কুইন অফ মাই হার্ট

ত্যাগ (মার্চ ২০১৬)

আহমদ মেহেদী
  • ৪৯
এক.
আলাল ছেলেটি লেখাপড়ায় ততটা মনযোগী না হলেও খেলাধুলায় বেশ পারদর্শী। এইবার এইচএসসি দিবে। কলেজের যেকোন টুর্নামেন্টের খেলার কথা উঠলেই আলাল কে স্বয়ং অধ্যক্ষ ডেকে দায়িত্ব দিয়ে দেন। আর বলেন - খেলার সাথে সাথে যদি পড়াশোনা টা একটু করতি! আলাল তখন খুব নিরবে অধ্যক্ষের কথা এক কান শুনে আরেক কান দিয়ে বের করে দিত। দারুণ ডানপিটে আলাল। কলেজে সুমির সাথে আলালের প্রেমের কথা কম বেশি সকলেই জানে। তারা একই ক্লাসে পড়ত, শিক্ষকরাও তাদের প্রেমের কথা বলে অনেক মজা করতেন। বিশেষ করে বাবুল (বাংলা স্যার )কবিতা - গল্পের পর্যালোচনার সময় বলতেন - সুমি আর আলালের প্রেম অমর হউক শিরি - ফরহাদের ন্যায়। তখন আলালকে লক্ষ্য করে স্যার বলতেন - আমারে দুদন্ড শান্তি দিয়েছিল নাটোরের বনলতা সেন।- একটি গান শুনাও আলাল। তখন আলাল গলা ছেড়ে গাইতে থাকত - "মেঘ হয়ে কাদোঁ বলে আমি শ্রাবনে ভাসি ".....কাছে দূরে যাই থাকি ..কথপোকথনে থাকি ....। আমরা হাততালি দিতে থাকতাম। স্যার ততক্ষণে ক্লাস শেষ করে বের হয়ে যায়। স্কুলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে " প্রেম সুধা "- নাটকের দৃশ্যে আলাল ও সুমি অভিনয় করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিল একদিন । তাদের ডায়ালগ খানিকটা এরকম ছিল ঃ
সুমি : ওগো প্রিয় আমাদের দুই তীরের মাঝে যে বিশাল ব্যবধান আমাকে প্রতিনিয়ত ভাবিয়ে তুলে, শুধু জানি তুমি দেহকে শান্ত কিন্তু মনকে অশান্ত ও অবুঝ করে তুলছ দিনদিন!
আলাল : আমার রাজ দরবার নেই, আমিত তোমার মনের রাজা হতে পেরেছি, দিয়েছ একটাই মন আমায়। ভেবোনা queen of my heart, আজকের দিনে তুমায় আমার কলিজা টা দলিল করে দিতে চাই!
সুমি : না গো না, এমন করে বলনা তুমি। আমার যা আছে শুধু ই যে তুমার। তুমার কলিজাই আমার কলিজা!
আলাল : এছাড়া ত আমার এইবেলা দেবার মত কিছুই নাই।
সুমি : কে বলে দেবার মত কিছু নাই, দুতীরের মাঝে এস তুমি - আমিও আসছি। আমাকে একটি বার জড়িয়ে ধর! আমি আর ফিরে যাব না, তুমার ভালবাসার কসম!

আলাল অস্ফুট স্বরে" queen of my heart " বলে সুমিকে জড়িয়ে ধরতেই অডিটোরিয়াম হল হাততালিতে কম্পিত হয়ে উঠে।

আলাল নিম্ন - মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে, অন্যদিকে সুমি আমাদের এলাকার কাজী পরিবারের মেয়ে। তাদের পুর্ব পুরুষদের ঐতিহ্য কে সুমির আধুনিক মৌলানা বাবা ভালভাবেই লালন করে আছেন। ছেলেমেয়েদের ইসলামী শিক্ষায় যেমন দিক্ষিত করেন তেমনি আধুনিক শিক্ষার ও প্রয়োজনীয়তা বোধ করেন। তাইতো ছেলেমেয়েদের স্কুল - কলেজে পড়তে উৎসাহী করে তুলেন। তার ধারণা হল - "জ্ঞান অর্জন ফরয " তাই বলে মৌলানার ছেলেমেয়েদের স্কুল - কলেজ যেটাই হউক শিক্ষাটাই মেইন। এইজন্যই তিনি আমাদের এলাকার ভাল - মন্দ সবার প্রিয় হয়ে উঠেছেন ধীরে ধীরে।

দুই.
ছয় মাস পর। এইচএসসি পরীক্ষা চলছে। শুধু প্রেক্টিকেল. পরীক্ষা বাকি। সেদিন কলেজে গিয়ে দেখি বসন্ত বাতাসে থমথমে ভাব। অধ্যক্ষ স্যারের রুমের বারান্দায় অনেক ছাত্র - ছাত্রীর জটলা।গিয়ে শুনি আলাল - সুমি প্র্যক্টিকেল পরীক্ষা না দিয়ে ই পালিয়ে গেছে। সুমিদের বাড়ি থেকে কলেজ অনেক দুরে হওয়ায় তার বাবা তাদের প্রেমের কথা জানতেন না। এই খবর শুনে তিনি আর ঘরে থাকতে পারেননি। কাজী সাহেব তারউপর এলাকার মৌলানা। কত বড় সম্মান হানি? এমনি তেই সুমির পরীক্ষার পরে বিয়ে দিবেন ভেবেছিলেন। সব ধুলোয় মিশে গেল। তিনি অধ্যক্ষ কে একটা কিছু করার জন্য অনুরোধ করে চলে গেলেন। স্যার তাকে আশ্বস্ত করলেন। আরও শুনতে পাই আলাল - সুমি কোর্ট ম্যারেজ করে ফেলে। তারা কুমিল্লা ছেড়ে খুলনা আলালের এক আত্বীয়ের বাড়িতে গিয়ে রাতের আধারে উঠে।আত্বীয় আলালের ফুফু। সেই ফুফু তাদের দুজনের এই বিয়েকে স্বানন্দে মেনে নেয়। শুনা যায় আলালের এই ফুফু ও নাকি ভালবেসে বিয়ে সেরেছিলেন।

তিন.
সুমির বাবার ক্লিন ইমেজের কারনে তাছাড়া তিনি সবার পরামর্শ দাতা হিসেবে এলাকায় একটা মর্যাদা আছে। স্তানীয় পত্রিকায় আলাল - সুমির প্রেমের খবর তাজা খবরে পরিনত হলে মৌলানা সাব বেকাদায় পড়ে যান। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে তিনি আলালের নামে নারী নির্যাতন মামলা করে দেন। মামলার প্রধান আসামি সে এবং তার বাবা, ভাই। আলালের বাবা ছোটখাট বেসরকারি সংস্থায় পিয়নের চাকরি করেন। মামলার কারনে বেচারাকে অনেক দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ভিলেজ পলিটিক্স জমতে শুরু করেছে এর মধ্যে। অনেকে মৌলানা র জন্য জীবন দিয়ে দিবে এমন অবস্থা। কিন্তু আলালের সহজ সরল বাবা এসবের কিচ্ছু জানতেন না। আলালের বাবা মৌলানা সাহেব কে হাতজোড় করে বলেছেন -বিয়ে যেহেতু করে ফেলেছে মেনে নিন দয়াকরে! - খাইরুল মিয়া তুমি কি বুঝতে পারছ তুমি কি বলছ? তাকে গলাধাক্কা দিয়ে তাঁর চেম্বার থেকে বের করে দেন। হাত অনেক লম্বা মৌলানা সাহেবের। এর মধ্যে আলালকে পুলিশ খোঁজে পেয়ে যায়। তাঁর মেয়েকে নিয়ে নিজের কাছে। আলাল জেলে কিন্তু মামলার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। তার পরিবারের উপর নিদারুন নিষ্ঠুরতা চালায় ভিলেজ পলিটিশিয়ানরা। সুমিকে বিয়ে দেয়া হয় আবার তার ই খালাত ভাইয়ের সাথে।
চার.
ইতোমধ্যে আলালের জামিনের ব্যবস্থা করে তাঁর খুলনার ফুফু। এলাকায় সালিশি বসলে ভিলেজ পলিটিশিয়ানরা তাকে মারধর করে এলাকায় ভালভাবে থাকার পরামর্শ দেয়। আলাল নিশ্চুপ। তাঁর মনে শুধু কল্পনা - জল্পনা সুমির জন্য কত কষ্ট ই না করলাম এই কয়দিনে ! এবার অসহায় আলালের পাশে অধ্যক্ষ স্যার দাঁড়ালেন। এই কলেজের অনেক পুরস্কারের কৃতিত্বই আলালের। তাকে মারার খবরে তিনি ব্যথিত হলেন। তিনি বললেন - আলাল ত অন্যায় কিছু করেনি, ভালবেসে বিয়ে করেছে মাত্র। স্যার আমাদের পাশে চাইলেন। কলেজে একদিন "আলালের নির্যাতনের বিচারের দাবিতে " মানববন্ধন হল।
মিডিয়া তা ফলাও করে ছড়িয়ে দিল সুমির বর্তমান স্বামীর ঠিকানা পর্যন্ত।সুমি সে খবরে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে। স্যার চেয়েছিলেন মৌলানা সাহেবের সাথে একটি সমঝোতা করে ফেলতে। কিন্তু মৌলানা এমন করে আবার সুমির বিয়ে দিয়ে দিবেন ভাবতেই পারেননি। তিনিও জায়গা মত সুইচড টিপা শুরু করেন। আইনত এখনো আলালই যেহেতু সুমির স্বামী, তাই তার কাজ করা আরও সহজ হয়ে গেল। তিনি আলালের হয়ে রিপিট মামলা দায়ের করেন। সুমির নব্য স্বামী র বাড়ি উকিল নোটিশ যায়। তাকে আদালতে হাজির হতে সময় বেধে দেয়। বিচার বিশ্লেষকেরা আলালের পক্ষেই রায় দেন। কেননা তারা দুজনেই ম্যচুর্ড। তাদের বিয়েটা ই টিকে যায়।

কয়েক বছর পর। কলেজের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে আলাল একটি ফুটফুটে বাচ্চা নিয়ে কলেজে আসে, সাথে শাড়ি পড়া সুমি। মেয়েটির নাম মেহেরিন। অধ্যক্ষ স্যার কে দেখে তারা দুজনে সালাম করল।তাদের এই মিলনে খুশি হলেন এবং একটি অনুরোধ করল তাদের ঐ প্রেম সুধার পার্ট টি করে একবার করে দেখাতে। আলাল - সুমির দুজনের ই চোখ ভিজতে শুরু করেছে। .........
...................
...................

পার্টের শেষে যখন queen of my heart বলে আলাল সুমিকে জড়িয়ে ধরে, তাদের মেয়ে তা দেখে হাসতে থাকে ....হাততালির বদলে সেই মেহেরিনের হাসিটুকু আজ কম্পিত হতে থাকে। #
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোহাঃ ফখরুল আলম ভাল লাগল। আমার কবিতা পড়ার আমন্ত্রণ রইল।
মোহাম্মদ সানাউল্লাহ্ মুগ্ধ হলাম আপনার সুন্দর গল্পে । কারণ আপনি সত্যকে সাহসিকতার সাথে সামনে নিয়ে এসেছেন এবং তাকে বিজয়ী ঘোষনা করেছেন । যদিও গল্পটি এ সংখ্যার জন্য প্রাসঙ্গিক নয় তবুও ভাল লাগায় শুভেচ্ছার সাথে সাখে প্রাপ্যটাও রেখে গেলাম ।
গোবিন্দ বীন ভাল লাগল,আমার কবিতা ও গল্প পড়ার আমন্ত্রন রইল।ভোট রেখে গেলাম।

০৯ ফেব্রুয়ারী - ২০১৬ গল্প/কবিতা: ৪ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪