাটা। তপু বলল, "হুম... সেটাই, স্পেশাল কেউ হতে হবে... আমার মত ছন্নছাড়া উড়ে এসে জুড়ে বসা কোন বন্ধু না... "

"প্রত্যেকবার গায়ে পড়ে ভুল বুঝিস ক্যান? আমি কি একবারো বলেছি তুই সেই স্পেশাল কেউ হতে পারবি না? এত কিছু বললাম, এত ইশারা করলাম। তাও কি কিছুই বুঝিস না? ছেলেরা এত বোকা হয় ক্যান! "

তপুর পুরা পৃথিবী এক সেকেন্ডে দুই সমকোন ঘুরে গেল! অদ্ভুত একটা ভাললাগা প্রথমে বুকে তারপর সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ল। তপু বলল, "প্রোপোজ করা লাগবে?"

"হুম... "

"আচ্ছা করতেসি... উমম নওশীন..."

"এই দাড়া !! দাড়া !! বুদ্ধু! ফোনে কেউ কাউকে প্রোপোজ করে? "
তপু লজ্জা পেল, বলল, "আচ্ছা দাড়া। আমি সাইকেলে বের করতেসি, ১০ মিনিট লাগবে আসতে ! "
নওশীন মরিয়া বলল, "দঅঅঅঅশ মিনিট ! এত্ত দেরী??"
"অফ যা তো ! " বলে তপু ফোন রেখে বের হল। এত সুখ তার কপালে ছিল বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় !

অবিশ্বাস্য ছিল বলেই সম্ভবত সুখটুকু মাত্র পাচ মিনিট স্থায়ি ছিল। সাগুফতার ফাকা রোডে সারি সারি গাড়ি সাই সাই করে ছুটে যাচ্ছিল। হঠাত একটা গাড়ী সামনে ব্রেক কষাতে তপু একটু ডানে সরে আসল।

ব্যাস- ঠিক তখনই ডান পাশে আসতে থাকা একটা প্রাইভেট কার প্রচন্ড চোরে তপুর সাইকেল টাকে আঘাত করল। তপু ছিটকে রাস্তায় পড়েও বেচে ছিল- কিন্তু আরেকটি প্রাইভেট কার তার বাম হাত এবং বুকের অনেকটুকু মাংস কে কালো পিচের সাথে মিশিয়ে দিয়ে যায়।

কালো পিচে লাল রক্তকে কালচে মনে হচ্ছে। হঠাত খুব শোরগোল... কত মানুষ দৌড়ে আসছে... তপুর চিন্তা করার ক্ষমতা লোপ পাচ্ছে

ডান হাতটা তখনো রাস্তায়... আঙ্গুল ছোঁয়ার মুদ্রাদোষ টা এখনো যায় নি, খুজে বেড়াচ্ছে আঙ্গুল উত্তপ্ত কালো পিচে... তপু তখনো জানতো না , তার জন্য অপেক্ষা করতে থাকা নীহারিকা নউশিন নামের মেয়েটি একদিন এই রাস্তায় তার স্বামীর সংগে যাবার সময় তার কথা ভেবেই ভেংগে পড়বে!

মেয়েটা অপেক্ষা করতে থাকুক, তপু আর এই যন্ত্রণা নিয়ে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করতে পারছেনা।

মিনিট পাচেক- তারপর তপুর পৃথিবীটা প্রথমে ঝাপসা , এবং পরে অন্ধকার হয়ে আসে !
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
রেজওয়ানা আলী তনিমা কষ্টের গল্প। সাবলীল বর্ননা ভালো লাগলো।
মোহাঃ ফখরুল আলম ভাল লেগেছে। ভোট দিতে মন চায়। আমার কবিতা পড়ার আমন্ত্রণ রইল।
ফেরদৌস আলম অনেক মর্মস্পর্শী একটি গল্প !
কেতকী প্রতিযোগিতার সবগুলো গল্প এখনো পড়া হয়নি। তবে এটা পড়ে চোখের কোনে পানির আভাস পেলাম, সাথে বুকের ভেতরে ব্যথাও সম্ভবত। ভোট রইল।
রুহুল আমীন রাজু বেশ ভালো লাগলো গল্পটি....পাঠক শূণ্যতায় হতাশ হলাম.যাক,আপনি লিখে যান....আপনার হাত ভালো.শুভ কামনা রইলো.
ইমরানুল হক বেলাল অনেক সুন্দর একটি গল্প। ভালো লাগলো।
গোবিন্দ বীন ভাল লাগল,ভোট রেখে গেলাম।আমার কবিতা পড়ার আমন্ত্রন রইল।

২৯ মার্চ - ২০১৬ গল্প/কবিতা: ১ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪