প্রেমজ্বালা

শ্রমিক (মে ২০১৬)

শিল্পী জলী
  • ৫৫
হাত টিপে দেই?
না না টিপতে হবে না
ময়নাতো সব সময়ই টিপে দেয়, তখনতো না বলেন না । আমি টিপতে চাইলেই শুধু না !
কথা না বাড়িয়ে হাত বাড়িয়ে দেই । কথা বাড়ানোর যৌক্তিকতা নেই । সেদিন সন্ধ্যা হতেই লেপের নীচে ঢুকে পড়েছিলাম । ময়না এসে ধরলো লিভিং রুমে গিয়ে তার সাথে টিভি দেখতে হবে । উওম-সুচিএার মুভি । শাপমোচন । শীতের রাতে ঠান্ডা মেঝেতে আর পা রাখতে ইচ্ছে হলো না । বরং দুষ্টুমি মাথায় চেপে বসলো হঠাৎ । বললাম, ও ঘরে এখনতো আর হেঁটে যেতে পারবো না -- ঐ মুভি আগেই দেখেছি । যদি কোলে করে নিয়ে যেতে পারো তবেই যাবো, নইলে নয় । সে কোলে করে লিভিং রুমে নিয়ে গেল । সেদিন কমলাও স্ব-চক্ষেই দেখেছে ঐ কোলে ওঠার রঙতামাসা । সেখানে আজ সামান্য আঙ্গুল টেনে দিতে চেয়েছে সে । এতে অত বাঁধা কিসের ? সেই বা মানবে কেন ? তাই অস্বস্তি সত্ত্বেও কমলাকে আঙ্গুল টিপতে অনুমতি দিলাম । দিতে হলো তাই । কমলা আঙ্গুল টিপছে গত পনের মিনিট ধরে আর আমি গল্পের বই পড়ছি । তার ভাব দেখে মনে হচ্ছে কিছু বলতে চায় ।
সাতআটদিন আগে দরজায় খটাখট শব্দ । দরজা খুলি দেখি পনের-ষোল বছরের একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে চেহারাকে করুন করে । কি চাও জানতে চাইলে জানালো কাজ খুঁজছে । তেমন কোন চাওয়া পাওয়া নেই, শুধু থাকতে চায় । এই মুহূর্তে একটি কাজ তার বড় দরকার । দেখে কেমন মায়া হলো । অত সাতপাঁচ না ভেবে মুখে কয়েকটি কড়া প্রশ্ন করে এবং চুরি করলে পুলিশে দেবো ঘোষণা দিয়ে তখনই তাকে রেখে নিলাম কাজে । সাতদিন হয়ে গিয়েছে কমলা মন দিয়ে ভালই কাজ করছে । অপছন্দ করার কোন কারন নেই । তবে একটু খেয়াল করলেই দেখি কেমন গভীর দৃষ্টিতে যেন ড্যাব ড্যাবে চোখে সে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে । আর একটু বেশীই কাছে আসতে চায়, পাশে বসতে চায় ।
কোন প্রেমিকও আজ পর্যন্ত অত গভীর দৃষ্টিতে তাকায়নি আমার মুখের দিকে । বুঝে পাই না কী হলো তার ? ভাবী মেয়ে হয়ে মেয়ে মানুষের প্রেমে পরলো নাতো আবার ? অতপর হঠাৎ আজ বলেই বসলো তাকে হাত টিপতে দিতে হবে । ময়না যখন কোলে করে অন্য ঘরে নিতে পারে তখন সামান্য আঙ্গুল টেনে দিতে তার বাঁধা কোথায় ? কেনই বা ?
ময়না পনের বছর ধরে আমাদের বাসায় কাজ করছে । একেবারে পরিবারের সদস্যের মত । একই সাথে বেড়ে ওঠা আমাদের । এখন আর মনেই হয় না কোনদিন তাকে বাসার কাজের জন্যে রাখা হয়েছিল । ওর সাথে দুষ্টুমি থেকে শুরু করে সবই চলে । কিন্তু কমলা নতুন । তার অবস্হান পুরো আলাদা । মাএ সাতদিন হলো সে এসেছে । কোন বন্ডিং এখনও তৈরী হয়নি । তার সাথে এখনও অনেক বেশী দূরত্ব অনুভূত হয় । কিন্তু সে বুঝবে কী করে এসব বিষয় ? এতটুকু বয়সে তার অভিজ্ঞতাই বা আর কতটুকু ?
অনুমতি পেয়ে গত দুদিন ধরে কমলা আমার আঙ্গুল টানে আর শুধু কাছে এসে ঘেষে বসে । তার ভাবে মনে হয় কিছু যেন বলবে । কিন্তু বলতে গিয়েও বলে না । না প্রেমের বিষয় নয় হয়ত বেতনতেটন কিছু হবে-- এখনও বেতন নিয়ে কোন চূড়ান্ত কথা হয়নি যে তার সাথে ।
বলি, বলো কী বলতে চাও ? তবুও তার সংঙ্কোচ যায় না ।
আবার উৎসাহ দেই, ‘বলে ফেল কোন অসুবিধা নেই—আমরাইতো !’
ভরসা পেয়েও কেমন যেন চুপসে যায় সে । আঙ্গুল টানাও থেমে যায় তার ।
ঢোক গিলে বলে, ‘আমার না বাচ্চা হবে’ ।
মাথায় চক্কর লাগে আমার । সাথে সাথেই তার পেটের দিকে তাকাই । হুম কথা সত্যি-- পেট তার খুবই বড় ।
আমি শেষ !
চিন্তায় পরে যাই । স্বপ্নেও ভাবিনি তাকে রেখে এত কঠিন সমস্যায় পরবো । কি করবো বুঝতে না পেরে বোনকে ফোন দেই ।
বোন বলে, ‘ এই বেকুব, কাজে রাখার সময় দেখিসনি যে পেট বড় ? ভালো হয়েছে—এখন খালা হ !’
রাখার সময়ই দেখেছিলাম পেট তার বেশ বড় কিন্তু বুঝিনি । ভেবেছিলাম গ্রামের মেয়ে হয়ত একটু বেশী ভাত খায় তাই কম বয়সেই ভূড়ি হয়েছে । তাছাড়া সে যত পেট ঢাকছিল আমি তত খেয়ালও করিনি । চিন্তাতেই আসেনি মাএ পনের বছরের একটি মেয়ে প্রেগনেন্ট হয়ে ইয়া বড় পেট নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে ঠিকানাহীন হয়ে ।
কমলা যে বাড়ীতে কাজ করতো তার দেবরের সাথে ভালোবাসায় জড়িয়ে পড়েছিল । অতপর ইটিশপিটিশ ভালোবাসায় একটু একটু করে অনেক বেশী কাছে আসাআসি তাদের । অতপর...ঘটনা গড়ায় বাচ্চার বীজ বপণ পর্যন্ত । কিশোরী একটি মেয়ে বুঝতেই পারেনি সে ভালোবাসায় নয়, পড়েছিল ধোঁকায় । তার বিষয়টি যতক্ষণ বুঝতে লেগেছে তার আগেই এক কাপড়ে ঘরের বাইরে তাকে বের করে দেয়া হয়েছে । অতপর তার আশ্রয় জোটে আমার বাসায় । আমিই কথায় কথায় ধমক খাই এখনও সেখানে তাকেই বা আমি কতটা ভরসা দিতে পারবো এমন বিপদে ?
বাসার সবাই বিষয়টি নিয়ে রেগে আছে । কেন অচেনা লোক রাখলাম ? এখন কী হবে ? তবে কেউই তাড়িয়ে দেবার কথা বলছে না এটাই রক্ষা । নইলে বড় বিপদে পড়তাম । একবার আশ্রয় যখন দিয়েছি এই অবস্হায় তাকেতো আর ঘর থেকে তাড়ানো যায় না, এই অবস্হায় ঘরছাড়া করা যায় না । যে বাসাতে সে ছিল সেখানে সে নিরাপত্তা পাবে, ভালোবাসা পাবে, পরিবারের সদস্যদের মতই থাকতে পারবে তেমনই হবার কথা ছিল । কিন্তু হয়নি । কিশোরী মেয়েটির অসহায়ত্ব তারা দেখেনি । বরং সুযোগ নিয়েছে । তার অধিকার খর্ব করেছে । ভালোবাসার দোহাই দিয়ে প্রেগনেন্ট বানিয়ে বের করে দিয়েছে অজানার পথে । শুণেছি বাদুরও আশেপাশের প্রতিবেশীর বাগানের কলা খায় না যেন হৃদ্যতা বজায় থাকে প্রতিবেশীদের মাঝে । যেন মিলেমিশে বসবাস সম্ভব হয় । তারাতো বাদুরের ধর্মও পালন করেনি কমলার সাথে । সেতো চাইলে পতিতার কাছেও যেতে পারতো । তত বেশীতো ব্যয়বহুল নয় -- বৈধ ব্যবস্হা । মেয়েটিকে এই অবস্হায় না ফেললে তারতো কোন ক্ষতি হতো না । নিরাপত্তাতো শ্রমিকের অধিকার । কিন্তু দূর্বলের অধিকার কেই বা দেখে ?
যে নিজের অধিকার জানে না তার অধিকারতো খর্ব হবেই । বাঙালী সমাজতো আজও ততটা উন্নত হয়নি যে ক্ষমতাহীন তার অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে না !
আজকাল একটু পর পরই কমলা বটি নিয়ে ছোটে পেট কাটতে । কোন মতেই বাচ্চা সে রাখবে না পেটে । তার নিজেরই জীবন চলে না, বাচ্চা দিয়ে কী হবে তার ?
বড় টেনশনে পরে গেলাম ।
জানি পেট কাটলে সে যাবে আর আমি মার্ডার কেসের আসামী হবো । চরম ফাঁসা ফাঁসবো । পুলিশ এসে হাতকরা পরিয়ে আমায় রাস্তা দিয়ে হাঁটিয়ে নেবে থানায় । লোক জড় হয়ে যাবে ঐ দৃশ্য দেখতে । মেয়ে হয়ে ঐ অবস্হায় একবার রাস্তায় হাঁটলেই আমার কম্ম ফতেহ—জীবনে আর বিয়ের মুখ দেখতে হবে না । মৃত্যু ঘটবে কুমারী অবস্হায় । লোকে জানতেও চাইবে না আসল আসমী কে ? আসল ঘটনা কি? আমিতো শেষ , সেতো শেষই ।
বাসায় বর্তমান ‘পেট কাঁটতে যাওয়া’ সমস্যাটি জানাতেই আরেক প্রস্হ বুদ্ধি কম হবার ধমক খেলাম । কি আর করা ? তাকে বোঝালাম আপাতত পেট কেটো না, ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো তোমাকে--ব্যবস্হা একটি হবেই । সেই পেট কাটুক--সে পেট কাটলে সমস্যা কম হবে !
কমলা শান্ত হলো ।
অল্প বয়স্ক, অশিক্ষিত, নিরাশ্রয়, গরীব হওয়ায় বৈধতা বা অবৈধতা নিয়ে তার কোন মাথা ব্যথা নেই। সে হয়ত ভাবে কবুল বলা হোক বা না হোক বাচ্চা হবার উপায়তো একই—কোন সমস্যা নেই । সে শুধু ভালোবেসেছে ব্যস , এর বাইরে সে আর কিছু জানে না ।
তারা বের করে দিয়েছে-- বিনা বাক্য ব্যয়ে সে বের হয়ে এসেছে । বোঝেওনি প্রতিবাদ করা উচিত ছিল ।
কলিগের সাথে মোহান্মদপুরের একটি ক্লিনিকে নিয়ে যাই তাকে । আজ তার বাচ্চা নষ্ট করা হবে । পেট আবার মিশে যাবে পিঠের সাথে । আবার সিঙ্গেল হয়ে যাবে সে । এমন ভুল আর জীবন কখনও করবে না । ভালোবাসবে না আর কাউকে । চিরতরে সব সমস্যা শেষ ।
এখানে ওখানে টিপেটুপে দেখে ডাক্তার সাহেব বললেন, ‘মণি ছ’ মাসতো হয়ে গিয়েছে তোমার ! বাচ্চা হাত-পা-মাথা সবই গজিয়ে গিয়েছে । এমনকি মনে মনে হয়ত মায়ের নামও জপতে শুরু করেছে সে । এখন আর কিছুইতো করা যাবে না –তাহলে তুমিও মরে যাবে ।

তাকে বোঝাই , ছ’ মাস যখন চলেই গিয়েছে মা’ইতো আর চার মাস না হয় পেটে নিয়ে ঘোরো । তারপর বাচ্চা হতেই কাউকে দিয়ে দিও। কত লোকের বাচ্চা হয় না--তাঁদের কত দুঃখ ! ওরাও বাচ্চা পাবে আবার তোমার বাচ্চাও বেঁচে থাকবে । ভালো পরিবার পাবে । কত সুখে থাকবে !
কাঁদতে কাঁদতে সে আরও চার মাস বাচ্চা বহন করতে রাজী হয় ।
তার অবস্হা দেখে রান্নার বুয়াকে আর বাদ দেইনি । গর্ভবতী অবস্হাতেও সে তার দায়িত্ব ভালো মতই পালন করে । কাজ না করতে বললেও শোণে না । দেখেছি বিয়ের পর মেয়েরা গর্ভবতী হলে কত আদরযত্ন বেড়ে যায় তাদের -- জোরে হেঁটো না , এই করো না, ঐ করো না, কি খেতে ইচ্ছে করে...আরও কত কি ? তার বেলায় এসব কিছুই করা হয়নি এখনও । একটু তেতুলও খায়নি সে ।
একদিন কাছে ডেকে জিজ্ঞেস করি, কি খেতে ইচ্ছে করে তোমার মন খুলে বলো ?
--আতাফল ।
আচ্ছা ।
পুরো ঢাকা শহরের মার্কেট চষে ফেলি মাএ একটি আতাফলের খোঁজে কিন্তু কোথাও নেই । সে অবেলায় খেতে চেয়েছে আতাফল । যেমন তার বাচ্চাটিও আসছে অবেলায় । বড় অনাকাঙ্ক্ষিত হয়ে । হয়ত কমলাদের অতি ছোট ছোট আশাগুলো পূরণ হয় না কখনও । হয়ত তাদের ভাগ্যই এমন-- তারা শুধু হারায়, পায় না কিছুই ।
দত্তক পিতামাতার খোঁজে লেগে গিয়েছি আমরা । মাত্র তিন মাস হাতে আছে । শিক্ষিত, ধণী, এবং মায়াবতী পিতামাতাই আমাদের লক্ষ্য । যেন বাচ্চা পড়ালেখা শিখতে পারে । আদর পায় । খাওয়াদাওয়া পায় ।
এরই মধ্যে ময়না ‘আমি বাচ্চা নেবো’ বলে ধমক খায় ।
সেই থাকে অন্যের বাসায় । এখনও সিঙ্গেল । সে বাচ্চা নেবে কী করে ? এতে ঝামেলা বাড়বে বই কমবে না ।
ময়নাকে ধমক খেতে দেখে কমলা বলে, তাহলে আপনাকে বাচ্চা দেবো ।
আমি সিঙ্গেল হলেও আমার চাকরি আছে । খাওয়াতে পারবো । রাজী হয়ে আচ্ছা বলি । দত্তক পিতা না পাওয়া গেলেও দত্তক মাতা পাওয়া গিয়েছে । সমস্যা শেষ । দ্রুত খবরটি বাসায় জানাই ।
তারা বলে, ‘এই গাধা ! সুস্মিতা সেনের দত্তক বাচ্চা নিয়ে বিয়ে হয়নি এখনও, তুই দত্তক নিলে তোকে বিয়ে করবে কেরে ?’
মত পাল্টাই – তাইতো আমাদের সমাজে অবিবাহিত মেয়েরা এখনও দত্তক নিতে পারে না । কমলার মতই তাদেরও ভবিষ্যত অনিশ্চিত । বাচ্চাসহ সহজে কেউ বিয়ে করে না কোন মেয়েকে । ছেলে হলে অন্য কথা ছিল । লোকে সাধু বলে বাহবা দিত কিন্তু মেয়ে আমি । বাহবার পরিবর্তে অপবাদই ভাগ্যে জুটবে । তিন মাসে সমাজ বদলানো যাবে না তবে দত্তক বাবামা পাওয়া যেতেও পারে । আবার লেগে যাই দত্তক দেবার খোঁজে— হাসপাতালসহ এদিকওদিকে সবাইকে লাগিয়ে দেয়া হয়েছে । খুঁজতে খুঁজতে দিনরাত এক করে ফেলেছি আমরা । একমাস যেতেই মিলে গেল দত্তক পিতামাতা । বহুদিন পর তারা ছেলে সন্তানের মুখ দেখবেন । তার মুখে আব্বা -মা ডাক শুণবেন । কত মধুর সে ডাক--তাদের জীবন সার্থক হবে । তড়িঘড়ি করে তারাও লেগে পড়েছেন কেনাকাটায় । মাএ দুমাস সময় আছে হাতে । কমলারও মন ভালো । বাচ্চা বড়লোক হবে—ভালো খেতে পারবে, পড়তে পারবে । সমাজে তার পরিচিতি থাকবে । তার মত আর রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে হবে না তাকে । একজন মায়ের জন্যে এটিওতো কম পাওয়া নয় ।
সকাল দশটা । ব্যথা উঠেছে কমলার । আজই বাচ্চা হবে তার । ময়নাকে বোনের বাসা থেকে আনতে পাঠানো হয়েছে ইতিমধ্যেই । যেন সে এসে তার সেবাযত্ন করতে পারে । কমলা ক্ষণে ক্ষণে ব্যথায় কোকায়, চোখ পানিতে ভিজে যায়, তবু ভাত রান্না করতে ছোটে ।
বলি, আমাদের জন্যে আজ আর ভাত রান্নার চিন্তা করতে হবে না তোমার—একটি ব্যবস্থা হবেই ।
বলে, ‘ আপনারা তাহলে দুপুরে কি খাবেন ?’
ভাবী, যে মেয়ে ভয়াণক পেটে ব্যথা নিয়েও আমারা দুপুরে কি খাবো এখনও সেই কথাই ভাবছে সে তাহলে কত ভালোই না বেসেছিল বাচ্চার বাবাটিকে ?
কমলাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় । পাশে ময়না আছে । হবু দত্তক পিতামাতা এসেছেন । আমার বিবাহিত আত্মীয়রা আছে । আকাশসম ব্যথায় কুকড়ে ঘন্টা দুই বাবারে, মারে, গেলামরে করে চিৎকার চেচামেচির পর ফুটফুটে একটি রাজকুমার পক্ষীরাজ ঘোড়ায় চড়ে যেন আকাশ থেকে পৃথিবীতে নেমে এলো । ধবধবে ফর্সা তার রঙ । ছোট ছোট হাতপা । মাথা ভর্তি একরাশ কালো চুল । চাঁদের মত একটি মিষ্টি মুখ । দওক পিতামাতাও উৎসুক । আজ যে তারা অমূল্য রতন নিয়ে ঘরে ফিরবে । আজ থেকে তাদের শূন্য ঘরটি ভরে থাকবে । কমলা শুধু প্রথম এবং শেষবারের মত বাচ্চার মুখটি একবার দেখবে আজ । আর নয় । জানবেও না বাচ্চাটি কোথায় আছে । কেমন আছে ? কত বড় হয়েছে ? কথা বলছে কিনা ? চিরদিনের জন্যে ছুটে যাবে সব বন্ধন ।
বাচ্চাটিকে তার কাছে নিয়ে আসা হলো ।
--দেখতে একেবারে বাবার মত সুন্দর হয়েছে ।
না বাচ্চা দেবে না সে । কঞ্চির মত বেঁকে গিয়েছে যেন । মচকাবে তবু ভাঙবে না । বাচ্চা না দেবার সিদ্ধান্তে অনড় । তার নিজের বাচ্চা -- অন্যের সাধ্য কী কেড়ে নেবার ? নার্স বোঝায় । আয়া বোঝায়—কে শোনে কার কথা ? দরকারে পথে পথে হাটবে সে, ভিক্ষে করবে—তবু বাচ্চা ছাড়বে না । শ্রমিকের জীবন তার । কাজের ভয় সে করে না । তার এখনও দু’টি হাত দু’টি পা আছে সাথে । সুস্হ । ভয় কিসের ? মনের ভয়ই আসল ভয় । সে ভয় তার আর নেই । নিজের পেট পালতে পারলে বাচ্চাকেও সে পালতে পারবে ।
মানুষের মনের ইচ্ছেই তার সবচেয়ে বড় শক্তি । বড় মুক্তি । মানবিকতার বিজয় । অনেকে সব থাকার পরও মনের দূর্বলতার কারণে অবৈধ বাচ্চাকে মেরে ফেলে বা হাটে-ঘাটে-পথে রাতের অন্ধকারে ফেলে দিয়ে আসে । তখন মানুষের বাচ্চাকে শিয়াল- কুকুরে খায় । সমাজে অবৈধ বাচ্চা এলে সেতো সমাজেরই একটি দিক । সমাজেরই অংশ । সমাজেরই দায়, অবক্ষয়, এবং ব্যর্থতা । বাচ্চাতো বাচ্চাই—মানব জন্মের সৃষ্টির রহস্যতো সবই এক !
পুরুষ ভালোবেসে রাতের অন্ধকারে যে নারীকে বুকে টানতে পারে দিনের আলোতে তাকে কেন চিনতে পারে না—চোখের জ্যোতি যায় চলে ?
আর কত যুগ আমরা দিনকানা হয়ে থাকবো আর সমাজে চলবে এই লুকোচুরির খেলা ?
ঘটবে মানবতার অবক্ষয় , হবে শ্রমিকের অপমাণ !




আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
সেলিনা ইসলাম গল্পের পটভুমি,উপাস্থাপনা চমৎকার ভাষা শৈলী সব মিলিয়ে অসাধারণ লাগল গল্প। শুভকামনা রইল।
Md.Nazmul Hasan Shanto গল্প কি শুধুই গল্প , এ যেন এক চিত্র এখনও কল্পনায় আছি । ধন্যবাদ আপনাকে ।
মিলন বনিক সাবলীল উপস্থাপনায় চমৎকার গল্পের পটভূমি এঁকেছেন...নিয়ত শুভকামনা....
শামীম খান খুব ভালো গল্প , শুভেচ্ছা আর ভোট রইল ।
আহা রুবন অসাধারণ গল্প! স্টাইলও আকষর্ণীয়, মুগ্ধ হয়ে পড়লাম। তবে মনে হয় শেষের অনুচ্ছেদ ফেলে দিলে ভাল হতো। ভোট দিলাম।
রেজওয়ানা আলী তনিমা শেষের অংশটা পড়ে মন আর্দ্র হয়ে গেল।কমলার মতো দৃষ্টান্তের চারপাশে অভাব নেই কিন্তু ভুলের দায় এভাবে কয়জন নিতে পারে?

০৭ ফেব্রুয়ারী - ২০১৬ গল্প/কবিতা: ১১ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪