নিলয় পরদেশ

উপলব্ধি (এপ্রিল ২০১৬)

শিল্পী জলী
  • ৭৩
মাঝে মাঝেই মনে হয় জীবনের কাছে হয়ত খুব বেশীই আশা করেছিলাম! নইলে এমন হয় ? আজ আর কিছুই যেন দাগ কাটে না মনে । অনুভূতিগুলোও কেমন সব ভোঁতা হয়ে গিয়েছে ! এক সময় অকারনেও হেসে গড়িয়ে পড়তাম। সামান্য একটু দুঃখেও চোখের পানি ধরে রাখতে পারতাম না। আজকাল তেমন আর হয় না। আগের সেই আমি যেন আর নেই। জীবনে পাওয়াটাই কি সব ? না পাওয়া নিয়ে কি জীবন চলে না ? নাকি জীবনে কিছু কিছু পাওয়া আছে যা মানুষকে খুব লোভী করে দেয় ? সে সব নিয়মই ভাঙতে চায় ? আমিও লক্ষ বার কল্পনা করেছি নিয়ম ভাঙার। কোটি বার প্রার্থনা করেছি যেন অলৌকিক কিছু ঘটে যায়, আমার হাজার জনমের চাওয়াটি পূরণ হয়...। হয়ত আর হবার নয় । তবুও কি মেনে নেয়া যায় সব ? জীবন কি আর জীবন থাকে তখন ?

আমি রোমিতা। তখন যেখানেই যাই সবার নজরে পড়ি। অনাদর করে না কেউ। ইচ্ছে ছিল দেশেই বিয়ে হবে আমার। ছোট্ট একটি ঘর হবে, বাচ্চা মানুষ করতে করতে এক সময় বুড়ো হবো। অতপর দেশের মাটিতেই মৃত্যু, দেশের মাটিতেই কবর হবে। ঠিক বাবার কবরের পাশটিতে। আরও কত কি ? কী করে যেন ছোট ছোট সব স্বপ্নগুলো এলোমেলো হয়ে গেল। চলে এলাম আমেরিকায়। কোনদিন ভাবিনি দেশ ছাড়বো কখনও। সবাই যখন স্বপ্ন দেখতো গয়ণগাটি, শাড়ী-চুড়ি, গাড়ী-বাড়ী, আমেরিকা আমি তখন দেখতাম ছোট্ট একটি ঘরে ফুঁটফুঁটে একটি মেয়ে আমার কোল জুড়ে। একটু একটু করে বড় হচ্ছে। তাকে পন্ডিত রবিশংঙ্করের কাছে পাঠাচ্ছি সেতার শিখতে, নাচ শিখতে পাঠাচ্ছি শান্তি নিকেতনে, আর পড়তে পাঠাচ্ছি বিশ্বের সেরা প্রতিস্ঠানগুলোতে...। পৃথিবীসেরা একটি সুন্দর নাম খুঁজতে কত রাত যে নির্ঘুম কাটিয়েছি তারই কী কোন হিসেব আছে ? যতই চিন্তা করতাম একটি শিশুর কথা ততই মনে হতো, মানুষ থেকে মানুষের সৃষ্টি-- কি করে সম্ভব ? লক্ষ লক্ষ বাচ্চা দেখেও কেমন যেন বিশ্বাস হতে চাইতো না। অবিশ্বাস্য সৃষ্টির রহস্য রহস্যই থেকে যেত। চাওয়াটি আরও দ্বিগুণ হতো!
তখন পড়ালেখা শেষে ভালো চাকরিতে ঢুকেছি । বিয়ের সিদ্ধান্ত নিতে না নিতেই পাঁচ পাঁচটি বিয়ের প্রস্তাব এলো। কাউকে ভালোবাসলে হয়ত একজনকে বেছে নেয়ার প্রশ্ন উঠতো না। মন ঠিক করা সহজ হতো। কিন্তু কাউকে ভালোওবাসিনি যে তাকে বিয়ে করে তার সাথেই ঘর বাঁধবো । বেছেতো নিতেই হবে অচেনা একজনকে।
রমিদ রায়হানের সাথে কাজের সূএে পরিচয়। ভদ্রলোক শিক্ষিত,পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন, হজ্জ্বও করেছেন। ঢাকায় গোটা কয়েক বাড়ী রয়েছে তাঁর। নিজে অভিজাত এলাকায় একটি বাড়ীতে মা-ভাইসহ বসবাস করেন। অগাধ সম্পত্তির মালিক হয়েও সবসময় বাসে যাতায়াত করেন। মার্জিত আচরণ। দেখলেই মনে হয় এর উপর ভরসা করা যায়। একদিন বললেন তোমায় আমি আপণ বোনের মত দেখি । আমি হজ্জ্ব করেছি। আমায় বিশ্বাস করতে পারো, ঠগবে না—ছেলে একেবারে ফেরেশতার মত কিন্তু বড় বেশী দুঃখী। নামে মাএ বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু বউটি একেবারে চরিএহীনা-- জামী যখন পিএইচডি করছিল তখন এক হিন্দুলোকের সাথে ভেগেছে। ওদের একমাত্র মেয়ে মাত্র ছ’বছরের । নতুন বাবার ওখানে সে একটুও নিরাপদ নয়। তুমিই পারো বাচ্চাটির জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে । এটুকু করতে পারবে না ? একটি অবুঝ প্রাণ বেঁচে যাবে !
শুণতেই মনটি কেমন হাহাকার করে উঠলো। ভাবলাম, আহা ! অতটুকু একটি বাচ্চা অথচ নিজের মাও একটিবার তার কথা ভাবলো না ! কেমন মা সে ? এমনও হয় ? আমিতো অত স্বার্থপর নই। আমার দ্বারা কারও ক্ষতিতো কখনও হবে না। তার বাবাতো একদিন বিয়ে করবেনই। কাকে না কাকে বিয়ে করেন কে জানে ? বরং আমার সাথে বিয়ে হলে সে আমাদের সাথে থাকতে পারবে। সুন্দর একটি জীবন পাবে।
বিয়ের কথা শুণেই বান্ধবী রাশা বললো, ‘ছিঃ ছিঃ ছিঃ একটি শিক্ষিত মেয়ে হয়ে শেষ পর্যন্ত তুমি এমন একটি কাজ করবে ? একটি বাচ্চার বাবাকে বিয়ে করবে ? তুমি কী বোকা ?’
বললাম, ‘জানো বাচ্চাটি একটুও নিরাপদ নয় !’
বোন বললো, ‘আমাদের ইজ্জত শেষ ! মানুষের কাছে পরিচয় দিতে পারবো না । এর কোনদিন বুদ্ধি হবে না—ধাক্কা খেলে বুঝবে।’
কাজিন বললো, ‘ এমন বিয়ে করিসনারে ! জীবন অত সহজ নয়—পস্তাবি, তখন আর কিছু করার থাকবে না ।’
আরেক বোন বললো, ‘ জীবনে কখনও কখনো অভিজ্ঞ লোকের পরামর্শও নিতে হয়-- জীবন অত দীর্ঘ নয় যে সবকিছু নিজে করে শেখার সুযোগ থাকে’।
সবার কথায় কেমন যেন ভয় ঢুকে গেল মনে। বিয়ের আরও প্রস্তাব থাকা সত্ত্বেও জামিদের প্রস্তাবটি আগে আসায় ওদের অনেকটা কথাও দিয়ে ফেলেছিলাম। ভাবছি , এখন কী করে বলি তাঁকে আর বিয়ে করতে চাই না ?
এই পরিস্হিতিতে একদিন রায়ান তার ভাইবোন নিয়ে দেখতে এলো। সে উচ্চশিক্ষিত, সুদর্শণ, এবং ভদ্রপরিবারের ছেলে। আমেরিকায় থাকে। বন্ধুর অনুরোধে মাথাভর্তি তেল নিয়েও দোটানার মধ্যে যেতে হলো তাঁদের সামনে। আর সাজহীন অবস্হায় দেখেও পছন্দ করলো তারা।
ছোটবোন তানি বললো, ‘ ভাবী! তোমায় কিন্তু আমি ‘তুমি’ বলে ডাকবো !’
বড়ভাই ফোন করে বললেন, ‘এই! আমায় যেন আবার তুমি করে বলে বসো না—আমি কিন্তু সে নই, ওর বড় ভাই !’
রায়ান বললো, ‘আমেরিকাতে আমার দুটো বাড়ী আছে। আমি একাই সংসার চালাতে পারবো। তোমার বাইরে কোন কাজ করতে হবে না, বাসাতে থেকেই তুমি প্রতিমাসে হাত খরচ পাবে—চাকরি করে যা পেতে তার চেয়ে বেশীই দেবো ! তারপরও যদি একা একা ভালো না লাগে তাহলে না হয় কাজ করো—না বলবো না!’
রায়ানকে দেখে বোন বললো, ‘ওকেই বিয়ে কর—কত ভালো পরিবার। ছেলেটিও সুদর্শণ, শিক্ষিত, ইয়াং , আবার অবিবাহিত। তোকে দেখে কত পছন্দ করেছে। আর ঐ ছেলেতো এখনও দেখেইনি, আবার তাঁর বাচ্চা আছে... । অযথা কেন ঝামেলাপূর্ণ জীবনে জড়াবি ? কী দরকার এতো ঝামেলায় যাবার? জীবনতো একটিই। আমাদের কথা শোণ—ভালো হবে তোর ! ’
আমিও দোটানায় পড়েছি। বুঝতে পারছি না কী করবো ? কী করা উচিত ? বলি, ‘ওদের যে কথা দিয়েছি! ঈদেও ওরা জামা পাঠিয়েছে । এখন ওয়াদা ভাঙলে আল্লাহ যদি নারাজ হন ? যদি অভিশাপ লাগে, তখন ?
বুঝতে পারছি না যাকে দেখিনি তার জন্যেই অপেক্ষা করবো ? নাকি যে দেখে পছন্দ করেছে তাকেই বিয়ে করবো ? ওরা সবদিক দিয়েই ভালো। শুধু আগে আরেকজনকে হ্যাঁ করেছি-- এই সমস্যাটিই প্রকট হয়ে উঠছে তখন।
বোন বলে, ‘আমরা কি তোর খারাপ চাই?’
আমি ভাবি, ‘কথা দিয়ে কি করে কথা ভাঙবো ? মানুষের কথার কী কোন মূল্য নেই ? তাহলে জীবন চলে কী করে ?’
এমন পরিস্হিতিতে বোনের বর বললেন, ‘রমিদ সাহেবকে বলো আরেকটি বিয়ে এসেছে। জামির সাথেতো এখনও দেখা হয়নি, কথাও হয়নি। আমার পরিবারও চাইছে যে, যে ছেলে দেখে পছন্দ করেছে তাকেই বিয়ে করি’।
ভাবলাম, এটিই উওম পন্হা। জানিয়ে দিলে আর কোন সমস্যা থাকবে না। ওয়াদা ভঙ্গ হবে না। ওরাও বুঝবেন আমার পরিস্হিতি, জীবনের বাস্তবতা।
পরের দিন রমিদ সাহেবকে বিষয়টি জানাতেই তিনি বললেন, ‘তোমায় আমি বোন ডেকেছি অথচ তুমি আমার উপর ভরসাই রাখতে পারছো না ! সে দেশে আসার সব ব্যবস্থা পাকা করে ফেলেছে আর তুমি এখন এই কথা বলছো ? সে কালই তোমায় ফোন করবে আবার দেশে আসার টিকিট কাটাও শেষ ! এখন আমি তাকে কি করে বলবো যে তুমি মত পাল্টেছো ? এমন করে আমাকে বিপদে ফেলবে আগে ভাবিনি । এসব শুনে মনের দ্বন্দ্ব আরও বেড়ে গেল আমার।




দু’দিন না যেতেই জামীর ফোন। বলে, ‘আজ ১৪ই ফেব্রুয়ারী! তোমায় এই দিনটিতে ফোন করবো বলে এতদিন অপেক্ষা করছিলাম। আমার উপর বিশ্বাস রাখতে পারছোনা, তাই না? ভরসা হচ্ছে না ? চোখের দেখা না হলেও আমাদের মনের দেখা হয়ে গিয়েছে। মন ঠিক করে ফেলো। আর দ্বিধা রেখো না। খারাপ কিছু হবে না। আমার প্রতি ভরসা রাখো। কথা যখন দিয়েছি প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ হবে না। জীবন আমার শূণ্যতায় ভরে গিয়েছে তাই মানুষকে মূল্যায়ণ করতে জানি। আমার প্রতি আস্হা হারিয়ো না। আমেরিকায় এলেই তোমায় একটি গাড়ী কিনে দেবো । এম.এস. করবে, পি.এইচ.ডি করবে। আমাদের আরেকটি মেয়ে হবে। নাম রাখবো, সিনঝিনি । নামটি আমার খুউব পছন্দ। আগেই ঠিক করে রেখেছিলাম-- আবার যেন না করে বসো না । তোমারতো আবার মত বদলাতে সময় লাগে না...রাগ করলে নাতো আবার ? হাঃ হাঃ হাঃ!’
আমার মায়ের সাথেও কথা বলে সে। বলে, ‘মা ! বিয়ের পর আপনাকে আমেরিকায় বেড়াতে আসতেই হবে—না বললে চলবে না কিন্তু ’ ।
অতপর নিয়মিত ফোন করতে থাকে আর একরাশ স্বপ্ন দেখতে দেখতে মনের সব দ্বিধা কেঁটে যায় আমার।

চলে আসে সাতই মে। আজ বাংলাদেশে আসবে জামী । কাল আমাদের বিয়ে। আমি তাঁকে রিসিভ করতে যাবো না । সে বলেছে আমি যেন না যাই। তাঁর আত্মীয়স্বজন বিয়ের আগে আমাকে এয়ারপোর্টে দেখলে হাসতে পারেন-- বিষয়টি বড় লজ্জার হবে !
আহা কত কেয়ারিং ছেলে। বিয়ের আগেই আমাকে নিয়ে এত ভাবছে, এত প্রোটেক্ট করছে । বিয়ের পরে না যেন আকাশেই তুলে রাখবে ? কত কদর করবে ? কত বেশী ভালোবাসবে ? ভাবতেই মনটি আমার খুশীতে নেচে উঠে।
নির্ধারিত সময়ে নিরাপদে সে পৌঁছে যায় ঢাকায়। একদিন হয়ে গিয়েছে। এখনও একটি ফোন করেনি! আমি চিন্তায় আছি। এতদিন আমেরিকা থেকে দিনে দু’তিনবার করে ফোন করেছে অথচ দেশে পৌঁছে একটিবারও ফোন করলো না সে! কে জানে হয়ত ব্যস্ত ? সময়তো আর নেই।

আমাদের সব আত্মীয়স্বজন এসে ভরে ফেলেছে বাসা। চারিদিকে হৈ চৈ। কিশোরীরা সাজগোজ নিয়ে মেতে উঠেছে। কেউ নেইলপালিশ লাগাচ্ছে, কেউ চুল সেট করছে, কেউবা পরছে শাড়ি! রকমারি ফুল আর পারফিউমের সুবাস ছড়িয়ে পড়েছে চারিদিকে। বড়রা সবাই ব্যস্ত। নানাকাজে এদিক ওদিক ছুটোছুটি করছেন। আজ দুপুরেই বাসাতে বিয়ের কাজটি সেরে ফেলা হবে। রাতে কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ের অনুস্ঠান। আমাকে মেহেদী পরানো হচ্ছে। ওদিকে রমিদ সাহেব বার বার ফোন করছেন। একবার বলছেন, দু’শ বরযাএী আসবে, আবার বলছেন,তিন’শ। কিছুক্ষণ না যেতেই আবার ফোন করলেন তিনি। এবার বলছেন, তাঁদের বৌভাতের অনুস্ঠানটিও আমাদের সাথে সংযুক্ত করতে হবে। একই অনুষ্ঠান বিয়ে আর বৌভাতের -- এটিই উওম ব্যবস্হা!
বার বার প্লান বদলানো দেখে বাসার সবাই রাগে গজ গজ করছেন। চরম বিরক্ত হয়ে উঠছেন তাঁরা। বলছেন, লোক চিনতে মনে হয় ভুলই করে ফেলেছি। আমি অস্বস্তি ফিল করছি। জামীর সাথে কথা বলতে চাইছি কিন্তু তাঁকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। তাঁর ফোন নাম্বারটিও নেই আমার কাছে। এরই মধ্যে রমিদ সাহেব আবারও ফোন করলেন। বলছেন, তাঁদের অনুস্ঠানটি আমাদের অনুষ্ঠানের সাথে যুক্ত না করলে বিয়েই হবে না !
তাঁদের আচরণে এখন আমিও অতিষ্ট। ভাবছি, কেন যে হ্যাঁ বললাম ? ভালোই মুশকিল হলো। বিয়ের সব আয়োজন শেষ ওদিকে ছেলে পক্ষ গো ধরে আছে। ভাই এসে বললেন, ওদের সাথে ডিল করতে পারছি না আর । সব বয়স্ক মানুষ। শুধু ঘন্টায় ঘন্টায় কথা পাল্টায় -- তাল রাখা যায় না, আগে বুঝলে...। বিয়ের ঠিক পূর্বক্ষণে তাঁদের আচরণের এই পরিবর্তন দেখে আমি হতভম্ব। তাঁরা চাপে ফেলে নিজেদের ইচ্ছেমত সব কিছু করিয়ে নিতে চাইছে। অথচ এই মুহূর্তে তাঁদের সব ইচ্ছে পূরণ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। মন ঠিক করে ফেলেছি, বিয়ে না হলে হবে না। ভালোবাসার মানুষতো নয় যে তাঁকে বিয়ে করতেই হবে ! না করলে কষ্ট পাবো ? জীবনতো নষ্ট হবে না। শুধু কিছু টাকা না হয় নষ্ট হলো-- তাতে কী ? এটা পুষিয়ে যাবে । জীবনের কাছে টাকাইতো সবকিছু নয়। বিয়ে না হতেই এমন শুরু করেছে বিয়ের পর যদি আরও খারাপ কিছু করে তখন কী হবে ? তাঁদের আচরণ দেখে ভাইকে বলি, ‘অমন করলে বলবেন বিয়ে না হলে হবে না। তবে বার বার কথা পাল্টালে আমরাও চাই না যে বিয়ে হোক’। একথা বলতেই তারা নরম হয়ে যান। বলতে থাকেন, ‘আরে ভাই! বিয়েতে এমন হয়ই—এত রিয়্যাক্ট করলে চলে ?’
দুপুরে না দেখেই বিয়ে হয়ে গেল আমাদের। জামী বলেছে, চোখের দেখাই সবকিছু নয়। মনের মিলই জরুরী। দেখা হবে বিয়ের আসরে। রাতে, একেবারে বঁধূর বেশে। সে মাঝে মাঝে লেখালিখি করে। লিখে বেশ নামও হয়েছে তাঁর। ভাবছি, লেখক মানুষ । খুবই রোমান্টিক। তাইতো বিয়েকে ঘিরে এত কল্পনা তাঁর। সেকি আর সাধারণ মানুষ যে বিয়েকে নিয়ে সাধারণ কল্পনা করবে ? আমেরিকায় থাকে সে। তাঁর ধরনই আলাদা । আমি তার কি বুঝবো ?

বিয়ের পর রাতে কমিউনিটি সেন্টারে প্রথম দেখি তাঁকে। দেখেই মনে হলো যেন কবর থেকে লম্বা পাটখড়ির মত সাদা একটি লাশ আবার পৃথিবীতে ফিরে এসেছে। ফ্যাকাশে । কোথাও প্রাণের চিন্হমাএ নেই। কোটরে ঢোকা দুটি চোখ, পলকহীন। কোন ভাষা নেই তাতে। হাসছে দাঁত বের করে। হলদেটে আঁকাবাঁকা দাঁত বের হয়ে আছে চারিদিকে । তার কিছু আবার ক্ষয়ে গিয়েছে। ভয়াবহ এক কাঠিন্য। দেখতেই হিম শীতল একটি স্রোত বয়ে গেল আমার শরীরের মধ্যে। একেবারে দমে গেলাম। এতদিন কথা বলে অনেকটাই প্রেমে গদ গদ হয়েছিলাম। ভয়াণক আপণ মনে হচ্ছিলো। সুন্দর কন্ঠ, ভরাট গলা, শুদ্ধ বাচনভঙ্গী এবং নানাবিধ প্রতিশ্রুতি মনে দাগ কেঁটেছিল । সরাসরি দেখতেই নিমিষে সব প্রেম উধাও। ভয়াবহ কঠিণ মনে হলো তাকে। যেন ইংলিশ মুভির ভিলেন। ভাবলেষহীন। যেন ঠান্ডা মাথায়ও যেকোন মানুষ খুন করে ফেলতে পারবে।
সামনা সামনি না দেখেই বিয়ে হয়ে গিয়েছে। বিয়ের আগে একবার অন্তত দেখে নেয়া উচিত ছিল। সারা জীবনের ব্যাপার অথচ একটি বারও দেখিনি। এতবড় একটি ভুল করলাম ? বুঝতে পারিনি কাউকে দেখে কখনও এমন অনুভূতি হতে পারে মানুষের ? ভাবছি, মানিয়ে নিতে পারবো তো ?
ডিনার শেষ হতেই মেয়ের দল বরের হাত ধোঁয়াতে ছুটে এলো। তাঁদের ইচ্ছে হাত ধুঁইয়ে একটি বড় অংকের টাকা বাগিয়ে নেয়া। আমেরিকান ইঞ্জিনিয়ার বর তাই তাদের আশাটিও বড়। সম্ভাব্য দশ হাজার টাকার ভাগাভাগিও তারা করে রেখেছে—দশ জনের কে কত করে পাবে! বয়স ভিত্তিক ভাগাভাগি হবে-- বড়রা বেশী, ছোটরা কম। তাদের শপিংয়ের লিষ্টও করা শেষ। শুধু টাকা হাতে আসতে বাঁকী ! যখনই তারা হাত ধোঁয়াতে গেল জামী তাদের হাত চেপে ধরলো। বেশরম বর দেখে পানি রেখেই দৌঁড়ে পালালো তারা। অবস্হা বেগতিক ভেবে বাড়ীর লোক বললো, ‘তোমাদের আর হাত ধোঁয়াতে হবে না। এই রসম শেষ ! এখন যাও। আমরাই তোমাদের পয়সা দিয়ে দেবো’।

বিয়ের রসম শেষে শ্বশুর বাড়ী পৌঁছুতে রাত দুটো আর বাসর ঘরে ঢুকতে ঢুকতে ভোর চারটে। দোতলায় বিশাল বড় একটি কক্ষ। গোলাপ আর বেলীফুল দিয়ে খাঁটটি সাজানো হয়েছে। দেয়ালেও জায়গায় জায়গায় গোলাপ জুড়ে দেয়া হয়েছে। ঘরের রঙীন লাইট হালকা নীলাভ আভা সৃষ্টি করেছে। সংযুক্ত বাথরুম । বড় বাথটাবও রয়েছে । এক কথায় চমৎকার আয়োজন। নীচের তলায় সব অতিথি এবং আত্মীয়রা এখনও গল্পে মেতে রয়েছেন। মাঝে মাঝেই তাঁদের হাসির শব্দ শোণা যাচ্ছে। এরই মাঝে বর মশাই ঘরে এসে দরজা বন্ধ করে। তখনও আমার ঘোমটা তোলা। খুব ভয় ভয় করছে। সে এগিয়ে আসছে খাটের দিকে। ঢিপ ঢিপ করছে আমার বুক। ধপ্ করে বসেই শুয়ে পরে সে। না কথা আর হলো না আমাদের। দীর্ঘ জার্ণীতে সে ক্লান্ত। রাশভারী, অপরিচিত, আমেরিকান বর। বয়সের পার্থক্যও অনেক বেশী। আমি সাহস করলাম না কথা বাড়াবার। আসার পর থেকে যে ভাব ধরেছে তাতে কে জানে বাংলা না ইংলিশে কথা বলবে সে ? জানি না কতটা মানিয়ে নিতে পারবো ? সেই ভালো কথাই হলো না । দিনতো আরও আছে! বাসর না হয় বাঁকী থাকলো—ক্ষতি কী?
টেনশনে সারাদিন কিছুই খাওয়া হয়নি। বড় দূর্বল লাগছে। মনটিও বড় অশান্ত। অপরিচিত জায়গা। নিজের বাসা, আপণজন সব ছেড়ে এসেছি। বরও তেমন পছন্দ হয়নি। মনে হচ্ছে বিয়ে না হলেই যেন ভালো হতো। এরই মধ্যে সে নাক ডাকতে শুরু করে। কখনও হালকা বাতাসের শব্দ বেরুচ্ছে। কখনও ভারী ঘড় ঘড়ে শব্দ। তাঁর মাথাটি একদিকে কাঁত হয়ে আছে আর ঠোঁটের কোণ বেয়ে লালা ঝরছে। আমেরিকান বর এমন করে নাক ডাকবে ভাবিনি। ভীষণ হাসি পাচ্ছে কিন্তু হাসছি না যদি আবার জেগে উঠে ধমক দেয়।
ক্লান্তিতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম বুঝিনি। দরজা ধাক্কার শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। দরজা খুলতেই কাজের ছেলে বলে, ‘ভাবী, বাজারে যেতে হবে—আট-হাজার টাকা দিন !’
তখনও ঘুমাচ্ছে সে। হ্যান্ডব্যাগ খুলে তাকে টাকা দেই।


সকালের আলো ছড়িয়ে পড়েছে চারিদিকে। ভাবছি, এত ধণী হয়েও বিয়ের পরের দিনই বউয়ের কাছে কেন বাজারের টাকা চাইলো ওরা ? ওদের কাছে কী টাকা নেই ? নাকি যৌতুক নিচ্ছে?
নিজেকে সান্ত্বনা দেই টাকাই নেই হবে-- মাএ গতকাল দেশে এসেছে এখনও হয়ত ডলার ভাঙায়নি।
সকাল দশ’টা বাজে। জামী গোসল সেরে সবার সাথে নাস্তা খেতে শুরু করে দিয়েছে। আমাকে ডাকেনি। কেউ একজন বলেলেন, ‘নতুন বউকে রেখেই নাস্তা খাচ্ছো? একবার ডাকলেও না ?’ সে হেসে ফেললো। লোকজনও হাসাহাসি করছে। তাঁদের একজন আবার আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘তোমার খোঁজ কেউ রাখবে বলে মনে হয় না—নিজের খবর নিজেই রেখো কিন্তু ! নানা কথাবার্তার মাঝে আমি নাস্তা খেতে বসলাম। নাস্তা শেষে আত্মীয়স্বজন মিলে গেলাম ঢাকার বড় বড় শপিং মলে। সবাই এটাওটা পছন্দ করছে, অর্ডার করছে, সে এক এলাহী কান্ড। চোখ ঝলসানো রকমারি জিনিসপএ, শো’পিস, ড্রেস, শাড়ী। শপিংয়ের পাশাপাশি সবাই ওখানে লাঞ্চও খেলো। বিল দেবার পালা। জামী আমায় বলে, ‘বিল মিটিয়ে দাও!’ সবার বিলই দিলাম। উঁচুমানের টিপস্ও দিতে হলো। সে আমায় একবার জিজ্ঞেসও করলো না আমার ব্যাগে আদৌও কোন টাকা আছে কিনা ? অথবা কত টাকা আছে ? তাঁরা টাকার লোভী নাকি পরোক্ষভাবে যৌতুক নিচ্ছে বুঝতে পারছি না। ভাবছি, আমেরিকার মানুষ বুঝি এমনই—এতই ধণী যে মানুষের টাকাকে পয়সাও মনে করে না!
ওখান থেকে তাঁরা নিউমার্কেটে যায়, অতপর আজিজ সুপার মার্কেটে। দুণিয়ার বই, সিডি, জামাকাপড়সহ এটাসেটা কেনে আর বিল না দিয়ে অন্য দোকানে চলে যায়। আমি বিল শোধ করে তাদের পিছু পিছু ছুটি আর ভয়ে থাকি এখনও আমার ব্যাগে যথেষ্ট টাকা আছে কিনা ?
দুদিন না যেতেই আমার টাকা শেষ। বোন এসেছে দেখতে। তাকে এক ফাঁকে ডেকে নিয়ে বলি, আমায় কিছু টাকা দিয়ে যা, অবস্হা খারাপ —সব শেষ !’ সে তার হ্যান্ডব্যাগ থেকে বিশ হাজার টাকা বের করে দেয়। বলে, ‘কতগুলো টাকা না নিয়ে এলি সাথে, এরই মাঝে সব শেষ ? বিয়ের পরও এত টাকা লাগবে কেন তোর ? লাগলে বরের কাছে চাইবি । ভয়ে এমন মুখ করে রেখেছিস কেন ? বরের সাথে কথা বল !’
বলি, কথা কী বলবো—সেতো শুধু এখানে ওখানে ছুটে বেড়ায়।
আত্মীয়দের বাসায় যেতে মিষ্টি কেনা থেকে শুরু করে যাবতীয় খরচ বহন করতে গিয়ে বোনের টাকাও শেষ হতে সময় লাগে না। এদিকে জা এসে বলে, ‘নয় হাজার টাকা দাও--দ্রুত পাসপোর্ট করতে ঘুষ দিতে হবে’। আমার কাছে আছে মাএ পাঁচ হাজার টাকা। সংকোচ কাটিয়ে জামীকে বলি, আমার টাকা প্রায় শেষ, পাসপোর্ট করতে নয় হাজার টাকা লাগবে। বলে, চলো যাই তোমার ব্যাংকে টাকা তুলতে। ছুটিতে থেকেও ব্যাংকে টাকা তুলতে যাই আমরা ।
ধণী বর বিয়ে করে তাল রাখতে দু’দিনেই একেবারে ফকির হয়ে যাচ্ছি। কাউকে বলাও যাচ্ছে না। মন খারাপ হচ্ছে। মনকে সান্ত্বনা দিচ্ছি ডলার ভাঙায়নি এখনও তাই...।
জামী বলে, ‘চলো হ্যানিমুণে কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি হয়ে ইন্ডিয়া ঘুরে আসি !’
বলি, ‘ না, এবার যাবো না !’
বলে, ‘অশিক্ষিত লোক দুণিয়া ঘুরে দেখে না! সৃষ্টি বোঝে না...!’
ভাবি, সব খরচই তো আমাকেই করতে হবে। কত, তারও কী কোন পরিমাণ আছে ? এমন হ্যানিমুণে নাইবা গেলাম।
দুদিন না হতেই জা আবার এসে চাইলো পঞ্চাশ হাজার টাকা। হতাশ হয়ে বলি, অত টাকাতো আমার কাছে নেই।
বলে, ‘কেন থাকবেনা—-আলমারীতেইতো তিন লাখ টাকা আছে। বাংলাদেশে এসেই ভাইয়া ডলার ভাঙিয়ে ওখানে রেখেছেন—ওখান থেকে দাও !’
বলি, ‘আমিতো দেখিনি কখনও !’
সে চলে যায় জামীর খোঁজে।
ভাবি পোড়া কপাল আমার ! ঘরে এত টাকা থাকতে মাএ কয়েক হাজার টাকা টান পড়ায় কী করে রাজা বর আমাকে ব্যাংকে নিয়ে গেল ? এ আমি কাকে বিয়ে করলাম ? একি সর্বনাশ হলো ? একেবারে মানুষ না বুঝে বিয়ে করলাম ? বিয়ের আগে আরও কেন খোঁজখবর করলাম না ? আরেকজনের ভালো করতে গিয়ে নিজের জীবনের বারটাতো বাজিয়ে দিলাম ? নিজের পায়ে কুড়াল মারলাম ? নিজেই যদি টিকতে না পারি তাহলে অন্যেরই বা ভালো করবো কী করে ? এমন লোকের পাল্লায়তো আগে পড়িনি-- এখন কী হবে ? ভাবনার মাঝে সে এসে বড় এক খাম থেকে টাকা বের করে জা’কে দিল। আমি চেয়ে চেয়ে দেখলাম। মনটা কেমন ভারী হতে থাকলো । তবে কিছুই বলতে পারলাম না। এসব নিয়ে কথা বলাও সহজ নয়। বিবেক দিয়ে এসব উপলবদি করতে হয়। বিবেক না থাকলে ভদ্রতা বজায় রেখে আর কিছুই করার থাকে না। কিছুদিন যেতেই সে আমেরিকায় ফিরে যায় ।
আমার দেরী হবে ভিসা হতে। প্রোসেসিং চলছে। মাঝে মাঝেই রমিদ সাহেবের সাথে আমেরিকান এম্বাসীতে যেতে হয়। একদিন তিনি বলেন, ‘সাবধান ! ওরা ডেঞ্জারাস লোক--আমার জীবনটি নষ্ট করে দিয়েছে , তোমার জীবনও কিন্তু নষ্ট করে ছাড়বে!’
মনে পড়ে গেল , বিয়ের আগে এ মানুষটিই বলেছিলেন, একেবারে ফেরেশতার মত ছেলে। কিছুদিন পর তাঁর বোনের সাথেও দেখা হয় হাসপাতালে। তিনি বলেন, ‘ভাইকে অনেকবার বলেছিলাম মেয়েটি তোমায় এত বিশ্বাস করে তার এত বড় ক্ষতি তুমি করো না, কিন্তু ভাই শোণেনি…’। খুব আহত হলাম। তাঁকে খুব বিশ্বাস করেছিলাম কিন্তু তার মূল্য সে রাখেনি। মানুষ যদি মানুষের উপর একটু ভরসা করতে না পারে, মানুষ যদি মানুষের এতটুকু বিশ্বাস না রাখে তাহলে জীবন চলে কী করে ?
বাসায় ফিরে মাকে বলি , আমেরিকায় যেতে চাই না আর—সে যেন কেমন ! জিজ্ঞেসও করে না কত টাকা আছে না আছে—-শুধু আমাকে দিয়ে খরচ করায়, বিল না দিয়ে চলে যায়। আমার খুব ভয় লাগে।
মা বলেন, ‘ অচেনা মানুষ। মিল হতে সময় লাগে—ধৈর্য ধরো, সময়ে সব ঠিক হয়ে যাবে!’
আবার সে ফোন করতে শুরু করেছে। সকালসন্ধ্যা ফোন করে। আমার জন্যে এই করবে সেই করবে শোণায়, আমার বিশ্বাস হয় না। মায়ের সাথেও কথা বলে। বলে, ‘দুএকদিনের মধ্যেই রোমিকে পঞ্চাশ হাজার টাকা পাঠাবো, ওখান থেকে বিশ হাজার টাকায় আপণি একটা কিছু কিনে নেবেন। আমিও ওকে বলে দেবো’ ।
মা বলেন, ‘ আমায় কিছু দিতে হবে না, তোমরা শুধু ভালো থাকো সেই দোয়াই করি! ’
বলে, ‘না বললে চলবে না মা—নিতেই হবে !’
আমাকে একটি টাকাও পাঠায় না সে। আমি বিব্রত হই। অন্যদেরকে এটাওটা দিতে চাইছে কিন্তু কিছুই দিচ্ছে না। আমি আর কত দেবো ? তাঁরা হয়ত ভাবছেন আমিই দিচ্ছি না। আমি ক’জনকে বোঝাবো যে ওগুলো শুধুই মন ভোলানো কথা! কী করেই বা বলবো এসব ? সবাইকে কী সবকিছু বলা যায় ? নাকি বলতে আছে ?

বিয়ের ছুটি শেষে আবার অফিসে যোগ দিয়েছি…। এিশ থেকে পঁয়এিশ জন কলিগ এসে বলেন, ‘আপা, আমেরিকান ধণী বরের সাথে আপনার বিয়ে হয়েছে— দামী রেষ্টুরেন্টে খাওয়াতে হবে !’
আমি হাসি। হ্যাঁ / না কিছুই বলি না। আমাকে নীরব থাকতে দেখে তাঁদের রসিকতা বাড়ে।
বলেন, ‘বিয়ের পর আপা কী বেশী কিপটে হয়ে গেলেন ? আগেতো এমন ছিলেন না !’
আমার হাসি প্রসারিত হয়। চোখে অন্ধকার দেখি। বিয়ে করে এ ক’দিনে আমি যে বাতাসা হয়ে গিয়েছি, তাঁরা বোঝেন না।
দু’মাসেই ভিসা হয়ে যায়। যাবো না যাবো না করেও চলে যাই আমেরিকায়। উঠি নিউইয়র্কে। ওখানে পনের দিন থেকে ফিরে যাবো জামীর কর্মস্হল, ক্যালিফোর্ণিয়ায়। ছুটি নিয়ে জামীও নিউইয়র্কে এসেছে। মেয়ের সাথে দেখা করবে। দু’সপ্তাহ থাকবে। মেয়েটি আসে। সাতআট বছর বয়স। বিয়েতে পাওয়া স্বর্ণের নেকলেসসহ নানা উপহার দেই তাকে। খুশী মনে সে ঘুরে বেড়ায়, আমাদের মাঝে ঘুমায়। সে তার মায়ের সাথেই থাকে। তবে বাবা নিউইয়র্কে এলে ভিজিট করতে আসে, থাকে জামীর আত্মীয়ের বাসায়। তখন তার মা দিনরাত ফোন করেন, মেয়ের খোঁজখবর নেন, জামীর সাথে কথা বলেন।
একদিন দেবরের চার বছরের মেয়েসহ আমরা চারজন নিউইর্য়কের ম্যানহাটনে গিয়েছি বেড়াতে। আমাকে দুটি নেকলেস পছন্দ করে দিতে বলে । দুটি নেকলেস পছন্দ করি। দুটোই তাঁর মেয়েকে দেয় সে। অতপর আমাদের রেখেই মেয়েকে নিয়ে লম্বা লম্বা পা ফেলে উধাও হয়ে যায় মানুষের ভীড়ে। দেবরের বাচ্চা নিয়ে আমি একাই দাঁড়িয়ে থাকি। অচেনা শহর। একেবারেই নতুন, কিছুই চিনি না। কোন ঠিকানা নেই সাথে। ফোনও নেই। একবার তাদেরকে সামনে খুঁজি, একবার পেছনে। ঘন্টা খানেকপর ফিরে আসে সে। হাসছে। বাড়ী ফিরে তার বোনদেরকে বলি, ‘সে যেন কেমন-- একটুও কেয়ার করে না ! এভাবে কী কারও সংসার হয় ?’
ওরা হো হো করে হেসে উঠেন। বলেন, ‘রোমি কেয়ার চায় !’ হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়তে থাকেন একজন আরেকজনের গায়। চুপ হয়ে যাই আমি।
জা এসে বলে, কি কিনেছো তোমরা ?
বলি ‘ তেমন কিছু নয় শুধু জিনির জন্যে দুটো নেকলেস’ ! শুণেই উদ্দেশ্যপূর্ণ ভঙ্গিতে সে বলে, ‘হায় কপাল ! তোমাকে একটিও নেকলেসও দিল না, ভাইয়া ? দু’টোই ওকে দিল ?’ যেন বোঝায়, একটি জিনির, আরেকটি তার মায়ের, তোমারতো কিছুই না!
দিনরাত ননাসরা শেখান ‘বরের নাম ধরে ডাকবে না-- আমাদের পরিবারে বরের নাম ধরে ডাকার রেওয়াজ নেই’। আরও শেখান, কী করে জামীর জন্যে ঘন্টায় ঘন্টায় চা বানাতে হবে। আমি শিখি। তাঁদের ঘরের বউ হবার প্রশিক্ষণ নিতে নিতে পনের দিন পার হয়ে যায়। আমিও এক মিনিট পঁচিশ সেকেন্ডের মধ্যে চা বানানো শিখে যাই। যেন বর চা বলে হাক দেবার আগেই চা নিয়ে ছুটে আসতে পারি।




ছুটি কাঁটিয়ে ক্যালিফোর্ণিয়ায় ফিরে এসেছি। সে প্রায় প্রতিদিনই বলে, ‘শর্মী ফিরে আসতে চায়, তুমি কী করবে ?’
বলি, কী আর করবো ? চলে যাবো—দু’জনতো আর থাকা যাবে না!
বিয়ের দুদিন পর থেকেই সে একথা বলতে শুরু করেছিল। তার ঢাকার বোনও বিয়ের পর পরই ঐ একই কথা বলছিলেন। আমি বিশ্বাস করিনি। ভেবেছি, তারা হয়ত আমায় পরীক্ষা করছে। ভয় দেখাচ্ছে। চাপে রাখতে চেষ্টা করছে। তাঁরাতো আর বাচ্চা মানুষ নয় যে খেলায় খেলায় বিয়ে করবে ! বিয়ের তিন-চারদিন আগেও তাঁকে বলেছিলাম, যদি এক্স-ওয়াইফ ফিরে আসে তাহলে মেয়ের জন্যে তাকেই ফিরিয়ে আনতে, ওটিই তাঁদের সবার জন্য ভালো হবে। তখন বলেছে, ‘ আমায় বিশ্বাস করো না তুমি—তাই না ? অনেক চেষ্টা করেছি তাঁকে ফিরিয়ে আনতে কিন্তু আসেনি। সে ব্যভীচারিণী। সে হিন্দুলোকের সাথে থাকছে। কতবার আমার মেয়েকে মেরে ফেলতে চেয়েছে তার হিসেব নেই--আমি সারক্ষণ ভয়ে ভয়ে থাকি না যেন কখন মেরে ফেলে আমার মেয়েকে । মেয়েটি তার মাকে মোটেই পছন্দ করে না। আমার মেয়ে ওখানে একটুও নিরাপদ নয়’।
সে সত্যিই আসতে চায় বিশ্বাস করলে বিয়ের পরও আমি আমেরিকায় আসতাম না। দেশে তাঁর আচরণ দেখেই আমার মন উঠে গিয়েছিল। শুধু বিয়ে হয়ে গিয়েছিল তাই। বিয়ের আগে এমন মানুষ হবে বুঝলে তাঁকে বিয়েই করতাম না।
ক্যালিফোর্নিয়া আসার কিছুদিন হতেই জিনির মা সকালবিকেল ফোন করতে শুরু করেন। জামী অফিসে যেতেই যখন তখন ফোন বেজে ওঠে আর ধরতেই লাইন কেঁটে দেন। আবার ফোন করেন। একটু ঘুমুতেও পারি না। চলতে থাকে ফোনের রকমারি খেলা। মারপ্যাচ। বুঝে পাই না আমায় কেন বার বার ফোন করছেন ? আমিতো তাঁর ঘর ভাঙিনি। তাঁর সাথেতো আমার কোন লেনদেন নেই ! শত্রুতা নেই ! ঠিকঠাকের বিয়ে আমাদের। একে বিয়ে না করলে অন্য কাউকে বিয়ে করতাম। ভেবে পাই না আমার পেছনে লাগার কী যুক্তি ?
একদিন তাঁর সাথে কথা বলি। তিনি বলেন, সে অনেক জ্বালিয়েছে । সব টাকাপয়সা নিয়ে যেত। না দিলে মেরে গরম কাপড় ছাড়াই স্নো’র মধ্যে বাইরে বের করে দিত। তার বোনরাও এসব বিষয়ে তাকে সহযোগিতা করতো। বাধ্য হয়ে তাকে চলে যেতে হয়েছে। তবে মেয়ের কারনে সে আবার ফিরে আসতে চায়-- আমি চলে গেলেই সে ফিরে আসবে। বলে, আমি যেন তাকে জামীর উওর জানাই।
মেয়েটি আসতে চায় জেনে সত্যিই অবাক হই। সে যেমন মানুষ তাকে এক মাস জানলেই কোন মেয়ের আর ফিরে আসার সাহস করার কথা নয়-- যেমন বদমেজাজি তেমনই স্বার্থপর। কথায় কথায় হাত তোলে গায়ে। মুখও বন্ধ থাকে না। তার গালি বস্তিবাসীকেও হার মানায় । অথচ মেয়েটি আবার আসতে চাইছে-- কে জানে বাচ্চা নিয়ে সে হয়ত আরও খারাপ আছে ? ভাবী, মাএ এসেছি-- এখনই এই অবস্হা, পরে না যেন আরও কত কী হয় ? দেশে এখনও আমার চাকরি আছে। কেউ জানেও না আমি আমেরিকায় চলে এসেছি। কত মেয়েরইতো বিদেশে বিয়ে হয়, বর আর তাকে নেয় না, নিতে পারে না। লোকে না হয় তাই জানবে। একটু না হয় বদনাম হলোই। তারপরওতো চাকরি থাকবে। নিজের দেশে থাকবো। আত্মীয়স্বজন থাকবে। কমতো নয়! তারাও ফিরে পাবে তাদের পরিবার—ক্ষতি কী ? ওদেরও ভালো হলো।
জামী আসতেই বলি, আমি আগে বুঝিনি সত্যিই সে আসতে চায়। দেশে আমার এখনও চাকরি আছে-- আমি চলে যাই।
সে বলে, ‘এলে এতোদিনেই আসতো সে। এখন শুধু আমার ঘর ভাঙতে চায়—আসলে আসবে না !’
তাঁর সাথে আবার কথা হয়। বলি, ‘ও বলেছে সম্ভব নয় !’
রেগে যান তিনি, বলেন ‘দেখে নেবো’।
বলি, ‘আমি যদি আপনার জায়গায় হতাম, আর আমার যদি একটি বাচ্চা থাকতো, তাহলে আবার ফিরে আসতে চাইলে আগেই ফিরে আসতাম। তবে বিয়ে হয়ে যাবার পর ফিরে আসতে চাওয়া আনফেয়ার!’
কথাগুলো শুণেই রেগে লাইন কেটে দেয় সে। ওদিকে অফিসে তার মেয়ে ফোন করে জামীকে। কান্না করে বলে, ‘ নতুন মায়ের ভয়ে সে স্কুলেই যেতে পারেনি। সে কোন নিউ-মা চায় না ! কোন ভাইবোন চায় না ! কোনদিনই না। জামী অফিস থেকেই ফোনে ধমকাতে থাকে আমাকে। আমি অবাক হয়ে শুণি। জিনি থেকে তখন আমি তিন হাজার মাইল দূরে । সে নাকি আমার ভয়ে স্কুলে যেতে পারেনি ? অথচ তার সাথে আমার কোন কথাই হয়নি। নিউইর্য়কে টানা পনের দিন ঘুমিয়েছে সে আমাদের মাঝে। ক্ষণে ক্ষণে এসে মা বলে জড়িয়ে ধরেছে। একটুও ভয় পায়নি। অথচ এখন সে আমার ভয়ে স্কুলে যেতে পারছে না। কল্পণাও করিনি এক মা তার নিজের স্বার্থে একমাএ সন্তানকে ব্যবহার করে এমন নোংরা খেলা খেলতে পারে। অফিস থেকে এসেই জামী গায়ে হাত তোলে। মারের ধাক্কায় পড়ে গিয়ে পা কেটে যায় আমার। তখন সে বুকে উঠে বসে। আমার দু’হাত আমারই গলার উপর চেপে ধরে দুদিকে টানতে থাকে যেন হাতদুটিকে শরীর থেকে ছাড়িয়ে নিতে পারে। হাতের চাপে আমার দম বন্ধ হতে থাকে। সে চাপ আরও বাড়ায়। অক্সিজেনের অভাবে আমি ছটফট করতে থাকি। সারা গায়ে জায়গায় জায়গায় ব্রুজ নিয়ে ভাগ্যক্রমে সে যাএায় বেঁচে যাই আমি। মেয়ের মায়ের হুমকির আসর শুরু হয়ে গিয়েছে । এখন তাঁর ইচ্ছেতেই আমার থাকার মেয়াদ। আমারও শিক্ষা শেষ। তাঁরা এখন লক্ষ প্রেম করে হাজার বাঁচ্চা জন্ম দিলেও আমার কিছুই যায় আসে না । আমার জীবনই এখানে হুমকির সন্মুখীন। সংসার দিয়ে আমার কী হবে ? তবুও তারা আমাকে তাদের মাঝের দেয়ালই মনে করে। বুঝতে পারে না আমি এখানে থাকলেও আসলে এখানে আর নেই।
সে সিঙ্গেল হতেই জামী আমায় ছেড়ে দেবে। তার আগে ছাড়তে চায় না। যদি আবার না আসেন তিনি মনে সেই ভয়টিও রয়েছে । এদিকে দিনরাত কাজকর্মের মধ্যদিয়ে আমাকে বোঝায় আমি ক্ষণিকের। অস্হায়ী। আউট বলার সাথে সাথেই পথ দেখতে হবে।
প্যানাসনিক ফোন-সেট কিনে এনে বলে, ‘এটি তোমার উপহার ! যখন চলে যাবে, তখন সাথে নেবে—ঠিক আছে ?’
বলি, আচ্ছা !
দেশে ফিরে যেতে চাই। বাসার সবাই বলে, পার্মানেন্ট গ্রীনকার্ডটি হলেই চলে এসো। সবাই জানে বিয়ে হয়েছে। রক্ষণশীল সমাজ আমাদের । দেশে এসে যদি থাকতে না পারো তখন কাগজ থাকলে আবার ঐ দেশে ফিরে যেতে পারবে। নইলে খুব বিপদ হবে। যাবার কোন জায়গা থাকবে না তোমার। তারপরও চেষ্টা করি যদি আগেই দেশে ফিরে যেতে পারি। চাকরিতো আছেই। শুধু কিছুটা বদনাম নিতে হবে। জীবনের চেয়ে সমাজ কেন বেশী গুরুত্বপূর্ণ হবে আমি বুঝি না।
অন্যেরা বোঝে না আমার অবস্থা। কথা না বলতে বলতে আমি কথা বলতে ভুলে যাচ্ছি-- একটি শব্দ বলতে গেলে আরেকটি শব্দ বের হয়ে যায় আজকাল। এদিকে ঝামেলা না বাঁধিয়ে কাগজপএ করতে প্রায় চারবছর লেগে যাবে। একটি দিন কাটাতেই আমার দম বন্ধ হবার দশা। চার বছর কী করে কাটবে ? আশেপাশে চেনা কোন মানুষ নেই। অদৃশ্য আত্মার মত দিন কাটে আমার-- কারও সাথে কোন দেখা নেই, কথা নেই, কোন লেনদেনও নেই।
জামী এখনই ডিভোর্স চায় না ! তাঁর আরও সময় দরকার। সে চায় আগে শর্মি সিঙ্গেল হোক। আমি এখনই চলে যেতে চাই। তবে কোন আইনী লড়াইয়ে যেতে চাই না। ফাইট করার মত মনের অবস্হা নেই। কিসেরই বা ফাইট ? সে তাড়াতে চায়। আমিও চলে যেতে চাই। লড়াই কিসের ? কেনই বা ? কিন্তু সে বাহানা খোঁজে সময় নষ্ট করার। বলি, এভাবেতো আমি থাকবো না। হয় বাঁচ্চা হবে নয় পড়বো। কিছুতো একটা করতে হবে। সে চুপ থাকে। তাঁর দূর সম্পর্কের এক আত্মীয় তাঁকে বলেন ‘বাচ্চা না হলে এই মেয়ে তোমার সাথে থাকবে কেন ? ওরও তো একটি জীবন আছে !’
সে তাঁকে বলে, ‘ওর বাচ্চা হলে বাচ্চা পাগল হবে… তাই বাচ্চা নেবো না !’
একদিন সেই বৃদ্ধা বেড়াতে আসেন। আমায় জিজ্ঞেস করেন, ‘তোমার বাচ্চা নাকি পাগল হবে ? তাই নাকি জামী তোমার সাথে বাচ্চা নেবে না ?’
হাসি । বলি, ‘বাচ্চাতো আগে কখনও হয়নি। কী করে বলবো, বাচ্চা পাগল হবে নাকি হবে না ?
সুস্হও হতে পারে, আবার পাগলও হতে পারে—মানুষের বাচ্চাইতো পাগল হয়! কে জানে কার বাচ্চা কেমন হবে ?’
কথাটি শোণার পর পায়ের নীচ থেকে যেন মাটি সরে যায় আমার। বিন্দুমাএ শ্রদ্ধাও অবশিষ্ট থাকে না আর। ভাবী, এই নোংরামিরও কী কোন দরকার ছিল ? নোংরামি ছাড়া কী ডিভোর্স দেয়া যায় না কাউকে ? সে না চাইলে আমি কী জোর করে থাকবো ? নাকি থাকা যায় ? যদি একবার বলতো, আমার মেয়েটির দিকে তাকিয়ে ডিভোর্স দিয়ে দাও তাহলেই দ্বিতীয়বার আর বলতো হতো না। প্যানাসনিক সেটটি গ্রহণ করেইতো বুঝিয়ে দিয়েছিলাম চলে যাবো, অসুবিধা নেই। তারপরও নিত্যনতুন পন্হা বের করে আমাকে ধ্বংস করে দেবার।
কথা একেবারেই বন্ধ হয়ে যায় আমাদের । দু’জন থাকি দু’ঘরে। মাসেও দেখা হয় না। লোকমুখে শুণি, ডিভোর্সে আমাকে পাগল দেখাতে পারলে কিছুই দিতে হবে না তাঁর তাই এসব ফন্দি আঁটছে তারা। ভাবী, এখনও আমার দু’হাত দু’পা আছে--নিজের দায়িত্ব নিজে বহণ করতে পারবো না ? সে বোঝে না, টাকা চাইবো কী চাইবো না। পাগল প্রমাণের পথ খুঁজতে থাকে।
একটু জোড়ে কথা বললে বলে, ‘ঐ পাগল !’
চোখ ভিজে উঠলে বলে, ‘পাগল ! পাগল ! পাগল !’
চুপ থাকলেও বলে পাগল ! পাগল !
তার হিংস্রতা দেখে বিদেশের মাটিতে ভয়ে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যায় আমার। বুঝে পাই না—কী করলে মানুষ মানুষকে পাগল বলে না। মাঝেই মাঝেই ঐ মেয়ের সাথে গিয়ে থেকে আসে সে। কাপড়চোপড়ে লাভ মেইকিংয়ের চিন্হ নিয়ে আসে। আমাকে দিয়ে ধোঁয়ায়। যদি রাগ দেখাই প্রমাণ হবে আমি মহাপাগল।
আমি চুপ থাকি। মনে মনে হাসি। ভাবী, ছিঃ! এমন লোকের জন্যে আমি পাগল হবো ? আদৌও সম্ভব ? আমারই সামনে ঢলে পড়ে সে অন্য মেয়ের গাঁয়ে। আমার একটুও রাগ হয় না। মন ছুটে যায় দেশে। ভাবী, দেশের অশিক্ষিত রিক্সাচালক দিন শেষে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে তার পরিবারের জন্যে একটু চালডাল নিয়ে আসেন। দিনভর কত কষ্টই না হয় তাঁদের। অথচ উচ্চ-শিক্ষিত হয়েও দু-একটি পয়সার লোভে মানুষ কত নীচেই না নেমে যায়। মানবিকতাই যদি না থাকে তাহলে শিক্ষার মূল্য কী ? বিদেশী উচ্চ ডিগ্রী নিলেই কী মানুষ সভ্য হয় ? নাকি বিদেশ মানেই সুখ হাতের মুঠোয় ? আমরা একটি মানুষকে না চিনেই কত সহজে বিদেশে বিয়ে করে দেশ ছেড়ে দেই, অপণজন ছেড়ে দেই, চাকরি ছেড়ে দেই। অতপর অনেকেই ভয়াবহ নিঃসঙ্গ একটি জীবন যাপন করি। অথচ নিজের দেশে থাকতে দেশের কদর করতে শিখি না ! দেশের মানুষকে কদর করতে শিখি না ! জীবন গড়ি বিদেশের মাটিতে গিয়ে—যেখানে আপণ বলে আঁকড়ে ধরার কিছুই থাকে না !
কাগজ হতেই ডিভোর্স হয়ে যায় আমাদের। টাকাপয়সা কিছুই চাইনি । যাই যাই করেও দেশে আর ফিরে যাওয়া হয়নি আমার। একবার দেশছাড়া হলে দেশে আর সহজে ফিরে যাওয়া যায় না। সেখানে আর ভীত্ থাকে না। ঠিকানা থাকলেও হাতছাড়া হয়ে যায় সেই ঠিকানা। ভুল করে দেশ ছেড়ে জীবনের অনেক স্বপ্নই হারিয়ে গিয়েছে। আজ সহজেই বুঝতে পারি মানুষের বনবাসের সাজা কত ভয়াবহ ? কত নিঃসঙ্গ ? কত নির্মম ?
শুণেছি,আসি-আসবো করে করে তাঁর এক্স অনেক টাকাই নিয়েছে, কিন্তু আসেনি। আগেই জানতাম, সে কোনদিন আসবে না। এমন মানুষের কাছে সন্তান থাকলেও কোন মেয়ের ফিরে আসার সাহস করার কথা নয়। নিরাপদও নয়। দু’দিন যেতেই আবার তার আসল চেহারা বের হবে—সে যত বড় পিরিতের জনই হোক না কেন।
বছরও ঘোরেনি সে আবার চেয়েছে আমায় বিয়ে করতে।
আমি হেসেছি, চুপ থেকেছি , আবার হেসেছি… সে ফেঁসেছে।
বলেছে, ‘কিগো ! আমাদের বাচ্চার নাম হবে, সিনঝিনি—কিছু বলবে না ? ’
আবার হেসেছি…
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
রেজওয়ানা আলী তনিমা গল্পটা খুব বাস্তব, কষ্টও হলো অনেক। তবে শেষের লাইনটা পড়ে হাসিই পেল। এক ভুল একবার ভুল করে করা যায়, বার বার না।
মোহাঃ ফখরুল আলম ভাল হয়েছে। ভোট পাবেন। আমার কবিতা পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম।
নাস‌রিন নাহার চৌধুরী ভুলে ভরা জীবনের গল্পে ভোট রইল।
ইমরানুল হক বেলাল ভুল করে দেশ ছেড়ে জীবনের অনেক স্বপ্ন হারিয়ে গেছে । আজ সহজেই বুঝতে পারি মানুষের বনবাসের সাজা কত ভয়াবহ! কত নিঃসঙ্গ! কত নির্মম! অনেক দুঃখ কষ্টের একটি গল্প। বাস্তবতায় আপনার গল্পটি বেশ সুন্দর ভাবে ফুটে উঠেছে । ভোট রেখে গেলাম । আমার গল্প কবিতা পড়ার অনুরোধ রইল।
গোবিন্দ বীন ভাল লাগল,ভোট রেখে গেলাম।আমার কবিতা পড়ার আমন্ত্রন রইল।

০৭ ফেব্রুয়ারী - ২০১৬ গল্প/কবিতা: ১১ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“এপ্রিল ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ এপ্রিল, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী