ছেলেটির নাম মিজান। মা, এক ভাই এবং দুই বোন নিয়ে তার গোছালো সংসার। তার বাবা মারা গেছে চার বছর হয়ে গেছে। ভাই-বোনের মধ্যে মিজানই বড়। H.S.C তে রেজাল্ট খারাপ করার কারণে তাঁর একজন ক্লাসমেট বন্ধু সামিয়ার (মিজানের প্রতি তাঁর ভালবাসা ছিল বরাবরই বেপরোয়া) সহযোগিতায় স্টুডেন্ট ভিসায় ইকোয়েডর পাড়ি দেয় সে। যে অর্থের জন্য একসময় লেখাপড়া ভালোভাবে করতে পারেনি, সে অর্থের জন্যই ইকোয়েডর দিনরাত পরিশ্রম করে। বর্তমানে তার পারিবারিক অবস্থা অনেকটা পাল্টে গেছে। ঝিগাতলার মত জায়গায় তিনতলা বাড়ি, বোনদের ভাল জায়গায় বিয়ে দিয়েছে। তারাও বিদেশে সেটেলড। তার মা আর সে দোতলায় থাকে। তিনতলা ও নিচতলা ভাড়া। বাড়ির সামনে নানান রকমের ফুল-ফল সমৃদ্ধ বাগানটি যে কারো নজরে পড়বে। কলেজে পড়ার সময়ে প্রেম ছিল মেহেরিন নামের একটি মেয়ের সাথে। দীর্ঘ অনেক বছর হয়ে গেছে দুজনের যোগাযোগ একেবারেই বিচ্ছিন্ন। এই ব্যাপারে মিজান সবসময়ই কেমন জানি এড়িয়ে যায়, মৌন হাসিতে। কলেজের স্যারেরা একজন মেধাবী ছেলের রেজাল্ট খারাপ হওয়ার কারণ হিসাবে প্রেমঘটিত কিছুকে দায়ী করেন। কিন্তু কে দায়ী তা আর কেউ বুঝতে পারেনি। সময়ের সাথে সাথে ঘটনা ভুলে যায় সবাই। সে খুব চাপা স্বভাবের ছিল, কাছের বন্ধুদেরও এ ব্যপারে কিছু বলেনি। আট বছর পর দেশে চলে আসে মিজান। অবশেষে অসুস্থ মায়ের অনুরোধে বিয়েতে সম্মতি দেয়। মেয়েটির বাড়ি ছিল নোয়াখালী। অতি আধুনিক, অডিট ভবনে চাকরি করত। তার বউয়ের এমন আধুনিকতার সব মেনে নিলেও যখন শুনতে হল তাঁর অসুস্থ মাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসতে হবে! সেদিন সে কষ্ট পেয়েছিল খুব। এরপর তাদের সম্পর্ক ভেঙে যায়। মিজান তার বউকে ডিভোর্স দিয়ে দেয়। বউয়ের কারণেই কয়েকটি মিথ্যা মামলার শিকার হয় সে। মামলার ট্রিটমেন্ট করতে গিয়ে ধীরে ধীরে রাজনীতির অস্পষ্ট ছাতার আহবানে সাড়া দেয় সে। পরিচ্ছন্ন ব্যক্তিত্ব আর টাকার কারণে এই মহলে ‘মিজান ভাই’ আজ একটি পরিচিত নাম। হোক রিক্সাওয়ালা, টোকাই কিংবা ভদ্রলোক সকলের একমাত্র ভরসার জায়গায় মিজান। যেন এই এলাকার ভাল-মন্দ দেখা তারই কাজ। সে গুন্ডামি করে না কখনো কিন্তু এই মহল্লার গুন্ডারাও তাকে সম্মান করতে শুরু করে। কেউ কেউ আবার মিজানের শত্রুতে পরিণত হয়। সে সকলকে আপন করে নিতে গিয়ে রাজনীতির ময়দানের অসুস্থ খেলাটিকে ঘৃণা করতে শুরু করে। মহল্লার অসহায়দের প্রতি টান ছিল অনেক, বিশেষ করে তাঁর গ্রামের ঝরে পড়া ক্লাসমেটদের (যারা টাকার অভাবে প্রাইমারিও পার হতে পারেনি)। ক্লাসমেটদের মধ্যে খলিল ও বাদলকে ধানমন্ডিতে একটি ডিপার্টমেন্টাল ষ্টোর কিনে দেয় সম্পূর্ণ নিজের টাকায়! আর আমি মিজানের এসিস্ট্যান্ট হিসাবে আছি। যা পাওনা তার চেয়ে বেশি দেয় সে। যতোটুকু জানি মেহেরিন কারওয়ান বাজারে থাকত তার স্বামীর ফ্ল্যাটে। মেহেরিনের স্বামী এয়ারপোর্ট চাকরি করে। পারিবারিকভাবে অঢেল সম্পদের মালিক। একদিন দুপুর বেলা। মেহেরিন আমাদের বাসায় এসে হাজির। তাকে বেশ চিন্তিত লাগছে, চোখে জল। মিজানকে খবর দিতেই গেস্ট রুমে চলে এল। মেহেরিনকে দেখেই সে বিস্মিতই হল খানিকটা। মিজানই প্রথম কথা বলেÑ তুমি? হ্যাঁ। তুমি কাঁদছ কেন? বিন্দুকে কারা যেন অপহরণ করেছে! কিছু একটা করো না মিজু। মিজানকে সে মিজু বলেই ডাকতো। দুইদিন পরে মিজান তার সহজ সুলভ তদবির করেই বিন্দুকে ফিরিয়ে আনে। অপহরণকারীরা তার কথা শুনতেই মুক্তিপনের কথা ভুলে যায়। তারা মিজানকে ফোন করে জানতে চায় মেয়েটি আপনার কে হয় ভাই? মিজান বলেÑ বিন্দু আমার মেয়ে! তার এই কথায় দৃশ্যপট পাল্টে যায়। মেহেরিন মেয়েকে পেয়ে দারুণ খুশি। সেদিন ছিল বৃহস্পতিবার। বাগানের সামনে মা, মেয়ে দুজনেই ফুল ছিড়ছে। মিজান শাহবাগ গেছে একটি কাজে। আমাকে সাথে নেয়নি কেন জানি। মোবাইলে কথা হয়েছিল কয়েকবার। বলল আসছে। আমি কাজের ছেলেটিকে চা-নাশতা দিতে বললাম। কিছুক্ষণ পর মিজান এসে পড়ল। কিরে আমার মেয়েকে বাগানেই বসিয়ে রেখেছিস কেন? (হাহাহা) ঘরে নিয়ে যা! মেহেরিন বললÑ না, ঘরে যেতে হবে না। পাশের চেয়ারটি দেখিয়ে বললো, তুমিও বস এখানে। মিজান শান্ত ছেলের মত বসে পড়ল। আমি খানিকটা আড়ালে চলে এলাম। তুমি নাকি তোমার বউকে ডিভোর্স দিয়ে দিয়েছ, কিন্তু কেন? হুম, ঠিকই শুনেছ! যে আমার গর্ভধারিণীকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসার কথা বলতে পারে তার আমার জীবনে প্রয়োজনবোধ করি না! মিজানের চোখে জল আমি এই প্রথম দেখলাম। মেহেরিনও কাঁদছে। তার মেয়ে কয়েকটি গোলাপ মিজানের দিকে এগিয়ে দিল। বিন্দুকে বুকে জড়িয়ে মিজান আকাশের দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বলছেÑ কে বলে আমার কেউ নাই! আমার কত সুন্দর একটি মেয়ে আছে। বিন্দু মিজানের বুকে মুখ লুকায়। মিজানের আমাকে ডেকে বললোÑ বেলাল, গাড়ি বের করো, আমার মাকে একটু ডাক্তার দেখিয়ে আসি। বিন্দু, তোমরাও চল, নামিয়ে দেই। তখন আমার গর্ভধারিণীরও বেহেস্তি মুখটি মনে পড়ে যায় ভীষণ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোহাঃ ফখরুল আলম
ভাল লেগেছে। ভোট দিতে মন চায়। আমার কবিতা পড়ার আমন্ত্রণ রইল।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।