একটি সুইসাইড নোট

উপলব্ধি (এপ্রিল ২০১৬)

স্নিগ্ধ সমাপ্তি
  • ১১
  • ৫৬

তৌকির,
কেমন আছ জানতে চাইব না। আমি জানি তুমি ভাল আছ। চার মাস হয়ে গেল তোমাকে ছেরে আসলাম, একটা দিন ও তুমি ফোন করনি, তোমার সব খবর ই আমি রেখেছি, তুমি রাখনি। একটা বার এর জন্য ও তোমার মনে হয়নি তোমার লাইফে কিছু একটা নেই, দিব্যি ভালই ছিলে। কিন্তু এই চার মাস আমার কাছে ঠেকেছে যুগ এর পর যুগ। শুধু মনে হয়েছে তোমার কথা, কাঁটার মত দেহে বিঁধেছে তোমার স্মৃতি গুল।হয়তো ভাবছ কি লিখছি এসব, ভাবতেই পার, সব অধিকারই তোমার আছে। আমার মনের মধ্যে আজ ঝড় ওঠেছে, আজ তোমাকে সবই লিখব। জমে থাকা সব ক্ষোভ, ক্রোধ, বিদ্বেষ আজ লিখবই। জানি অনর্থক বকবকানি ছাড়া আর কিছুই মনে হবেনা তোমার, অনেকখানি মুল্যবান সময় ও নষ্ট হবে তোমার। কিন্তু বিশ্বাস কর তৌকির, জীবনের আগামী কোন প্রান্তে আমাকে আর পাবেনা তোমার সময় নস্টকারী হিসেবে।
মা-বাবা অনেক সাধ করে তোমার সাথে বিয়ে দিয়েছিল আমার। এত বড় ডাক্তার কে ই বা হাত ছাড়া করতে চায় বলো? আর দশ টা মেয়ের মত আমিও অনেক স্বপ্ন নিয়ে তোমার সাথে নতুন জীবনে পা দিয়েছিলাম। মনে আছে তোমার, বাসর রাতে কি বলেছিলে? আমার মনে আছে, তুমি বলেছিলে, ‘কাঁদছ কেন? সবসময় হাসবে, হাসলে হার্ট ভাল থাকে, অবশ্য কাঁদলেও চোখ পরিষ্কার হয়’। খুব মজা পেয়েছিলাম, ভেবেছিলাম মানুষটা বড্ড রশিক। তারপর একদিন, দুইদিন, তিনদিন করে পাঁচ বছর চলে গেল। কখনো কি বলেছো ‘আই লাভ ইউ’? বলনি। আমি বলেছি। কতবার বলেছি ‘আই লাভ ইউ’ আর অপেক্ষা করেছি একটা বার ‘আই লাভ ইউ টু’ শোনার জন্য, নাহ, ভুল করেও বলনি। সেবার ভেলেন্টাইন্স ডে তে যখন তোমাকে এক তোড়া গোলাপ দিয়ে বললাম ‘ আমি সত্যি তোমাকে মন থেকে হার্ট থেকে ভালবাসি’। তুমি হাসলে, হেসে বললে ‘ভালবাসা মানুষের মস্তিস্ক থেকে সৃষ্টি, আই মিন ব্রেইন, আসলে ভালবাসা বলতে কিছু নেই, কোন মানুষ যখন আবেগপ্রবন হয়ে যায় তখন ভালবাসা, ঘৃণা, মায়া……’ তোমাকে থামিয়ে দিয়ে তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম ‘তুমি কি আমাকে ব্রেইন থেকে ভালবাস?’ তুমি বুঝলেনা এই কথাটার মধ্যে কতটা কষ্ট লুকিয়ে ছিল, বুঝলেনা আমার ব্যাথাটা, নির্বিকার ভাবে বলেই চললে ‘অবশ্যই, ভালবাসা তো ব্রেইন থেকে ই সৃষ্টি হয়, হার্ট তো পাম্প যন্ত্রের মত, যা সংকোচন এবং প্রসারণের মাধ্যমে সারাদেহে রক্ত সংবহন করে, এটা একটা পাতলা পর্দা দিয়ে আবৃত থাকে যার নাম পেরিকার্ডিয়াম’।
সখ করে তোমার জন্য কত কিছু রেঁধেছি, কখনো পুডিং, কখনো পায়েশ, কখনো কাবাব, শুধুমাত্র একটা বার তোমার মুখ থেকে প্রশংসা শোনার জন্য, তুমি কখনো বিরক্ত হয়ে বলেছ বেশি চিনি খাওয়ার অপকারিতা, কখনও কোলেস্টোরেল এর অপকারিতা, কখনো বা বেশি মশলা খাওয়ার ক্ষতি। কখনই বোঝনি এই মেয়েটা তোমার প্লেট এ খাবার দিয়ে অধির আগ্রহে তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে কোলেস্টোরেল এর অপকারিতা শোনার জন্য নয়।
তৌকির, একা একা ছাদে হেঁটে আকাশ দেখেছি, চাঁদ দেখেছি, কখনো পাশে তোমাকে পাইনি। চাঁদ দেখে আকাশ দেখে সময় নষ্ট করার চেয়ে মোটা মোটা বইগুলোর দাঁতভাঙা কঠিন ইংরেজি গুলো দেখাই তোমার কাছে উত্তম ছিল।
লাল শাড়ী লাল চূড়ি আর কপালে লাল টিপ দিয়ে তোমার সামনে দারিয়েছি কখনো। তুমি আমার দিকে তাকিয়ে দেখলে, তারপর বললে ‘তোমার কপালে টিপ টা মনে হচ্ছে এক ফোটা রক্ত, এরিথ্রসাইট, রক্ত লাল দেখায় কেন বলতো? লোহিত কনিকা থাকে তাই, রক্তে হিমগ্লোবিন নামের এক প্রকার পদার্থ থাকে, পুরুষের তুলনায় মেয়েদের হিমগ্লোবিন এর পরিমান কম………’
তৌকির টাকা পয়সা বাড়ী গাড়ি আমি চাইনি।
জানো? আমি কি চাইতাম?
আমি চাইতাম তোমার ভালবাসা, ব্রেইন থেকে নয় হার্ট থেকে। আমি চাইতাম একটা গোলাপ আমার খোঁপায় গুঁজে দিবে তুমি। দিন রাত লাভ ইউ, লাভ ইউ বলে জ্বালাতন করবে। আমার হাতের রান্না খেয়ে তোমার চোখে মুখে তৃপ্তি ফুটে ওঠবে আর অফুরন্ত প্রশংসা ঝড়বে তোমার মুখ থেকে। চেম্বার থেকে ফেরার সময় একটা চকলেট এনে বলবে ‘এসো আমরা ভাগ করে খাই’। জানো? রাতের পর রাত এক বিছানায় ঘুমানোর জন্য সঙ্গী আমি চাইনি, আমি চেয়েছিলাম তোমার কাঁধে মাথা রেখে আকাশ দেখবো, চাঁদ দেখবো। জানো তৌকির? আমি লাল শাড়ি লাল চুড়ি পরে তোমার সামনে কেন দাঁড়াতাম, আমি চাইতাম তুমি আমাকে অবাক হয়ে দেখবে, দেখতে দেখতে হয়তো জীবনানন্দ দাশ এর কোনো কবিতার চার লাইন বলে ফেলবে। কিন্তু তুমি রক্ত, অস্থি, মজ্জার বর্ণনা শুনিয়ে দিতে আমাকে। তৌকির, আমার কথার মানে হয়ত তুমি বুঝবেনা। আমার হার্ট বিট তোমার কাছে শুধুই হার্ট বিট, কিন্তু তোমার হার্ট বিট এ আমি ভালবাসা খুঁজে বেড়িয়েছি। জানো? আমি নিঃশ্বাস নেই তবুও মনে হয় আমি বেঁচে নেই। আমার হার্টেও এখন শুধুই রক্ত সঞ্চালন করে। আমি জানি তুমি আমাকে ছারাও ভাল থাকতে পার। কিন্তু আমি পারছিনা। চলে যাচ্ছি চিরতরে, অনেকখানি কষ্ট নিয়েই যাচ্ছি। অপূর্ণতা নিয়েই চলে যাচ্ছি। খুব ভাল থেকো।

ইতি
সারমিন
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
হুমায়ূন কবির ভালোলাগা সহ ভোট রইল।
রেজওয়ানা আলী তনিমা অপাত্রে ভালোবাসা। যদিও এতখানি কঠোর কি কোন মানুষ হয়? শুভেচ্ছা রইলো।
মতামত দেয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ। কঠোর তো মানুষ ই হয়।
মোহাঃ ফখরুল আলম ভাল লেগেছে। ভোট দিতে মন চায়। আমার কবিতা পড়ার আমন্ত্রণ রইল।
অনেক ধন্যবাদ। জি পড়ব।
ফেরদৌস আলম অসম্ভব ভালো লাগলো! পরের গল্পের অপেক্ষায় থাকলাম!
ধন্যবাদ। উৎসাহ পেলাম :)
সাগর সোহাগ প্রত্যেকটা পুরুষ ই চায় তার স্ত্রী তাকে খুব ভালবাসবে, তার জন্য নতুন নতুন কিছু করবে, সেজেগুজে বসে থাকবে, কিন্তু সবাই তা পায়না. আর যারা পায়, তারা মূল্যায়ন করেনা, শুধুই অবহেলায় ভেঙ্গে দেয় একটি মন. কঠিন বাস্তবতা. ভালো লাগলো.
উৎসাহ পেলাম।অনেক ধন্যবাদ।
নির্ঝর নীড় সুন্দর চিন্তার গল্প....অনেক ভালো লাগলো.
ইমরানুল হক বেলাল কিছু কিছু মানুষ অপূর্ণতার ঝুলি কাঁধে নিয়ে পৃথিবীতে আসে। ভালোবাসা এমনই হয়। ভালোবাসার যে মূল্য দেয় বেশি তাদের জীবনের সুখ আসে না। অনেক দুঃখ কষ্টের একটি (কাব্য -চিঠি) লিখেছেন। গল্প না হলেও এটি একটি অন্যতম প্রকাশ। পড়ে ভালো লাগলো। ভোট রেখে গেলাম। "জীবন চলার পথে " আমার এ গল্পটি পড়ার জন্য অনুরোধ জানালাম। শুভকামনা রইল।
উৎসাহ পেলাম। অনেক ধন্যবাদ। জি অবশ্যই পরব :)
Helal Al-din ভিন্ন স্বাদের গল্প। অনেক ভালো লাগলো। ভোট এবং শুভেচ্ছা রইলো।
রুহুল আমীন রাজু অনেক ভালো লাগলো গল্পটি....ধন্যবাদ.

২৮ মার্চ - ২০১৬ গল্প/কবিতা: ১ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪