তৃপ্তির ঘুম

উপলব্ধি (এপ্রিল ২০১৬)

নাস‌রিন নাহার চৌধুরী
  • ১৫
  • ১২
আমি বড় ঘুমকাতুরে। সুযোগ পেলে টানা ২৪ ঘন্টাও ঘুমাতে পারবো সম্ভবত।
অনেকগুলো বছর আমি নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারিনি । যেদিন মাকে ছেড়ে আসার উৎসবে "কবুল" বলে কেঁদেছিলাম সেদিন থেকে আমার ঘুমগুলো অতৃপ্ত মৃত আত্মার মতো বাতাসে ভেসে বেড়ায়।
ইদানিং নির্ঘুম মৃত আত্মারা বাতাসটাকে অনেক বেশি ভারী করে তুলছে। আমার প্রায়শই শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। আমি জানি ডাক্তাররা এই শ্বাসকষ্টের কোন চিকিৎসা করাতে পারবেন না।
বাবা গত হয়েছেন সেই শৈশবেই। মাতৃস্নেহে বাবার অনুপস্থিতি তেমন বুঝতে পারিনি সেইকালে। মা'র বয়স হয়েছে। ইদানিং হাঁটুতে তেমন জোর পান না। পুরোনো বাড়ির ফ্ল্যাট কমোডে টয়লেটের কাজ সারতে আম্মার অনেক বেশি কষ্ট হয়। আম্মা সেভাবে জোর করে কিছু চান না। কিন্তু কখনো সখনো একটু বলে অনেকটা সর্দিজ্বর এলে যেমন দুশ্চিন্তার কিছু নেই, ক'দিনেই সেরে যাবে...আম্মার বলার ধরণটাও তেমনি ।কিন্তু আমি শ্বাসকষ্টে কষ্ট পাচ্ছি। বাচ্চাটা পেটে থাকতে কখনো কোথাও ফ্ল্যাট কমোডে বসতে গেলে খুব কষ্ট হতো। আমার বড় ভাইবোনেরা তেমন গা করছে না। হয়তো তাদের এই অচ্ছুৎ বিষয়টা নিয়ে কোন মাথা ব্যথা নেই। কিন্তু আম্মার না বলা কষ্টটা আমাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। ছাপোষা কেরানী যেমন বেতন পায় তেমন বেতনের বড় পদের একটা চাকরী করি আমি। যা পাই তা কীভাবে খরচ হয়ে যায় নিজের টের পাই না।
কিন্তু যখন থেকে আমার শ্বাসকষ্ট বাড়তে থাকলো, যখন থেকে মৃত আত্মারা আমার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটালে লাগলো তখন থেকে আমি বেতনটা পেয়েই হাতছাড়া করতে লাগলাম। সোজা ব্যাংকে পাচার । অনেকগুলো টাকা লাগবে।
আম্মার বাবার বাড়ি থেকে আর শাশুড়ির উপহার দেয়া মোট অনেকগুলো জমি, কিছুই অবশিষ্ট নেই। সবটুকুই বড় ছেলেমেয়েরা হাত করে নিয়েছেন। নিজের এখন থাকার একটা ঘর পর্যন্ত নেই।
আমি জানিনা নিজের ভেতর কেমন একটা শক্তি টের পাচ্ছি যেনো। মনে হচ্ছে আমার যদি আর কোন ভাই-বোন না থাকতো তবে কি আমি আমার মায়ের দেখভাল করতাম না?
হ্যাঁ, এই উপলব্ধিটাই আমাকে শক্তি যোগাচ্ছে। আমার শ্বাসকষ্টেও চলতে পথ দেখাচ্ছে।

আমার তিনতলা ফাউন্ডেশনের বাড়ির দু'রুমের একতলার একটা ঘর আমার নিজের জন্যে রেখেছি। মায়ের হাতে গতবার সেই ঘরের চাবি দিয়ে বলে এসেছিলাম, "আম্মা, আপনি যতদিন বেঁচে থাকবেন ততদিন এই ঘর আপনার "। আমি সামনেরবার এসে আপনাকে হাইকমোড সহ একটা বাথরুমের ব্যবস্থা করে দিব।" চাবিটা যখন হাতে নিচ্ছিলেন খুশিতে আম্মার চোখ চকচক করে উঠেছিল। নিজেকে কেমন যেনো তুচ্ছ লাগছিল। স্বামীহারা এক নারী নিজের জীবন সংগ্রামে হার না মেনে সন্তানদের বড় করেছেন। অথচ সেই সন্তানরাই এখন নিজেদের স্বার্থ নিয়ে কেটে পড়েছে।

কয়েকমাস নিজেকে একটু চাপের মধ্যে রেখে, বিলাসী জীবন থেকে নিজেকে একটু নিয়ন্ত্রণ করে বেতনের টাকাটা জমিয়ে ফেলেছি পানি আর বাথরুম তৈরির জন্যে।

ঘর-সংসার রেখে বাচ্চাদের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে বাসে চেপে যখন মায়ের কাছে হাজির হয়েছি মা তখনও জানেননা আমার উপস্থিতির কারণ। এলাকার পূর্ব পরিচিত এক বড় ভাইকে সাথে নিয়ে সব কিনে বাসায় যখন লেবার নিয়ে হাজির হলাম আম্মার তখন যেনো ঈদের খুশি!
সারাটা জীবন যেই মহিলা নিজের দিকে না তাকিয়ে আমাদের খুশির ব্যবস্থা করেছেন আজ তার জন্যে এটুকু কিছুই না।
রাতে কাজ শেষ হলো। আমার সাথে রাজমিস্ত্রী, কলের লেবারদের সাথে সেভাবেই চুক্তি হয়েছিল। আম্মা বেশ ক'জন প্রতিবেশিকে নিয়ে তার কন্যার গুনকীর্তনে মহাব্যস্ত।

আমি বেরিয়ে পড়লাম দাদার পুকুর পারের পাশের বিরাট মাঠটার পানে । চাঁদনী রাত, সারা মাঠে আলোর বিছানা পাতা হয়েছে।

আজ আমি এই জোৎস্না মাখা বিছানায় তৃপ্তি নিয়ে ঘুমাবো। অনেকরাত, অনেক মাস, অনেক বছর পর ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
রেজওয়ানা আলী তনিমা বাহ! সুন্দর উপলব্ধি
অনেক ধন্যবাদ। শুভেচ্ছা রইল।
জোহরা উম্মে হাসান খুব সুন্দর লেখা । ভাল লাগলো অনেক !
অনেক ধন্যবাদ। অনুপ্রাণিত হলাম।
জসীম উদ্দীন মুহম্মদ চাঁদনী রাত, সারা মাঠে আলোর বিছানা পাতা হয়েছে। আজ আমি এই জোৎস্না মাখা বিছানায় তৃপ্তি নিয়ে ঘুমাবো। অনেকরাত, অনেক মাস, অনেক বছর পর । ------ চমৎকার আবেশ !!
অনেক ধন্যবাদ । শুভেচ্ছা জানাই ।
মোহাঃ ফখরুল আলম অনেক ভাল হয়েছে। ভোট পাওয়ার যোগ্য।
অনুপ্রাণিত হলাম। অনেক ধন্যবাদ।
মোহাম্মদ সানাউল্লাহ্ ছোট হলেও অসাধারণ গল্পে মুগ্ধ হলাম । ভোটও রেখে গেলাম ।
এতো সুন্দর মন্তব্যে মনটা কৃতজ্ঞতায় ভরে গেল। শুভেচ্ছা রইল।
Azaha Sultan যেন চোখের সামনে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলী.....বাস্তবতার প্রতিবিম্ব.....
বাস্তবতার কাছে যেতে পেরেছি জেনে ভালো লাগলো। অনেক ধন্যবাদ। শুভেচ্ছা অশেষ।
ফেরদৌস আলম অনেক শক্ত অনূভুতির প্রকাশ ! ভালো লাগলো !
মন্তব্যটা খুব ভালো লাগলো। অনেক ধন্যবাদ। শুভেচ্ছা রইল।
শামীম খান ভালো লিখেছেন । এগিয়ে চলুন । শুভেচ্ছা রইল ।
ইমরানুল হক বেলাল অনেক সুন্দর একটি আত্মজীবনীমূলক গল্প। মনে গল্পটা আপনার জীবন থেকেই নেওয়া। ভালো লাগলো। প্রাপ্যটা রেখে গেলাম। "জীবন চলার পথে" গল্প পড়ার জন্য আহ্বান রইল। আপনার সাহিত্যকর্ম উজ্জীবিত হোক।
আত্মজীবনীর মতো করেই লিখতে চেয়েছি। পড়বো আপনার গল্প। ধন্যবাদ রইল।

২৮ মার্চ - ২০১৬ গল্প/কবিতা: ২২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪