নির্বোধ প্রেমে উপলব্ধি

উপলব্ধি (এপ্রিল ২০১৬)

জয় শর্মা (আকিঞ্চন)
  • ৩১
"১ম পরিচ্ছেদ" -

খোলা আকাশ মেঘে ঢাকা পরেছে, এখন আর আকাশ টি নীল নেই। যেন রঙ তুলি দিয়ে
আঁকা কোন ছবি। প্রায় ঘন্টা তিন-এক হল "হীরক" বসে আছে সেই ছোট্ট ব্রিজ টির ওপরে, কি যেন ভাবছে সে।
পাশে বসে ওর বেস্ট ফ্রেন্ড "চৈতী"।
কি হল কিছু বল? নইলে আমি চললাম বলে উঠে দাড়াঁল চৈতী, এবার পেছন থেকে হীরক হাতটা ধরল। চৈতী জানে দুই বছর আগের না বলা সেই কথাটি বলার জন্য উৎসুক হয়ে উঠেছে হীরক। মেয়েটি এভাবে কিছু না বলে চলে না গেলেও পারত! মেয়েটি হচ্ছে "মৌ"।
কে জানে হীরক যে রকম ভালোবাসে মৌ কে ও কোন দিন বুজবে কিনা?? তবে এই দু'বছর হীরক কেমন নির্বোধ এর মত দিন কাটিয়েছে সেইটা চৈতী থেকে ভালো! কেও জানে না।
হীরক এর সাথে চৈতীর সম্পর্ক টা শুধু বন্ধু বললেই চলে।
ওদের প্রথম আলাপ হয় স্কুল জীবনেই। আজো বন্ধুর মতই সুলভ্য চৈতী ও হীরক।
হীরক চৈতী কে বন্ধু ভাবলেও, চৈতী মনে-মনে কিন্তু হীরক কে চাই! সেই চাওয়া টা বেশি হোক কিংবা কম।

- হাতটা কিছুক্ষণের জন্য ছেড়ে এবার উঠে দাড়াল হীরক; চল -
দু'জন হাটছে সরু পথ ধরে, এই বুঝি বৃষ্টি এল।
আরে তারাতারি পা চলা ভিজে যাবো যে, চৈতী বলে উঠলো। নারে অনেকদিন হল বৃষ্টিতে ভিজি নি; নামল বৃষ্টি চৈতী এবার বলে উঠলো তুই থাক আমি গেলাম। পাশের পার্থের চায়ের দোকানে গিয়ে উঠলো চৈতী, আর মুগ্ধ হয়ে দেখে রইল ছেলেটার দিকে! কখন যে তাকে ভালোবেসে ফেলল চৈতী, অনেকদিন পর আবার হাসি দেখলো হীরোকের চোখে-মুখে।
সব বেদনা যেন বৃষ্টির মধ্যে হারিয়ে যাই, চৈতী তুইও আয়; হীরক ডাকলো চৈতীকে। বাধ্য মেয়ের মত গেল চৈতী। আজ-কাল চৈতী হীরক এর কোন কথায় না করতে পারে না, কেন প্রশ্নের উত্তর নেই চৈতীর কাছে।

বৃষ্টি থামলো! দু'জনেই আবার পার্থের চায়ের টংগিতে উঠে গেল। মামা দু কাপ চা গরম গরম; চা টা শেষ করে যেই বিল দিতে যাবে, হীরক আবার ও ব্যাগ এর এক সাইড এ মৌ'র ছবি টা দেখে আবার যেন নির্বোধ হয়ে যাই। ছেলে টা অনেক বেশি ভালোবেসে ফেললো মেয়ে টাকে, যার জন্য এত কষ্ট করতে হচ্ছে শুধু তাকেই। মেয়ে টা কি এত্ত ভালোবাসে হীরক কে??
চৈতী জানে আজকে হীরক কে বাসায় নিয়ে দিয়ে আসতে হবে, না হয় আবার কোন লেকের ধারে বসে রাতে তারা গুণবে।

টিং টং কলিং বেল!...
হীরক এর মা এসে দরজা খুলল ও তোমরা; এসো।
একি মা তোমার কাপর চোপর তো ভিজে ছারখার, হীরকের মাও আমাকে খুব ভালোবাসে।
ঝিনুক, এই ঝিনুক তোর আপু কে একটা তোয়ালে দে! ঝিনুক' হীরকের ছোট বোন তবে আমার মতই তার সাস্থ গঠন।
নাহ্ মাসি মা লাগবেনা থাক; আমি বরং যাই রাত করে ফিরলে মা রাগ করবে। বেশি দূর তো আর নই হাটলেই পাচঁ মিনিটের পথ।
মাসিও আটকালোনা, জানে আমি এক কথার মানুষ আর থাকবার পাত্রী নই আমি।

এই যে গুদ্ধুরাম তুমি তারাতারি ফ্রেশ হয়ে নাও, ঠান্ডা লেগে যাবে হীরক কে বলেই দৌড় লাগালাম, হাতে নাতে ধরতে পারলে আবার আস্ত কিল একটা দিয়ে দিবে।
"ঈশ" কোন লাভ হোল না আজকে হীরক বলেছিল ওর ডায়েরী টা আমায় দিবে। তাড়াহুড়ো করে একদম ভুলে গেছি।
টিং টং -
মা এসে দরজা খুলল। বাবা এখনও আসে নি যাক বাঁচা গেল, মা আমার কিছু বলল না। বলবে আর কি জানে একটু দেরি মানে হীরকদের বাসা পর্যন্ত।
আমি তারাতারি ফ্রেশ হয়ে আবার, মা একটু হীরকদের বাসায় যাচ্ছি।
এইমাত্র না আসলি??
নোট টা আনতে ভুলে গেছি।
হ্যা...! আমায় শিখাতে হবে, পড়ালিখা আমরাও করে আসছি।
প্লিজ মা এক্ষুণি চলে আসবো প্লিজ।
আচ্ছা ঠিক আছে যা তবে তোর বাবা আসার সময় হয়েছে তারাতারি আসবি।
ঠিক আছে,, আমার লক্ষি মা, গালে একখান চুমু দিয়ে চলল চৈতী হীরকের ডায়েরী নিতে।
অবশ্য বাল্যকাল থেকে এই পর্যন্ত হীরক কে সে ভালোবাবেই চিনে, মৌ আর হীরকের নীরব কলহ দেখে দেখে সে অতিষ্ট। কোন দিন মিলত না দু'জনের।

যাক ঔসব ডায়েরীটা আনলে ওখানে সবই লিখা আছে খুঁটিনাটি, আরো হীরোক এর জীবনী। এসব ভাবতে ভাবতে এসে পৌঁছালাম; দরজা খোলাই আছে, ও হীরক বাইরে বসে আছে।
কিরে বাইরে কেন? চল ভিতরে চল।
আরে চৈতী! তুই হঠাৎ??
আর ভাব নিতে হবে না, তুই না আমায় ডায়েরী দিবি বলেছিলিস?
হ্যা! দিতাম তো, তুইতো চলে গেলি।
নে এবার দে, আমায় তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে...! বাবা আসবে।
দাড়া আমি নিয়ে আসছি।...
এই নে!
উমাহ্!! পেছন থেকে চৈতীকে পিঠে মেরে দিল হীরক, চৈতীর বুঝতে বাকি নেই! কিছুক্ষণ আগে যে গুদ্ধুরাম বলে পালিয়েছে ওটার শোধ নিল হীরক।
যাই হোক চৈতী কিছু না বলে চলে এল, ভালোই লাগলো চৈতীর; অন্তত মারের ছলে হলেও হীরক নিজে থেকে অনেকদিন পর স্পর্শ করল চৈতীকে।

"২য় পরিচ্ছেদ"

খাওয়া দাওয়া শেষ করে ডায়েরীটা নিয়ে বসল চৈতী-

বয়স আমার এগার- সবে বুঝতে শিখেছি, নানির কাছ থেকে আমার অবুঝ বেলার গল্পও শুনে নিয়েছি। আমার বাবার বাড়ি, মানে আমাদের বাড়ি কক্সবাজার; আমার জন্ম নাকি এখানেই মানে নানুদের এখানে। আমার জন্মের পর আর যাওয়া হইনি কক্সবাজার, সবার কথায়- এখানে থেকে যাওয়ার মত দেন বাবা। আমাদের ওখানে ভালো স্কুল নেই, তাই বাবাও সাচ্ছন্দে মেনে নেন। নানুদের বাড়ির পাশের বাড়িতে ভিটা কিনে ঔখানেই একটা সাধারণ ঘর।
এখনও এখানেই রয়েছি। এসব কিছুর পেছনে রয়েছে পাড়াতো চন্দন মামা, উনি সব ব্যবস্তা করে দেন। তাই এখনও মা-বাবা মনে করেন উনার কাছে ঋণী। চন্দন মামার মেয়ের নামই- মৌ।

আজো মনে পরে প্রথম তাকে দেখেছিলাম পেয়ারা গাছের মগডালে, পেয়ারা চুরি করতে উঠে দেখি ও আগে থেকেই উপস্থিত।
ওদের গাছ; চোর তো আমি, তারাতারি নেমে ধেয়ে আসলাম। তখন কি আর জানতাম, পেয়ারা চুরির অপরাধে সে আমার মনটাই চুরি করে রেখে দেবে। তবে এগার বছর বয়সে সেইটা বুঝি নি।
পরদিন স্কুলে যাওয়ার পথে চন্দন মামা রিক্সায় ডেকে নিল আমায়; উঠতেই শিউরে উঠলাম এই খেয়েছে রে, মেয়েটি এখানে কেন?
না চিনার ভান করে জিজ্ঞেস করলাম চন্দন মামা কে- মামা ও কে? চন্দন মামা উত্তর দিল আমার মেয়ে "মৌ"। বাহ্!! নাম তাহলে মৌ। কিন্তু মূহুর্তে সব উলটো করে দিল, ও বলেই উঠলো বাবা-বাবা এই ছেলেটি আমাদের পেয়ারা চুরি করেছিল; তোমায় কাল বলেছিলাম না।
মন চাচ্ছে এখন ওরে কি করি..!
কাল নাকি আবার বলেই দেয়েছে। কি জানি কপালে কি আছে? চন্দন মামা এরই মধ্যে রিক্সা থামিয়ে নিয়েছে; আমায় বললো কাল তুই পেয়ারা চুরি করতে গাছে উঠেছিলি?? হ্যা!! মামা, আর করবনা। আরে তোকে মারব না ভয় পাস নে, এখন বল কাল তোকে মৌ কেমনে দেখেছিল?
ও কি দেখবে মামা; আমি নিজেই তো ওকে পেয়ারা গাছের মগডালে দেখে পালিয়েছি।
তুই চিনলি কেমনে ও আমার মেয়ে?
আমি চিনি নাই! ভাবলাম আপনাদের গেটের ভেতর দিয়ে ঢুকে বাগান থেকে আম পাড়ার সাহস কারো আছে? আমি তো দারোয়ান ভাইকে বলে এক-দুইটা পেয়ারা খাই। তাই ভেবে নিলাম আপনাদের আত্বীয় কেও হবে, তাছাড়া আপনার কোন মেয়ে আছে! সেটাও আমার এইমাত্র জানা হল।
চন্দন মামা আর দেরি না করে মৌ কে ছোট্ট ব্যত দিয়ে দু'চার ঘা লাগিয়ে দিয়েছে।
একি করছেন মামা থামুন, বলে মৌ'র পাসে গিয়ে দাঁড়াতেই আমার পাছাই এক ঘা পড়ল। উম্মা কি যন্ত্রণা গো, এই প্রথম মৌ'র জন্য মার খেলাম। পাসের সমর দার দোকান থেকে আইস্ক্রিম দু'টা নিয়ে-দিয়ে আবার রিক্সায় গিয়ে বসতে বলল চন্দন মামা। কিছুদূর যেতেই মামাকে সাহস করে জিজ্ঞেস করে ফেললাম, মামা মৌ কে নিয়ে কোথায় যাচ্ছেন??
মৌ'কে স্কুলে ভর্তি করাতে নিয়ে যাচ্ছি, ঘরে বসে বসে বয়স গিল্লে হবে? কিছু পড়া-শুনাও গিলুক। মৌ'র বয়স প্রায় আট-নয় বছর এত দেরিতে স্কুলে...।

যাই হোক শেষ-মেষ আজকের স্কুল পিরিয়ড শেষ হল। বাড়ি যাব আবার মৌ'র সাথে দেখা। এই মৌ দাড়া, স্কুল কেমন লাগলো? এই তুমি আমার সাথে কথা বলবানা। রাগ দেখিয়ে চলে গেল। স্কুলভ্যানে করে যাতায়াত করবে মৌ। আমিও মা'কে বলেছিলাম স্কুলভ্যান এর কথা। কিন্তু মা বলে ঔসব নাকি মেয়েদের জন্য, ছেলেদের লাগে না। আমি ঠিকই বুঝতে পারছি মা আমায় সান্ত্বনা দিয়ে বলছে। আসলে মৌ'র বাবার মত আমার বাবার অত পয়সা নাই। এভাবেই কাটে আমাদের শৈশব। আমি যতই সরি বলি, কান ধরি; সেই দিন এর পর থেকে মৌ আমার সাথে কথা বলে না।

"৩য় পরিচ্ছেদ"

"রাজ" ছুটে আসছে আমার দিকে দূর থেকে জোর গলাই লাফাতে লাফাতে - হীরক ঐ হীরক পাস করে ফেলেছি। বুজলাম আজ আমাদের এস.এস.সি ফলাফল দিয়েছে, বোধহয় পাস করেছে। আমার টাও দেখে আস্তে বলেছিলাম আর সাথে মৌ'র টাও। এসেই হাঁপাচ্ছে, এত্ত ছোটা লাগে, আস্তে আস্তে এলেও তো পারতিস। যাক, এখন বল মৌ পাস করেছে।
ওমনি এক ধমক! চুপ কর ব্যটা; কত সরি বলবি আর, ওই মেয়ে যখন তোকে সহ্য করতে পারে না তখন তুই যাস কেন? বার বার সরি বলতে?
জানিনা রে রাজ কেন জানি মেয়েটিকে সেই ছোট্ট বেলা থেকে আমার খুব ভালো লাগত, এখন বোধহয় ভালো-বাসাতে পরিণত।
চুপ কর! ছোট্ট বেলাই সামান্য একটু মিত্য, না সত্যি কথা বলেছিস বলে তোর সাথে কথা বলে না; আবার তুই ভালোবাসার কথা বলবি।

দেখ ঠাট্টা করিস না, অনেক হয়েছে এবার বল রেজাল্ট এর কি খবর? সবাই উত্তীর্ণ। মানে? একজন ও ফেল করেনি?
না, আমি ফেল করে নি তা বলি নি; আমি তুই আর তোর অভিমানি মেয়েটি, না মেয়ে বলব না এখন তো আবার ভালোবাসার মানুষ! সবাই পাস।
হীরক তুই চৈতীর কথা একবারও জিজ্ঞেস করলি না? চৈতী ও পাস করছে।
হীরক- ভালো এবার আমাদের উপজেলার কলেজ টিতে ভালোই ভালোই চান্স পেলে হই।
হ্যা!
চৈতী এল কোথেকে! কিরে তোরা? হীরক মৌ'র খবর টা পেয়েছিস?
হ্যা!! পাস করছে।
আরে ধ্যাত, ওটা না। তাহলে??
চৈতী আর দেশে থাকবেনা, কলকাতা চলে যাবে ওর বড় চাচার কাছে। ঔখানে থেকে পড়াশুনা পুরা করবে।
মুহুর্তে যেন আমার মাথায় বাচ পড়ল।
তুই কেমনে জানলি? তোর মা, মানে মাসিমা বলেছে, মৌ সুধু আমার সাথেই কথা বলে না। আমার পরিবারের সাথে কোন কিছু নেই।
চৈতীর কথা শুনে আমি কেমন যেন নির্বোধ হয়ে গেলাম।
মেয়েটির জন্য আজ আমি তেইশ বছরেও এস.এস.সি। কোন কোন ক্লাসে দুই বছর থেকেছি, শুধু ওর মুখ থেকে আমার স্বরণে কিছু শোনার জন্য। কিন্তু আমার আর আমার সরির কোন মূল্যই নেই তার কাছে।
তবু ভাবছি ও যাবার বেলাই একবার সরি বলব। না, বার বার সুধু সরি বলেই যাব, যাকগে ও...! আর কিছু বলব না; আমার কি? তবুও যেন মন মানতে চাইছে না। আমার বুকে মৌ'র জন্য জলে ওঠা-
নির্বোধ প্রেম টুকু আজ প্রথমবার "উপলব্ধি" করলাম। সত্যি কি মৌ চলে যাবে? গেলেও আর কি ফিরবে না? এইসব মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে, বাড়িতে আসলাম।
দেখছি মা কিছু বলছে না, ঘরে ডুকেই বারান্দায় বড় করে ঝুলিয়ে রাখা রবিন্দ্রনাথ এর পেন্টিং টার উপর নজর গেল।
আহা!! যেন সব জ্বলে উঠার আগেই নিভে গেল। কিরম জানি নিজেকে আজ কবি-কবি মনে হল-

"নির্বোধ এই আমার প্রেম
নেই কোন পরিতোষ।
শুধুই আছে আয়াস, পাবক
মনে মনে কলহ আর ভুজগের মত বিষ"

বিকালে ঘুম থেকে উঠলাম, কখন ঘুমিয়ে পরেছি কি জানি? মাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলাম। মৌ কখন যাচ্ছে সত্যি কি যাবে? মা বলল সপ্তাহখানেক এর মধ্যে চলে যাবে। শুনে দুঃখ লাগলো কিছু করার নেই, যে ভাবেই হোক মৌ কে ভালোবাসি বলতেই হবে। কেমনে যে ওকে ভালোবেসে ফেললাম??
পরের দিন মৌ'র সাথে আমার দেখা হয় পুকুর পাড়ে, সেখানে ওর সামনে গিয়েই প্রথমে সরি বললাম; কিছু বলল না। সাথে সাথে "আই লাভ ইয়ু" বলে দিলাম, প্রতিউত্তর হিসেবে আমায় আলতো করে একটা চড় মেরে চলে গেল। মনটা এবার সত্যি ভেংগে গেল।
আমার উদাসিনতা-নির্বোধ কাটে না, সপ্তাহ পার হল মৌ চলে গেল...।

"শেষ পরিচ্ছেদ"

সত্যি অবাক হওয়ার মতো চৈতী খেয়াল করল, তার ডায়েরীর পাতাও শেষ। চৈতীর চোখের কোনে মৃধু জল চলে আসলো, চৈতী অবস্য জানত এইসব; তবু যদি বাড়তি কিছু পাওয়া যাই।
ডায়েরীটা পাশে রেখেই ঘুমিয়ে পড়ল চৈতী।

পরদিন খুব ভোরে হীরক ঘুম থেকে জেগে দেখে চৈতী সেখানে উপস্থিত...! কিরে তুই এত সকালে? চৈতী বলে উঠলো তারাতারি রেডি হয়ে নে, এবার যাবো।
কোথায়??
এতকিছু জিজ্ঞেস করিস না তো চল...।

নীরবতা কাটিয়ে চৈতী, কিরে কিছু বল??
দুজনে এখন পার্কে বসে আছে, কি জানি আজ এত সকাল সকাল চৈতী কেনই বা এখানে নিয়ে আসলো।?
আমি কি বলব? চৈতী এবার কি যেন তার ব্যাগ থেকে বের করছে; ওহ!! আমার সেই ডায়েরী টা।
এই নে। পড়লি?? হ্যা।।
আচ্ছা বলতো হীরক আমাকে তোর কেমন লাগে?
সুন্দর! তবে মৌ'র মত না।
ঠাট্টা করলি?
একদম না। ঠাট্টা করব কেন?
তোর ডায়েরী টা কালকে রাত্রে পড়লাম। আচ্ছা শোন তোকে যে কথা বলতে এখানে এনেছি; একটা সুখসংবাদ আছে। তোর মৌ এবার পহেলা বৈশাখে আসছে!!
হীরক- এবার তুই আমার সাথে ঠাট্টা করলি?? উহু!! একদম না।
তুই এ খবর পাইলি কই? কাল রাত্রে কথা বলছি মৌ'র বাবার সাথে। তোর ডায়েরীর শেষের পাতাই একটা নাম্বার ছিল, কল দিয়ে দেখি রাইট নাম্বার এ পরেছে মৌ'র বাবা রিসিভ করছিল। আমি বলেছি মৌ'র বান্ধবি; তবে...।
তবে কি??
মৌ কি তোকে মনে রেখেছে? ও নাকি অনেক বড় গায়ক/শিল্পী কলকাতায়।
আচ্ছা তুই যোগাযোগ করলি না কেন? নাম্বার তো ছিল।
হীরক- ঋত্বিক এর পড়ালিখার জন্য শহরে যাওয়ার পর আর যোগাযোগ হই নি। (মৌ কলকাতায় যাওয়ার পর চন্দন মামা ও তার পরিবার শহরে চলে যান। ঋত্বিক, মানে মৌ'র ভাইয়ের পড়ালিখার জন্য।)

আমার জানা ছিল না, নইলে আরো আগে যোগাযোগ করতাম আমি। এই বলে চৈতী চুপ...।
হীরক আবারো ভাবলো, আরো কঠিন হতে হবে তাকে, মেয়েটি আগে দু'পয়সার দাম দিত না আমায়। আর এখন??
আচ্ছা চৈতী, আমি কি আরো একবার সরি বলবো মৌ কে!!
চৈতী কিছু না বলে চুপ করে উঠে চলে গেল, হীরক শুধু অন্য মনষ্ক হয়ে ভাবছে কি যেন? কি করবে সে বুক টাতে যেন, নির্বোধ প্রেমে অনল-দহন এ পুড়ছে।
তবু মন স্থির করে ডায়েরী টা খুলে...। চন্দন মামা কে ফোন লাগালো।
হ্যালো! মামা কেমন আছেন?
কে?
আমি হীরক ঐ যে আপনাদের গ্রামের বাড়ির...!
ওহ! হীরক কেমন আছো বাবা?
জ্বী ভালো। আপনি ভালো আছেন তো?
হ্যা ভালো, এতদিন পড়ে খবর নিলে? নাম্বার কই পেলে? চৈতী দিল আজকে।
ওহ! হ্যা। কাল আমার সাথে কথা হয়েছিল। তো চৈতী আর কিছু বলল?
হ্যা! বলল মৌ নাকি...! আর কিছু বলার আগেই মামা বলে দিল?।
হ্যা! মৌ আসছে। আগামি সপ্তাহেই।

চন্দন মামার ও হইত আমায় ভালো লাগে, সবাই আমায় খুব ভালোবাসেন চন্দন মামা, মামি, ঋত্বিক
কিন্তু মৌ টা কেন যে এমন করল...!?

হ্যালো হীরক শুনতে পাচ্ছো? হ্যা, মামা। আচ্ছা আপনার ঠিকানা টা দেন একবার ঘুরে যাই...। আলতো আলতো করে বললাম। চন্দন মামা মুহুর্তেই বলে উঠল-
ভাবছি এবার মৌ আসলে গ্রামে এসে ঘুরে যাবো।
আমাদের পাড়ায় যে মন্দিরটা আছে, এখনো ১লা বৈশাখ উদযাপন হই??
হ্যা।
তাহলে আমরা আসবো ভাবছি। অনেকদিন হল, গ্রাম এ এবার ঘুরে যাই; কি বল?
হ্যা মামা আসেন একবার ঘুরে যান প্রায় দু'বছর তো হল। ফোনটা কেটে দিয়ে আবার হীরক ভাবছে, এবার শেষ বারের মত সে সাহস করে আবার বলবে মৌ কে সরি।

ফিরে পাওয়ার শান্তনা, নাকি-
হারিয়ে ফেলার বেদনা।

আজ কেন মনটি এত্ত উদাসীন। হীরক কি যেন আবার হারিয়ে ফেলার অপেক্ষায়।
আজ একটু অন্য রকম লাগছে হীরক কে, সোজা চৈতীর বাড়ি চলে এল হীরক। চৈতী বাইরে দোলনাই বসে কি যেন চিন্তা করছে। একি কি হল চৈতী কাদঁছিস কেন? না কাদঁছি না তো কই? চোখে কি যেন পড়ল।
জানিস মৌ বাবা এখানে আসছে, না মানে চন্দন মামারা সবাই ১লা বৈশাখ এ আসছে।
চৈতী ভিতরের কষ্ট টা চেপে ধরে, হ্যা! তাই এত খুশি লাগছে।
তুই ফোন করছিলি ভাগ্যিস! ভালোই হয়েছে নইলে আবার সারপ্রাইজ হয়ে যেত। অবস্য কিসের সারপ্রাইজ চৈতী আমায় সহ্যও করে না...।।

১লা বৈশাখ-
হীরক ওঠ! এই হীরক দেখ কে এসেছে।
আরে যা তো আর একটু ঘুমোতে দে। ঘুমোবি মানে দেখ এখন সকাল দশ টা বাজে।
তাতে কি?
আজ পহেলা বৈশাখ মনে আছে তো? এবার হীরক হুড়ুমুড়ু করে উঠে চৈতীকে, থ্যাংক ইয়ু, থ্যাংক ইয়ু, থ্যাংক ইয়ু সো মাচ; বলেই আট-দশ মিনিট এ রেডি। বাইরে বেরিয়েই দেখে মামি, মানে চন্দন মামার বৌ মায়ের সাথে গল্প করছে। মামি কখন এলে? মামা কই? ঋত্বিক কে দেখলাম উঠনে খেলা করছে।
-তোর মামা একটু বাইরে গেছে।
মৌ'র কথা জিজ্ঞেস করব, এমন সময় চৈতী পেছন থেকে এই এদিকে আয় বলে ঘরে ডুকিয়ে নিল। মৌ এখনো আসে নি বিকালে আসবে। চল আমরা বরং রাত্রের জন্য কি পিপেরেসন নিচ্ছে দেখে আসি মন্দিরে। দুজনে গেলাম পৌছঁতেই দেখি চন্দন মামা এখানে। আরে মামা কেমন আছেন? ভালো। তো আপনি এখানে? না মৌ তো কলকাতায় গান করে, ও আসছে শুনে সবাই খুশি এখানে, আর বলছে দু'চার টে গান যদি করে অনুষ্টানে। আমিও হ্যা বললাম এটা আর এমন কি?
তুই থাক তাহলে আমি গেলাম বলে মামা চলে গেলেন। চৈতীকে নিয়ে কোনায় গিয়ে বসলাম, আচ্ছা চৈতী মৌ কি আমায় চিনতে পারবে? চৈতী কিছুই বলল না। শুধু মৌ'র জন্য ছেলেটা কতটুকু ভালোবাসা আগলে রেখেছে। মৌ'টা যদি একবার বুঝত...।

সন্ধ্যা নিশি, লোকালয় গনগন আওয়াজ এখন নাকি মৌ এসেছে এখানে, লেকের ধারে বসে সিগারেট খাচ্ছি। কে যেন বলে উঠলো মৌ এসেছে এখন গান করবে, আমিও ছুটে দিলাম দৌড়। এত ভীর কই মৌ?? একবার দেখবার জন্য মনটা অনেজ উৎসুক হয়ে উঠেছে। মন্দিরের এক কোনায় গিয়ে বসলাম, পিছন থেকে কার হাত আমার কাধের উপর।
পিছন ফিরে তাকিয়ে যেন আমি নিমিষেয় হতবম্ভ। একি দেখছি আমি, শাড়ি পরে যেন স্বয়ম দেবী আমায় দর্শন দিচ্ছে। এটা "মৌ" আমার আর বুঝতে বাকি রইল না। মৌ'র হাতে কিছু কাগজ কি যেন লিখা।
মৌ- হাতের একটা কাগজ উঠিয়ে দেখালো, ওতে লিখা "তুমি আমায় এত ভালোবাসো"
আমি-...!! কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। তাই চুপ করে রইলাম।
মৌ- আরেকটি কাগজ, লিখা চৈতী আমায় সব বলেছে।
আমি- না মানে?? আই এম...! সরি বলব এমন সময় মৌ আমার মুখটি চেপে ধরল। আরো একটা কাগজ উঠিয়ে আর সরি বলবা না।
আমি- মানে?
মৌ- আরো একটি কাগজ তাতে লিখা আমি তোমার জন্য ঐ ব্রীজটির উপর অপেক্ষা করব। যেই ব্রীজ টাতে বসে তুমি আমার কথা ভেবেছ দু'টি বছর।
আগে তুমি যাও তোমার ঘরের বারান্দায় রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের পেন্টিং টা ভালো করে দেখে এসো। আমি তোমার জন্য অপেক্ষায় থাকবো।

হীরক মুহুর্তে ছুটে যাই, পেন্টিং টা নামিয়ে উপলব্ধি করে ফ্রেম এ ছোট একটি চিরকুট একটা সংখ্যা- ৫,১৪৯০৪
আরো লিখা "মৌ" একটা তারিখ ও দেয়া আছে, প্রায় দু'বছর আগের।
এবার আর দেরি না করে আবার ছুটে গেলাম। চৈতী বসে আছে ব্রীজের উপর সাথে একটু দূরে মৌ। চৈতী আর একটা চিরকুট দিল আমার হাতে, ঈশারা করে বুঝিয়ে দিল এটা মৌ'র চিরকুট।
খুললাম -

আমার প্রিয়,
হীরক!
তুমি হইত আমায় বুঝতে পারো নি। যেদিন তুমি আমায় বাবার হাতে মার খাইয়েছিলে খুব রাগ হয়েছিল। তাই ঠিক করে নিয়েছিলাম তোমার সাথে আর কথা বলব না। বুঝতে যখন শিখেছি সবে, তোমায় আরো ভালো লাগতে লাগে আমার। তোমার মুখের ওই সরি টা শুনতে খুব ভালো লাগতো। ৫,১৪৯০৪ ওটা আসলে তোমার সরি বলার সংখ্যা। পণ করেছিলাম তোমায় দিয়ে ১০০ হাজার বার সরি বলাবো। কিন্তু যেদিন থেকে ১০০ হাজার টা পার হল কেন জানি আমি তোমায় ভালোবেসে ফেলেছিলাম। অনেক ভয় হত হইত আমি সরির উত্তর দিলে তুমি আর আমায় সরি বলতে আসবেনা। "৫,১৪৯০৪ এই চিরকুট টা আমি রেখেছিলাম দু'বছর আগে, আমি কলকাতা যাওয়ার দিন। জানো কত সময় তোমার জন্য অপেক্ষা করেছি-
দু'বছর ১৭,৫২০ ঘন্ঠা, তিন দিন ৪,৩২০ মিনিট।
তুমি যত না কষ্ট পেয়ে কেঁদেছ, তার চেয়ে দ্বিগুন কষ্ট আমি তোমায় কষ্ট দিয়ে পেয়েছি।
পারলে মাফ করে দিও - আই এম সরি।

ইতি,
মৌ

হীরক এবার সত্যি মৌ'র "নির্বোধ প্রেমে উপলব্ধি" করল শুধু।
সবসময় শুধু নিজের কথা ভেবেছে, মেয়েটিকে একটুও বুঝতে চেষ্টা করেনি। নিজেকে কেমন জানি অপরাধী মনে হচ্ছে আজ হীরকের, হীরক এবার মৌ'র পাশে গিয়েই আলতো চড় লাগালো। আর জোড়ে বুকে নিয়ে চিৎকার করে কাদঁতে লাগল। ভালোবাসা বুঝি এমনও হয়, হীরক শেষ বারের মত মৌ কে "সরি" বলল।
হীরক- আই এম সরি।
মৌ- ইট'স ওকে।

চৈতীর চোখেও জল চলে এল। তবে এই জল না পাওয়ার বেদনার জল নই। এক উষ্ণ অনুভূতি।


আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
রেজওয়ানা আলী তনিমা শুভ সমাপ্তির গল্প ভালো হয়েছে। শুভকামনা।
অসংখ্য ধন্যবাদ প্রিয়... আপনার মূল্যবান মন্তব্যটির জন্য।
মোহাঃ ফখরুল আলম ভাল লেগেছে। ভোট দিতে মন চায়। আমার কবিতা পড়ার আমন্ত্রণ রইল।
অশেষ ধন্যবাদ, আমন্ত্রন সনাদরে গ্রহণ করিলাম।
ফেরদৌস আলম ভালো লাগলো গল্পটি!
অশেষ ধন্যবাদ প্রিয়...
রুহুল আমীন রাজু বেশ ভালো লাগলো গল্পটি....... শুভেচ্ছা.
ধন্যবাদ প্রিয়... আপনার সুন্দর মন্ত্যবে প্রমোদের লহর গায়ে লাগল।
গোবিন্দ বীন ভাল লাগল,ভোট রেখে গেলাম।আমার কবিতা পড়ার আমন্ত্রন রইল।
অশেষ ধন্যবাদ। আমন্ত্রণ সনাদরে গ্রহণ করিলাম

১৩ ফেব্রুয়ারী - ২০১৬ গল্প/কবিতা: ৩৮ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“জানুয়ারী ২০২৫” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ জানুয়ারী, ২০২৫ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী